Anjuman-E Rahmania Ahmadia Sunnia Trust

নবী-ই আকরামের নাম মোবারকের পূর্বে ‘সাইয়্যেদুনা’ ব্যবহার করার দলীলাদি

নবী-ই আকরামের নাম মোবারকের পূর্বে ‘সাইয়্যেদুনা’ ব্যবহার করার দলীলাদি

মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মান্নান>

দুরূদ-ই ইব্রাহীমী ও অন্যান্য দুরূদ শরীফে এবং অন্যান্য সময়ে হুযূর-ই আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নাম মুবারক উচ্চারণ করা কিংবা লিখার সময় নাম মুবারকের পূর্বে ‘সাইয়্যেদুনা’ উপাধি বা বিশেষণটি উল্লেখ করা কিংবা কোন বিশেষণ ছাড়া শুধু নাম মুবারক উল্লেখ করার বিধান কি? এ প্রসঙ্গে এ নিবন্ধে সপ্রমাণ আলোকপাত করার প্রয়াস পাচ্ছি। বস্তুতঃ হুযূর-ই আক্রামের নাম মুবারকের পূর্বে ‘সাইয়্যিদুনা’ ও ‘রসূলুল্লাহ্’ ইত্যাদি বিশেষণ উল্লেখ করা হুযূর-ই আকরামের নাম মুবারক তথা তাঁর প্রতি তা’যীম বা সম্মান প্রদর্শনেরই পরিচায়ক। অন্যথায় এর ব্যত্যয় ঘটার সম্ভাবনা বেশী থাকে।

তাই প্রথমে দেখুন ‘নাম মুবারকের আদব’ প্রসঙ্গে
হযরত আল্লামা শায়খ মুহাম্মদ সুলায়মান ফারাজ ‘দালা-ইলুল মাহাব্বাতি ওয়া তা’যীমিল মাক্বামি ফিস্ সালাতি ওয়াস্ সালামি ‘আলা সায়্যিদিল আনামি’ (সৃষ্টিকুল শ্রেষ্ঠ নবী-ই আক্রামের প্রতি ভালবাসা ও তাঁর উপর সালাত ও সালাম পাঠের ক্ষেত্রে সম্মান প্রদর্শনের গুরুত্বের পক্ষে প্রমাণাদি) শীর্ষক একটি সপ্রমাণ প্রবন্ধ লিখেছেন। ওই প্রবন্ধে তিনি বলেছেন, নবী-ই আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতিটি প্রেমিক মুসলমানের উপর ওয়াজিব হচ্ছে ‘সায়্যিদুনা’ (আমাদের আক্বা ও মাওলা) বলে নাম নেওয়া। কেননা, এটা হচ্ছে হুযূর-ই আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর মহা মর্যাদার প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও তাঁর বরকতম-িত স্মরণের প্রতি সম্মান দেখানোরই শামিল। আল্লাহ্ তা‘আলা ঈমানদারদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন হুযূর-ই আকরামের শান বা মর্যাদার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের উপর গুরুত্বারোপ করা হয় এবং সম্মান প্রদর্শন ব্যতীত যেন তাঁর নাম না নেওয়া হয়। আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেছেন- لاَ تَجْعَلُوْا دُعَآءَ الرَّسُوْلِ بَيْنَكُمْ كَدُعَآءِ بَعْضِكُمْ بَعْضًا তরজমা: রসূলের আহ্বানকে তোমাদের পরস্পরের মধ্যে তেমনি স্থির করোনা, যেমন তোমরা একে অপরকে ডেকে থাকো। [সূরা নূর, আয়াত-৬৩, কান্যুল ঈমান]

আল্লামা সাভী তাঁর ‘তাফসীর’-এ বলেছেন আয়াতটার মর্মার্থ এ যে, তোমরা রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে ‘নাম ও কুনিয়াত’ দ্বারা ডেকোনা। অর্থাৎ ‘ইয়া মুহাম্মদু’, ‘ইয়া আবাল ক্বাসিম’ বলোনা; বরং পূর্ণ তা’যীম বজায় রেখে আহ্বান বা সম্বোধন করো। তিনি আরো বলেছেন যে, এ আয়াত দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, সম্মানসূচক শব্দাবলী ছাড়া নবী-ই আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে আহ্বান করা তাঁর হায়াত মুবারক (জীবদ্দশা)-এ যেমন জায়েয বা বৈধ নয়; তেমনি ওফাত শরীফের পরও বৈধ নয়। তাছাড়া, তাঁর প্রতি অসম্মান প্রদর্শনকারী কিংবা মানহানিকারী কাফির এবং দুনিয়া ও আখিরাতে মাল‘ঊন (অভিশপ্ত)।
আল্লামা ইবনে জারীরও এ আয়াতের তাফসীরে একই ধরনের কথা বলেছেন। আল্লামা সুয়ূতীও তাঁর প্রসিদ্ধ কিতাব ‘আল-ইকলীল ফি ইস্তিম্বাত্বিত তানযীল’-এ সম্মান বর্জিত শব্দাবলী দ্বারা হুযূর-ই আকরামকে ডাকা হারাম বলেছেন বরং তিনি বলেছেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ্’, ইয়া নবীয়্যাল্লাহ্’ বলে আহ্বান করতে হবে। তাঁর ওফাত শরীফের পরও এ বিধান বহাল রয়েছে। এভাবে এ মর্মে আরো বহু প্রমাণ রয়েছে।

এখন দেখুন ‘সাইয়্যিদুনা’ বলার যথার্থতা
আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেছেন- وَرَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَكَ তরজমা: আমি আপনার জন্য আপনার স্মরণকে সমুন্নত করেছি। [সূরা ইনশিরাহ্: আয়াত-৪, কান্যুল ঈমান]
যিক্র বা স্মরণ সমুন্নত হয় সম্মানসূচক উপাধিসমূহ দ্বারা। সায়্যিদুনা (আমাদের সরদার, আক্বা ও মাওলা)ও ওই ধরনের উপাধি ও বিশেষণ। এতদ্ভিত্তিতে আমরা নবী-ই আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে স্মরণ করার সময় ‘সায়্যিদুনা’ ব্যবহার করতে নির্দেশিত, তা বাদ দেওয়া আমাদের জন্য নিষিদ্ধি। কেননা, ‘সায়্যিদুনা’ ব্যতীত তাঁর পবিত্র নাম ব্যবহার করলে তাঁর একটি সম্মানসূচক উপাধি বর্জন করার নামান্তর হয়।
তাছাড়া, ‘সায়্যিদুনা’ উল্লেখ করলে বিরুদ্ধবাদীদের বেয়াদবী প্রদর্শনের পথ বন্ধ হয়ে যায়। (سدّ ذرائع)। তখন মুলহিদগণ (অপ্রকাশ্য কাফির বিশেষগণ) কর্তৃক নবী-ই আকরামের শানে বেয়াদবী করার সুযোগ পাবে না। ইমাম শাফে‘ঈ রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি বিষয়টি এভাবে সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, اَلرَّسُوْلُ (আলিফ-লাম সহকারে) বলা মাকরূহ; বরং মুস্তাহাব তথা পছন্দনীয় পন্থা হচ্ছে এভাবে বলা ‘রসূলুল্লাহ্’ (আল্লাহর রসূল)। কারণ, এ সম্বন্ধ পদে চূড়ান্ত পর্যায়ের সম্মান প্রদর্শন রয়েছে। এ সম্বন্ধ ব্যতীত اَلرَّسُوْلُ (রসূল) বললে মানহানির আশঙ্কাটুকু থেকে যায়। কেননা, তখন আল্লাহ্ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কারো রসূল (প্রেরিত) বুঝানো যেতে পারে। এ’তে মুলহিদ ও মুনাফিক্বগণ এ সুযোগ পেয়ে যাবে যে, তখন তারা আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো রসূল বুঝাবে। এ পথটা বন্ধ করার জন্য ইমাম শাফে‘ঈ বলেছেন, ‘আল্লাহর রসূল’ না বলে শুধু ‘রসূল’ শব্দের ব্যবহার করা উচিত হবে না।
তাছাড়া, এ সম্বন্ধ (اضافت) ‘তাশরীফী’ (تشريفى) বা বিশেষ মর্যাদা জ্ঞাপক হবে। তাই এ পন্থা বর্জন করলে আদবের বরখেলাপ হবার সম্ভাবনা থেকে যায়। বর্তমান যুগে নবী-ই আকরামের নাম মুবারকে ‘সায়্যিদুনা’ (আমাদের সরদার বা আক্বা) ব্যতীত ব্যবহার শুধু অনুচিত নয় বরং জঘন্যতর ব্যাপার হওয়াও অনিবার্য। কারণ ‘নাস্তিকগণ’ (مستشرقين) তো হুযূর-ই আকরামের নাম মুবারকের প্রতি সম্মান দেখানোর গরযই মনে করে না। তারা কোনরূপ উপাধি-বিশেষণ ছাড়াই হুযূর-ই আকরামের নাম উচ্চারণ করে থাকে। এমনকি কিছু কলেমাগো মুসলমান নামধারীও এ সম্পর্কে জঘন্য মন্তব্য করেছে। বলেছে-جس كا نام محمد يا على هو وه كسى چيز كا مختار نهيں (যার নাম ‘মুহাম্মদ’ কিংবা ‘আলী, তারা কোন কিছুর ইখ্তিয়ার বা ক্ষমতা রাখেনা।)
[তাক্বভিয়াতুল ঈমান: পৃ. ৪৯, কৃত. মৌং ইসমাঈল দেহলভী] এতদ্ভিত্তিতে, নবী-ই আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর স্মরণ ‘সায়্যিদুনা’ ব্যতীত করা জায়েযই নয়। কারণ, তাতে কাফিরদের সাথে সামঞ্জস্য পাওয়া যায়। তারা তো মানহানি সহকারে নবী-ই আক্রামের নাম নিয়ে ক্ষান্ত হয়, তাদের সম্পর্কে পবিত্র ক্বোরআনে এরশাদ হয়েছে-
وَ خُضْتُمْ كَالَّذِیْ خَاضُوْاؕ-اُولٰٓئِكَ حَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْ فِی الدُّنْیَا وَ الْاٰخِرَةِۚ-وَ اُولٰٓىٕكَ هُمُ الْخٰسِرُوْنَ তরজমা: এবং তোমরা অনর্থক আলাপ-আলোচনায় লিপ্ত হয়েছো, যেমন তারা লিপ্ত হয়েছিলো। তাদের কর্ম বিনষ্ট হয়েছে, দুনিয়া ও আখিরাতে এবং ওইসব লোক ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। [সূরা তাওবা: আয়াত-৬৯, কানযুল ঈমান]  তাছাড়া, আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেন-وَقُوْلُوْا لِلنَّاسِ حُسْنًا (লোকদেরকে ভাল কথা বলো। [সূরা বাক্বারা: আয়াত-৮৩, কানযুল ঈমান]

কোন কোন তাফসীরকারক বলেছেন, এখানে ‘নাস’ মানে হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম। অন্য এক ক্বিরাআতে حَسَنًاরয়েছে। এর অর্থ উত্তম ও সুন্দর কথা। সুতরাং আমরা তো সম্মানিত লোকদেরকে ‘সায়্যিদী’ ‘মাওলায়ী’ বলে সম্বোধন করি। সুতরাং নবী-ই আক্রামের জন্য ‘সায়্যিদুনা’ বলার বৈধতা আয়াত শরীফ দ্বারাও উত্তমরূপে প্রমাণিত হয়।
প্রসঙ্গত: উল্লেখ করা যেতে পারে যে, যেসব লোকের মধ্যে নবী-ই আকরামের প্রতি ভালবাসার লেশ মাত্র নেই তারা হুযূর-ই আকরামের জন্য ‘সায়্যিদুনা’ ব্যবহার না করার জন্য এ হাদীস শরীফ থেকে দলীল গ্রহণ করতে চায়- اَلسِّدُ اَللهُ (সাইয়্যেদ তো আল্লাহ্ তা‘আলা)। ‘জামেউস্ সাগীর’-এর হাশিয়ায় আরিফ বিল্লাহ্ ইবনে ‘আজীয়্যাহ্ তাদের এ দলীল গ্রহণের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এ হাদীসের মর্মার্থ হচ্ছে- তা’তে পূর্ণাঙ্গ ও স্বত্তাগত ‘সিয়াদত’-এর কথা বুঝানো হয়েছে। সব মাখলূখ আল্লাহর বান্দা। তিনি যাকে চান ‘সিয়াদত’ (সাইয়্যেদ হবার মর্যাদা) দান করেন। বস্তুত: নবী-ই আক্রাম এ হাদীস শরীফ তখনই এরশাদ করেছেন, যখন তাঁকে ওই ধরনের উপাধি দ্বারা সম্বোধন করা হচ্ছিলো, যেসব উপাধি দ্বারা গোত্র প্রধানদেরকেও সম্বোধন করা হতো। যেমন- গোত্র প্রধানকে বলা হতো – اَنْتَ سَيِّدُنَا مَوْلاَنَا অর্থাৎ ‘আপনি আমাদের সরদার, আমাদের মাওলা বা মুনিব’। সম্বোধনকারীরাও ছিলো নব-মুসলিম। সুতরাং নবী-ই আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম চেয়েছিলেন যেন তাদের অন্তরে এ আক্বীদা বা বিশ্বাস পাকাপোক্ত হয়ে যাক যে, পূর্ণাঙ্গতম বিনয় প্রকৃত মালিকের জন্যই প্রকাশ করা দরকার, আর তিনি হলেন আল্লাহ্ তা‘আলা।

ইমাম মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, ‘সাইয়্যেদ’ শব্দের ব্যবহার আল্লাহ্ তা‘আলার জন্য তখনই বৈধ হবে, যখন ওই মর্মার্থ বর্ণনা করা উদ্দেশ্য হয়, যা এখনই বলা হয়েছে, অন্যথায় নিষিদ্ধ। এ’তে সন্দেহ নেই যে, ওই মর্মার্থ বিবেচ্য না হলে আল্লাহ্ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কারো জন্য ‘সাইয়্যেদ’ শব্দের ব্যবহার নাজায়েয হবার কোন কারণই নেই এবং তজ্জন্য উক্ত হাদীস শরীফ থেকে দলীল গ্রহণেরও কোন অবকাশ নেই। কেননা, খোদ্ আল্লাহ্ তা‘আলা হযরত ইয়াহিয়া আলায়হিস্ সালামের প্রশংসায় এরশাদ করেছেন- وَسَيِّدًا وَّحَصُوْرًا وَّ نَبِيًّا مِّنَ الصَّالِحِيْنَ (নিশ্চয় আল্লাহ্ তা‘আলা, হে যাকারিয়া! আপনাকে সুসংবাদ দিচ্ছেন ইয়াহিয়ার, যে আল্লাহর পক্ষ থেকে একটা কলেমার সত্যায়ন করবে, যে সরদার ও সব সময়ের জন্য নারীদের থেকে বিরত থাকবে এবং নবী, আল্লাহর খাস বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত। [সূরা আল-ই ইমরান: আয়াত-৩৯, কানযুল ঈমান]

সুতরাং যদি হযরত ইয়াহিয়া আলায়হিস্ সালাম-এর জন্য ‘সাইয়্যেদ’ শব্দের ব্যবহার করা যায়, তবে আমাদের আক্বা ও মাওলা হুযূর-ই আকরামের জন্য ব্যবহার করা অধিকতর উত্তমরূপে বৈধ হবে। এভাবে পবিত্র ক্বোরআনের সূরা ইয়ূসুফের ২৫নং আয়াতে, সূরা আহযাবের ৬৭নং আয়াতে এবং সূরা দুখানের ৪১নং আয়াতে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো জন্য শব্দটির ব্যবহার করা হয়েছে। এ পরম্পরায় এতবেশী বরকতম-িত হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, সেগুলো ‘তাওয়াতুর’-এর পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এখানে পরিসরের বিষয় চিন্তা করে আপাততঃ সেগুলোর উল্লেখ করা গেলো না।

নিম্নে  নবী-ই আক্রামের জন্য ‘সায়্যিদুনা’ ব্যবহারে আরো কতিপয় দলীল পেশ করা হলো-
এক. ‘কিতাবুল মুহিম্মাত’-এ ইমাম ‘ইয ইবনে আবদুস্ সালামকে প্রশ্ন করা হলো হুযূর-ই আকরামের পবিত্র দরবারে দুরূদ শরীফ পেশ করার সময় ‘সায়্যিদুনা’ শব্দের সংযোজন উত্তম কিনা? তিনি জবাবে বলেছেন, এটা তো আদব। আদবের পদ্ধতি অবলম্বন করা মুস্তাহাব। যেমন সাইয়্যেদুনা আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু করেছেন। তিনি তো নামাযের মধ্যে হুযূর-ই আকরামের সম্মানে মুসাল্লা থেকে নেমে এসেছিলেন। হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হুদায়বিয়ার সন্ধি পত্র লিখার সময় ‘রসূলুল্লাহ্’ শব্দ মুছে ফেলতে রাজি হননি। সুতরাং রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম যখন দুরূদ শরীফের নিয়ম বলে দিচ্ছিলেন, তখন বলেছিলেন, তোমরা বলো- اَللهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ…; এখন আমাদের উপর অপরিহার্য হচ্ছে যেন আমরা বলি- اَللهُمَّ صَلِّ عَلى سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ… (আল্লাহুম্মা সল্লে আলা সায়্যিদিনা মুহাম্মাদিন)। শাফে‘ঈ মাযহাবের ফক্বীহ্গণের মধ্যে ইমামুল হারামাঈন ফাত্ওয়া দিয়েছেন যেন নামাযের প্রত্যেক তাশাহ্হুদের মধ্যে দুরূদ শরীফে ‘সায়্যিদিনা’ বর্দ্ধিত করে পড়া হয়।
ইমাম জালাল উদ্দীন সুয়ূত্বী আলায়হির রাহ্মাহকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো- হুযূর-ই আকরাম এরশাদ করেছেন- صَلُّوْا كَمَارَأَيْتُمُوْنِىْ اُصَلِّىْ (তোমরা আমাকে যেমন দেখছো তেমনি নামায পড়ো।) এখন ‘সায়্যিদিনা’ শব্দ বর্ধিত করলে হুযূর-ই আকরামের নির্দেশের বিরোধিতা হবে কিনা? তদুত্তরে তিনি বলেছিলেন- এখানে দু’টি বিষয় (নিয়ম) রয়েছে- ১. নির্দেশ পালন করা এবং ২. আদবের প্রতি অবশ্যই লক্ষ্য রাখা। সাইয়্যেদ শব্দের সংযোজনে আদব রক্ষা হয়। আর আদব রক্ষা করাই উত্তম।
ফক্বীহ্গণের স্পষ্ট বর্ণনাদিতে এটাও এসেছে যে, যে ব্যক্তি নবী-ই আকরামের নাম মুবারকের সাথে ‘সায়্যিদুনা’ ব্যবহার করতে নিষেধ করেছে, তাকে কঠিন শাস্তি দেওয়া হয়েছে। (‘নাওয়াযিল’ দ্রষ্টব্য)
‘বাদা-ই‘উল ফাওয়াইদ’-এ উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইমাম মালিককে যখন ‘সায়্যিদুনা’ বর্দ্ধিত করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো, তখন তিনি বলেছিলেন, নবী-ই আকরাম ইমাম হাসান সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘‘আমার এ দৌহিত্র সরদার’’ (সাইয়্যেদ)। যখন হযরত সা’দ ইবনে মু‘আয তাশরীফ এনেছিলেন, তখন হুযূর-ই আক্রাম আনসারকে বলেছিলেন, ‘‘তোমাদের সাইয়্যেদ (সরদার)-এর জন্য দাঁড়িয়ে যাও!’’ হুযূর-ই আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম তো ‘সাইয়্যেদুস্ সাদাত’ (সাইয়্যেদগণের সাইয়্যেদ) এবং ‘আফদ্বালুল বাশার’ (মানাবকুল শ্রেষ্ঠ), তাঁর জন্য ‘সাইয়্যেদ শব্দের ব্যবহার না-জায়েয হবে কেন?

পরিশেষে, রসূল-ই আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম তো যার নাম ‘মুহাম্মদ’ রাখা হবে তাকেও সম্মান করার নির্দেশ দিয়েছেন, তাকে মাহফিলে বসার স্থান করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ইত্যাদি। ইমাম হাকিম ও বায্যার মজবুত সনদ সহকারে অন্যান্য বর্ণনাগুলোও উল্লেখ করেছেন। সুতরাং যেই মহান সত্তার নাম ‘মুহাম্মদ’ (সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম), তাঁর ওই নাম মুবারকের প্রতি কতবেশী সম্মান দেখাতে হবে তাতো সহজেই অনুমেয়। নিঃসন্দেহে এ পবিত্র নামের সাথে ‘সাইয়্যেদুনা’-এর সংযোজন করা তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শনেরই পরিচায়ক।

মহাপরিচালক-আনজুমান রিসার্চ সেন্টার, চট্টগ্রাম।

 

Share:

1 Comment

  1. Ariful Islam

    Says Rajab 07, 1445 at 11:22 pm

    Thank you for the Article.
    জাযাকালাল্লাহু খাইরান।

Leave Your Comment