সৈয়্যদুনা ইমাম জাফর সাদিক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু
কাজী মুহাম্মদ ইব্রাহীম
ইমাম জাফর সাদিক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ছিলেন আহলে বায়তে রসুলুল্লাহ সালল্লাললাহু আলাইহি ওয়া সাললামা’র পবিত্র সদস্য এবং মহামান্য ইমাম, নবুয়াতের নির্যাস, সম্মানিত তাবেয়ী, নির্ভরযোগ্য হাদিস বিশারদ, শীর্ষস্থানীয় মুজতাহিদ, মুফাচ্ছির ও লেখক। তৎকালে তিনি বেলায়তের সর্বোচ্চ আসনে আসীন ছিলেন।
এছাড়াও খোদাভীতি, ইবাদত বন্দেগী, ক্ষমাশীলতা, দানশীলতা, পরোপকারিতা ও উত্তম চরিত্রে তিনি ছিলেন সে সময়ের কিংবদন্তি মহাপুরুষ।
নাম ও বংশ পরিচিতি-
তাঁর নাম জাফর, উপনাম আবু আবদুল্লাহ, আবু ইসমাইল ও আবু মুহাম্মদ। উপাধি- সাদিক্ব, সাবির, ফাজিল ও তাহির। তাঁর পিতার নাম হযরত ইমাম মুহাম্মদ বাক্বির রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু। মাতার নাম উম্মে ফরওয়া।
ইমাম জাফর সাদিক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ইমাম মুহাম্মদ বাক্বির রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু’র পুত্র, ও ইমাম জয়নুল আবেদীন রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু’র নাতি। তাঁর মাতা হযরত উম্মে ফরওয়া রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা।
ইমাম জাফর সাদিক্ব রাদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু’র নানীর নাম হযরত আছমা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, তাঁর পিতা হযরত আব্দুর রহমান রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, তাঁর পিতা ছিদ্দিক্বে আকবর হযরত আব্দুল্লাহ আবু বকর রাদ্বিয়ালাহু তায়ালা আনহু। হযরত উম্মে ফরওয়া দু’দিক থেকে খলিফাতুর রসূল, আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর পবিত্র নসল মুবারকের সাথে সম্পৃক্ত। যে কারণে ইমাম জাফর সাদিক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু কৃতজ্ঞতার সুরে বলতেন, ‘আমাকে হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু দু’বার তথা দু’দিক দিয়ে জন্ম দিয়েছেন।’
ইমাম জাফর সাদিক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর দাদীর নাম উম্মে আবদিল্লাহ ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা যিনি ইমাম হাছান রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর সুযোগ্য কন্যা।
শুভজন্মক্ষণ-
ইমাম যাহ্াবী, ইবনে খলিকানসহ অধিকাংশ ঐতিহাসিকের মতে তিনি ৮০ হিজরীর পবিত্র রমজান মাসের ৮ তারিখ রোজ রোববার বা সোমবার সূর্যাস্তের পূর্বে মদীনা শরীফে জন্মলাভ করেন।
শিক্ষাজীবন-
তাঁর শিক্ষাজীবন এতই বিস্তৃত যে, যা এই সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধে উলেখ করা সম্ভব নয়। তবে পাঠকদেরকে তাঁর শিক্ষাজীবন সম্পর্কে সামান্য ধারণা দেওয়ার জন্য কিছুটা এখানে বর্ণনা করা হল। বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর জ্ঞানের গভীরতা প্রমাণ করে যে, তিনি জ্ঞানপিপাসু ও অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। তিনি হাদিস ও ফিক্হ শাস্ত্রে পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। ইবনে খলিকান প্রমুখের মতে রসায়ন ও ইলমে ফাল বিষয়েও তাঁর অগাধ জ্ঞান ছিল। সেক্ষেত্রে প্রখ্যাত বিজ্ঞানী জাবির ইবনে হাইয়্যান তাঁর ছাত্র ছিল। মিশরের প্রখ্যাত লেখক ও গবেষক ড. আবু যোহরার বর্ণনামতে ইমাম জাফর সাদিক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, চিকিৎসা বিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান, রসায়ন ইত্যাদি বিষয়ে পাণ্ডিত্য অর্জন করেন এবং অপর দিকে তিনি ইলমে কালাম বা যুক্তিবিদ্যায়ও ছিলেন সিদ্ধহস্ত।
ফিক্হ শাস্ত্রে দক্ষতা-
ইমাম জাফর সাদিক্ব আলাইহিস সালাম একজন বড় মাপের মুজতাহিদ ছিলেন। ইমাম যাহাবীর বর্ণনামতে ইমামে আজম আবু হানিফা আলাইহির রাহমাহ্কে প্রশ্ন করা হল- আপনার দেখা ফিক্হবিদগণের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ফিকহ্বিদ কে ছিলেন? উত্তরে তিনি বলেন- আমি ইমাম জাফর সাদিক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে শ্রেষ্ঠ ফিক্হবিদ আর কাউকে দেখিনি।
সালাহুদ্দিন খলিল সফদী, ইমাম যাহাবী, ইবনু তাগরী বারদী সহ অনেকের বর্ণনা মতে, একদিন খলিফা মনসুর ইমামে আজম আবু হানিফা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুকে বলেন, হে আবু হানিফা, জনগণ ইমাম জাফর সাদিক্বকে নিয়ে ফিতনায় লিপ্ত হয়েছে। আপনি আমার জন্য এমন কিছু মাসয়ালা প্রস্তুত করুন যা আপনার মত ইমামের কাছেও কঠিন।” ইমাম আজম রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন, অতপর আমি তাঁর জন্য চলিশটি মাসয়ালা প্রস্তুত করে রাখলাম। খলিফা আমাকে ডেকে পাঠালে আমি সেই চলিশটি মাসয়ালা নিয়ে তাঁর দরবারে হাজির হয়ে দেখলাম যে, খলিফা মনসুরের ডান পার্শে ইমাম জাফর সাদিক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু উপবিষ্ট। ইমাম সাহেবকে দেখে আমার অন্তরে ভয়ের সৃষ্টি হল যা খলিফা মনসুরের জন্যও কোন সময় হয়নি। খলিফা মনসুর ইমাম সাহেবকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি কি ইনাকে চেনেন? উত্তরে ইমাম সাহেব বলেন- হ্যাঁ, উনি ইমাম আবু হানিফা।” এরপর খলিফা মনসুর আমাকে বলেন, “আপনি ইমাম সাহেবকে প্রশ্ন করুন।” অতঃপর আমি ইমাম সাহেবকে আনীত চলিশটি মাসয়ালা একটি একটি করে প্রত্যেকটি জিজ্ঞেস করলাম। তিনি প্রত্যেকটি মাসয়ালার উত্তর মুজতাহিদগণের মতবিরোধসহ সাবলীলভাবে প্রদান করেন।
তিনি একটি মাসয়ালায়ও আটকে যাননি। ইমাম সাহেবের উত্তর শুনে ইমাম আজম আবু হানিফা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন, “নিশ্চয়ই সবচেয়ে জ্ঞানী তিনিই, যিনি সবচেয়ে বেশি মুজতাহিদগণের মতবিরোধসহ মাসয়ালার উত্তর প্রদান করতে পারেন।”
অর্থাৎ ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে যিনি সঠিক সমাধানে উপনীত হতে পারেন। তিনিই সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী। আর হযরত জাফর সাদিক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু প্রত্যেকটি প্রশ্নের উত্তর সেভাবেই প্রদান করেছেন। সুতরাং তিনি প্রকৃত জ্ঞানীদের একজন।
কুরআন ও তফসীরে দক্ষতা-
ড. মুহাম্মদ আবু যোহরা বলেন, “কুরআন সম্পর্কীয় জ্ঞান চর্চার প্রতি ইমাম জাফর সাদিক্বের বিশেষ দৃষ্টি ছিল। তফসীর সম্বন্ধে তাঁর বিশদ জ্ঞান ছিল। কোন আয়াত কোন আয়াত দ্বারা মনসূখ করা হল এবং কেন করা হল এর রহস্য সম্বন্ধেও তিনি জ্ঞাত ছিলেন। আমরা বলি হযরত কাসিম বিন মুহাম্মদ বিন আবি বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু রইছুল মুফাচ্ছিরিন হযরত আব্দুলাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে ইলমে তফসীর অর্জন করেছিলেন। আমরা নিঃসন্দেহে বলতে পারি ইমাম জাফর সাদিক্ব তাঁর নানা হযরত কাসেম বিন মুহাম্মদ হতে ইলমে তফসীর সম্বন্ধে যা কিছু অবগত হয়েছিলেন উহা ইবনু আব্বাসেরই বর্ণনা”। ড. আবু যোহরার অপর বর্ণনায় পাওয়া যায় একদিন একদল লোক তাঁদের মতের স্বপক্ষে কোরআনুল করীমের দু’টি আয়াত দলিল হিসাবে পেশ করলে, ইমাম জাফর সাদিক্ব বলেন, তোমরা কি কোরআনে করীমের নাসেখ-মনসূখ, মুহকাম-মুতাশাবেহ আয়াত সম্বন্ধে অবগত আছ? যা না জানার ফলে বহু লোক গোমরাহ হয়ে গিয়েছে। তাঁরা বলল সব না জানলেও কিছুটা জানি। ইমাম সাদিক্ব বললেন, তবে তোমরা এ সম্বন্ধে বলার অধিকার কোথায় পেল? অতঃপর তিনি এর সুষ্ঠু ব্যাখ্যা প্রদান করেন।
হাদিস শাস্ত্রে দক্ষতা-
তিনি শুধু হাদিস শরীফ জানতেন এবং বর্ণনা করতেন তাই নয় বরং তিনি একজন দক্ষ মুহাদ্দিস ও নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী ছিলেন। তিনি যে, নির্ভরযোগ্য হাদিস বর্ণনাকারী সে বিষয়ে কারো দ্বিমত নেই। তাই ইমাম আবু হানিফা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ইমাম মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু, ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু সহ অসংখ্য হাদিস বিশারদ ও ফকিহ্ তাঁর থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন।
ইমাম যাহাবী বলেন, প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ ইয়াহিয়া বিন মুঈন, ইমাম শাফেয়ী রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি সহ একদল হাদিস বিশারদও তাঁকে নির্ভরযোগ্য মুহাদ্দিস হিসাবে গণ্য করতেন। ইমাম ইসহাক্ব বিন রাহবিয়া রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি বলেন আমি ইমাম শাফেয়ী রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হিকে জিজ্ঞেস করলাম, (হাদিস বিষয়ে) ইমাম জাফর সাদিক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু সম্পর্কে আপনার অভিমত কী? উত্তরে তিনি বলেন, ইমাম জাফর সাদিক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু একজন নির্ভরযোগ্য মুহাদ্দিস ছিলেন।
শিক্ষকবৃন্দ-
তিনি অনেক মুহাদ্দিস থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন। তবে তাঁর পিতা ইমাম বাক্বির রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে সর্বাধিক হাদিস বর্ণনা করেন। তাঁর প্রসিদ্ধ কয়েকজন শিক্ষকের নাম তাঁর পিতা ইমাম বাক্বির, ইমাম জয়নুল আবেদীন(দাদা), হযরত উবাইদুলাহ্ বিন আবি রাফে, ওরওয়া ইবনুয যুবাইর, হযরত আত্বা ইবনু আবি বারাহ, হযরত কাসিম ইবনু মুহাম্মদ (নানা), হযরত নাফী আল উমরী, ইমাম যুহরী, হযরত মুহাম্মদ ইবনু মুনক্বাদির, হযরত মুসলিম ইবনু আবি মরিয়ম রাদিয়ালাহু তায়লা আনহুম প্রমুখ।
শিষ্যবৃন্দ-
তাঁর শিষ্য ছিল অগণিত। তন্মধ্যে ক’জন প্রসিদ্ধ শিষ্য হলেন- ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালিক, স্বীয় সন্তান ইমাম মুসা কাজিম, ইসমাঈল ইবনু জাফর সাদিক্ব, হযরত ইয়াহিয়া ইবনু সায়ীদ আল আনসারী, হযরত ইয়াজীদ ইবনু আবদিলাহ্, হযরত আবাল ইবনু তাগলিব, হযরত ইবনুজ জুরাইজ, হযরত মুয়াবিয়া ইবনু আম্মার, হযরত ইবনু ইসহাক্ব, হযরত সূফিয়ান আস-সওরী, হযরত শুবা, হযরত ওহাব ইবনু খালিদ, হযরত হাতিম ইবনু ইসমাঈল, হযরত সুলাইমান ইবনু বিলাল, হযরত সূফিয়ান ইবনু উয়াইনা, হযরত হাসান ইবনু সালিহ্, হযরত হাসান ইবনু আইয়াশ রাদ্বিয়ালাহু আনহুম প্রমুখ।
আধ্যাত্মিক পরিচিতি-
হযরত ইমাম মুহাম্মদ বাক্বির রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর ইন্তিকালের পর হযরত ইমাম আবু মুহাম্মদ জাফর সাদিক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ইমাম নির্বাচিত হন এবং বেলায়তের সর্বোচ্চ সোপান গাউছুল আযম পদে অধিষ্ঠিত হন। যেমনিভাবে তিনি ফাতেমী আলাভী ও সিদ্দিকী পবিত্র রক্তধারার মোহনাস্বরূপ। তেমনিভাবে তিনি সিদ্দিকী ও আলাভী দুই বেলায়তী মহাসমুদ্রের সংযোগস্থল। তিনি তাঁর পিতা ইমাম বাক্বির রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর সম্পৃক্ততায় আলাভী বেলায়তের ফয়ুজাত বিতরণ করছেন এবং তাঁর নানা হযরত কাসিম বিন মুহাম্মদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর সম্পৃক্ততায় সিদ্দিকী বেলায়তের ফয়ুজাত বিতরণ করছেন। যা ইনশাআলাহ কিয়ামত পর্যন্ত জারী থাকবে। যেমন তিনি তরীক্বায়ে তাইফুরীয়া, করকীয়া, জোনাইদীয়া, ক্বাদেরীয়া. সোহরাওয়ার্দীয়া, নক্শবন্দীয়া, আবুল উলাইয়া, মোজাদ্দেদীয়া ও মাইজভাণ্ডারীয়া প্রভৃতি তরীকতের উর্ধতন মহান শাইখের আসনে আসীন রয়েছেন।
হযরত ইমাম আজম আবু হানিফা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু, হযরত সুলতানুল আরেফীন বায়েজীদ বোস্তামী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু, স্বীয় সন্তান ইমাম মুসা কাজিম রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু প্রমুখ মাহাত্মাগণ ইমাম জাফর সাদিক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর মুরীদ ছিলেন। ইমাম জাফর সাদিক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর দুটি আধ্যাত্মিক শজরা পাওয়া যায়।
এক. ইমাম জাফর সাদিক্ব, তৎপীর ইমাম বাক্বির, তৎপীর ইমাম জয়নুল আবেদীন, তৎপীর ইমাম হোসাইন, তৎপীর আমিরুল মুমেনীন মাওলা আলী রিদ্বওয়ানুলাহি তায়ালা আলাইহিম আজমাইন।
দুই. ইমাম জাফর সাদিক্ব, তৎপীর হযরত কাসিম বিন মুহাম্মদ বিন আবিবকর, তৎপীর হযরত সালমান ফারসী, তৎপীর আমিরুল মুমেনীন ছিদ্দিকে আকবর আবু বকর রিদ্বওয়ানুলাহি তায়ালা আলাইহিম আজমাইন।
কারামত-
হযরত সৈয়দুনা ইমাম জাফর সাদিক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর রয়েছে আলাহ্ প্রদত্ত কারামতের বিশাল ভাণ্ডার। তা থেকে স্বল্প কিছু পেশ করা হল
এক. হযরত শাইখ আব্দুর রহমান চিশতী রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি রচিত মিরাতুল আসরার গ্রন্থের বর্ণনা মতে একদিন হযরত ইমাম জাফর সাদিক্ব (আলাইহিস সালাম) কোথাও যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে দেখতে পেলেন যে, একজন মহিলা ছেলে-মেয়েসহ কান্না করছেন। ইমাম সাহেব তাঁদের কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলে, মহিলা বলেন আমার একটি গাভী ছিল। যার দুধ বিক্রি করে আমার সংসার চলে। গাভীটি এখন মারা গেছে। তাই আমরা ক্রন্দন করছি। তখন ইমাম সাহেব গাভীটির গায়ে পদাঘাত করেন। সাথে সাথেই গাভীটি আওয়াজ দিয়ে জীবিত হয়ে দাঁড়িয়ে গেল।
দুই. প্রাগুক্ত গ্রন্থে বর্ণিত আছে, হযরত আলী বিন হামজা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, একদিন ইমাম জাফর সাদিক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু একটি মৃত খেজুর বৃক্ষের পাশে দাঁড়ালেন। অতঃপর তিনি গাছটির অগ্রভাগের দিকে তাঁর ঠোঁটদ্বয় নাড়ালেন। তাৎক্ষণিক ডালপালা বের হয়ে গাছটি ফলে ফলে ভরপুর হয়ে গেল। অতঃপর আমরাও তাঁর সাথে উক্ত গাছের তাজা খেজুর ভক্ষণ করলাম। ঐ খেজুরের স্বাদ এমন মজাদার ছিল, যা অন্য কোন খেজুরে আমরা পাইনি। সেখানে উপস্থিত এক বেদুঈন এ ঘটনা প্রত্যক্ষ করে বলল, আমি এ ধরণের যাদু আর কোনদিন দেখিনি। তখন ইমাম জাফর সাদিক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু তাকে বললেন- ‘আমরা নবীগণের ওয়ারিশ। আমরা যাদু জানি না। তবে আমরা দোয়া করি আর মহান আলাহ্তায়ালা তা কবুল করেন। যদি তুমি চাও যে, আমি তোমার জন্য এমন দোয়া করি, যাতে তুমি কুকুর হয়ে যাও।’ বেদুঈন বলল, ঠিক আছে দোয়া করুন। অতঃপর তিনি দোয়া করলে, বেদুঈন লোকটি কুকুর হয়ে গেল এবং স্বীয় ঘরে গেলে সবাই তাকে মেরে তাড়িয়ে দিল। অত:পর কুকুররূপী বেদুঈনটি ইমাম সাহেবের সামনে এসে মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে কান্না শুরু করে দিল। এতে ইমাম সাহেব বেদুঈন লোকটির প্রতি দয়াপরবশ হয়ে পুনরায় দোয়া করলেন, যাতে সে পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে। সাথে সাথেই কুকুররূপী বেদুঈন পুনরায় মানুষে পরিণত হয়ে গেল।
তিন. মোলা জামী আলাইহির রহমাহ্ রচিত ‘শাওয়াহেদুন নবুয়াত’ গ্রন্থের বর্ণনা মতে, একদিন দাউদ নামক আব্বাসীয় বংশীয় এক ব্যক্তি ইমাম জাফর সাদিক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর এক গোলামকে হত্যা করে, তার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। ইমাম জাফর সাদিক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হত্যাকারীর নিকট গিয়ে বললেন, তুমি আমার গোলামকে হত্যা করেছ এবং তার মালামাল লুট করেছ। মহান আল্লাহর কসম আমি তোমার জন্য বদ দোয়া করব। হত্যাকারী তখন ইমাম ছাহেবকে বিদ্রুপ করতে লাগল।
অতঃপর ইমাম জাফর সাদিক্ব পরদিন ভোর বেলায় হত্যাকারীর জন্য বদ দোয়া করলে, এক ঘন্টা অতিবাহিত হওয়ার পূর্বে হত্যাকারী নিহত হল। উক্ত ঘটনা দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, আলাহর অলীর আশিক্ব ভক্ত, গোলামদেরকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দিলে আল্লাহর অলীর বদ দোয়ার শিকার হয়ে ধ্বংসে পতিত হতে হয়।
চার. প্রাগুক্ত গ্রন্থে এক বর্ণনাকারী বর্ণনা করেন, ইমাম জাফর সাদিক্বের সাথে হজ্বের সময় আরাফার দিন আরাফাতের ময়দানে আমার সাক্ষাত হয়। তিনি আমাকে আমার এক বন্ধু সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে, আমি বলি তিনি কারাগারে বন্দী রয়েছেন। অতঃপর তিনি হাত উঠিয়ে তাঁর জন্য দোয়া করলেন। এক ঘন্টা পর ইমাম বললেন আল্লাহর কসম তোমার বন্ধু কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছে। হজ্বের পর আমার বন্ধুর সাথে দেখা করে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কবে ছাড়া পেয়েছে। আমার বন্ধু বললেন আরাফার দিন আছরের নামাজের পর আমি ছাড়া পেয়েছি।
গ্রন্থ প্রণয়ন-
ইমাম জাফর সাদিক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু প্রখ্যাত লেখক হিসাবেও সমাদৃত ছিলেন। যেমন তাক্বসীমুর রুইয়া, আল-জামি ফিল জুফর ও কিতাবুল জুফর ইত্যাদি গ্রন্থ তিনি রচনা করেন।
আকৃতি ও প্রকৃতি-
হযরত জাফর সাদিক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু চমৎকার দৈহিক গড়নের একজন সুদর্শন পুরুষ ছিলেন। তাঁর দৈহিক গঠন ছিল মধ্যকৃতি, গায়ের রং ফর্সা ও অতীব উজ্জ্বল, মুখমণ্ডল অন্ধকার রাতে প্রজ্জ্বলিত দীপের ন্যায় উজ্জ্বল দেখাত, সুঢৌল নাসিকার ওপরের অংশ সামান্য উঁচু ছিল। মাথার চুল কপালে এসে পড়ত যার ফলে তাঁর সৌন্দর্য আরও বেড়ে যেত। গালে একটি কালো তিল ছিল। বুক থেকে পেট পর্যন্ত কালো কেশ ছিল। যা অতি লম্বাও নয়, খাটোও নয়। ব্যক্তিগতভাবে ইমাম জাফর সাদিক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু মিষ্টভাষী ও বিনয়ী হলেও, তাঁর চেহেরা মুবারকে এমন মাহাতœ্য ও আলাহর নূরের ঝলক ছিল যে, প্রতিপক্ষ কেউ তাঁর ব্যক্তিত্বমণ্ডিত চেহেরা দেখলে, তার অন্তরে ভীতির সৃষ্টি হত। ইরাকের যিন্দীকদের নেতা ইবনে হাওজার সাথে একবার ইমামের সাক্ষাত হয়। ইমাম সাহেবের চেহেরার দিকে দৃষ্টিপাত করতে ইবনে হাওজার চেহেরা ফ্যাকাশে হয়ে যায়। ইমাম সাহেব তার সাথে কথা বলতে আরম্ভ করলেও তার মুখ থেকে একটি কথাও বের হল না। এতে ইমাম সাহেবও উপস্থিত সকলে বিস্মিত হয়ে পড়ল। অতঃপর ইমাম সাহেব তাকে জিজ্ঞেস করলেন-তুমি কথা বলছ না কেন? যিন্দীক নেতা হাওজার বিনীতভাবে বলল-আপনার রূহানী প্রভাব ও ভীতি আমার মুখে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। আপনার সম্মুখে কথা বলা আমার পক্ষে সম্ভবপর নয়। আমি অনেক বিদ্বানকে দেখেছি, অনেক র্তকবিশারদের সাথে তর্ক করেছি। কিন্তু কারো নিকট পরাজয় বরণ করিনি বা কাউকে দেখে আমি কখনও আতংকগ্রস্ত হইনি। কিন্তু আপনার রূহানী প্রভাব আমার সমস্ত বাকশক্তি হরণ করে নিয়েছে। তিনি ছিলেন অনেক গুণের আধার। অত্যন্ত বিনয়ী, ধৈর্যশীল, সহনশীল, ক্ষমাশীল, দানশীল, দয়ালু, মুত্তাকী, ইবাদত গুজার ও অতীব সত্যবাদী। তিনি সদা সত্য কথা বলতেন এ কারণে তাঁকে ‘সাদিক্ব’ বা অতীব সত্যবাদী উপাধি প্রদান করা হয়। তিনি নির্জনতাকে প্রাধান্য দিয়ে ইবাদত করতেন। ইমাম মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ইমাম জাফর সাদিক্বের গৌরবোজ্জ্বল গুণাবলী প্রসঙ্গে বলেন ‘আমি যখনই ইমাম জাফর সাদিক্বের দরবারে গিয়েছি তখনই তাঁকে হাস্যোজ্জ্বল দেখেছি। কিন্তু যখনই তাঁর সম্মুখে হুজুরে করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের প্রসঙ্গ উলেখ করা হত তখনই বেয়াদবি কিছু হয় কিনা এর প্রতিক্রিয়ায় তাঁর মুখমণ্ডল হলুদ হয়ে যেত। আমি যখনই তাঁর দরবারে যেতাম তখনই দেখতাম তিনি নামাজরত আছেন বা রোযা রেখেছেন বা কুরআনুল করিম তেলাওয়াতে মশগুল। বিনা অজুতে কখনও তাঁকে হাদীসে বর্ণনা করতে দেখিনি। তিনি যে কথা পছন্দ করতেন তাই তিনি বলতেন। তিনি তাঁর সময়কার বড় ওলী ও আবেদ ছিলেন। তিনি একমাত্র আলাহ তায়ালাকেই ভয় করতেন। আমি যখনই তাঁর দরবারে যেতাম তখনই তিনি তাঁর আসনে আমাকে বসাইতেন।’ ইমাম মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু সর্বদাই খুব উৎসাহের সাথে ইমাম জাফর সাদিক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর ভূয়সী প্রশংসা করতেন। তিনি তাঁর অন্য কোন ওস্তাজ বা পীরের প্রশংসায় এত মুখর ছিলেন না।
তিনি মূল্যবান কাপড় পরিধান করতেন। মূল্যবান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করে লোক সমক্ষে বের হতেন। একবার হযরত সুফিয়ান সওরী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু তাঁর দরবারে এসে দেখলেন তিনি অত্যন্ত মূল্যবান ও মনোমুগ্ধকর পোষাক পরিধান করেছেন। হযরত সুফিয়ান সওরী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন-আমি বিস্ময়ের সাথে তাঁর দিকে তাকিয়ে রইলাম। তিনি আমার অবস্থা বুঝতে পেরে বলে উঠলেন-কি ব্যাপার আপনি আমার প্রতি এমনভাবে তাকিয়ে রইলেন মনে হয় আমার এই পোশাকই আপনাকে বিস্মিত করেছে। আমি বিনীতভাবে আরজ করলাম হে আওলাদে রসূল, এই পোশাক না আপনার না আপনার পূর্বপুরুষদের। তিনি উত্তরে বলেন-সেই যুগ এবং এই যুগ অনেক পার্থক্য। সেই যুগ ছিল দরিদ্রতা ও অভাব অনটনের। তাঁরা সেই যুগ মুতাবেক জীবন যাপন করতেন। আর এ যুগে না কোন কিছুর অভাব আছে না কোন কিছু না পাওয়া যায়।
হাফেজ মিজ্জী প্রমুখের মতে, তিনি অত্যধিক দানশীল ছিলেন। এমনকি তিনি তাঁর সবকিছু উজাড় করে দিয়ে মানুষকে দান করতেন। কোন ক্ষুধার্ত ব্যক্তি আসলে নিজেদের কথা চিন্তা না করে ঘরে যা আছে তা দিয়ে আপ্যায়ন করতেন।
বৈবাহিক অবস্থা
তাঁর দু’জন স্ত্রী ছিলেন। তাঁরা হলেন ফাতিমা বিন্তু হুসাইন আল আছরাম রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু এবং হযরত হামিদাহ্ আল মাগরিবিয়্যাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু। তাঁর পুত্র সন্তান নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে মতান্তরে পাঁচজন, সাতজন এবং দশজন। ইমাম ফখরুদ্দিন রাজী (রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেছেন চৌদ্দজন। তিনি তের জনের নাম উলেখ করেছেন। তাঁরা হলেন ইমাম মুসা কাজিম, হযরত ইসমাঈল, হযরত মুহাম্মদ আদ-দীরাজ, হযরত ইসহাক, হযরত আবুল হাসান, হযরত মুহাম্মদ আসগর, হযরত আব্বাস, হযরত ইয়াহিয়া এবং হযরত ঈসা রিদ্বওয়ানুলাহি তায়ালা আলাইহিম আজমাইন। তাঁদের মধ্যে প্রথম পাঁচজনের বশংধর ছিল। কিন্তু অন্যদের কোন বংশধর ছিল না।
ইমাম জাফর সাদিক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর চারজন কন্যাসন্তান ছিল। তাঁরা হলেন হযরত আসমা, হযরত ফাতিমা কুবরা, হযরত উম্মে ফরওয়া এবং হযরত বারীহা রিদ্বওয়ানুলাহি তায়ালা আলাইহিন্না আজমাইন ।
অমূল্য বাণী-
ইমাম জাফর সাদিক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর অসংখ্য বাণী থেকে কয়েকটি বিবৃত করা হল। তিনি ইরশাদ করেন
এক. যে ব্যক্তি পাপকার্য করার পূর্বে আলাহ্র ভয়ে ভীত হয়ে ঐ কাজ থেকে ফিরে আসে, সে ব্যক্তি আলাহ্তায়ালার ক্বুরবত তথা নৈকট্য হাসিল করে।
কোন ব্যক্তি প্রথমে ইবাদতে একনিষ্ঠ ছিল এবং পরে ইবাদতের কারণে তার মধ্যে আমিত্ব চলে আসে। যার কারণে সে ব্যক্তি আলাহ্তায়ালা থেকে দূরত্বের শিকলে আবদ্ধ হয়ে যায়। যে ব্যক্তি ইবাদতের উপর অহংকার করে সে পাপী। আর যে ব্যক্তি গুণাহের কারণে অনুতপ্ত হন, সে ব্যক্তি আলাহ্তায়ালার অনুগত বান্দা।
দুই. (পরিপূর্ণ) মুমিন তিনিই যিনি কুপ্রবৃত্তির সাথে মুকাবিলায় লিপ্ত থাকেন। আর আরিফ তিনিই যিনি আপন প্রভুর আনুগত্যে সর্বদা লিপ্ত থাকেন।
তিন. জান্নাত ও জাহান্নামের কিছু নমুনা দুনিয়ায় পেশ করা হল। সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য হল জান্নাতের নমুনা, আর দু:খ-কষ্ট হল জাহান্নামের নমুনা। জান্নাতের হক্বদার তিনিই যিনি নিজের সমস্ত কিছুকে আল্লাহ্তায়ালার প্রতি সোপর্দ করেন। আর জাহান্নামের হক্বদার হল সে ব্যক্তি যে নিজের সমস্ত বিষয়সমূহকে কুপ্রবৃত্তির কাছে সঁপে দেয়।
চার. আল্লাহ যা কিছু দান করেন এতে সন্তুষ্ট থাকার ন্যায় বড় সম্পদ আর নেই। অন্যের সম্পদের প্রতি লোভাতুর ব্যক্তি দারিদ্র্যবস্থায় মৃতুবরণ করবে।
পাঁচ. যে অন্যের দোষ-ক্রটি প্রচার করে, তার দোষ-ক্রটি আপনা-আপনি প্রকাশ হয়ে পড়ে। যে অন্যের প্রতি তলোয়ার উত্তোলন করে, সে সেই তলোয়ারের আঘাতে মৃত্যুবরণ করে। অন্যের জন্য গর্ত খননকারী নিজেই সেই গর্তে পতিত হয়। মূর্খের সাহচর্যে থাকলে অপমান হতে হয়। আলিমদের সাহচর্যে থাকলে সম্মান লাভ হয়। খারাপ স্থানে গমনকারী অপদস্থ হয়।
ছয়. সাবধান! কারো অনুপস্থিতিতে তার দোষারোপ করা ও একের (গোপন) কথা অন্যের নিকট বলা থেকে দূরে থাক। এতে অন্তরে তামাশার সৃষ্টি হয়।
সাত. আল্লাহর উপর ভরসা রাখ (প্রকৃত) মুমিন হবে। আলাহ যা কিছু দান করেন, তার উপর সন্তুষ্ট থাক (প্রকৃত) সম্পদশালী হবে। প্রতিবেশীর সাথে ভাল আচরন কর (প্রকৃত) মুসলমান হবে। ফাসিকের সাথে সংশ্রব রাখলে ফাসেকী তোমার মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দেবে। যাঁরা আলাহকে ভয় করে তাঁদের সাথে সমস্যা সম্বন্ধে পরামর্শ কর।
ওফাত শরীফ-
হযরত ইমাম জাফর সাদিক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ১৪৮ হিজরী সনের ১৫ রজব সোমবার পবিত্র মদীনায় ওফাতলাভ করেন এবং তাঁকে জান্নাতুল বাক্বী শরীফে সমাহিত করা হয়।