সফরনামা ঃ দরবারে সিরিকোট হতে আরব আমিরাত
অধ্যক্ষ মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ অছিয়র রহমান আলকাদেরী >
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মারকাজ বা প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রাম জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা হতে ২০২২ ইংরেজির ফেব্রুয়ারিতে সরকারিভাবে অবসর গ্রহণ করি। এ সময় হারামাইন শরিফাইনের (মক্কা শরীফ ও মদিনায়ে তৈয়্যেবা),খাজায়ে খাজেগান, সুলতানুল হিন্দ গরিবে নেওয়াজের দরবার ও দরবারে সিরিকোট শরীফ জিয়ারতের বড় ইচ্ছা জাগল। আলহামদুলিল্লাহ সুম্মা আলহামদুলিল্লাহ- বড়ই চমৎকার ও সুন্দর পরিবেশে মনের আকুতি ও ইচ্ছা রাব্বুল আলামিন কবুল করেছেন- শোকর গুজারী করার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। মাওলা তাআলা কত বড় মেহেরবান-তাঁর অপার দয়া ও অসীম কৃপার কুল কিনারা কেউ খুঁজে পাইনি, পাওয়া যাবে না কেয়ামত পর্যন্ত। অবসরে- আসার পর হতে একাধিকবার ওমরা ও রওজায়ে নববীর জিয়ারতের সুযোগ হয়ে গেল অতি সহজে। গরিবে নেওয়াজের দরবার আজমির শরীফ জিয়ারতের আকাক্সক্ষা পূরণ হয়েছে ১৪৪৪ হিজরি মোতাবেক ২০২৩ ইংরেজির রমজানুল মোবারকের আগে। ভারতে সফর সঙ্গী হিসেবে ছিলেন চট্টগ্রাম সোবহানিয়া কামিল মাদরাসার অবসরপ্রাপ্ত মুফতি বন্ধুবর মাওলানা আনোয়ার হোসাইন, চট্টগ্রাম জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসার আরবি প্রভাষক ইমামে আহলে সুন্নাত আল্লামা গাজী সৈয়দ আজিজুল হক আল কাদেরী (ইমাম শেরে বাংলা রহঃ)‘র দৌহিত্র আলহাজ্ব মাওলানা সৈয়দ ইউনুস রজভী, চট্টগ্রাম চন্দনাইশ এলাহাবাদ আহমদীয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ স্নেহের মাওলানা রফিকুল ইসলাম আলকাদেরী, পটিয়া চরকানাই বড় মাওলানা সাহেব ও বড় হাফেজ সাহেব রহমাতুল্লাহি আলাইহিমা এর আওলাদ শাহজাদা আলহাজ্ব হাসান ও পটিয়া গাউছিয়া কমিটি বাংলাদেশের একনিষ্ঠ খাদেম স্নেহের মাওলানা নাসিম। মাশাআল্লাহ- হিন্দুস্থানের বিভিন্ন দরবারে যা কয়দিন তাঁদের সাথে ছিলাম বড় আনন্দে কেটেছে। সবাই আওলিয়া কেরামের প্রেমে দেওয়ানা, তাঁদের ইখলাস ও আন্তরিকতাকে স্মরণ করতে হয় শ্রদ্ধাভরে। আল্লাহ তাঁদেরকে নেক প্রতিদান নসিব করুন! আমিন। পবিত্র হারামাইন শরিফাইনের সফরে সফর সঙ্গী ছিলেন স্নেহের ওসমান আলী, মুনির ও সৈয়দ মহিবুল হক ইঞ্জিনিয়ার (মেখল, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম) প্রমূখ । সিরিকোট দরবার শরিফের যাত্রা পথে পরিচিত কাউকে সফর সঙ্গী হিসাবে পেলাম না সত্য,পাকিস্তান ও দুবাইয়ের ভিজিট ভিসা পাওয়া থেকে শুরু করে প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহ-রাসুল ও মাশায়েখ হযরাতের দয়া ও কৃপা শামেলে হাল ছিল বর্ণনার বাইরে। কথায় আছে-আমেরিকার ভিসা সহজে পাওয়া যায় কিন্তু পাকিস্তানের ভিসা পাওয়া কঠিন। মজবুত ওয়াসেতা না হলে পাকিস্তানের ভিসা পাওয়া যায় না। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এর দরবারে লক্ষ কোটি শোকর। আমি যখন পাকিস্তান এম্বাসি গুলশান অফিসে নির্ধারিত সময়ে আমার স্নেহের আলহাজ্ব মাওলানা সুফি সালাহ্ উদ্দিন কাদেরি (হাটহাজারী চট্টগ্রাম) কে সাথে নিয়ে সাক্ষাৎকারের জন্য গেলাম তিনজন অফিসার আমার থেকে সাক্ষাৎকার নিলেন। আমি যখন বললাম-“সিরিকোট দরবার শরিফ জিয়ারত কো জানা হে, পীর সাবির শাহ কা ঘর ম্যারা পিরখানা হ্যায়”- অর্থাৎ আমি পাকিস্তান সিরিকোট দরবার শরীফ জিয়ারতে যাওয়ার আশা করেছি। বর্তমান হুকুমতে পাকিস্তানের সিনেটর পীর সাবির শাহর বাসভবন আমার পীর মুর্শিদের দরবার। তিনজন অফিসার আমার কাগজ পত্র দেখে এবং আমার কথাবার্তা শুনে মুগ্ধ হলেন। কয়েক দিনের মধ্যে অনলাইনে ভিসা পাঠিয়ে দিলেন। গত ৩০ মে ২০২৩ ইংরেজি মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭:৩০ মিনিট এ ঢাকা টু দুবাই হয়ে এমিরেট্স এয়ারলাইন্স (বিমান) যোগে পরদিন ৩১ মে বুধবার সকাল ৭:৩০ মিনিটে পাকিস্তান ইসলামাবাদ বিমানবন্দরে সহি সালামতে পৌঁছে গেলাম। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে যখন বের হলাম, তখন দেখলাম আমি অধমের জন্য গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছেন হুজুর কেবলা হযরত পীর সৈয়দ তাহের শাহ মুদ্দাজিল্লুহুল আলীর বড় সাহেবজাদা আলহাজ্ব সৈয়দ কাশেম শাহ মুদ্দাজিল্লুহুল আলী। তিনি একজন ব্যারিস্টার ও সিনিয়র লয়ার। বর্তমান সিরিকোটসহ গাজা এলাকার মেয়র। সালাম বিনিময়ের পর লজ্জায় মাথা অবনত হয়ে গেল। সকাল বেলা গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। সাহেবজাদা হুজুর বললেন-‘কুয়ী বাত নেহি হ্যায়। আপকো লানে কেলিয়ে পীর সাবির শাহ হুজুর নে মুঝে বেঝাহেয়’ অর্থাৎ আপনাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য পীর সাবির শাহ হুজুর আমাকে পাঠিয়েছেন। এক ঘন্টা সোয়া এক ঘণ্টার মধ্যে সিরিকোট দরবার শরীফে পৌঁছে গেলাম। দরবারে তিন দিন ছিলাম। ইতিপূর্বে ৫-৬ বার সিরিকোট দরবার শরীফ জিয়ারতের সুযোগ হয়েছিল। মুর্শিদে করিম আলম বরদারে আহলে সুন্নাত গাউছে জামান লাখো লাখো মুরিদ ভক্তের নয়নমনি হুজুর আল্লামা হাফেজ কারী সৈয়দ মোহাম্মদ তৈয়ব শাহ’র জীবদ্দশায় (হায়াতে জাহেরিতে) জামেয়ার প্রতিষ্ঠাতা দাদা হুজুর কেবলা আলে রাসুল পেশোয়ায়ে আহলে সুন্নাত হাফেজ কারী আল্লামা সৈয়দ আহমদ শাহ সিরিকোটি রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর পবিত্র ওরস শরীফ ও আল্লামা পীর সাবির শাহ মুদ্দাজিল্লুহুল আলী হুজুরের অলিমায় সিরিকোট শরীফ যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। পরবর্তীতে সাহেবজাদা হুজুর সৈয়দ কাশেম শাহ মুদ্দাজিল্লুহুল আলীর অলিমায়ও অংশগ্রহণ করেছিলাম। কত স্মৃতি, কত কথা সিরিকোট দরবার শরীফের-কত ঐতিহ্য অন্তরে রেখাপাত করছে যার বিবরণ পেশ করার জন্য দপ্তরের পর দপ্তর প্রয়োজন হবে তারপরও শেষ করা যাবে না। তবে ২০১২ ইংরেজির পর এ যাবৎ আর যাওয়া হয়নি। দরবারের আদব-কায়দা ও মেহমানদারী সম্পর্কে পূর্ব হতে ধারণা ছিল। যেখানে স্বয়ং মেহমানদারীর যাবতীয় দায়িত্ব ( চা-নাস্তা, খানাপিনা ইত্যাদি) নিজ হাতে পালন করেছেন হযরত শাহ সুফি মাওলানা পীর সাবির শাহ মুদ্দাজিল্লুহুল আলী, সাহেবজাদা হযরত সৈয়দ কাশেম শাহ মুদ্দাজিল্লুহুল আলী ও হযরত মাওলানা হাফেজ কারী সৈয়দ আহমদ শাহ মুদ্দাজিল্লুহুল আলী,যিনি বর্তমানে সিরিকোট দরবার শরীফ মাদ্রাসায়ে তৈয়্যবুল উলুম এর মোহতামিম (অধ্যক্ষ ও নাজেমে আ’লা এবং সিরিকোট দরবার শরীফ জামে মসজিদের সম্মানিত খতিব) সেখানে কি চুপ করে বসে থাকা যায়? মনে চাই এখনই উড়াল মারতে। কিন্তু সিরিকোট দরবার শরীফে কুতুবুল আউলিয়া বানিয়ে জামেয়া শাহেন শাহে সিরিকোট রাহমাতুল্লাহি আলাইহির ওরস শরীফে উপস্থিতি অবশ্যই নসিবের ব্যাপার। দীর্ঘ সময়ের পর নসিব হল। একের পর এক হযরাতে কেরামের সাথে বিশেষতঃ মওজুদা হুজুর কিবলা রাহনুমায়ে শরীয়ত ও তরিকত হাদিয়ে দ্বীনো মিল্লাত শাহ সুফি আল্লামা হযরত সৈয়দ মোহাম্মদ তাহের শাহ মুদ্দাজিল্লুহুল আলী, পীরে বাঙ্গাল আল্লামা সৈয়দ মোহাম্মদ সাবির শাহ মুদ্দাজিল্লুহুল আলী, সাহেবজাদা হযরত কাশেম শাহ, সাহেবজাদা হযরত হামেদ শাহ, সাহেবজাদা হযরত মাওলানা হাফেজ ক্বারী সৈয়দ আহমদ শাহ, সাহেবজাদা হযরত আকিব শাহ, ওরস শরীফে আগত মেহমানদের সাথে বিশেষতঃ করাচি, পেশোয়ার, ইসলামাবাদ, হরিপুর, সিরিকোট, হাজারা এবং গাজার অনেক ভক্ত অনুরক্তের সাথে মুলাকাত হল। মুসলিম উম্মাহ বিশেষ করে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চলের পীর ভাই-বোন গাউসিয়া কমিটির মোখলিস খেদমতগার, ওরস শরীফে আগত মেহমানদের জন্য পীরে বাঙ্গাল আল্লামা সৈয়দ মোহাম্মদ সাবির শাহ মুদ্দাজিল্লুহুল আলী’র দোয়া-মোনাজাত, প্রতি ওয়াক্তে বা-জামাত নামাজের পর জিয়ারত, দুই দিনব্যাপী ওরস শরীফের সকল কর্মসূচি- প্রথম দিবস ১ লা জুন ২০২৩ ইংরেজি জোহরের নামাজের পর হতে তেলাওয়াতে কুরআন, মাগরিবের নামাজের পর হতে হামদ-না’ত এবং এশার নামাজের পর মিলাদ-কিয়াম, দোয়া-মোনাজাত ও তাবরুক বিতরণ, দ্বিতীয় দিবস- ২রা জুন ২০২৩ শুক্রবার বেলা ১১ ঘটিকা হতে সিরিকোট দরবার শরীফ জামে মসজিদে হামদ-না’তের পর বয়ান-তকরীর ও নামাজে জুমা, তারপর মিলাদ কিয়াম ও আখেরি মোনাজাত অতঃপর তবররুকাতের বিশাল আয়োজন সত্যি আমাকে মুগ্ধ করেছে। মনে হচ্ছে যেন সিরিকোট দরবারে অবস্থানরত এই তিন দিন আমার হায়াতের মুল সময় ও আমার নাজাতের অন্যতম উসিলা-যেভাবে ইমামে আজম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছিলেন- যদি আমার হায়াতে দুই বছর না হতো আমি (আবু হানিফা নোমান) ধ্বংস হয়ে যেতাম। যে দুই বছর তিনি আলে রাসুল হযরত সৈয়দুনা ইমাম জাফর সাদেক রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর সান্নিধ্য ছিলেন। ওঠাই তার জীবনের মুল অংশ। ঠিক আমারও প্রাণের দাবি-সিরিকোট দরবার শরীফের সফর ও অবস্থান, হযরাতে কেরামের সান্নিধ্যে সময় অতিবাহিত করার দুর্লভ সুযোগ আমার জীবনের মুল অংশ এবং পরকালে নাজাতের অন্যতম ওসিলা। ওরস শরীফের দ্বিতীয় দিন আমার সাথে পাঞ্জাব হতে আগত একজন আলেমেদ্বীনের বয়ান হয়েছিল। পেশোয়ার হতে আগত এক বয়স্ক পীর ভাইয়ের সঞ্চালনা ও অপরজন পীর ভাইয়ের সালাত- সালাম পাঠ, বিশেষত পীরে বাঙ্গাল পীর সাবির শাহ মুদ্দাজিল্লুহুল আলী হুজুরের মুসলিম উম্মার জন্য বিশেষ দোয়া আমাকে ও বিভিন্ন অঞ্চল হতে আগত হাজার হাজার মেহমানদেরকে উৎফুল্ল করেছে। মূলত হযরত পীর সাবির শাহ হুজুরের মুনাজাতে নেহায়ত সাবলীল ভাষায় মুনাফিক-বাতিল ও বদ আকিদার লোকদের সংস্পর্শ হতে বেঁচে থাকার নসিহত ছিল অত্যন্ত গুরুত্ব ও তাকিদ সহকারে। যা প্রত্যেক মুসলমানের ঈমান রক্ষার জন্য বড় হাতিয়ার। ওরস শরীফের শেষ দিবসে আরেকটি আকর্ষণীয় দিক হলো আখেরি মোনাজাত পর্যন্ত ওরস শরীফের শুরু থেকে অসংখ্য মেহমানদের সাথে সাধারণ মুসল্লীগণের কাতারে মসজিদের কাতারে বসে ছিলেন মাহফিলের মধ্যমনি হযরত পীর সাবির শাহ, শাহজাদা হযরত কাসেম শাহ, শাহজাদা হযরত সৈয়দ হামেদ শাহ, শাহজাদা অধ্যক্ষ হযরত মাওলানা সৈয়দ আহমদ শাহ ও শাহজাদা সৈয়দ আকিব শাহ প্রমূখ। তাঁদের মধ্যে নাই কোন আমিত্ব, অহংকার ও গৌরবের লেশ মাত্র! আমার তকরির যখন চলমান চতুর্দিকে নারায়ে তাকবীর, নারায়ে রিসালত, দরুদ শরিফের ধ্বনি আর প্রতিধ্বনি। তখন উন্নতমানের একটি চেয়ার আনা হল- মনে করেছিলাম হুজুর পীর সাবির শাহ মুদ্দাজিল্লুহুল আলী বসবেন। যেহেতু তিনি মাহফিলের মধ্যমনি ও মীরে মজলিস। আর কেবলা হযরত সৈয়দ মোহাম্মদ তাহের শাহ মুদ্দাজিল্লুহুল আলী মসজিদের একপাশে জুমার নামাজ আদায়ের জন্য একটি নরমাল চেয়ারে বসে আছেন। পীর সাবির শাহ উক্ত চেয়ারে বসলেন না- বসালেন পাঞ্জাব থেকে আগত মাওলানা সাহেবকে। তিনি সাবির শাহ হুজুরকে অনেক মিনতি করলেন- এতগুলো জ্ঞানী গুণী আলিম উলামা বিশেষত সাবের শাহ হুজুরের সামনে চেয়ারে না বসার জন্য, কিন্তু হুজুর উনাকে চেয়ারে বসে তকরির করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করলেন। অথচ তিনি সাহেবজাদা হযরত সৈয়দ কাশেম শাহ ও সাহেবজাদা হযরত সৈয়দ হামেদ শাহ হুজুরের চেয়ে বয়সে বড় হবেন না। বরং ছোট হবেন। ওলামায়ে কেরাম কে কিভাবে সম্মান দিতে হয় সিরিকোট দরবার শরীফের আওলাদে পাক হতে শিক্ষা গ্রহণের অনেক কিছু আমাদের বাকি আছে। পরিতাপের বিষয় হলো আমরা সিরিকোট শরীফ জিয়ারত করি কিন্তু কুতুবুল আউলিয়া বানিয়ে জামিয়া শাহ সুফি হযরত সৈয়দ আহমদ শাহ সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহি আলাইহির নসল ও সাহেবজাদা গনের সুন্দর চরিত্র, সুন্নি ওলামায়ে কেরামের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের আদর্শ ও শিক্ষনীয় বিষয়গুলো আমরা অনেকেই গ্রহণ করি না। যদি গ্রহণ করতাম আমার প্রানের দাবি আমাদের তকদির পরিবর্তন হয়ে যেত নিঃসন্দেহে। হুজুর কেবলা রাহনুমায়ে শরীয়ত ও তরিকত আল্লামা হাফেজ কারী সৈয়দ মোহাম্মদ তৈয়ব শাহ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু অনেক সময় তকরিরে ও নসিহতের সময় এরশাদ ফরমাতেন- এমন এমন পীর ভাই-বোন ও সিলসিলার একনিষ্ঠ মুরিদান আছেন যিনি বেলায়তের মকাম ও মর্যাদা লাভে ধন্য হয়েছেন কিন্তু তাদের খবর নাই। সুতরাং যারা আমাদের হযরাতে কেরামের নূরানী আদর্শে আদর্শবান হয়েছেন তারা বেলায়েতের আসনে আসিন না হলে কে হবেন? হুজুর কিবলার (রহমতুল্লাহি আলাইহি) এই মহান নূরানী বানীর মর্ম বুঝার ও আমল করার তৌফিক আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদেরকে দান করেন- এ ফরিয়াদ জানাই মাওলা তালার পাক দরবারে। ১লা জুন ২০২৩ বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় সিরিকোট দরবার শরীফ মাদ্রাসায়ে তৈয়্যবুল উলুমের বিভিন্ন ক্লাস হযরত হাফেজ মাওলানা সৈয়দ আহমদ শাহ হুজুরের সাথে পরিদর্শন করার সুযোগ হয়। মাশাআল্লাহ! দরসে নেজামী মহিলা শাখায় প্রচুর ছাত্রী হাদিস বিভাগ পর্যন্ত প্রত্যেক ক্লাসে মনোযোগ সহকারে মুল কিতাব পড়তে দেখে বড় খুশি হয়েছি। ৩রা জুন শনিবার সকাল ১১ টায় চা-নাস্তা গ্রহণের পর সিরিকোট দরবার শরীফ হতে বিদায় গ্রহণের জন্য করাচি হতে ওরস শরীফে আগত পীর ভাই আশিক কাদেরি, ইমরান কাদেরী, ওয়াইস কাদেরী ও শাহাবুদ্দিন ভাই সহ হযরত পীর সাবির শাহ্, শাহজাদা হযরত সৈয়দ কাশেম শাহ,শাহজাদা সৈয়দ হামিদ শাহ ও সৈয়দ আকিব শাহ হতে অনুমতি ও দোয়া নেয়ার পর হুজুর কেবলা মুর্শিদে করীম হযরত আল্লামা সৈয়দ মোহাম্মদ তাহের শাহ মুদ্দাজিল্লুহুল আলী হুজুরের খেদমতে হাজির হই। আমাদের সাথে হুযুরের শাহজাদা আল্লামা হাফেজ সৈয়দ আহমদ শাহ হুজুরও ছিলেন, মস্কাট-ওমান হতে ওরস শরীফে যোগদানকারী চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার প্রবাসী আমার অত্যন্ত প্রিয় পীরভাই হাজী মফিজ সাহেবও হুজুর কেবলার হুজুরা শরীফে উপস্থিত ছিলেন, বিদায় মুহুর্তে মওজুদা হুজুর কিবলা জরুরী উপদেশ সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইরশাদ করেছেন। আমি গুনাহ্গার যখন হরিপুর খাজায়ে খাজেগান খাজা আব্দুর রহমান চৌহরভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহির মাজার শরীফ জিয়ারত এবং সেখান হতে লাহোর দাতাগঞ্জ বখশ ফয়জে আলম সৈয়দ আলী হাজবীরীর (রহমতুল্লাহি আলাইহির) মাজার শরীফ জিয়ারতের জন্য অনুমতি প্রার্থনা করলাম হুজুর কেবলা মুদ্দাজিল্লুহু আলী সম্মতি জ্ঞাপন করে বললেন উর্দুতে- ‘‘দাতা কা দরবার হাইকোর্ট হ্যায়’’ অর্থাৎ দাতার দরবার (বেলায়ত জগতের) হাইকোর্ট। যারা দূরদূরান্ত হতে সিরিকোট দরবার শরীফে জিয়ারতে আসেন, সম্ভব হলে আসা-যাওয়ার পথে যে কোন সময় তারা যেন দাতার দরবারে হাজিরা দেয়ার চেষ্টা করে। হুজুর আরো বললেন- ‘একবার সিরিকোট হতে বার্মা রেঙ্গুন যাওয়ার সময় হযরত কুতুবুল আউলিয়া সৈয়দ আহমদ শাহ সিরিকোটী রহমতুল্লাহি আলাইহি দাতার দরবারে হাজির হলে দাতা গঞ্জে বখশ রহমাতুল্লাহি আলাইহি রওজা শরীফের ভিতর হতে বাবাজি সিরিকোটি কে জিজ্ঞাসা করলেন – ইছ্ মরতাবা আপ বার্মা রেঙ্গুন জানে ম্যায় কিইউঁ দের কিয়া – অর্থাৎ এবার আপনি বার্মার রেঙ্গুন যেতে কেন বিলম্ব করলেন? সিরিকোটি হুজুর বললেন- বিশেষ প্রয়োজনে বিলম্ব হয়ে গেল- অতঃপর দাতা বললেন- ‘জানা হ্যায় মগর এক মাহিনা কে আন্দর আ জানা’ – অর্থাৎ বার্মার উদ্দেশ্যে যেতে পারেন, তবে এক মাসের মধ্যে চলে আসবেন! শাহেন শাহে সিরিকোট রহমাতুল্লাহি আলাইহি বার্মা রেঙ্গুনে পৌঁছে ভক্ত মুরিদদের বললেন- তোমরা ব্যবসা-বাণিজ্য,দোকানপাট গুছিয়ে এক মাসের মধ্যে আপন আপন দেশে চলে যাও। যারা কথা শুনলেন তারা ব্যবসা গুছিয়ে জান-মাল, টাকা-পয়সা সহ স্বদেশে ফেরত আসলেন। আর যারা ওই বাণীকে গুরুত্ব দেয় নি, তারা ব্যবসা-বাণিজ্য ফেলে কোন প্রকার প্রাণে রক্ষা পেলেন। যেহেতু এক মাস পর জাপান ব্রিটিশের যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। বার্মায় প্রচুর বোমাবর্ষণের ফলে গোটা দেশ ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেল। এ বর্ণনা পেশ করার পর পীর আল্লামা তাহের শাহ হুজুর বললেন- প্রকৃত আউলিয়ায়ে কেরাম ইন্তেকালের পরেও মাজার শরিফ হতে স্বীয়-আপন ভক্তদের খবর গিরি করে থাকেন। এ বিশাল রূহানী ক্ষমতা আল্লাহ তাআলা তাঁদেরকে প্রদান করেছেন। হুজুর কেবলার বর্তমান শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে হুজুর বললেন-আলহামদুলিল্লাহ! আগ্ থেকে বর্তমানে অনেক ভালো অবস্থায় আছি। যখন মেডিকেল/ হাসপাতালে ছিলাম আমাকে তিনজনে ধরে উঠা-বসা করাতেন, পরে দুজন, এখন আমি একা দরবারে আছা(লাঠি) নিয়ে কিছু কিছু চলাফেরা করছি। সকল পীর ভাই -বোন, ভক্ত অনুরক্ত এর প্রতি সবসময় হুজুর কেবলার সুস্থতার ও দীর্ঘ হায়াতের জন্য দোয়া করার আর্জি রইল। হুজুর কেবলা দীর্ঘক্ষণ সকলের জন্য দোয়া করলেন এবং বাংলাদেশের ভাইদের প্রতি সালাম আরজ করার নির্দেশ প্রদান করলেন। আমরা হযরত মাওলানা হাফেজ সৈয়দ আহমদ শাহ হুজুরকে সাথে নিয়ে সিরিকোট দরবার শরীফে আখেরি সালাম ও মোনাজাত করে হরিপুর খাজা চৌহরভীর মাজার শরীফ জিয়ারতে বের হলাম। সেদিন যোহরের সময় হরিপুর খাজা চৌহরভীর মাজার শরীফ জিয়ারত শেষে লাহোর দাতার দরবার এবং মদিনাতুল আউলিয়া মুলতানের সুলতান বাবা গাউস জাকারিয়া মুলতানি রহমাতুল্লাহি আলাইহি, পার্শ্ববর্তী বাবা রুকনে আলম নুরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং গাজ্জালিয়ে জামান নায়েবে আ’লা হযরত আল্লামা সৈয়দ আহমদ সাঈদ কাজেমি রহমাতুল্লাহি আলাইহির মাজার শরীফ জিয়ারত শেষে ৪ ঠা জুন ২০২৩ রবিবার দিনগত রাত একটায় করাচি ওরঙ্গী টাউনে পৌঁছে ওয়াইছ কাদেরি ইবনে নসীম কাদেরীর বাসভবনে রাত যাপনের ব্যবস্থা হল। অতঃপর ৫ জুন সোমবার আমাদের মাশায়েখ হযরাত কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি মাদ্রাসার দরসে নেজামির ক্লাসসমূহ ও হিফয বিভাগ পরিদর্শনের সুযোগ হল। ক. করাচি ওরঙ্গী শের পাহাড় তাহেরুল উলুম কাদেরিয়া তৈয়বিয়া সাবেরিয়া মাদ্রাসা ও তৎসংলগ্ন জামে মসজিদ, খ. কাদেরিয়া সৈয়দিয়া তৈয়বিয়া মাদ্রাসা, সেখানে মরহুম শাহেদ ভাই ইবনে শাহানা আপার কবর অবস্থিত। তিনি ও তাঁর মাতা বড়ই মুখলিস ও ওয়াফাদার খাদেম ছিলেন। ওফাতের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত মাদ্রাসা এবং গাউসিয়া কমিটি পাকিস্তান করাচির নেহায়ত আন্তরিকতার সাথে খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন। তাঁদের দরজাত কে আল্লাহ তাআলা বুলন্দ করুক। আমিন।
গ. এবং মাদ্রাসায়ে কাদেরিয়া তৈয়্যবিয়া। করাচি ওরঙ্গী টাউনে কয়েক মাইলের মধ্যে এসব মাদ্রাসা অবস্থিত। মাদরাসাগুলো পূর্বে ছোট পরিসরে ছিল বর্তমানে আলহামদুলিল্লাহ তিনটি মাদ্রাসা আয়তনে বড় আকার ধারণ করেছে। ছাত্র সংখ্যাও অনেক। গত বছর হুজুর কেবলা পীর সাবির শাহ মুদ্দাজিল্লুহুল আলী কাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া মাদ্রাসায় দারুল ইফতা (ফতোয়া বিভাগ) চালু করেছেন। যা বর্তমানে চতুর্দিকে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। নিত্য প্রয়োজনীয় ধর্মীয় তথা শরীয়তের যাবতীয় জরুরী সমস্যা ও সমাধান দেয়া হচ্ছে উক্ত দারুল ইফতার মাধ্যমে। এসব কার্যক্রম দেখে অন্তরে খুশির জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। মাগরিবের নামাজ সেদিন ওরঙ্গী জামে মসজিদ বায়তুল মোকাররমে আদায় করার সুযোগ হয়েছে। উক্ত মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা কাউসার আশরাফির সাথে মুলাকাত হয়েছে। যাঁর তত্ত্বাবধানে উক্ত মসজিদে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামসহ সুন্নিয়তের সকল কার্যক্রম সূচারুরূপে জারী আছে। মাশাআল্লাহ, তিনি দরবারে সিরিকোটের প্রতি নেহায়ত আন্তরিক ও শ্রদ্ধাশীল। সেদিন ওরঙ্গী জামে মসজিদ ফয়যানে তাহের শাহে নামাযে এশার পর আমি গুনাহগারের খেতাব/বয়ান হয়েছিল। অনেক পীর ভাইদের সাথে মুলাকাত হয়েছে। ৬ জুন ২০২৩ ইংরেজি মঙ্গলবার করাচির প্রসিদ্ধ ও অনেক প্রাচীন শহর কওরঙ্গী ফিশারীতে অবস্থিত জামেয়া তাহেরিয়া হেফজ বিভাগ, দরসে নিজামী, প্রাইমারি স্কুল হতে ইন্টার পর্যন্ত কলেজ পরিদর্শন করেছি। প্রচুর শিক্ষার্থী, করাচী কওরঙ্গী টাউন ফিশারী মূলতঃ বাঙালিদের জংশন-গোটা এলাকা যেন বাঙ্গালীদের মিলন মেলা। উক্ত মাদ্রাসার মুহতামিম তথা অধ্যক্ষ মাওলানা শফিউল বশর বাঙালি মাদ্রাসাকে অনেক উন্নতির দিকে অগ্রসর করেছেন-তাঁর প্রতি হাজার সালাম। সেদিন রাত দশটায় মাদ্রাসায়ে কাদেরিয়া তৈয়বিয়ায় দরজায়ে তাখাস্সুসের (হাদিস-ফিকহের) ছাত্রদের অনুরোধে দরসে/পাঠদানে বসে ছিলাম। মাশাআল্লাহ সিনিয়র ছাত্রদের আন্তরিকতা ও মেধা দেখে মহান আল্লাহর দরবারে শোকর আদায় করলাম। পরমকরুণাময় আমাদের মাশায়েখ এজামের এ প্রতিষ্ঠান সমূহ তা- কেয়ামত আবাদ রাখেন- সে ফরিয়াদ রইল। আমাদের পীরভাই যাদের সিরিকোট দরবার শরীফে যাওয়ার সুযোগ হয় করাচীতে অবস্থিত এসব দ্বীনি প্রতিষ্ঠান সমূহ দেখে আসার অনুরোধ রইল। যাতে তাদের জযবা ও আন্তরিকতা আরো বৃদ্ধি পায়। ৬ জুন মঙ্গলবার দিবাগত গভীর রাতে করাচি সদরে অবস্থিত হযরত গাজী আব্দুল্লাহ শহীদের মাজার এবং তার একেবারে সন্নিকটে আহলে সুন্নাতের বীর মুজাহিদ গাউসে জামান আল্লামা হযরত সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ রহমতুল্লাহি আলায়হি হুযুরের প্রিয় ব্যক্তিত্ব আল্লামা শাহ আহমদ নূরানীর মাজার জিয়ারতে ধন্য হয়েছি। কি যে আনন্দ উপভোগ করেছি তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। করাচিস্থ ওরঙ্গী ও কাওরঙ্গী টাউনের গাউসিয়া কমিটির ভাইদের তৎপরতা সংক্ষিপ্ত সময়ে যতুটুকু দেখেছি অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। তাদের একনিষ্ঠতা ও সিলসিলায়ে কাদেরিয়া, গাউসিয়া কমিটি ও এসব মাদ্রাসার প্রতি প্রেম ও জজবা আমাকে অভিভূত করেছে। তাদের খেদমত যেন আল্লাহ তা’আলা কবুল করেন পরওয়ার দিগারে আলমের দরবারে প্রার্থনা জানাই। করাচীর সফরে সর্বক্ষণ আমার সাথে ছিলেন আমার পীর ভাই করাচীর নসিম কাদেরী, নাজমুল হাসান, আলী জাওয়াদ প্রকাশ শাহেদ ভাই (গাউসিয়া কমিটি করাচির সভাপতি; ইমরান কাদেরী, আশিক কাদেরি, ওয়াইজ কাদেরী, মাওলানা রেজা আত্তার কাদেরী, শফিউল আলম কাদেরী (জেনারেল সেক্রেটারি গাউসিয়া কমিটি করাচি), আবিদ কাদেরি প্রমূখ। আল্লাহ তায়ালা তাঁদেরকে উত্তম প্রতিদান নসিব করুন। আমিন। কুরআনে পাকের هَلْ جَزَآءُ ٱلْإِحْسَٰنِ إِلَّا ٱلْإِحْسَٰنُ অর্থাৎ উপকারের প্রতিদান উপকারই। (সূরা আর-রহমান, আয়াত-৬১)
আমার খোশনসিবই বলতে হয় কারণ পাকিস্তানের ভিসা পেলাম এমন সময়ে যখন কুতুবুল আউলিয়া বানিয়ে জামেয়া, শাহেন শাহে সিরিকোটি হযরত সৈয়দ আহমদ শাহ সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহি আলাইহির ওরস শরীফে হাজির হওয়ার সুযোগ হয়ে গেল। সবই করুণাময় আল্লাহর ইচ্ছা ও আমাদের মাশায়েখ হজরাতের নেগাহে করম। আমার অত্যন্ত স্নেহের মাওলানা সালাহ উদ্দিন কাদেরী ইবনে অধ্যক্ষ আল্লামা সৈয়দ হুসাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি (পিতা-পুত্র উভয়ে সাবেক ছাত্র – জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম) এবং মাওলানা জাকির আত্তারিকে আন্তরিকতার সাথে ভিসা সংক্রান্ত বিষয়ে তাদের ইহসান ও সহযোগিতাকে স্মরণ করছি। তাদের এহসানের কারণে স্নেহের মাওলানা রেজা আত্তারি ইবনে মাওলানা মোহাম্মদ আলীর আমন্ত্রণে ৭ জন বুধবার ২০২৩ করাচির পীর ভাই আশিক কাদেরী, ইমরান কাদরী ও ওয়াইজ কাদেরীসহ বেলা ১১.০০ টায় দাওয়াতে ইসলামীর পরিচালনায় জন্ম গত বোবা ও অবুঝ শিশুদের আইটি স্কুল করাচী সদর এবং নামাজে যোহরের পর ফয়জানে মদিনা করাচির লাইব্রেরীসহ বিভিন্ন বিভাগ দেখার সুযোগ হল। বিকাল সাড়ে তিন ঘটিকা হতে হাদিস তাফসির ও ফিকহ্ বিভাগের প্রায় পাঁচশত সিনিয়র ছাত্রদের তাখাস্সুস ক্লাসের ১ ঘন্টার অধিক সময় হাদিস-ফিকহের উপর অধমের বয়ান ও খেতাবত হয়। উক্ত ক্লাসে অনেক ছাত্র-শিক্ষকের সমাগম হল। উপস্থিত সবাই চট্টগ্রাম জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসা, বানিয়ে জামেয়া শাহেন শাহে সিরিকোট রহমতুল্লাহি আলাইহি ও বানিয়ে গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ, বানিয়ে তরজুমানে আহলে সুন্নাত, বানিয়ে জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদুন্নবী, বানিয়ে মুহাম্মদপুর কাদেরিয়া তৈয়্যবিয়া আলিয়া (ঢাকা), গাউছে জামান হুজুর কেবলা আল্লামা হাফেজ ক্বারী সৈয়দ মোহাম্মদ তৈয়ব শাহ কুদ্দিসা সিররুহুল আজিজ সহ বর্তমান হুজুর কেবলা হযরত সৈয়দ মোহাম্মদ তাহের শাহ ও আল্লামা সাবির শাহ এর আজিমুশশান খেদমত বিশেষত করোনাকালীন গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের দেশব্যাপী বিশাল কার্যক্রম ও খেদমত সম্পর্কে আমি অধমের মুখে আংশিক বিবরণ শুনে তারা মুগ্ধ হলেন। উপস্থিতির মধ্যে অনেকেই বাংলাদেশ সফরে আসলে চট্টগ্রামস্থ জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসা দেখার আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করলেন। এগুলো আমার কৃতিত্ব নয় বরং এসব জামেয়ার নিসবতের কারণে আমাদের মাশায়েখ হজরাতের দয়ার ফসল। যেহেতু আমি গুনাহগার জামেয়ার ছাত্র ছিলাম, দীর্ঘ সময় জামেয়ার শিক্ষকতার দায়িত্বে ছিলাম, অধ্যক্ষের গুরু দায়িত্ব পালন শেষে অবসরে আসলাম। আমি একজন আওলাদে রাসূলের নগণ্য গোলাম মাত্র। দেশে-বিদেশে যেখানে যাই সেখানে নেহায়েত সম্মানের সাথে সবাই বরণ করেন। করাচী ওরঙ্গী ও কাওরঙ্গী টাউনে অবস্থিত আমাদের মাশায়েখ হযরাত কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত একাধিক মাদ্রাসা, মসজিদ, খানকা শরিফ দেখে এবং করাচীর পীর ভাই ও গাউসিয়া কমিটি করাচির ভাইদেরকে পেয়ে মহান আল্লাহর দরবারে শোকর গুজারি করছি। অতঃপর ৭ই জুন দিবাগত রাত ২ টার সময় এমিরেট্স এয়ারলাইন্স (বিমান) যোগে করাচি বিমানবন্দর হয়ে ৮ ই জুন ফজরের নামাজের সময় দুবাই ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে পৌঁছি। সেখানে দেখা হল দুবাই প্রবাসী স্নেহের আলহাজ্ব মাওলানা ফজলুল আজিম (আমার ভাগিনী জামাই), সাংবাদিক স্নেহের আজিমুল গনি, গাউসিয়া কমিটি দুবাই ইন্টারন্যাশনাল সিটি শাখার সভাপতি ফারূক বাহাদুর ভাই ও সেক্রেটারি শাহজাহান ভাই, স্নেহের আবু বক্কর সিদ্দিক ইবনে হাজী লোকমান (আমান বাজার), স্নেহের হাফেয ফারুক (ছিপাতলী),জামেয়ার সাবেক ছাত্র স্নেহের মাওলানা আলাউদ্দিন (মেখল,হাটহাজারী) ও রবিউল হক সহ অনেকের সাথে। তাদের সাথে দুবাই ইয়ারপোর্ট হতে ১০ মিনিটের রাস্তায় স্নেহের মাওলানা ফজলুল আজিমের বাসায় চলে আসলাম। সেদিন মাগরিবের নামাজ হুজুর কেবলা হযরত পীর সাবির শাহের সাথে আদায় করেছি ফরিদ সাহেবের বাসভবন সংলগ্ন দুবাই খানকা শরীফে। এশার নামাজের পর গাউসিয়া কমিটি আজমান শাখার ব্যবস্থাপনায় মোবারক হলে অনুষ্ঠিত কুতুবুল আউলিয়া সৈয়দ আহমদ শাহ সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহি আলাইহির সালানা ওরস উপলক্ষে আয়োজিত মাহফিলে আমি নগণ্য প্রধান বক্তা ছিলাম। প্রধান অতিথি হিসেবে শানদার আলোচনা পেশ করেন আল্লামা পীর সাবির শাহ মুদ্দাজিল্লুহুল আলী। বিশেষ অতিথির আসন অলংঙ্কৃত করেছেন সিরিকোট বাগানের ফুল শাহজাদা সৈয়দ মোহাম্মদ আকিব শাহ। সভাপতির আসনে ছিলেন আলহাজ আজম খান, সভাপতি গাউসিয়া কমিটি আজমান শাখা। দুবাইস্থ মাওলানা ফজলুল আজিমের আতিথেয়তা, আজম খানের মেহমানদারী, আল-আইন গাউসিয়া কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব মানিকের ও রাসআল খাইমার ভাগিনী জামাই আলহাজ্ব নজরুল ইসলামের মেহমানদারী, গোফরান ইবনে অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সবুর আল কাদেরী এবং সূফী আকবরের (গাউছিয়া কমিটি রাসআল খাইমার সভাপতি) মেহমানদারীর শুকরিয়া আদায় না করলে অকৃতজ্ঞতা হবে। রাব্বুল আলামিন তাদেরকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন। ৯ ই জুন শুক্রবার নামাজে জুমার পরপর শারজা গাউসিয়া কমিটির ব্যবস্থাপনায় আলহাজ্ব মুসার সভাপতিত্বে (শারজা গাউসিয়া কমিটির সভাপতি) শারজা মসজিদ সংলগ্ন হলে, একই দিন বাদ মাগরিব গাউসিয়া কমিটি দুবাই ইন্টারন্যাশনাল সিটি শাখার ব্যবস্থাপনায় আলহাজ্ব ফারুক বাহাদুরের সভাপতিত্বে (দুবাই ইন্টারন্যাশনাল সিটি গাউসিয়া কমিটির সভাপতি) একটি হোটেলে, বাদে এশা রাত ১০টায় আলআইন গাউসিয়া কমিটির ব্যবস্থাপনায় স্নেহের আলহাজ্ব মানিকের আল আইন গ্যারেজ সংলগ্ন মসজিদে তাঁরই সভাপতিত্বে এবং ১০ই জুন শনিবার গাউসিয়া কমিটি আবুধাবি রাজধানী শাখার ব্যবস্থাপনায় আবুধাবি সদরের সন্নিকটস্থ খানকা শরীফে মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। সকল প্রোগ্রামে প্রধান অতিথি হিসেবে নেহায়ত তাত্ত্বিক আলোচনা করেন দরবারে আলিয়া কাদেরিয়া সিরিকোট শরীফের সাজ্জাদানশীন মাখদুমে মিল্লাত হযরত আল্লামা পীর সাবির শাহ, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হুজুরের শাহজাদা সৈয়দ মোহাম্মদ আকিব শাহ ও প্রধান বক্তা হিসেবে আমি গুনাহ্গার ও হাজির ছিলাম। প্রধান বক্তার বিষয়টি বড় কথা নয়। এটা গাউসিয়া কমিটির প্রবাসী ভাইদের আন্তরিকতা। বড় কথা হল আরব আমিরাতে কয়েকদিন বিভিন্ন মাহফিলে আওলাদে রাসুলের সান্নিধ্যে বসার এবং দোয়া নেয়ার সুযোগ হল। আলহামদুলিল্লাহ। আরব আমিরাতে পীর আল্লামা সাবের শাহ হুজুরের প্রায় মাহফিলে গাউসিয়া কমিটি আরব আমিরাতের অন্যতম খাদেম হাজী ইয়াকুব, ¯েœহের মাওলানা ইসমাইল কুতুবী, মাওলানা মোবারক, মাওলানা হাশেম, মাওলানা আলাউদ্দিনসহ চট্টগ্রাম জামেয়ার প্রাক্তন ছাত্রদের অনেকে গাউসিয়া কমিটি ইউ. এ. ই কেন্দ্রীয় পরিষদের সেক্রেটার জানে আলম ভাই, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন ভাই, সারোয়ার ভাই, আজম খান, ফরিদ ভাই, আলহাজ্ব মুসা (জামাই), ভাগিনা মাওলানা ফজলুল কবির চৌধুরী, দুবাই গাউসিয়া কমিটির একনিষ্ঠ খাদেম ভাগিনা গোলাম কিবিরিয়া, স্নেহের তৌহিদুল আলম, শাহজাহান, ইকবাল, শওকত, হারুন, স্নেহের মৌলানা শাহেদ প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন । বিশেষ করে স্নেহের আজিমুল গনি (সাংবাদিক) প্রত্যেক মাহফিলের ভিডিও ও সচিত্র নিউজ নেহায়ত আন্তরিকতার সাথে মিডিয়ায় সম্প্রচার করে বিশাল খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন। তার খেদমতকে পীর সাবির শাহ হুজুর অনেক গুরুত্বের সাথে স্মরণ করেছেন। বিশেষ করে প্রত্যেক মাহফিলে পীর সাবির শাহ ঈমান, আকিদার গুরুত্ব, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাবন্দি, করোনাসহ বিভিন্ন দূর্যোগময় মুহূর্তে গাউসিয়া কমিটির খেদমত, দাওয়াতে খায়য়ের প্রয়োজনীয়তা, ভাইদের মধ্যে মায়া-মমতা, ঐক্য ও আমানতদারী সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যে তাত্ত্বিক আলোচনা ও সারগর্ভ নসিহত পেশ করেছেন তা যদি আমরা আমল করতে পারি নিঃসন্দেহে খাঁটি মুমিন ও জান্নাতের মেহমান হয়ে আমরা কবরে যেতে পারবো ইনশাআল্লাহ। ১১ই জুন রবিবার আবুধাবি ইউ.এ.ই কেন্দ্রীয় গাউসিয়া কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব আইয়ুব সাহেবের বাসভবনে হুজুর কেবলার সাথে যোহরের নামাজ আদায় করে দুপুরের আহারের পর হুযুর কেবলা হতে বিদায় নিয়ে ভাগিনা জামালসহ দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে চলে আসি। হুজুর সাবির শাহ্ সেদিন রাতে ইসলামাবাদ হয়ে পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে আরব আমিরাত ত্যাগ করেন। সে রাত্রে রাসআল খায়মা গাউসিয়া কমিটির খাদেম হাজী আব্দুল মান্নান ভিলায় স্নেহের গোফরান ইবনে অধ্যক্ষ আব্দুস সবুর চৌধুরী’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মাহফিলে যোগদান করি। কয়েকশ লোকের সমাগম। ওলামায়ে কেরামদের মধ্যে মাওলানা নুরুল ইসলাম, মাওলানা জাকির, গাউসিয়া কমিটির হারুন, স্নেহের ভাগিনা কাজল ও রফিকসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। গাউসিয়া কমিটি, আনজুমানে খোদ্দামুল মুসলেমীন ও শাহ এমদাদিয়া হক কমিটির ভাইদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব, ঐক্য ও আন্তরিকতা দেখে অভিভূত হই। ১৩ই জুন বাদে এশা আমার ভাগিনী জামাই আলহাজ্ব নজরুল ইসলামের বাসভবনে তার মা-বাবা সহ মরহুম মুরব্বিদের ফাতেহা শরীফ ও জিয়াফত উপলক্ষে খতমে কুরআন মজিদ, খতমে গাউছিয়া আলিয়া শরীফ ও মাহফিলের আয়োজন করা হয়। রাসআল খাইমার প্রত্যন্ত অঞ্চল হতে প্রচুর প্রবাসীদের সমাগম হয়। দীর্ঘক্ষণ বয়ান-তকরির, মিলাদ-কিয়াম ও তাবরুক বিতরণের মাধ্যমে মাহফিলের সমাপ্তি হয়। জামেয়ার অনেক প্রাক্তন ছাত্র, ভাগিনা খন্দকার দিদার, কাজল, সেলিম, শামসু ভাই, রফিক ভাই, মামা হারুন, খন্দকার এহসানুল আলম মনি, হোসাইনুজ্জামান, লোকমান, গাউসিয়া কমিটির মোখলিস খাদেম সূফী আকবর সহ অসংখ্য প্রবাসীর উপস্থিতিতে অন্য সকল আনন্দানুভূতি জাগ্রত হয়। ১৪ ই জুন ২০২৩ বাদে এশা গাউসিয়া কমিটি দুবাই আবির শাখার ব্যবস্থাপনায় ওমর গনির সভাপতিত্বে বিশাল সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মুজাহিদে আহলে সুন্নাত আলহাজ¦ মাওলানা ফজলুল কবির চৌধুরী, ইয়াসিন ভাই ও স্নেহের তৌহিদসহ গাউসিয়া কমিটি আরব আমিরাতের বিভিন্ন শাখার সভাপতি-সেক্রেটারিসহ অনেক সদস্য এবং ভক্ত অনুরক্তগণ উক্ত সংবর্ধনা সভায় যোগদান করেন। তরিকতের ভাইদের আন্তরিকতা আল্লাহ তা’আলা যেন কবুল করেন! আমিন। ১৫ ই জুন ২০২৩ ইংরেজি বৃহস্পতিবার বাদে এশা শারজা জি,এন,পি তে জামেয়ার সাবেক ছাত্র স্নেহের মাওলানা মনসুরের বিশাল দোকান সংলগ্ন মসজিদে নূরানী মাহফিলে যোগদান করি। তারা কয়েক ভাই একই স্থানে গাড়ির পার্টসের বিশাল বিশাল দোকানের মালিক। আল্লাহ তায়ালা যেন আরো বেশি বরকত দান করেন-যাতে তারা গরিব-দুঃখীসহ গাউসিয়া কমিটি ও আহলে সুন্নাতের আরো বেশি খেদমত আঞ্জাম দিতে পারেন। ১৬ই জুন ২০২৩ শুক্রবার বাদে জুমা গাউসিয়া কমিটি জায়েদের সভাপতি আবুল কাশেম ভাইয়ের সভাপতিত্বে জায়েদ খানকা শরীফে নূরানী মাহফিলে অংশগ্রহণ করি। অনেক পীর ভাই ও গাউসিয়া কমিটির একনিষ্ঠ খাদেমগণের সাথে উক্ত মাহফিল সমূহে সাক্ষাতের সুযোগ হয়। একই দিন বাদ এশা আবুধাবি আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের নিবেদিতপ্রাণ কর্মী শাহজাহান, হারুন ভাই, ¯েœহের ইকবাল ও গাউসিয়া কমিটির অন্যতম খাদেম শফির আমন্ত্রণে আবুধাবির এক অভিজাত হোটেলে নূরানি মাহফিলে যোগদান করি। আনজুমানে খোদ্দামুল মুসলেমীন আবুধাবি শাখার ব্যবস্থাপনায় সাবেক ছাত্রনেতা আমিন ভাইয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত মাহফিলে আবুধাবিসহ গাউসিয়া কমিটির বিভিন্ন শাখার নেতৃবৃন্দ এবং শাহ এমদাদিয়া কমিটির অনেক ভক্ত-অনুরক্ত মাহফিলে যোগদান করেন। অসংখ্য প্রবাসীদের উপস্থিতিতে হোটেলের হলরুম পরিপূর্ণ হয়ে যায়। সকলের আন্তরিকতা, হৃদ্যতা ও খেদমত মাওলা তা‘আলার দরবারে যেন কবুল হয় সে দোয়া করি। ১৭ই জুন ২০২৩ শনিবার বিকাল ৪:৪৫ মিনিট সকল ভক্ত ও আশেকান থেকে বিদায় নিয়ে এমিরেটস বিমান যোগে দুবাই – ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম বার আউলিয়ার শহরে সহি সালামতে পৌঁছার তৌফিক দান করেছেন মহাময় আল্লাহ জাল্লা শানুহু- তাঁর দরবারে লক্ষ-কোটি শোকর। আলহামদুলিল্লাহ।
লেখক – অধ্যক্ষ (সাবেক), জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা, চট্টগ্রাম।