Anjuman-E Rahmania Ahmadia Sunnia Trust

যাকাতের বর্ণনা

যাকাতের বর্ণনা

= যাকাতের বর্ণনা =
আল্লাহ তা’আলা এরশাদ ফরমান, ‘‘তারাই কল্যাণ লাভ করে, যারা যাকাত আদায় করে।’’ আরও এরশাদ ফরমান, ‘‘তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে, আল্লাহ তা’আলা এর বিনিময়ে আরও দেবেন এবং আল্লাহ তা’আলা উত্তম রুজি প্রদানকারী।’’ আরও ফরমান, যে সব লোক কৃপণতা করে তাতে, যা আল্লাহ তা’আলা স্বীয় মেহেরবাণীতে তাদেরকে দিয়েছেন, তারা যেন এটা মনে না করে যে, তা তাদের জন্য ভাল; বরং এটা তাদের জন্য অকল্যাণকর, ক্বিয়ামতের দিন ওই জিনিষের শৃঙ্খল তাদের গলায় পরানো হবে, যেটার সাথে কৃপণতা করেছিলো।’’ আরও ফরমান, ‘যেসব লোক সোনারূপা সঞ্চয় করে এবং ওইগুলো আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদেরকে ভয়ানক আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দাও। যে দিন জাহান্নামের আগুনে জ্বালানো হবে এবং এগুলো দ্বারা তাদের কপালে, দুপার্শ্বদেশে এবং পিঠে দাগানো হবে, তাদের বলা হবে, ‘‘এটা ওটাই, যা তোমরা নিজেদের জন্য সঞ্চয় করে রেখেছিলে। তাই এখন সঞ্চয় করার স্বাদ গ্রহণ কর।’’ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমায়েছেন, ‘‘যে সম্পদ বিনষ্ট হয়, তা যাকাত না দেয়ার কারণেই নষ্ট হয়ে থাকে।’’ আরও ফরমান, ‘‘যাকাত প্রদান করে নিজেদের সম্পদসমূহকে মজবুত কিল্লাসমূহের অন্তর্ভুক্ত করে নাও। নিজেদের রোগসমূহের চিকিৎসা সাদক্বা দ্বারা করো এবং বালা-মূসীবত নাযিল হলে প্রার্থনা ও কান্নাকাটি করে সাহায্য কামনা করো।’’ আরও ফরমায়েছেন, ‘‘আল্লাহ তা’আলা চারটি জিনিস ফরয করেছেন। সেগুলো হচ্ছে- নামায, যাকাত, রোযা ও হজ্ব।’’ আরও ফরমায়েছেন, ‘‘যে যাকাত দেয় না, তার নামায কবূল হয় না।’’ [তাবরানী- আওসাত, আবু দাউদ, ইমাম আহমদ, কবীর]
মাস্‌আলাঃ যাকাতের পরিমাণ হচ্ছে যাকাতের উপযোগী সম্পদের এক চল্লিশাংশ।
মাস্‌আলাঃ যাকাত ফরয। এর অস্বীকারকারী কাফির এবং যে তা ফরয জেনেও আদায় করে না সে ফাসিক্ব। আর আদায় করার বেলায় বিলম্বকারী গুনাহগার ও সাক্ষ্য প্রদানের অনুপযোগী।  [আলমগীরী ও বাহার]
শরীয়তের পরিভাষায় যাকাত বলা হয়- আল্লাহর ওয়াস্তে কোন মুসলমান ফক্বীরকে সম্পদের শরীয়ত নির্ধারিত একটি অংশের মালিক বানিয়ে দেয়াকে।
মাস্‌আলাঃ নিছক ভোগ করার অনুমতি দিলে যাকাত আদায় হবে না। যেমন ফক্বীরকে যাকাতের নিয়্যতে খাবার খাওয়ানো হলো। যাকাত আদায় হবে না। কারণ এর দ্বারা মালিক বানিয়ে দেয়া হলো না। তবে যদি খাবার দিয়ে দেয়া হয় এবং তার ইচ্ছে হলে খাবে বা নিয়ে যাবে, তাহলে আদায় হয়ে যাবে।   [দুর্রুল মুখতার]
মাস্‌আলাঃ মালিক করার জন্য এটাও প্রয়োজন যে, এমন লোককে যাকাত দেবে, যে গ্রহণ করতে জানে। অর্থাৎ এমন কাউকে যেন দেয়া না হয়, যে ফেলে দেবে বা ধোঁকা খাবে। এমনটি হলে যাকাত আদায় হবে না। যেমন ছোট শিশু বা পাগলকে যাকাত দিলে আদায় হবে না। যে শিশুর গ্রহণ করার মত জ্ঞান হয় নি, তার পক্ষে তার গরীব পিতা গ্রহণ করতে পারে বা ওই শিশুর যিম্মাদার বা ওই শিশুর লালন পালনকারী গ্রহণ করতে পারে।    [দুর্রুল মুখতার]
মাস্‌আলাঃ যাকাত ওয়াজিব হওয়ার জন্য কয়েকটি শর্ত রয়েছেঃ ১. মুসলমান হওয়া, ২. বালেগ হওয়া, ৩. বিবেকবান হওয়া, ৪. পূর্ণভাবে মালিক হওয়া, ৫. নেসাব ঋণমুক্ত হওয়া, ৬. নেসাব ব্যবহারিক সামগ্রীর অতিরিক্ত হওয়া। সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য অথবা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অথবা এর সমপরিমাণ টাকা, ৭. সম্পদ বৃদ্ধি পাওয়া ও ৮. এক বছর অতিবাহিত হওয়া।
‘যাকাত’ শাব্দিকভাবে ‘বৃদ্ধি পাওয়া’, ‘পবিত্রতা লাভ করা’, ‘প্রাচুর্য বা বরকতমণ্ডিত হওয়া’ ইত্যাদিকে বুঝায়। যাকাত দ্বারা যাকাতদাতার সম্পদে যেমন পবিত্রতা ও বৃদ্ধি আসে তেমনি আত্মারও পরিশুদ্ধতা লাভ হয় বিধায় যাকাতকে যাকাত বলা হয়। এ প্রসঙ্গে পবিত্র ক্বোরআন বলছে-
خُذْ مِنْ اَمْوَالِہِمْ صَدَقَۃً تُطَہِّرُہُمْ وَتُزَکِّیْہِمْ بِہَا  ‘হে মাহবূব! তাদের সম্পদ থেকে যাকাত গ্রহণ করুন, যা দ্বারা আপনি তাদেরকে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন করবেন।’’ [সূরা তাওবা, আয়াত-১০৩]
یَمْحَقُ اللّٰہُ الرِّبٰوا وَیُرْبِیْ الصَّدَقَاتِ আল্লাহ তা’আলা ধ্বংস করেন সুদকে আর (উভয় জগতে) বর্ধিত করেন (সাদক্বা-যাকাত ইত্যাদি) দানকে।            [সূরা বাক্বারা, আয়াত-২৭৬]
وَمَآ اَنْفَقْتُمْ مِنْ شَئٍ فَہُوَ یُخْلِفُہٗ ‘আর যা কিছু তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করো, তিনি তার পরিবর্তে আরো অধিক দেবেন।’  [সূরা সাবা, আয়াত-৩৯]
পরিভাষায়-মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত সম্পদের একাংশ মুসলিম দরিদ্র ব্যক্তিকে বিনা স্বার্থে প্রদান করে মালিক বানিয়ে দেয়ার নাম ‘যাকাত’। হিজরতের পর দ্বিতীয় সালে যাকাত ফরয ও সবিস্তারে প্রবর্তিত হয়।
কিছু জরুরী মাসায়েল 
মাসআলাঃ যাকাত ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের একটি। যাকাত ফরয। যাকাত অস্বীকারকারী কাফির। স্বেচ্ছায় আদায় না করা ফাসেক্বী, এটা ক্বতলযোগ্য অপরাধ। সময়মত আদায় না করাও গুনাহ্‌। শরীয়তে এমন ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়। [বাহারে শরীয়ত, যাকাত অধ্যায় থেকে]
মাস্‌আলাঃ বছর শেষে এ নিয়্যতে মূল সম্পদ থেকে কিছু মাল আলাদা করে রাখলেই যাকাত আদায় হবে না, যতক্ষণ ফক্বীর-মিস্‌কীনকে মালিক বানানো হবে না। এভাবে ফক্বীরকে যাকাতের নিয়্যতে আহার করালে বা কোন ঘরে বসবাস করতে দিলেও যাকাত আদায় হবে না। যেহেতু প্রদত্ত সম্পদের মালিক বানানো হয়নি। হ্যাঁ, যদি খাদ্যবসু্ত দিয়ে দেয়, যা সে ইচ্ছে হলে খাবে কিংবা নিয়ে যাবে, এভাবে পরিধানের কাপড় দিলেও যাকাত আদায় হবে। [বাহারে শরীয়ত, যাকাত অধ্যায় থেকে]
মাস্‌আলাঃ যাকাত ওয়াজিব হওয়ার জন্যে কিছু পূর্বশর্ত রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে-
১.   মুসলমান হওয়া। সুতরাং অমুসলিমের উপর যাকাত ফরয নয়। তেমনি কোন কাফির ইসলাম গ্রহণ করলে তাকে কাফির থাকাকালীন সময়ের যাকাত দিতে হবে না।
২.   বালেগ হওয়া। অতএব, না-বালেগের সম্পদের যাকাত নেই।
৩.   আক্বল বা জ্ঞান সম্পন্ন হওয়া। অতএব, সারা বছর পাগল অবস্থায় থাকা ব্যক্তির উপর ওই বছরের যাকাত ওয়াজিব নয়।
৪.   আযাদী বা স্বাধীনতা। তাই দাস-দাসী, মাঞ্চযূন কিংবা মুকাতাব-কারো সম্পদে যাকাত ওয়াজিব নয়।
৫.   সম্পদ নিসাব পরিমাণ হওয়া।
৬.   নিসাব পরিমাণ সম্পদ পূর্ণ মালিকানা এবং আয়ত্বে থাকা।
৭.   এ নিসাব পরিমাণ অর্থ কর্জের অতিরিক্ত হওয়া।
৮.   জীবন ধারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় সম্পদেরও অতিরিক্ত হওয়া।
৯.   সম্পদ প্রবৃদ্ধিমূলক হওয়া। যেমন স্বর্ণ-চাঁদি, ব্যবসার মাল এবং  সা-ইমাহ্‌ অর্থাৎ এমন সব গৃহপালিত জন্তু, যেগুলো স্বাধীনভাবে চারণভূমিতে বিচরণ করে ঘাস খেয়ে বেড়ায় এবং মালিকের পক্ষ থেকে কোন ব্যয় নির্বাহ করতে হয় না।   মালিক সেগুলো দিয়ে চাষাবাদও করেনা।
১০.নিসাব পরিমাণ সম্পদে পূর্ণ এক বছর অতিবাহিত হওয়া। বছরের প্রারম্ভে ও শেষে নিসাব পরিপূর্ণ হয়েছে; কিন্তু মাঝখানে ঘাটতি হলে তা ধর্তব্য নয়।
মাস্‌আলাঃ যাকাত আদায়কালীন কিংবা যাকাতের মাল পৃথক করার সময় নিয়্যত করা পূর্বশর্ত। কেউ সারা বৎসর নিয়্যতবিহীন দান-খয়রাত করতে থাকলে আর বৎসরান্তে যাকাতের নিয়্যত করলে যাকাত আদায় হবে না।