Anjuman-E Rahmania Ahmadia Sunnia Trust

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অ্যাকাডেমিক গবেষণায় আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ (রহ.)

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অ্যাকাডেমিক গবেষণায় আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ (রহ.)

ইমরান হুসাইন তুষার>

গাউছে জামান আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রহমাতুল্লাহি আলাইহি। একাধারে আধ্যাত্মিক সাধক, সত্যের প্রচারক, মুসলিম জাহানের অনন্য ব্যক্তিত্ব, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ ও দার্শনিক। তিনি ১৯১৬ সালে বর্তমান পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে হাজারা জিলার সিরিকোট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।(১)  তিনি ছিলেন প্রখ্যাত অলি-ই কামিল কুতুবুল আউলিয়া আল্লামা সৈয়দ আহমদ শাহ সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’র দ্বিতীয় পুত্র। স্থানীয় উস্তাদের নিকট মাত্র ১১ বছর বয়সে কুরআন মজিদ হিফয সমাপ্ত করেন। ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানে সকল শাখা-প্রশাখায় প্রায় ষোল বছর যাবৎ ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। প্রখর মেধা,  তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তা ও অসাধারণ স্মৃতিশক্তির অধিকারী এ মহান ব্যক্তি সাতাশ বছর বয়সে যাহিরী জ্ঞার্নাজন সম্পন্ন করেন ও সর্বশেষ সনদ লাভ করেন। তিনি তৎকালীন শ্রেষ্ঠ আলিম ও ফকীহ, মুফাস্সিরে কুরআন, মুহাদ্দিসে আ‘যম (পাকিস্তান) আল্লামা সরদার আহমদ লায়লপুরী রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হির নিকট ধর্মীয় জ্ঞানের দরস গ্রহণ করেছিলেন। জগত বিখ্যাত আলিম সদরুল আফাযিল আল্লামা না‘ঈম উদ্দীন মুরাদাবাদী রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি’ও ছিলেন তাঁর অন্যতম উস্তাদ। তাছাড়া সুদীর্ঘ ষোল বছর স্বীয় পিতা আল্লামা সৈয়দ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রহমাতুল্লাহি আলাইহি’র প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে বহুমুখী ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করেন। সাথে সাথে তরীকত শিক্ষার স্তরগুলোও অতিক্রম করতে সক্ষম হন। (২)

তিনি পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে জন্মগ্রহণ করলেও তাঁর দ্বীন প্রচার, সমাজ সংস্কার ও শরী‘আত-তরীকতের বহুবিধ কর্মকা- কেবল তাঁর মাতৃভূমিতেই কেবল সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং মুসলিম মিল্লাতের তত্ত্বাবধান, মুসলিম জনতার ঈমান-আকীদা সংরক্ষণ এবং ইসলামের সঠিক রূপরেখা সুন্নী মতাদর্শের প্রচার-প্রসারে তিনি জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলেন। ১৯৫৮ সালে তিনি পিতা হতে খিলাফতপ্রাপ্ত হন। হযরত সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহি আলায়হির ইন্তেকালের পর ১৯৬১ সালে দরবারে সিরিকোটের সাজ্জাদানশীন হন এবং আনজুমান-এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীন বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ১৯৭৬ সালে আগমন করেন এবং ১৯৮৬ অবধি এ দেশে এসে শরী‘আত-ত্বরীকতের দিক-নির্দেশনা প্রদান করে সুন্নীয়তের নেতৃত্ব দেন। এই অঞ্চলে তাঁর উল্লেখযোগ্য সংস্কারমূলক কাজ গুলো মধ্যে রয়েছে। দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মাদরাসা); আধ্যাত্মিক চর্চা কেন্দ্র (খানকাহ) প্রতিষ্ঠা; আকায়েদে আহলে সুন্নাতের সমৃদ্ধ প্রকাশনা জগত গড়ে তোলা; ইসলামী সাংস্কৃতিক রেঁনেসায় জশনে জুলুস সংযোজন; মাসলাকে আ’লা হযরতের বহুমুখি চর্চায় উদ্ধুদ্ধ করণ; আযানের পূর্বে ও পরে সালাতু সালামের পুন:প্রচলন, আধ্যাত্মিক গঠন প্রতিষ্ঠা, মিলাদ কিয়ামে সালামের রেযা সংযোজন ইত্যাদি।

এ মহান মনীষীর জীবন ও কর্ম পর্যালোচনায় দেখা যায় পুরো জীবন জুড়েই তিনি ইসলামের মূলধারা আকায়েদে আহলে সুন্নাতের মৌলিক দর্শন সমাজে বাস্তবায়নে তৎপর ছিলেন। তাই তাঁর সমগ্র জীবনটাই গবেষণার উপজীব্য। সারা বিশ্বেই অ্যাকাডেমিক পর্যায়ে নানা বিষয়ে গবেষণা হয়ে থাকে দুইটি ধাপে। ১. মাস্টার্স অব ফিলোসফি বা এম.ফিল এবং ২. ডক্টর অব ফিলোসফি বা পিএইচ.ডি। শুধুমাত্র পিএইচ.ডি গবেষণায় আট’টি ধাপে থাকে। এর প্রথম ধাপে আবেদন, সুপারভাইজরের সম্মতিক্রমে বিষয় বস্তু নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। তারপর দ্বিতীয় ধাপটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ ধাপে লিটারেচার রিভিউ, সংশ্লিষ্ট জার্নাল আর্টিকেল, কনফারেন্স প্রসিডিং এবং এ সংশ্লিষ্ট গবেষণাপত্র রিভিউ করে একটি সারাংশ তৈরীর মত দুর্জ্ঞেয় কাজ থাকে। এছাড়াও বাকি ছয়টি ধাপ বেশ সময় সাপেক্ষ এবং দুরূহ। বাংলাদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বহু মনীষীদের নিয়ে এম.ফিল ও পিএইচ.ডি গবেষণা হয়েছে। এসব গবেষণায় ব্যক্তি ও তাঁর সংস্কারের নানাদিক সমভাবে গুরুত্ব পেয়ে থাকে। একটি আদর্শ পিএইচ.ডি থিসিসের ক্ষেত্রে কয়েক শতাধিক পৃষ্ঠার ব্যাপ্তি হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সহজেই অনুমেয় সেই মহান ব্যক্তির কর্মপরিধি। গাউসে জামান আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি’র নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকাডেমিক পর্যায়ে গবেষণা খুব প্রাসঙ্গিক। বিশেষত ইসলামী শিক্ষা বিস্তারের তাঁর নানামুখি উদ্যোগের কারণেই এদেশে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইসলামের সঠিক রূপরেখা আকায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আদর্শকে ধারণ করতে পেরেছে। দৃঢ় ঈমান ও বিশুদ্ধ আকিদা ছাড়া ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তি লাভ সম্ভব নয়। সাধারণ মানুষের ঈমান ও আকিদার হেফাজতে মুহাক্কিক আলিম তৈরী অপরিহার্য। প্রকৃত আলিমের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে ইমাম মালেক রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি বলেন, “যে ব্যক্তি ফিকাহ ও তাসাউফ উভয় প্রকার ইলম উপার্জন করেছেন, তিনি হচ্ছেন মুহাক্কিক বা পরিপূর্ণ ও প্রকৃত আলিম।” আল্লাহ পাক কুরআনে পাকে আলেমের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাকের বান্দাদের মধ্য হতে শুধুমাত্র আলিমগণই আল্লাহপাককে ভয় করে।” (৩) আর তাই আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি সত্যিকারের আলিম তৈরীর জন্য দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁর কালজয়ী বাণী-কাম কারো, ইসলাম কো বাচাঁও! দ্বীন কো বাচাঁও সাচ্চা আলিম তৈয়ার করো! (৪) আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি’র প্রতিষ্ঠিত দ্বীনি বিদ্যানিকেতন হতে অধ্যয়ন করে অগণিত শিক্ষার্থী যোগ্য আলিম হয়ে দেশ-বিদেশে দ্বীনি খেদমত করে যাচ্ছেন।

দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে “আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি:
ইসলামী শিক্ষা বিস্তারে তাঁর অবদান” শিরোনামে পিএইচ.ডি. গবেষণা সম্পন্ন :
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক এবং বর্তমান ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ স্যারের তত্ত্বাবধায়নে চট্টগ্রাম জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ার তাফসির বিভাগের অধ্যাপক, কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া কামিল মাদরাসার সাবেক আরবি প্রভাষক ও শাহজাহানপুর রেলওয়ে গাউছুল আ’যম জামে মসজিদের খতিব ড. মুফতি মুহাম্মদ বখতিয়ার উদ্দিন কাদেরী “আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ (র:) : ইসলামী শিক্ষা বিস্তারে তাঁর অবদান” শিরোনামে তাঁর উত্থাপিত পিএইচ.ডি. (ডক্টর অব ফিলোসফি) ডিগ্রির জন্য অভিসন্দর্ভটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৭ সালের জুলাই মাসে অনুমোদন দেয়। এটি হুজুর গাউসে জামান আল্লামা হাফেজ কারী সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি ’র উপর প্রথম অ্যাকাডেমিক পর্যায়ে উচ্চতর গবেষণা। দীর্ঘ ৪১০ পৃষ্ঠার এই গবেষণাপত্রে গবেষক নয়টি অধ্যায়ে বিন্যাস করেছেন। (৫) অভিসন্দর্ভটির প্রথম অধ্যায়ে আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি-এর জন্ম ও বংশ পরিচয়, শৈশব কাল, শিক্ষার্জন, তরীকতের দীক্ষাগ্রহণ, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, আধ্যাত্মিক সাধনা ও খিলাফত লাভ, সিলসিলার শাজরা, হজ্জ পালন, বিবাহশাদী, সন্তান-সন্ততি, বিদেশ ভ্রমণ, মাদ্রাসার দায়িত্ব পালন, বাংলাদেশে আগমন, খিলাফত প্রদান, দেশ-বিদেশের প্রখ্যাত উলামায়ে কিরামের সাথে সম্পর্ক, তাঁর কারামত, প্রসিদ্ধ কয়েকজন আলিম মুরীদ, তাঁর সম্পর্কে বিভিন্ন বুদ্ধিজীবীর অভিমত, মালফূযাত, ইন্তিকাল ইত্যাদি বিষয় উপস্থাপন করা হয়েছে।

দ্বিতীয় অধ্যায়ের ইসলামী শিক্ষার স্বরূপ ও প্রকৃতি, ইসলামী শিক্ষার মূল উৎস, ইসলামী শিক্ষার সংজ্ঞা, ইসলামী শিক্ষার গুরুত্ব, ইসলামী শিক্ষার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ, যুগে যুগে ইসলামী শিক্ষা, মহানবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র সময়কালে শিক্ষার সূচনা, খোলাফায়ে রাশিদীনের যুগে ইসলামী শিক্ষার বিকাশ, উমাইয়া ও আব্বাসীয় যুগে ইসলামী শিক্ষা, ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামী শিক্ষা, বাংলাদেশে ইসলামী শিক্ষা ইত্যাদি সম্পর্কে উপস্থাপন করা হয়েছে।

তৃতীয় অধ্যায়ে “ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশে আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রহমাতুল্লাহি আলাইহি’র ধর্মীয়, সমাজিক ও রাজনৈতিক চিন্তাধারা” সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। এখানে ধর্মের সংজ্ঞা, ধর্মের স্বরূপ ও প্রকৃতি, ইসলাম পরিচিতি, ইসলাম ও মুসলিম দর্শন, আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি’র ধর্মীয় চিন্তাধারা, সমাজের সংজ্ঞা, ইসলামী সমাজের পরিচয়, ইসলামী সমাজের মূল বুনিয়াদ, উপমহাদেশে মুসলমানদের সামাজিক অবস্থা, আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রহমাতুল্লাহি আলাইহি’র সমাজিক ও রাজনৈতিক চিন্তাধারা ইত্যাদি আলোকপাত করা হয়েছে।

চতুর্থ অধ্যায়ে আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি’র সমসাময়িক প্রসিদ্ধ কয়েকজন মুসলিম মনীষী-আল্লামা মুফতী আহমদ ইয়ার খান না‘ঈমী রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি, আল্লামা মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ আমীমুল ইহ্সান রহমাতুল্লাহি আলাইহি, আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ আযীযুল হক শে‘রে বাংলা রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি, আল্লামা শাহ্্ আবু জা‘ফর মুহাম্মদ সালেহ্, রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি, আল্লামা সরদার আহমদ লায়লপূরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি, আল্লামা মুফতী শফী‘ উকাড়ভী রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি, আল্লামা খাজা আব্দুল মজিদ শাহ্ রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি, আল্লামা মুফতী মুস্তাফা রেযা খান নূরী বেরলভী রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি। এ সকল মনীষীদের জীবন ও কর্ম, ইসলামী শিক্ষা বিস্তারে তাঁদের অবদান এবং আল্লামা তৈয়্যব শাহ্ রহমাতুল্লাহি আলাইহি’র সাথে তাঁদের সম্পর্কের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।

পঞ্চম অধ্যায়ের ইসলামী শিক্ষা বিস্তারে আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রহমাতুল্লাহি আলাইহি’র প্রাতিষ্ঠানিক অবদান সমূহ তুলে ধরা হয়েছে। তাঁর প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসা গুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ও কার্যক্রম এবং তাঁর পৃষ্ঠপোষকাতায় পরিচালিত দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম আধ্যাত্মিক ও সামাজিক সংস্থা আন্জুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট’র কার্যক্রম সম্পর্কেও বর্ণনা করা হয়েছে।

ষষ্ঠ অধ্যায়ে খানকাহ্ পরিচিতি, খানকাহ্ ভিত্তিক ইসলামী কার্যক্রম, নৈতিক চরিত্র প্রতিষ্ঠায় খানকাহ্’র অবদান, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় খানকাহ্, ইসলাম প্রচারে খানকাহ্’র গুরুত্ব, ইসলামী শিক্ষা বিস্তারে আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রহমাতুল্লাহি আলাইহি’র প্রতিষ্ঠিত খানকাহ্সমূহ পরিচিতি ও কার্যক্রম তুলে ধরা হয়েছে।

সপ্তম অধ্যায়ের ইসলামী সংস্কৃতির বিকাশে আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রহমাতুল্লাহি আলাইহি’র ভূমিকা এবং ইসলামী সংস্কৃতির পরিচয়, ইসলামী সংস্কৃতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, ইসলামী সংস্কৃতির বিবর্তন ও রূপরেখা, সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে মুসলিম মিল্লাত, ইসলামী সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তাঁর ভূমিকা, জশ্নে জুলূসে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম, পূর্ববর্তী মুজাদ্দিদের সংস্কার কর্মের ব্যাপক প্রসার, আযানের পূর্বে ও পরে দরুদ শরিফ প্রচলন, উরস, ফাতিহা, গিয়ারভী শরিফ প্রচলন, মিলাদ কিয়ামে আ’লা হযরতের সালামে রেযা’র সংযোজন ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

অষ্টম অধ্যায়ে ইসলামী শিক্ষার উন্নয়নে আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রহমাতুল্লাহি আলাইহি’র রচনা ও প্রকাশনা পরিচিতি তুলে ধরা হয়েছে। এখানে তাঁর নূরানী তাকরীর, মাজমু‘আয়ে সালাওয়াতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম), আওরাদে কাদেরিয়া, মাসিক তরজুমান, অন্যান্য সাময়িকী ও বার্ষিকী সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।
নবম অধ্যায়ে ইসলাম প্রচারে হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র ঐতিহাসিক বক্তৃতা ও পত্রাবলি, ইসলাম প্রচারে সাহাবায়ে কিরামের পত্রাবলি, ইসলাম প্রচারে আউলিয়া কিরামের বক্তৃতা ও পত্রাবলি, ইসলামী শিক্ষার উন্নয়নে আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রহমাতুল্লাহি আলাইহি’র বক্তৃতা ও পত্রাবলি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

বিজ্ঞ গবেষক ড. মুফতি মুহাম্মদ বখতিয়ার উদ্দিন কাদেরী এই গবেষণাপত্রটি তৈরীতে ৯৯টি বাংলা ভাষার গ্রন্থ, ৫১টি আরবী, উর্দু ও ফার্সি গ্রন্থ, ১২টি অভিধান ও বিশ্বকোষ, ১৫টি প্রতিষ্ঠানের অফিস রেকর্ড, ১৩টি সাক্ষাৎকার, ১০টি ইংরেজি ভাষার গ্রন্থ, ৩৬টি জার্নাল, আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রহমাতুল্লাহি আলাইহি’র পাঁচটি পত্রসহ সর্বমোট ২৪১ গ্রন্থের অংশ বিশেষ সন্নিবেশিত করেছেন। যা নি:সন্দেহে অত্যন্ত দূর্বোধ্য কাজ। এ সকল তথ্য-তত্ত্ব সন্নিবেশিত হওয়ার মধ্যে দিয়ে গবেষণাপত্র নির্ভরযোগ্যতা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রহমাতুল্লাহি আলাইহি’র উপর গুরুত্বপূর্ণ জীবনালেখ্যে রূপ নিয়েছে।

বইসই প্রকাশনী হতে বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে বইমেলা ২০২৩-এ আমার সংকলিত ১২৮ পৃষ্ঠা সম্ভলিত ‘অ্যাকাডেমিক গবেষণায়: গাউছে পাক, আ’লা হযরত ও দরবারে সিরিকোট প্রসঙ্গ’ শিরোনামে গবেষণাপত্রেও এ অভিসন্দর্ভ পর্যালোচনাটি সন্নিবেশিত হয়েছে। এছাড়াও এতে হুজুর শাহেন শাহে বাগদাদ গাউসে পাক হযরত আব্দুল কাদের জিলানী রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি, চতুর্দশ শতাব্দির মুজাদ্দিদ ইমাম আ’লা হযরত শাহ আহমাদ রেযা খান রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও হুজুর শাহেন শাহে সিরিকোটি রহমাতুল্লাহি আলাইহি’র হাত ধরে বাংলাদেশে বিস্তৃত সিলসিলায়ে কাদেরিয়া আলিয়ার মাশায়েখ হাযরাতদের নিয়ে অ্যাকাডেমিক পর্যায়ে উচ্চতর গবেষণা বিষয়টি নিয়েই কিছু তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হয়। সর্বোমোট ২টি এম.ফিল ও ৫টি পিএইচ.ডি ডিগ্রি পর্যালোচনা এবং একটি গবেষণার ধারণাপত্র রয়েছে।

টিকা:
১. শাজরা শরীফ, দরবারে আলীয়া কাদেরিয়া, আনজুমান-এ-রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট, চট্টগ্রাম, ৪৬তম সংস্করণ, ২০২২, পৃষ্ঠা-১৪।
২. আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ (র:): ইসলামী শিক্ষা বিস্তারে তাঁর অবদান পিএইচ.ডি অভিসন্দর্ভ : ড. মুফতি মুহাম্মদ বখতিয়ার উদ্দিন কাদেরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ২০১৭, পৃষ্ঠা-১০।
৩. সূরা ফাতির : ২৮
৪. শাজরা শরীফ, দরবারে আলীয়া কাদেরিয়া, আনজুমান-এ-রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট, চট্টগ্রাম, ৪৬তম সংস্করণ, ২০২২, পৃষ্ঠা-৮৩।
৫. আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ (র:): ইসলামী শিক্ষা বিস্তারে তাঁর অবদান পিএইচ.ডি অভিসন্দর্ভ : ড. মুফতি মুহাম্মদ বখতিয়ার উদ্দিন কাদেরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ২০১৭, পৃষ্ঠা:৯-১৩।

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা প্রধান, বইসই, ঢাকা।