প্রশ্নোত্তর : অধ্যক্ষ মুফ্তী সৈয়দ মুহাম্মদ অছিয়র রহমান
মাওলানা সাইফুল হক
পেশ ইমাম- মসজিদে রহমানিয়া গাউসিয়া
শীতল ঝর্ণা আবাসিক, বায়েজীদ, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: ধরা বুকে প্রিয় নবীর অসাধারণ শুভাগমন, তিনি যে অতুলনীয় বে-সাল মহান সত্তা এবং সাহাবায়ে কেরামের জামানা হতে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আয়োজনের প্রমাণাদী নির্ভরযোগ্য কিতাবের রেফারেন্সসহ বর্ণনা করার বিনীত নিবেদন রইল। যেহেতু রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর শান-মান ও আল্লাহ প্রদত্ত অসীম ও অতুলনীয় মর্যাদা বিশেষতঃ ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম উপলক্ষে বিভিন্ন আয়োজনকে কুচক্র মহল কটুক্তি করে থাকে। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার নিবেদন রইল।
উত্তর: সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী মহানবী হুযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের যত প্রকার সৃষ্টি আছে তন্মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ অতুলনীয় এবং বে-মেছাল। হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর চরিত্র, আদর্শ, মর্যাদা গুণগতভাবে যেমন সাধারণ উম্মতের চেয়ে বহু ঊর্ধ্বে, ঠিক তেমনি তাঁর মাতৃগর্ভে আসা থেকে ভূমিষ্ট হওয়াও ছিল স্বাভাবিক নিয়মের ব্যতিক্রম। উম্মতের সাথে তুলনা তো দূরে কথা, অন্যান্য নবী-রসূলগণের সাথেও প্রিয়নবী রসূলে মাকবুল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর তুলনা চলেনা। এদিকে ইঙ্গিত করে আশেকে রসূল আল্লামা ইমাম শরফুদ্দীন বুসুরী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর ‘আল কাওয়াকিবুদ্ দুররিয়া বি শরহিল জাওয়াহিরীল বরজনজিয়া ফি মওলাদে খায়রিল বারিয়্যাহ্’ এর মধ্যে (যা সংক্ষেপে কাছীদায়ে বুরদা নামে পরিচিত) বলেছেন, ‘‘রসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সৃষ্টি ও চরিত্রে সমস্ত নবীদের উপর স্থান নিয়েছেন। নবীগণ তাঁর ইলম (জ্ঞান) এবং মর্যাদার নিকটেও পৌঁছতে পারেনি।’’ যেহেতু সকল নবী-রসূলের নুবূয়ত-রেসালত, মান-মর্যাদা এবং মুযেজাসমূহ আমাদের প্রিয়নবীর ওসীলায় প্রাপ্ত। আ’লা হযরত ইমামে ইশক্ব ও মহব্বত শাহ্ আহমদ রেযা খান ফাযেলে বেরলভী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি তাঁর জগৎ বিখ্যাত অমর কাব্যগ্রন্থ ‘হাদায়েকে বখশিশ’-এ তিনটি ভাষার সমন্বয়ে রচিত না’তে রসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামায় বলেছেন- (ছন্দাকারে) ‘উপমা তোমার কেউ দেখেনি কখন, তোমারই মত কেউ হয়নি সৃজন।’’ [কাব্যানুবাদ: হাফেয মাওলানা আনিসুজ্জমান]
অন্য একজন কবি ছন্দাকারে বলেছেন, যার মর্মার্থ হল- ‘মুসনদে আহমদ-এর হাদীস দ্বারা স্বীকৃত যে, পূর্বযুগ হতে হযরত আদম সন্তানদের মধ্যে প্রিয়নবী রসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর মত কেউ জন্মগ্রহণ করেননি। এরপর আরো বলেছেন- ‘আসমানের ফেরেশতারা তাদের রহস্যপূর্ণ গোপন আলোচনায় বলেছেন- আল্লাহর প্রিয় হাবীব নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ধরা বুকে শুভাগমন করেছেন এবং তাঁর মত কেউ আর জন্মগ্রহণ করেননি ও করবেন না।’’ এক কথায় হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর এ পৃথিবীতে শুভাগমন অন্য কারো পৃথিবীতে ভূমিষ্ট হওয়ার সাথে তুলনা খুঁজে পাওয়া যাবে না। এ বিষয়টা আরো স্পষ্ট করে সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন শারেহে সহিহ্ বোখারী আল্লামা শিহাবুদ্দীন আহমদ ইবনে মুহাম্মদ খতিব কাছতালানী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি তাঁর বিখ্যাত ‘আল মাওয়াহিবুল লাদুনিয়া’ গ্রন্থে। তিনি বিভিন্ন উদ্ধৃতি ও বর্ণনার আলোকে বলেন যে, রসূলে পাক প্রিয়নবী হুযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম মাতৃগর্ভে থাকাকালীন প্রিয়নবীর সম্মানিত মাতা হযরত আমেনা দুনিয়ার অন্য কোন গর্ভবর্তী মহিলাদের মত গর্ভকালীন কোন উপসর্গ অনুভব করেননি। তাঁর সমর্থনে একটি বর্ণনা তিনি উল্লেখ করেছেন, হযরত আবু জাকারিয়া ইয়াহিয়া ইবনে আইজ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, প্রিয়নবী রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম মাতৃগর্ভে পূর্ণ নয় মাস অবস্থান করেছিলেন। এ সময় তিনি (মা আমেনা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) গর্ভকালীন উপসর্গ যেমন মাথা ঘুরানো বা ব্যথা, পেটে অস্বস্তি, খাওয়া/খাদ্যে দুর্গন্ধ এবং অন্যসব গর্ভবর্তী মহিলাদের যে সব অসুবিধা দেখা দেয় এমন কোনটির অভিযোগ করেননি। তাছাড়া তিনি (হযরত আমেনা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা) বলতেন- ‘‘আল্লাহর শপথ আমার এ গর্ভের চেয়ে অতি হালকা-সহজ এবং বরকতময় আর দেখিনি। [মাওলাহিবুল লাদুন্নিয়াহ্: ১ম খন্ড, পৃ. ৬৩]
‘আল্লামা ইমাম তাবরানী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম যখন ধরা বুকে ভূমিষ্ট হয়েছেন তখন তাঁর দুই হাতের আঙ্গুলিগুলো মুষ্টি অবস্থায় ছিল। আর তাঁর শাহাদাত আঙ্গুলী আকাশের দিকে ইশারা করা অবস্থায় তিনি আল্লাহর তাসবীহ রত ছিলেন। এ রকম আরো বহু বিশেষ অলৌকিক ঘটনাবলী সংঘটিত হয়েছে প্রিয়নবীর শুভ বেলাদত তথা শুভাগমণের নূরানী মুহূর্তে যা বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহে বর্ণিত আছে। তাই প্রতীয়মান হল যে, আল্লাহ্ পাকের প্রিয়নবী হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে অন্যদের যেমন সিরত-সূরত কোন কিছুতে তুলনা বা মিল নেই, তেমনি ভূমিষ্ট বা শুভ বেলাদত মোবারকে অন্য উম্মতের কারো সাথে কোন সামঞ্জস্যতা বা তুলনা নেই।
এ বিষয়ে আল্লামা শাবরানী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি তাঁর রচিত ‘আল ইত্তেহাফ, বে-হুব্বিল আশরাফ এ বর্ণনা করেছেন যে, আমাদের প্রিয়নবীসহ কোন নবী অন্য সব মানুষের মত জন্ম লাভ করেননি বরং অন্যান্য নবী-রসূলগণ আপন মায়ের লজ্জাস্থানের উপরিভাগ তথা নাভীর নিচ হতে আর আমাদের প্রিয় রসূল মা আমেনার তল পেটের বাম পাশ হতে মহান আল্লাহর বিশেষ কুদরতী ব্যবস্থায় দুনিয়ায় শুভাগমন করেছেন- আল্লামা তালমসানী বলেন, নবীগণ ছাড়া প্রত্যেক মানব সন্তান সাধারণ মায়ের লজ্জাস্থল (প্রস্রাবের রাস্তা) দিয়ে জন্মলাভ করেছে। আমাদের প্রিয়নবী ব্যতীত অন্যান্য নবীগণ মায়ের নাভীর নিচে ও লজ্জাস্থানের উপরিভাগ হতে ভূমিষ্ট হয়েছেন আর আমাদের প্রিয়নবী হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হযরত মা আমেনার তল পেটের বাম পাশ হতে (ধরা বুকে) শুভাগমন করেছেন।
হযরত মাওলানা ফজলুর রহমান হাজারভী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর রচিত ‘জামেউল খায়ের’ কিতাবে এভাবে উল্লেখ করেছেন, কোন কোন আলিম ইমাম কলয়ূবীসহ একদল মুহাক্বিক্ব ওলামায়ে কেরাম হতে বর্ণনা করেছেন যে, রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে জন্মলাভ করেন নাই বরং আম্মাজানের নাভির নিচের স্থান হতে দুনিয়ায় শুভাগমন করেছেন, যা সঙ্গে সঙ্গে (আল্লাহর কুদরতী ও বিশেষ ব্যবস্থাপনায়) ঠিক হয়ে গেছে। বিশ্বখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম কাজী আয়াজ রহমাতুল্লাহি আলায়হি হতে বর্ণনা করা হয়েছে যে, অন্যান্য নবী রসূলগণও প্রিয়নবী রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর মত নাভির নিচ স্থান হতে জন্ম লাভ করেছেন।
‘নিহায়তুজ্ জয়েন ফি ইরশাদিল মুবতাদিয়ীন’ কিতাবে আরো বলা হয়েছে, মালেকী মাযহাবের ইমামগণ এ মর্মে ফতোয়া/ফায়সালা দান করেছেন যে, যারা এ কথা বলবে-আমাদের প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে ভূমিষ্ট হয়েছেন, তাদেরকে কতল/হত্যা করা হবে। [নেহায়তুজ্ জয়েন, ১ম খ-, ১২পৃ. কৃত. আল্লামা ইমাম মুহাম্মদ ওমর আলজাবী]
আল্লামা আলী বিন আলী আজহারী শাফেয়ী রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি বলেন যে, যদিও হাদিসের জাহেরী (প্রকাশ্য) অর্থ হতে বুঝা যায় যে, রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামার শুভজন্ম স্বাভাবিক নিয়মে হয়েছে; কিন্তু হযরত ইবনে রুশদ মালেকী রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি এবং একদল মুহাক্বিক্ব ওলামায়ে কেরাম হতে বর্ণিত যে, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সাধারণ মানুষের ন্যায় প্রস্রাবের স্থান হতে জন্মলাভ করেন নাই বরং তার উপরিভাগ স্থান হতে মা আমেনার নাভির নিচে উন্মুক্ত করে তাঁর শুভাগমন হয়েছে এবং সাথে সাথে (তা বক্ষ বিদারণের মত) ঠিক হয়ে গেছে।
[আল কাওয়াকিবুদ্ দুরয়িা বিশরহিল জাওয়াহিরীল বরজনজিয়া ফি মওলাদে খায়রিল বারিয়্যাহ্, পৃ. ৮৩]
সুতরাং আমাদের প্রিয়নবী হুযুর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামসহ আল্লাহর সম্মানিত নবী-রসূলগণের যে কোন বিষয়ে মন্তব্য করতে নেহায়ত সতর্কতা অবলম্বন করা অপরিহার্য ও অত্যন্ত জরুরি।
এ ধরা বুকে প্রিয়নবী দোজাহানের আক্বা হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র শুভাগমনের নূরানী মুহূর্তে অথবা দিবস বা মাসকে কেন্দ্র করে ক্বোরআন পাকের তেলাওয়াত, নফল নামায ও নফল রোযা আদায়, খানা পিনার আয়োজন ও তবাররুক বিতরণ, দরুদ-সালাম পাঠ, হামদ, নাতে রসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম পরিবেশন ও প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র জন্মবৃত্তান্ত ও জীবন চরিত আলোচনা, মিলাদ-কেয়াম ও দোয়া মুনাজাত এবং গরীব অসহায়দেরকে সদকাহ্, দান-খয়রাত করা আর এ উপলক্ষে পবিত্র পরিবেশে আদব ও ভক্তি সহকারে দরুদ-সালাম ও জিকির-আযকারের মাধ্যমে ভাবগম্ভীর পরিবেশে জুলুস বা শোভাযাত্রা বের করে আনন্দ উৎসব প্রকাশ করা ইত্যাদিকে মূলত পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বা প্রিয়নবীর শুভাগমন উপলক্ষে খুশী উদযাপন করা বলা হয়।
আর মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ অনুগ্রহ ও নিয়ামত প্রাপ্তির শুকরিয়া আদায় করে খুশি উদযাপন করার নির্দেশ স্বয়ং আল্লাহ্ তা‘আলা এভাবে প্রদান করেছেন যে, ‘‘হে মাহবুব! আপনি বলুন, আল্লাহরই অনুগ্রহ ও তাঁর দয়া প্রাপ্তিতে সেটার উপর যেন তারা অবশ্যই আনন্দ প্রকাশ করে। তা তাদের সঞ্চয়কৃত সমস্ত ধন-দৌলত অপেক্ষা শ্রেয়। [সূরা ইউনুস, আয়াত-৫৮]
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত হাফেজুল হাদিস ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী আলায়হির রাহমাহ্ তাঁর তাফসীর গ্রন্থ ‘আদ-দুরুল মনসূর’-এ বর্ণনা করেছেন, রয়িসুল মুফাস্সেরীন হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা এ আয়াতের তাফসীরে বলেন, ‘এখানে আল্লাহর অনুগ্রহ দ্বারা ‘ইলমে দ্বীন’ বুঝানো হয়েছে আর ‘রহমত’ দ্বারা বুঝানো হয়েছে নবী করীম সরকারে দু’ আলম নুরে মুজাস্সাম আমাদের প্রিয় আক্বা হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে। যেমন- আল্লাহ্ তা‘আলা অন্য সূরায় এরশাদ করেছেন, ‘‘হে হাবীব সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম- আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্বের প্রতি ‘রহমত’ করে প্রেরণ করেছি। [সূরা আম্বিয়া, আয়াত-১০৭]
আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর বান্দাদেরকে যে অগণিত অনুগ্রহ ও দয়া দ্বারা ধন্য করেছেন তন্মধ্যে এ ধরা বুকে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র শুভাগমনের চেয়ে বড় অনুগ্রহ ও দয়া কি হতে পারে? শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রহমাতুল্লাহি আলায়হি ও ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি এভাবে উল্লেখ করেছেন- প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র এ ধরা বুকে শুভাগমনের চেয়ে বড় নেয়ামত সৃষ্টিকুলের জন্য আর কি হতে পারে? অবশ্যই আর কিছুই হতে পারে না! আল্লাহর নবী হযরত ঈসা আলায়হিস্ সালাম তাঁর উম্মতের প্রতি আসমান হতে খাদ্যপূর্ণ খাঞ্চা অবতীর্ণ হবার দিবসকে পূর্ব ও পরবর্তীদের জন্য ঈদ বা উৎসবের দিনরূপে আখ্যায়িত করেছেন। যা পবিত্র ক্বোরআন দ্বারা প্রমাণিত। এ জন্যই তো খ্রিস্টান সম্প্রদায় রবিবারকে আজ পর্যন্ত তাদের সাপ্তাহিক উৎসবের দিন ও ছুটির দিন হিসেবে পালন করে আসছে। কেননা সেদিন খাদ্য ভর্তি খাঞ্চা তাদের জন্য আকাশ থেকে অবতীর্ণ হয়েছিল। এখন চিন্তা করার বিষয় যে, যেদিন ‘খাদ্যপূর্ণ খাঞ্চা’ নাযিল হয়েছিল সেদিনটি যদি হযরত ঈসা আলায়হিস্ সালাম এবং তাঁর পূর্ব ও পরবর্তী উম্মতের জন্য ঈদের দিন হিসেবে মর্যাদা লাভ করে, তবে যে মহান দিবসে আল্লাহ্ তা‘আলার সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত ও শ্রেষ্ঠতম রহমত হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম পৃথিবীর বুকে তাশরীফ আনেন, সেদিনটি মুসলমানদের জন্য সাথে সাথে বিশ্ববাসীর জন্য কি ঈদ বা খুশির দিন হবে না? হ্যাঁ অবশ্যই তা ঈদের দিন এবং পরম আনন্দের মুহূর্ত। মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম তথা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামার পবিত্র জন্মবৃত্তান্তের আলোচনা স্বয়ং সাহাবায়ে কেরাম প্রিয়নবীর জীদ্দশায় করেছেন মর্মে বর্ণনা দেখা যায়। সাতশত হিজরীর প্রখ্যাত মুহাদ্দিস শায়খ আবুল খাত্তাব ইবনে দাহিয়া রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি তাঁর রচিত ‘আত-তানবীর ফী মাওলদিল বশীরিন নাজীর’ কিতাবে বর্ণনা করেছেন। তদ্রুপ এ সমস্ত বর্ণনাসমূহ হাদীস ও ফিক্বহের প্রসিদ্ধ ইমাম হযরত জালালুদ্দীন সুয়ূতী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর রচিত ‘আল হাবী লিল ফতোয়া’য় উল্লেখ করেছেন, প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি একদিন নিজ ঘরে রসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র বেলাদত শরীফ অর্থাৎ পৃথিবীতে প্রিয় নবীর শুভাগমনের ঘটনাবলী বর্ণনা করেছিলেন, এমতাবস্থায় তাঁর ঘরে হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম প্রবেশ করলেন এবং এরশাদ করলেন, ‘তোমাদের জন্য আমার সুপারিশ বৈধ হয়েছে।’’
[আত-তানভীর, কৃত, ইমাম ইবনে দাহিয়া রহ.]
উক্ত কিতাবে আরো বর্ণনা পাওয়া যায়, যেমন- প্রিয়নবীর প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবু দারদা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি একদা নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামার সাথে আনসারী সাহাবী হযরত আমের রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর গৃহে গমন করেছিলেন, তখন হযরত আমের রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু স্বীয় সন্তান ও গোত্রের সবাইকে নিয়ে হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামার বেলাদতের তথা শুভাগমনের ঘটনাবলী শিক্ষা দিচ্ছিলেন এবং বলছিলেন- অদ্যকার পবিত্র এ দিনেই প্রিয়নবী’র এ পৃথিবীতে শুভাগমন হয়েছিল। তখন হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করলেন, হে আমের! নিশ্চয় আল্লাহ্ তা‘আলা তোমার জন্য রহমতের দুয়ার খুলে দিয়েছেন এবং ফেরেশতারা তোমার জন্য ইস্তিগফার করছেন। অতঃপর যারা এ কাজ করবে, তারা তোমার মত মুক্তি লাভ করবে। এ সমস্ত বর্ণনা ইমামে আহলে সুন্নাত প্রখ্যাত আশেকে রসূল আল্লামা গাজী সৈয়্যদ আজিজুল হক শেরে বাংলা রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি তাঁর রচিত ফতোয়ায়ে আজিজি’তেও উল্লেখ করেছেন। পরম করুণাময় আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদের সবাইকে মাহে রবিউল আউয়ালে নেহায়ত আদব ও ভক্তি শ্রদ্ধার সাথে পবিত্র পরিবেশে ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে পবিত্র মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম উদযাপন করার তাওফিক নসীব করুন। আমিন।
মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ্ আল নাঈম
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: রবিউল আউয়াল মাসে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর জশনে জুলুশ কে কিছু লোক হিন্দুদের রথযাত্রার সাথে তুলনা করে। নাউযুবিল্লাহ! কোরআন-হাদিসের আলোকে এ নিয়ে বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর: জুলুস শব্দটি আরবী। আভিধানিক অর্থ শোভাযাত্রা বা বর্ণাঢ্য র্যলী ও শাহী সাওয়ারী ইত্যাদি। শরীয়তের পরিভাষায় সমগ্র সৃষ্টির প্রাণ ও উৎস হুযূর করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামার এ ধরা বুকে শুভাগমনকে কেন্দ্র করে শুকরিয়া আদায়ের উদ্দেশ্যে হাম্দ-না’ত, দরূদ-সালাম, যিকির-আযকার ইত্যাদির মাধ্যমে শোভাযাত্রা ও খুশী উদ্যাপন করাকে জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলা হয়। নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর শুভাগমনে খুশী উদ্যাপন করা, হাম্দ-না’ত, দরূদ সালাম ও যিকির আযকারের মাধ্যমে জুলুস করত: উক্ত মহান নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা এবং তার প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রদর্শন করা শরীয়ত সম্মত এবং তা কোরআনুল করিমের নির্দেশ। তাছাড়া শান-শওকতর্পূণ জশনে জুলুস বের করা নবী প্রেমের বহঃিপ্রকাশ। এমন বরকতময় ও সওয়াবপূর্ণ শোভাযাত্রাকে বিধর্মীদের আচার-অনুষ্ঠানের ও হিন্দুদের রথ যাত্রার সাথে তুলনা করা মূলত জেহালত ও মূর্খতা, গোস্তাখী ও শয়তানী খাসলত। কারণ প্রিয়নবীর শুভাগমনে সমস্ত সৃষ্টি জগৎ খুশি উদযাপন করেছিল; কিন্ত ইবলিস শয়তান জবলে আবি কুবাইসে গিয়ে কান্নাকাটি করেছিল। আজও যারা প্রিয়নবীর শুভাগমনের মাসে ঈদে মিলাদুন্নবীর মাহফিল ও জশনে জুলুস দেখলে পেরেশান হয়, চেহারা মলিন করে ফেলে তারা অবশ্যই শয়তানের উত্তরসুরী। আর যাঁরা খুশি হয়ে হাম্দ-না’ত, দরূদ সালাম ও যিকির আযকারের মাধ্যমে মাহফিলে মিলাদুন্নবী ও জশনে জুলুস করত: মহান আল্লাহর দরবারে এ মহান নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে এবং তাঁর (সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রদর্শন করে তারা হলেন মুমিন। কারণ প্রিয়নবী হলেন আল্লাহর মহান নেয়ামত ও সৃষ্টির জন্য রহমত। আল্লাহর করুণা ও খাস রহমতকে স্মরণ করে খুশী উদ্যাপন করার আদেশ প্রদান করে সূরা ইউনূসে মহান আল্লাহ্ এরশাদ করেন- قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَالِكَ فَلْيَفْرَحُوْا هُوَ خَيْرٌ ممَّا يَجْمَعُونَ র্অথাৎ হে হাবীব! আপনি (বিশ্ববাসীকে) বলুন, আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁরই দয়া (তথা প্রিয় মাহবূব সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) কে স্মরণ করে সেটার উপর তারা যেন আনন্দ প্রকাশ করে। এটা তাদের জমাকৃত সমস্ত ধন-সম্পদ ও নেক আমল সমূহ অপেক্ষা অধিক উত্তম।
বিভিন্ন তাফসীর গ্রন্থে উপরোক্ত আয়াতে করীমার برحمته শব্দ দ্বারা “প্রিয়নবী রাহমাতুল্লিল আলামীনেরর পবিত্র ও নূরানী’ জাতে পাক বলে বর্ণিত হয়েছে।
[তাফসীরে ইবনে আব্বাস এবং তাফসিরে দুররে মানসুর: কৃত- ইমাম জালাল উদ্দীন সুয়ূতী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ইত্যাদি]
উল্লেখিত আয়াতের আলোকে মহানবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর শুভাগমনকে উপলক্ষ করে, তাঁরই শুভাগমনের মাসে শরীয়ত সম্মত তরিকায় হাম্দ-না’ত, দরূদ-সালাম, যিকির-আযকার মিলাদ-মাহফিল ও দু‘আর মাধ্যমে আনন্দ উৎসব করা, শান-শওকতর্পূণ জশনে জুলুস বের করা নবী প্রেমের বহঃিপ্রকাশ। বিশেষত: প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামার শুভাগমনের মুহূর্তে আল্লাহ্ তা’আলার হুকুমে অসংখ্য নূরানী ফেরেশতা দলে দলে জুলুস সহকারে আসমান হতে মক্কা শরীফে নবীজির দাদা খাজা আবদুল মোত্তালেবের ঘরে হামদ-না’ত সহকারে নূরানী পতাকাসহ অবতরণ করেন। জশনে জুলুসের প্রমাণ সমূহের মধ্যে এটা অন্যতম।
[জালাল উদ্দীন সূয়ূতীর আল খাসায়েসুল কোবরা ও আল হাবী লিল ফাতাওয়া, ইমাম আহমদ খতিব কস্তালানীর আল
মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া’ ও ইমাম ইবনে হাজর হায়তামী মক্কীর আন্নে’মাতুল কুবরার বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত।]
মাসিক তরজুমানে আহলে সুন্নাত রবিউল আউয়াল বিগত ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম সংখ্যায় এ বিষয়ে নির্ভরযোগ্য কিতাবের উদ্ধৃতিসহ বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তা দেখার অনুরোধ রইল।
মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল করিম
খুলনা।
প্রশ্ন: ক. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামকে মাসুম ও গুনাহ হতে মুক্ত বলা যাবে কিনা? খ. আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে নিরাকার, আরশে সমাসীন বলা যাবে কিনা? গ. আল্লাহ্ তা‘আলাকে নূর বলা যাবে কিনা, ঘ. রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে আমাদের মত মানুষ বলা যাবে কিনা? মানব বংশে তার শুভাগমন হয়েছে বিধায় তাঁকে আমাদের মত বললে গুনাহ্ হবে কিনা? ঙ. সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা করার হুকুম কি? ক্বোরআন-সুন্নাহর আলোকে জানিয়ে ধন্য করবেন।
উত্তর: ক. রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামসহ সকল নবী-রসূল মাসুম ও নিষ্পাপ। নবীগণ গুনাহ্ করেছেন বা গুনাহে লিপ্ত হয়েছেন বলা হারাম ও ঈমানের পরিপন্থী। তদুপরি শক্ত বেআদবী, তবে নবীগণের জন্য اجتهادى خطاء তথা ইজতিহাদগত ভুল ও পদস্খলন ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন গুনাহের অন্তর্ভুক্ত নয় ও মাসুম হওয়ার পরিপন্থী নয়।
খ. আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন কোন সৃষ্টির মত নয়। আরশ-কুরসি আসমানসহ কোন স্থানে সমাসীন নয়। তিনি আরশ-কুরসি, লৌহ-কলম, আসমান ও তুর পাহাড়ে বিশেষ তাজাল্লী নিক্ষেপ করেছেন। كما يليق بشانه عزوجلل । আরশ, কুরসি, লৌহ-কলম, আসমান-জমিন, চন্দ্র, সূর্য, তারকা, মানব, দানব, পাহাড়-পর্বত, নদ-নদী, সাগর, উপ সাগর সব কিছু তাঁরই সৃষ্টি।
গ. আল্লাহ্ তা‘আলা আসমান ও জমিনের নূর اَللهُ نور السموات والارض তথা এখানে নুর অর্থ আরশ, কুরসি, লৌহ-কলম, চন্দ্র-সূর্যসমূহকে আলো দানকারী। আল্লাহ্ তা‘আলা আলোসহ সব কিছুর খালেক। منور অর্থাৎ আলোদানকারী এ অর্থে আল্লাহ্ তালাকে নূর বলা যাবে যেমন কোরআন মজিদে বলা হয়েছে نور যার অর্থ- منور বা আলো দানকারী।
ঘ. রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামসহ সম্মানিত নবী-রসূলগণকে আমাদের মত ও দশজনের মত সাধারণ মানুষ মনে করা মারাত্মক বেয়াদবী ও কুফরী। আমাদের নবীসহ সকল নবীগণ জীন বা ফেরেশতা নন বরং মানব বংশে পৃথিবীতে শুভাগমন করেছেন। অবশ্যই আমাদের প্রিয় রসূল সরকারে দো’আলম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী। তিনি অতুলনীয়, অদ্বিতীয়, নুরানী, সর্বশ্রেষ্ঠ মানব ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হয়ে ধরার বুকে শুভ পদার্পন করেছেন। তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম) সাথে কোন মানবের সাথে এমন কি অন্য কোন নবী-রসূলের সাথে তুলনা করা বেয়াদবী। উল্লেখ্য যে, মানব বংশে রসূলে পাকের শুভাগমন হয়েছে বিধায় তিনি আমাদের মত দশজনের মত বললে মারাত্মক গুনাহ্ হবে এমনকি ঈমান ধ্বংস হয়ে যাবে।
ঙ. হযরত সৈয়্যদুনা সিদ্দিকে আকবর, হযরত ফারূকে আযম, হযরত উসমান জুননুরাঈন, মাওলায়ে কায়েনাত হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমসহ কোন সাহাবিয়ে রসূল ও আহলে বায়তে রসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সমালোচনা ও কটুক্তি করা বেঈমানীর নামান্তর। যে সব কথা/বক্তব্য দ্বারা তাদের শানে বেয়াদবী বুঝায় এ জাতীয় কথা, বক্তব্য হতে বিরত ও দুরে থাকা ঈমানদারের উপর অপরিহার্য। পরম করুণাময় আল্লাহ্ তা‘আলা সবাইকে হেদায়ত ও সবকিছু সঠিকভাবে বুঝার তাওফিক দান করুন। আমিন। এ বিষয়গুলো সফর সংখ্যার প্রশ্নোত্তর বিভাগে আলোচনা করা হয়েছে।
মুহাম্মদ বোরহান উদ্দীন
পদুয়া, সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায়, বিশেষভাবে রাজনৈতিক পরিমন্ডলে পরিলক্ষিত হচ্ছে যে, লাশ বিহীন অর্থাৎ গায়েবানা জানাযার নামাযের প্রচলন, এমনকি এ বিষয়ে কোন কোন স্থানে ঝগড়া-ফ্যাসাদ সৃষ্টি হচ্ছে কিন্তু আমরা জানি জানাযার নামাযের জন্য মৃত ব্যক্তির লাশ ইমাম সাহেবের সামনে উপস্থিত থাকা নামাযে জানাযা শুদ্ধ হওয়ার জন্য অন্যতম শর্ত। এতদ্বিষয়ে ইসলামী শরীয়তের সঠিক ফয়সালা জানানোর অনুরোধ জানাচ্ছি।
উত্তর: কোন মুসলিম (নর-নারী) ইন্তেকাল করলে তার নামাযে জানাযায় শরীক হওয়া অপর মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব। যা শরীয়তের পরিভাষায় ফরযে কেফায়া। এতে মৃত ব্যক্তি এবং উপস্থিত মুসল্লি সকলের গুনাহ্ মাফ হয়ে যায়। কিন্তু জানাযার নামায শুদ্ধ হওয়ার জন্য মৃত ব্যক্তির লাশ ইমাম সাহেবের বা মুসল্লিদের সামনে উপস্থিত থাকা জানাযা নামাযের ছয়টি শর্তের একটি। যেমন ফিক্বহ্/ফতোয়ার অন্যতম নির্ভরযোগ্য কিতাব আদদুররুল মুখতার গ্রন্থকার ইমাম আলাউদ্দিন খাসকাপি হানাফী রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি এবং রদ্দুল মোহতার রচয়িতা আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী বলেন, وشرطها ستة اسلام الميت وبسترالعورة ووضعه امام المصلى طهارته شرط فى الحقي الميت والامام جمعًا وبقى من الشروط بلوغ الامام ووضعه اى على الارض قريبًا منها (الدر المختار ـ صفحه ـ ২০৮-২০৭ـ ج ـ ২) অর্থাৎ জানাযার নামাযের শর্ত হল ছয়টিঃ ১. লাশ মুসলিম হওয়া, ২. লাশ পবিত্র হওয়া, ৩. লাশ ইমামের নামাযের সামনে উপস্থিত থাকা। ৪. লাশ এবং ইমাম সকলের ছতর ঢাকা থাকা, ৫. ইমাম বালেগ হওয়া, ৬. লাশ জমিনে অথবা হাতের উপর বা খাটিয়ায় নামাযে জানাযার নিকট থাকা। মৃত ব্যক্তির লাশ ইমামের সামনে উপস্থিত না থাকলে জানাযা আদায় করা হানাফী এবং মালেকী মাযহাব মতে জায়েয নেই। ইমাম আহমদ বিন হাম্বলের এক অভিমত অনুরূপ। নি¤েœ ফিক্বহ-ফতোয়ার উদ্ধৃতি প্রদত্ত হলঃ راى الحنيفة والماليكة: عدم جواز الصلوة على الغائب وصلاة النبى صلى الله عليه وسلم على النجاشى لغوية او خصوصية ـ وتكون الصلوة حينئذ مكورهة ـ الفقه الاسلامى وادلته صفحه ـ ৫০৪، ج ـ ২: للدكتوروهبية الزحيلى) অর্থাৎ হানাফী ও মালেকী মাযহাব মতে মৃত ব্যক্তির লাশের অনুপস্থিতিতে জানাযার নামায আদায় করা জায়েয নেই। আবিসিনিয়ার বাদশাহ্ নাজ্জাশীর জন্য রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নামাযে জানাযা আদায় করা তার জন্য এটি দু’আ স্বরূপ অথবা নাজ্জাশীর জন্য বিশেষ মাসআলা। লাশ বিহীন জানাযার নামায মাকরূহ। যথা মাকরূহে তাহরিমা।
[আল ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতাহু, খ.২, পৃ. ৫০৪]
উল্লেখ্য যে, নাজ্জাশীর লাশের অনুপস্থিতিতে মদিনা শরীফে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য নামাযে জানাযা আদায় করা বৈধ ছিলো যেহেতু প্রিয়নবীর জন্য দুরে কাছে এক সমান। আল্লামা আলাউদ্দিন খাসকাপি হানাফী বলেন-,فلا تصح على غائب ـ الدر المختار (صفحه ـ ২০৯ـ ج: ২ অর্থাৎ গায়েবানা জানাযা শুদ্ধ হবে না। আদদুররুল মুখতার, খ.২, পৃ. ২০৯) ইমাম ইবনুল হুম্মাম হানাফী রহমাতুল্লাহি আলায়হি এবং আল্লামা ইবন নুজাইম হানাফী রহ. বলেন- لا تجوز على غائب فتح القدير ـ صفحه ـ ১২০ـ ج ـ ২ ـ البحر الرائق ـ صفحه ـ ১৭৯ـ ج ـ ২ অর্থাৎ গায়েবানা জানাযা জায়েয নেই। ফতহুল কদীর, খ.২, পৃ. ১২০, কৃত. ইমাম কামাল উদ্দীন ইবনুল হুম্মাম হানাফী রহ. আল বাহরুর রায়েক্ব, কৃত. আল্লামা ইবনে নুজাইম মিসরী রহ. ২য় খ-, পৃ. ১৭৯। ফিক্বহে ফতোয়ার আরো অনেক নির্ভরযোগ্য কিতাবে এভাবে বলা হয়েছে।
ফতোয়ার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলীর আলোকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, নাজ্জাশীর নামাজে জানাযার বর্ণনার উপর ভিত্তি করে গায়েবানা জানাযা উম্মতের জন্য বৈধ নয়। বাংলাদেশসহ পাক-ভারত উপমহাদেশের অধিকাংশ মানুষ হানাফী মাযহাবের অনুসারী। সুতরাং তাদের জন্য গায়েবানা জানাযা পড়া জায়েয নেই। হেরেমাঈন শরীফাইন তথা মক্কা শরীফ-মদিনা শরীফে হজ্বের মৌসুম ও রমজান মাসে প্রতি ওয়াক্তে লাশ সামনে নিয়ে নামাজে জানাযা আদায় করা হয়। গায়বী জানাযা পড়া হয় না। তবে ঈমানদার মৃত ব্যক্তির লাশের অনুপস্থিতিতে তার জন্য কুরআন তেলাওয়াত, দুআ দরুদ পাঠ, অন্যান্য খতমাত, মিলাদ ও ফাতেহা খানীর মাধ্যমে ইসালে সাওয়াবের আয়োজন করা সম্পূর্ণ শরীয়ত সম্মত ও উত্তম।
[আদদুররুল মুহতার, রদ্দুল মুখতার, আল বাহরুর রায়েক ও যুগ জিজ্ঞাসা ইত্যাদি]
উল্লেখ্য যে, গায়েবী জানাযার তৎপরতা বেশী দেখা যায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানসহ মুষ্ঠিমেয় কয়েকটি দেশে শুধু রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে তাদের কোন গুরুত্বপূর্ণ কেউ মারা গেলে তাদের লাশ হাজির না থাকলেও তারা গায়বী জানাযা পড়ার জন্য কোমর বেধে নেমে পড়ে। এ জন্য অনেকেই এটাকে রাজনৈতিক জানাযা উপাধি দিয়েছেন। আসলে তাদের নিকট ইসলামী শরীয়তের সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে এ অবস্থা। আল্লাহ্ সবাইকে সঠিক মাসআলা বুঝার তাওফীক দান করুক। আমিন।
সৈয়দ মুহাম্মদ গোলাম মোস্তফা
মসজিদে রহমানিয়া গাউসিয়া শীতলঝর্ণা
আবাসিক এলাকা, অক্সিজেন, বায়েজিদ, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: একান্ত ওযর ও জরুরী তথা অপারগ অবস্থায় চেয়ারে বসে নামাজ আদায় জায়েজ কিনা? নির্ভরযোগ্য কিতাবের বিবরণ ও বরাতসহ জবাব দানে ধন্য করার অনুরোধ রইল। অনলাইন ও পেইসবুকসহ বিভিন্ন চ্যানেল ও মিডিয়ায় এক একজন হুজুর, এক এক রকম উত্তর দিয়ে সাধারণ মুসল্লিদেরকে বিভ্রান্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিস্তারিত আলোচনার আবেদন রইল।
উত্তর: ফরয, ওয়াজিব, সুন্নতে মুয়াক্কাদা নামাজে কিয়াম তথা দাড়িয়ে নামাজ আদায় করতে সামর্থ্যবান এবং রুকু ও সিজদা করতে সক্ষম মুসল্লিদের জন্য না দাড়িয়ে চেয়ারে বসে বা নামাজের বৈঠকের মত বসে অথবা শুয়ে নামায আদায় করলে উক্ত নামাজ ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক শুদ্ধ হবে না। পুনরায় দাড়িয়ে সূরা কেরাত, রুকু, সাজদা ইত্যাদি সহকারে উক্ত নামাজ আদায় করতে হবে। যেহেতু সক্ষম ও সামর্থ্যবান নামাজির জন্য ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নতে মুয়াক্কাদা নামাজ দাড়িয়ে, সূরা কেরাত, রুকু, সাজদা ইত্যাদিসহ আদায় করা ফরয। আর যে মুসল্লি জটিল রোগ ও শারীরিক কঠিন সমস্যার কারণে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতে এবং যথাযথভাবে রুকু-সাজদা আদায় করতে সম্পূর্ণ অপারগ ও অক্ষম, তিনি নামাজের বৈঠকের ন্যায় বসে সূরা-কেরাত পড়ে রুকু, সাজদা ঝুকে (রুকু হতে সাজদায় একটু বেশী ঝুকবে) নামায আদায় করবে। আর যদি বসেও নামাজ পড়তে সক্ষম না হয়, তখন শুয়ে মাথা ও মুখম-ল কেবলার দিকে করে সূরা, কেরাত পড়ে ইশারা, ইঙ্গিতে রুকু, সাজদা আদায় করবে। যা কিতাবুল হেদায়া, ফতহুল ক্বদির, শরহুল বেকায়া, আদদুররুল মোখতার, ফতোয়ায়ে হিন্দিয়াসহ ফিক্বহ্- ফতোয়া গ্রন্থে অসুস্থ ব্যক্তির নামাজ অধ্যায়ে উল্লেখ রয়েছে। তবে কোন মুসল্লি যদি বিশেষ ওযর অর্থাৎ জটিল কোন শারীরিক সমস্যার কারণে দাড়িয়ে এবং নামাজের বৈঠকের মত বসে এবং রুকু, সাজদা যথানিয়মে আদায় করে নামাজ পড়তে অপারগ ও অক্ষম হয়, তখন তিনি চেয়ারে/টুলে বসে সূরা, কেরাত পড়ে রুকু, সাজদায় ঝুঁকে নামাজ আদায় করবে। ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী তাঁর নামাজ আদায় হয়ে যাবে। তবে নামাজের বৈঠকের মত বসে বা চেয়ারে বসে নামাজ আদায়কালে নামাজির সামনে টেবিল/ কোন উচু কিছু/বেঞ্চ বা বালিশ রেখে সাজদা আদায়ের অনুমতি নেই। হাদিস শরীফ ও ফিকহ্ ফতোয়ার বর্ণনা দ্বারা তা নিষিদ্ধ। তিনি রুকুর চেয়ে সাজদায় একটু বেশী ঝুকবে। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ, মিশর ও আরব বিশ্বসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিশেষতঃ পবিত্র মক্কা ও মদিনা শরীফে অক্ষম ও জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি যারা দাঁড়িয়ে ও নামাজের বৈঠকের ন্যায় বসতে অপারগ, তারা চেয়ারে বসে সূরা, কেরাত পড়ে, রুকু, সাজদায় ঝুকে নামাজ আদায় করে থাকেন। মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফের মুফতি সাহেবানসহ বিশ্বের কোন অভিজ্ঞ ফক্বীহ্ উক্ত পন্থাকে সুস্পষ্টভাবে শরীয়তের দৃষ্টিতে নাজায়েয বলে ফতোয়া প্রদান করেন নাই। বরং মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীতে কর্তৃপক্ষ এ ধরনের রোগী ও অক্ষম মুসল্লিদের জন্য অসংখ্য চেয়ারের ব্যবস্থা রেখেছেন। প্রিয়নবী রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম, খোলাফায়ে রাশেদা, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, তবে তাবেঈন, মুজতাহিদ ইমামগণ একান্ত অপারগ ও অক্ষম নামাজির জন্য চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করতে নিষেধ করেন নাই। এটাই বৈধ ও মুবাহ্ হওয়ার জন্য যথেষ্ট। আর ইসলাম ধর্মেও অন্যতম একটি মূলনীতি হল-শরীয়তের বিধিবিধান এর ক্ষেত্রে সহজতা অবলম্বন করা ও জটিলতা সৃষ্টি না করা। যা হাদীসে রাসূল দ্বারা প্রমাণিত। বিশেষ প্রয়োজনে অনেক নিষিদ্ধ বস্তুও মুবাহ্/জায়েয হয়ে যায়। কিতাবুল আশবাহ্ ওয়ান্নাযায়ের, কৃত. ইমাম ইবনে নুজাইম মিশরী হানাফী (রহ.)। বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন প্রফেসর আল্লামা মুফতি মুনিবুর রহমান তাঁর রচিত তাফহিমুল মাসায়েল তৃতীয় খ-ে ১৭নং প্রশ্নের উত্তরে উপরোক্ত ফায়সালা প্রদান করেছেন। দেশের দ্বীনি অরাজনৈতিক সংস্থা আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট চট্টগ্রাম কর্তৃক প্রকাশিত মাসিক তরজুমান-এ আহলে সুন্নাত প্রশ্নোত্তর বিভাগে একাধিকবার উক্ত মাসআলা এভাবে আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং বিভিন্ন মিডিয়া, চ্যানেল, অনলাইনে, পেইজবুক এবং পেপার পত্রিকায় ‘চেয়ারে বসে নামাজ আদায় জায়েযের প্রমাণ নেই’ ‘চেয়ারে বসে নামাজ আদায়ের বৈধতা দানের অবকাশ থাকে না’ এবং ‘চেয়ারে বসে নামাজ আদায় বৈধ নয়’- এ জাতীয় কথা বলা বিভ্রান্তিকর। উপরোক্ত ফায়সালায় আমার সাথে ঐক্যমত পোষণ করেছেন চট্টগ্রাম জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ার প্রধান ফক্বীহ্ আল্লামা কাজী আবদুল ওয়াজেদ, জামেয়ার প্রধান মুহাদ্দিস আল্লামা হাফেজ সোলায়মান আনসারী, চট্টগ্রাম সোবহানিয়া আলিয়ার প্রধান মুহাদ্দিস আল্লামা কাজী মঈনুদ্দিন আশরাফী, জামেয়ার প্রধান মুফাসসির আল্লামা কাজী ছালেকুর রহমান আলকাদেরীসহ সনামধন্য ওলামায়ে কেরাম প্রমুখ। পাক-ভারত উপমহাদেশের প্রখ্যাত মুফতি আল্লামা প্রফেসর মুনিবুর রহমান সাহেব উপরোক্ত বিষয়ে বলেন-
معذور نمازى كوچاهيۓ كه بيٹه كر نمازپڑھے اگر زمين پر بيٹھنا اسكےلۓ دشوار هےتو كرسى پر بيٹه كر نمازپڑھ سكتاهے البته ركوع سجود اشارےسےكرےركوع كيلۓ مناسب حدتد جھكےاور سجدےكيلۓ اس سےزياده جھكے اسى كو اشارےسےركوع وسجده كرنا كهتےهيں كسى ميز يا تخته يا بينچ پرسرركھ كر سجده نه كرےيه مكروه تحريمى هے[تفهيم المسائل ـ جلد سوم ـ صفهحه ৬১ـ৬২]
অর্থাৎ মাযূর তথা দাড়িয়ে নামায আদায় করতে অক্ষম নামাযী বসে নামায আদায় করবে। যদি জমিনের উপর (নামাযের বৈঠকের ন্যায়) বসা তার জন্য কঠিন হয় তখন চেয়ারে বসে নামায আদায় করতে পারবে। তবে রুকু-সাজদা ইশারায় আদায় করবে। রুকুর জন্য নিয়ম মত ঝুঁকবে আর সাজদার জন্য একটু বেশী ঝুঁকবে। এটাকে ইশারায় রুক-সাজদা করা বলা হয়। সামনে কাঠ জাতীয় কিছু অথবা বেঞ্চ রেখে তার উপর সাজদা যেন না করে। করলে মাকরূহে তাহরীমা হবে। [তাফহিমুল মাসায়েল, ৩য় খ-, পৃ. ৬১-৬২]
ইসলামী ফিকহের অন্যতম গ্রন্থ হেদায়ায় বর্ণনা করা হয়েছে-ولايرفع الى وجه شئ يسجد عليه لقوله عليه الصلوة والسلام ان قدرت ان تسجد على الارض فاسجدوا والا فاوم براسك الحديث অর্থাৎ যে মুসল্লি দাড়িয়ে নামায পড়তে অক্ষম সে বসে নামায আদায় করবে আর সাজদা করার জন্য কিছু চেহারা/কপালের দিকে উঠাবে না। যেহেতু রাসূলে পাক এরশাদ করেছেন- যদি তুমি জমিনে সাজদা করতে সক্ষম হও তবে জমিনে সাজদা করবে আর যদি জমিনে সাজদা করতে সক্ষমতা না রাখ তবে মাথা ঝুঁকিয়ে ইশারা করে সাজদা আদায় করবে।
[হেদায়াباب صلواة المريض অর্থাৎ রুগ্ন ব্যক্তির নামায অধ্যায়, ১ম খন্ড, ১৪৪পৃ. কৃত. ইমাম ফরগানী মরগিনানী হানাফী রহ.]
ইমাম বজ্জাজ রহ. ও ইমাম বায়হাকী (রহ.) বিশিষ্ট সাহাবী হযরত জাবের রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণনা করেছেন- হযরত জাবের রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন যে, রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এক অসুস্থ সাহাবীকে দেখতে গেলেন তখন তিনি (অসুস্থ সাহাবী) বালিশ/তাকিয়ার) উপর সাজদা আদায় করছিলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম তাঁর সম্মুখ হতে বালিশ/তাকিয়াটি নিক্ষেপ করেছিলেন। অতঃপর তিনি (রুগ্ন সাহাবী) কাট নিয়েছিলেন তার উপর সাজদা করার জন্য। রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম তাও নিক্ষেপ করে এরশাদ করলেন, যদি তুমি জমিনের উপর সাজদা করতে সক্ষম হও তবে জমিনের উপর সাজদা কর আর যদি অক্ষম হও তবে মাথা ঝুকিয়ে ইশারা করে সাজদা কর।
[হাশিয়ায়ে হেদায়া, কৃত. মাওলানা আবদুল হাই লখনভী, ১ম খন্ড, ১৪৪পৃ.]
সুতরাং যারা দাঁড়িয়ে বা জমিনে বসে নামায আদায় করতে অক্ষম তাদের জন্য ঘরে/অফিসে মসজিদের কাতারে এক পার্শ্বে চেয়ারে বসে সূরা কেরাত পড়ে রুকু, সাজদায় মাথা ঝুকিয়ে ইশারায় নামায আদায় বৈধ ও জায়েয। তবে দাঁড়িয়ে অথবা জমিনে বসে নামায আদায় করা সক্ষম ব্যক্তি চেয়ারে বসে নামায পড়ার সুযোগ গ্রহণ করবে না, এটা একমাত্র দাঁড়িয়ে ও জমিনে বসে নামায আদায়ে অপারগ ও সম্পূর্ণ অক্ষম ব্যক্তির জন্য।
উল্লেখ্য যে, প্রিয়নবী, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তবে তাবেয়ীন, মুজতাহিদ, ইমামগণের কেউ চেয়ারে বসে নামায আদায়ের প্রমাণ পাওয়া যায় না। এ কথা বলে অক্ষম মুসল্লীদের জন্য চেয়ারে বসে নামায আদায় করাকে অবৈধ বলা যাবে না। যেহেতু উনারা কেউ নিষেধ করেছেন- এ ধরনের প্রমাণও পাওয়া যায় না। আর এটা বৈধ ও জায়েয হওয়ার জন্য যথেষ্ট।
আরো উল্লেখ থাকে যে, ক. চেয়ারে বসা অবস্থায় মাথা-কপাল মাটি হতে দূরে সরে যাচ্ছে, খ. মসজিদে চেয়ার ঢুকিয়ে আসন গ্রহণ করা রাজাধিরাজ, বাদশাহ্, আহকামুল হাকীমিনের দরবারে আদব পরিন্থী, গ. চেয়ার দ্বারা মসজিদের কাতারের বিঘœ ঘটে। ‘মসজিদের চেয়ারে আসন পাতায় বিধর্মীদের সঙ্গে সাদৃশ্য হয়ে থাকে।’ ইত্যাদি এসব কথা কল্পকাহিনীও অহেতুক। যেহেতু চেয়ারে বসে নামায আদায়ের বৈধতা একমাত্র অপারগ ও অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য সকলের জন্য নয়। সুতরাং ওইসব অহেতুক কথাগুলো অক্ষম ব্যক্তিদের বেলায় প্রযোজ্য নয়; সুতরাং উপরোক্ত বিষয়ে বিভ্রান্তির শিকার না হওয়ার জন্য সকল ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের প্রতি আহ্বান রইল।
মুহাম্মদ আবদুল আহাদ
চন্দনাইশ, ট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: অবৈধভাবে যেনা/ব্যভিচারের কারণে যদি কোন মহিলা গর্ভবতী হয়ে যায়। গর্ভাবস্থায় উক্ত রমনীকে ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক বিবাহ্ করা এবং বিবাহের পর স্বামী-স্ত্রী হিসেবে সহবাস করা জায়েয/বৈধ কিনা? ইসলামী শরিয়তের নির্ভরযোগ্য কিতাবের উদ্ধৃতি তথা প্রমাণসহ আলোচনা করার অনুরোধ রইল।
উত্তর: কোন মহিলা যদি অন্য কোন পরপুরুষের সাথে অবৈধ যেনার কারণে গর্ভবতী হয়ে যায় তাকে গর্ভাবস্থায় যেনাকারী পুরুষ আকদ/বিবাহ্ করতে পারবে এবং আকদ/বিবাহের পর উভয়ে (স্বামী-স্ত্রী) সহবাসও করতে পারবে। আর যেনার কারণে গর্ভবতী মহিলাকে যেনাকারী ছাড়া অন্য পুরুষও গর্ভাবস্থায় ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক আকদ/বিবাহ্ করতে পারবে। উক্ত আকদ/বিবাহ্ শুদ্ধ/ছহি হবে এবং উক্ত মহিলা স্মামীর বৈধ স্ত্রী হিসেবে সাব্যস্ত হবে। তবে গর্ভ প্রসব হওয়া পর্যন্ত বিবাহকারী/স্বামী উক্ত মহিলার সাথে সহবাস করতে পারবে না। যেমন- মুখতাছারুল কুদুরী ও হেদায়াতে নিকাহ্ অধ্যায়ে বর্ণনা করা হয়েছে-وان تزوج حبلى من زناء جاز النكاح ولايطاها حتى تضع حملها وهذا عند ابى حنيفة ومحمد رضى الله عنهما …ولهما انها من المحلات بالنص (اى قوله تعالى احل لكم ما وراء ذالكم…الاية (هداية, كتاب النكاح، جلد دوم ـ ص ـ ২৯২ـ ২৯১] অর্থাৎ যদি কোন মহিলা অন্য কোন পরপুরুষের সাথে অবৈধভাবে যেনায় লিপ্ত হওয়ার কারণে গর্ভবতী হলে উক্ত গর্ভবতী মহিলাকে কোন পুরুষ আকদ/বিবাহ্ করা জায়েয। আকদ/বিবাহ্ শুদ্ধ/সহি হবে এবং উক্ত মহিলা তার বৈধ স্ত্রী হিসেবে সাব্যস্ত হবে। তবে উক্ত মহিলা গর্ভ প্রসব করা পর্যন্ত স্বামী উক্ত মহিলার সাথে সহবাস করবে না। এটাই ইমামে আযম হযরত আবু হানিফা (রহ.) এবং ইমাম মুহাম্মদ রহ.র মাযহাব ও অভিমত। হযরত ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ও ইমাম মুহাম্মদ (রহ.)’র দলিল হল যে, উক্ত মহিলা পবিত্র কোরআনের আয়াত দ্বারা বিবাহ্ করা বৈধ রমণীদের অন্তর্ভুক্ত। এটার উপর ফতোয়া দেয়া হয়েছে। আল্লাহ্ তাআলা এরশাদ করেন- احل لكم ما وراء ذالكم অর্থাৎ তারা (মা, কন্যা, ভগ্নি, ফুফু, খালা, ভাতিজি, ভাগিনী, দুধ মা প্রমুখ) ছাড়া বাকিদের বিবাহ্ করা তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে।
[সূরা নিসা, আয়াত-২৪, ফতহুল কদির, শরহে হেদায়া-কৃত. ইবনুল হুম্মাম হানাফী রহ., আল বাহরুর রায়েক শরহু কানযুদ্ দাক্বায়েক কৃত. ইবনে নুজাইম হানাফী রহ., ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া (আলমগীরী) বিবাহ্ অধ্যায়ে অনুরূপ বর্ণনা করা হয়েছে]
মুহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক
লংগধু, রাঙ্গামাটি, পার্বত্য জেলা
প্রশ্ন: জনৈক আলেম বলেছে – জুমার ফরজ নামজের আগে কোন সুন্নত নামাজ নাই। কবলুল জুমা নাকি ফালতু নামাজ! এটা সঠিক কিনা? এ ধোকা থেকে মুসলিম সমাজকে রক্ষার প্রমাণসহ জানানোর জন্য অনুরোধ করছি।
উত্তর: এমন উক্তি মূর্খতা, জ্ঞানের দৈন্যদশা এবং ইসলাম ও শরীয়ত বিরোধী। সাধারণ ও সরল মনা মুসলমানদেরকে দ্বীন-র্ধম হতে বিমুখ করার পাঁয়তারা ও ইসলাম বিদ্ধেষী মুনাফিক চক্রের গভীর ষড়যন্ত্র। জুমার ফরজ নামাযেরে পূর্বে এবং পরে চার (৪) রাকাত করে সুন্নাত নামাজ নির্ভরযোগ্য হাদীস শরীফ ও ইসলামী শরীয়ত র্কতৃক প্রমাণিত। এ প্রসঙ্গে বহু প্রমাণ হাদীসে পাক বিদ্যমান। যা অস্বীকার করার কোন প্রকার সুযোগ নেই। যেমন-
عن أبي هريرة رضى الله عنه قال قال رسول
الله صلى الله عليه وسلم من كان مصليا فليصل
قبل الجمعة اربعا وبعدها اربعا
অর্থাৎ সর্বাধিক হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন প্রিয়নবী রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি জুমার (ফরজ) নামায আদায় করতে চায়, সে যেন জুমার (ফরজের) পূর্বে চার (৪) রাকাত ও পরে চার (৪) রাকাত নামায আদায় করে।
[শরহে মুশকিলুল আছার, হাদিস নং-৪১০৮, কৃত. ইমাম তাহাবী রহ: মুহাদ্দেসিন এ হাদীসটিকে সহীহ (বিশুদ্ধ) এবং নির্ভরযোগ্য বলেছেন]
অপর এক হাদীসে উল্লেখ রয়েছে- عن على رضى الله عنه قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يصلى قبل الجمعة اربعا وبعدها اربعا يجعل التسليم في آخر هن ركعة অর্থাৎ মুশকিল কুশা হযরত আলী রাদ্বয়িাল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বললেন, প্রিয়নবী আল্লাহর রাসূল জুমুআর (ফরজের) পূর্বে ৪ রাকাত ও পরে ৪ রাকাত সুন্নাত আদায় করতেন। এবং শেষ রাকআতে তিনি সালাম ফিরাতেন।
[মু’জামুল আওসাত, ২য় খন্ড, ১৬১৭ নং হাদীস, পৃ. নং- ৩৬৮, কৃত, ইমাম তাবরানী রহ:]
এভাবে আরকেটি সহীহ্ হাদীস উল্লেখযোগ্য, যেমন-
عن قتادة ان ابن مسعود كان يصلي قبل الجمعة اربع ركعات وبعدها اربع ركعات قال ابو اسحاق وكان على يصلى بعد الجمعة ست ركعات
অর্থাৎ প্রখ্যাত রাবী হযরত কাতাদাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নিশ্চয় রইসুল ফোকাহা প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু জু‘মুআর পূর্বে ৪ রাকাত ও পরে ৪ রাকাত পড়তেন। হাদিস বর্ণনাকারী হযরত আবু ইসহাক্ব (রহ.) বলেন, হযরত আলী রাদ্বয়িাল্লাহু আনহু জুমার পর ৬ রাকাত (৪ রাকাত বা’দাল জুমা, সুন্নাতে মুয়াক্কাদা ও ২ রাকাত সুন্নাত) পড়তেন।
[মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, ৩য় খন্ড, ৫৫২৪ নং হাদীস, ২৪৭ নং পৃ: সনদটি সহীহ]
সুতরাং আলোচ্য হাদীস শরীফ সমূহ হতে প্রতীয়মান হয় যে, জুমুআর ফরজ নামাযের পূর্বে অর্থাৎ খোতবার পূর্বে ৪ রাকাত কাবলাল জুমুআর এবং পরে ৪ রাকাত বা’দাল জুমআ আদায় করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। পাশাপাশি ৪ রাকাত বা’দাল জুমার পর ২ রাকাত সুন্নাত বা নফল নামায আদায়ের প্রচলন ইসলামের ৪র্থ খলিফা সৈয়্যদুনা মাওলা আলী রাদ্বিয়াল্লাহু হতে প্রমাণিত। সাহাবায়ে কেরাম বিশেষত খোলাফায়ে রাশেদা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতিটি বিষয়ে অনুসারী ছিলেন। আর খোলাফায়ে রাশেদার অনুসরণ করার ব্যাপারে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করছেনে- عن عرباض بن سارية قال قال رسول الله عليه وسلم عليكم بسنتى وسنة الخلفاء الراشدين المهديين অর্থাৎ হযরত ইরবাজ ইবনে সারিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বললেন, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করছেনে- তোমাদের জন্য আমার ও আমার হেদায়তপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত অনুসরণ করা আবশ্যক।
[সুনানে আবু দাউদ-৪৬০৭; জামে তিরমিযী শরীফ-২৬৭৬, সুনানে ইবনে মাজাহ্- ৪২নং হাদিস]
সুতরাং এসব ভ্রান্ত ও জাহেল মৌলভীর কথা না শুনে উপরোক্ত র্বণনা অনুযায়ী আমল করাই শরীয়তের বিধান। তাই কিতাবুল আশবাহ্ ওয়ান্নাযায়ের সহ অনেক নির্ভরযোগ্য ফিকহের কিতাবে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্ নামাযের বর্ণনায় আদায়ের পর জুমার ফরযের পূর্বে চার রাকাত ও পরে চার রাকাতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পরম করুণাময় আল্লাহ্ তা‘আলার ইবাদত ও স্মরণ হতে যারা মানুষকে বাঁধা দেয় তাকে বড় জালেম (বড় গুনাহগার) বলা হয়েছে পবিত্র কোরআনে। আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদেরকে নামায-কালেমা ও ইবাদত-বন্দেগী বেশী বেশী করার যেন তাওফিক দান করেন। আমিন।
দু’টির বেশি প্রশ্ন গৃহীত হবেনা একটি কাগজের পূর্ণপৃষ্ঠায় প্রশ্ন লিখে নিচে প্রশ্নকারীর নাম, ঠিকানা লিখতে হবে
প্রশ্নের উত্তর প্রকাশের জন্য উত্তরদাতার সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ বাঞ্ছনীয় নয়। প্রশ্ন পাঠানোর ঠিকানা:
প্রশ্নোত্তর বিভাগ, মাসিক তরজুমান, ৩২১, দিদার মার্কেট (৩য় তলা), দেওয়ান বাজার, চট্টগ্রাম-৪০০০।