কুফরের হাক্বীক্বত
কুফরের হাক্বীক্বত
কুফরের হাক্বীক্বত বা বাস্তবতা দু’প্রকারঃ ১. আভিধানিক ও
২. পারিভাষিক বা শরীয়তের পরিভাষা সংক্রান্ত।
আভিধানিক হাক্বীক্বত
‘কুফর’ (كفر) শব্দের আভিধানিক অর্থ سر نعمت (নি’মাতকে গোপন করা)। [তাফসীর-ই বায়দ্বাভী, ১ম পারা]
বস্তুতঃ নি’মাতকে গোপন করা মানে নি’মাত পেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করা। অথবা নি’মাতের চর্চা না করা। এত্দভিত্তিতে ‘কুফর’ ‘কুফরান’(كفران ) -এর সমার্থক। কারণ, ‘কুফরান’ হচ্ছে ‘শুক্র’ (কৃতজ্ঞতা প্রকাশ)-এর বিপরীত।আলোচ্য ‘কুফর’ শব্দটির মূল বা উৎস হচ্ছেكفرٌ (কাফরুন)। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে শর্তহীনভাবে গোপন করা। كَفْرٌ থেকে নির্গত করে ‘কৃষক’কে এবং রাতকেও كَافِرٌ (কাফির) বলা যেতে পারে। কারণ, কৃষক ফসলের বীজকে জমির গর্ভে এবং রাত তার অন্ধকাররূপী চাদরের নিচে সমস্ত বস্তুকে ঢেকে নেয়। একইভাবে ফলের ছিলকা কেও একই কারণে এ শব্দ দ্বারা বুঝানো হয়।
পারিভাষিক হাক্বীক্বত
ইমাম গাযালী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি লিখেছেন, কুফর হচ্ছে-تَكْذِيْبُ الرَّسُوْلِ فِيْمَا جَاءَ بِه مِنْ عِنْدَ اللهِ
অর্থাৎ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম যেসব বিধান আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়ে এসেছেন, ওইসব বিধানে রসূলুল্লাহ্কে অস্বীকার করা।
ক্বাযী বায়দ্বাভী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি তাফসীর-ই বায়দ্বাভীতে লিখেছেন-
وَفِىْ الشَّرْعِ اِنْكَارُ مَا عُلِمَ بِالضُّرُوْرَةِ مَجِئَ الرَّسُوْلِ بِه
অর্থাৎ শরীয়তে ‘কুফর’ বলে ওইসব বস্তুকে অস্বীকার করাকে, যেগুলো সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে জানা যায় যে, হুযূর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ওইগুলো নিয়ে এসেছেন।
কুফরের প্রকারভেদ
সহীহ্ বোখারী শরীফের ব্যাখ্যাকারী আল্লামা কিরমানী বলেছেন, কিছু সংখ্যক বিজ্ঞ আলিম চার প্রকার কুফরের কথা বলেছেন। সুতরাং এ চার প্রকারের মধ্যে কোন এক প্রকার কারো মধ্যে পাওয়া গেলে সে কাফির; সে মাগফিরাত বা আল্লাহর ক্ষমা পাবার উপযোগী নয়-
১. ‘কুফর-ই ইন্কার’ (অস্বীকারজনিত কুফর)
২. ‘কুফরে জুহূদ’ ( স্বীকারোক্তি প্রত্যাখ্যান জনিত কুফর)
৩. ‘কুফ্র-ই মু’আনাদাহ্’ (গোঁয়ারতুমীজনিত কুফর) এবং
৪. ‘কুফর-ই নিফাক্ব’ (মুনাফিক্বসূলভ কুফর)।
কুফর-ই ইন্কার (كفر انكار) হচ্ছে- অন্তর ও রসনা উভয়টি দ্বারা অস্বীকার করা। আর দ্বীনের যে কোন বিষয়ই তার সামনে পেশ করা হোক না কেন, সে তা সম্পর্কে অজ্ঞ ও অস্বীকারকারী হয়। যেমন-আরবের প্রকাশ্য কাফিরগণ, যারা প্রকাশ্যভাবে কুফর করতো।
কুফর-ই জুহূদ (كفر جحود) হচ্ছে- অন্তরে তো মা’রিফাত বা পরিচিতি অর্জিত হয়েছে, কিন্তু মুখে স্বীকার করে না। যেমন- ইবলীসের কুফর।
কুফর-ই মু’আনাদাহ্ (كفر معانده) হচ্ছে- অন্তরে মা’রিফাত বা পরিচিতিও অর্জিত হয়েছে, মুখেও স্বীকার করেছে; কিন্তু তা গ্রহণ করে না। যেমন- খাজা আবূ তালিবের কুফর।
কুফর-ই নিফাক্ব -(كفر نفاق) হচ্ছে- মুখে তো স্বীকার করে, কিন্তু অন্তর স্বীকার করে না। যেমন- মুনাফিক্বদের কুফর। [কিরমানী শরহে বোখারী]
[গাউসিয়া তরবিয়াতী নেসাব, পৃ.৩২-৩৩]