দ্বীনের অগ্রণীগণ (আসলাফ-ই কেরাম) হলেন তা’যীম-ই রসূলের মহান আদর্শ
মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মান্নান>
শুধু মুসলমান নয়, বরং দুনিয়ায় যত সম্প্রদায় (জনগোষ্ঠী) রয়েছে, যদি তারা কোন ধর্মের কিংবা কোন আইন-কানুনের পাবন্দ বা অনুসারী হয়, তবে তারা নিশ্চয় তাদের দ্বীন-মাযহাব ও আইন-কানুনের প্রবর্তককে সাধারণ মানুষ অপেক্ষা অনেক উঁচুতর মর্যাদা দিয়ে থাকে। তাঁকে সম্মান করে, সব সময় তাঁর সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার প্রতি সজাগ থাকে, যাবতীয় আদব ও বিনয়কে ওই মুক্বতাদার চরণ যুগলে উৎসর্গ করে। আর ধর্মীয় পেশোয়ার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের সাথে সাথে তাঁর প্রবর্তিত আক্বীদা এবং আদর্শকেও নিজের নাজাতের মাধ্যম মনে করে থাকে। এমনকি যদি কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ তাদের ধর্ম, আইনের প্রবর্তক ও প্রদর্শক পথ নির্ণয়ে ভুলও করে ফেলে তবুও ওই পথ-প্রদর্শকের দোষ-ত্রুটি ইত্যাদিকে (যদি থাকে) গোপন করে কিংবা তাদের নামে অমূলক প্রশংসা রচনা করে হলেও তাদের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা ও সম্মানকে বহাল রাখার ও তুলে ধরার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে। তাই দুনিয়ায় এমন কোন মানুষ নেই, যে নিজের পথ প্রদর্শককে তা’যীম করে না।
আমরা মুসলমান আমাদের ধর্মের মহান প্রবর্তক হলেন বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম, যিনি বিশ্বের সবার চেয়ে সেরা, সম্পূর্ণ নিষ্পাপ ও নির্ভুল পথের দিশারী। আপাদমস্তক শরীফ নূর। তাই এ কথা মধ্যাহ্ণ সূর্যের চেয়েও অধিক সুস্পষ্ট যে, আমরা আমাদের মহান নবীর প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা ও শ্রদ্ধা নিবেদন করে থাকি। আর আমাদের সম্মানিত ধর্মীয় অগ্রণী (আসলাফ-ই কেরাম) নিজেদের রাহবুর ও মাহবূব সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি যেমন সম্মান প্রদর্শন করেছেন, তেমনি সম্মান দুনিয়ার জন্য কোন জনগোষ্ঠী তাদের পথ প্রদর্শকের প্রতি প্রদর্শন করতে পারেনি, পারবেও না। রেসালতের সমুজ্জ্বল প্রদীপ হুযূর-ই আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি প্রাণোৎসর্গকারী পতঙ্গগণের সম্মান প্রদর্শনের যদি কেউ পরীক্ষা নিতে কিংবা তা যাচাই করতে চায় তবে মুসলমানদের কোন বন্ধু নয় বরং কট্টর শত্রুর সাক্ষাত সর্বাগ্রে নিতে পারে। কারণ, বন্ধুর পক্ষে বন্ধুর সাক্ষ্য তো একথা বলেও প্রত্যাখ্যান করা যায় যে, সে বন্ধুত্বের আতিশয্যের কারণে ওই সাক্ষ্য দিয়েছে; বাস্তবতা এর বিপরীতও হতে পারে। কিন্তু যার অন্তরে যাঁর পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়া হচ্ছে তাঁর প্রতি বিন্দুমাত্রও ভক্তি বা ভালবাসা নেই, সে যদি তার পক্ষে সাক্ষ্য দেয়, তবে তা তো অস্বীকার করার কোন যুক্তি বা কারণ থাকতে পারে না।
একথার ভিত্তিতে, ওরওয়াহ্ ইবনে মাস্‘ঊদের সাক্ষ্য অত্যন্ত প্রনিধানযোগ্য। লোকটার বিভিন্ন দেশ ও রাজা-বাদশার দরবারের আদব-শিষ্টাচার ও নিয়মাবলী সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান ছিলো। সুতরাং হুযূর-ই আক্রামের পবিত্র দরবারে সাহাবা-ই কেরামের অবস্থাদি, তাঁর প্রতি তাঁদের ভালবাসা, ভক্তি-শ্রদ্ধা ও আনুগত্যের ধরণ ইত্যাদি দেখার জন্য মক্কার কাফিরগণ ওরওয়াহ্ ইবনে মাস‘ঊদকেই পাঠিয়েছিলো। ওরওয়াহ্ হুযূর-ই আক্রামের পবিত্র দরবারে এসে স্বচক্ষে তাঁর প্রতি সাহাবীদের যেই ভক্তি-ভালবাসা ও প্রাণোৎসর্গ করণের প্রেরণা দেখেছেন তা তাঁকে দস্তুর মতো হতভম্ব করেই দিয়েছিলো। তিনি বলেছেন, বিভিন্ন দেশের বাদশাহ্, এমনকি রোমের বাদশাহ্ কায়সার ও ইরান-সম্রাট কিসরার দরবারের জাঁকজমক এবং তাদের প্রতি তাদের প্রজাদের যেই ভক্তি ও আনুগত্য দেখেছি, নবী-ই আকরামের পবিত্র দরবারে সাহাবা-ই কেরামের ভক্তি ও ভালবাসা এবং আনুগত্যের বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্নতর। অন্য কোথাও এমন শান পরিলক্ষিত হয় না।
ওরওয়া মক্কাবাসীদের নিকট ফিরে গিয়ে বর্ণনা দিয়েছিলেন-
اِنَّه لاَ يَتَوَضَّأُ اِلاَّ ابْتَدَ رُوْا وَضُوْءَ ه وَكَادُوْا يُقٰتِلُوْنَ عَلَيْهِ وَلاَ يَبْصُقُ بَصَاقًا وَتَنَخَمَّ نَخَامَةً اِلاَّ تَلَقَّوْهَا بَاكُفِّهِمْ فَدَلَكُوْا بِهَا وُجُوْهَهُمْ وَاَجْسَادَهُمْ وَلاَ تُسْقُطُ مِنْهُ شَعْرَةٌ اِلاَّ ابْتَدَا رُوْهَا وَلاَ يَحُدُّوْنَ اِلَيْهِ النَّظَرَ تَعْظِيْمًا لَه، [شفاء : ج ـ ২ : صفحه ـ৩১]
অর্থ: তিনি যখন ওযূ করতেন তখন তাঁর অনুসারীগণ তাঁর ওযূতে ব্যবহৃত পানির উপর এমনভাবে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলেন, যেমন প্রদীপের উপর পতঙ্গগুলো। যখন তিনি থুথু ফেলতেন কিংবা নাক পরিষ্কার করতেন, তখন ওই তরল বস্তুগুলো যমীনে পড়ে তা না; বরং তা কারো না কারো হাতের তালুতেই পড়তো। অতঃপর তা তাঁদের চেহারায় কিংবা শরীরে মালিশ করে দিতেন। তাঁর সম্মানার্থে তাঁরা তাঁর প্রতি স্থির দৃষ্টিতে দেখছিলো না। বলাবাহুল্য, এসব ঘটনার বর্ণনা দেওয়ার সাথে সাথে ওরওয়া মক্কার কাফিরদেরকে তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধে না জড়িয়ে সন্ধি করে নেয়ার পরামর্শও দিয়েছিলেন। হুদায়বিয়ার সন্ধির অন্যতম কারণও এটাই ছিলো। [শেফা শরীফ: ২য় খন্ড, পৃ. ৩১]
হুযূর-ই আকরামের প্রতি সাহাবা-ই কেরামের ভক্তি ও ভালবাসার নমুনা দেখুন!
সাহাবা-ই কেরামের নবী-ভক্তির আরো কতিপয় ঘটনা নিম্নে উল্লেখ করার প্রয়াস পাচ্ছিঃ
এক. একদা সরকার-ই দু’ আলম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আপন খাদিমাহ্ হযরত উম্মে আয়মানকে বলেছিলেন, ‘‘ওই পেয়ালায় প্রস্রাব আছে। সেটা ফেলে দিয়ে এসো!’’ তিনিও (উম্মে আয়মান) পেয়ালাটা নিয়ে গেলেন; কিন্তু ফেলে দেওয়ার পরিবর্তে প্রস্রাবটুকু পান করে ফেললেন; ফিরে আসার পর হুযূর-ই আকরাম বললেন, ‘‘ প্রসাবটুকু কি করেছো?’’ তিনি আরয করলেন, ‘‘হুযূর! আমার পিপাসা হলো। তাই আমি তা পান করে নিয়েছি।’’ একথা শুনে হুযূর-ই আক্রাম একথা বলেননি, ‘‘প্র¯্রাব তো নাপাক হয়, এটা তুমি কেন পান করে ফেললে? যাও, মুখ ধুয়ে পবিত্র করে এসো, আগামীতে কখনো এমনটি করবেনা?’’ বরং হুযূর-ই আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম মুচকি হাসলেন আর এরশাদ করলেন, اَمَا وَاللهِ لاَ يَسْتَجِعَنَّكِ بَطْنَكِ اَبَدًا (আল্লাহরই শপথ! তোমার পেটে কখনো ব্যথা অনুভূত হবে না।’’ সুতরাং তাই হলো। আমৃত্যু তাঁর পেটে কখনো ব্যাথ্যা অনুভূত হয়নি। [সীরাতে হালবিয়াহ্: ২য় খন্ড: পৃ.৫১৫]
দুই. হযরত উম্মে রাফি’ সালমা বলেছেন, হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম গোসল করেছেন। অতঃপর আমি তাঁর গোসল শরীফের পানি পান করে নিলাম। তারপর সেটা হুযূর-ই আক্রামকে জানালাম। তিনি এরশাদ করলেন- اِذْهَبِىْ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ بِذٰلِكَ عَلَى النَّارِ (যাও, আল্লাহ্ তা‘আলা এ জন্য তোমার শরীরকে দোযখের উপর হারাম করে দিয়েছেন। [আয়নী: ১ম খ-: পৃ. ৭৭৮, খাসাইসে কুবরা: ২য় খন্ড, পৃ. ২৫৫]
তিন. হযরত মালিক ইবনে সিনান রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু উহুদের যুদ্ধে হুযূর-ই আক্রামের শরীর মুবারক থেকে নির্গত রক্ত পান করে নিয়েছিলেন। হুযূর-ই আকরাম যখন তা জানতে পারলেন, তখন বললেন- مَنْ سَرَّه اَنْ يَنْظُرَ اِلى مَنْ لاَّ تَمُسُّه النَّارُ فَلْيَنْظُرْ اِلى مَالِكِ بْنِ سِنَانٍ
অর্থ: যে ব্যক্তি ওই ব্যক্তিকে চাইতে ইচ্ছা করে, যাকে দোযখের আগুন স্পর্শ করবে না (জ্বালাবে না), সে যেন মালিক ইবনে সিনানকে দেখে নেয়। [সীরাতে হালাবিয়া: ২য় খন্ড, পৃ; ৪১৫]
এ কতিপয় ঘটনা থেকে একদিকে হুযূর-ই আক্রামের প্রতি সাহাবা-ই কেরামের অগাধ ভক্তি, তা’যীম ও ভালবাসার প্রমাণ মিলে, অন্য দিকে একথাও সুস্পষ্ট হলো যে, হুযূর-ই আক্রামের ব্যবহৃত জিনিষ, নূরানী শরীর থেকে নির্গত বস্তুগুলো (فضلات) উম্মতের জন্য পাক-পবিত্র (طيب وطاهر)। সেগুলোর ব্যবহার উম্মতের জন্য বরকতম-িত এবং দোযখ থেকে, দুনিয়ায় রোগ-ব্যাধি ও বালা-মুসীবৎ থেকে বাঁচার উপায়।
এখন এ প্রসঙ্গে প্রসিদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য ফিক্বহ্ শাস্ত্রের কিতাবাদির উদ্ধৃতি দেখুন- দুররে মুখতার: ১ম খন্ড, ২২২পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে-
صَحَّحَ بَعْضُ اَئِمَّةِ الشَّافِعِيَّةِ طَهَارَةَ بَوْلِه صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَسَائِرِ فُضْلاَتِه وَبِه قَالَ اَبُوْ حَنِيْفَةَ كَمَا نَقَلَه فِى الْمَوَهِبِ اللَّدُنِّيَّةِ عَنْ شَرْحِ الْبُخَارِىِّ لِلْعَيْنِىِّ وَقَالَ الْحَافِظُ اِبْنُ حَجَرٍ تَظَافَرَتِ الْاَوَّلِيَّةُ عَلى ذلِكَ وَعَدَّ الْاَئِمَّةُ مِنْ خَصَائِصِه ـ
অর্থ: সরকার-ই দু’ আলম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর প্র¯্রাব মুবারক বরং তাঁর শরীর মুবারক থেকে নির্গত অন্যসব কিছু (فضلات) পাক হওয়ার বিষয়টি সহীহ ও বিশুদ্ধ বলেছেন কিছু সংখ্যক শাফে‘ঈ ইমাম আর এটা ইমাম আ’যম আবূ হানীফা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুরও অভিমত। তেমনিভাবে ‘আয়নী, শরহে বোখারীর বরাতে ‘মাওয়াহিবে লাদুন্নিয়ায়’ও উদ্ধৃত হয়েছে। হযরত আল্লামা ইববে হাজর বলেছেন, এর পক্ষে দলীল অনেক ও অতি মজবুত। তাছাড়া, দ্বীনের ইমামগণ এটাকে নবী-ই আকরামের ‘খুসূসিয়াৎ’ (বৈশিষ্ট্যাবলী)’র মধ্যে গণ্য করেছেন।
উল্লেখ্য যে, আমরা কোন কিছু আহার করলে তা আবর্জ্জনা ও নাপাক বস্তুতে পরিণত হয়ে যায়; কিন্তু হুযূর-ই আক্রাম যা পানাহার করতেন, তাও নূর হয়ে যায়। একথা আমাদের দ্বীন ও মিল্লাতের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ও বুযুর্গগণ অতি উত্তমরূপে বুঝেছেন। তাঁরা একথাও অনুধাবন করেছেন যে, নূরের স্পর্শে যে জিনিষ থাকে তাও নূর হয়ে যায়।
আর একথাও জেনে রাখা দরকার যে, তা’যীম ও আদব প্রদর্শনের যেসব পন্থা শরীয়তের প্রবর্তক নিষেধ করেননি, তা নিশ্চিতভাবে জায়েয। তা করার হুকুম যদিও সুস্পষ্টভাবে পাওয়া না যায়। এ ধরনের কিছু দৃষ্টান্ত আমরা নিম্নলিখিত ঘটনা ও বর্ণনাগুলো থেকেও অনুধাবন করতে পারিঃ
এক. হযরত ওসমান গণী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেছেন-
وَلاَ وَضْعَتُ يَمِيْنِىْ عَلى فَرْجِىْ مُنْذُ بَايَعْتُ رَسُوْلَ اللهِ
صَلَّى الله عليه وسلم
অর্থ: আমি যেদিন রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র হাতে বায়‘আত গ্রহণ করেছি, ওই দিন থেকে, ওই সময় থেকে কখনো আমার ডান হাত আমার লজ্জাস্থানের উপর রাখিনি। (অর্থাৎ ওই হাতে তা স্পর্শ করিনি)। [তা’রীখুল খোলাফা: পৃ. ১৯৪]
সুবহানাল্লাহ্! সায়্যিদুনা হযরত ওসমান যিন্নূরাঈন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ওই হাতকে সম্মানের উপযোগী মনে করেছেন, যে হাত একবার হুযূর-ই আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর হাত মুবারকের সাথে লেগেছে।
দুই. হযরত সাইয়্যিদুনা আবূ মাহযূরা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর শির মুবারকের কিছু চুল এত লম্বা ছিলো যে, যখন তিনি তা খুলতেন, তখন তা মাটিকে স্পর্শ করতো। লোকেরা আরয করলেন, ‘‘আপনি এ চুল কাটছেন না কেন?’’ তদুত্তরে তিনি বলেন, ‘‘ওই চুলগুলোকে আমি আমার মাথা থেকে কিভাবে পৃথক করতে পারি, যেগুলোকে হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম নিজ হাত মুবারকে ধরেছেন। এর ঘটনা নিম্নরূপঃ
আমার ছেলে বেলায় হুযূর-ই আক্রাম কিছু ছেলের পার্শ্ব দিয়ে তাশরীফ নিয়ে যাচ্ছিলেন। আমিও ওই ছেলেগুলোর সাথে খেলা করছিলাম। হুযূর-ই আকরাম স্নেহভরে আমার মাথার উপর হাত বুলিয়ে নিলেন। এ কারণে আমার মহিয়সী আম্মা আমার মাথা থেকে ওই চুলগুলো পৃথক করতে দেননি।
তিন. হযরত আহমদ ইবনে ফাদ্বভিয়াহ্ খুব দক্ষ তীরান্দায এবং প্রসিদ্ধ ইসলামী যোদ্ধা ছিলেন। তিনি বলেন, مَا مَسَسْتُ الْقَوْسَ بِيَدِىْ بِغَيْرِ وُضُوْءٍ مُنْذُ بَلَغَنِىْ اَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَخَذَ الْقَوْسَ بِيَدِه
অর্থ: আমি ওই ধনুক ওযূ বিহিন অবস্থায় স্পর্শ করিনি যখন থেকে আমি জানতে পেরেছি যে, হুযূর-ই আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম নিজ হাত মুবারকে সেটাকে স্পর্শ করেছেন (ধরেছেন)।
চার. হযরত ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা, যিনি সুন্নাতে রসূলের নিষ্ঠাবান অনুসারী হিসেবে বিশ্ববিখ্যাত, তাঁর অবস্থা, ‘শেফা শরীফের প্রণেতা মহোদয়’ লিখেছেন-
رُؤِىَ اِبْنُ عُمَرَ وَاضِعًا يَدَه عَلى مَقْعَدِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ الْمِنْبَرِ ثُمَّ وَضَعَهَا عَلى وَجْهِه
অর্থ: হযরত ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুকে অনেকবার দেখা গেছে যে, তিনি রসূলে আকরামের মিম্বর শরীফের ওই বিশেষ স্থানের উপর, যার উপর হুযূর আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম বসতেন, নিজের হাত রেখে তাতে চুমু খাচ্ছিলেন।
পাঁচ. হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে রাওয়াহা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে একবার কোন কাজে আনসার গোত্রে গিয়েছিলেন। বাহনের খিদমত সম্পন্ন করছিলো একটি গাধা। ঘটনাচক্রে গাধাটি প্রস্রাব করে দিলো। তখন আবদুল্লাহ্ ইবনে উবাই মুনাফিক্ব, যে ওই মজলিসে ছিলো, রুমাল দ্বারা তার নাক বন্ধ করে নিলো। আর বললো, ‘‘এটাকে শীঘ্র এখান থেকে নিয়ে যাও! সেটার দুর্গন্ধ আমাদেরকে কষ্ট দিচ্ছে।’’ হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে রাওয়াহা একথা শুনে তাৎক্ষণিকভাবে বললেন- وَاللهِ اِنَّ بَوْلَ حِمَارِه لَاَطْيَبُ مِنْ مِّسْلِكَ
অর্থ: আল্লাহরই শপথ! হুযূর-ই আকরাম যে গাধাকে নিজের বাহন হিসেবে গ্রহণ করেছেন, ওই গাধার প্রস্রাব তোর মিশ্ক ও আম্বরের চেয়েও খুশবুদার। [মাদারিক: ৪র্থ খ-: ১৬৯পৃ.]
সুবহানাল্লাহ্! হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে রাওয়াহা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ওই বাহনের মানহানিও বরদাশত করেননি, যেটার সাথে হুযূর-ই আক্রামের সম্পর্ক অনেক দূরের। বাস্তবিকপক্ষে ঈমানদারদের দাবীও হচ্ছে এটাই যে, হুযূর-ই আকরামের পবিত্র দরবারে সাথে সম্পর্ক রাখে এমন জিনিষকেও উভয় জাহানের মূলধন মনে করা।
বলাবাহুল্য, আহলে বায়ত এবং সাহাবা-ই কেরামও একান্ত সম্মানের পাত্র হওয়া নবী-ই আকরামের সাথে তাঁদের সম্পর্কের কারণেই। সুতরাং তাঁদের প্রতি ভালবাসা হচ্ছে ঈমান এবং তাঁদের প্রতি অবমাননা ও শত্রুতা হচ্ছে মুনাফেক্বী।
পরিশেষে, পরম করুণাময়ের মহান দরবারে প্রার্থনা যেন তিনি ওইসব বান্দার উপর দয়ার বৃষ্টি বর্ষণ করুন, যাঁদের মাধ্যমে এখনো ভূপৃষ্ঠে ঈমান তাজা রয়েছে, ইশক্বে রসূলের মাতোয়ারাগণ আজও যাঁদেরকে স্মরণ করে নিজেদের হৃদয়-মনকে আলোকিত করার সুযোগ পান। আ-মী-ন।
মহাপরিচালক-আনজুমান রিসার্চ সেন্টার, চট্টগ্রাম।