সম্পাদকীয়: বহুগুণে গুণান্বিত নবীগণের পর সর্বোত্তম মানব অভিধায় ভূষিত তিনি।
ইসলামের প্রথম খলীফা খলীফাতুর রাসূল হযরত সৈয়্যদুনা আবু বকর সিদ্দিক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা’র ওফাতের স্মৃতি বিজড়িত এ মাস। বহুগুণে গুণান্বিত আফদ্বালুন্ নাস বা’দাল আম্বিয়া- নবীগণের পর সর্বোত্তম মানব অভিধায় ভূষিত তিনি। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র ইসলাম প্রচারের প্রাক্কালে সুখে-দুঃখে সদা-সর্বদা পাশে থেকে সর্বোত সহযোগিতা দিয়েছিলেন। সর্বপ্রথম তিনি পবিত্র ধর্ম ইসলাম গ্রহণ করে ধন্য হয়েছিলেন- তাঁর সমুদয় ধন-সম্পদ প্রিয় নবীর কদমে উৎসর্গ করে আল্লাহর মনোনীত ধর্ম ইসলাম দিগ-দিগন্তে ছড়িয়ে দিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ইসলামের প্রারম্ভে যেমন ভূমিকা রেখেছিলেন তেমনি রাসূলে পাকের ওফাতের পর ইসলামের চরম দুর্দিনে তিনি শক্ত হাতে ইসলাম ও ইসলামী রাষ্ট্রের হাল ধরেন। কর্তব্যনিষ্ঠা, ত্যাগের মহিমা আর নিঃস্বার্থ প্রজাপালনে পৃথিবীর ইতিহাসে যেসব বিরল ব্যক্তিত্ব সুখ্যাতি অর্জন করে চির অমর হয়ে আছেন তাদের মধ্যে সর্বপ্রথম যার নাম উচ্চারণ করতে হয় তিনি হলেন খোলাফায়ে রাশেদীনের প্রথম খলীফা খলীফাতুর রাসূল হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু। ইসলামের ইতিহাস এটা স্বীকার করে যে, তখন একদিকে কপট চিত্ত মানুষ স্বধর্ম ত্যাগ করে অন্যদিকে ভন্ড নুবূয়তের দাবীদারগণ এবং যাকাৎ অস্বীকারকারীগণ প্রমুখ ইসলামী রাষ্ট্রকে বিপর্যস্ত করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠে। অভ্যন্তরীন গোলযোগ ও বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন ও ধর্মদ্রোহী কার্যকলাপ,বহিশত্রুর আক্রমণ ইহুদী-ক্রিষ্টানদের ষড়যন্ত্র ইত্যাদি ইসলাম ধর্ম এবং নবপ্রতিষ্ঠিত ইসলামি রাষ্ট্রকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয়। তখন শক্ত হাতে তিনি সেটার স্থিতি ফিরিয়ে আনেন। তিনি আল্লাহর উপর অবিচল আস্থা,নবীপাকের দৃঢ় অনুসরণ,রাজনৈতিক প্রজ্ঞা,সুনিপুণ কর্মকৌশল দ্বারা ইসলামি রাষ্ট্রের ভিতরে বাইরে বিরাজিত যাবতীয় ফিতনা নির্মূল করে ইসলামের বিজয় নিশান উড্ডিন করেন। তাই তিনি ইসলামের ত্রাণকর্তা রূপে মুসলিম মিল্লাতের কাছে সমাদৃত রাষ্ট্রনায়ক।
তাঁর মূল্যবান জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে রয়েছে বিশ্ব মুসলমানের জন্য শিক্ষাণীয় বিষয়াদি। খলীফা নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি প্রথম যে ভাষণটি দেন তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং অনুসরণীয় ও অনুকরণীয়। তিনি জনতার উদ্দেশে বলেন- হে লোকসকল! সর্বোত্তম ব্যক্তি না হওয়া সত্ত্বেও আমাকে তোমাদের উপর কর্তৃত্ব দেওয়া হয়েছে। সুতরাং যদি আমি সঠিক কাজ করি তবে আমাকে সাহায্য করবে, আর যদি ভুল করি তবে আমাকে সংশোধন করে দিও। সততা একটি পবিত্র আমানত আর মিথ্যা হচ্ছে বিশ্বাসঘাতকতা। তোমাদের মধ্যে যে দুর্বল আমি তাকে তার অধিকার আদায় করে না দেয়া পর্যন্ত সে সবল, পক্ষান্তরে তোমাদের শক্তিশালীরা আমি তাদের কাছে থেকে শরীয়তের পাওনা আদায় না করা পর্যন্ত দুর্বল। কোনো জাতি জিহাদ ত্যাগ করলে অবশ্যই আল্লাহ তা‘আলা তাকে লাঞ্ছিত করে ছাড়বেন। কোনো জাতির মধ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়লে আল্লাহ অবশ্যই তাদেরকে পরীক্ষায় ফেলেন। আমি যতক্ষণ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে মেনে চলি ততক্ষণ তোমরা আমাকে মেনে চলো, আর যদি আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে মেনে না চলি, তাহলে আমার প্রতি তোমাদের আনুগত্যের কোনো বাধ্যবাধকতা থাকবে না। হযরত সিদ্দিক্ব-ই আকবর তাঁর ওফাতের পূর্বে পরিবারকে ওসিয়ত করে যান, খলীফা হিসেবে আমি যে পরিমাণ ভাতা গ্রহণ করেছি সে পরিমাণ টাকা আমার অমুক জায়গাটি বিক্রি করে সরকারি কোষাগারে জমা করে দিও।’’ তাঁর জীবনাদর্শ অনুসরণ সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য এক অনুপম শিক্ষার উপকরণ হিসেবে কিয়ামত পর্যন্ত বিদ্যমান থাকবে। বিশ্বের সকল নেতা সকল প্রশাসক ইসলামি নেতৃবৃন্দ তাদের যোগ্যতা ও প্রজ্ঞা বৃদ্ধিতে কাজে লাগাতে পারবেন । এ মহান মনীষীর মূল্যবান জীবনাদর্শ তুলে ধরে পচন ধরা সমাজকে সংশোধন ও তাঁর অনুসরণ-অনুকরণে ব্রতী হওয়া সকলের দায়িত্ব। আল্লাহ্ পাক মুসলিম মিল্লাতকে খোলাফায়ে রাশেদার আদর্শ অনুসরণে জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন- আ-মী-ন।
দেশ শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি মাস থেকে শৈত্যপ্রবাহ সহ তীব্র শীত পড়বে দেশে। গরীব অসহায় নিঃস্বদের মাঝে শীতবস্ত্র দিয়ে যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী এগিয়ে আসার নিবেদন রইল। ইতোমধ্যে আন্জুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট’র অঙ্গসংগঠন গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ’র বিভিন্ন শাখা অসহায় দরিদ্রদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণের কর্মসূচি শুরু করেছে- আমাদের পার্শ্ববর্তী অসহায়দের কথা আমরা যেন না ভুলি।
হাসি-কান্না, পাওয়া-না পাওয়া সহ বহু আনন্দ বেদনার সাক্ষী হয়ে আমাদের থেকে বিদায নিয়েছে একটি বছর। আমাদের জীবন থেকে আরো একটি বছর কমে গেছে- ক্রমেই আমরা জীবনের শেষ সময়ে উপনিত হচ্ছি। স্বাগত ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ শুভ নববর্ষ। নতুন বছরে বাংলাদেশ ও মুসলিম বিশ্ববাসী অমিত সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যাক নববর্ষে এ প্রত্যাশা করি। সকল লেখক পাঠক শুভানুধ্যায়িদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা।