যাদের উপর কোরবানী ওয়াজিব নয় তাদের আইয়্যামে তাশরীকের তাকবীর ও ঈদুল আযহার নামায আদায় করতে হবে কিনা?
মুহাম্মদ আবুল হোসাইন
আলফালাহ্ গলি, ২নং গেইট,
চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: যাদের উপর কোরবানী ওয়াজিব নয় তাদের আইয়্যামে তাশরীকের তাকবীর ও ঈদুল আযহার নামায আদায় করতে হবে কিনা? জানালে ধন্য হব।
উত্তর: সামর্থবান না হওয়ায় কোরবানী ওয়াজিব না হলেও আইয়্যামে তাশরীকের তাকবীর ও ঈদুল আযহার নামায অবশ্যই পড়তে হবে যেহেতু কুরবানি ওয়াজিব হওয়া আর আইয়্যামে তাশরীকের তাকবীর পাঠ করা ও ঈদুল আযহার নামায আদায় করা ভিন্ন ভিন্ন বিষয়। মহান আল্লাহ্ তা’আলা পবিত্র কুরআন মজীদে ইরশাদ করেছেন- واذكروا الله فى ايام معدوداتٍ অর্থাৎ তোমরা নির্দিষ্ট কয়েকদিন বেশি করে আল্লাহর জিকির/আল্লাহকে স্মরণ কর। [সূরা বাক্বারা, আয়াত-২০৩] এই আয়াতে নির্দিষ্ট দিন বলতে তাফসির বিশারদগণের মতে ‘আইয়্যামে তাশরীক’কে বুঝানো হয়েছে আর তা মাহে জিলহজ্বের ৯ তারিখ ফজর হতে ১৩ তারিখ আসর নামাজ পর্যন্ত এ তিন দিন। ঈদুল আযহার তথা জিলহজ্বের ১০ তারিখ দিন সহ এ দিনগুলোতে রোযা রাখা হারাম। কেননা এদিন সমূহ মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য জেয়াফতের দিন । হাদিসে পাকে এ প্রসঙ্গে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন- ايام التشريق ايام اكل وشربٍ অর্থাৎ আইয়্যামে তাশরীক তথা জিলহজ্বের ১১, ১২ ও ১৩ তারিখের দিনসমূহ হলো পানাহার করার দিন। [সহীহ মুসলিম শরীফ, হাদিস নং-২৫৭৩]
তাই এ দিনগুলোতে রোযা রাখা মানে মহান আল্লাহর দেয়া যেয়াফত/মেজবানকে প্রত্যাখ্যান করা যা মারাত্মক অপরাধ। এ দিনগুলোতে মহান আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণের নিমিত্তে হানাফী মাযহাব মতে জিলহজ্ব-এর ৯ তারিখ ফজর থেকে ১৩ তারিখের আসর নামায পর্যন্ত ৫ (পাঁচ) দিন জমাতে শরিক মুসল্লিরা প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর আর একাকি পড়লে ফরজ নামাযের পর পুরুষের জন্য একবার উচ্চস্বরে তাকবীরে তাশরীক পড়া ওয়াজিব আর তিনবার পড়া মুস্তাহাব এবং মহিলারা পঞ্জেগানা ফরয নামাযের পর নিম্নস্বরে তাকবিরে তাশরীক পড়বে। আহনাফের মতে তাকবীরে তাশরীফ হলো- الله اكبر الله اكبر لا اله الا الله الله اكبر الله اكبر ولله الحمد নামাজ জামাতে পড়ুক বা একাকী পড়ুক তাকবীর বলা ফরয নামায শেষ করার সাথে সাথে ওয়াজিব। আর ঈদের নামাজ আদায় তাদের ওপর ওয়াজিব যাদের ওপর জুমার নামায ফরয। এ প্রসঙ্গে নুরুল ঈযাহ্ কিতাবে বর্ণনা এভাবে এসেছে-صلوة العيد واجبة فى الاصح من تجب عليه الجمعة بشرائطها অর্থাৎ যার উপর জুমুআর নামায ওয়াজিব এমন ব্যক্তির উপর জুমু’আর নামাজের শর্তাবলী স্বাপেক্ষে বিশুদ্ধতম অভিমত মোতাবেক ঈদের নামাযীও ওয়াজিব।
[ঈদের নামায অধ্যায়, নুরুল ঈযাহ, কৃত- আল্লামা হাসান ইবনে আলী আল ওয়াফারী (রহ.)]
সুতরাং প্রতীয়মান হল যে, কুরবানী ওয়াজিব হোক বা না হোক উপরোক্ত বর্ণনা মোতাবেক তাকবীরে তাশরীক পাঠ করা ও ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করা সকল মুকিম, সুস্থ মস্তিস্ক, বালেগ, মুসলিম পুরুষের জন্য ওয়াজিব। উল্লেখ্য যে, সামর্থ্যবান তথা কোরবানীর দিনসমূহে (জিলহজ্ব মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ, সূর্য অস্ত যাওয়ার আগ পর্যন্ত সময়ে) নেসাব পরিমাণ তথা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রোপা, চাঁদি বা তৎ পরিমাণ টাকার মালিকের উপর হানাফী মাযহাব অনুযায়ী আল্লাহর নামে তাঁরই সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে উক্ত দিনসমূহে কোরবানী আদায় করা ওয়াজিব। আর স্বীয় নাবালেগ সন্তান-সন্তুতির পক্ষে কোরবানী করা মুস্তাহাব। নেসাব পরিমাণ সম্পত্তির মালিক না হলে উক্ত দিনসমূহে সওয়াবের নিয়তে কোরবানী করা নফল। কিন্তু আইয়্যামে তাশরিকের তাকবির ও কোরবানীর ঈদের নামায ওয়াজিব হওয়ার জন্য নেসাব পরিমাণ সম্পত্তির মালিক হওয়া অপরিহার্য নয়। আর তাকবীরে তাশরিক ইমাম আযম হযরত আবু হানিফার মতে সুন্নাত আর ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমার মতে সকলের উপর ওয়াজিব। আর এটা অর্থাৎ ওয়াজিব হওয়াকে বিশুদ্ধতম অভিমত বলা হয়েছে যেমন প্রসিদ্ধ ফিক্হ্ গ্রন্থ তানভিরুল আবছার, আদদুররুল মুখতার হানাফী মাযহাবের অন্যতম কিতাবে ইমাম আলাউদ্দিন খাসকপি হানাফী রহ. বলেন- ويجب تكبير التشريق فى الاصح অর্থাৎ তাকবিরে তাশরিক বিশুদ্ধতম অভিমত অনুযায়ী ওয়াজিব। এ বিষয়ে অন্যান্য অভিমতও আছে ।
[আদদুররুল মুখতার, ২য় খন্ড, ১৭৭পৃ, আর রদ্দুল মোহতার, কৃত ইমাম ইবনে আবেদীন শামী হানাফী রহ. ২য় খন্ড, ১৮০পৃ, ঈদের নামায অধ্যায়।]