হুযূর-ই আকরাম জিনদেরও রসূল: জিন জাতি সম্পর্কে আলোচনা
মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মান্নান>
আমাদের আক্বা ও মাওলা হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম শুধু মানবদের রসূল নন; বরং জিন্, ফেরেশতা, প্রাণীকুল, পাথর, বৃক্ষরাজি সবারই রসূল। প্রত্যেক কিছ্ইু তাঁর উম্মত। মোটকথা, যে জিনিস আল্লাহ্ তা‘আলার সৃষ্ট (মাখলূক্ব) তা হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর উম্মত। যে জিনিসের আল্লাহ্ তা‘আলা রব, ওই জিনিসের জন্য হাবীবে খোদা রসূল। আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ ফরমায়েছেন-تَبَارَكَ الَّذِىْ نَزَّلَ الْفُرْقَانَ عَلٰى عَبْدِه لِيَكُوْنَ لِلْعٰلِمِيْنَ نَذِيْرًا তরজমা: বড় বরকতময় তিনি, যিনি অবতীর্ণ করেছেন ক্বোরআন আপন খাস বান্দার প্রতি, যাতে তিনি সমগ্র জগতের জন্য সতর্ককারী হন। [সূরা ফোরক্বান: আয়াত-১, কানযুল ঈমান]
এ আয়াতে আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ ফরমায়েছেন যে, ‘হুযূর-ই আকরাম সমস্ত বিশ্বের জন্য ‘নাযীর’ ও ‘রসূল’ (সতর্ককারী ও প্রেরিত পুরুষ)। ‘আলম’ বা ‘বিশ্ব’ মানে আল্লাহ্ ব্যতীত সবকিছু। সুতরাং বুঝা গেলো যে, বিশ্বের প্রতিটি অংশের জন্য হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম নবী ও রসূল; চাই তা (বিশ্বের অংশ) ইনসান হোক, কিংবা জিন্ হোক, ফেরেশতা হোক কিংবা প্রাণীকুল হোক, বৃক্ষ হোক কিংবা পাথর হোক। খোদ হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-
وَاُرْسِلْتُ اِلى الْخَلْقِ كَافَّةً وَخُتِمَ بِىَ النَّبِيُّوْنَ
[رَوَاهُ مُسْلِمٌ وَمِشْكَوة ـ صفحه ـ ٥۱۶]
অর্থ: আমাকে সমস্ত সৃষ্টির প্রতি রসূল করে প্রেরণ করা হয়েছে। আর আমি হলাম খাতামুন্নবিয়্যীন। (আমার পর কোন নবী পয়দা হবে না।)
[মুসলিম ও মিশকাত শরীফ, পৃ. ৫১৬]
এ নিবন্ধে ‘হুযূর-ই আক্রাম জিনদেরও রসূল’ এ বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করার প্রয়াস পাচ্ছিঃ
মিশকাত শরীফের ৫১৫ পৃষ্ঠায় হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা থেকে একটি দীর্ঘ হাদীস বর্ণিত, তিনি বর্ণনা করেন- ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ্ তা‘আলা হুযূর-ই আক্রাম হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে সমস্ত নবী এবং আসমানবাসীর উপর ফযীলত (শ্রেষ্ঠত্ব) দান করেছেন। সাহাবা-ই কেরাম আরয করলেন-
“হে ইবনে আব্বাস! আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁকে আসমানবাসীদের উপর কিভাবে ফযীলত (শ্রেষ্ঠত্ব) দিয়েছেন?” তিনি বললেন, আল্লাহ্ তা‘আলা আসমানবাসীদের উদ্দেশে বললেন, ‘‘তাদের মধ্যে যে কেউ একথা বলবে যে, সে আল্লাহ্ ব্যতীত সবার উপাস্য (মা’বূদ), আমি তাকে জাহান্নামের শাস্তি দেবো। এভাবেই আমি যালিমদেরকে শাস্তি দিই।” আর আল্লাহ্ তা‘আলা হুযূর-ই আক্রাম হযরত মুহাম্মদ মোস্তফাকে বলেছেন, ‘ইন্না-ফাতাহ্না- লাকা ফাত্হাম মুবীনা…।’ নিশ্চয় আমি আপনার জন্য সুস্পষ্ট বিজয় দান করেছি; যাতে আল্লাহ্ আপনার কারণে পাপ ক্ষমা করে দেন আপনার পূর্ববর্তীদের এং আপনার পরবর্তীদের। [সূরা ফাত্হ: আয়াত-১ও ২; কানযুল ঈমান]
সাহাবা-ই কেরাম আরয করলেন, নবীগণের উপর তাঁর ফযীলতের কারণ কি? তিনি বললেন, আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেছেন, “আমি কোন রসূল প্রেরণ করিনি, কিন্তু (করেছি) তাঁর সম্প্রদায়ের ভাষা সহকারে; যাতে তিনি তাদের উদ্দেশে বর্ণনা করেন। তারপর আল্লাহ্ তা‘আলা যাকে চান পথভ্রষ্ট করেন।” (আল-আয়াত) আর সরকার-ই দু’ আলম হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর উদ্দেশে আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেছেন-
وَمَا اَرْسَلْنَاكَ اِلاَّ كَآفَّةً لِلنَّاسِ
তরজমা: আমি আপনাকে সমস্ত মানুষের জন্য প্রেরণ করেছি।
فَاَرْسَلَه اِلَى الْجِنِّ وَالْاِنْسِ
অর্থ: অতঃপর, তাঁকে প্রেরণ করেছেন, জিন জাতি ও মানব জাতির দিকে।
এ হাদীস শরীফ থেকেও প্রমাণিত হলো যে, হুযূর-ই আক্রাম জিনদেরও রসূল। একবার হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম তায়েফ থেকে ফেরার পথে ‘বত্বনে নাখলাহ’য় অবস্থান করেছিলেন। রাতে উঠে তাহাজ্জুদের নামায পড়তে লাগলেন, ক্বোরআন শরীফ পড়তে আরম্ভ করলেন। নসীবীনের একদল জিন সেখানে এসে ক্বোরআন শরীফ শুনলো। তাদের নিকট তা খুব পছন্দ হলো। নামায সমাপ্ত করার পর তারা হুযূর-ই আক্রামের সামনে আত্মপ্রকাশ করলো এবং ঈমান আনলো। হুযূর-ই আক্রাম তাদেরকে তাদের সম্প্রদায়কে সতর্ক করার জন্য নিয়োগ করলেন। আর তাদেরকে পাঠিয়ে দিলেন।
সুতরাং ওই জিন্গুলো তাদের জন্মস্থানে গিয়ে তাদের সম্প্রদায়কে ইসলাম ও ঈমানের দাওয়াত দিলো। আর বললো- “হে আমাদের সম্প্রদায়! আমরা এমন একটি কিতাব শুনেছি, যা হযরত মূসার পর নাযিল করা হয়েছে। তা পূর্ববর্তী কিতাবগুলোর সত্যায়ন করে এবং সত্য ও সরল পথ দেখায়। হে আমাদের সম্প্রদায়! আল্লাহর আহ্বানকারীর কথা মেনে নাও! তাঁর উপর ঈমান আনো! তিনি আল্লাহ্ তোমাদের কিছু গুনাহ্ ক্ষমা করে দেবেন, তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে রক্ষা করবেন।’’ তাদের এ প্রচারণার ফলে সত্তরটি জিন মুসলমান হয়েছিলো।
[হাশিয়া-ই জালালাঈন, পৃ. ৪১৯]
সুতরাং একথা আরো সুস্পষ্ট হলো যে, জিনেরাও হুযূর-ই আক্রামের উম্মত।
জিনদের সম্পর্কে আরো কিছু কথা
কিছু সংখ্যক জিন্ মু’মিন এবং কিছুসংখ্যক কাফির
মানুষের মধ্যে যেমন কিছু সংখ্যক লোক মু’মিন আর কিছু সংখ্যক মানুষ কাফির রয়েছে, তেমনি কিছু জিন মু’মিন আর অন্যরা কাফির।
জিনদের মধ্যে বিভিন্ন ফির্ক্বা রয়েছে
যেমন মুসলমান মানুষদের বিভিন্ন ফির্ক্বা রয়েছে, তেমনি জিনদের মধ্যেও রয়েছেঃ কিছু সংখ্যক জিন সুন্নী, কিছু ওহাবী, কিছু শিয়া, রাফেযী ও মির্যায়ী ইত্যাদি। কুফরীতেও তারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত- কিছু সংখ্যক জিন ইহুদী, কিছু সংখ্যক খ্রিস্টান, কিছু সংখ্যক অগ্নিপূজারী, কিছু সংখ্যক মূর্তি পূজারী।
[সাভী, হাশিয়া-ই জালালাঈন, পৃ. ৪১৯]
জিনদের খাদ্য
সাধারণত: জিনদের খোরাক হচ্ছে ওই হাড়গুলো, যা আমরা গোশত খেয়ে ফেলে দিই। এ হাড়গুলোকে জিনেরা তুলে নেয়। তারপর আল্লাহ্ তা‘আলা আপন পূর্ণাঙ্গ ক্বুদরত দ্বারা ওই হাড়গুলোর উপর নতুনভাবে গোশ্ত পয়দা করে দেন, যা জিনেরা আহার করে। আর গোবর হচ্ছে তাদের পশুগুলোর খোরাক। যতদিন থেকে গোবর গোবর হয়, তত পরিমাণ শস্যদানা আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের পশুগুলোর জন্য প্রকাশ করে দেন, যেগুলো ওই পশুগুলো খায়। এ জন্যই রসূল-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আপন উম্মতদের উদ্দেশ্যে এরশাদ করেছেন-
لاَتَسْتَنْجُوْا بِالرَّوْثِ وَلاَ بِالْعِظَامِ
فَاِنَّهَا زَادُ اِخْوَانِكُمْ مِنَ الْجِنِّ
অর্থ: তোমরা গোবর ও হাড্ডি দিয়ে শৌচকর্ম সম্পাদন করোনা, কারণ তা তোমাদের জিন-ভাইদের খোরাক।
[তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত: পৃ.৪৩]
অনুরূপ, হযরত ইবনে মাস‘ঊদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বর্ণনা করেছেন-
لَمَّا قَدِمَ وَفْدُ الْجِنِّ عَلَى النَّبِىِّ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ اِنْهَ اُمَّتَكَ اَنْ يَسْتَنْجُوْا بِعَظَمٍ اَوْ رَوْثَةٍ اَوْ حُمَمَةٍ فَاِنَّ اللهَ جَعَلَ كَفَا فِيْهَا رِزْقًا ـ فَنَهَانَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ ذلِكَ
অর্থ: যখন জিনদের প্রতিনিধি দল নবী-ই আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র দরবারে আসলো, তখন আরয করলো, হে আল্লাহর রসূল! আপনার উম্মতকে নিষেধ করে দিন যেন তারা হাড্ডি, গোবর এবং কয়লা দ্বারা শৌচকর্ম সম্পাদন না করে। কারণ, আল্লাহ্ তা‘আলা এগুলোর মধ্যে আমাদের রিযক্ব (জীবিকা) রেখেছেন। (এগুলোকে আমাদের খোরাক করেছেন।) সুতরাং আল্লাহর প্রিয় রসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আমাদের তা করতে নিষেধ করে দিয়েছেন।
[আবূ দাঊদ, মিশকাত: পৃ.৪৪]
এ দু’টি হাদীস শরীফ থেকে বুঝা গেলো যে, জিন্ও মুসলমান আর রসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম জিনদেরও রসূল। জিনেরা হুযূর-ই আক্রামের উম্মতও।
জিনের প্রকারভেদ
জিন্ তিন প্রকারঃ এক. ওইসব জিন, যাদের পাখা আছে। আর ওই পাখাগুলো দ্বারা তারা উড়ে বেড়ায়। দুই. আরেক প্রকারের জিন সাপ ও কুকুরের আকৃতিতে থাকে। তিন. তৃতীয় প্রকারের জিন এক জায়গায় বসবাস করে। তারপর অন্য জায়গায় চলে যায়।
[সাভী, হাশিয়া-ই জালালাঈন: পৃ. ৪১৯]
জিনদের পরিণাম সম্পর্কে মতবিরোধ
মুসলমান জিনদের পরিণাম সম্পর্কে মতবিরোধ রয়েছে- কিছু সংখ্যক ইমামের মতে, এ জিনদেরকে তাদের ঈমানের বরকতে শুধু দোযখ থেকে মুক্তি দিয়ে মাটি করে ফেলা হবে। (নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হবে।) এটা হযরত ইমাম-ই আ’যম আবূ হানীফা এবং হযরত লায়স রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমার অভিমত। আইম্মা-ই সালাসাহ্ (ইমাম শাফে’ঈ, ইমাম মালেক ও ইমাম আহমদ) রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুম-এর মতে মুসলমান জিন্ জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং জান্নাতের নি’মাতগুলো ভোগও করতে পারবে।
তৃতীয় অভিমত হচ্ছে- মুসলমান জিনেরাও জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা; বরং তারা জান্নাতের পাশে থাকবে, যেখানে তাদের কোন কষ্ট হবে না।
[সাভী, হাশিয়া-ই জালালাঈন:পৃ. ১১৯] বলাবাহুল্য, কাফির জিনেরা জান্নাতে প্রবেশের প্রশ্নই আসে না।
মদীনা মুনাওয়ারার জিনেরা
সরকার-ই মদীনা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর বরকতে মদীনা মুনাওয়ারার জিনেরা মুসলমান হয়ে গিয়েছিলো। সুতরাং হুযূর-ই আক্রাম এরশাদ করেছেন-
اِنَّ بِالْمَدِيْنَةِ جِنًّا قَدْ اَسْلَمُوْا فَاِذَا رَأَيْتُمْ مِنْهُمْ شَيْئًا فَاٰذِنُوْهُ ثَلاَثَةَ اَيَّامٍ ـ فَاِنْ بَدَا لَكُمْ بَعْدَ ذلِكَ فَاقْتُلُوْهُ فَاِنَّمَا هُوَ شَيْطَانٌ ـ
অর্থ: নিশ্চয় মদীনা শরীফে যেসব জিন ছিলো, তারা মুসলমান হয়ে গেছে। যখন তোমরা তাদের থেকে কাউকে দেখতে পাও, তখন তিনদিন যাবৎ তাদেরকে সতর্ক করো। এরপরে যদি তাদের কেউ আত্মপ্রকাশ করে, তবে তাকে কতল করে ফেলো। কেননা, সে শয়তান অর্থাৎ কাফির জিন।
নোট: হাদীস শরীফ থেকে বুঝা গেলো যে, জিন কাফির ও মুসলমান হয়ে থাকে। ঘরগুলোতে থাকে। সেগুলোকে দেখা মাত্র মেরে ফেলা উচিত নয়।
হুযূর-ই আক্রাম এরশাদ করেছেন-
اِنَّ لِهذِهِ الْبُيُوْتِ عَوَامِرُ فَاِذَا رَاَيْتُمْ مِنْهَا شَيْئًا فَحَرِّجُوْا عَلَيْهَا ثَلاَثًا ـ فَاِنْ ذَهَبَ وَاِلاَّ فَاقْتُلُوْهُ فَاِنَّه كَافِرٌ –
[رواه مسلم ـ مشكواة ـ صفحه ٣۶٠]
অর্থ: নিশ্চয় এ ঘরগুলোতে কিছু বসবাসকারী থাকে। (অর্থাৎ ঘরগুলোতে জিনেরা থাকে।) যখন তোমরা তাদের থেকে কাউকে দেখো, তখন তাদেরকে তিনবার (ঘরগুলোতে থাকতে) নিষেধ করে দাও। (অর্থাৎ বলো, তুমি বের হয়ে যাও!) যদি চলে যায়, তবে তো ঠিক আছে, অন্যথায় সেটাকে মেরে ফেলো, কারণ সেটা কাফির। [মুসলিম, মিশকাত, পৃ. ৩৬০]
আজব ঘটনা
ইবনে আসাকির তাঁর ইতিহাস গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন-এক ব্যক্তি প্রশ্রাব করার জন্য এক বিরান জায়গায় গেলো। সেখানে সাপ দেখতে পেলো। সেটাকে সে মেরে ফেললো। ওই সাপ প্রকৃতপক্ষে একটি জিন ছিলো। জিনেরা সেখানে একত্রিত হয়ে গেলো এবং ওই লোককে হত্যা করতে চাইলো। তখন কোন এক জিন পরামর্শ দিলো, অমুক শায়খের নিকট চলো। তাঁকে এ ব্যাপারে ফাত্ওয়া জিজ্ঞাসা করে নিই। সুতরাং জিনেরা ওই লোককে শায়খের নিকট নিয়ে গেলো। শায়খ একজন বয়োবৃদ্ধ, সাদা দাড়ি ও সুন্দর চেহারা বিশিষ্ট ছিলেন। তিনি ঘটনা জিজ্ঞাসা করলেন। তারা পুরো ঘটনা বর্ণনা করলো। শায়খ বললেন, “নিহত জিনটি কোন্ আকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করেছিলো?” তারা বললো,“সাপের আকৃতিতে।” শায়খ বললেন, “লায়লাতুল জিন’-এ আমি হযরত মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম থেকে নিজ কানে শুনেছি। তিনি এরশাদ করেছেন, যে জিন তার অন্য কোন আকৃতিতে থাকাবস্থায় নিহত হয়, তার হত্যাকারীর উপর কিছুই (কোন শাস্তি) বর্তাবে না।” সুতরাং এ লোককে ছেড়ে দাও। অতএব, জিনেরা লোকটাকে ছেড়ে দিলো। [ফাতাওয়া-ই হাদীসিয়াহ্: পৃ. ১৭]
ঘটনা
ইমাম বায়হাক্বী বর্ণনা করেছেন, হযরত ওমর ইবনে আবদুল আযীয রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু মক্কা মু‘আয্যামাহ্য় যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে একটি মৃত সাপ দেখলেন। তিনি সেটাকে কাপড়ে জড়িয়ে দাফন করে দিলেন। এরপর এক বক্তার আওয়াজ শুনতে পেলেন। সে বলছিলো, “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি বিশ্বকুল সরদার সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে এরশাদ করতে শুনেছি। তিনি এরশাদ করছিলেন, “হে সারাক্ব! তুমি অমুক মরুভূমিতে মৃত্যুবরণ করবে। তোমাকে আমার উম্মতের এক অতি উত্তম মানুষ দাফন করবে।”
হযরত ওমর (ইবনে আবদুল আযীয) বললেন, “আল্লাহ্ তোমাকে দয়া করুন! তুমি কে?” সে বললো, “আমি এক জিন্। আর এ সারাক্বও এক জিন। জিনেরা হযরত রসূল-ই আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বায়‘আত গ্রহণ করেছিল। তাদের মধ্যে সবাই ইন্তিকাল করেছেন। একজন আমি আর এ সারাক্ব অবশিষ্ট ছিলাম। আমার অতি উত্তমরূপে স্মরণ আছে যে, প্রিয় রসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলছিলেন, “হে সারাক্ব! তোমার মৃত্যু এক মরুভূমিতে হবে। আর তোমাকে আমার উম্মতের এক অতি উত্তম ব্যক্তি দাফন করবে।”
[ফাতাওয়াহ-ই হাদীসিয়াহ:পৃ.৫৭]
ঘটনা
হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাস্‘ঊদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেছেন, “আমি কয়েকজন সাহাবীর সাথে সফররত ছিলাম। পথিমধ্যে এক মৃত সাপ দেখতে পেলাম। আমাদের সাথীদের থেকে একজন সেটাকে চাদরে জড়িয়ে দাফন করে দিলো। যখন রাত হলো, তখন আমরা দু’ নারীকে দেখলাম। যখন তাদেরকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো, তখন ওই নারীদ্বয় বললো, “কাফির জিনেরা মু’মিন জিনদের সাথে যুদ্ধ করেছে এবং এ’কে শহীদ করে ফেলেছে। বস্তুতঃ ইনি ওইসব জিনের একজন ছিলেন, যিনি ‘বত্বনে নাখ্লাহ্’য় সরকার-ই মদীনা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম থেকে ক্বোরআন শুনে ছিলেন (এবং ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন)। আর হুযূর-ই আক্রাম তাঁকে তাঁর সম্প্রদায়ের জন্য ইসলামের প্রচারক নিয়োগ করে পাঠিয়েছিলেন। [ফাত্ওায়া-ই হাদীসিয়াহ, পৃ. ৫৭]
লেখক: মহাপরিচালক-আনজুমান রিসার্চ সেন্টার, চট্টগ্রাম।