সম্পাদকীয়: তরিকত জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র, সমাজ সংস্কারক, প্রিয়নবীর ৩৯তম বংশধর মুরশিদে বরহক আল্লামা হাফেজ ক্বারী সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ (রহ.)
জিলহজ্ব মুসলিম মিল্লাতের জন্য অত্যন্ত মর্যাদাবান পবিত্র মাস। এ মাসে পবিত্র হজ্ব ও ঈদুল আদ্বহা তথা কুরবানীর পবিত্র স্মৃতি বিদ্যমান। পবিত্র হজ্ব বিশ্ব মুসলিম ঐক্য-সংহতি ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আল্লাহর প্রেমে সিক্ত হওয়ার শিক্ষা দেয়। আল্লাহ্ ও রসূলের প্রদর্শিত পথে জীবন পরিচালনায় নব উদ্যমে উজ্জ্বীবিত হওয়ার শিক্ষা দেয়। পবিত্র ঈদুল আদ্বহা তথা আল্লাহর রাহে কুরবানী মুসলিম জাতিকে আল্লাহর প্রেমে জাগ্রত হওয়ার শিক্ষা নিয়ে হাজির হয়। ভোগে নয়, ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হয়ে কুরবানী আদায় করলে সে কুরবানী আল্লাহর নিকট কবুল হবে নিঃসন্দেহে। কুরবানীর অন্তর্নিহিত শিক্ষা তাকওয়া-পরহেজগারি সকলের মধ্যে সঞ্চারিত হোক, ত্যাগের শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ভ্রাতৃত্বময় সমাজ গড়ে উঠুক-আমিন।
জিলহজ্ব মাস এ দেশের লক্ষ-কোটি সুন্নি মুসলমানদের জন্য বিশেষভাবে আরো স্মরণীয় এ কারণে যে, এ দেশে সিলসিলায়ে আলিয়া কাদেরিয়ার প্রচার-প্রসারে নিবেদিত দরবারে সিরিকোটের ঊর্ধ্বতন শায়খ হযরত খাজা চৌহরভী রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হির ওফাত বার্ষিকী ১ জিলহজ্ব ও আওলাদে রসূল, আল্লামা হাফেজ ক্বারী সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হির পবিত্র ওফাতবার্ষিকী ১৫ জিলহজ্ব।
গাউসে দাওরাঁ হযরত খাজা আবদুর রহমান চৌহরভী রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি ছিলেন অতি উঁচুমানের আধ্যাত্মিক সাধক। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভের তাঁর সুযোগ হয়নি, আল্লাহ্ প্রদত্ত ইলমে লাদুন্নির মাধ্যমে তিনি কামালিয়াত অর্জন করেন। আল্লাহ্ প্রদত্ত জ্ঞানের মাধ্যমে তিনি রচনা করেন ত্রিশপারা সম্বলিত দরুদ শরীফ গ্রন্থ ‘মাজমুআ-ই সালাওয়াত-ই রসূল’, আরব বিশ্বের খ্যাতনামা আলিমগণ এ কিতাব পাঠ করে বিস্ময়াভিভূত হয়েছেন। আনজুমান রিসার্চ সেন্টারের তত্ত্বাবধানে কিতাবটির আরবী উচ্চারণসহ বাংলা অনুবাদ সম্পন্ন হয়েছে। আঠার পারা পর্যন্ত ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে, শীঘ্রই বাকী পারাগুলো প্রকাশ হবে। ইলমে লাদুন্নির প্রস্রবণ এ দুরুদ শরীফ গ্রন্থটি নিঃসন্দেহে শুধু আমাদের জন্য নয় বরং বিশ্ব মুসলিমের জন্য এক মহা নি’মাত স্বরূপ। প্রত্যহ তিলাওয়াতের মাধ্যমে এ নি’মাতের কদরদানি অতীব প্রয়োজন মনে করি। আসন্ন ওরস মোবারকে তাঁর ফুয়ূজাত কামনা করছি।
এ উপমহাদেশে শরীয়ত-তরিকতের প্রচার-প্রসারে যাঁর অবদান সুন্নি মুসলমানদের নিকট অনস্বীকার্য তিনি হলেন বহুমাত্রিক যোগ্যতায় অনন্য প্রতিভাধর ব্যক্তিত্ব, তরিকত জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র, সমাজ সংস্কারক, প্রিয়নবীর ৩৯তম বংশধর মুরশিদে বরহক আল্লামা হাফেজ ক্বারী সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি। তিনি ছিলেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অন্যতম দিকপাল, সুন্নিয়তের প্রাতিষ্ঠানিক রূপকার। ইসলামের মূলধারা সুন্নিয়তের অসামান্য খেদমত ও অবদানের কারণে তিনি এ দেশে যেভাবে বরেণ্য-অনুরূপ অপরাপর মুসলিম বিশ্বেও সর্বজন পরিচিত ও সমাদৃত। শরিয়ত-তরিকতসহ বিভিন্ন পরিম-লে তাঁর অসামান্য অবদান সর্বমহলে প্রশংসিত। তাঁর হাতে কাদেরিয়া সিলসিলায় দাখিল হয়ে অগণিত মানুষ পেয়েছে সঠিক পথের সন্ধান-অনেক ধর্ম বিমুখ হয়েছে ধর্মপ্রাণ; ভ্রান্ত মতবাদি পেয়েছে সঠিক আক্বিদার সন্ধান। শরিয়তের ধারা এগিয়ে নিতে তিনি অসংখ্য মাদরাসা প্রতিষ্ঠা ও পৃষ্ঠপোষকতা করেন, তরিকতের দীক্ষা দানে প্রতিষ্ঠা করেন খানকাহ্ শরীফ, ইসলামের মৌলিক রূপরেখা উপস্থাপন এবং বাতিল ফের্ক্বার ঈমান বিধ্বংসী ভ্রান্ত মতবাদের খণ্ডনে প্রকাশ করেন মাসিক ধর্মীয় পত্রিকা তরজুমান-এ আহলে সুন্নাত বিশেষতঃ তাঁর নির্দেশনায় প্রতিষ্ঠিত সংগঠন গাউসিয়া কমিটির বহুমুখী কার্যক্রম বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত ও স্বীকৃত হয়েছে। এ মহান ব্যক্তিত্বের জীবন-কর্ম নিয়ে শুরু হয়েছে গবেষণা কার্যক্রম। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি: ইসলামী শিক্ষা বিস্তারে তাঁর অবদান’ শিরোনামে পিএইচডি গবেষণা সম্পন্ন হয়েছে। এ মহান সংস্কারকের পথ নির্দেশনা মেনে চললে, মনে প্রাণে ধারণ ও বাস্তবায়ন করলে উভয় জগতে সফলকাম হওয়া যাবে। আসন্ন ওরস মোবারকে আসুন- তাঁর আদর্শ-উদ্দেশ্য, অনুসরণ-অনুকরণ ও বাস্তবায়নে সংকল্পবদ্ধ হই।