মামবা-এ আসরার ও হাক্বীক্বত ক্বুতবে দাওরান আল্লামা হাফেয ক্বারী সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটী রহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহি
প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাসউদ আহমদ (পাকিস্তান)
[প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাসউদ আহমদ পাকিস্তানের একজন প্রাজ্ঞ গবেষক ও লেখক। বিশেষত চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হির জীবন-কর্মের উপর মূল্যবান গবেষণা করে তিনি বিশ্বব্যাপী আ’লা হযরত গবেষক হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। তাঁর লেখা সকলের কাছে গ্রহণীয়। ইলমে লাদুন্নীর মহান ধারক খাজা আবদুর রহমান চৌহরভী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হির দুরূদ-সালামের উপর লিখিত বিশ্ববিখ্যাত গ্রন্থ ‘‘মাজমূআ‘আহ্ সালাওয়াতির রসূল’’-এর উপর ‘ইফতিতাহিয়্যা’ নামে তিনি একটি গবেষণাধর্মী পুস্তক রচনা করেছেন। এ পুস্তকে ‘মাজমূআহ্-এ সালাওয়াতির রসূল’র রচনাশৈলী বৈশিষ্ট্য ইত্যাদির উপর সারগর্ভ আলোচনার পাশাপাশি খাজা আবদুর রহমান রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি ও তাঁর প্রধান খলীফা গাউসে যামান আল্লামা সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হির পুণ্যময় জীবনের উপর আলোকপাত করেন। এ পুস্তকের ‘হযরত হাফেয সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটী’ শিরোনামের অধ্যায়টি এখানে পত্রস্থ হলোঃ অনুবাদ করেছেন মাওলানা মুহাম্মদ নেজাম উদ্দীন।
হযরত মাওলানা হাফেয সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি ছিলেন নবী বংশের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। সিরিকোট (হরিপুর, হাজারা, পাকিস্তান)-এ তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ভারতবর্ষে বিভিন্ন আরবী মাদরাসায় ইলমে মা’কুলা (বুদ্ধিভিত্তিক শিক্ষা) ও ইলমে মানকুলাহ্ (কোরআন-হাদীস) নিয়ে শিক্ষা অর্জন করেন। দেওবন্দ দারুল উলূমে মৌলভী মাহমূদুল হাসান’র নিকটও তিনি লেখা-পড়া করেন এবং তাঁর প্রথম সারির ছাত্রদের মধ্যে গণ্য হন। এতদ্সত্তে¡ও তিনি দেওবন্দী আক্বীদায় বিশ্বাসী ছিলেন না। বরং বিশুদ্ধ আকীদাধারী সুন্নী ও হানাফী ছিলেন। যার প্রমাণ তাঁর প্রতিষ্ঠিত ওই সব মাদরাসা, যেগুলো বাংলাদেশে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত-এর বেশ খিদমত ও প্রতিনিধিত্ব করছে।
ইলম শিক্ষা করার পর আফ্রিকার ক্যাপটাউন, মানজরার মুমবাসা প্রভৃতি শহরে ইসলামের প্রচারে অনেক দিন পর্যন্ত দ্বীনি প্রচার অভিযান চালান। আফ্রিকা থেকে প্রিয় মাতৃভ‚মিতে ফিরে আসার পর হযরত খাজা আবদুর রহমান চৌহরভী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হির খিদমতে চৌহর শরীফে উপস্থিত হন, যা সিরিকোট থেকে প্রায় ১৮ মাইল দূরে অবস্থিত। আর খাজা চৌহরভীর হাতেই বায়‘আতের সৌভাগ্য অর্জন করে ধন্য হন।
শায়খ-ই তরীক্বত খাজা চৌহরভী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হির নির্দেশে ১৯২০ সালে হরিপুর ত্যাগ করে রেঙ্গুন তাশরীফ নিয়ে যান এবং সেখানে সিলসিলা-ই আলিয়া কাদেরিয়াহ্ রহমানিয়াহ্ এবং ইসলামের খুব প্রচার-প্রসার করেন।
হাজারের অধিক লোককে স্বীয় পীরের সাথে গায়েবী বায়‘আত করান এবং লক্ষাধিক মানুষকে সৎপথ প্রদর্শন করান। প্রথমদিকে তাঁর ইজাযত ও খিলাফত অর্জিত ছিল না। কিছুকাল পর তিনি এ মহান সৌভাগ্যও লাভে ধন্য হন। রেঙ্গুনবাসী তরীক্বতের এক ভাই তাফাজ্জাল হক লিখেছেন-
‘‘তিনি যখন ১৯২০ সালে বার্মার রেঙ্গুনে আসেন, তখন প্রথমদিকে কিছুকাল স্বীয় মুরশিদ গাউসে যামান হযরত আবদুর রহমান চৌহরভী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হির মর্যাদা ও কামালাত সম্পর্কে লোকদেরকে অবহিত করতে থাকেন। তিনি মহান রবের একত্ববাদের প্রেরণায় আলোকিত ছিলেন এবং ওই ময়দানের শেষ সীমা পর্যন্ত পরিভ্রমণ করেছিলেন। আর তখনও তার পীর-মুর্শিদ জীবিত ছিলেন এবং তাঁর অমীয় বাণীগুলো ও নির্দেশনাপত্র মারফত প্রেরিত হত। তাই তাঁর প্রতি মানুষের ভালবাসা ও ভক্তি দিনদিন বৃদ্ধি পেতে আরম্ভ করল। একদিন রহমতের সমুদ্র জোশে আসল, কাদেরিয়া ফয়েজসমূহ ঢেউ খেলতে লাগল, ভালবাসার পিপাসার্তকে রহমতের পানি দ্বারা তৃষ্ণা মিটানোর সময় আসল। তখন হযরত গাউসে যামান আবদুর রহমান চৌহরভী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি পত্র মারফত হযরত সিরিকোটীকে বায়‘আতের অনুমতি দান করলেন। আর তখন থেকেই লোকেরা তাঁর থেকে তরীক্বতের দীক্ষা গ্রহণ করে ধন্য হতে লাগল।’’ [তাফাজ্জল হক, সংক্ষিপ্ত রিপোর্ট, শূরা-এ রহমানিয়া, রেঙ্গুন, ১৯৩৫, পৃ-২]
যেহেতু হযরত আবদুর রহমান চৌহরভী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হির ওফাত হয় ১৯২৪ সালে আর হযরত সিরিকোটী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি ১৯২০ সালে রেঙ্গুনে পদার্পণ করেন, সেহেতু ১৯২০-১৯২৪ সালের মধ্যকার কোন এক শুভ মুহূর্তে তাঁকে ইজাযত ও খিলাফত প্রদান করেন। হযরত সিরিকোটী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি প্রায় ১৬ বছর রেঙ্গুনে অবস্থান করেন। এ দীর্ঘ সময়ে সেখানে তিনি লক্ষাধিক পথভ্রষ্ট মানুষকে সৎ পথ প্রদর্শন করেন। রেঙ্গুন অবস্থানকালে হযরত হাফেয সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি ইসলাম ও তরীক্বতের অনেক গুরুত্বপূর্ণ খিদমত করেছেন। কিন্তু তন্মধ্যে অত্যন্ত বৈশিষ্ট্যমÐিত ও গুরুত্বপূর্ণ যে তিনটি কাজ তিনি করেছেন, তা হচ্ছে-
এক. দারুল উলূম ইসলামিয়া রহমানিয়া (চৌহর শরীফ)-এর নতুন ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন
এ দারুল উলুম ১৯০২ সালে হযরত আবদুর রহমান চৌহরভী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি প্রতিষ্ঠা করেছেন। হযরত হাফেয সিরিকোটী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি রেঙ্গুন ও বাংলাদেশের তরীকতপন্থী ভাইদের আর্থিক সাহায্যে এ মাদরাসার কাঁচা ঘরকে দু’ তলা বিশিষ্ট বিরাটাকার ইমারতে পরিণত করেন। শিক্ষকগণের জন্য আবাসন এবং ছাত্রদের জন্য ছাত্রাবাস নির্মাণ করেন। আর শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য প্রতি মাসে রেঙ্গুন থেকে বেতন ইত্যাদিও প্রেরণ করতেন। যেমন- হযরত সিরিকোটী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হির মুরীদ তাফাজ্জল হক ওই সৌভাগ্যের বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখেছেন-
‘‘দারুল উলূম রহমানিয়ার প্রতিষ্ঠাতা হযরত মুহাম্মদ আবদুর রহমান চৌহরভী স্বীয় যুগের গাউস ছিলেন। তিনি নিজ হাতে মাদরাসা-এ ইসলামিয়া রহমানিয়া (হরিপুর)’র ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন এবং মাজমূ‘আহ্-এ সালাওয়াতে রসূল’র মত মহান মর্যাদামÐিত গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর হাজারেরও অধিক মুরীদ ও খলীফা ছিল। কিন্তু মাদরাসা পরিচালনা ও ‘মাজমু‘আহ্-এ সালাওয়াতে রসূল’ গ্রন্থ ছাপানোর মহান দায়িত্ব কারো ভাগ্যে জুটেনি। আমাদের প্রিয় মুর্শিদ হযরত সিরিকোটী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি এ মহান সৌভাগ্য অর্জন করেন। আর তাঁর মাধ্যমে আমরা রেঙ্গুনবাসীও এ সৌভাগ্য লাভে ধন্য হয়েছি।’’
[তাফাজ্জল হক, সংক্ষিপ্ত রিপোর্ট, শূরা-এ রহমানিয়া, রেঙ্গুন, ১৯৩৫, পৃ. ৪-৫]
দুই. জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিষ্ঠা-
হযরত সৈয়দ আহমদ শাহ্ সিরিকোটী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হির প্রধান দ্বিতীয় কর্মটি হল বাংলাদেশে ‘জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া’ প্রতিষ্ঠা করা। ইসলামের প্রচার-প্রসারে এ প্রতিষ্ঠান বর্তমানেও গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে যাচ্ছে। তাঁর মুরীদগণ খুব সুচারুভাবে এ প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন। এ প্রতিষ্ঠান দ্বীনি শিক্ষার আলো দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দিচ্ছে। অনেক জ্ঞানপিপাসু জ্ঞান তৃষ্ণা নিবারণে এ মাদরাসায় ছুটে আসছে এবং জ্ঞান অর্জন শেষে দেশ ও জাতির খিদমতে আত্মনিয়োগ করছে।
তিন. মাজমু‘আহ্-এ সালাওয়াতে রসূল’র প্রকাশনা ও প্রচার-
হযরত হাফেয সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি ১৯২০ সালে রেঙ্গুন তাশরীফ নিয়ে যান। কিছুকাল পর হযরত খাজা আবদুর রহমান চৌহরভী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি পত্রের মাধ্যমে তাঁর রচিত ‘মাজমু‘আহ্-এ সালাওয়াতে রসূল’ সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করান। স্বয়ং হযরত সিরিকোটী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি এ ব্যাপারে বলেছেন-‘‘হুযূর পুরনূর মুর্শিদে বরহক নূরে মুতলাক, খাজা-এ খাজেগান হযরত খাজা আবদুর রহমান চৌহরভী কাদ্দাসাল্লাহু সিররাহুল আযীয ‘মুহায়্যারুল উক্বুলুল ফাহুল ফী বায়ানি আওসাফি আকলিল উক‚ল (সংক্ষেপে মাজমু‘আহ্ সালাওয়াতির রসূল) ১২ বছর ৮ মাস ২০ দিনে লিখে সমাপ্ত করেন। তাঁর একনিষ্ট বিশেষ কয়েকজন মুরীদ ছাড়া অন্য কেউ এ সম্পর্কে অবগত ছিলেন না যে, তিনি এ ধরনের একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। কয়েক বছর পর্যন্ত ওই গ্রন্থ গোপন ছিল। তিনি এ কিতাব ছাপানোর নামও কখনো নেননি। যখন তাঁর ওফাতের সময় ঘণিয়ে আসল, তখন তিনি আমাকে পত্র মারফত এ নির্দেশ দিলেন, ‘‘আমি একটি গ্রন্থ সঙ্কলন করেছি। এখন এ কিতাব প্রকাশের আশা পোষণ করি। যদি সম্ভব হয়, তুমি রেঙ্গুনের মুসলমানদের থেকে চাঁদা নিয়ে এ কিতাব ছাপানোর ব্যবস্থা কর।’’
[ভ‚মিকা: মাজমু‘আহ্ সালাওয়াতে রসূল, পৃ. ৩৮]
আল্লামা সিরিকোটী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি রেঙ্গুনস্থ তাঁর বন্ধু-বান্ধব ও মুরীদগণের সাথে এ ব্যাপারে পরামর্শ করেন। প্রেস থেকে মুদ্রণ ব্যয় সম্পর্কে জেনে নেন। ওই কমমূল্যের যুগেও এ গ্রন্থের মুদ্রণ ব্যয় চার হাজার টাকা ধার্য করা হয়। ১০ যিলহজ্ব ১৯২৩ সালে রেঙ্গুনে তাঁর এক ধনাঢ্য ভক্ত শেঠ আহমদ উল্লাহ্ এ গ্রন্থের যাবতীয় মুদ্রণের ব্যয়ভার নিজের যিম্মায় নেন। খাজা আবদুর রহমান চৌহরভী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হির ওফাতের পর হযরত হাফেয সিরিকোটী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হির পৃষ্ঠপোষকতায় ‘মাজমু‘আহ্ সালাওয়াতে রসূল’র প্রথম সংস্করণ বের হয় এবং বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। হযরত হাফেয সিরিকোটী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি তরীকত সম্পর্কীয় ভাই মাওলানা আযমত উল্লাহ্ সিরিকোটী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি এ গ্রন্থের প্রকাশনার বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখেছেন যে, ‘‘অত্যন্ত খুশীর ব্যাপার যে, এ বরকতময় কিতাব ‘মুহায়য়্যিরুল উক‚ল ফী বয়ানি আওসাফি আকলিল উক‚ল’ (যা মাজমূ‘আহ্ সালাওয়াতে রসূল নামে প্রসিদ্ধ) এর মুদ্রণ ও প্রচার প্রসারের সৌভাগ্য আমার সম্মানিত ভাই মাওলানা হাফেয সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ অর্জন করেছেন আর যাবতীয় মুদ্রণ ব্যয়ভার বহন করার গৌরব অর্জন করেছেন শেঠ আহমদ উল্লাহ্ কাবাহু এবং রেঙ্গুনে বসবাসরত তরীকতের অন্যান্য ভাইয়েরা। দুনিয়া ও আখিরাতে তাঁদের এ শুভ প্রচেষ্টার জন্য মহান আল্লাহর শুকরিয়া নিবেদিন করছি।
হা-শা আঁয় ইয়াহ্রিমার রা-জী- মাকা-রিমাহ্ আও ইয়ারজি‘আল জা-রু মিনহু গায়রু মুহতারামী অর্থাৎ আশাবাদী, আউলিয়া-ই কেরামের শুভদৃষ্টি হতে বঞ্চিত হওয়া অসম্ভব এবং তাদের ঘনিষ্টতম ব্যক্তি তার সান্নিধ্য হতে অসম্মানিত হয়ে ফিরে যাওয়াও অবাস্তব।’’
[পূর্বোক্ত, পৃ. ২২]
এ গ্রন্থের প্রথম প্রকাশের পর হযরত হাফেয সিরিকোটী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হির সার্বিক প্রচেষ্টা এবং আল্লামা আমীর শাহ্ গীলানীর ব্যবস্থাপনায় ১৯৫৩ সালে পুনরায় এ গ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়। আল্লামা সিরিকোটী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি ‘মাজমু‘আহ্ সালাওয়াতে রসূল’র প্রকাশ ও প্রচারে আত্মত্যাগ ও কোরবানীর যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, সেটা নিজেই নিজের উদাহরণ। ভালবাসা থাকলে এমনই হওয়া উচিত। আপন পীরের প্রতি ভক্তি ও আনুগত্য থাকলে এমনই থাকা চাই, আত্মত্যাগী হলে এমনই হওয়া উচিত।
জীবদ্দশায় হযরত খাজা আবদুর রহমান চৌহরভী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি হযরত হাফেয সিরিকোটী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হিকে এ বলে নির্দেশ করেছেন, ‘‘যতদিন মাজমূ‘আহ্-এ সালাওয়াতে রসূল’র প্রকাশ এবং দারুল উলূম ইসলামিয়া রহমানিয়ার উপযুক্ত ব্যবস্থা না হবে ততদিন প্রিয় মাতৃভ‚মিতে আসবে না।’’
সুতরাং হযরত হাফেয সিরিকোটী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি ওই নির্দেশকে এমনভাবে কার্যে পরিণত করে দেখিয়েছেন যে, তাঁর প্রাণপ্রিয় সন্তান ইন্তিকাল করা সত্তে¡ও তিনি রেঙ্গুন ছেড়ে প্রিয় মাতৃভ‚মিতে মুহূর্তের জন্যও আসেননি। ১৯২৫ সালে তাঁর প্রিয় সন্তান মাওলানা মুহাম্মদ সালেহ্ রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হির গুরুতর অসুস্থতার টেলিগ্রাফ পেয়েও তিনি লিখেছেন-
‘‘প্রিয় সন্তান মুহাম্মদ সালেহর গুরুতর অসুস্থতার তারবার্তা আসল। আমাকে দেশে ফিরে যেতে বলা হল। কিন্তু দুরূদ শরীফ ও মাদরাসা-এ ইসলামিয়া রহমানিয়ার খিদমতের কারণে যাওয়া সম্ভব হয়নি। আমার কার্যকে আমি আল্লাহর প্রতি সোপর্দ করলাম। নিশ্চয় আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের কার্য দেখছেন।’’
[পত্র. হযরত সিরিকোটী, মুহাম্মদ আবদুল আযীয’র নামে ১৯২৫ সালে রেঙ্গুন হতে প্রেরিত।]
অতঃপর ১৯২৮ সালে প্রিয় সাহেবযাদার ইন্তেকালের তারবার্তা আসল। ওই সময় তার হৃদয় ও অন্তরের কী অবস্থা হয়েছিল। কিন্তু, না ধৈর্য ও অটলতার মহান পায়কারী ওই সময় নিজের অনুভ‚তি প্রকাশ করতে গিয়ে লিখেছেন-‘‘কলিজার টুকরো, রূহ ও প্রাণের প্রশান্তি, মায়ের চোখের জ্যোতি, বাবার আশার পুষ্পোদ্যান মৌলভী মুহাম্মদ সালেহ্ কাদ্দাসাল্লাহু সিররাহুল আযীয ৩ শাবান, বুধবার যোহরের সময় নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে এ নশ্বর জগৎ ছেড়ে অবিনশ্বর জগতে চলে গেছেন। তাঁর বিচ্ছেদ ও শোকের উপর আল্লাহ্ তা‘আলার জন্য যাবতীয় প্রশংসা।’’ [পূর্বোক্ত, ১৯২৮ সালে]
পত্রে আরো লিখেছেন- ‘‘যদি সন্তানের রোগ ও মৃত্যু সংবাদ শুনে চলে যেতাম, তবে দুরূদ শরীফ ও মাদরাসার খিদমতে যথেষ্ট ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা ছিল। তদুপরি মুরশিদে বরহক জীবদ্দশায় এক পত্রের মাধ্যমে নিষেধ করেছিলেন যে, কাজ ছেড়ে কখনো যেন দেশে না আসি। আমিও বলেছিলাম, কখনও যাবো না, যদিও বাজী সাহেব (খাজা আবদুর রহমান) ইন্তিকাল করেন। অথবা সম্মানিত পিতাও চলে যান, এমনকি আমার সন্তান মারা গেলেও কখনো দেশে ফিরে যাব না।’’
[পূর্বোক্ত]
এসব পার্থিব দুঃখ ও ঘটনাবলীই বেলায়তের সোপান। রূহানী উন্নতি ও বিকাশ বাহ্যিক অঘটন ও ক্ষতির মাধ্যমেই হয়ে থাকে। যে ব্যক্তি দুঃখ-দুশ্চিন্তা, বিপদ-আপদ, ভয়-আতঙ্কের মধ্যে প্রশান্তি ও দুশ্চিন্তা মুক্তভাবে জীবন অতিবাহিত করতে পেরেছেন, সেই সফলকাম ও কামিয়াব হয়েছেন।
হযরত হাফেয সিরিকোটী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি স্বীয় মিশন সম্পন্ন করে ১৯৩৫ সালে প্রিয় মাতৃভ‚মিতে ফিরে আসেন। বিদায় প্রাক্কালে রেঙ্গুন ও বাংলাদেশের তাঁর মুরীদ ও ভক্ত তাঁকে বিদায় সম্ভাষণ জানান। ওই বিদায়ী সমাবেশে তাঁকে সম্ভাষণ জানাতে গিয়ে তাফাজ্জল হক নিজেদের অনুভ‚তি প্রকাশ করতে গিয়ে লিখেছেন-‘‘আমাদের সকলের মুরব্বী আক্বা ও মুর্শিদ হযরত মাওলানা হাফেয সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটী। যিনি শায়খ-এ কামিল, ওলী-এ আকমাল, গাউসে যামান হযরত আবদুর রহমান চৌহরভী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হির বিশিষ্ট খলীফা। ১৬ বছর অবস্থানের পর স্বীয় মাতৃভ‚মির উদ্দেশ্যে তাশরীফ নিয়ে যাচ্ছেন। এ দীর্ঘ সময়ে তিনি হাজারো পথভ্রষ্ট মানুষকে সিরাতে মুস্তাকীমে পরিচালিত করিয়েছেন। স্বীয় রূহানী ও ফয়েজ দ্বারা এ বার্মার মত বৌদ্ধ মতাবলম্বীর দেশে হাজারো অমুসলিমকে ইসলামের নূর দ্বারা আলোকিত করেছেন। আর এ দীর্ঘ সময়ে ইসলামের খিদমতে সর্বদা ডুবে থাকেন। মাদরাসা-এ ইসলামিয়া রহমানিয়ার এক অখ্যাত মাদরাসাকে বার্মার সকল প্রদেশে পরিচিত করেন। আজ আমরা অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আমাদের মহান শ্রদ্ধাষ্পদ অভিভাবককে বিদায় সম্ভাষণ জানাচ্ছি আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে নিরাপদে যাওয়া এবং নিরাপদে পুনরায় ফিরে আসার তাওফীক দিন।’’ [১৯৩৫ সালে রেঙ্গুনে অনুষ্ঠিত বিদায়ী সম্বর্ধনা সভায় মানপত্র, রচনায়- তাফাজ্জল হক, সংক্ষিপ্ত রিপোর্ট, আনজুমান-এ শূরা-এ রহমানিয়া, রেঙ্গুন, ১৬ অক্টোবর, ১৯৩৬ইং]
রেঙ্গুন ছেড়ে যাওয়ার পূর্বে হযরত হাফেয সৈয়দ আহমদ সিরিকোটী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি স্বদেশে তার আগমনের খবর জানিয়ে তরীকতের ভাই মুহাম্মদ আবদুল আযীয খানকে এক পত্রে লিখেছেন- ‘‘আমি ১৬ ফেব্রæয়ারি ১৯৩৫, ২১ যিলক্বদ এখান থেকে রওয়ানা হয়ে ২ দিন কলকাতায় অবস্থান করব। তারপর দেশে ফিরে গিয়ে ঠিক ওরস শরীফের অনুষ্ঠানে দরবার শরীফে উপস্থিত হব। ইনশা-আল্লাহ্।’’
[মাকত‚ব (পত্র) আল্লামা সিরিকোটী, লিখিত, : রেঙ্গুন-১৯২৫ইং]
সুতরাং হযরত হাফেয সিরিকোটী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি দীর্ঘ ১৬ বছর পর প্রিয় মাতৃভ‚মিতে ফিরে যান এবং তারপর প্রায় ২৬ বছর পর্যন্ত আল্লাহর সৃষ্টিজগতে শরীয়ত ও তরীকতের কল্যাণ বিতরণ করতে থাকেন। তাঁর পবিত্র সান্নিধ্যে এসে অসংখ্য মুসলমান তরীকতের দীক্ষা গ্রহণ করেন এবং অনেকে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করেন। মূলতঃ তিনি ছিলেন খাজা আবদুর রহমান চৌহরভী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হির জীবন্ত কারামাত। তিনি ১১ যিলক্বদ ১৩৮০ হিজরি মোতাবেক ১৯৬১ সালে ইন্তিকাল করেন। তাঁর বরকতময় মাযার শরীফ সিরিকোট (হরিপুর, হাজারা, পাকিস্তান)-এ অবস্থিত। যা বিশেষ ও সাধারণ সকল লোকের যিয়ারতস্থল। তাঁর সাহেবযাদা হাদি-এ দ্বীনও মিল্লাত হাফেয ক্বারী আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। মহান আল্লাহ্ তাঁদের ফয়েয ও বরকত আমাদের তরে সর্বদা প্রবাহিত রাখুন। আমিন।
হযরত হাফেয সিরিকোটী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হির কোন রচনা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়নি। অবশ্য তাঁর ‘মাকত‚বাত শরীফ’ (পত্র সংঙ্কলন) পাঠ করেছি, যা শরীয়ত ও তরীকতের গূঢ়তত্ত¡ ও রহস্যের ভাÐার। তাঁর মাকত‚বাত (পত্র) থেকে কিছু অংশ পেশ করছিঃ যাতে তাঁর বিনয় ও ন¤্রতা এবং হিদায়তের পদ্ধতি ও শরীয়ত-তরীকতের অবস্থা জানতে পারি।
এক. ‘‘আমি সরল মনে আরয করছি যে, আপনারা আমাকে হুযূরের খলীফা ভেবে আমার কথাগুলো নির্দ্ধিধায় মেনে নেবেন- আমি এ ইচ্ছা পোষণ করি না। কিন্তু যদি আপনারা আমাকে নিজেদেরই একজন খাদিম অথবা নগন্য ভাই বলে জানেন, তবেই আমি কৃতার্থ হব।’’ [মাকত‚ব (পত্র), আবদুল আযীযের প্রতি-ডিসেম্বর-১৯২৮]
দুই. নিজেদের পরিবারের লোকদের প্রতি ভালবাসা এবং ক্ষমা করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। কারণ, এটাই রসূলের সুন্নাত ও মুর্শিদের সুন্নাত। হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তি সেই, যে তার পরিবারের কাছে উত্তম।’’ [পূর্বোক্ত-১৯২৫ সালে লিখিত]
তিন. আপনাকে হাদীস ‘খায়রুকুম খায়রুকুম লি আহলি’ (তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে তার পরিবারের কাছে উত্তম) মঙ্গল কামনার্থে শুনালাম। তবুও আপনি কেন রাগ করছেন। ভাল কথায় রাগান্বিত হওয়া তো দূরের কথা, বরং কেউ যদি গালি দেয়, তবু অসন্তুষ্ট হওয়া তরীকতপন্থীদের জন্য শোভনীয় নয়। আপনি অন্তরে প্রশান্তি রাখুন। আমার অন্তরে কোন প্রকারের কালিমা নেই।’’ [পূর্বোক্ত]
কী সুন্দর শিক্ষা দিলেন! কেউ গালি দিলেও আপনি বলুন, আপনি ভাল থাকুন। আপনার মঙ্গল হোক এবং কী উত্তমভাবে তরীকতের শিক্ষা দিলেন। ‘যার দ্বীন অর্জিত হয় তার পার্থিব জীবনও সুন্দর হয়ে যায়।’
চার. তরীকত পথের যাত্রী (সালিক) যখন নফসের স্তর থেকে কলবের স্তর আর কলবের স্তর থেকে মুকাল্লিবে কলব’ অর্থাৎ মুর্শিদে কামিলের সত্তা ও গুণাবলীতে নিজের অস্তিত্ব ও অনর্থক ধ্যান-ধারণাকে ধ্বংস করতে পারবে না, তখন তার মুকাশাফা কখনো সত্য আর কখনো মিথ্যায় পর্যবসিত হয়। (পীরের অস্তিত্বে) পরিপূর্ণ বিলীন হওয়ার পর ‘উচ্চতর মর্যাদা (হাক্কুল ইয়াক্বীন)’র স্তরে উপনীত হয়। এ স্তরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সালিক ‘মিথ্যা কাশফ’ থেকে সংরক্ষণ থাকে। অন্যথায় ‘সুবহে কাযিব’কে ‘সুবহে সাদিক’ জেনে মিথ্যার পূজারী হয়ে যায়। অনেক সময় কাশফের অধিকারীর কাছে পার্থিব জগতে এমন অবস্থাসমূহ প্রকাশ পায়, প্রকাশ বিপরীতে হয়ে থাকে। বস্তুর হাকীকত কাশফের মাধ্যমে জানা কঠিন। হযরত খাযির এবং হযরত মূসা আলা নবীয়্যানা ওয়া আলায়হিমুস্ সালাম-এর ঘটনার উপর চিন্তা করুন। উলুল আযম নবী হওয়া সত্তে¡ও বস্তুর নিগূঢ় তত্তে¡ও জ্ঞান তাঁর কাছে পর্দাবৃত গূঢ়তত্ত¡ বিস্তারিত জানতেন।
যদি কোন ‘সালিক’ (তরীকতের পথের যাত্রী) আপনাকে বলল, ‘এ কাজ এমনিভাবে হবে, তেমনিভাবে হবে।’ যদি ওই ভবিষ্যৎবাণী বাস্তবে পরিণত নাও হতে পারে। এসব বিষয় প্রকৃত তরীকতের অভিযাত্রীর সাথে কোন সম্পর্ক রাখে না বরং এগুলো হচ্ছে নাফসের ধারণা যা একজন সালিকের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। দরবেশী এবং পীরের মধ্যে বিলীনতার উচ্চ মর্যাদা ওই সব কিছু থেকে সুমহান। আল্লাহ উচ্চ আশা পোষণকারীকে পছন্দ করেন। আল্লাহ্ তা‘আলা প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র ও আমাদের মুর্শিদের ওসীলায় ওই মর্যাদা দান করুন। আমিন, সুম্মা আমীন।
‘ফানা ফিশ শায়খ’র স্তর অত্যন্ত প্রিয় ও তরীকতপন্থীর অভীষ্ট লক্ষ্যও। কামিল শায়খ (পীর) এর স্থান জাবারূত স্তরে উন্নীত। ওই স্তরে কামিল পীর মহান আল্লাহর গুণাবলীর জুব্বা পরিধান করে থাকেন, হ্যাঁ, ওই স্তরের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছেন হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়া সাল্লাম’র মহান সত্ত¡া। অর্থাৎ তিনি আল্লাহর প্রথম নূর, অন্যসব কিছু তাঁর নূরের অনুকণা। মাওলানা রূমী বলেছেন-
ছোঁ কেহ্ জাতে শায়খ রা করদী কবূল
দা’ খোদা দর জাতশ আমদ হাম রসূল।
অর্থাৎ যে ব্যক্তি পীরের সত্ত¡াকে কবূল করেছে, (পীরের সত্ত¡ায় নিজেকে বিলীন করেছে) তাঁর সত্ত¡ায় আল্লাহ্ ও তাঁর প্রিয় রসূলের ফয়েজ তার প্রতি বর্ষিত হবে। আল্লাহ্ তোমাদেরকে ওই মহান মকাম (স্তর) আমাদের মালিক, মুর্শিদ, আশ্রয়স্থল, হুযূর পুরনূর খাজায়ে খাজেগান হযরত খাজা আবদুর রহমান চৌহরভী কাদ্দাসাল্লাহু সিররাহুল আযীয-এর ওসীলায় দান করুন। [মাকত‚ব (পত্র) আল্লামা সিরিকোটী, ২৮ মুহাররম ১৯৩১ইং, রেঙ্গুন থেকে]
হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি ১১ যিলক্বদ ১৩৮০হিজরি/১৯৬১ সালে একশ বছরের চেয়েও বেশি বয়সে ইন্তেকাল করেন। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন তাঁর সাহেবজাদা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি। তিনি দেশে-বিদেশে অনেক খানকা ও মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করার সাথে সাথে রবিউল আউয়াল শরীফে ঈদ-এ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম উপলক্ষে ‘জশনে জুলুস’ (শোভাযাত্রা) মহা উৎসাহ্ উদ্দীপনার সাথে জশনে জুলুস বের করা হয়। তাছাড়া মাসিক পত্রিকা প্রকাশেরও ব্যবস্থা করেন। হযরত সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি ১৫ যিলহজ্ব ১৪১৩ হিজরি/৭ জুন ১৯৯৩ সালে ওফাত প্রাপ্ত হন। তাঁর ইন্তেকালে তাঁর দু’ সাহেবযাদা হযরত মাওলানা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ্ মাদ্দাযিল্লুহুল আলী এবং মাওলানা সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ্ মাদ্দাযিল্লুহুল আলী তাঁর খলীফা মনোনীত হন। হযরত সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ্ মাদ্দাযিল্লুহুল আলীও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। ‘জামেয়া-ই তৈয়্যবিয়া সিরিকোট’-এর ৫তলা বিশিষ্ট বিশাল বিল্ডিং তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় নির্মাণ হয়। যেখানে ইলমে দ্বীনের পাশাপাশি আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানেরও শিক্ষা দেওয়া হবে। এ ছাড়া ১৯৯৫ সালে ‘গাউসিয়া তাহেরিয়া ফাউন্ডেশন’ও প্রতিষ্ঠা করেন। হযরত সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ্ মাদ্দাযিল্লুহুল আলীর তিন সাহেবযাদা হচ্ছেন- সৈয়্যদ মুহাম্মদ কাসেম শাহ্, সৈয়্যদ মুহাম্মদ হামেদ শাহ্ ও সৈয়্যদ মুহাম্মদ আহমদ শাহ্ আর হযরত সাবির শাহ্ মাদ্দাযিল্লুহুল আলীর দু’ সাহেবযাদা সৈয়্যদ মুহাম্মদ মাহমূদ শাহ্ ও সৈয়্যদ মুহাম্মদ আকিব শাহ্। হযরত সৈয়্যদ মুহাম্মদ ক্বাসিম শাহ্ মাদ্দাযিল্লুহুল আলীর পু’ পুত্র সৈয়দ মুহাম্মদ মাশহূদ শাহ্, সৈয়্যদ মুহাম্মদ মামূন শাহ্। আল্লাহ্ তা‘আলা এ মহান খানক্বাহকে আবাদ রাখুন্ বেং সেটার ইলমী ও রুহানী ফুয়ূজাত সর্বদা প্রবাহমান রাখুন। আ-মীন।
অনুবাদ: মুহাম্মদ নেজাম উদ্দীন।