Anjuman-E Rahmania Ahmadia Sunnia Trust

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

মহিমান্বিত মাস রজব বহু তাৎপর্যমণ্ডিত ও ফযিলতময় মাস। এ মাসের বৈশিষ্ট্য হলো এ মাস আল্লাহ্ প্রদত্ত চারটি সম্মানিত মাসের একটি। মহান আল্লাহ্ বারোটি মাসের মধে চারটি মাসকে সম্মানিত মাস হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এ চারটি সম্মানিত মাসের একটি হলো রজব। এ মাসে সংঘটিত হয় ইসলামের ইতিহাসের অন্যতম তাৎপর্যময় ঘটনা মি’রাজ তথা মহানবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ্ প্রদত্ত শ্রেষ্ঠ মু’জিযা। রজব মাসের ২৬ তারিখ রাতে আল্লাহ্ তা‘আলার বিশেষ মেহমান হিসেবে প্রিয়নবী আরশে আজিম পরিভ্রমণ করেন। সেখানে অবলোকন করেন সৃষ্টি জগতের অপার রহস্যময় অনেক বিষয়। পবিত্র মি’রাজ রজনীতে তিনি অতি সংক্ষিপ্ত সময়ের মধে সশরীরে জাগ্রত অবস্থায় মসজিদে হারাম হতে মসজিদে আক্বসা এবং মসজিদে আক্বসা হতে সাত আসমান অতিক্রম করে সিদরাতুল মুনতাহায় গমন করেন। অতঃপর আরো উর্ধ্বে তাশরীফ নেন। আলম-ই লা মক্বানে তিনি আল্লাহর দিদার লাভে ধন্য হন। বেহেশত-দোযখ, আরশ-কুরসী, লৌহ-কলম ইত্যাদি আল্লাহর নিদর্শনাবলী পর্যবেক্ষণ করেছেন।
রজব মাসের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো- এ মাস আসে পবিত্র রমজানের আগমনী বার্তা নিয়ে। রজব মাস থেকেই রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম রমজান মাসের প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। এ মাসকে খুবই গুরুত্ব দিতেন। রজবের চাঁদ দেখা গেলেই তিনি, এই দোআ পড়তেন- ‘‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজবা ওয়া শা’বানা ওয়া বাল্লিগনা রমদ্বান।’’ অর্থ: হে আল্লাহ্ আমাদের জন্য রজব ও শা’বান মাসকে বরকতময় করে দিন।
আর আমাদের রমজান মাস পর্যন্ত পৌঁছে দিন।’’ মূলত রজব ও শা’বান এ দু’মাস হলো রমজানের প্রস্তুতি মাস। এ প্রস্তুতি শারীরিক, মানসিক, আর্থিক সহ সামগ্রিকভাবে নিতে হবে। আসন্ন পবিত্র রমজানকে পুরোপুরি ইবাদতের মধ্যে কাটাতে এ মাস থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। এ জন্য রজব ও শা’বান মাসে নেক-আমল ও গুনাহ্ থেকে বেঁচে থাকার মাধ্যমে পবিত্র রমজানে ইবাদত বন্দেগীর প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। বেশী বেশী তাওবা-ইসতেগ্ফারের মাধ্যমে গুনাহ্ থেকে বেঁচে থাকার সক্ষমতা অর্জন করার চেষ্টায় মনোনিবেশ করা একান্ত প্রয়োজন। বিশুদ্ধ নিয়্যতে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করলে মহিমান্বিত রমজানের রোজা পালন এবং এর মাধ্যমে কাঙ্খিত আত্মশুদ্ধি অর্জন সহজ হবে।
সুলতানুল হিন্দ হযরত খাজা মুঈনউদ্দিন চিশতী (রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলায়হি) একটি নাম, একটি জীবন্ত ইতিহাস। মুসলিম জাতির বিবেক, অহংকার ও গৌরবের দ্বীপ্ত স্মারক । ইসলাম ও  ইসলাম ও আধ্যাত্মিক জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র। যে ইতিহাস ও গৌরবের মধ্যে লুকায়িত আছে মুসলমানদের ঈমানের সৌরভ ও জেগে ওঠার প্রেরণা। হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারের প্রকৃত শিক্ষা। একজন খাঁটি মুসলমান তথা আল্লাহর প্রিয় ওলীর কর্মকাণ্ড যে শুধু মসজিদ, মাদ্রাসা ও খানকাহ’র মধ্যে  সীমাবদ্ধ নয় তাই প্রমাণ করে গেছেন হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি)। আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি হিজরত করে অনেক কষ্ট ত্যাগ স্বীকার  করেছেন, খোদাদ্রোহীদের মোকাবিলায় স্বীয় উন্নত চরিত্র মাধুর্য ও আধ্যাত্মিকতার বলে লাখ লাখ অমুসলিমকে ইসলামের সুধা পান করিয়েছেন। ৬ রজব এ মহান আধ্যাত্মিক সাধকের ওফাত বার্ষিকীতে তাঁকে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি ও ফুয়ূজাত কামনা করছি।
এ দেশের সুন্নী মুসলমানদের ঈমানী চেতনার বাতিঘর গাজী-ই দ্বীনও মিল্লাত ইমামে আহলে সুন্নাত আল্লামা গাজী সৈয়্যদ মুহাম্মদ আজিজুল হক শেরে বাংলা রাহমাতুল্লাহি আলায়হি। তিনি ইসলামের নামে ভ্রান্ত আক্বীদা পোষণকারীদের মুখোশ উন্মোচন করেন। হক ও বাতিলের পরিচয় নির্ময়ে মানদ- তিনি সাধারণ মানুষের মধ্যে উপস্থাপন করেন। তিনি বিজ্ঞ আলিম, অনলবর্ষী বক্তা , যোগ্য সংগঠক, দক্ষ মুনাজির, ন্যায় -নিষ্ঠ সমাজ সেবক সহ বহু ̧গুণে গুণান্বিত ছিলেন। সর্বপরি তিনি ছিলেন অদ্বিতীয় আশেক্বে রাসূল, বাতিলের বিরুদ্ধে সদা সোচ্চার- আপোষহীন। আসন্ন ১০ রজব তাঁর পবিত্র ওফাত বার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধার সাথে ̄§রণ ও তাঁর ফুয়ূজাত কামনা করছি।