Anjuman-E Rahmania Ahmadia Sunnia Trust

এ চাঁদ এ মাস : জমাদিউল আউয়াল

এ চাঁদ এ মাস : জমাদিউল আউয়াল

হিজরী বর্ষের এক তৃতীয়াংশ অতিক্রান্ত হয়ে পঞ্চম মাস জমাদিউল আউয়াল আমাদের দ্বারে উপনীত। যারা আল্লাহ্ ও তদীয় হাবীব রসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশিত পন্থায় জীবন ও সময় অতিক্রান্ত করেছেন, তাদের জন্যতো অতীতটা পূর্ণ গৌরব ও আনন্দের। যাঁরা ভবিষ্যতের পথকে আল্লাহ্ ও রাসূলের সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে কোরবানী দানে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ তাঁদের জন্যতো আল্লাহ স্বয়ং ভীতি ও সকল প্রকার দুশ্চিন্তা অপসারণ করে দিয়েছেন। কিন্তু যারা এর বিপরীত তাদের কি হবে। যারা জীবন চলার পথে নাফরমানী ও অন্যায়কে অবলম্বন করে নিয়েছে কবে তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে? ক্বোরআন ও হাদীসের অসংখ্য স্থানে বিবৃত ভয়ানক আযাব ও শাস্তির কথায় কি তাদের অন্তরে এতটুকু কম্পন সৃষ্টি হয়না? অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, আমরা যা বলেছি, শুনেছি এবং বিশ্বাস করেছি আমলের ক্ষেত্রে আমরা অনিহার ঘোরে পাক খাচ্ছি। কি কারণে যেন আমরা বার বার পিছিয়ে যাচ্ছি আদর্শ, মুক্তি ও কল্যাণের পথ হতে। তাগুতি শক্তির অন্ধকারাচ্ছন্ন মোহনীয় ফাঁদে ধরা দিচ্ছি সকলে। প্রবৃত্তির দাসত্ব, শয়তানের ছলনায় তাই মার খাচ্ছি আমরা সবক্ষেত্রে। আজ জাতিগত ভাবে মুসলমান সাম্রাজ্যবাদী শক্তির মুঠোয়, ধর্মীয়ভাবে অন্যের ক্রীড়নক, রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অসহায় ও পঙ্গু। এ লজ্জা হতে নিষ্কৃতির প্রচেষ্টা গ্রহণের আন্তরিক তাগিদ কি আমাদের মাঝে জাগ্রত হবেনা? অতএব আসুন আল্লাহর দরবারে আমাদের অতীতের ত্রুটির জন্য ক্ষমা চাই এবং ভবিষ্যতের জন্য সত্য ও ন্যায়ের পথে সংকল্পবদ্ধ হয়ে খোদার কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাদের সকল সীমাবদ্ধতা দুর করে দেন।

এ মাসের নফল এবাদত : এ মাসের চাঁদ উদিত হওয়ার পর রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম আপন সাহাবীগণকে নিয়ে বাদ মাগরীব বিশ রাকাত নফল নামায আদায় করেছেন বলে বর্ণিত রয়েছে। দশবারে দুই রাকাত বিশিষ্ট বিশ রাকাত নামাযের প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতেহার সাথে সূরা ইখলাস পাঠ করা উত্তম। নামায শেষ করে ১০০বার

নিম্ন বর্ণিত দরূদ শরীফ পাঠ করবেন- আল্লাহুম্মা সাল্লি আ‘লা সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদিঁও ওয়া আ‘লা আলি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লায়তা আ‘লা ইব্রাহীমা ওয়া আ‘লা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্ মাজীদ।
অতঃপর বিনয়ের সাথে আল্লাহ্র দরবারে দো‘আ করবেন। এছাড়া এ মাসে অধিক হারে তেলাওয়াতে কোরআন, দরূদ শরীফ পাঠ, তাহাজ্জুদ এবং অন্যান্য সুন্নাত ও নফল এবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ্র দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা ও তাওবা করবেন। বিশেষ করে এ মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ রোযা পালনের চেষ্টা করবেন।

এ মাসের স্মরণযোগ্য দিন
এ মাসের ১৫ তারিখে সংঘটিত হয়েছিল ঐতিহাসিক উষ্ট্রযুদ্ধ। ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী মুরতাদ্বা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু জন্ম গ্রহণ করেছিলেন এ মাসের ৮ তারিখে। ৬১৮ হিজরির এ মাসের ১০ম তারিখ ওফাত লাভ করেন বিখ্যাত সাধক হযরত শায়খ নাজমুদ্দীন কোবরা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু। ১৬২ হিজরীর এমাসের ২৬ তারিখে হযরত সুলতান ইব্রাহীম ইবনে আদহাম রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ওফাত লাভ করেছিলেন। হে আল্লাহ্! আমাদের সর্বাঙ্গীন সাফল্য সম্মৃদ্ধি ও কল্যাণের জন্য এ মাসের প্রতিটি মুহূর্ত যথাযথভাবে তোমার নির্দেশ অনুযায়ী কাজে লাগানোর তাওফীক দিন। আ-মী-ন।

আগামী চাঁদ মাহে জমাদিউস্ সানী
এ মাসের নফল এবাদত : প্রথম তারিখ প্রথম সন্ধ্যায় ১২ রাকাত নফল নামায আদায় করবেন। বর্ণিত রয়েছে যে, হযরত আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু এ নামায আদায় করতেন। এ নামাযের দ্বারা পরম সৌভাগ্য ও পুণ্য অর্জন করার আশা করা যায়।
নামাযের নিয়ম : প্রত্যেক বার দুই রাকাত বিশিষ্ট নিয়ত করবে এবং প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে তিনবার আয়াতুল কুরসী ও এগার বার সূরা এখলাস পাঠ করবেন।

চাঁদের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের সন্ধ্যায় দুই রাকাত করে বার রাকাত নামায আদায় করা যায়। প্রতি রাকাতে সূরা ফাতেহার সাথে পনের বার সূরা এখলাস পড়বেন। নামায আদায়কারীর সকল সগীরা গুনাহ মাফ করা হবে এবং আর্থিক সচ্ছলতা অর্জিত হবে বলে বর্ণিত।
মাসের ২০ তারিখের পর থেকে অবশিষ্ট দিনগুলো নফল রোযা রেখে রাতে বিশ রাকাত করে নফল নামায আদায় করা সাহাবা কেরামের আমলের অন্তর্ভুক্ত। নামাযের পর ১০০বার দরূদ শরীফ পড়ে মুনাজাত করবেন।

এ মাসের প্রত্যেক দিন ফজর ও মাগরীব নামাযের পর ১০০বার নিম্ন বর্ণিত দো‘আটি পড়লে পারিবারিক জীবনের সকল অশান্তি হতে খোদার রহমতে শান্তি অর্জিত হবে ইন্শাআল্লাহ।

হুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যূমু ওয়া হুওয়াল গানিয়্যুল মাতীন।
হে আল্লাহ্ তোমার হাবীবের ওসীলায় আমাদের সর্বাঙ্গীন কল্যাণ দান কর এবং উভয় জগতের সাফল্য নসীব কর। আ-মী-ন ॥