মুসলিম উম্মাহর আক্বীদা-আমল সংরক্ষণে মাহফিলের প্রয়োজনীয়তা ও অধুনা মাহফিল সংস্কৃতি
মাওলানা মুহাম্মদ সরওয়ার উদ্দিন ক্বাদেরী >
মাহফিল কি ও কেন?
‘মাহফিল’ (مَحْفِلٌ) বহুল প্রচলিত একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ- সমাবেশ, জমায়েত, সভা, অনুষ্ঠান ইত্যাদি। সরলপ্রাণ মুসলমানের বিশুদ্ধ ঈমান-আক্বীদা ও আমল সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় গাইডলাইন প্রদানের লক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানকে বলা হয় ‘মাহফিল’। এ ধরণের মাহফিলকে ‘ওয়াজ মাহফিল’ও বলা হয়ে থাকে। এ অর্থে ধর্মীয় উপদেশ ও নসীহত প্রদানকারীকে ‘ওয়ায়েজ’ বলা হয়। ‘মাহফিল’ হচ্ছে দ্বীনি শিক্ষা প্রচার ও দ্বীনি ইলম অর্জনের এক অনন্য মাধ্যম। ইলম অর্জন করতে হয় জানার জন্য, আর জানার প্রয়োজন হয় মানার জন্য। মাহফিলে দুনিয়া ও আখিরাতের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ইলম অর্জন করা যায়। ধন অর্জনের চেয়ে ইলম অর্জন অনেক উত্তম। হযরত সোলাইমান আলাইহিস সালাম আল্লাহর কাছে ধন চাননি বরং ইলম চেয়েছিলেন। তাই তিনি ধন ও ইলম উভয়টি পেয়েছেন। ধর্মীয়জ্ঞানে পন্ডিত ও বুযর্গ ব্যক্তিগণ মাহফিলে উপস্থিত শ্রোতা মন্ডলীকে উপদেশ প্রদান করে থাকেন। তাই ওয়ায়েজ বা উপদেশদাতাকে হতে হয় আল্লাহ ও রাসূল প্রেমিক, কুরআন, হাদিস, ফিকহ-ফাতাওয়ার জ্ঞানে সম্মৃদ্ধ এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে অনন্য যোগ্যতাসম্পন্ন আমলদার আলিম। সুতরাং মাহফিলের ওয়ায়েজ নির্বাচন করার সময় এ সকল বিষয় খেয়াল রাখা সংশ্লিষ্টদের নৈতিক দায়িত্ব। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, বর্তমানে কুরআন ও হাদিসে বিশেষভাবে অজ্ঞ, ইউটিউব সর্বস্ব সুরেলা ওয়ায়েজই আম জনতার কাছে সমাদৃত।
মাহফিলের আয়োজন করা আল্লাহ ও রাসূলের সুন্নাত; সাহাবায়ে কেরাম, আউলিয়ায়ে কেরাম ও ওলামায়ে কেরামের সুন্নাত। মাহফিলের সুবাদে নবী-রাসূল তথা কুরআন-সুন্নাহর শিক্ষা, আযান, একামত, জুমু‘আ, জামা‘আত অদ্যাবধি মানব সমাজে চালু রয়েছে। মাহফিল বন্ধ হয়ে গেলে মানব চরিত্রের অধ:পতন অবশ্যম্ভাবী। অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে মুক্তি ও বাতিলের ষড়যন্ত্র থেকে ঈমান-আক্বীদা হেফাজতের জন্য মাহফিলের কোন বিকল্প নেই। প্রতিদিন একটি করে মাহফিলের আয়োজন করা হলেও কুরআন-হাদিসের বিশাল সমূদ্রের কুল-কিনারা খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। আবার বান্দার পক্ষে প্রতিদিন মাহফিল আয়োজন করাও অসম্ভব। তাই আল্লাহ পাক স্বয়ং বান্দার আক্বীদা ও আমলের প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে সাপ্তাহিক মাহফিলের আয়োজন করেছেন। আর তা হচ্ছে সাপ্তাহিক জুমু‘আর নামায। জুমু‘আর নামাযের পূর্বে বিজ্ঞ খতিব সাহেবের বিষয়ভিত্তিক আলোচনা ও খুতবা বা বয়ান ঈমানদারের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ গাইডলাইন হতে পারে। জুমু‘আ মসজিদের যোগ্য খতীব সাহেবের বিষয়ভিত্তিক সারগর্ভ আলোচনা ময়দানের শত মাহফিল থেকেও অধিক ফলপ্রসু। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে প্রায় ৩ লক্ষ মসজিদ রয়েছে। ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’ এর প্রতিবেদন ২০২০-২০২১ এর তথ্য মতে, বাংলাদেশে মসজিদের সংখ্যা ২ লক্ষ ৪৪ হাজার ৪৩টি। অন্য পরিসংখ্যান মতে, পৃথিবীতে বর্তমানে মসজিদের সংখ্যা ২০ লক্ষাধিক। প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে বছরে ৫২ জুমু’আ সহ বিভিন্ন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে কয়েক লক্ষ মাহফিল। যা হতে পারতো সরলপ্রাণ মুমিন-মুসলমানের হেদায়তের আলোকবর্তিকা। কিন্তু পবিত্র মাহফিলগুলো থেকে আজ কাক্সিক্ষত হিদায়ত মিলছেনা। কারণ মাহফিল আয়োজক ও ওয়ায়িজ বা বক্তাগণ এক্বামতে দ্বীনের পরিবর্তে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার পেশা ও নেশা হিসাবে গ্রহণ করেছে ধর্মীয় মাহফিলকে।
মাহফিল মুমিন মুসলমানদের হিদায়তের আলোকবর্তিকা
আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা’র সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে ইহকালে শান্তি ও পরকালে জান্নাতের অপরিসীম নিয়ামত ভোগ করতে হলে বিশুদ্ধ ঈমানের পাশাপাশি একনিষ্ঠ আমলের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। আমলের ভিত্তি হচেছ বিশুদ্ধ ঈমান। বিশুদ্ধ ঈমান ছাড়া কোন আমল আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য নয়। ঈমান ও আমল পরষ্পর অবিচ্ছেদ্য। সুতরাং যাদের কাছে ঈমান ও আমলের সমান গুরুত্ব রয়েছে তারাই সঠিক গন্তব্যের অভিযাত্রী। সরলপ্রাণ ঈমানদার-মুসলমানের বিশুদ্ধ ঈমান-আক্বীদা ও আমল সংরক্ষণে এক নিয়ামক শক্তি ও একান্ত সহায়ক আমাদের ধর্মীয় মাহফিলগুলো। দেহকে সুস্থ ও সবল রাখার জন্য যেমন খাদ্য প্রয়োজন, তেমনিভাবে আত্মাকে সতেজ ও সজীব রাখার জন্য প্রয়োজন ওয়াজ-নসীহত। মোবাইলের ব্যাটারির চার্জ কমে গেলে যেমন রিচার্জ করতে হয়, তেমনিভাবে কলবের নিভে যাওয়া বাতিকে ফের জ¦ালিয়ে নিতে প্রয়োজন হয় মাহফিলের। মাহফিলের মাধ্যমে মানুষের ঈমান-আকীদা শুদ্ধ হয়, হালাল-হারাম, সত্য-মিথ্যা, ভাল, মন্দ ইত্যাদি বিষয়ের পার্থক্য জানা যায় এবং ইবাদত-বন্দেগীর নিয়ম-পদ্ধতিও শেখা যায়। তাই মাহফিলের আয়োজন করা মহান ফযিলতের আমল ও সওয়াবের কাজ এবং আল্লাহর রহমত ও বরকত পাওয়ার অন্যতম ওছিলা। আল্লাহ পাক বলেন, فَذَكِّرْ إِنْ نَفَعَتِ الذِّكْرَى. (‘হে আমার হাবীব!) আপনি উপদেশ প্রদান করুন যদি উপদেশে উপকার হয়।’ সর্বপ্রথম উপদেশ প্রদানকারী হচ্ছেন স্বয়ং আল্লাহ। ৩০ পারা কুরআন মাজিদ মানব জাতির উদ্দেশ্যে রাব্বুল আলামীনের শ্রেষ্ঠতম ওয়াজ এবং রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর লক্ষ লক্ষ হাদিস শরীফ হচ্ছে সর্বকালের উম্মতের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ বা ওয়াজ। আল্লাহ পাক আরও ইরশাদ করেন, وَذَكِّرْ فَإِنَّ الذِّكْرى تَنْفَعُ الْمُؤْمِنِيْنَ (হে নবী!) আপনি উপদেশ দিতে থাকুন। কেননা, উপদেশ ঈমানদারকে উপকৃত করে। মাহফিলে আল্লাহ ও রাসূলের শান-মানের আলোচনা হয়। আউলিয়ায়ে কেরামের জীবনী ও আদর্শের কথা বর্ণনা করা হয়। মাহফিলে আল্লাহর যিকির হয় এবং নবীজির প্রতি দরুদ-সালাম পাঠ করা হয়। হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে, নবীগণের যিকির আল্লাহর ইবাদত। সালেহীন তথা আউলিয়ায়ে কামেলীনের যিকির গুনাহের কাফ্ফারা, মৃত্যুর স্মরণ সদকা সমতুল্য এবং কবরের স্মরণ জান্নাতের নিকটে পৌছার মাধ্যম বা উসিলা।’ তাছাড়া মাহফিলে সরাসরি আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়। নবীজি ইরশাদ করেন-
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ………….. مَنْ سَلَكَ طَرِيْقًا يَلْتَمِسُ فِيْهِ عِلْمًا سَهَّلَ اللهُ لَهُ بِه طَرِيْقًا إِلى الْجَنَّةِ. وَ مَا إِجْتَمَعَ قَوْمٌ فِىْ بَيْتٍ مِنْ بُيُوْتِ اللهِ يَتْلُوْنَ كِتَابَ اللهِ وَ يَتَدَارَسُوْنَهُ بَيْنَهُمْ إِلَّا نَزَلَتْ عَلَيْهِمُ السَّكِيْنَةُ وَ غَشِيَتْهُمُ الرَّحْمَةُ وَ حَفَّتْهُمُ الْمَلئِكَةُ وَ ذَكَرَهُمُ اللهُ فِيْمَنْ عِنْدَهُ …….. (رَوَاهُ مُسْلِمٌ)
অর্থ: “হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি এমন কোন পন্থা অবলম্বন করে যাতে সে জ্ঞান অনুসন্ধান করে আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতের রাস্তা সহজ করে দেন। কোন একদল লোক আল্লাহর ঘর সমূহ হতে কোন ঘরে আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে এবং পরষ্পরের মধ্যে তা নিয়ে আলোচনা পর্যালোচনা করে তাহলে তাদের উপর শান্তি বর্ষিত হয়, রহমত তাদেরকে আবৃত করে এবং ফেরেস্তারা তাদেরকে ঘিরে রাখে। আল্লাহ পাক স্বীয় দরবারে উপস্থিত ফেরেস্তাদেরকে নিয়ে ঐ সকল ব্যক্তিদের ব্যাপারে আলোচনা করেন।” ওয়াজ মাহফিলের প্রয়োজন আছে বলেই আমরা মাসে, ছয় মাসে অথবা বছরে এক বা একাধিক ব্যয়বহুল মাহফিলের আয়োজন করে থাকি। মাহফিল যারা আয়োজন করেন তারা যেমন ভাগ্যবান, মাহফিলে যারা আগমন করেন তারাও ভাগ্যবান।
কিন্তু বর্তমান সমাজে প্রগতিশীল কিছু মানুষ আছেন যারা মাহফিল মোটেও পছন্দ করেন না। তাই তাদেরকে কোন মাহফিলে দেখা যায় না। তারা ঘরে বসে ইউটিউবের মাহফিল শুনতে অভ্যস্ত। আবার কিছু মানুষ আছেন যারা নিজেকে অনেক জ্ঞানী-গুণী মনে করেন। যিনি কুরআন-হাদিসের বয়ান করেন তাকে খুবই তুচ্ছ জ্ঞান করেন। অনেকে আবার বাংলা চটি বই-পুস্তক পড়ে নিজেকে বড় মুহাদ্দিস ও মুফতি মনে করেন। আবার কেউ কেউ মনে করেন, আধুনিক যুগে মাহফিলে যাওয়ার বা মাহফিল করার প্রয়োজন কী? অথচ কার ওয়াজ শুনলে ঈমান-আমল মজবুত হয় এবং কার ওয়াজ শুনলে ঈমান-আমল ধ্বংস হয় তা ইউটিউব দেখে নিশ্চিত হওয়া যায় না। ইউটিউবের ওয়াজ শুনে সরলপ্রাণ সাধারণ মানুষ সারা জীবনের আমলের প্রতি নিমিষেই আস্থা হারিয়ে ফেলে। তাই ইউটিউব সাধারণ মানুষের জন্য মোটেও নিরাপদ নয়।
নবীজির শানে আয়োজিত মাহফিল
হওয়া চাই আড়ম্বরপূর্ণ
ফক্বীহ ইমামগণের মতে, উত্তম কাজে খরচ করলে অপচয় হয়না। ইসলামের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা এবং ইসলামের দুশমনদের প্রতি ভয়-ভীতি সৃষ্টি করার জন্য কা’বা শরীফকে উন্নতমানের অতি মূল্যবান রেশমী কাপড় দ্বারা সাজানো হয় প্রতি বছর, তা জায়েজ ও শরীয়ত সম্মত। সুতরাং ইসলামের শান-শওকত প্রকাশের জন্য ব্যয়বহুল ব্যবস্থাপনাও শরীয়তসম্মত। সুতরাং যিনি সমগ্র কায়েনাতের দুলহা, দুনিয়া ও আখিরাতের বাদশা তাঁর শুভাগমন উপলক্ষে মুহাব্বত ও ভালবাসা প্রকাশের জন্য গ্রামে-গঞ্জে, পাড়া মহল্লায়, শহরে-বন্দরে, অলিতে গলিতে, মসজিদ ও মাদরাসায় মাহফিলের আয়োজন করা কেন জায়েজ হবে না? নবীজি হলেন কুল কায়েনাতের রূহ। তিনি না হলে আরশ, কুরছি, লওহ, কলম, কাবা শরীফ ইত্যাদি কিছুই হত না। তাঁর শান-মানের আলোচনা মানুষের সামনে তুলে ধরার জন্য মাহফিলের কোন বিকল্প নেই। এ সকল আয়োজন ইসলামি শরীয়তে মুস্তাহাব ও মুস্তাহসান।
সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, لَيْسَ فِيْ الْحَلَالِ إِسْرَافٌ وَإِنَّمَا السَّرْفٌ فِيْ إِرْتِكَابُ الْمَعَاصِيْ. অর্থাৎ হালাল ও বৈধ বিষয়ে কোন অপচয় নেই। আর নিশ্চয় অপচয় হলো অবাধ্যতায় লিপ্ত হওয়ার মধ্যে। প্রখ্যাত তাবেয়ী হযরত সুফিয়ান সওরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, اَلْحَلَالُ لَا يَحْتَمِلُ السَّرْفَ. অর্থাৎ হালাল অপচয়ের সম্ভাবনা রাখে না। আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি কা’বা শরীফের সাজ সজ্জা সম্পর্কে বলেন, فِيْ ذَالِكَ تَعْظِيْمُ الْإِسْلَامِ وَتَرْهِيْبُ الْعَدُوِّ. অর্থাৎ এতে রয়েছে ইসলামের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও ইসলামের শত্রুদেরকে ভীতি প্রদর্শন। আল্লামা তকি উদ্দিন সুবকি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এটার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, اِسْتَدَلَّ التَّقِيٌّ السٌّبْكِيٌّ بِحَدِيِثِ الْبَابِ عَلى جَوَازِ تَعْلِيِقِ قَنَادِيِلِ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةِ فِيْ الْكَعْبَةِ وَمَسْجِدِ الْمَدِيْنَةِ. إِنَّ تَجْوِيْزَ سَتْرِ الْكَعْبَةِ بِالدّيْبَاجِ قَامَ الْإِجْمَاعُ عَلَيْهِ . অর্থাৎ ইমাম তকি উদ্দিন সুবকি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এ অধ্যায়ে হাদিস দ্বারা দলীল পেশ করেছেন যে, কা’বা ঘরে স্বর্ণ ও রৌপ্যের ঝালর বাতি টাঙ্গানো এবং অনুরূপ মদীনার মসজিদ তথা মসজিদে নববী শরীফেও। নিশ্চয় কা’বা শরীফকে গিলাপ দ্বারা আবৃত করা রেশমী কাপড় দ্বারা জায়েজ। এ বিষয়ে উলামায়ে ফোকাহার ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কাজী যয়নুদ্দিন আব্দুল বাছেতকে রাজকীয় ফরমানে কা’বা ঘরের গিলাফ তৈরী করার হুকুম দেয়া হলো। তিনি অনেক উত্তমভাবে তা তৈরী করলেন। আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এ সম্পর্কে বলেন, بَسَطَ اللهُ فِيْ رِزْقِهِ وَ عُمْرِه فَبَالَغَ فِيْ تَحْسِيْنِهَا بِحَيْثُ يَعْجِزُ الْوَاصِفُ عَنْ صِفَةِ حُسْنِهَا، جَزَاهُ اللهُ عَلَى ذَالِكِ أَفْضَلَ الْمُجَازَاتِ. অর্থাৎ আল্লাহ পাক ঐ ব্যক্তির রিযিক ও হায়াতে বরকত দান করবেন যে ব্যক্তি কা’বা শরীফের সৌন্দর্য বর্ধনে ব্যাপক অবদান রাখবে এমনভাবে যে, গুণ বর্ণনাকারী কা’বা শরীফের প্রকৃত সৌন্দর্য বর্ণনায় অক্ষম হয়ে পড়ে। এ মহৎ কাজের বিনিময়ে আল্লাহ পাক তাকে সর্বোত্তম প্রতিদান প্রদান করবেন।
সাধারণ মানুষের বিবেচনায় বড় আলেম ও ওয়ায়েজ
আধুনিক যুগে মানুষ যাকে নিজের তৈরী মাপকাঠি অনুযায়ী পায় তাকেই বড় আলেম মনে করে এবং তাকেই শুধু সম্মান করে। তাই দিন দিন শরীয়তের মাসাইল জানা লোকের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। বড় আলেমের লেবাস পরিধান করে অনেক নামসর্বস্ব আলিম পবিত্রতা, নামায, রোযা, ইত্যাদি বিষয়ে অতি সহজ ও খুটিনাটি মাসাইলের সমাধান দিতেও হিমশিম খাচ্ছে। দ্বীন-ধর্ম ও জাতীর অস্তিত্ব রক্ষাসহ ইহ ও পরকালে শান্তি ও মুক্তির পথ দেখিয়ে দেওয়া আলেম সমাজেরই দায়িত্ব। কিন্তু বর্তমান আধুনিক যুগে যাদুর মত বক্তৃতা ও কোকিল কন্ঠে ওয়াজ নসীহত করতে না পারলে, হাসি-ঠাট্টা করে ধর্মীয় মাহফিলকে নাট্যমঞ্চ বানাতে না পারলে, তাবিজ লিখতে না পারলে, ঝাড়ফুঁক করতে না পারলে সে আবার কোন ধরণের আলিম? অর্থাৎ যারা এ সব করতে পারেন তারাই নাকি বড় মাপের আলিম। আবার কিছু লোকের ধারণা হলো- যিনি মিথ্যা ডকুমেন্টস তৈরী করে প্রচুর সরকারী টাকা উপার্জন করতে পারেন এবং দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের স্বর্গীয় পরিবেশকে দুনিয়ার সাথে মিশিয়ে ধর্মীয় আদর্শকে ধ্বংশ করতে বড় ওস্তাদ। তিনি নিজে মিথ্যা বলতে উস্তাদ আবার অন্যকেও মিথ্যায় জড়ায়, হালাল-হারাম, জায়িজ-নাজায়িজ ইত্যাদি বিষয়ে কোন পার্থক্য করে না। যত্রতত্র ঘুষের লেনদেন করে তৃপ্তি লাভ করে। এমনকি সরকারী বেসরকারী দুর্নীতিবাজ ও স্বার্থান্বেষী মহলের আজ্ঞাবহ হয়ে চলে, সে ব্যক্তিই বড় আলেম। মানুষ তাকে কয়েক হাত লম্বা উপাধী দিয়ে ডাকে। আবার কিছু লোকের ধারণা হলো- ৫০,০০০/১,০০,০০০ টাকা যার মাহফিলের ফিস, হেলিকপ্টার ভাড়া করে বা অত্যাধুনিক বিলাসবহুল কারে চড়ে যিনি মাহফিল করেন তিনিই বড় আলেম। যদিও তিনি শুদ্ধ করে কুরআন তেলাওয়াত করতে পারেন না, হাদিসের ইবারত পড়তে জানেন না, ৩০পারা কুরআন শরীফের তরজমা না পড়েও যিনি তথাকথিত আন্তর্জাতিক মানের মুফাসসিরে কুরআন। ভিত্তিহীন উদ্ভট কিস্সা কাহিনী বলে মাঠ গরম করা এবং অন্যের সমালোচনা করে ভাইরাল হওয়াই তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। পড়ার টেবিলে না বসে পকেট ভারী করার জন্য মাহফিলকে পেশা যারা বানিয়েছে। নিজের মধ্যে আমলের যথেষ্ট ঘাটতি থাকলেও অন্যকে নসীহত করতে আনন্দ পায়। এ সুযোগে সে নিজের বুযর্গী প্রকাশ করে মানুষকে ধোঁকা দিয়ে রাত দিন টাকার পেছনে ব্যস্ত থাকে। মানুষ মনে করে সে-ই বড় আলেম। ইউটিউব সর্বস্ব এ সকল আলিম থেকে জাতি পানাহ চায়। এ সকল অজ্ঞতাপূর্ণ চিন্তাধারা নিছক কিয়ামতের আলামত। হাদিসে পাকে বর্ণিত আছে-
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمَرو بْنِ الْعَاص رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللهَ لَا يَقْبِضُ الْعِلْمَ إِنْتِزَاعًا يَنْتَزِعُهُ مِنَ الْعِبَادِ، وَلكِنْ يَقْبِضُ الْعِلْمَ بِقَبْضِ الْعُلَمَاءِ، حَتّى إِذَا لَمْ يَبْقى عَالِمًا إِتَّخَذَ النَّاسُ رُؤُوْسًا جُهَّالًا، فَسُئِلُوْا فَأَفْتَوْا بِغَيْرِ عِلْمٍ فَضَلُّوْا وَأَضَلُّوْا (متفق عليه)
অর্থ: প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা ইরশাদ করেন, নিশ্চয় আল্লাহ পাক ইলমকে টেনে তুলে নিবেন না যে, তা বান্দাদের থেকে ছিনিয়ে নিবেন। বরং আলিমদের ওফাতের মাধ্যমে ইলমকে উঠিয়ে নিবেন। অবশেষে কোন আলেম অবশিষ্ট থাকবে না। তখন মানুষ মূর্খদেরকে নেতা বানাবে। অর্থাৎ মুর্খদেরকে বড় বড় আলেম, মুফতি, মুহাদ্দিস ও পীর মাশাইখ মনে করবে। যাদের কাছ থেকে মাসআলা জিজ্ঞাসা করা হবে। আর তারা ইলম ছাড়া ফাতাওয়া দিবে। ফলে নিজেরা পথভ্রষ্ট হবে এবং অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করবে। হাকীমুল উম্মত মুফতি আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী বাদায়ুনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ‘মিরআতুল মানাজীহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ’ কিতাবে উল্লেখ করেন, গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো মূর্খরাই দখল করে নেবে। নিজেদের মূর্খতা প্রকাশ হোক তা তারা পছন্দ করবে না। কেউ মাসআলা জিজ্ঞাসা করলে বলবে না যে, আমি জানি না। বরং মাসআলা জিজ্ঞাসা করলে ইলম ছাড়া মনগড়াভাবে উত্তর বলে দেবে। এর পরিনাম কিন্তু সুষ্পষ্ট। نيم طبيب خطر جان ـ نيم ملا خطر ايمان অজ্ঞ চিকিৎসক রোগীর জীবন কেড়ে নেয় ; আর অজ্ঞ মুফতি এবং খতিবরা সাধারণ মানুষের ঈমান নষ্ট করে। উপরোক্ত হাদিসের বাস্তবতা বর্তমানে মধ্যাহেœর সূর্যের চেয়েও স্পষ্ট।
প্রকৃত আলেম ও ওয়ায়েজের যোগ্যতা
প্রকৃত আলিম হলেন সেই ব্যক্তি যিনি কুরআন-সুন্নাহর সঠিক জ্ঞান ও ইসলামী শরীয়তের প্রয়োজনীয় মাসাইল সম্পর্কে অভিজ্ঞ ও পারদর্শী। যিনি তাঁর ইলম অনুযায়ী আমল করেন। এ প্রসঙ্গে ফতোয়া রজভীয়া-২য় খন্ড, পৃষ্ঠা নং ৫৭২ এ রয়েছে, যিনি ইলমে ফিকহ বিষয়ে বড় পন্ডিত তিনিই বড় আলেম, যদিও তিনি অন্যান্য হাদীস ও তাফসীর বিষয়ে গবেষণাকর্মে ব্যস্ত সময় কাটান। হুজুর আকরম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কিরামের যুগে এমনকি এর পরবর্তী কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত সবচেয়ে বড় আলেম হওয়ার মাপকাঠি ছিল তাই। পরবর্তীতে বড় আলেম হওয়ার মাপকাঠি ভিন্নরূপ লাভ করে। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, وَمَنْ يُّؤْتَ الْحِكْمَةَ فَقَدْ اُوْتِىَ خَيْرًا كَثِيْرًا ‘যিনি আহকামে শরীয়তের আলেম হয়েছেন, তিনি প্রভূত কল্যাণ অর্জন করেছেন। প্রকৃত আলেম হবেন নির্লোভ ও তাকওয়াবান। নবী-রাসূলগণ, সাহাবায়ে কেরাম ও আউলিয়ায়ে কেরাম ছিলেন নি:স্বার্থ, নির্লোভ ও তাকওয়াবান। তাঁরা দ্বীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আল্লাহ পাকের প্রতিনিধিত্ব করেছেন নিরলসভাবে। তারা ছিলেন সম্পূর্ণ প্রচারবিমূখ। তাঁদের কথায় ও কাজে, পোশাক ও লেবাসে ছিল তাকওয়ার প্রতিফলন। পরবর্তী যুগের হক্কানী ওলামাগণ পূর্ববর্তীদের পদাংক অনুসারী।
মাহফিলের নামে সমাজে যা সংঘটিত হচ্ছে
বর্তমান সময়ের মাহফিলগুলোতে নেই কোন বিষয়ভিত্তিক আলোচনা। মাহফিল শেষে সাথে নিয়ে যাওয়ার মত নেই কোন উপাদান। সুতরাং যে মাহফিলে কুরআন-হাদিসভিত্তিক ঈমান ও আমলের হেদায়তমূলক বক্তব্য নেই, বিষয়ভিত্তিক কোন ওয়াজ নেই। লক্ষ টাকা ব্যয় করে আয়োজিত মাহফিল যেন আজ তথাকথিত আইডল ও স্বঘোষিত বক্তাদের ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য পরের সাজানো মঞ্চ। কোন্ মাহফিলে কে কী বলেছে তার জবাব দিতে দিতে শ্রোতাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করে দেয়া হয় সুকৌশলে। অত্যাধুনিক ভিডিও ক্যামেরাসহ বহর নিয়ে আসা বক্তার সর্বসাকুল্যে এক বা দেড় ঘন্টা কর্কষ ভাষায় জ¦ালাময়ী বক্তব্যের ফি ৪০,০০০ বা ৫০,০০০ টাকা। এতে নিরীহ পাবলিকগুলোর নেই কোন প্রতিবাদ, তারা যেন অসহায় নিরব দর্শক। কখনও নবী-ওলির শানে বেয়াদবি, আবার কখনও সাহাবায়ে কেরামের শানে কটুক্তি এভাবে মারাত্মক ঈমান বিধ্বংসী ওয়াজ ছাড়া তারা কিছুই ডেলিভারী দিতে পারে না। অসহায় শ্রোতারা মাঝে মাঝে শুধু “ঠিক ঠিক” বলার টিকাদারীর দায়িত্ব পালন করে সর্বস্ব হারিয়ে বাড়ী ফিরে যায়। সরল-সোজা পাবলিককে বোকা বানিয়ে, কিংবা তাদের চোখে ধুলা দিয়ে প্রতিপক্ষ শিকারের স্বপ্ন পূরণের মাহফিলকে সচেতন জনতা আজ শুধু বর্জন করছে না বরং ধিক্কার জানাচ্ছে প্রতিনিয়ত। অযোগ্য, দুনিয়ালোভী, ধোঁকাবাজ, ফাঁকিবাজ, ফিতনাবাজ, গলাবাজ, গালবাজ, ধান্ধাবাজ, ফন্দিবাজ ও ভন্ডকে বক্তা বানানোর খেসারত দিতে হচ্ছে নিরহ পাবলিককেও। অতএব, যে সকল কারণে অধুনা মাহফিলগুলো সচেতন মহলের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ তম্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কারণ হলো- ১. ইউটিউব দেখে বক্তা নির্বাচন করা ২. মাহফিলের হাদিয়া নিয়ে দরকষাকষি করা ৩. বিষয়বস্তুহীন অগোছালো আলোচনা ৪. কুরআন-সুন্নাহর আলোচনার পরিবর্তে অপরের সমালোচনা করা ৫. শ্রোতাদের সামনে অমার্জিত ভাষার প্রয়োগ ৬. কুরআন-হাদিসের ভুল উদ্ধৃতি উপস্থাপন, ৭. ঈমান-আক্বীদার পাশাপাশি আমলকে গুরুত্ব না দেয়া ৮. ভিত্তিহীন গল্প-কাহিনী বলে সরলপ্রাণ মানুষকে ধোঁকা দেয়া ৯. নেচে গেয়ে উদ্ভট পদ্ধতির যিকির করা ১০. সর্বস্তরের শ্রোতাদের চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়া ১১. ভাইরাল হওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখা ১২. নিজের পোশাক-পরিচ্ছেদে অতি আধুনিকতা ও তাকওয়াহীনতা ১৩. উপযুক্ত আলেমদেরকে অবমূল্যায়ন করা ১৪. মাহফিলের প্রতি আয়োজকদের চরম অমনোযোগিতা ১৫. প্রচারের উদ্দেশ্যে গণজমায়েত করার চিন্তা ইত্যাদি।
দায়িত্বশীল খতীব যখন বিষয় জ্ঞানে অপরিপক্ক
খোদায়ী আয়োজনে জুমু’আ মসজিদের সাপ্তাহিক বিষয়ভিক্তিক আলোচনা হাজার মাহফিলের চেয়ে অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ ও ফলপ্রসু। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, বর্তমানে ঈমান-আক্বীদা ও আমলের কঠিন যুগসন্ধিক্ষণে অনেক অলস ও অনভিজ্ঞ খতীবকে বলতে শুনা যায়, আজ কী বিষয় নিয়ে ওয়াজ করব? কোন বিষয় তো খুঁজে পাচ্ছি না। তাই জুমু‘আ মসজিদে আলোচনার জন্য জুমু‘আর দিন সকালবেলা অনেক সম্মানিত খতীব সাহেব বিষয় খুঁজতে খুঁজতে হয়রান-পেরেশান হয়ে যান। অথবা, তিনি এতই কর্মব্যস্ত অথবা নিজে নিজে এতই দক্ষ যে, এ বিষয়ে চিন্তা ও গবেষণা করার কোন গরজও তাঁর কাছে নেই। অথচ একজন সচেতন ও দায়িত্বশীল খতীবের উচিৎ কুরআন-হাদিসের আলোকে ইসলাম ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে ধারাবাহিক ও তথ্যবহুল আলোচনার জন্য সপ্তাহব্যাপী গবেষণা করে আলোচনা সারসংক্ষেপ গুছিয়ে নেয়া। বর্তমান সমাজে চারদিকে নৈতিক অবক্ষয়ের ঢল নামছে। যুব সমাজ অধঃপতনের নিম্নস্তরে চলে গেছে। ন্যায়-বিচার, সত্য কথা, সত্য সাক্ষ্য আজ সমাজ হতে নির্বাসিত। হত দরিদ্র অভাবী গরীব প্রতিবেশী নিন্ম আয়ের অসচ্ছল আত্মীয়স্বজন ধুঁকে ধুঁকে মরছে। ধর্ষণ, মাদকাসক্তি, ভেজাল কারবার, চুরি-ডাকাতি, প্রতারণা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পবিত্র বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার নামে শরীয়তবিরোধী গানবাজনা বেহায়াপনা-নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা ইত্যাদি গর্হিত কার্যকলাপ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে; কিন্তু এত কিছুর পরও মুসলিম সমাজের মসজিদগুলো প্রতি জুমাবার ছোট শিশু, তরুণ-যুবক, বৃদ্ধ সকলে আল্লাহর ভয় অন্তরে ধারণ করে মসজিদে সমবেত হয়ে থাকে, তারা অধীর আগ্রহে খতীব সাহেবের মূল্যবান ওয়াজ শোনার জন্য নামাজের পূর্বে মসজিদে সমবেত হয়ে থাকেন। কিন্তু তাঁরা আশানুরূপ ওয়াজ শ্রবণ করতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে যান। সত্য সাক্ষ্য, দরিদ্র ও রুগ্ন ব্যক্তির সাহায্য সেবা প্রদান, মাদকাসক্তির অপকারিতা ইত্যাদি বিষয়ে কোরআন হাদীসের আলোকে সুন্দরভাবে বর্ণনা করলে অবশ্যই মুসলমান সমাজ অনেক অনেক উপকৃত হতো, সমাজ আলোকিত হতো। আমাদের অনেক সচেতন শিক্ষিত সমাজ তাদের জ্ঞানের পরিধিকে আরো সম্মৃদ্ধ করার জন্য অপেক্ষায় থাকেন জুমু‘আর আলোচনার দিকে। জ্ঞানতৃষ্ণা নিবারণ করতে না পেরে তারা নিরাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হন অথবা নিজ এলাকার নিকটস্থ মসজিদ ছেড়ে দূর-দূরান্তের মসজিদে চলে যান। অতএব, একজন দক্ষ ও যোগ্য খতীব সাহেবের উচিত মুসল্লীদের চাহিদা মেটাতে সপ্তাহব্যাপী চিন্তা ও গবেষণা করে যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করা। আল্লাহ পাক সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্বের ব্যাপারে অধিক সচেতন হওয়ার তৌফিক দান করুন আমিন, বিহুরমাতি সায়্যিদিল মুরসালীন।।
লেখক : মুহাদ্দিছ, গহিরা এফ. কে. জামেউল উলূম বহুমুখী কামিল মাদরাসা, রাউজান, চট্টগ্রাম।