প্রশ্নোত্তর : অধ্যক্ষ মুফ্তী সৈয়দ মুহাম্মদ অছিয়র রহমান
মুহাম্মদ বেলাল উদ্দীন-
চৌধুরী নগর আ/এ, বায়েজিদ, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: সফরে বের হওয়ার আগে নামাজের ওয়াক্ত শুর হলে পথিমধ্যে ওই নামাজ পড়ার সময় কছর পড়তে হবে কিনা?
উত্তর: শরীয়তের দৃষ্টিতে ওই ব্যক্তি মুসাফির, যে তিন দিনের পথ পর্যন্ত গমনের উদ্দেশ্যে নিজ এলাকা থেকে সফর করার জন্য বের হয় এবং ১৫ (পনর) দিনের মধ্যে ফিরে আসার ইচ্ছা করেছে। তিন দিনের পথ বলতে উদ্দেশ্য সাড়ে সাতান্ন মাইল পথের দূরত্ব পরিমাণ। অর্থাৎ যে ব্যক্তি সাড়ে সাতান্ন (৫৭.৫) মাইল পথের দূরত্ব পরিমাণ রাস্তা অতিক্রম করে যাওয়ার জন্য বের হয়েছে, সে মুসাফির। আর সে ব্যক্তি ‘কসর’ পড়বে।
[বাহারে শরীয়ত, খন্ড-৪, পৃ. ৭৬, ফাওয়া-এ রযভীয়্যাহ, খন্ড-৩, পৃ. ৬৬৭]
সফরে বের হওয়ার আগে মুকীম থাকা অবস্থায় নামাযের ওয়াক্ত হয়ে গেলে তখন মুকিম অবস্থায় পড়লে পুরা পড়বে আর তখন উক্ত নামায আদায় না করে সফরে বের হয়ে বাড়ীর সীমানা পার হয়ে গেলে আর উক্ত ওয়াক্ত বাকি থাকলে তখন উক্ত নামায কসর হিসেবে আদায় করবে অর্থাৎ চার রাকাতের স্থলে দুই রাকাত পড়বে। অর্থাৎ মুকিম অবস্থায় পড়লে নামায পরিপূর্ণ পড়বে। আর সফর শুরু করলে বাড়ীর সীমানা অতিক্রম করলে তখন ওয়াক্তিয়া চার রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামায দু’রাকাত পড়বে। আর কাযা নামাযের বিধান হল যে অবস্থায় কাযা হয়েছে সেভাবে কাযা পড়বে যেমন মুকিমাবস্থায় নামায কাযা হলে তা সফরের অবস্থায় কাযা করলেও পরিপূর্ণ পড়বে আর সফরে কাযা হলে তা মুকিম অবস্থায় কাযা পড়লে কসর হিসেবে কাযা করবে।
[আদদুরুল মোখতার ইত্যাদি]
প্রশ্ন: আমাদের এলাকায় অনেকেই বলেন যে, কবরের পাশে কোরআন পাঠ করা ও জিয়ারত করা না জায়েজ। তাদের এ রকম কথা বলা শরিয়তসম্মত কিনা? সঠিক উত্তর প্রদান করলে কৃতজ্ঞ হব।
উত্তর: কবর জিয়ারত করা এবং কবরের পাশে কোরআন করিম তেলাওয়াত করা মুস্তাহাব ও শরিয়তসম্মত। আদ দুররুল মোখতার ও রদ্দুল মুহ্তারের মত প্রসিদ্ধ ফিক্বহের কিতাবসমূহে উল্লেখ আছে কবর জিয়ারত মুস্তাহাব। প্রতি সপ্তাহে একদিন মুরব্বী ও আত্মীয় স্বজনের কবর জিয়ারত করা অনেক উত্তম ও ফজিলত। তবে শুক্রবার বা বৃহস্পতিবার বা রোববার অথবা সোমবার জিয়ারত কবুলের জন্য বেশী উপযোগী, উত্তম হল শুক্রবার সকাল বেলা। কবরস্থানে যখন কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে যাবে তখন সুরা ফাতেহা, যদি সম্ভব হয়, সুরা বাকরার ‘১ম অংশ, الم থেকে مفلحون পর্যন্ত, আয়াতুল কুরসি, أمن الرسول শেষ পর্যন্ত, সূরা ইয়াসিন, সূরা মূলক বা তাবারাকাল্লাজি, আলহাকুমুৎ তাকাসুর ১বার, সূরা এখলাস বার/এগার/সাত/তিনবার পড়বে। অথবা কবরবাসিদেরকে সালাম, সূরা, কেরাত (যা জানে), দরুদ শরীফ সহ পড়বে আর এ সব তেলাওয়াতের সওয়াব কবরবাসীদেরকে বখশিশ করবে। হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে কবর জিয়ারতকালে যে এগারবার সূরা ইখলাছ পাঠ করে সওয়াব মৃত ব্যক্তিদের কবরে/রুহে পৌছাবে উক্ত কবরস্থানে যত কবরবাসী আছে তাদের সমান সওয়াব জিয়ারতকারী পাবে। কবর জিয়ারতকালে উল্লিখিত সুরাগুলোর তেলাওয়াত জায়েয ও উত্তম হলে গোটা কোরআন শরীফ তেলাওয়াত না জায়েজ হবে কেন? বরং গোটা কোরআন তেলাওয়াতের সওয়াব আরো বেশী হবে। এটাই বিশুদ্ধ অভিমত সুতরাং কবর জিয়ারত ও কোরআন করিমের তেলাওয়াতের মত উত্তম এবাদতকে কবরের পাশে পড়া নাজায়েয বলা দ্বীন নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করার নামান্তর। বরং মৃত ব্যক্তির কবর জিয়ারতের জন্য হাদিস শরীফে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম জীবিতদেরকে বেশী বেশী তাগিদ করেছেন, স্বয়ং হুযূর পুরনুর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরামকে সাথে নিয়ে জান্নাতুল বকি ও শোহাদায়ে উহুদের জেয়ারত করতেন। [মেশকাত, মেরকাত ও শরহুস ছুদূর ইত্যাদি]
মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ্ ও মুহাম্মদ জুহাইর
শিক্ষার্থী- জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: আজকাল অনেকেই আশেকে রাসূল বলে নিজেকে জাহির করে অথচ ৫ ওয়াক্ত নামায আদায় করে না, দাঁড়ি রাখে না, শুধু মিলাদ পড়ে আর আশেকে রাসূল দাবি করে। কুরআন -সুন্নাহর দৃষ্টিতে সত্যিকারের আশেকে রাসূল কে? আশেকে রাসূল চেনার উপায় কি?
উত্তর: নবী প্রেম বা ইশকে রাসূল ঈমানের প্রাণ। প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ভালবাসা ঈমান ও দ্বীনের পূর্বশত, এতে যদি ত্রুটি হয় তখন সবকিছুই নষ্ট হয়ে যায়। তাই প্রত্যেক মুসলমানের উপর মহানবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর ভালবাসা তাদের আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, মাতা-পিতা- পরিবার পরিজন এমনকি স্বীয় প্রাণ এক কথায় সবকিছু থেকে বেশী হওয়া অপরিহার্য। হুজুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর ভালবাসার উপরই ঈমান নির্ভরশীল। উক্ত ভালবাসার কতগুলো নিদর্শন রয়েছে। যেমন এক, অধিকহারে স্থায়ীভাবে নবীজিকে স্মরণ করা, কখনো নবীজির স্মরণ থেকে বিছিন্ন না হওয়া, দুই. তাঁর আলোচনার সময় সম্মান প্রদর্শন করা বিশেষত তাঁর নাম মোবারক ও শান-মানের বর্ণনা শ্রবণের সময় বিনয়-নম্রতা (আদব-ভক্তি) ও মিনতি প্রকাশ করা, তিন. তাঁর যিয়ারতের প্রতি অত্যাধিক আগ্রহ থাকা, চার, তাঁর প্রেমিক তাঁর পবিত্র আলোচনা থেকে রূহানী তৃপ্তি পাবে এবং নাম মোবারক শ্রবণের সময় আনন্দ অনুভব করবে। পাঁচ, নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে যা কিছু নিয়ে এসেছেন তাকে মনে প্রাণে বিশ্বাস করে আমলে পরিণত করার জন্য সচেষ্ট থাকবে। অতএব যিনি সত্যিকার অর্থে আশেকে রাসূল হবেন এবং অন্তরে নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর বাস্তব প্রেম ও ভালবাসা স্থান দিবেন তিনি অবশ্যই পঞ্জেগানা নামায রমজান শরীফের রোজা, হজ্ব, যাকাত তথা ইসলামী শরিয়তের বিধি-বিধিান অবশ্যই পালনে সচেষ্ট হবেন, কারণ পঞ্জেগানা নামায ও ফরয রোযা ইত্যাদি ইচ্ছাকৃত ছেড়ে দেয়া গুনাহে কবিরা ও বড় নাফরমানী। তবে যারা বাস্তবিক অর্থে মনে প্রাণে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে এবং নবীজির আওলাদ আহলে বায়তে রসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম ও অলি, গাউস, কুতুব, আবদালকে ভালবাসেন তারা মৃত্যুর আগে আগে পাক্কা, নামাযী ও ইবাদত গুজার হয়ে যায়। এটা পরীক্ষিত। আর এটা কোরআন-সুন্নাহর মর্মার্থ।
প্রশ্ন: বর্তমানে অনেক মানুষ পায়খানা-প্রস্রাবের টিস্যু, কাপড় বা মাটি দ্বারা ঢিলা করার পর পানি দ্বারা ধৌত করে না। এরপর ওযু করলে কি শুদ্ধ হবে? আর কোন্ জিনিস দ্বারা ইস্তিনজা করলে সুন্নাত আদায় হবে। বিস্তারিত জানালে উপকৃত হবো।
উত্তর: ইসতিঞ্জা বা পায়খানা-প্রস্রাবের পর ঢিলা বা পানি দ্বারা ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জনা করা সুন্নাত। ঢিলা ও পানি উভয়টি ব্যবহার করে পবিত্র হওয়া যায়। কেবল ঢিলা, টিস্যু পেপার, মাটি অথবা কেবল পানি দ্বারাও ইসতিঞ্জাকারী পবিত্রতা অর্জন করতে পারবে। তবে ঢিলা, টিস্যু পেপার ও শুধু মাটি দ্বারা পবিত্রতা অর্জনের পর পানির ব্যবস্থা থাকলে সব শেষে পানি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করবে। এটা উত্তম। তবে হাঁড়, মানুষ বা চতুষ্পদ প্রাণীর খাদ্য, পাকা ইট যা পানি চুষে নেয়না, চাঁড়া, কয়লা, কাঁচ, রেশমী কাপড়, তুলা ইত্যাদি দ্বারা ইসতিঞ্জা অর্থাৎ পবিত্রতা অর্জন করা মাকরূহ। এসব বস্তু ব্যতীত অন্য সকল পবিত্র বস্তু দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করে ওজু করে নামায পড়লে নামায আদায় হয়ে যাবে। এমন ব্যক্তির ইমামতিতে নামায হয়ে যাবে। উল্লেখ্য, যেসব কাগজ লেখা ও বই-পুস্তুক-কিতাব ইত্যাদি ছাপানোর জন্য বানানো হয়েছে তা প্রস্রাব- পায়খানা হতে পবিত্রতা অর্জনে ব্যবহার করবে না। ব্যবহার করলে মাকরূহ ও গুনাহগার হবে। যেহেতু এসব কাগজ সম্মানের যোগ্য। অবশ্য টিস্যু পেপার যা সাধারণত লেখা ও বই-পুস্তক ছাপানোর কাজে ব্যবহার হয় না বরং হাত-মুখ মোছার জন্য এবং পায়খানা-প্রস্রাব হতে পরিষ্কার হওয়ার জন্য বানানো হয়েছে তা এসব কাজে ব্যবহার করতে অসুবিধা নেই।
ইমাম আ’লা হযরত শাহ্ আহমদ রজা ফাজেলে বেরলভী রহমাতুল্লাহি আলায়হি ফতোয়ায়ে রজভীয়া ১ম খ-ের পবিত্রতা অধ্যায়ে মাটির অনেক প্রকার বর্ণনা করেছেন, যা দ্বারা পায়খানা ও পেশাব হতে পবিত্রতা অর্জন করা বৈধ আর অনেক প্রকার বর্ণনা করেছেন, যা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন শুদ্ধ হবে না। এ সব বিবরণ বিস্তারিত দেখার অনুরোধ রইল।
মুহাম্মদ ইমান
চৌধুরী নগর আ/এ, বায়েজিদ, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: ইসলামে মধ্যপন্থা অবলম্বনের কথা বলা হয়েছে। এটার ব্যাখ্যা জানালে খুশী হব।
উত্তর: মহান আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেন-ان الدين عند الله الاسلام অর্থাৎ- নিশ্চয় ইসলামই আল্লাহ্ তা’আলার নিকট একমাত্র মনোনীত দ্বীন। রাব্বুল আলামীন একটি সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ দ্বীন বা ধর্ম যা আমাদেরকে দিয়েছেন তা হলো ইসলাম, আর ইসলামের অনুসারী মুসলমান জাতিকে শ্রেষ্ঠ এবং মধ্যপন্থী জাতি হিসেবে আল্লাহ্ তা‘আলা মর্যাদা দান করেছেন। আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন- وكذالك جعلناكم امة وسطا لتكونوا شهداء على الناس ويكون الرسول عليكم شهيدا – سورة البقرة অর্থাৎ- আর আমি তোমাদেরকে উম্মতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ/ মধ্যপন্থী উম্মত করেছি, যাতে তোমরা মানব জাতির জন্য সাক্ষী হও আর আমার প্রিয় ও সর্বশ্রেষ্ঠ রসূল তোমাদের রক্ষক ও সাক্ষী। [সূরা বাক্বারা: আয়াত-১৪৩]
এই আয়াতে পাকের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে কাছীর রহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন, এ মধ্যপন্থার কারণে উম্মতে মুহাম্মদীকে সাক্ষী হওয়ার যোগ্যতা আল্লাহ্ তা‘আলা দান করেছেন। ইসলাম এমন একটি দ্বীন বা ধর্ম, যে দ্বীনে না হযরত মূসা আলায়হিস্ সালাম এর দ্বীনের মতো কঠোরতা আছে, না হযরত ঈসা আলায়হিস্ সালামের দ্বীনের মতো শিথিলতা, বরং ইসরামের প্রতিটি বিধান (বিষয়) মধ্যম পন্থার অন্তর্ভুক্ত। অধিক কঠোরতা অথবা অতি সহজতর কোনো বিষয় যেহেতু ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে না তাই এ ধরনের কোনো বিষয় গ্রহণযোগ্য নয়। মধ্যমপন্থাই হচ্ছে উত্তম পন্থা, যা মানুষকে কাছে টানতে পারে অতি সহজে। আদর্শিক ভারসাম্যতা, নীতিনৈতিকতা ইত্যাদির নিরিখে মুসলিম উম্মাহ্ সর্বোত্তম জাতি। ইসলামে মধ্যপন্থা একটি সর্বব্যাপী আদর্শ। তাই প্রকৃত মুসলমানের সব কিছু তথা আক্বিদা-বিশ্বাস, চিন্তাধারা, ইবাদত-বন্দেগী, মুআমালাত-মুআশারাত, বিধি-বিধান বা হুকুম প্রয়োগ, অনুভূতি, ব্যক্তিগত ও সামাজিক বিষয়াবলী, আদর্শ ও বাস্তবতা সবকিছু মধ্যমপন্থারই আওতাধীন। الايمان بين الخوف والرجاء অর্থাৎ মহান আল্লাহ, মৃত্যু, কবর, হাশর-নশর, কহর-গজবকে ভয় করতে হবে সাথে সাথে প্রতি মুহূর্তে আল্লাহর রহমতের আশা রাখতে হবে। সুতরাং ঈমানের দাবীও মধ্যপন্থায় নিহিত। গুনাহগার বান্দা যেন আল্লাহর রহমতের আশা পোষণ করে এ আশা নিয়ে গুনাহ হতে প্রত্যাবর্তন করে রহমত ও ক্ষমা পাওয়ার জন্য আল্লাহর দিকে ফিরে আসবে আর আবেদ-জাহেদ বান্দা ইবাদতের উপর ভরসা করে আল্লাহর ভয়কে যেন পরিত্যাগ না করে। এটাই ইসলামে মধ্যপন্থা অবলম্বন। [নূরুল আনোয়ার কৃত: হযরত শেখ আহমদ জিয়ন রহ. ও তাফসিরে ইবনে কাছীর ইত্যাদি।]
আহসান উল্লাহ্ ইবনে মাওলানা সানা উল্লাহ্
হাসনাবাদ, সীতাকু-, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: সচারচর পরনিন্দা বা অন্যের সমালোচনা করা কি গীবত হবে? গীবত করার শাস্তি বা পরিণাম কী?
উত্তর: গীবত বা পরনিন্দা সমাজে একটি মারাত্মক ব্যাধি। এর ফলে পরস্পরের মধ্যে বিশ্বাস, সহমর্মিতা, বন্ধুত্ব এবং বান্দার আমল বিনষ্ট হয়ে যায়। ক্বোরআন ও হাদিসে গীবতের ক্ষতি ও পরিমাণ সম্পর্কে কঠোর সতর্কবাণী রয়েছে। গীবতকে মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষন করার সাথে তুলনা করে মহান আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন-ولا يغتب بعضكم بعضا أيُحِبُّ احدكم أن يأكل لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهتموه – الخ (سورة الحجرات -١٢ অর্থাৎ তোমরা কেউ কারো গীবত করো না, তোমাদের কেউ কি আপন মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুত তোমরা তা অপছন্দ করো।[সূরা হুজরাত: আয়াত-১২]
অধিকাংশ ফকিহগণের মতে গীবত দ্বারা নামায, রোযা, ও ওযু ভঙ্গ না হলেও কিন্তু এগুলোর সাওয়াব কমে যায় কিংবা যার গীবত করেছে সওয়াব তার আমলনামায় চলে যায়। হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে- কিয়ামতের দিন গীবতকারীর নেক আমল গীবতকৃত অর্থাৎ যার গীবত করা হয়েছে তাকে প্রদান করা হবে। ফলে গীবতকারী আমলশূন্য হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- الغيبة أشد من الزناء – (الحديث) অর্থাৎ গীবত ব্যভিচার অপেক্ষা মারাত্মক। (আল্ হাদিস)-এর কারণ হলো গীবত বান্দার হক, বান্দা ক্ষমা না করলে আল্লাহ্ তা’আলা ক্ষমা করেন না। মূলত আমরা গীবতের প্রকৃত পরিচয় সম্পর্কে অজ্ঞ। অনেকেই মনে করে আমি অন্যের সম্পর্কে যা বলেছি তা তো সত্য, মিথ্যা নয় অথবা যার গীবত করা হয়েছে সে তো শুনেনি ফলে তা গীবত বা বান্দার হক নষ্ট হলো কিভাবে? এটা ভুল ধারণা। কোন ব্যক্তির মধ্যে বাস্তবে যে দোষ রয়েছে, তার অনুপস্থিতিতে সে দোষ আলোচনা করাই গীবত। যদি তার মধ্যে তা না থাকে তবে তা হবে মিথ্যা অপবাদ দেয়া। এতেও বান্দার হক নষ্ট করা হয়। আর বান্দার হক বান্দার সাথে সম্পর্কিত অর্থাৎ গীবতের কাফ্ফারা হলো যার গীবত করা হয়েছে প্রথমে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে, যদি উপস্থিত কিংবা বেঁচে থাকে। পক্ষান্তরে যদি সে ব্যক্তি দূরে থাকার কারণে সাক্ষাৎ সম্ভব না হয় বা মৃত্যু বরণ করে সে ক্ষেত্রে আল্লাহর নিকট তাওবা করবে এবং ওই ব্যক্তির জন্য মাগফিরাত কামনা করবে। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম গীবতের কাফ্ফারা সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন- গীবতের কাফ্ফারা হলো তুমি যার গীবত করেছো, তার জন্য মাগফিরাত কামনা করবে এভাবে হে আল্লাহ্ আমাদেরকে এবং তাকে ক্ষমা করো। তাই এ ধরনের পাপকে ঘৃণা করা উচিত এবং নিজের ভুল বুঝতে পেরে আল্লাহ্ তা’আলার দরবারে তাওবা করবে। রয়িসূল মুফাসসেরীন হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন-فاذكر عيوبك إذا اردت أن تذكر عيوب صاحبك অর্থাৎ তুমি তোমার কোন সঙ্গীর দোষ চর্চা করতে চাইলে তখন নিজের দোষ সমূহের কথা আগে স্মরণ করো। আর এটাই গীবত থেকে বেঁচে থাকার সর্বোত্তম ও সহজ পন্থা। পরম করুণাময় গীবতের মত মারাত্মক গুনাহ্ হতে সবাইকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। [মেশকাত শরীফ ও আনজুমান ট্রাস্ট প্রকাশিত-গাউসিয়া তারবিয়াতী নেসাব ‘গীবত’ অধ্যায় ইত্যাদি ]
মুহাম্মদ খোরশেদ আলম (প্রবাসী)
গহিরা, উত্তরসর্ত্তা, রাউজান, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: শরীয়ত মতে প্যান্ট পরিধানের ব্যাপারে হুকুম কি? জানালে ধন্য হব।
উত্তর: সতর ঢাকা পুরুষ মহিলা (প্রাপ্ত বয়স্ক) সবার জন্য ফরজ। শরিয়তে প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ ও মহিলার জন্য যতটুকু সতর হিসেবে নির্ধারিত করা হয়েছে ততটুকু অবশ্যই সর্ব অবস্থায় ঢাকতে হবে। পুরুষগণ পুরুষ জাতীয় কাপড় দ্বারা সতর ঢাকবে এবং মহিলারা মহিলাদের জন্য নির্ধারিত কাপড় দ্বারা সতর ঢাকবে। পুরুষদের জন্য মহিলাদের পোশাক, মহিলাদের জন্য পুরুষের পোশাক পরিধান করা হারাম। পুরুষ পাঞ্জাবী, পায়জামা, জোব্বা, লুঙ্গি ও প্যান্ট ইত্যাদি পড়তে পারে- আর মহিলারা শাড়ী, থ্রি-পিছ, সেলওয়ার কামিছ ইত্যাদি পরতে পারে শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন অসুবিধা নেই। তবে পুরুষ ও মহিলাদের লেবাস এমন হওয়া চায় যাতে নামায ও ইবাদত বন্দেগী শুদ্ধভাবে আদায় করা যায় এবং রুকু-সিজদা আদায়ে যেন অসুবিধা বা ব্যাঘাত না হয়।
(মেশকাত শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘মেরাতুল মানাজীহ্’ কৃত. হাকিমুল উম্মত মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী রহমাতুল্লাহি আলায়হি অবশ্য) বর্তমানে অনেক নারী-পুরুষ এমন টাই প্যান্ট পরিধান করে যাতে মহিলা ও পুরুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রকাশ পায় এবং রুকু-সাজদায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। এ ধরণের প্যান্ট ও লেবাস পরিধান করা বেহায়াপনা, গুনাহ্ ও বর্জনীয়।
প্রশ্ন: মাঝে মধ্যে আমাকে এক জামায়াত সমর্থক আলেমের পিছনে জুমার নামায পড়তে হয়। মনে প্রশ্ন জাগে এ নামাজ হবে কিনা? পুনরায় যদি নামায পড়তে চাই তাহলে কি জুমার দুই রাকআত ফরয একাকি নামায পড়া যাবে?
উত্তর: জামায়াতে ইসলামী তথা মৌং মওদুদীর অনুসারী ওহাবী, খারেজী, কাদিয়ানী, শিয়া, রাফেজী ও আহলে হাদিসের মত ভ্রান্ত একটি মতবাদের নাম-যাদের আক্বিদা ও বিশ্বাস সঠিক পথ ও মত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের বিপরীত। তাদের রচিত বই-পুস্তকে সম্মানিত রাসূলগণের শানে অনেক বেয়াদবী ও কটুক্তি করা হয়েছে যা ঈমানকে ধ্বংস করে ফেলে, এমনকি তারা প্রিয় নবী ও সকল নবী রাসূলগণের ইমাম হুযূর পুরনুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে সাধারণ মানুষ ও দশজনের মত মানুষ বলতে এবং প্রিয়নবীর শানে মৃত নবী বলতেও দ্বিধা করে না যা নি:সন্দেহে প্রিয়নবীর শানে কটুক্তি ও চরম বেয়াদবী এবং কুফরী ও বেঈমানীর নামান্তর। এ রকম ভ্রান্ত মতবাদের অনুসারীদের পেছনে নামায বৈধ হবে না। বরং জেনে শুনে পড়লে বেয়াদবী ও কুফরীকে সমর্থন করা হবে। ইচ্ছাকৃত এদের পেছনে নামায পড়লে অবশ্যই তওবা করবে এবং উক্ত নামায় পুনরায় আদায় করতে হবে। না জেনে পড়লে অবগত হওয়ার পর পুনরায় উক্ত নামায কাযা করবে। জুমার নামাযের বেলায় একই হুকুম। কেউ ইচ্ছাকৃত তাদের পেছনে জুমার নামায আদায় করলে অবশ্যই আল্লাহর দরবারে খালিস নিয়তে তওবা করবে এবং জুমার পরিবর্তে জোহরের চার রাকাআত ফরয আদায় করবে। জুমার দু’ রাকাত ফরয নামায একাকি আদায় করা যায় না। এ বিষয়ে পূর্বে মাসিক তরজুমান প্রশ্নোত্তর বিভাগে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তা দেখার ও পড়ার অনুরোধ রইল।
মুহাম্মদ মোস্তাক আহমদ
সাবেক ছাত্র- হালিশহর তৈয়্যবিয়া
ইসলামিয়া ফাযিল মাদরাসা, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: সালাতুত তাহাজ্জুদ ও আওয়াবীনের ফজিলত ও আদায়ের নিয়ম জানতে চাই?
উত্তর: সালাতুত তাহাজ্জুদ তথা তাহাজ্জুদের নামাযের গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক বেশী যেমন আবু দাউদ শরীফে উল্লেখ আছে- নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন- ফরয নামাযের পর তাহাজ্জুদ নামাযের মত ফজিলত পূর্ণ অন্য কোন নামায নেই। উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ আছে- নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন- তাহাজ্জুদের নামায আদায়কারীর উপর আল্লাহ তা’আলা এত খুশী হন যে, তিনি স্বীয় রহমতের সবগুলো দরজা খুলে ওই বান্দার প্রতি মুহাব্বতের কারণে প্রথম আসমানে স্বীয় তাজাল্লি প্রদান করেন। সহীহ বুখারী শরীফ ও সহীহ্ মুসলিম শরীফে উল্লেখ আছে নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন প্রত্যেক রজনীতে যখন এক তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকে আল্লাহ তা’আলা প্রথম আসমানে স্বীয় তাজাল্লি বিচ্ছুরিত করেন এবং আহবান করতে থাকেন কোন ফরিয়াদকারী আছ কী? আমি তার ফরিয়াদ কবুল করব, এমন কোন ক্ষমাপ্রার্থী আছ কী? আমি তাকে ক্ষমা প্রদান করব, এভাবে ফজর পর্যন্ত আল্লাহ্ তা‘আলা প্রত্যেক রাতে আহ্বান করতে থাকেন আর মাওলা তা‘আলার ডাকে বান্দা শেষরাতে জাগ্রত হয়ে নামাযে তাহাজ্জুদের মাধ্যমে সাড়া দেন।
তাহাজ্জুদ নামায পড়ার সময় ও নিয়ম: এ নামাযের সময় হচ্ছে এশার নামাযের পর রাতে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে সুবেহ সাদেকের আগ পর্যন্ত। এ নামায কমপক্ষে ২ রাকআত এবং সর্বাধিক নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামা থেকে ৮ রাকআত পর্যন্ত বর্ণিত আছে, দু’দু রাকআত করে নিয়্যত বেঁধে প্রত্যেক রাকআতে একবার আলহামদু ও ৩ বার সুরা এখলাস বা অন্য কোন সুরা মিলিয়ে এ নামায পড়া যায় এ নামায সুন্নাত।
সালাতুল আওয়াবীন: এ নামাযের ফজিলত অপরিসীম। তিরমিযী শরীফে হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, من صلى بعد المغرب ست ركعات لم يتكلم فيما بنيهن بسوء عدلن له بعبادة شئ عشرة سنة (اخرجة الترمذى عن ابى هريرة رضى الله عنه مرفوعًا) অর্থাৎ- যে ব্যক্তি মাগরিবের পরে ছয় রাকআত (আওয়াবীন) নামায মাঝখানে কোন মন্দ কথাবার্তা বলা ছাড়া আদায় করবে- উক্ত ব্যক্তি একাধারে বার বছর পর্যন্ত ইবাদত বন্দেগী করার সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে। তিবরানী শরীফে উল্লেখ আছে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন- যে ব্যক্তি মাগরিবের পর ছয় রাকআত (আওয়াবীন) নামায পড়বে তার গুনাহ ক্ষমা হয়ে যাবে যদিওবা তার গুনাহ্ সমুদ্রের জাগের (ফেনার) বরাবর হয়। সুতরাং মাগরিবের ফরয ও সুন্নাত আদায়ের পর আওয়াবীনের নামায (ছয় রাকআত) নেহায়ত আন্তরিকতার সাথে আদায় করার অনেক ফজিলত তবে মাঝখানে বেহুদা ও মন্দ-অশ্লীল কথা-বার্তা বলবে না।
আওয়াবীনের নামায পড়ার নিময়: আদদুররুল মুখতার ও রদ্দুল মুহতারে উল্লেখ আছে আওয়াবিনের ছয় রাকাআত নামায এক সালামেও পড়া যায়। আবার তিন সালামেও পড়া যায়। তবে তিন নিয়তে দুই রাকআত করে পড়া উত্তম। সাধারণভাবে অন্যান্য নফল নামাযের ন্যায় সূরা ফাতেহার পর যে কোন সূরা বা কিরআত দিয়ে উক্ত নামায পড়া যায়। তবে কাদেরিয়া তরিকার মাশায়েখে এজাম এ নামাযে সূরা ফাতিহার পর প্রতি রাকআতে তিনবার করে সূরা এখলাস পড়ার নিয়মকে প্রাধান্য দিয়েছেন কেননা যে ব্যক্তি তিনবার সুরা এখলাস পাঠ করে তাকে এক খতম কুরআন পাঠের সওয়াব দান করা হয়। সুতরাং এটাই উত্তম নিয়ম। [ফতোয়ায়ে শরঈয়া, ৪র্থ খন্ড, পৃ. ৫৯, ডুবাই আওকাফ হতে প্রকাশিত, গাউসিয়া তারবিয়াতি নেসাব ও শাজরায়ে আলিয়া কাদেরিয়া- প্রকাশনায় আনজুমান ট্রাস্ট, চট্টগ্রাম]
মুহাম্মদ আরফাত হোসেন
সদস্য- চন্দনাইশ প্রেস ক্লাব, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: কোনো জমি মানুষের কাছে বন্ধক রাখলে যার কাছে বন্ধক রাখা হয় সে ওই জমির ফসল ভোগ করতে পারবে?
উত্তর: শর্ত আরোপ করে বন্ধকী জমির ফসল ভোগ করা অর্থাৎ যতদিন কর্জ ও ঋণের টাকা পরিশোদ করা হবে না ততদিন বন্ধক গ্রহিতা (ঋণ দাতা) উক্ত বন্ধকী জমির ফসল ভোগ করবে- এ ধরণের শর্ত ও চুক্তির ভিত্তিতে বন্ধকী জমির ফসল ভোগ করা সুদ ও হারাম পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত। যা বর্তমানে আমাদের দেশে প্রচলিত নিয়ম। তবে শর্ত আরোপ করা ছাড়া বা বাধ্যবাধকতা ছাড়া স্বেচ্ছায় বন্ধক দাতা বন্ধক গ্রহীতাকে অথবা বন্ধক গ্রহীতা বন্ধক দাতাকে যদি বন্দকী জায়গা বা জমি থেকে ফায়দা অর্জনের/ফসল ভোগ করার অনুমতি প্রদান করে এবং একে অপরকে একথা বলে যে, বন্ধকী জমিটি এভাবে পড়ে থাকলে চাষাবাদের উপযোগী থাকবে না। সুতরাং তুমি ইচ্ছা করলে তা হতে ফায়দা অর্জন করতে পারো। তখন ঐ জমি হতে উৎপাদিত যে কোন ফসল ভোগ করা সুদ ও নাজায়েয হবে না বরং জায়েয ও বৈধ হবে। [বাহারে শরীয়ত, রেহন বা ধনূক অধ্যায়]
প্রশ্ন: রাতে স্ত্রী সহবাসের পর ফজরের নামাজের জন্য গোসল করা কি বাধ্যতামূলক। যদি সমস্যা থাকে তবে গোসল ছাড়া কেবল নিম্নাংশ (কোমরের নীচ থেকে পা পর্যন্ত) ধৌত করলে নামায পড়া যাবে কি না? অথবা তায়াম্মুম করলে চলবে কি না? দয়া করে জানাবেন।
উত্তর: স্ত্রী সহবাসের ফলে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের জন্য গোসল করা ফরজ হয়ে যায়। রাতে স্ত্রী সহবাস করা হলে ফজরের নামাযের পূর্বে গোসল করে নিবে। অন্যথায় ফজরের নামায আদায় করা বৈধ হবে না। অসুস্থ হলে বা গোসলের সময় পানি ব্যবহার করতে সক্ষম না হলে অথবা পানি পাওয়া না গেলে বা রোগবৃদ্ধির আশংকা থাকলে তখন তায়াম্মুম করবে। গোসল ফরয হওয়ার পর তায়াম্মুমের স্থলে কোমরের নীচ পর্যন্ত পানি দিয়ে ধৌত করলে পবিত্রতা অর্জিত হবে না এবং নামাযও পড়া যাবে না। সুতরাং পানি দ্বারা গোসল করতে অপারগ হলে অবশ্যই পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করবে। তারপর নামায আদায় করবে। [রদ্দুল মোহতার কৃত, আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী হানাফী- পবিত্রতা অধ্যায়, ও তাফসিরে নুরুল ইরফান, বাক্বারা, কৃত: মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী রহ. ইত্যাদি।
দু’টির বেশি প্রশ্ন গৃহীত হবেনা একটি কাগজের পূর্ণপৃষ্ঠায় প্রশ্ন লিখে নিচে প্রশ্নকারীর নাম, ঠিকানা লিখতে হবে
প্রশ্নের উত্তর প্রকাশের জন্য উত্তরদাতার সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ বাঞ্ছনীয় নয়। প্রশ্ন পাঠানোর ঠিকানা:
প্রশ্নোত্তর বিভাগ, মাসিক তরজুমান, ৩২১, দিদার মার্কেট (৩য় তলা), দেওয়ান বাজার, চট্টগ্রাম-৪০০০।