প্রশ্নোত্তর : অধ্যক্ষ মুফ্তী সৈয়দ মুহাম্মদ অছিয়র রহমান
আবদুল্লাহ্ মুহাম্মদ জুহাইর ও মুহাম্মদ ইস্কান্দর
শিক্ষার্থী: জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা,
ষোলশহর, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: হযরত বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুকে আমরা দস্তগীর কি কারণে বলি? জনৈক ব্যক্তি বলেন, পীরানে পীরকে ‘দস্তগীর’ গাউসে আজম, আল মাদাদ ইয়া গাউসুল আজম, ইয়া আবদাল কাদের জিলানী শাই-আন্ল্লিল্লাহ্ বলা অর্থাৎ আল্লাহ্ ব্যতীত কারো কাছে কিছু চাওয়া স্পষ্ট শিরক। এ ব্যাপারে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অভিমত কি?
উত্তর: হযরত বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’র উপাধি সমূহের মধ্যে ‘দস্তগীর’ অন্যতম। ‘দস্তগীর’ শব্দটি ফার্সী- অর্থ সহায়ক বা সাহায্যকারী। গাউসে পাক রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেছেন, “যখন তুমি কঠিন বিপদে পড়বে, তখন আমাকে আহ্বান করবে। তখন তোমার মুসিবত দূর হয়ে যাবে।” আর যে মুসিবতের সময় আমাকে আহ্বান করবে তাঁর ওই মুসিবত দূর হয়ে যাবে। গাউসে পাকও তাঁর নামে আহ্বানকারী সকলের মুসিবত আল্লাহ্র প্রদত্ত বিশেষ ক্ষমতা ও শক্তি বলে দূরিভূত করতেন। এ কারণে তাকে বিশ্বব্যাপী দস্তগীর বা সাহায্যকারী বলা হয়। ইয়া গাউসুল আজম আল মাদাদ বা শাইআন্লিল্লাহ্, এসব শব্দ উচ্চারণ করে আহ্বান করা জায়েয। যেহেতু আল্লাহর প্রিয় অলি ও বন্ধুগণ আল্লাহ্ প্রদত্ত বিশেষ ক্ষমতা বলে ও দয়ায় ইন্তেকালের আগে ও পরে আল্লাহর (সাধারণ) বান্দাদেরকে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করেন ও বলা-মুসিবত থেকে পরিত্রাণ দিয়ে থাকেন। এসব শব্দ ‘মাজায’ বা রূপক অর্থে ব্যবহৃত। বস্তুত সর্বময় শক্তির প্রকৃত অধিকারী একমাত্র মহান আল্লাহ্ তা‘আলা। আল্লাহর প্রিয় নবী, অলি ও শহীদগণ আল্লাহ্ প্রদত্ত বিশেষ ক্ষমতায় ক্ষমতাবান। তাঁদেরকে স্মরণ ও আহ্বান করে সাহায্য ও কিছু চাওয়া কোরআন-সুন্নাহ্ ও শরিয়ত সমর্থিত। যেমন সহীহ বুখারী শরীফে হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আল আনহু হতে বর্ণিত, হাদীসে কুদসীতে মহান রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন, “আমার প্রিয় বান্দাগণ ফরয-ওয়াজিবের সাথে বেশি বেশি নফল ইবাদত আদায়ের মাধ্যমে যখন আমার প্রিয় হয়ে যান “তখন আমি তাঁর হাত হয়ে যাই যে হাত দিয়ে সে ধরে, আমি তাঁর পা হয়ে যাই যে পায়ে সে চলা-ফেরা করে, আমি তাঁর কান হয়ে যাই- যা দ্বারা সে শুনে এবং আমি তার চক্ষু হয়ে যাই যা দ্বারা সে দেখে। এবং যদি সে আমার কাছে কিছু চাই তা আমি প্রদান করি। [মিশকাত ও সহীহ বুখারী শরীফ, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৯৬৩]
তাবরানীর বর্ণনায় দেখা যায় রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যখন তোমরা কঠিন জঙ্গল বা ময়দানে মুসিবতের শিকার হবে অথবা তোমাদের সওয়ারী ঘোড়া ইত্যাদি হারিয়ে যাবে । সাহায্যকারী কেউ নাই তখন তোমরা আল্লাহর প্রিয় অলি (বন্ধুগণ) ও রিজালুল গায়েব যাদের কে তোমরা দেখছনা তাদের কে সম্বোধন করে আহ্বান করবে-
اعينونى يا عباد الله- الحديث
অর্থাৎ হে আল্লাহর প্রিয় বন্ধুগণ! আমাকে সাহায্য করুন । [আল হাদীস, তাবরানী]
সুতরাং স্পষ্ট হয়ে যায় যে আল্লাহর হক্কানী বন্ধু গাউস-কুতুব-আবদাল ও অলিদের আহ্বান করা এবং তাঁদের কে আল্লাহ্ প্রদত্ত বিশেষ ক্ষমতাবলে সাহায্যকারী মনে করে তাঁদের থেকে সাহায্য চাওয়া শিরক বা অবৈধ হওয়ার প্রশ্নই আসেনা। বরং এসব আপত্তি করাটাই নিছক মূর্খতা, তাঁদের শানে বেয়াদবী সর্বোপরি এ ধরনের আপত্তি ক্বোরআন-সুন্নাহ্ পরিপন্থী । আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত তথা জান্নাতী দল ও ইসলামের সঠিক মতাদর্শ বা আক্বিদা হল আল্লাহর নবী ওলিগণ রহমত বরকত ও নাজাত পাওয়ার অন্যতম ওসিলা ও কেন্দ্রস্থল। আরো উল্লেখ থাকে যে, নবী-অলি-গাউস ও কুতুব ইন্তেকালের পূর্বে যেভাবে আল্লাহ্ তা‘আলার হুকুমে ও তাঁর দয়ায় আল্লাহর বান্দাগণ ও ফরয়াদীদেরকে সাহায্য করেন ওফাত শরীফের পরে ও তাদের ভক্ত, অনুরক্তগণকে সাহায্য করতে সক্ষম। ইমাম মুহাম্মদ গাজ্জালী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ও হযরত শাইখ মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি সহ অনেক হাদীস-ফিকহ ও তাফসিরের ইমাম ও স্কলারগণ ক্বোরআন-সুন্নাহ্র আলোকে উক্ত অভিমত পেশ করেছেন। [সহীহ বোখারী, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৯৬৩, মিশকাত শরীফ ও বাহজাতুল আসরার ইত্যাদি]
পীরানে পীর শাইখ সুলতান সৈয়্যদ আবদুল কাদের জিলানী আলায়হির রাহমাহ্ তাঁর ইন্তিকালের আগে ও পরে আল্লাহ্ প্রদত্ত বিশেষ ক্ষমতা বলে অনেক বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং মুসিবতের সময় অনেক মুসলমান এমনকি আল্লাহ্র প্রিয় অলিগণ পর্যন্ত হযরত আবদুল কাদের দস্তগীর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে সাহায্য প্রার্থনা করেছেন, আর সফলকাম হয়েছেন। এ জাতীয় অনেক ঘটনা ও বর্ণনা আল্লামা শাতনূফী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর বিখ্যাত গাউসে পাকের নির্ভরযোগ্য জীবনী ‘বাহজাতুল আসরার’ শরীফে সনদ ও সূত্র সহ বর্ণনা করেছেন এবং বাহজাতুল আসরারের বর্ণনা বিশ্বের মুসলিমগণ একবাক্যে মেনে নিয়েছেন।
সুতরাং এসব বর্ণনা অর্থাৎ আল্লাহ্র অলিগণ আল্লাহ্ প্রদত্ত বিশেষ ক্ষমতা বলে ওফাত শরীফের আগে-পরে আল্লাহ্র বান্দাগণকে সাহায্য করাকে যারা অস্বীকার করে- এটা তাদের জেহালত ও অজ্ঞতা।
মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ্ ,
সীতাকুন্ড, চট্টগ্রাম।
মাওলানা আমিন দরবেশ
বাঁশখালী, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: দু‘আ-মুনাজাত বা প্রার্থনা কবুল হওয়ার জন্য বিশেষ বা বকরতময় সময় ও স্থান সম্বন্ধে ক্বোরআন ও হাদীসের আলোকে জানালে উপকৃত হব।
উত্তর: ক্বোরআন পাকে আল্লাহ্ পাক জাল্লা-শানুহু ইরশাদ করেছেন- اُدْعُوْنِىْ اَسْتَجِبْ لَكُمْ- الاية অর্থাৎ- তোমরা আমার কাছে দু‘আ কর, আমি তোমাদের দু‘আ কবুল করব। [আল গাফির: আয়াত ৬০]
দু‘আ হলো বান্দা ও আল্লাহ্, সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার সাথে উত্তম সেতুবন্ধন এবং তাঁর প্রিয় নৈকট্যবান বান্দাদের সদা পছন্দনীয় আমল। যা নবী- রাসূলগণের সুন্নাত। দু‘আ কবুল হওয়ার কিছু সময় ও স্থানের কথা হাদিসে পাকে উল্লেখ রয়েছে। যেমন সেহরীর সময় তথা গভীর রাতে এবং অর্ধরাত্রে, মতাফ শরীফ, মুলতাযাম শরীফ ও মকামে ইব্রাহীমে, বায়তুল্লাহর সামনে, আরাফার ময়দানে, আরাফাতের দিন,খানায়ে কা’বার ভিতরে, মিজাবে রহমতের নিচে, দরূদ-সালামের পর, আউলিয়ায়ে কেরামের হুজরা-খানকাহ্ ও মাজার শরীফে, রমযান মাসে, জুমার দিন ও রাত, হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামনির নিকট, সাজদা আবস্থায়, ইফতারের সময়, ক্বোরআন তেলাওয়াতের পর, খতমে কোরআনের পর, জমজম শরীফের পানি পান করার পর, ফরয নামাযের পর, আযান ও ইকামতের মাঝখানের সময়ে, প্রতি বুধবার জোহর-আসরের মাঝখানে, মসজিদে যাওয়ার সময়, সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে সাঈ করার সময়, মসজিদে নববীর রিয়াজুল জান্নাহ্’য়, বৃষ্টি বর্ষণের সময়, মহান আল্লাহ্র প্রিয় রাসূলকে স্মরণ করার সময়, মসজিদে নববী ও মসজিদে কুবায়। বিশেষত প্রিয় নবীর রওজা শরীফে গুনাহ মাফ হওয়ার নিশ্চয়তা পবিত্র কোরআনে বর্ণিত আছে। তদ্রুপ ক্বোরআন-হাদিসের আলোচনার মজলিশে, সূরা ইখলাস তেলাওয়াতের পর, সূরা আনআম খতমের পর, মুজদালিফায়, ঈদগাহে তথা উম্মুক্ত ময়দানে, হজ্জের সময়, জমরায় পাথর নিক্ষেপের পর, তদুপরি শবে কদর ও শবে বরাত এবং দু’ঈদের রাত ও দিন, মাহে রজবের প্রথম রজনী ইত্যাদি। অবশ্য রাব্বুল আলামীনের দরবারে ঈমানদারের দু‘আ-মুনাজাত ও ইবাদত-বন্দেগী কবুল হওয়ার জন্য অন্যতম শর্ত হল আক্বিদা বিশুদ্ধ হওয়া ও ইখলাস-আন্তরিকতা ।
নূর আহমদ আল্ ওমর
রাঙ্গুনীয়া, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: ১. আমার বাসা হতে প্রায় ১ মাইল পরিধির ভিতরে ৪টি মসজিদ আছে। প্রায় মসিজদের ইমাম/খতিব বাতিলপন্থি (ওহাবী-তবলীগি, জামাতী, আহলে হাদীস), আমার প্রশ্ন হচ্ছে জেনে শুনে তাদের পেছনে ওয়াক্তিয়া ও জুমার নামায পড়া জায়েয কিনা? বিশেষত জুমার নামায সম্পর্কে আলোকপাত করার অনুরোধ রইলো।
উত্তর: ১. জেনে শুনে বাতিল-বদ-আক্বিদাপন্থী তথা কাদিয়ানী, ওহাবী-তাবলীগি, মওদুদী, শিয়া, খারেজী-রাফেজী ও ভ্রান্ত মতবাদি আহলে হাদীসদের পেছনে নামায পড়লে তা আদায় হবে না বরং যিম্মায় থেকে যাবে। কারণ এসব ভ্রান্ত মতবাদের প্রবর্তক ও শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের লিখিত পুস্তকে যে ভ্রান্ত বর্ণনা ও মন্তব্য পরিলক্ষিত হয় তা ঈমান-বিধ্বংসী ও কুফুরী। যা তারা বিশ্বাস করে যেমন- প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম শেষ নবী নন বরং শ্রেষ্ঠ নবী, নামাযে নবীজির খেয়ালকে গরু-গাধা তথা পশুর খেয়ালের সাথে তুলনা করা, নবীজির অদৃশ্য জ্ঞান ‘গরু-ছাগল- চতুষ্পদ জন্তু এমনকি প্রত্যেক পাগলেরও রয়েছে বলা যা মৌলভী আশরাফ আলী থানভীর লিখিত “হিফজুল ঈমান” মৌলভী রশীদ আহমদ গাঙ্গুহীর ‘ফতোয়া-ই রশীদিয়া’, মৌলভী কাসেম নানুতবীর ‘তাহযীরুন নাস’ ও মৌলভী ইসমাইলের ‘তাকবীয়াতুল ঈমান’ পুস্তকে লিখিত আছে এসব আক্বিদা মূলত কুফরী পর্যায়ভুক্ত বিধায় তাদের পেছনে নামায পড়া হারাম। বদ আক্বিদা পোষণকারীর বাহ্যিক পোষাক ও ছুরত নাপাক না হলেও তাদের অন্তর,বদ-আক্বিদা পোষণ করায় নাপাক। তাই বদ-আক্বিদা পোষণকারী মৌলভীর পেছনে ইকতিদা করা থেকে বিরত থাকতে প্রিয়নবী হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- لا تصلوا معهم
(অর্থাৎ বদ আক্বিদা পোষণকারী লোকদের পেছনে নামায আদায় করো না।) যেমন ‘গুনিয়া’ নামক ফিকহ গ্রন্থে উল্লেখ আছে- আকিদাগত ফাসিক, আমলগত ফাসিক থেকেও মারাত্মক। তাই তাকে ইমাম বানানো মাকরূহ-ই তাহরীমা যদি তার ফিসক ও গোমরাহী কুফরী পর্যন্ত না গড়ায়। হ্যাঁ যদি তার গোমরাহী কুফরী পর্যন্ত পৌঁছে যায় তবে তার পেছনে ইকতিদা করা জায়েয নেই বরং হারাম। আর ‘আদ্ দুররুল মুখতার গ্রন্থে ইমাম আলা উদ্দীন খাচকফী হানাফী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বর্ণনা করেন- যে নামায মাকরূহে তাহরীমার সাথে আদায় হবে তা পুনরায় আদায় করা ওয়াজিব।
[আদ্ দুররুল মুখতার, ১ম খন্ড, ৩০৭ পৃষ্ঠা]
সুতরাং আমাদের দেশের ওহাবী-খারেজী, শিয়া-রাফেযী, কাদিয়ানী ও আহলে হাদীস দাবীদার এবং তাদের অনুসারীদের পেছনে ইকতিদা করা জায়েয নেই, ভুল করে ইকতিদা করে থাকলে অবগত হওয়ার পর ওই নামায পুনরায় আদায় করবে। আর নামাযে জুমা অন্য স্থানে গিয়ে সুন্নি ইমামের পেছনে আদায় করবে। আর জেনে শুনে তাদের অর্থাৎ ভ্রান্ত আকিদা পোষণকারীদের পেছনে জুমা-জামআত আদায় করলে তাদের দলভুক্ত হয়ে যাবে।
প্রশ্ন: ২. আউলিয়া কেরামের কারামত কতটুকু সত্য? এ সম্পর্কে ক্বোরআন ও হাদীসের আলোকে বিস্তারিত জানালে উপকৃত হবো। পীরানে পীর হযরত গাউসুল আজম দস্তগীর সৈয়্যদুনা আবদুল কাদের জিলানী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’র কিছু প্রসিদ্ধ কারামত বর্ণনা করার অনুরোধ রইল।
উত্তর: ২. দ্বীন-ইসলামের স্বার্থে খোদা প্রদত্ত শক্তি বলে সাধারণ নিয়ম বহির্ভুত অলৌকিক ঘটনা সমূহ যা হক্কানী আউলিয়া কেরাম হতে প্রকাশ পায় শরিয়তের পরিভাষায় তা কারামত। [শরহে আকায়েদে নসফী]
কারামত মূলত আল্লাহ প্রদত্ত অসাধারণ শক্তি এবং আল্লাহ্র প্রিয় বান্দা তথা আউলিয়ায়ে কেরাম, গাউস-কুতুবের প্রতি তাঁর অসীম দয়ার বহিঃপ্রকাশ। আর কারামতকে অস্বীকার করা আল্লাহর মেহেরবানী ও কুদরতকে অস্বীকার করার নামান্তর। আল্লাহর প্রকৃত অলিগণের কারামতের বিবরণ ক্বোরআনে পাকেও বর্ণিত আছে। যেমন হযরত মরিয়ম আলায়হাস্ সালামের ঘটনা, যার কাছে জান্নাত হতে বে-মৌসুমী ফল এসে যাওয়া, রানী বিলকিসের বিশাল আলিশান সিংহাসনকে চোখের পলকের আগে আল্লাহর নবী হযরত সুলায়মান আলায়হিস্ সালাম-এর দরবারের আল্লাহর একজন অলি এবং হযরত সুলায়মান আলায়হিস্ সালাম-এর উম্মত আসেফ বিন বরখিয়া রাহমাতুল্লাহি আলায়হি কর্তৃক হাজির করা এবং আসহাবে কাহাফের ঘটনা ইত্যাদি। তাছাড়া সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীনে এজাম এবং অগণিত আউলিায়ে সালেহীন থেকে ধারাবাহিকভাবে অসংখ্য অলৌকিক ঘটনা তথা কারামত প্রকাশিত হয়েছে। ইমাম আল্লামা নসফী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর আকায়েদে নসফী গ্রন্থে কারামত প্রসঙ্গে বলেন- كرامة الاولياء حق অর্থাৎ আউলিয়ায়ে কেরাম হতে প্রকাশিত কারামত হক তথা সত্য। তিনি আরো বলেন-
والد ليل على حقية الكرامة ما تواتر من كثير من الصحابة ومن بعد هم بحيث لايمكن انكاره-
অর্থাৎ আল্লাহর অলিদের অলৌকিক ঘটনা ও কারামত সত্য। তার দলিল হলো সাহাবায়ে কেরাম ও তৎপরবর্তী তাবেয়ীন ও তাবে-তাবেয়ীগণ থেকে ধারাবাহিকভাবে এত বেশী নির্ভরযোগ্য সূত্রে কারামত প্রকাশিত হয়েছে যে, যা অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই।
ইমাম আযম সিরাজুল উম্মত হযরত আবু হানিফা রাহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর বিখ্যাত ‘আল ফিকহুল আকবর’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন-
قال ابو حنيفة رحمة الله عليه الايات للانبياء والكرامات الاولياء حق- الخ (الفقه الاكبر)
অর্থাৎ ইমাম আযম আবু হানিফা রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বর্ণনা করেন হযরাতে আম্বিয়ায়ে কেরামের মুযেযা ও আউলিয়া কেরামের কারামত সত্য। [আল ফিকহুল আকবর]
একথার সূত্র ধরে বিশিষ্ট মুহাদ্দিস ও অন্যতম ফকিহ্ আল্লামা মোল্লা আলী কারী হানাফী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর রচিত ‘শরহুল ফিকহিল আকবর’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন-
الكرامات للاولياء حق اى ثابت بالكتاب والسنة-
অর্থৎ হক্কানী আউলিয়ায়েএজামের কারামত সত্য অর্থাৎ তা কোরআন ও হাদিস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। এ প্রসঙ্গে উপমহাদেশের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস অন্যতম মুহাক্কিক শেখ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন-
اهل حق اتفاق دارند برجواز وقوع كرامات از اولياء ودليل بروقوع كرامات كتاب وسنت وتواتر اخبار ست از صحابه ومن بعدهم تواتر معنى-
অর্থাৎ আউলিয়ায়ে কেরাম থেকে কারামত প্রকাশ হওয়ার উপর সকল আহলে হক তথা হকপন্থীগণ একমত। আর কারামত প্রকাশ হওয়া পবিত্র কোরআন ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। তাছাড়া সাহাবায়ে কেরাম ও তৎপরবর্তী তাবেয়ীদের নির্ভরযোগ্য ও অকাট্য বর্ণনা দ্বারা কারামত স্পষ্ট ও সাব্যস্ত হয়েছে। [গাউসুল অরা]
লক্ষাধিক নবী-রাসূলের মধ্যে যেভাবে আমাদের নবী হুযূর পুরনূর রাসূলে মাকবুল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হতে অসংখ্য অগণিত মুযেযা প্রকাশিত হয়েছে সেভাবে অসংখ্য আউলিয়ায়ে কামেলীন ও আরেফীনের মধ্যে গাউসুল আযম দস্তগীর, সুলতান সৈয়্যদ আবদুল কাদের জিলানী হাসানী-হোসাইনী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি হতেও অগণিত ও বেশুমার অলৌকিক ঘটনা/কারামত প্রকাশিত হয়েছে। যা নির্ভরযোগ্য বিখ্যাত কিতাবসমূহে স্থান পেয়েছে। যেমন শত শত বৎসর পূর্বে মারা যাওয়া মুর্দাকে আল্লাহর প্রদত্ত বিশেষ ক্ষমতাবলে জিন্দা করা, চোর/ডাকাতকে আবদালে পরিণত করা, অসংখ্য কাফির/মুশরিককে মুহূর্তের মধ্যে ঈমান দান করা এবং বেলায়তের উঁচু মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করা। এক তাওয়াজ্জুহ্ ও নিগাহে করমে হাজার হাজার ফাসিক- ফাজির শরাবী-মদপানকারীকে তকদির/ভাগ্য পরিবর্তন করে দেয়া, দ্বীন-ইসলামকে পুনজ্জীবন করা, মাস-চন্দ্র উদয়ের পূর্বে গাউসে পাকের দরবারে হাজির হয়ে অনুমতি প্রার্থনা করা, অযুর পানি মৃত খেজুর গাছের গোড়ায় লাগার সাথে সাথে কয়েক বৎসর পূর্বে মরা খেজুর গাছ জীবিত হয়ে ফল এসে যাওয়া ইত্যাদি আল্লামা শতনুফী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি স্বীয় রচিত ‘বাহজাতুল আসরার’ শরীফে, আল্লামা মোল্লা আলী কারী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি তাফরিহুল খাতিরিল ফাতির ফি মনাকিবে আশ্ শেখ আবদুল কাদের-এ, হযরত শেখ আবদুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি স্বীয় রচিত ‘গাউসুল অরা’য় এবং সৈয়দ নাছিরুদ্দিন হাশেমী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি স্বীয় রচিত ‘মজাহারে জামালে মোস্তাফায়ী’ কিতাবে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন।
মুহাম্মদ খোরশেদ আলম
উত্তর সর্ত্তা, রাউজান, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: ১. আহলে হাদীসের ইমাম ইবনে তাইমিয়ার নামের পূর্বে হযরত কিংবা আল্লামা এবং নামের পরে রাহমাতুল্লাহি আলায়হি লেখা জায়েয হবে কিনা? জানালে কৃতজ্ঞ হবো।
উত্তর: ১. ইবনে তাইমিয়া আহলে হাদিস ও ওহাবীদের বড় নেতা ও বড় আলিম । ওহাবী মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা নজদের মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাব হল তার আদর্শ ও ইবনে তাইমিয়া তার মতবাদের অনুসারী। তার অনেক আক্কিদা ও বিশ্বাস হল কুফরী আকিদা, যেমন সে আল্লাহ্ তা‘আলার জন্য শরীর হওয়া, দিক থাকা, একস্থান থেকে অন্যস্থানে স্থানান্তারত হওয়ার বিশ্বাসী। সে আল্লাহ্ তা‘আলার চাপে/ভরে তাঁর আরশ ফট্ফট্ করেছে মর্মে ধারণা করে। অথচ আল্লাহ্ তা‘আলা এমন জঘন্য অপবাদ ও এসব কুধারণা থেকে পুতঃপবিত্র। ليس كمثله شئ অর্থাৎ আল্লাহ্ তা‘আলার মত সৃষ্টির মধ্যে কিছু নেই, তথা আল্লাহ্ কোন সৃষ্টির মত নয়, তিনি সকল সৃষ্টির স্রষ্টা। তার ভ্রান্ত আক্বিদা মতে নবীগণ নিষ্পাপ নন। হুজুর নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর ওসিলা নেওয়া যাবে না। নবীজির রওজা পাক যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা গুনাহ্ । এভাবে তার অনেক ভ্রান্ত আক্বিদা রয়েছে যা ঈমানকে ধ্বংস করে দেয়। সুতরাং তাকে সম্মান করা মানে তার ভ্রান্ত আক্বিদাকে সমর্থন করার নামান্তর। যা মহান আল্লাহর গজবের অধিকারী হবে নিঃসন্দেহে। অতএব, হযরত, আল্লামা ও রহমাতুল্লাহি আলায়হি তার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা মোটেই সমর্থন যোগ্য হতে পারে না।
প্রশ্ন: ২. বা‘দাল জুমার চার রাকাতা নামায আদায়ের পর চার রাকাত আখেরী যোহ্র আদায়ের বিধান কি? আর যদি তা ওয়াজিব হয় তবে অধিকাংশ মুসল্লি ‘আখেরী যোহর’ আদায় করে না কেন?। বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।
উত্তর: ২. জুমার দু’রাকাত ফরয আদায়ের পর চার রাকআত বা’দাল জুমআ এবং খোতবার পূর্বে চার রাকআত কাবলাল জুমা আদায় করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ বা ওয়াজিবের নিকটবর্তী, যা অবশ্যই আদায় করবে। বিশেষ কোন কারণ ব্যতীত ছেড়ে দেয়া গুনাহ- তা নিয়ে কারো দ্বিমত নেই। কিন্তু তারপর অর্থাৎ বা’দাল জুমু’আ আদায়ের পর আর কত রাকআত সুন্নাত হিসেবে পড়তে হবে তা নিয়ে কিছু বক্তব্য ও মতভেদ রয়েছে। তবে উত্তম অভিমত হলো জুমু‘আর দু‘রাকাত ফরয, ও চার রাকাত বা‘দাল জুমা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা আদায়ের পর দু‘রাকাত ‘সুন্নাতুল ওয়াক্ত’ সতর্কতা মূলক আদায় করা। ইমাম আবু ইউসুফ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি এ দু‘রাকাতকে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা হিসেবে গণ্য করেছেন। আর কোন কোন ইমাম এ দু‘রাকাতকে সুন্নাতে যায়েদা বা নফল হিসেবে গণ্য করেছেন। আর কোন কোন ইমাম বা‘দাল জুমু‘আ অর্থাৎ চার রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা আদায়ের পর চার রাকাত আখেরী যোহর পড়ার কথাও বলেছেন সন্দেহমুক্ত হওয়ার জন্য। এবং এ চার রাকাত আখেরী যোহরকে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা বা ওয়াজিবের কাছাকাছি বলেও মত প্রকাশ করেছেন। তবে ‘‘কিতাবুল আশবাহ ওয়াননাযাইর” গ্রন্থে ইমাম ইবনে নুজাইম আল মিসরী আল হানাফী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি সুন্নাতে মুয়াক্কাদার বিবরণ দিতে গিয়ে জুমার নামাযের দু‘রাকাত ফরযের পূর্বেও পরে চার রাকাত করে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা আদায় করার কথা বলেছেন। যেমন তিনি বলেছেন- وفى صلوة الجمعة اربع قبلها واربع بعدها-
অর্থাৎ নামাযে জুমু’আয় দু’রাকাত ফরজের পূর্বে তথা খোতবার পূর্বে চার রাকাত এবং পরে চার রাকাআত নামায আদায় করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা।
[কিতাবুল আশবাহ্ ওয়ান্নাযায়ের কৃত: ইমাম ইবনে নুজাইম আল মিসরী আল হানাফী রহ. ও গমজু উনিল বাছায়ের, কৃত: ইমাম হুমূভী হানাফী রাহ. ইত্যাদি]
মুহাম্মদ মাঈন উদ্দীন
চরতী, সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: ১. মুসাফির অবস্থায় বিতিরের নামায পড়তে হবে কিনা? মুসাফির অবস্থায় নামায ক্বাযা হলে পরবর্তীতে ক্বাযা পড়ার সময় বিতিরের ক্বাযা পড়তে হবে কি না?
উত্তর: ১. এশার নামাযের পর তিন রাকাত বিতিরের নামায ইমাম আযম হযরত আবু হানিফা রাহমাতুল্লাহি আলায়হি তথা হানাফী মাজহাব অনুযায়ী ওয়াজিব বিধায় মুসাফির অবস্থায় ফরযের ন্যায় বিতিরের নামাযও আদায় করতে হবে। অবশ্য মুসাফির অবস্থায় সুন্নাতে যায়েদা, সুন্নাতে মোয়াক্কাদা ও নফল নামাযের বেলায় রূখসত আছে। না পড়লে গুনাহগার হবে না, তবে সময় সুযোগ থাকলে পড়লে অতিরিক্ত সাওয়াবের অধিকারী হবে। [শরহুল বেকায়া ইত্যাদি]
মুসাফির অবস্থায় বা যে কোন অবস্থায় ইচ্ছাকৃত নামায কাযা করা মহাপাপ ও তাওবা অপরিহার্য। তবে মুসাফির অবস্থায় ফরয নামায কাযা হলে পরবর্তিতে অবশ্যই তা কাযা করবে তদ্রুপ মুসাফির অবস্থায় বিতির কাযা হলে তাও পরবর্তীতে কাযা পড়বে।
[ফতহুল কদির শরহুল হেদায়া কৃত: ইমাম কামাল উদ্দীন ইবনে হুম্মাম রাহ. ইত্যাদি]
অবশ্য মুসাফির অবস্থায় চার রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামায যেমন যোহর, আসর ও এশার ফরয নামায ক্বাযা হলে পরবর্তীতে অর্থাৎ মুকিম অবস্থায় ক্বাযা আদায় করলে তা দু’রাকাত কসর আদায় করবে। আর মুকিম অবস্থায় চার রাকাত ফরয নামায ক্বাযা হলে তা মুসাফির অবস্থায় ক্বাযা আদায় করলে চার রাকাতপূর্ণ ক্বাযা করবে। আর দুই এবং তিন রাকাত ফরযের বেলায় কসর নেই। [শরহুল বেকায়া: ১ম খণ্ড, সালাত অধ্যায়]
প্রশ্ন: ২. এশার নামাযের শেষে দুই রাকাত বিশিষ্ট শফিউল বিতির পড়ার হুকুম কি? দাঁড়িয়ে পড়া যাবে কিনা? জানালে উপকৃত হব।
উত্তর: ২. এশার নামায ও বিতরের নামাযের পর দু’রাকাত শফিউল বিতিরের নামায আদায় করা নফল ও অনেক ফজিলত পূর্ণ। “মালাবুদ্দা মিনহু” কিতাবে কাজী সানাউল্লাহ্ পানিপত্তি রহমাতুল্লাহি আলায়হি উক্ত দু’রাকাত শফিউল বিতির নামায বসে পড়া উত্তম বলেছেন। সুনানি ইবনে মাজার হাশিয়ায়, ইমামে ইশক্ ও মহব্বত ইমাম আ‘লা হযরত শাহ্ আহমদ রেজা ফাযেলে বেরলভী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ফতোয়ায়ে রজভীয়া শরীফে ও মুফতি আমজাদ আলী খাঁন রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বাহারে শরীয়তে উক্ত দু’রাকাত শফিউল বিতির ওজর ও অসুবিধা না থাকলে দাঁড়িয়ে পড়া উত্তম বলে ফায়সালা প্রদান করেছেন। সুতরাং মুসল্লীদের সুযোগ সুবিধা অনুযায়ী উক্ত নফল নামায আদায় করা যাবে। কোন অসুবিধা নাই। তবে দাঁড়িয়ে আদায় করা উত্তম হওয়ার পক্ষে ইমাম আহমদ রেযা আ’লা হযরত রহমাতুল্লাহি আলায়হি জোর দিয়েছেন।
[আল্ আতায়ান্নববীয়া ফিল ফতোয়ার রজভীয়া, কৃত: ইমাম আহমদ রেযা রহ. ইত্যাদি]
মুহাম্মদ আবদুল মান্নান
সৈয়দপুর, রাজশাহী।
প্রশ্ন: আমাদের এলাকায় মসজিদের খতিব মহররমের জুমুআর খুতবায় আশুরার ঘটনাবলী উল্লেখ করার সময় বলেছেন, আশুরার দিনে আল্লাহ্ তা‘আলা রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করেছেন। এটি কতটুকু সত্য এবং ওই আলিমের ফায়সালা কি হবে?
উত্তর: পূর্ববর্তী ও পরবর্তী অধিকাংশ হক্কানী ইমাম, মুজতাহিদ, ফকীহ্, মুহাদ্দিস ও আলেমগণ এ কথার উপর একমত যে, আমাদের প্রিয় নবী হুযূর পুরনূর রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এবং সকল নবী-রাসূল ছোট বড় সকল প্রকার দোষ-ত্রুটি ও গুনাহ্ থেকে মাসুম বা নিষ্পাপ। এ প্রসঙ্গে ইমাম আজম সিরাজুল উম্মাহ্ সৈয়্যদুনা হযরত আবু হানীফা নোমান বিন সাবিত রাহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর ‘আল ফিকহুল আকবর’-এ উল্লেখ করেছেন- الانبياء عليهم السلام كلهم منزهون عن الصغائر والكبائر والكفر والقبائح-
অর্থাৎ সকল নবী আলায়হিমুস সালাম ছোট-বড় গুনাহ্, কুফর এবং যাবতীয় বেহায়াপনা ও অশ্লীলতা হতে পুতঃপবিত্র ও নিষ্পাপ।
[আল ফিকহুল আকবর কৃত: ইমাম আ’যম আবু হানীফা রাহ.]
সর্বসম্মত অভিমত হল, সম্মানিত নবীগণ নুবূওয়াত প্রকাশের পূর্বে ও পরে সর্বাবস্থায় তাঁরা নিষ্পাপ ও অন্যায়ের কালিমা থেকে মুক্ত। এ ব্যাপারে মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি “শরহুল ফিকহিল আকবরে’’ উল্লেখ করেছেন-
هذه العصمة ثابتة للانبياء قبل النبوة وبعدها على الاصح- (شر الفقه الاكبر- صف ٢٩)
অর্থাৎ সর্বাপেক্ষা বিশুদ্ধ অভিমত হল, নবীগণ নবুয়ত প্রকাশের পূর্বে ও পরে সর্বাবস্থায় গুনাহ্ থেকে নিষ্পাপ হওয়া প্রমাণিত ।
[শরহুল ফিকহিল আকবার কৃত: মোল্লা আলী ক্বারী মক্কী হানাফী রাহ. পৃষ্ঠা-২৪]
সুতরাং, পবিত্র কোরআনে যেসব স্থানে ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করার নির্দেশ মহান আল্লাহ্, সরাসরি প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি করেছেন, সেখানে উম্মতের গুনাহ্ মাফ চাওয়ার কথা বলা হয়েছে অথবা উম্মতকে শিক্ষা দেয়ার জন্য, ‘হে হাবীব- আল্লাহর দরবারে আপনি ইস্তেগফার করুন’- বলা হয়েছে। যেমন সহীহ বোখারী শরীফের হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম দৈনিক ৭০ বার থেকে ১০০ বার পর্যন্ত উম্মতকে শিক্ষা দেয়ার জন্য ইস্তেগফার করতেন । [কিতাবুত দাওয়াত সহীহ বোখারী, ২৬ পারা]
সমস্ত আম্বিয়ায়ে কেরাম যেখানে গুনাহ্ হতে পুতঃপবিত্র সেখানে ইমামুল মুরসালিন রাহমাতুল্লিল আলামীন, নবীয়ে দো’জাহা হুজুর পুরনূর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর গুনাহ্ (নাউজুবিল্লাহ্) কল্পনাও করা যায় না। তাই ইমামুল মুসলেমীন ইমাম আ‘যম আবু হানীফা রাহমাতুল্লাহি আলায়হি এ প্রসঙ্গে বলেন- محمد صلى الله عليه وسلم لَمْ يرتكب صغيرة ولاكبيرة قط- (الفقه الاكبر)
অর্থাৎ শফীউল মুজনেবীন রহমাতুল্লিল আলামীন হুযূর পূরনূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সগীরা-কবীরা কোনো গুনাহে কখনো লিপ্ত হননি।
[আল ফিকহুল আকবর কৃত: ইমাম আ’যম আবু হানিফা রাহ.পৃষ্ঠা ৬৮-৬৯]
তবে নবীগণের জন্য পদস্খলন ও ইজতিহাদগত ত্রুটি পাওয়া যাওয়া অসম্ভব নয়, যেহেতু পদস্খলন ও খাতায়ে ইজতিহাদী বা ইজতিহাদগত ত্রুটি কোন গুনাহ্ নয়, বরং ইজতিহাদগত ত্রুটিতে একটি নেকী রয়েছে।
তাই নির্ভরযোগ্য সমস্ত তাফসীরের ঐ সব আয়াতের ব্যাখ্যায় একথার প্রতি জোর দিয়েছেন যে, যেসব আয়াতের মধ্যে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনার কথা বলা হয়েছে, যেমন সূরা নসর ইত্যাদি- সে সব আয়াতের ব্যাখ্যা বা অর্থ হবে আপনি উম্মতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। সুতরাং আমাদের প্রিয়নবী সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ইমামুল আম্বিয়া সহ অন্যান্য সকল নবী-রাসূলের গুনাহ্ মহররমের দশ তারিখ আশুরা দিবসে ক্ষমা করা হয়েছে মর্মে পবিত্র মহররম মাসের খুতবায় আলোচনা করা আল্লাহর প্রিয় নবী-রাসূলগণের শানে চরম ধৃষ্টতা, মারাত্মক বেয়াদবী ও চরম অজ্ঞতা । সম্মানিত নবী-রাসূলগণ নিষ্পাপ ও মাসূম হওয়াটা তাঁদের প্রতি আল্লাহ্ তা’আলার খাস দয়া ও অপরিহার্য বিষয়। তবে নবীগণের জন্য খাতায়ে ইজতিহাদী (ইজতিহাদগত ভুল) জায়েয যা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই সম্মানিত নবী-রাসূলগণের ব্যাপারে প্রকৃত ঈমানদার নারী-পুরুষের এ আক্বিদা ও দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করতে হবে যে, তাঁরা নবুয়ত প্রকাশের পূর্বে ও পরে কুফর, শিরক, গুনাহে কবীরা এমনকি অধিকাংশ ইমামগণের মতে সগীরা গুনাহ্ থেকেও পূতঃপবিত্র । এ জন্য মহান আল্লাহ্ তাঁদেরকে মানব জাতির জন্য সর্বোত্তম আদর্শ হিসেবে অনুকরনীয় এবং অনুসরনীয় করে ধরাবুকে প্রেরণ করেছেন । এটাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আক্বিদা। এর বিপরীত আক্বিদা পোষণ করা এবং বিপরীত বক্তব্য দেয়া বিভ্রান্তিকর, বেয়াদবী ও বেঈমানীর নামান্তর। এ বিষয়ে তরজুমানে পূর্বে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে তা দেখার আহ্বান রইল ।
[তাফসীরে কবীর কৃত: ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রাহ. তাফসীরে জালালাঈন কৃত: ইমাম আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী ও মহল্লী রাহমাতুল্লাহি আলায়হিমা, আল ফিকহুল আকবর কৃত: ইমাম আ‘যম আবু হানীফা রাহমাতুল্লাহি আলায়হি, মাদারিজুন নবুয়ত কৃত: শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি, শরহে আকায়েদে নসফী কৃত: ইমাম আল্লামা তাফতাযানী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি এবং মেরকাত শরহে মেশকাত কৃত: মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (রাহ.), আমার রচিত ও আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট কর্তৃক প্রকাশিত যুগ জিজ্ঞাসা ইত্যাদি]
মুহাম্মদ আলা উদ্দীন
শিক্ষার্থী:জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: ১. এক ব্যক্তি জোর দিয় বলছে মিসওয়াক করা ওয়াজিব যা ফরজের কাছাকাছি তা না করলে গুনাহ্ হবে। আমি জানি মিসওয়াক করা সুন্নাত। তা কি ওযুর সুন্নাত না নামাযের সুন্নাত। জানালে উপকৃত হবো।
উত্তর: মিসওয়াক করা সুন্নাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম। ফরজ ও ওয়াজিব নয়। মিসওয়াক করার ব্যাপারে প্রিয়নবী রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- যদি আমার উম্মতের ওপর আমি কঠিন ও কষ্টসাধ্য মনে না করতাম তবে প্রত্যেক নামাযে মিসওয়াক করার নির্দেশ প্রদান করতাম। হযরত জাফর ইবনে আবি তালিব রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত, সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে কয়েকজন নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে হাযির হলেন- প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, “তোমাদের কি হয়েছে যে, আমি তোমাদের দাঁত হলুদ দেখছি? তোমরা মিসওয়াক কর। যদি আমি আমার উম্মতের উপর এটা কঠিন মনে না করতাম তাহলে প্রত্যেক নামাযে মিসওয়াক করার নির্দেশ প্রদান করতাম।
[বুখারী শরীফ: ৮৮৭, ৭২৪০, মুসলিম শরীফ: ২৫২, তিরমিযী শরীফ: ২২, নাসায়ী শরীফ: ০৭, সুনানে আবূ দাউদ: ৪৬, মুওয়াত্বা মালিক: ১৪৭, ১৪৮, দারমী: ৬৮৩, ১৪৮৪, মুসনাদেইমাম আযম আবু হানিফা রাহ. ৪৮]
কোন কোন বর্ণনায় عند كل صلوة অর্থাৎ প্রত্যেক নামাযের সময়-এর স্থলে عند كل وضوء অর্থাৎ প্রত্যেক ওযুর সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ প্রদান করতাম- এসেছে। [মুসনাদে ইমাম আহমদ রাহ.]
এ হাদীস শরীফ দ্বারা মিসওয়াক করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা প্রমাণিত, ওয়াজিব বা ফরজ নয়। বিশেষ করে যখন দাঁত হলুদ থাকে, মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হয় অথবা নিদ্রা থেকে এইমাত্র জাগ্রত হয়েছে এবং নামায আদায়ের ইচ্ছা করে, তখন উযু করার সময় মিসওয়াক করবে। এটা সুন্নাত। যেসমস্ত রিওয়ায়েতের বর্ণনায় عند كل وضوء বর্ণিত হয়েছে, সেখানে এর প্রকৃত অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ, প্রত্যেক ওযুর সময় মিসওয়াক করবে। যেহেতু মিসওয়াকের সাথে ওযুর সাথে সম্পর্ক। এটাই ইমাম আযম আবূ হানীফা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’র মাযহাবের অভিমত। আর যে সমস্ত রিওয়ায়েতে عند كل صلوة বর্ণিত রয়েছে- এর ব্যাখ্যা হলো, প্রতি নামাযের জন্য যে উযু করা হয় ঐ ওযুর সময় মিসওয়াক করা। আর এটাই হাদিসের উদ্দেশ্য। মিসওয়াক করার মধ্যে যথেষ্ট উপকারিতা রয়েছে। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম উম্মতের জন্য সহজ পন্থাকে গ্রহণ করেছেন। যদি মিসওয়াক করা ওয়াজিব হতো তখন ওয়াজিব আদায় না করলে উম্মতের ওপর শান্তির বিধান নেমে আসবে, এজন্য ওয়াজিব করা হয়নি। সুতরাং সুযোগ অনুযায়ী কষ্টসাধ্য না হলে মিসওয়াক করা সুন্নাতে রাসূল- যাতে অনেক উপকারিতা রয়েছে। সুতরাং প্রত্যেক মুসলমানের উচিত প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত সমূহ আদায়ে যথাসাধ্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। তবে অন্য কিছু দিয়ে মুখ পরিস্কার করলে যেমন দাঁতের মাজন, ব্রাশ ইত্যাদির মাধ্যমেও সুন্নাত আদায় হবে। অবশ্যই মিসওয়াকের মাধ্যমে মুখ/দাঁত পরিস্কার করলে পরিপূর্ণ সুন্নাত আদায় হবে- সাওয়ারও বেশী পাওয়া যাবে।
অপর হাদীসে مطهرة للفم ومرضاة للرب অর্থাৎ মিসওয়াক করার দরুণ মুখ পবিত্র হয় (দুর্গন্ধ দূরীভুত হয়ে যায়) এবং রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি লাভের অন্যতম উসিলা মিসওয়াক। সুতরাং মিসওয়াকের প্রতি যত্নবান ও সচেতন হওয়া বড়ই উপযোগী। উল্লেখ্য যে হযরত ইমামে আযম আবূ হানীফা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু মতে মিসওয়াক করা ওযুর সুন্নাত। কোন কোন ইমাম নামাযের সুন্নাত বলেছেন।
الله ورسوله اعلم بالصواب-
মুহাম্মদ মুহসিন আহমেদ মারুফ
চট্টগ্রাম সরকারী কলেজ।
প্রশ্ন: ১. জনৈক ইমাম সাহেব নামাযে জানাযায় ৩ তাকবীর বলে সালাম ফিরিয়ে নেন। নামায শেষে সবাই এ নিয়ে আলোচনা করছে। দ্বিতীয় বার জানাযার নামায পড়ানো হলনা। মাইয়্যেতকে দাফনও করা হল। তিন তাকবীরের সাথে জানাযার নামায পড়ালে হবে কি? জানানোর আবেদন রইল ।
উত্তর: ১. নামাযে জানাযায় ৪ তাকবীর বলা ফরজ। কেননা চার তাকবীর হল নামাযে জানাযার রুকন । আর রুকন বলা হয় এমন বিধানকে যা ছাড়া কোন বস্ত শুদ্ধ হয় না। যেমন- পঞ্জেগানা নামাযে কেরাত পাঠ করা, রুকু ও সাজদা ইত্যাদি। এ প্রসঙ্গে ইসলামী শরিয়তের বিখ্যাত ফতোয়া গ্রন্থ ‘হেদায়া শরীফে’র আরবী হাশিয়াতে মাওলানা আবদুল হাই লখনভী উল্লেখ করেন- لوتركت تكبيرة من التكبيرات فسدت الصلواة كمالو ترك ركعة من الظهر-
অর্থাৎ যদি নামাযে জানাযায় চার তাকবীর সমূহ থেকে একটি তাকবীর ও ছেড়ে দেওয়া হয়, তবে ঐ নামাযে জানাযা ফাসেদ/নষ্ট হয়ে যাবে । যেমন কোন ব্যক্তি যোহরের ফরয চার রাকআত থেকে এক রাকআত ছেড়ে দিলে ঐ নামায নষ্ট হয়ে যায় । রদ্দুল মোহতারে ও ইমাম ইবনে আবেদীন শামী রহমাতুল্লাহি আলায়হি নামাযে জানাযা অধ্যায়ে এভাবে মাসাআলা বর্ণনা করেছেন। অতএব, কোন ইমাম তিন তাকবীরে নামাযে জানাযা আদায় করলে ঐ নামাযে জানাযা শুদ্ধ হবে না। উক্ত নামাযে জানাযা পুনরায় পড়তে হবে। কোন ইমাম যদি এমতাবস্থায় উক্ত নামাযে জানাযা পুনরায় চার তাকবীরের সাথে না পড়ে মৃত ব্যক্তিকে দাফন করে দেয় তা হবে উক্ত ইমামের অজ্ঞতা ও জেহালত। তখন দাফনের পর তিন দিন পর্যন্ত উক্ত মৃত ব্যক্তির কবরকে সামনে নিয়ে তার নামাযে জানাযা আদায় করলে ফরযে কেফায়া আদায় হয়ে যাবে । দাফনের তিন দিন পর আর জানাযার নামায আদায়ের অনুমতি নেই। এটাই শরিয়তের ফায়সালা । [ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া ও রদ্দুল মোহতার ইত্যাদি।]
প্রশ্ন: ২. আমাদের বাড়ীতে জানাযার নামাযের পূর্বে বাড়ী হতে লাশ নিয়ে নামাযে জানাযার জায়গায় আসার সময় ‘সবছে আওলা ও আ’লা হামারা নবী’ এই না‘ত পড়া হয়। অনেকে বলছে এরূপ পড়া জায়েয নেই/ যাবে না। এ না‘তে রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম লাশ বহন করার সময় পড়া যাবে কিনা? ইসলামী শরীয়তের আলোকে জানালে উপকৃত হব।
উত্তর: ২. মৃত ব্যক্তির লাশ নামাযে জানাযা ও কবরে দাফনের জন্য নিয়ে আসার প্রাক্কালে পবিত্র কলমা-এ তৈয়্যবা, কলমায়ে শাহাদাত, তাসবীহ-তাহলীল, দরূদ শরীফ, না‘তে রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এবং আল্লাহু রব্বি মুহাম্মদুন্ নবীয়্যী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম, সবচে আউলা ওয়া আ‘লা হামারা নবী, আল্লাহ-রাসূলের জিকির ও দু‘আ দরূদ নিম্ন বা উচ্চ আওয়াজে পাঠ করা জায়েয ও বৈধ। এবং তা জীবিত মৃত উভয়ের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তাছাড়া লাশ নিয়ে যাওয়ার সময় অনর্থক কথা-বার্তা না বলে মৃত ব্যক্তির লাশের পেছনে হামদ, না‘ত, কালেমা শরীফ ইত্যাদি পড়া অতি উত্তম। এ প্রসঙ্গে নির্ভরযোগ্য বর্ণনা ও ফিকহের উদ্ধৃতি সমূহের আলোকে হাকিমুল উম্মত মুফতি আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী ‘জা‘আল হক্কে’ বিস্তারিত আলোচনা করেছেন ।
দু’টির বেশি প্রশ্ন গৃহীত হবেনা একটি কাগজের পূর্ণপৃষ্ঠায় প্রশ্ন লিখে নিচে প্রশ্নকারীর নাম, ঠিকানা লিখতে হবে
প্রশ্নের উত্তর প্রকাশের জন্য উত্তরদাতার সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ বাঞ্ছনীয় নয়। প্রশ্ন পাঠানোর ঠিকানা:
প্রশ্নোত্তর বিভাগ, মাসিক তরজুমান, ৩২১, দিদার মার্কেট (৩য় তলা), দেওয়ান বাজার, চট্টগ্রাম-৪০০০।