Anjuman-E Rahmania Ahmadia Sunnia Trust

ভূমিকম্পের কারণ ও আমাদের করণীয়

ভূমিকম্পের কারণ ও আমাদের করণীয়

মুফতি মুহাম্মদ এহছানুল হক জেহাদী মুজাদ্দেদী>

মানব জীবনে ইবাদতে মশগুল থাকা উচিত। পাপকর্ম বেড়ে গেলে ভূমিকম্পের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদের পরীক্ষা নেন। যেন মানুষ পাপ বর্জন করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন, মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সমুদ্রে ফাসাদ প্রকাশ পায়। যার ফলে আল্লাহ তাদের কতিপয় কৃতকর্মের স্বাদ তাদের আস্বাদন করান, যাতে তারা (আল্লাহর পথে) ফিরে আসে। [সূরা রুম, আয়াত-৪১]
পৃথিবীতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অঞ্চলে ভূমিকম্প হয়। কোথাও এর তীব্রতা বেশি, কোথাও কম। কোথাও সুনামিও হয়। তবে যেমনই হোক, ভূমিকম্প, খরা, অনাবৃষ্টি, সুনামি এগুলো হলো মানুষের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা। যেন মানুষ তওবা করে মহান আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে, আল্লাহর পথে ফিরে আসে।

ভূমিকম্প হওয়ার কারণ
পৃথিবীতে প্রাকৃতিক নানা বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ, মানুষের অপকর্ম। এগুলোর পথ ধরেই মানুষ ক্বিয়ামতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সতর্ক করে প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যখন অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জিত হবে, কাউকে বিশ্বাস করে সম্পদ গচ্ছিত রাখা হবে, কিন্তু তা আত্মসাৎ করা হবে (অর্থাৎ যার সম্পদ সে আর ফেরত পাবে না), জাকাতকে দেখা হবে জরিমানা হিসেবে, ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া বিদ্যা অর্জন করা হবে, একজন পুরুষ তার স্ত্রীর বাধ্যগত হয়ে মায়ের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করবে। বন্ধুকে কাছে টেনে নেবে আর পিতাকে দূরে সরিয়ে দেবে। মসজিদে উচ্চস্বরে শোরগোল (কথাবার্তা) হবে। যখন সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তিটি সমাজের শাসকরূপে আবির্ভূত হবে। সে সময় তোমরা অপেক্ষা কর- রক্তিম বর্ণের ঝড়ের (অ্যাসিড বৃষ্টি), ভূকম্পনের, ভূমিধসের, রূপ বিকৃতির (লিঙ্গ পরিবর্তন), পাথর বৃষ্টির এবং সুতো ছেঁড়া (তসবিহ) দানার ন্যায় একটির পর একটি নিদর্শনগুলোর জন্য।’
[তিরমিজি, হাদিস নম্বর : ১৪৪৭]
এ পৃথিবীতে আগেকার যুগে যখন ভূমিকম্প হতো তখন সৎকর্মশীল লোকেরা বলত, ‘মহান আল্লাহ আমাদের সতর্ক করেছেন।’
ভূমিকম্প বিষয়ে পবিত্র কোরআনে ‘জিলজাল’ নামে স্বতন্ত্র একটি সুরা নাজিল হয়েছে। মানুষ শুধু কোনো ঘটনার কারণ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয় এবং ভূতত্ত্ব বিজ্ঞানও এ কার্যকারণ সম্পর্কেই আলোচনা করে থাকে।
ভূতত্ত্ব বিজ্ঞান বলে, ভূ-অভ্যন্তরে শিলায় পীড়নের জন্য যে শক্তির সঞ্চয় ঘটে সেই শক্তির হঠাৎ মুক্তি ঘটলে ভূপৃষ্ঠ ক্ষণিকের জন্য কেঁপে ওঠে এবং ভূত্বকের কিছু অংশ আন্দোলিত হয়। এমন আকস্মিক ও ক্ষণস্থায়ী কম্পনকে ভূমিকম্প (Earthquake) বলে। সাধারণত তিনটি কারণে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়ে থাকে-ভূপৃষ্ঠজনিত, আগ্নেয়গিরিজনিত ও শিলাচ্যুতিজনিত।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, ‘বলে দাও, ‘আল্লাহ তোমাদের ওপর থেকে অথবা তোমাদের পায়ের নিচ থেকে আজাব পাঠাতে সক্ষম।’ [সুরা আনআম, আয়াত নম্বর : ৬৫]
বুখারী শরিফে আছে, হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, ‘যখন তোমাদের পায়ের নিচ থেকে আজাব পাঠাতে সক্ষম’ আয়াতটি নাজিল হলো তখন রসূল (সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ [বুখারী]

ভূমিকম্প ক্বিয়ামতের একটি আলামত
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে পর্যন্ত না ইলম উঠিয়ে নেওয়া হবে, অধিক পরিমাণে ভূমিকম্প হবে, সময় সংকুচিত হয়ে আসবে, ফিতনা প্রকাশ পাবে এবং খুনখারাবি বাড়বে, তোমাদের সম্পদ এত বাড়বে যে, উপচে পড়বে। [বুখারী, হাদিস নম্বর : ৯৭৯]
বর্তমানে যেসব ভূমিকম্প ঘটছে তা মহান আল্লাহর প্রেরিত সতর্ককারী নিদর্শনগুলোর একটি। কয়েক বছর আগে নেপালে ভূমিকম্প হলে সেখানকার হিন্দু ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ বলেছিলেন, বহু আগেই আমরা অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার আধিক্য দেখে সবাইকে সাবধান করেছিলাম। অন্যায় ও পাপাচার বৃদ্ধি পাওয়ায় ভগবান ক্ষুব্ধ হয়ে ভূমিকম্পরূপে শাস্তি পাঠিয়েছেন। ইহুদী ও খ্রিস্টান ধর্মেও এমন ধারণা প্রতিষ্ঠিত।

ভূমিকম্প হলে কী করণীয়
আজান দেওয়া, আল্লাহর জিকির করা, প্রত্যেক মুসলমানের খুবই আন্তরিকভাবে মহান আল্লাহর কাছে তওবা করা উচিত।
তাই যখন কোথাও ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, অনাবৃষ্টি, জলোচ্ছ্াস হয় অথবা সূর্যগ্রহণ, ঝোড়ো বাতাস বা বন্যা দেখা দেয় তখন সবারই উচিত আল্লাহর কাছে তওবা করা। তাঁর কাছে নিরাপত্তার জন্য দোয়া করা। আল্লাহ্ তা‘আলাকে বেশি পরিমাণে স্মরণ করা এবং ক্ষমা প্রার্থনা করা। সব ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবল থেকে মুক্তির জন্য দরিদ্র ও মিসকিনদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা এবং তাদের দান করাও উচিত। ইসলামের ইতিহাসে আছে- ভূমিকম্প হলে খলিফা ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রাহমাতুল্লাহি আলায়হি) তার গভর্নরদের দান-সদকা করার প্রতি জোর দিয়ে চিঠি লিখতেন। হাদীস শরীফে এসেছে, সমাজে ব্যভিচার বেড়ে গেলে ভূমিকম্প হয়।
বলা যায়, ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড়, ভয়াবহ ভূমিকম্প। তাই কালক্ষেপণ না করে নিজেদের শুধরে নেওয়া উচিত। আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের রক্ষা করুন, নিরাপদ রাখুন।

লেখক: খতিব, মনিপুর বায়তুল আশরাফ (মাইকওয়ালা) জামে মসজিদ, মিরপুর, ঢাকা