পাপমোচনে তাওবা
মাওলানা মুহাম্মদ আবুল হাশেম >
আজ ফিতনায় ভরা যুগে মানুষ নানা প্রকারের মন্দকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। মিথ্যা, গীবত, চোগলখুরি, বিলাসিতা, ব্যভিচার-এর ন্যায় বড় বড় গুনাহ করতে কোন দ্বিধাবোধ করে না এবং গুনাহের উপর গুনাহ করে যায়। আল্লাহ্ রাব্বুল ইয্যত-এর অপার কৃপা ও দয়া যে, তিনি আমাদেরকে স্বীয় হাবীব, রহমত-ই আলম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর উম্মতের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন এবং আমাদের আক্বা রসূল-ই আকরম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর বড় দয়া যে, তাঁর ওসীলায় আমাদেরকে তাওবা করার সুযোগ ওই সময় পর্যন্ত দেয়া হয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদয় না হয় অর্থাৎ কিয়ামত পর্যন্ত। এর অর্থ হলো, তাওবা করার কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। আল্লাহ্ তা‘আলা যখনই তাওফীক্ব দেন, মানুষের খোদার প্রতি প্রত্যাবর্তন করা উচিত। যদি রব করীম-এর এ মহা অনুগ্রহ না হত, তাহলে ধ্বংস-ই আমাদের জন্য চূড়ান্ত হত। আসুন জেনে নিই, তাওবা কী এবং আল্লাহ তা‘আলার নিকট সেটার ফযীলত কী রয়েছে।
তাওবা সম্পর্কে বহু সংখ্যক মতামত রয়েছে। আল্লামা ‘আইনী রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হির প্রসিদ্ধ কিতাব ‘উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী’-এর মধ্যে রয়েছে:
১. কিছু সংখ্যক মাশাইখ কিরামের মতে, লজ্জিত হওয়া-ই তাওবা।
২. কারো কারো মতে, গুনাহের প্রতি ফিরে না যাওয়ার দৃঢ় সংকল্প করা তাওবা।
৩. পাপরাশি থেকে বিরত থাকার নাম তাওবা।
৪. উপর্যুক্ত তিন কথার সমন্নয়ের নাম তাওবা এবং এটাকে সত্য তাওবা বলা হয়।
৫. আল্লামা জাওহারী বলেন: পাপরাশি থেকে ফিরে আসাকে তাওবা বলে।
তাওবার শর্ত
হুকুক তথা অধিকারসমূহ দু’ প্রকার।
এক. হুকুকুল্লা-হ্, যার সম্পর্ক আল্লাহ তা‘আলার ‘যাত’ (সত্তা)’র সাথে হয়ে থাকে। যথা: নামায, রোযা, হজ্জ ইত্যাদি। তাঁর সাথে সম্পর্কিত তাওবা কবূল হওয়ার তিনটি শর্ত রয়েছে: ১. ওই গুনাহ ত্যাগ করা, ২. গুনাহের ব্যাপারে লজ্জিত হওয়া, ৩. এ কথার দৃঢ় সংকল্প করা যে, এখন থেকে এ গুনাহ দ্বিতীয়বার কখনো করবো না। উল্লেখিত শর্তসমূহ থেকে যদি একটি শর্তও পাওয়া না যায়, তাহলে বান্দার তাওবা সহীহ হবে না।
দুই. যদি গুনাহ কোন মানুষের সাথে সম্পর্কিত হয় তথা হুক্বূক্বুল ইবাদ বা বান্দার অধিকারসমূহ থেকে হয়, তাহলে সে পাপ থেকে তাওবা করার জন্য এ তিন শর্ত ছাড়াও চতুর্থ শর্ত হলো: যার হক্ব নিয়েছে, তার হক্ব আদায় করবে। যদি সম্পদ ও ইত্যাদি বিষয় থেকে হয়, তাহলে সেটাকে ফিরিয়ে দেবে। যদি বান্দার হক্ব অপবাদ দেয়া ইত্যাদি প্রকারের হয়, তাহলে তাকে নিজের উপর ইখতিয়ার দিবে কিংবা তার নিকট ক্ষমা চাইবে। যদি গীবত ইত্যাদি হয়ে থাকে, তাহলেও তার নিকট ক্ষমা চাইবে। সকল পাপ থেকে তাওবা করা ওয়াজিব। এটা যেন না হয় যে, কিছু সংখ্যক গুনাহ থেকে তাওবা করবে আর বাকীগুলোকে অবহেলা করা হবে। যদি কিছু সংখ্যক গুনাহ থেকে তাওবা করে, তাহলে অধিকাংশ আলিমের মতে, ওইসব গুনাহ থেকে তাওবা সহীহ তো হবে, কিন্তু যেসব গুনাহ থেকে তাওবা করে নি, সেগুলো তার জিম্মায় বাকী থাকবে। তাওবা সম্পর্কে ক্বোরআন ও হাদীসে বহু সংখ্যক আয়াত ও হাদীস এসেছে। তন্মধ্য থেকে কিছু নিম্নে তুলে ধরা হলো:
এক. وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ.
“এবং আল্লাহ্র দিকে তাওবা করো, হে মুসলমানগণ! তোমরা সকলেই, এ আশায় যে, তোমরা সফলতা অর্জন করবে।” (সূরা নূর: ৩১)
দুই.
وَاسْتَغْفِرُوْا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوْبُوْا إِلَيْهِ إِنَّ رَبِّيْ رَحِيْمٌ وَدُوْدٌ
“এবং আপন প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো, অতঃপর তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করো; নিশ্চয় আমার প্রতিপালক পরম দয়ালু, প্রেমময়।” (সূরা হুদ: ৯০)
তিন.
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا تُوْبُوْا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَّصُوْحًا
“হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ্র প্রতি এমন তাওবা করো যা আগামীর জন্য উপদেশ হয়ে যায়।” (সূরা তাহরীম:০৮)
হযরত সদরুল আফাদ্বিল আল্লামা সায়্যিদ মুহাম্মদ নঈমুদ্দিন মুরাদাবাদী আলায়হির রাহমাহ এ আয়াতের অধীন বলেন: সত্য তাওবা, যার প্রভাব তাওবাকারীর কর্মকা-ে দৃশ্যমান হবে, তার জীবন আনুগত্য ও ইবাদত-বন্দেগীসমূহ দ্বারা আবাদ হয়ে যাবে এবং পাপরাশি থেকে বিরত থাকবে। হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু এবং অপর সাহাবীগণ বলেন: ‘তাওবা-ই নাসূহ’ হচ্ছে, তাওবা করার পর তাওবাকারী আর গুনাহের দিকে ফিরে যাবে না, যেমনিভাবে দোহনকৃত দুধ পুনরায় স্তনের মধ্যে প্রবেশ করে না। (কানযুল ঈমান, তাফসীরে খাযাইনুল ইরফান, সূরা তাহরীম:০৮, টীকা:২২)
হাদীস শরীফ
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ: وَاللهِ إِنِّيْ لَأَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ فِي الْيَوْمِ أَكْثَرَ مِنْ سَبْعِيْنَ مَرَّةً.
“হযরত আবূ হোরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আল্লাহর শপথ! আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে সত্তর বারেরও অধিক ইস্তিগফার ও তাওবা করে থাকি।” (সহীহ বোখারী: ৬৩০৭)
عَنِ الأَغَرِّ الْمُزَنِيِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : يَا أَيُّهَا النَّاسُ تُوْبُوا إِلَى اللَّهِ فَإِنِّي أَتُوْبُ فِي الْيَوْمِ إِلَيْهِ مِائَةَ مَرَّةٍ
“হযরত আগার আল মুযানী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা করো। কেননা আমি আল্লাহর নিকট প্রতিদিন একশ’ বার তাওবা করে থাকি।” (সহীহ মুসলিম:২৭০২)
উপর্যুক্ত হাদীস শরীফ দ্বারা বুঝা যায় যে, আমাদের বেশি পরিমাণে তাওবা ও ইস্তিগফার করা উচিত, কেননা নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম গুনাহ থেকে নিষ্পাপ হওয়া সত্ত্বেও বেশি পরিমাণে ইস্তিগফার করতেন, কখনো সত্তর বার আল্লাহ্ তা‘আলার দরবারে ইস্তিগফার করতেন আর কখনো একশ’ বার। আক্বা করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর এসব আমল উম্মতকে শিক্ষা দেয়ার জন্য হত।
সত্য তাওবার নিদর্শন
হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি বলেন: সত্য তাওবার ছয়টি আলামত রয়েছে। ১. অতীতের পাপরাশির কারণে লজ্জিত হওয়া, ২. পাপাচারে প্রত্যাবর্তন না করার দৃঢ় সংকল্প করা, ৩. যেসব ফরযে ঘাটতি হয়েছে, সেগুলো আদায় করা, ৪. যার হক্ব নিয়েছে, তাদেরকে তাদের হক্ব প্রদান করা, ৫. নাজায়েয ও হারাম সম্পদ দ্বারা শরীরে যেসব চর্বি তৈরী হয়েছে, তা দুশ্চিন্তা ও দুঃখ দ্বারা গলানো, এমনকি চামড়া হাড্ডির সাথে জড়িয়ে যাবে। আর যদি তাতে গোশত আসে, তাহলে এমন গোশত আসুক, যা হালাল ও পবিত্র হবে। ৬. যেমনিভাবে শরীর প্রবৃত্তির কামনা-বাসনার স্বাদ আনে, অনুরূপ সেটাকে আনুগত্য ও বন্দেগীর স্বাদ আস্বাদন করানো।
তাওবা ও ইস্তিগফারের হাক্বীক্বত
হাক্বীমুল উম্মত মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী আলায়হির রাহমাহ বলেন: ইস্তিগফার-এর অর্থ- অতীতের পাপরাশির ক্ষমা চাওয়া এবং তাওবার হাক্বীক্বত আগামীতে গুনাহ না করার অঙ্গিকার করা কিংবা মুখে গুনাহ না করার প্রতিশ্রুতি দেয়াকে ইস্তিগফার এবং অন্তর থেকে ওয়াদা করাকে ‘তাওবা’ বলে। ‘ইস্তিগফার’ (إستغفار) শব্দটি (غفر) থেকে উদ্ভূত। এর অর্থ গোপন করা, লুকিয়ে রাখা, ঢেকে রাখা ইত্যাদি। যেহেতু ইস্তিগফারের বরকতে গুনাহ ঢেকে যায়, এ জন্য সেটাকে ইস্তিগফার বলা হয়। তাওবা অর্থ- প্রত্যাবর্তন করা; যদি সেটা হক্ব তা‘আলার জন্য ব্যবহার হয়, তখন সেটার অর্থ হয়- শাস্তির ইচ্ছা থেকে প্রত্যাবর্তন করা। আর যদি বান্দার সিফাত তথা বৈশিষ্ট্য হয়, তাহলে অর্থ হয় গুনাহ থেকে আনুগত্যের প্রতি, অমনোযোগিতা থেকে যিকরের প্রতি, অনুপস্থিতি থেকে উপস্থিতির প্রতি ফিরে যাওয়া। নিষ্ঠাপূর্ণ তাওবা হচ্ছে- বান্দা পূর্বেকার পাপরাশির উপর লজ্জিত হবে, ভবিষ্যতে না করার অঙ্গিকার করে, যতটুকু সম্ভব পূর্বেকার গুনাহের বিণিময় ও বদলা আদায় করবে, নামাযসমূহ যিম্মায় থাকে, তাহলে সেগুলো আদায় করবে, কারো কর্জ রয়ে গেলে, তা আদায় করবে; হযরত জুনাইদ বাগদাদী আলায়হির রাহমাহ্ বলেন: তাওবার পূর্ণ স্তর হচ্ছে, অন্তর গুনাহের স্বাদ, বরং গুনাহকেই ভুলে যাবে।
(মিরআতুল মানাজীহ: ৩/৩৫২)
উল্লেখিত হাদীসসমূহে নবীগণের সরদার, হাবীব-ই পরওয়ারদিগার সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর ইস্তিগফারের বর্ণনা হয়েছে যে, তিনি প্রতিদিন ৭০ বারের অধিক ইস্তিগফার করতেন। অথচ তাওবা ও ইস্তিগফার তো কোন গুনাহের কারণে হয়ে থাকে, কিন্তু নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম তো পাপরাশি থেকে মা’সূম, নিষ্পাপ, বরং না জানি কত সংখ্যক গুনাহগারকে তাঁর ওসীলায় ক্ষমা করা হবে! যেমন: ক্বোরআন কারীমে ইরশাদ হয়েছে,
لِيَغْفِرَ لَكَ اللهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِكَ وَ مَا تَاَخَّرَ.
“যাতে আল্লাহ্ আপনার কারণে পাপ ক্ষমা করে দেন আপনার পূর্ববর্তীদের এবং আপনার পরবর্তীদের।”
(সূরা ফাতহ: ০২)
সুতরাং তাঁর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইস্তিগফার করার কী হিকমত রয়েছে? ওলামা-ই কিরাম এ বিষয়ে বিভিন্ন উত্তর দিয়েছেন, তন্মধ্য থেকে কিছু বর্ণনা করা যাচ্ছে,
নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর ইস্তিগফার করার কারণসমূহ:
হাফিয ইবনে হাজার আসক্বালানী ক্বুদ্দিসা সিররুহুন নূরানী বলেন: ইস্তিগফার করা গুনাহে পতিত হওয়াকে আবশ্যক করে। (অর্থাৎ তাওবা কোন গুনাহের উপরই করা হয়।) অথচ নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম মা’সূম (বরং সকল মা’সূমের সরদার), তাহলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর ইস্তিগফার করার কারণ কী? ওলামা-ই কিরাম সেটার ভিন্ন ভিন্ন হিকমত বর্ণনা করেছেন।
১. আল্লামা ইবনে বাত্তাল আলায়হির রাহমাহ বলেন: লোকদের মধ্যে সর্বাধিক ইবাদত নবীগণ আলায়হিমুস সালাম-ই করেন। তাঁরা সদাসর্বদা আল্লাহ্ তা‘আলার কৃতজ্ঞতা আদায় করতেন। এতদ্সত্ত্বেও তাঁরা কমতির স্বীকার করতেন। সারকথা, আল্লাহ্ তা‘আলার হক্ব আদায় না হওয়ার কারণে তাঁরা আল্লাহ্র নিকট ইস্তিগফার করতেন। (শরহে বুখারী ইবনে বাত্তাল, কিতাবুদ দু‘আ, বাবু ইস্তিগফারিন নাবিয়্যি ফিল ইয়াওমে ওয়াল লায়লাতি)
২. ইমাম গাযালী আলায়হির রাহমাহ ‘ইহইয়াউল উলূম’-এর মধ্যে বলেন: নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সর্বদা উন্নত স্তরের প্রতি উন্নতি করতে থাকতেন এবং যখন তিনি এক অবস্থা থেকে অপর অবস্থার প্রতি উন্নতি করতেন, তখন স্বীয় অবস্থার উপর ইস্তিগফার করতেন।
৩. আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী আলায়হির রাহমাহ বলেন: তিনি সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বিনয় প্রকাশে ইস্তিগফার করতেন।
৪. তাঁর ইস্তিগফার করা উম্মতের শিক্ষা-প্রশিক্ষণের জন্য।
আল্লাহ্ তা‘আলার অপার ক্ষমা
হযরত আবূ হোরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: বান্দা যখন কোন গুনাহ করে, তারপর বলে: মুনিব, আমি গুনাহ করেছি, আমাকে ক্ষমা করে দাও; তখন রব করীম বলেন: নিশ্চয় আমার বান্দা জানে যে, তার কেউ রব রয়েছে, যিনি গুনাহ ক্ষমা করেন এবং সেটার উপর পাকড়াও করেন। আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। অতঃপর যখন রব তা‘আলা চান, বান্দা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে, তারপর কোন গুনাহ করে বসলে, পুনরায় বলে: হে রব! আমি গুনাহ করে ফেলেছি, আমাকে ক্ষমা করে দাও; তখন রব করীম বলেন: নিশ্চয় আমার বান্দা জানে যে, তার কেউ রব রয়েছে, যিনি গুনাহ ক্ষমা করেন এবং সেটার উপর পাকড়াও করেন। আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। অতঃপর বান্দা থেমে যায় যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ্ তা‘আলা চান, তারপর আবার গুনাহ করে বসে, আর আরয করে: ইয়া রব! আমার নিকট থেকে গুনাহ সংঘটিত হয়ে গেছে, আমাকে ক্ষমা করে দাও। তখন রব তা‘আলা ইরশাদ করেন: নিশ্চয় আমার বান্দা জানে যে, তার কেউ রব রয়েছে, যিনি গুনাহ ক্ষমা করেন এবং সেটার উপর পাকড়াও করেন। আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। সে যা ইচ্ছা করুক। (বোখারী শরীফ, কিতাবুত তাওহীদ, খ–২, পৃ. ১১১৭, মজলিসে বারাকাত মুবারকপুর)
যুবকের তাওবার কারণে জান্নাত সাজানো হয়
বর্ণিত আছে যে, যখন কোন যুবক আল্লাহ্ তা‘আলার দরবারে তাওবা করে, তখন ফিরিশতাকুল একে অপরকে সুসংবাদ দিতে থাকে। অন্যসব ফিরিশতা জিজ্ঞেস করে কী হয়েছে? তখন তাদেরকে বলা হয় যে, এক যুবক অবহেলার স্বপ্ন থেকে জাগ্রত হয়ে স্বীয় রবের দরবারে তাওবা করেছে। অতঃপর একজন ঘোষক ঘোষণা করে: এ যুবকের তাওবার অভ্যর্থনার জন্য জান্নাতসমূহকে সাজিয়ে দাও।”
এক নসীহতমূলক ঘটনা
হযরত কাহমস ইবনে হুসাইন রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমার নিকট থেকে একটি গুনাহ সংঘটিত হয়েছে, এ কারণে আমি চল্লিশ বছর কান্না করেছি। লোকেরা জিজ্ঞেস করলো: হে আবূ আবদুল্লাহ্! সে কোন গুনাহ ছিল? তখন তিনি বলেন: একবার আমার এক বন্ধু আমার সাথে সাক্ষাত করতে আসেন, আমি তার জন্য মাছ রান্না করি, যখন সে আহার গ্রহণ করে নিল, তখন উঠে গিয়ে স্বীয় প্রতিবেশির দেয়াল থেকে মাটি নিয়ে নিজ মেহমানের হাত ধুয়ে দিলাম।”
এ ঘটনা আমাদের জন্য অনেক বড় নসীহত (উপদেশ)। এর দ্বারা বুঝা যায় যে, ‘অনুভূতি’ খোদা তা‘আলার কত বড় নি’মাত। আজ আমাদের মধ্যে এটারই কমতি, যে অনুভূতি মৃত হয়ে গেছে। আপন প্রতিবেশির দেয়াল থেকে মাটি নিয়ে নেয়া তেমন কোন বড় বিষয় ছিল না, যার কারণে এত বেশি পেরেশান হবেন, কিন্তু সম্মানিত বুযুর্গ-এর যেহেতু তীব্র অনুভূতি ছিল, এমন যেন না হয় যে, এটার কারণে আমাকে পাকড়াও করা হবে। শুধু এ খেয়াল আসায় খোদার ভয়ে বেশ কিছু বছর ক্রন্দন করেন। এ জন্য প্রিয় বন্ধুগণ! ‘ইহসাস’ (অনুভূতি) সৃষ্টি করুন। যদি এ নি’মাত অর্জিত হয়, তাহলে বিশ্বাস রাখুন গুনাহ খুবই কম হবে। আর নেকীর বসন্ত বয়ে যাবে। আমাদের কাছে আজ সবকিছু আছে, এমনকি মৌলিক চাহিদাদির না থাকার কান্নাও ব্যর্থ প্রয়াস। তাই যদি কিছু নেই তো, ‘ইহসাস’ (অনুভূতি) নেই। আসুন, আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট প্রার্থনা করি যেন তিনি আমাদেরকে ‘ইহসাস’ (অনুভূতি)’র সম্পদ দান করেন। আ-মীন।
লেখক: পরিচালক, আনজুমান রিসার্চ সেন্টার ও খতীব, নওয়াব ওয়ালী বেগ খাঁ জামে মসজিদ, চকবাজার, চট্টগ্রাম।