ইসলামে ছাদকার গুরুত্ব
আ. শ. ম. বাবর আলী
ছাদকা অর্থাৎ দান বান্দার প্্রতি পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালার অন্যতম নির্দেশিত বিধান। এর মাধ্যমে মানব জীবনের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণ সাধিত হয়।
স্বচ্ছল ও সামর্থ্যবান ব্যক্তি কর্তৃক অসচ্ছল ও অসামর্থ্যবান ব্যক্তিকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় কিছু দান করাকে ছাদকা বলে। ছাদকা দু’ধরনের হতে পারে। বাধ্যতামূলক ও ঐচ্ছিক।
যাকাত ও ফেতরা বাধ্যতামূলক ছাদকা। এছাড়া অন্যান্য দান ঐচ্ছিক ছাদকার পর্যায়ভুক্ত। এ উভয় শ্রেণির ছাদকাই ছাওয়াবের হলেও কিছু পার্থক্য আছে। বাধ্যতামূলক ছাদকা প্রদান না করা পাপ। যেমন,বছরান্তে অবস্থিত সম্পদের মধ্য থেকে নির্ধারিত অংশ যাকাত প্রদান না করলে উক্ত সমুদয় সম্পদই অবৈধ হয়ে যায়। তখন উক্ত সম্পদ ভোগ করাও অবৈধ বা পাপ। আবার রমযানের রোযা রাখার পর রোযাদার ব্যক্তি যদি নির্ধারিত পরিমাণের ফেতরা প্রদান না করেন,তা হলে তার উক্ত রোযা অসম্পূর্ণ হয়ে থাকে এধরণের ছাদকা প্রদানে ব্যর্থ হলে গুণাহ হয়। আর প্রদান করলে গুণাহ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। অধিকšদ ছাওয়াব অর্জিত হয়।
কিন্তু ঐচ্ছিক ছাদকা প্রদানে ছাওয়াবেরই অংশ বেশি,যদিও অধিক সম্পদ থাকা সত্তে¡ও দান না করাতে গুণাহ আছে। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে এটাই বলা যেতে পারে যে, বাধ্যতামূলক ছাদকার ব্যাপারে গুণাহমুক্তি এবং ঐচ্ছিক ছাদকার ব্যাপারে ছাওয়াব অর্জনের প্রাধান্যই বেশি। বক্ষমান নিবন্ধ প্রধানত ঐচ্ছিক ছাদকার ওপরেই আলোচনা।
ছাদকা শব্দটির অর্থ অতি ব্যাপক। এটা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। জাগতিক অথবা পারলৌকিক যে কোন উপকারই ছাদকা হিসেবে গণ্য। সৎকার্য,সদুপদেশ, সৎকথাÑএগুলো ছাদকার পর্যায়ভুক্ত। এ প্রসংগে হাদীসে আছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘প্রত্যেক ব্যক্তিরই দানের অর্থাৎ ছাদকার একটি কর্তব্য আছে। দু’ব্যক্তির মধ্যে বিরোধের মীমাংসা করে দেওয়া একটি ছাদকার কাজ। যানবাহনে আরোহীকে সাহায্য করা অথবা তার মালপত্র তুলে দেওয়া ছাদকার কাজ। সৎকথা, নামাযের জন্য প্রতিটি পদক্ষেপ, পথ থেকে ক্ষতিকর বস্তু অপসারণÑএগুলোও ছাদকার অন্তর্ভুক্ত।’
[বোখারী]
ছাদকা সম্পর্কে আল্-কোরআনে বলা হয়েছে, ‘কুল ইন্না রাব্বি ইয়াব ছুতুর রিজকা লিমানমশায়ু মিন ইবাদিহী ওয়া ইয়াকদিরুল্লাহু।ওয়ামা আনফাকতুম মিন শাইয়ীন ফাহুয়া য়ুখলিফুহু ওয়াহুয়া খায়রুর রাযিকিন।’ অর্থাৎ ‘হে নবী! তাদেরকে বলো,আমার রব নিজের বান্দার মধ্য থেকে যাকে যাকে ইচ্ছা করেন ব্যাপক রিযিক দিয়ে থাকেন। আর যাকে ইচ্ছা করেন কম প্রদান করেন। যা কিছু তোমরা ব্যয় করে থাকো,সেই স্থানে তিনি আরও প্রদান করে থাকেন।’ অর্থাৎ এতে উপলব্ধি করা যায় যে,দান অথাৎ ছাদকা প্রদানে সঞ্চিত সম্পদ কখনও কমে না ; বরং তার বৃদ্ধি ঘটে থাকে। ছাদকা প্রদনের সময় সম্পর্কে সুরা আল-মুনাফেকুন-এ বলা হয়েছে, ‘ওয়ানফিকু মিম্মা রাজাকনাকুম মিন কাবলি….ফা আচ্ছাদ্দাকা ওয়া আকুন মিনাছ ছালেহীন।” অর্থাৎ ‘এবং ব্যয় করো তা থেকে, যা আমি তোমাদেরকে দিয়েছি। তোমাদের মধ্যে কারও মৃত্যু উপস্থিত হওয়ার পূর্বেই এই ব্যয় করা উচিত। কেন না মৃত্যু উপস্থিত হলে তোমরা আবার বলবে যে, হে আমার রব! কেন তুমি আমাকে সময় দাও না? সময় পেলে আমি দান-খয়রাত করতাম এবং উত্তম ব্যক্তিরূপে পরিগণিত হতে পারতাম।’ অর্থাৎ মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত জীবনের সকল মুহূর্তে ছাদকার কাজে নিয়োজিত থাকার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ছাদকা কাদেরকে প্রদান করতে হবে? এ সম্পর্কে আল্-কোরআনের সুরা বাকারার ২১৫ সংখ্যক আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমরা যা খরচ করো পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, অভাবগ্রস্থ পিতৃহীন, পর্যটক সাহায্যপ্রার্থীকে। কোরআন পাকের বিভিন্ন স্থানে বলা হয়েছে, ছাদকা প্রাপ্তির প্রথম দাবিদার অভাবগ্রস্থ আত্মীয়-স্বজন, এরপর অভাবগ্রস্থ প্রতিবেশী এবং সর্বশেষ অভাবগ্রস্থ দূরের মানুষ।
ছাদকা প্রদানে সম্পদ কমেনা; বরং আরও বৃদ্ধি পায়। এ প্রসঙ্গে আল্-কোরআনের সুরা বাকারার ২৪৫ সম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘মানজাল্লাজি য়ুকরিদুলাহ কারদান হাছানান ফা য়ুদায়িফাহু লাহু আদয়াফান কাছিরান ওয়াল্লাহু ইয়াকবিদ ওয়া ইয়াবসিতু ওয়া এলাইহি তুরজাউন।’ অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে কে আছে যে আল্লাহকে কারজে হাস্না প্রদান করবে? যাতে করে আলাহ তাকে কয়েক গুণ বৃদ্ধি করে প্রতিদানদেবেন। সংকীর্ণ করা এবং প্রশস্ত করা সবই আল্লাহর এক্তিয়ারভুক্ত এবং তার অভিমুখেই তোমাদেরকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।’
এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি নিজের সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে (যে কোনও ছাদকাই আল্লাহর খরচের সামিল), তার এই ব্যয়ের উদাহরণ এমন, যেমন একটি শস্যদানা বপন করা হয় এবং তা থেকে সাতটি ছড়া বের হয় এবং প্রত্যেক ছড়ার সাতশত দানা থাকে। এমনিভাবে আল্লাহতায়ালা যার আমল চান, তার প্রশস্ততা দান করেন। তিনি প্রশস্ততা দানকারী এবং সব কিছুই জানেন। তোমাদের মধ্য থেকে যারা ঈমান আনবে এবং সম্পদ ব্যয় করবে, তাদের জন্য রয়েছে অত্যন্ত বড় প্রতিদান।’
ছাদকা অর্থাৎ দানের বস্তু বা সম্পদ সৎপথে উপার্জিত হওয়া আবশ্যক। অসৎপথে উপার্জিত ছাদকা কখনই বৈধ নয়।এরূপ ছাদকা প্রদান বরং অকল্যণকরই। এছাড়া ত্রæটিপূর্ণ নয়; উত্তম ব¯দই ছাদকা দেওয়া উচিত। এ সম্পর্কে সুরা বাকারার ২৬৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা যা উপার্জন করো এবং আমি জমি হতে তোমাদের জন্য যা উৎপাদন করে দেই, তা থেকে যা ভাল, তা দান করো। মন্দ জিনিস দান করার ইচ্ছা করো না।
প্রকাশ্য ছাদকার চেয়ে গোপন ছাদকা অবশ্যই উত্তম। এর কারণ হচ্ছে, প্রকাশ্য ছাদকা প্রদানে কখনো কখনো আত্মঅহমিকা প্রকাশ হতে পারে। আবার দানগ্রহিতা ব্যক্তি মানসিকভাবে বিব্রত হতে পারেন। তাই আল্-কোরআনে প্রকাশ্য ও গোপন উভয় দান বা ছাদকাকে উৎসাহিত করে বলা হয়েছে,‘আল্লাজিনা ইউনফেকুনা আমওয়াহুম বিল্লাইলি ওয়ান্নাহারি সিররান ওয়া আলানিয়া তান ফালাকুম আজরুহুম ইন্দারাব্বিহিম ওয়ালাখাওফুন আলায়হিম ওয়ালাহুম ইয়াহযানুন।’ [সুরা আল্-বাকারা ঃ আয়াত ২৪৭]
অর্থাৎ ‘যারা নিজেদের ধনমাল দিনরাত্র গোপনে ও প্রকাশ্যে খরচ করে, তাদের প্রতিফল তাদের খোদার কাছেই প্রাপ্য রয়েছে এবং তাদের জন্য কোনো ভয় ও চিন্তার কারণ নেই।’
উক্ত আয়াতে গোপন ছাদকা বা দানের সাথে প্রকাশ্য ছাদকা বা দনের কথা বলা হলেও আল্-কোরআনের অধিক সংখ্যক আয়াতে গোপন ছাদকাকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। যেমন,একই সুরার ২৭০-৭১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,‘তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান করো,তা হলে তা ভাল। আর যদি তা গোপনে করো এবং অভাবীকে দাও, তাহলে তা তোমাদের জন্য আরও ভাল। এর জন্য তিনি (আল্লাহ ) তোমাদের কিছু পাপ মোচন করবেন।’
অবশ্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রকাশ্য দান করা যেতে পারে, যদি উক্ত দানকার্যের মাধ্যমে অন্যজনদেরকে অনুরূপ কার্যে উৎসাহিত করার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু উক্ত দান বা ছাদকার উদ্দেশ্য যদি হয় নিজের উদারতাকে অন্যদেরকে প্রদর্শন করা, তা হেেল অনুরূপ ছাদকা প্রদানে কোনো উপকার নেই। এ প্রসংগে সুরা নিসার ৩৮ সংখ্যক আয়াতে বলা হয়েছে,‘আর যারা লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে তাদের ধন-সম্পদব্যয় করে এবং আলাহ ও শেষ দিনে (কেয়ামতে) বিশ্বাস করে না, আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন না।’ এরূপ ছাদকা বরং অকল্যাণকরই বটে। ছাদকা প্রদান করার পর যদি সে তা প্রচার করে বেড়ায়,তা হলে সে আরও ক্ষতিতে নিপতিত হয়। আল্-কোআনে তাই এরূপ ছাদকা বা দানকে নিরুৎসাহিত করে বলা হয়েছে,‘হে বিশ্বাসীগণ! দানর কথা প্রচার করে ও কষ্ট দিয়ে তোমরা তোমাদের দানকে নষ্ট করো না ওই ব্যক্তির মত যে নিজের সম্পদ অন্যকে প্রদর্শনের জন্য ব্যয় করে এবং আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে না।’ [সুরা আল্-বাকারা : আয়াত ২৬১]
ছাদকা সম্পর্কে হাদীসে পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে। হযরত রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম তাঁর বিভিন্ন বক্তব্যে ছাদকা অর্থাৎ দান সম্পর্কে অনেক দিগ্নির্দ্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন,‘ছাদকা বা দান আলাহর ক্রোধকে উপশম করে এবং মৃত্যু যন্ত্রণাকে দূরীভূত করে।’ [তিরমিজি]
অর্থাৎ এর দ্বারা এটাই বোঝা যায় যে, আলাহর প্রসন্নতা লাভের জন্য ছাদকা একটি উত্তম মাধ্যম।
বোখারী ও মুসলিম শরীফে ছাদকার বর্ণনায় বলা হয়েছে, রাসুলুলাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘প্রত্যেক সৎকার্যই ছাদকা।’ উক্ত হাদীসে তিনি আরও বলেছন,‘সৎকার্য সামান্য হলেও, এমনকি সহাস্য মুখে তোমার ভ্্রাতার সাথে সাক্ষাৎ করাও হয়, তা করতে অবহেলা করো না।’ একই হাদীসে উল্লেখ আছে,হযরত রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সšদষ্ট চিত্তে যা দান করা হয়, তা-ই উত্তম ছাদকা এবং তোমার আত্মীয়কেই প্রথম দান করো।’
ছাদকার মাহাত্ম্য সম্পর্কে বোখারী ও মুসলিম শরীফে আবি ইবনে হাশেম রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত আছে, রাসুলুলাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আগুন থেকে বেঁচে থাকো। একটি খেজুর পরিমান ছাদকা দিয়ে হলেও এ আগুন থেকে বাঁচার চেষ্টা করো।’ একই ধরনের সুসংবাদ প্রদত্ত হয়েছে আর একটি হাদীসে। উকবা বিন্-আম রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের ছাদকার ছায়ায় থাকবে।এমনকি তা মানুষের মধ্যে বেহেশত ও দোযখের ফায়সালা করে দেবে।’ [ইবনে খাজিমা]
ছাদকা সম্পর্কে এধরনের উক্তি অসংখ্য হাদীসে বর্ণিত রয়েছে।
ছাদকার পরিমান কেমন হবে? এ সম্পর্কে হাদীসে বলা হয়েছে,‘সামান্য এক টুকরো খেজুরও ছাদকা দেওয়া যেতে পারে। তবে সাধ্যমত অধিক পরিমাণে ছাদকা প্রদানই উত্তম। এক্ষেত্রে ছাদকা গ্রহণকারীর চাহিদাকেও অতিক্রম করা যেতে পারে। এপ্রসঙ্গে একটা ঘটনা উল্লেখ করা যায়। ঘটনাটা এমনÑ
হযরত ইমাম লাইস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বিন্ সা’দ একজন পরম ধার্মিক ব্যক্তি ছিলেন। প্রতিদিন তিনি ৩৬০ জন মিসকিনকে ছ্াদকা প্রদান করতেন। একবার একজন মহিলা তাঁর কাছে এক বোতল মধু চাইলো। তিনি তাকে এক ভাÐ মধু দেওয়ার জন্য তাঁর লোককে নির্দেশ দিলেন। তখন তাঁকে বলা হলো,মহিলা তো এরচেয়ে কম পরিমান মধু চেয়েছেন। জবাবে তিনি বললেন,‘সে তার প্রয়োজন মোতাবেক চেয়েছে। আল্লাহ পাক আমাকে যে নিয়ামত দিয়েছেন, সেই মোতাবেক আমি তাকে দিয়েছি।’
কথিত আছে যে, হযরত ইমাম লাইস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বিন্ সা’দ একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর প্রতিদিনের ঊপার্জন ছিল এক হাজার দীনার। কিন্তু তা সত্তে¡ও তাঁর ওপর যাকাত ওয়াজিব ছিল না। কারণ, তিনি এত বেশি পরিমাণ ছাদকা প্রদান করতেন যে, যাকাত দেয়ার মত পরিমাণ সম্পদ তাঁর কাছে মওজুত থাকতো না।
ছাদকার বস্তু কখনও ফিরিয়ে নেওয়া যায় না। কারণ, ছাদকা দেওয়ার পর উক্ত বস্তুর ওপর তার আর কোনও অধিকার থাকে না।তাই উক্ত বস্তু ফিরিয়ে নেওয়া অতি জঘন্য ব্যাপার। এ প্রসঙ্গে বোখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার দানকে ফিরিয়ে নেয়, ওই ব্যক্তির যে বমি করে তা আবার ভক্ষণ করে।’
শুধু একটি মাত্র ক্ষেত্রে দান ফিরিয়ে নেওয়ার বিধান আছে। তা হচ্ছে,সন্তানের প্রতি পিতার দান। যদি এমন হয় যে,পিতা তাঁর সকল সম্পত্তি অথবা সম্পত্তির অধিক অংশ অন্য সন্তানদের বঞ্চিত করে একজনকে দান করেছেন। এ ক্ষেত্রে পিতা উক্ত সন্তানের নিকট থেকে উক্ত দান ফিরিয়ে নিয়ে অন্য সন্তানদের মধ্যে সমবন্টন করতে পারেন। শুধু পারেন-ই না, এরূপ করার জন্য বাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর কঠোর নির্দেশ রয়েছে। এমনি ধরনের একটা নির্দেশ আছে বোখারী শরীফে।
হজরত নোমান বিন বশীর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু কর্তৃক বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘(সম্পদের সুবন্টনের মাধ্যমে) তোমার সন্তানদের প্রতি সুবিচার করো। আমি অন্যায়ের ওপর সাক্ষী হবো না।’ শুধু এই একটি ক্ষেত্র ছাড়া প্রদত্ত দান বা ছাদকা ফিরিয়ে নেওয়া নিষিদ্ধ।
ছাদকার গুরুত্ব সম্বন্ধে আরও অসংখ্য বর্ণনা পাক কোরআন ও হাদীসে রয়েছে। এ সমস্ত বর্ণনায় অবহিত করা হয়েছে যে, আল্লাহ পাকের নির্দেশিত অসংখ্য সৎকার্যের মধ্যে ছাদকা একটি এবং তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটা অনুধাবন করে উক্ত কর্মের প্রতি আমাদের বিশেষ আগ্রহশীল ও তৎপর হওয়া উচিত।