দ্বীনের ত্রাণকর্তা খলীফাতুর রসূল সিদ্দীকে আকবর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু
হাফেজ আনিসুজ্জমান>
আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর প্রতি বিশ্বাসী বান্দাদেরকে যতো মান-মর্যাদা ও উভয় জগতে পুরষ্কার-প্রতিদানে ধন্য করবেন, সবকিছুই তাঁর হাবীব, নবীকুল সর্দার হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র মাধ্যমে এবং তাঁরই সম্পর্কের ভিত্তিতেই প্রদান করবেন। এটা তাঁর হাবীবের প্রতি তাঁর বিশেষ দয়া ও প্রদত্ত মান-মর্যাদা। রাসূলে আকরাম’র সাহচর্য ও সান্নিধ্য যাঁরা লাভ করেছেন, তাঁরা উম্মতের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম। আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়া তা‘আলা পবিত্র কুরআনে তাঁর হাবীব’র প্রিয় সহচর ও বিশ্বস্ত সঙ্গী-সাথীদের মর্যাদা ও গুণ বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন। যাঁরা আল্লাহর রসূলকে স্বচক্ষে দেখে ঈমান এনেছেন এবং ঈমানসহ ওফাত বরণ করেছেন, তাঁরাই মুসলিম বিশ্বে ‘সাহাবী’ হিসেবে পরিচিত। আল্লাহ্ তাঁর রসূলের সাহাবা সম্পর্কে ইরশাদ করেন, ‘‘মুহাম্মদ আল্লাহর রসূল। আর যাঁরা তাঁর সঙ্গে রয়েছেন, তাঁরা কাফিরদের মোকাবেলায় কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে দয়াবান। আপনি তাঁদেরকে দেখবেন রুকুকারী, সাজদারত। তাঁরা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনা করেন, তাঁদের আলামত হল, তাঁদের চেহারাগুলোতে থাকবে সাজদার প্রভাবগত নিদর্শন হতে (প্রকাশমান)। তা তাঁদের উদাহরণ রয়েছে তাওরাতে আর উদাহরণ ‘ইনজীলে। যেমন এক শস্য ক্ষেত, যা স্বীয় চারাকে নির্গত করে, তারপর তা সবল করে এর তাজা পুষ্ট করে, অতঃপর নিজ কা-ের ওপর ঋজুভাবে দাঁড় করায়, এ পরিণতি কিষাণীকে মুগ্ধ করে’ যাতে তাঁদের দ্বারা অস্বীকারকারীদের ঈর্ষান্বিত করে। আর তাদের মধ্যে যারা ঈমানদার ও পূণ্যবান, তাঁদের সাথে আল্লাহ্ ক্ষমা এবং মহান পুরস্কারের ওয়াদা করেছেন।’ [৪৮:২৯]
বর্ণিত উদাহরণটি প্রিয় নবী ও তাঁর সাহাবাগণের। তাওরাত ও ইনজীলের মধ্যে নবীর সাথে থাকার কারণে তাঁর সাহাবীদের নিষ্ঠা ও কর্মতৎপরতাসহ এর মহা প্রতিদানের কথা এরূপ উপমা যোগে বর্ণিত। নবুয়তের দায়িত্বে অভিষিক্ত হয়ে প্রাথমিক অবস্থায় রাসূলে আকরাম একাই মহাসত্যের আহ্বান মানুষদের শোনান এবং সবাইকে আল্লাহর পথে ডাকেন। সত্যের মশাল নিয়ে একাই তাঁর পথ চলার সূচনা। আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর নিষ্ঠাবান সাহাবাগণের দ্বারা তাঁকে জোরদার করেন। ইনজীল কিতাবের সেই উপমার কথা হযরত কাতাদাহ্ (রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু)’র বর্ণনায়, ‘‘শেষ যমানায় এক সম্প্রদায়ের উদ্ভব হবে শস্য ক্ষেতের মত। তারা সৎকর্মের আদেশ দেবেন এবং অন্যায় কাজে বাধা দেবেন। বলা হয়েছে যে, আল্লাহর রসূল হলেন সেই ক্ষেত বা ফসল, আর তাঁরা সাহাবাগণ ও অনুরক্ত উম্মতগণ হলেন তাঁর শাখা-প্রশাখার ন্যায়।’’ [সদরুল আফাদ্বিল হাকীম সায়্যিদ নঈমুদ্দীন মুরাদাবাদী (রহ.) কৃত খাযাইনুল ইরফান]
নবীজির সুহবত বা সাহাবিয়্যাত প্রথমে লাভ করার সৌভাগ্য হয় যে সাহাবীর, তিনি নিঃসন্দেহে সায়্যিদুনা আবু বকর সিদ্দীক্ব (রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু)। তিনি ‘আ-মুল ফীল’ বা হস্তী অভিযানের বছর’র আনুমানিক আড়াই বছর পর মক্কার মিনায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বংশধারা সপ্তম পুরুষ মুররা বিন কা’ব’র সাথে এসে আল্লাহর রসূলের পবিত্র বংশধারায় মিলিত হয়। তাই তিনিও কুরাইশ বংশোদ্ভুত। তাঁর মূল নাম আব্দুল্লাহ্। আবু বকর উপনাম। লক্বব আতীক্ব। পিতার নাম আবু কুহাফা ওসমান, মা উম্মুল খাইর সালমা।
শৈশব থেকেই হযরত আবু বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু)’র স্বভাব-চরিত্র ছিল একজন সাচ্চা মুমিন, মুসলমানের মতই। জাহেলী যুগ নামে যে জঘন্যতম সময়টি ছিল এবং আরবের মানুষগুলো যখন অধর্ম-অনাচার আর সধৈব অপরাধ-কলুষিত জীবন যাত্রার প্রতিযোগিতার মত্ত, তখন একজন পুতঃপবিত্র মনের নিষ্কলুষ মানুষের মত চলাফেরা ছিল এ আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর। মদ-শরাব ব্যভিচার, জুয়াখেলা, নাচ-গান, উলঙ্গপনার মত বেহায়া সামাজিক অনাচার থেকে তিনি নিজকে অনেক দূরে সরিয়ে রাখতেন। আল্লাহ্ তা‘আলা নিজ পরিকল্পনাতে তাঁর মাহবুব নিষ্পাপ সত্তা সরদারে দোজাহাঁ হুযুর রহমাতুল্লিল আলামীন’র যোগ্যতম ও ঘনিষ্ঠতম সহচর আবু বকরকে যাবতীয় কদর্যতা ও কলুষতা থেকে দূরে থাকার মানসিক পবিত্রতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। এ কারণে প্রতীক্ষিত নবুওয়ত প্রকাশিত হওয়ার পর সবার আগে তিনিই ইসলামে দীক্ষিত হন। ইবনে আসাকির সায়্যিদুনা আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু) থেকে বর্ণনা সংকলন করেছেন যে, পুরুষদের মধ্যে সবার আগে যিনি ইসলাম গ্রহণ করেন, তিনি আবু বকর।’’
সিদ্দীকে আকবর (রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু) শুধু ইসলামে দাখিল হওয়ার মধ্যেই প্রথম ব্যক্তি নন, বরং তিনি রাসূলুল্লাহর হিজরতের সফরে একমাত্র সঙ্গী আর এখানে তাঁর দ্বিতীয় নেই। পবিত্র কুরআনের ভাষায়, তিনি দু’য়ের দ্বিতীয়। এটা আল্লাহর রসূলের হিজরতকালীন কাফির শত্রুরা অনুসরণ করলে ‘সওর’ গুহায় অবস্থান করার সময় স্থির হয়। এখানে প্রিয় নবীর জন্য ইশক্ ও প্রেমের পরীক্ষায় তিনি হয়ে যান অতুলনীয় মর্যাদার অধিকারী। আর এ আয়াতের আলোকে তিনিই একমাত্র সাহাবী হয়ে যান, যাঁর সাহাবী হওয়া অস্বীকার করলে কুফরী হবে। কারণ, তাঁর সাহাবিয়্যত কুরআনেই উল্লেখিত।
ইসলামী রাষ্ট্রের তিনিই প্রথম খলীফা। তিনিই প্রথম আল্লাহর রাসূলের যিয়ারত করেন। তিনি শুধু প্রথম ঈমান আনেন তা-ই নয়, বরং কোন রূপ যাচাই-বাচাই, চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই আগ্রহভরেই ঈমান আনেন। মে’রাজে মুস্তফার প্রতিও তাঁর ঈমান প্রথম এবং বিনা বাক্য ব্যয়েই তা বিশ্বাস করেন। রাসূলে পাকের পাশেই সমাহিত হওয়ার অনন্য সৌভাগ্যও শুধু এ মহান নবীপ্রেমিকেরই নসীব হয়। রাসূলে পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র মেহরাবে মিম্বরে পাকে দাঁড়াবার নির্দেশ স্বয়ং রাসূল থেকেই প্রাপ্ত হন সিদ্দীকে আকবর। জান্নাতেও তিনি আমাদের প্রিয় নবীর সঙ্গী হবেন। হাশরের ময়দানে উত্থিত হবার সময় আল্লাহর রসূল তাঁর হাত ধরা অবস্থায় রওযা শরীফ হতে উঠবেন। হযরত আবু বকরের সাহাবী হওয়া, বা খলীফা হওয়ার বিষয় প্রত্যাখ্যান করার বা অস্বীকার করার মত নয়। তাঁর সাহাবী হওয়ার বিষয়টি পবিত্র কুরআনের সূরা তাওবার ৪০তম আয়াতের দ্বারা প্রমাণিত। এরশাদ হয়েছে- اذ اخرجه الذين كفروا ثانى اثنين اذهما فى الغار اذ يقول لصاحبه لاتحزن ان الله معنا الخ… অর্থাৎ যখন কাফিরদের মন্দ আচরণে তাঁকে (মক্কার) বাইরে চলে যেতে হল দুয়ের ‘এক’ রূপে, যখন বলছিলেন দুয়ের দ্বিতীয়, তখন তাঁরা ছিলেন (সওর) গুহায়, তাঁর সঙ্গী (সাহাবী) কে বলেছিলেন বিষন্ন হয়ো না, আল্লাহ আমাদের সাথে। তাঁর খেলাফতের বিষয়টিও পবিত্র কুরআন সমর্থিত। সূরা মায়েদার ৫৪তম আয়াতে এ সমর্থন বিবৃত। ইরশাদ হয়েছে, ‘‘হে ঈমানদারগণ, তোমাদের মধ্যেকার যে ব্যক্তি নিজ দ্বীন থেকে ফিরে যাবে, (অর্থাৎ ধর্মত্যাগী মুরতাদ হবে) তখন অচিরেই আল্লাহ্ এমন সব ব্যক্তিত্বের সমাগম করাবেন, যাঁদেরকে তিনি ভালবাসেন এবং তারাও তাঁকে ভালবাসেন, তাঁরা মুসলমানদের প্রতি হবেন কোমল চিত্ত এবং কাফিরদের প্রতি কঠোর। তাঁরা আল্লাহর রাস্তায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবেন। এতে তাঁরা কোন নিন্দুকের নিন্দাকে পরোয়া করবেন না। এটা হল আল্লাহর অনুগ্রহ, তিি যাঁকে চান তাঁকে দান করেন।’’
ইসলামের ইতিহাস এটাই বলে, ইসলামী রাষ্ট্রের প্রাথমিক অবস্থায় কপটচিত্ত মানুষ স্বধর্ম ত্যাগ করে যখন বিপর্যস্ত করে তুলেছিল শিশু রাষ্ট্রকে। তখন শক্ত হাতে লাগাম ধরে তার স্থিতি ফিরিয়ে আনেন সিদ্দিকে আকবর। সকলেই জানে রিদ্দার যুদ্ধ তাঁরই খিলাফতকালে সংঘটিত হয়। তিনিই বিপর্যস্ত পরিস্থিতি সামলে নেন। এ জন্য তিনি ‘ইসলামের ত্রাণ কর্তা’ রূপে মুসলিম মিল্লাতের কাছে সমাদৃত রাষ্ট্রনায়ক। তাঁর খেলাফত প্রসঙ্গে হযরত আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু) তাঁকে সম্বোধন করে বলেছিলেন। স্বয়ং আপনাকে রাসূলুল্লাহ্ আমাদের দ্বীনের বিষয়ে আমাদের আগে দিয়েছেন। তবে আজ আমাদের জাগতিক বিষয়ে, এমন কে আছে, যে আপনাকে পেছনে রাখবে? [মাদারিজুন্নবুয়ত]
বস্তুতঃ পার্থিব- অপার্থিব সর্ব বিষয়ে এবং সব ক্ষেত্রে রাসূলের প্রথম নির্বাচন হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু)। এমন সাহাবীর প্রতি শ্রদ্ধা হারানো মানে ঈমান হারানো।
আল্লাহর রসূল স্বয়ং তাঁর অতুলনীয় অবদানের স্বীকৃতি দিয়ে এরশাদ করেন, ‘‘আমার ওপর একান্ত সঙ্গ আর সম্পদ দিয়ে সর্বাধিক উপকারী মানুষ হলেন আবু বকর।’’ [সহীহ্ বুখারী শরীফ]
মহান রাব্বুল আলামীনের ফরমান, ‘‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ তা‘আলা মুমিনদের কাছ থেকে তাঁদের জান ও মাল খরিদ করে নিয়েছেন এ চুক্তিতে যে, তাঁদের বিনিময় হবে জান্নাত।’’ [সূরা তাওবা: আয়াত-১১১]
এ আয়াতের আলোকে বলা যায়, জান ও মাল সর্বস্ব স্বয়ং রাসূলের হাতে অর্পণ ও জীবদ্দশায় এমন হস্তান্তর ব্যবহারিক ও স্বশরীরে সম্পন্ন করার সৌভাগ্য হযরত সিদ্দীক্বে আকবর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর।
সূরা তাওবার ৪০তম আয়াতে তাঁর সম্পর্কে বলা হয়েছে- ثانى اثنين اذهما فى الغار (তাঁরা দু’জন, যখন উভয়ে ছিলেন গুহার মধ্যে।) যেখানে রাসূলূল্লাহর হিজরতের সফরে ‘সওর’ পর্বতে একমাত্র সঙ্গী ছিলেন হযরত আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু। আয়াতে উল্লেখিত রাসূলুল্লাহর একমাত্র সঙ্গী, সে আর অন্য কেউ নন, তিনিই হযরত আবু বকর সিদ্দীকে আকবর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু। তাঁর এ নবী-সঙ্গ বা ‘সাহাবিয়্যাত’ অস্বীকার করা হবে কুফরী; কেন না, তা পবিত্র কুরআনের আয়াত দ্বারা প্রমাণিত। নবীজির জন্য প্রাণ বাজি রাখার দৃষ্টান্ত ও তিনি প্রথম রেখেছেন।
সিদ্দিকে আকবর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর উপর ঈমান আনার ক্ষেত্রেও সর্বপ্রথম। কারণ, সারা বিশ্বের সকল ঐতিহাসিক এ কথায় একমত হন যে, সিদ্দীকে আকবর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সর্বপ্রথম ঈমান আনয়নকারী। নবীজির হাতে ঈমান গ্রহণকারী মাত্রই সাহাবী হয়ে যান। এ মানদ-ে সর্বপ্রথম সাহাবী। যে ফযীলত দ্বিতীয় কারো অর্জন করার কোন অবকাশ নেই। সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে তিনিই একমাত্র সাহাবী, যিনি স্বয়ং নবীজির একমাত্র সঙ্গী হিসাবে হিজরত করার ঈর্ষণীয় সৌভাগ্যের অধিকারী।
আ’লা হযরত হিজরী চতুর্দশ শতাব্দীর মহান মুজাদ্দিদ, তাঁর কালজয়ী বিশুদ্ধতম তরজমায়ে কুরআন লিখে অনুবাদকর্মের বিশুদ্ধতার জন্য অপরিহার্য নীতিমালার দৃষ্টান্ত রেখেছেন। যা এ পথে অগ্রসরমান ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য অতি মূল্যবান এক ‘ইনডেক্স’ বললেও অত্যুক্তি হবে না। ‘কানযুল ঈমান’ হলো তাঁর ঐতিহাসিক অনূদিত গ্রন্থের নাম। গ্রন্থটির প্রারম্ভে বিষয় বস্তু ভিত্তিক কিছু শিরোনাম রয়েছে। ‘ফাদ্বা-ইলে আবু বকর সিদ্দীক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’ নামক শিরোনামের অধীনে মোট ষোলটি আয়াতে কারীমার তালিকা রয়েছে। সে তালিকা হতে কয়েকটি আয়াতের আলোকে প্রিয় পাঠক বৃন্দের দৃষ্টিগোচর করতে প্রয়াস পাবো। যাতে অনুধাবনীয় হবে, যাঁদের মর্যাদার কথা আয়াতের অভ্যন্তরে নিহিত তাঁদের মধ্যে সিদ্দীকে আকবর শীর্ষ সাহাবী।
ক. মহান রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন, والذى جاء بالصدق وصدق به اولئك هم المتقون অর্থাৎ আর সেই মহান সত্তা, যিনি এ মহাসত্য সহকারে তাশরফি এনেছেন, আর যিনি তাঁকে সত্য জ্ঞানে বরণ করেছেন, (এ সত্যধারণকারী) তারাই সত্যিকার খোদাভীরু।’’
খাযা-ইনুল ইরফান গ্রন্থে সদরুল আফাদ্বিল হাকিম সায়্যিদ নঈমুদ্দীন মুরাদাবাদী রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি صدق به ’র তাফসীর করেন হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু, মতান্তরে পর্যায়ক্রমিকভাবে অন্যান্য মুমিন নর-নারীও এ আয়াতের আওতায় আসেন। তবে প্রথমতঃ রূপায়ন সিদ্দীকে আকবর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর মাধ্যমে একথায় কেউ দ্বিমত করেননি।
সূরা আহযাবের ৪০তম আয়াতে মহান¯্রষ্টা আল্লাহ্ তা‘আলার ফরমান, هو الذى يصلى عليكم وملائكته ليخرجكم من الظلمات الى النور الخـ… অর্থাৎ ‘‘তিনিই সে মহান সত্তা, যিনি ‘সালাত’ প্রেরণ করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণও এ উদ্দেশ্যে যে, তিনি তোমাদেরকে অন্ধকার হতে আলোর দিকে বের করে আনবেন, আর তিনি মুমিনদের প্রতি দয়াবান।’’
বর্ণিত আয়াতটি অবতরণের প্রেক্ষিত হলো, অভিন্ন সূরার ৫৬তম আয়াত, (যেখানে নবীজির উপর স্বয়ং আল্লাহ্ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি সালাত প্রেরণ’র বর্ণনান্তে মুমিনদেরও তাঁর উপর সালাত ও সালাম প্রেরণের নির্দেশ বর্ণিত হয়)-টি নাযিল হলে সিদ্দীকে আকবর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু আবদার করেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আল্লাহ্ তা‘আলা যখন আপনার ওপর কোন অনুগ্রহ বা বিশেষ ফযীলত দান করেন, তখন আপনার বরকতে আমাদেরকেও সেই অনুগ্রহে শামিল করেন; কিন্তু এ আয়াতে আমরা যে বাদ পড়লাম। তাঁরই আবেদনে প্রথমোক্ত আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। এতে আল্লাহর দরবারে সিদ্দীকে আকবরের বিশেষ মর্যাদার কথা সাব্যস্ত হয়।
ছায়াহীন কায়াধারী নূর নবীজির ছায়ার মত একান্ত সাথী, সওর গুহার সঙ্গী, প্রিয়তম প্রধান সাহাবী খলীফাতুর রসূল মাহে জুমাদাল উখরার ২২ মতান্তরে ২৩ তারিখ হিজরী ১৩ সন মোতাবেক ২৩ আগস্ট ৬৩৪ খৃস্টাব্দ, সোমবার ওফাত বরণ করেন। প্রিয়নবীজির মত ৬৩ বছর ইহকাল পূর্ণ করে ইহধাম ত্যাগ করেন। অতঃপর প্রিয়তম সঙ্গী প্রিয় নবীজির নির্দেশে তাঁরই পাশে সমাহিত হন।
লেখক: সিনিয়র আরবী প্রভাষক, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা, চট্টগ্রাম।