স্বপ্ন ও স্বপ্নের ব্যাখ্যা : শর‘ঈ দিক নির্দেশনা
মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ্ আল-মাসুম>
স্বপ্ন মনোবিজ্ঞানের একটি বিষয়। আর ইসলাম এ ব্যাপারে দিয়েছে সুনির্ধারিত দিক নির্দেশনা। কিছু ভালো স্বপ্ন মহান আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় বান্দাদের দেখান। কিছু স্বপ্ন শয়তানের প্ররোচনায় হয়ে থাকে। কিছু স্বপ্ন মানুষের চিন্তা ও ধারণার ফল। পবিত্র কুরআনুল করিমে মুসলিম জাতির প্রপিতা হযরত ইবরাহীম আলায়হিস সালামের স্বপ্ন, ইউসুফ আলাইহিস সালামের স্বপ্ন, সে সময়কার মিশরের বাদশাহর স্বপ্ন, তাঁর জেলখানার সঙ্গীদের স্বপ্নের কথা উল্লেখ আছে। বিশেষত রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামার স্বপ্ন নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। আলোচ্য নিবন্ধে স্বপ্ন সম্পর্কে মৌলিক কিছু আলোচনা করার প্রয়াস পেলাম।
স্বপ্ন প্রসঙ্গে হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদীস শরীফে এসেছে
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: “لم يبق من النبوة إلا المبشرات” قالوا: وما المبشرات؟ قال: “الرؤيا الصالحة”
অর্থাৎ প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামাকে বলতে শুনেছি, নুবুওয়তে আর কিছু অবশিষ্ট নেই, বাকী আছে কেবল মুবাশ্শারাত (সুসংবাদ)। সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! মুবাশ্শারাত কী? প্রত্যুত্তরে নবীজি বললেন: ভাল স্বপ্ন। অন্যত্র বর্ণিত আছে,
وعن أبي هريرة رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: “إذا اقترب الزمان لم تكد رؤيا المؤمن تكذب، ورؤيا المؤمن جزء من ستة وأربعين جزءً من النبوة” متفق عليه، وفي رواية: “أصدقكم رؤيا أصدقكم حديثاً”.
অর্থাৎ হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, দিন যত যেতে থাকবে, কিয়ামত নিকটে হবে, মুমিনদের স্বপ্নগুলো তত মিথ্যা হতে দূরে থাকবে। ঈমানদারের স্বপ্ন হল নুবুওয়তের ছেচল্লিশ ভাগের একভাগ। উপর্যুক্ত দু’টি হাদিস দ্বারা বুঝা যায় যে, প্রথমত. স্বপ্ন নুবুওয়তের একটি অংশ। নবী ও রাসূলদের কাছে জিবরীল আলায়হিস সালাম যেমন সরাসরি ওহী নিয়ে আসতেন, তেমনি স্বপ্নের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা নবী ও রাসূলদের কাছে প্রত্যাদেশ পাঠাতেন।
দ্বিতীয়ত. মুসলিম জীবনে স্বপ্ন শুধু একটি স্বপ্ন নয়। এটা হতে পারে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে স্বপ্নদ্রষ্টার প্রতি একটি বার্তা।তৃতীয়ত. আল মুবাশ্শারাত অর্থ সুসংবাদ। সঠিক স্বপ্ন যা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে হয়ে থাকে, তা স্বপ্ন দ্রষ্টার জন্য একটি সুসংবাদ।
স্বপ্নের প্রকারভেদ
হাদীস শরীফের ভাষ্য মতে, স্বপ্ন তিন প্রকার। যথা-এক. রুইয়ায়ে নাফসানি- তথা মানুষের চিন্তা-চেতনার কল্পচিত্র। মনে মনে মানুষ যা সারাদিন কল্পনা করে তার প্রভাবে ঘুমের মধ্যে ভাল-মন্দ কিছু দেখা। এগুলো আরবীতে আদগাসু আহলাম বা অলীক স্বপ্ন বলে। যেমন- স্বপ্নে কেউ দেখল তিনি কক্সবাজারে ভ্রমণে গিয়েছেন। দুই. রুইয়ায়ে শায়তানি- তথা শয়তান কর্তৃক প্ররোচনামূলক প্রদর্শিত স্বপ্ন। সাধারণত এ সকল স্বপ্ন ভীতিকর হয়ে থাকে। যেমন- কেউ স্বপ্নে দেখল সে বনে প্রবেশ করতেই তাকে বাঘ আক্রমণ করল। তিন. রুইয়ায়ে সালেহা- তথা ভালো স্বপ্ন, যা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে ইশারা- ইঙ্গিত হিসাবে বিবেচিত। যেমন- স্বপ্নযোগে আদিষ্ট হয়ে হযরত ইব্রাহিম আলায়হিস সালাম স্বীয় পুত্র ইসমাঈল আলায়হিস সালামকে কোরবানি দেয়ার প্রস্তুতি জরুরিও ছিল আবার সঠিকও ছিল।
স্বপ্ন দেখলে করণীয়
ক.স্বপ্নদ্রষ্টা ভাল স্বপ্ন দেখলে তার করণীয় সম্পর্কে হযরত আবু সাঈদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন,
وعن أبي سعيد الخدري رضي الله عنه أنه سمع النبي صلى الله عليه وسلم يقول: إذا رأى أحدكم رؤيا يحبها فإنما هي من الله تعالى فليحمد الله عليها وليحدث بها، وفي رواية: فلا يحدث بها إلا من يحب،
অর্থাৎ প্রখ্যাত সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামাকে বলতে শুনেছেন, তোমাদের কেউ যদি এমন স্বপ্ন দেখে যা সে পছন্দ করে, তাহলে সে এই বিশ্বাস রাখবে যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে স্বপ্নটি দেখানো হয়েছে। তখন সে যেন আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করে ও অন্যদের কাছে বর্ণনা করে। উপর্যুক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ভাল স্বপ্ন অবলোকনকারীকে তিনটি কাজ করতে হবে। যথা- এক. আল্লাহ তাআলার প্রশংসা স্বরূপ আল হামদুলিল্লাহ বলতে হবে। দুই. এটা অন্যকে সুসংবাদ হিসাবে জানাবে। তিন. স্বপ্ন সম্পর্কে এমন ব্যক্তিদেরকে জানাবে যারা তাকে ভালোবাসে।স্বপ্ন ভাল হলে তা শুভাকাংখী ব্যতীত অন্য কারো কাছে বলা ঠিক নয়। এ কারণে হযরত ইয়াকুব আলায়হিস সালাম তার ছেলে হযরত ইউসূফ আলায়হিস সালামকে বলেছিলেন, হে আমার বৎস! তোমার স্বপ্নের কথা তোমার ভাইদের কাছে বলো না।
খ. যদি মন্দ কিছু দেখে তবে তার করণীয় প্রসঙ্গে হযরত জাবির বিন আবদুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেন
عن جابر رضي الله عنه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: إذا رأى أحدكم الرؤيا يكرهها فليبصق عن يساره ثلاثاً، وليستعذ بالله من الشيطان ثلاثاً، وليتحول عن جنبه الذي كان عليها.
অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যদি তোমাদের কেউ এমন স্বপ্ন দেখে যা সে পছন্দ করে না, তাহলে তিনবার বাম দিকে থুথু নিক্ষেপ করবে। আর তিন বার শয়তান থেকে আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় চাইবে। (এই বলে আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম) আর যে পার্শ্বে শুয়েছিল, তা পরিবর্তন করবে (অর্থাৎ পার্শ্ব পরিবর্তন করে শয়ন করবে)। অন্যত্র ইরশাদ করেন, যদি কেউ অপছন্দনীয়, ভয় বা খারাপ কোনো স্বপ্ন দেখে তাহলে সে যেন তাড়াতাড়ি অজু করে নামাযে দাঁড়িয়ে যায় এবং সে স্বপ্নের ব্যাপারে অনভিজ্ঞ কাউকে কিছু না বলে। তাহলে এ স্বপ্ন তার ক্ষতি করতে পারবে না। উপর্যুক্ত হাদীস শরীফ থেকে বুঝা যায় যে, খারাপ স্বপ্নদ্রষ্টার করণীয় চারটি। যথা- এক. বাঁ দিকে তিনবার থুথু নিক্ষেপ করতে হবে, যা শয়তানের প্রতি ঘৃণা ও তার চক্রান্তকে অপমান করার বহিঃপ্রকাশ। দুই. আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম পড়বে এবং দুই রাকাত নামায আদায় করে এই খারাপ স্বপ্নের ক্ষতি ও অনিষ্ট থেকে আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করবে। কারণ, খারাপ স্বপ্ন শয়তানের কুপ্রভাবে হয়ে থাকে। তিন. যে করটে ঘুমিয়ে খারাপ স্বপ্ন দেখেছে তা পরিবর্তন করে অন্য করটে শয়ন করবে। অবস্থাকে বদলে দেয়ার ইঙ্গিত স্বরূপ এটা করা হয়ে থাকে। চার. খারাপ স্বপ্ন দেখলে কারো কাছে তা বলবে না। আর নিজেও এর ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করবে না।
তা’বীর ও তা’বীরের বিভিন্ন প্রকার
তা’বীর মানে স্বপ্ন ব্যাখ্যা করা। তবে স্বপ্ন ব্যাখ্যা খুবই কঠিন এবং জ্ঞানতাত্ত্বিক একটি বিষয়। এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত তাবেয়ী ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে সীরিন রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন,স্বপ্ন দ্রষ্টার অবস্থা ভেদে একই স্বপ্নের ব্যাখ্যা বিভিন্ন রকম হতে পারে। যে কেউ ইচ্ছা করলেই এই কাজটি করতে পারে না। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত। এ প্রসঙ্গে হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ফজরের নামাযের পর সাহাবিদের জিজ্ঞেস করতেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কোনো স্বপ্ন দেখেছ কি? অতঃপর রাসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম নিজে এগুলোর ব্যাখ্যা করতেন। স্বপ্নের ব্যাখ্যা সম্পর্কে আল্লামা ইবনুল কায়্যিম জুযী বলেন, বাস্তব জীবনে ঘটবে এমন কিছু আকৃতি-প্রকৃতি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার বান্দাদের দেখিয়ে থাকেন। এ দেখানোটা স্বপ্নে কখনো সরাসরি আবার কখনো ইঙ্গিত বা প্রতীকি বার্তায় হয়ে থাকে। যেমন আমরা বলে থাকি, স্বপ্নে কাপড় বা জামা দেখার মানে হল দ্বীন-ধর্ম। যদি কাপড় ভাল ও বড় দেখা হয়, তবে তা দ্বীন-ধর্ম, তাকওয়া-পরহেজগারীর উন্নতি নির্দেশ করে। আর তা যদি মলিন, সংকীর্ণ, ছিড়া-ফাটা দেখা হয় তবে তা দ্বীন-ধর্মের অবনতি বলে মনে করা হয়ে থাকে। দ্বীন-ধর্ম যেমন মানুষের আত্মাকে রক্ষা করে, পোশাক তেমনি মানুষের শরীর-স্বাস্থ্যকে হেফাজত করে। এ জন্য পোশাক আর ধর্ম একে অপরের ইঙ্গিত বহন করে। স্বপ্নে আগুন দেখা মানে ফিতনা বা বিশৃঙ্খলা আর অরাজকতার ইঙ্গিত। কারণ আগুন দৃশ্যমান ধন-সম্পদ জ্বালিয়ে দেয় আর ফিতনা-অরাজকতা মানুষের অন্তর জ্বালায়। মানুষকে অস্থির করে তোলে। নক্ষত্র বা তারকা স্বপ্নে দেখলে তার অর্থ হয় আলেম- উলামা, জ্ঞানী-গুণি। কারণ আলেম-উলামা ও জ্ঞানীরা মানুষকে পথ প্রদর্শন করে, আলো দেয়। স্বপ্নে ইহুদী দেখার অর্থ হল দ্বীন-ধর্মের বিষয়ে অবাধ্যতা আর খ্রিষ্টান দেখার অর্থ হল, দ্বীন-ধর্মে বিদ‘আত প্রবর্তন ও ধর্মীয় বিষয়ে পথভ্রষ্টতা। স্বপ্নে লৌহ দেখার অর্থ হল, শক্তি। আর দাড়ি-পাল্লা দেখার অর্থ হল, ন্যায়পরায়ণতা। স্বপ্নে সাপ দেখার অর্থ হল, শত্রু। স্বপ্নে নিচে পড়ে যেতে দেখার অর্থ হল, অবনতি আর ঊর্দ্ধে উঠতে দেখার অর্থ হল, উন্নতি। কোনো অসুস্থ ব্যক্তি যদি স্বপ্নে দেখে সে চুপচাপ ঘর থেকে বের হয়ে যাচ্ছে, তাহলে এর অর্থ হবে মৃত্যু। আর যদি সে স্বপ্ন দেখে কথা বলতে বলতে সে ঘর থেকে বের হয়ে যাচ্ছে, তাহলে এর অর্থ হবে জীবন ও সুস্থতা। যদি কোনো ব্যক্তি স্বপ্ন দেখে যে, সে মৃত্যু বরণ করছে, তাহলে এর অর্থ হবে সে পাপাচার থেকে তওবা করবে। কেননা মৃত্যু মানে হল, আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন: “অতঃপর তাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে তাদের সত্যিকার প্রতিপালক আল্লাহর কাছে।” এখানে ফিরিয়ে নেয়া মানে মৃত্যু। আর তাওবা অর্থ ফিরে আসা। স্বপ্নে বাগান দেখার অর্থ হল কাজ ও চাকুরী। আর বাগান পুড়ে যাওয়া দেখলে অর্থ হবে বেকারত্ব ও পতন।
ইমাম বগভী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন, যার মাধ্যমে স্বপ্নের ব্যাখ্যা করা হয় তার বিবেচনায় তা’বীর কয়েক প্রকার হয়ে থাকে। যথা- প্রথমত: মহাগ্রন্থ কুরআনুল করিমের আয়াত দিয়ে স্বপ্নের ব্যাখ্যা প্রদান করা। যেমন- ক.স্বপ্নে রশি দেখার অর্থ হল, ওয়াদা, অঙ্গীকার, প্রতিশ্রুতি। যা পবিত্র কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াত থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে, তোমরা আল্লাহ তাআলার রশিকে শক্তভাবে ধারণ করো। খ.স্বপ্নে নৌকা বা জাহাজ দেখার ব্যাখ্যা হল মুক্তি পাওয়া। যা নিম্নোক্ত আয়াত থেকে নেয়া হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে, আমি তাকে উদ্ধার করেছি এবং উদ্ধার করেছি জাহাজের আরোহীদের। গ. স্বপ্নে কাঠ দেখার ব্যাখ্যা হল, মুনাফেকী বা কপটতা। যা মুনাফিকদের সম্পর্কে বর্ণিত নিম্নোক্ত আয়াত থেকে নেয়া হয়েছে, ইরশাদ হচ্ছে, যেন তারা দেয়ালে ঠেস দেয়া কাঠের মতই। ঘ.পাথর স্বপ্ন দেখলে তার ব্যাখ্যা হবে অন্তরের কঠোরতা ও পাষন্ডতা। যা নিম্নোক্ত আয়াত থেকে গ্রহণ করা হয়েছে, ইরশাদ হচ্ছে -অতঃপর তোমাদের অন্তরগুলো কঠিন হয়ে গেল, যেন তা পাথরের মত কিংবা তার চেয়েও শক্ত। ঙ.যদি স্বপ্নে রোগ-ব্যধি দেখা হয়, তাহলে তার ব্যাখ্যা হবে মুনাফিক। কেননা, আল্লাহ তাআলা মুনাফিকদের সম্পর্কে ইরশাদ করেন, তাদের অন্তরে রয়েছে ব্যধি। চ.যদি স্বপ্নে গোশত খেতে দেখে তার অর্থ হতে পারে গীবত বা পরনিন্দা। কেননা গীবত সম্পর্কে মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ কি পছন্দ করবে তার মৃত ভাইয়ের গোশত খাবে?
উপর্যুক্ত ব্যাখ্যাগুলো সবার ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য হবে এমনটি নয়। ক্ষেত্রবিশেষে এর ব্যতিক্রম হতে পারে। কারণ, একজন রোগীর স্বপ্ন আর সুস্থ মানুষের স্বপ্নের ব্যাখ্যা এক রকম হবে না। যদিও স্বপ্ন এক রকম হয়। তেমনি একজন মুক্ত মানুষ ও একজন বন্দী মানুষের স্বপ্নের ব্যাখ্যা এক রকম হবে না। স্বপ্নের ব্যাখ্যায় যেমন স্বপ্ন দ্রষ্টার অবস্থা লক্ষ্য করা হবে তেমনি স্বপ্নে যা দেখেছে তার অবস্থাও দেখতে হবে। যেমন-একজন স্বপ্নে দেখল সে একটি মজবুত রশি পেয়েছে। যা ছেড়া যাচ্ছে না। আরেক জন দেখল, সে একটা রশি ধরেছে কিন্তু তা ছিল নরম। দুটো স্বপ্নের ব্যাখ্যার মধ্যে বিশাল পার্থক্য হবে। এক ব্যক্তি ইমাম মুহাম্মাদ বিন সীরিন রাহমাতুল্লঅহি আলায়হিকে বলল: আমি স্বপ্ন দেখলাম যে, আমি আজান দিচ্ছি। তিনি বললেন, এর ব্যাখ্যা হল, তুমি হজ্ব করবে। আরেক ব্যক্তি এসে বলল, আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি আজান দিচ্ছি। তিনি বললেন, এর অর্থ হল, চুরির অপরাধে তোমার হাত কাটা যাবে। উপস্থিত লোকেরা জিজ্ঞেস করল, আপনি একই স্বপ্নের দু ধরনের ব্যাখ্যা কেন করলেন? তিনি বললেন, প্রথম লোকটি নেক আমল প্রিয়। সে ভাল কাজ করে থাকে। সে জন্য তার স্বপ্নের ব্যাখ্যা নেক আমল হতে পারে। তাই আমি পবিত্র কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াত -“তুমি মানুষের মাঝে হজ্বের জন্য আজান তথা এলান দাও।” এর ভিত্তিতে তার স্বপ্নের ব্যাখ্যা করেছি। আর দ্বিতীয় ব্যক্তি হচ্ছে পাপাচারী। তাই তার স্বপ্নের ব্যাখা পাপের শাস্তিই মানায়। তাই আমি নিম্নোক্ত আয়াত -“অত:পর এক মুয়াজ্জিন (ঘোষণা কারী) আজান (ঘোষণা) দিল, হে কাফেলা! তোমরা তো চোর।” এর ভিত্তিতে তার স্বপ্নের ব্যাখ্যা করেছি।
দ্বিতীয়ত: রাসূলুল্লাহর হাদীসের আলোকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা করা। যেমন-ক. স্বপ্নে কাক দেখার ব্যাখ্যা হল,পাপাচারী পুরুষ। কারণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাকের নাম রেখেছেন ফাসেক। মানে, পাপী। খ. ইঁদুর স্বপ্নে দেখার ব্যাখ্যা হল, পাপাচারী নারী। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইঁদুরের নাম রেখেছেন, ফাসেকা। মানে পাপাচারী মহিলা। গ.স্বপ্নে পাঁজর বা পাঁজরের হাড় দেখলে এর ব্যাখ্যা হবে, নারী। কারণ, নারীকে পাঁজরের হাড় দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে বলে হাদীসে এসেছে। ঘ. কাঁচের পান-পাত্র স্বপ্ন দেখার ব্যাখ্যা হল, নারী। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম কাঁচের পান-পাত্র-কে নারীর রূপক অর্থে ব্যবহার করেছেন। যেমন তিনি বলেছেন: হে আনজাশা! আরো আস্তে চল, নয়তো কাঁচের পান-পাত্রগুলো ভেঙ্গে যাবে। উপর্যুক্ত হাদীসে নবীজি কাঁচের পান-পাত্র বলতে সফর সঙ্গী মেয়েদের বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ তাড়াতাড়ি হাটলে মেয়েরা পিছনে পড়ে যাবে। তাই তাদের জন্য তিনি ধীরে ধীরে পথ চলতে বলছেন। ইত্যাদি।
তৃতীয়ত: মানুষে মাঝে প্রচলিত বিভিন্ন প্রসিদ্ধ উক্তি দিয়ে স্বপ্নের ব্যাখ্যা করা।
চতুর্থত: কখনো বিপরীত অর্থ গ্রহণ নীতির আলোকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা করা। যেমন- ক.কোন ব্যক্তি স্বপ্নে ভীতিকর কিছু দেখল বা ভয় পেল। তার অবস্থার বিবেচনায় এর ব্যাখ্যা হতে পারে শান্তি ও নিরাপত্তা। ইরশাদ হচ্ছে -তিনি তাদের ভয়-ভীতিকে শান্তি ও নিরাপত্তায় পরিবর্তন করে দেবেন। খ. স্বপ্নে কান্না দেখলে এর ব্যাখ্যা হতে পারে আনন্দ। স্বপ্নে হাসতে দেখলে এর ব্যাখ্যা হতে পারে দু:খ-কষ্ট। এই বিপরীত অর্থ গ্রহণ নীতিতে স্বপ্ন ব্যাখ্যা করার রহস্য হল, স্বপ্নের দায়িত্বশীল ফেরেশতা যখন স্বপ্নে ইঙ্গিত প্রদান করে তখন সে বিষয়টি উল্টো করে দেখায়। কারণ, নিদ্রা আর জাগ্রত অবস্থা একটা আরেকটার বিপরীত।
স্বপ্ন সম্পর্কিত কয়েকটি মাসায়ালা
এক. স্বপ্ন বর্ণনা করার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যাকে তাকে স্বপ্নের কথা বলা উচিত নয়। দুই. সর্বদা আলেম, শুভাকাংখীর কাছে স্বপ্নের কথা বলতে হবে। যে শুভাকাংখী নয় তার কাছে কোনো ধরনের স্বপ্নের কথা বলা যাবে না। তিন. স্বপ্ন একটি উড়ন্ত পায়ের মত। এ কথার অর্থ হল শূন্যে ঝুলিয়ে রাখা পা যেমন যে কোনো সময় মাটিতে রাখা যায় আবার নীচে আগুন থাকলে তাতেও রাখা যায়। স্বপ্ন এমনই, এর ব্যাখ্যা ভাল করা যায় আবার খারাপও করা যায়। যে ব্যাখ্যাই করা হোক, সেটিই সংঘটিত হবে। চার. ক্ষেত্র বিশেষে স্বপ্নটি বাহ্যিক দৃষ্টিতে খারাপ হলেও অভিজ্ঞ ব্যাখ্যাকারীর সুন্দর ব্যাখ্যার ফলে সুফল ভোগ করা সম্ভবপর হয়। যেমনিভাবে মদীনার জনৈক মহিলার পেশকৃত স্বপ্নের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভাল ও সুন্দর ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন। যথা ঘরের চৌকাঠ ভেঙ্গে যাওয়ার অর্থ হল, ঘর প্রশস্ত হবে। প্রাচুর্য ও সচ্ছলতা আসবে। আর এক চোখ কানা সন্তানের অর্থ হল, সন্তানটি তার চোখ দিয়ে শুধু ভাল বিষয় দেখবে। যা ছিল দূরবর্তী ব্যাখ্যা। তাই স্বপ্ন দ্রষ্টার পরিচিতদের মধ্যে যিনি সবচেয়ে ভাল আলেম তার কাছে স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া উচিত। পাঁচ. যার কাছে স্বপ্নের ব্যাখ্যা চাওয়া হবে, তিনি যদি জানেন, এর ব্যাখ্যা খারাপ তবে তিনি তা বলবেন না। যথাসম্ভব ভাল ব্যাখ্যা করে দেবেন। অন্যথায় চুপ থাকবেন। অথবা বলবেন, আল্লাহ ভাল জানেন। ছয়. ভাল স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেরীতে হয় যে স্বপ্নের ফলাফল ভাল তা বাস্তবায়নে দেরী হয়। আর যার ফলাফল খারাপ তার বাস্তবায়নে কোন দেরী হয় না। যেমন ইউসুফ আলাইহিস সালাম স্বপ্নে দেখেছিলেন, চন্দ্র, সূর্য আর এগারটি নক্ষত্র তাকে সাজদা করেছে। তাঁর এ স্বপ্নটার বাস্তবায়ন অনেক বছর পর হয়েছে।
কে দেবে স্বপ্নের ব্যাখ্যা
স্বপ্নের ব্যাখ্যা একটি শর‘ঈ বিদ্যা। তাই যে ব্যক্তি কোরআন ও হাদীস সম্পর্কে বেশি অভিজ্ঞ এবং স্বপ্ন-ব্যাখ্যার মূলনীতি সম্পর্কে অবগত রয়েছেন, তিনিই স্বপ্নের সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেন। ইমাম মালেক রাহমাতুল্লাহি আলায়হিকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, সকলে কি স্বপ্নের তা’বীর বা ব্যাখ্যা করবে? তিনি বলেছিলেন, নবুওয়তের একটি বিষয় নিয়ে কি তামাশা করা যায়? যে ব্যক্তি সঠিক ও সুন্দরভাবে স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিতে জানবে, শুধু সে-ই ব্যাখ্যা দেবে। যদি স্বপ্নটা ভাল হয়, তাহলে বলে দেবে। আর যদি স্বপ্নটা খারাপ হয়, তাহলে ভাল ব্যাখ্যা দেবে। তা সম্ভব না হলে চুপ থাকবে। পাশাপাশি ঐ ব্যক্তি মানব-দরদী ও সবার প্রতি কল্যাণকামী মনোভাবের অধিকারী হতে হবে। কারণ, স্বপ্নের ব্যাখ্যা যেভাবে করা হয়, সেভাবেই তা সংঘটিত হয়। এ প্রসঙ্গে হযরত আনাস বিন মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, স্বপ্নের ব্যাখ্যা যেভাবে করা হয়, সেভাবে তা বাস্তবায়িত হয়। অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে
إذا رأى أحدكم رؤيا فلا يحدث بها إلا ناصحا أو عالما
অর্থাৎ যখন তোমাদের কেউ স্বপ্ন দেখবে, তখন আলেম অথবা কল্যাণকামী ব্যতীত কারো কাছে তা বর্ণনা করবে না।
স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানার হুকুম
এ প্রসঙ্গে শায়খ আব্দুর রহমান আস সাদী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন, স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিখা, শিক্ষা দেয়া ও চর্চা করার কারণে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে প্রতিদান পাওয়া যাবে। আর স্বপ্নের ব্যাখ্যা ফতোয়ার মর্যাদা রাখে। আর তাই হযরত ইউসুফ আলায়হিস সালাম স্বপ্নের ব্যাখ্যাকে ফতোয়া বলে আখ্যায়িত করেছেন। যেমন তিনি তার জেল সঙ্গী দু’জনকে তাদের জানতে চাওয়া স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানিয়ে বলেছিলেন, তোমরা দুজনে যে বিষয়ে ফতোয়া চেয়েছিলে তার ফয়সালা হয়ে গেছে।
স্বপ্নের ব্যাখ্যা ও তাকদীরের লিখন
স্বপ্নের ব্যাখ্যার কারণে তাকদীরের লিখনে কোন প্রভাব পড়ে কি-না এ বিষয়ে আলেমগণ বলেন, মুলত তাকদীরে এভাবেই লেখা আছে যে, অমুক ব্যক্তি এভাবে ব্যাখ্যা করবে আর তাই সংঘটিত হবে। এ প্রসঙ্গে হযরত সায়ীদ ইবনে মানসূর রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বর্ণনা করেন, হযরত আতা রহমাতুল্লাহি আলায়হি সব সময় বলতেন : স্বপ্নের ব্যাখ্যা যা দেয়া হয়, সেটাই সংঘটিত হয়। তবে ব্যাখ্যাদাতার কর্তব্য হবে, কখনো খারাপ বা অশুভ ব্যাখ্যা না দেয়া। কেননা তাকদীরে কি আছে আমরা তা জানি না। এ জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম যে কোনো মানুষের কাছে স্বপ্নের কথা বলতে নিষেধ করেছেন। স্বপ্নের কথা শুধু তাকে বলা যাবে যে আলেম, বন্ধু, শুভাকাংখী ও কল্যাণকামী। এ ছাড়া অন্য কারো কাছে নয়।
মিথ্যা স্বপ্নের কথা বলার পরিণতি
এ প্রসঙ্গে হযরত আবুল আসক্বা ওয়াসেলা ইবনে আসক্বা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন,
عن أبي الأسقع واثلة بن الأسقع رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إن من أعظم الفرى أن يدعي الرجل إلى غير أبيه أو يرى عينه ما لم تر، أو يقول على رسول الله صلى الله عليه وسلم ما لم يقل.
অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সবচেয়ে বড় মিথ্যা হল, কোনো ব্যক্তি তার নিজের পিতা ব্যতীত অন্যের সন্তান বলে দাবী করা। যে স্বপ্ন সে দেখেনি তা বর্ণনা করা আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা বলেননি তা তাঁর ব্যপারে বলা। যারা মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনা করে আর মনে করে, এতে এমন কি ক্ষতি? তাদের জন্য রয়েছ উপর্যুক্ত হাদিস শরীফে এক সতর্ক বাণী। বস্তুত সব ধরনের মিথ্যা-ই অন্যায়। এমনকি হাসি- ঠাট্টা করে মিথ্যা বলাও পাপ। তবে মিথ্যার মধ্যে উপর্যুক্ত তিনটি হল খুবই মারাত্মক। আর কেউ মিথ্যা স্বপ্নের বর্ণনা দিলে তার ব্যাখ্যা করা উচিত নয়। আর যদি ব্যাখ্যা করা হয়, তাহলে তা সংঘটিত হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে, এক ব্যক্তি ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর কাছে এসে বলল, আমি স্বপ্নে দেখেছি, জমিন তরু-তাজা সবুজ হয়েছে। এরপর আবার শুকিয়ে গেছে। আবার সবুজ-তরুতাজা হয়েছে, আবার শুকিয়ে গেছে। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, এর ব্যাখা হল তুমি প্রথমে মুমিন থাকবে পরে কাফের হয়ে যাবে। আবার মুমিন হবে, এরপর আবার কাফের হয়ে যাবে আর কাফের অবস্থায় তুমি মৃত্যুবরণ করবে। (নাউজুবিল্লাহ) এ কথা শুনে লোকটি বলল, আসলে আমি এ রকম কোনো স্বপ্নই দেখিনি। ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেন, যে বিষয়ে তুমি প্রশ্ন করেছিলে তার সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। তোমার বিষয়ে ফয়সালা হয়ে গেছে যেমন ফয়সালা হয়েছিল, ইউসূফ আলায়হিস সালামের সাথীর ব্যাপারে। অনুরূপভাবে এক ব্যক্তি ইমাম ইবনে সীরিন রাহমাতুল্লাহি আলায়হির কাছে এসে বলল, আমি স্বপ্নে দেখলাম, আমার হাতে যেন একটি কাঁচের পেয়ালা। সেটি ভেঙ্গে গেল কিন্তু তার পানি রয়ে গেছে। ইবনে সীরিন রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বললেন, তুমি কিন্তু এ রকম কোনো স্বপ্ন দেখোনি।
লোকটি রাগন্বিত হয়ে বলল, সুবহানাল্লাহ! (আমি মিথ্যে বলিনি)। ইবনে সীরিন রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বললেন, যদি স্বপ্ন মিথ্যা হয়, তাহলে আমাকে দোষারোপ করতে পারবে না। আর এ স্বপ্নের ব্যাখ্যা হল, তোমার স্ত্রী মারা যাবে আর পেটের বাচ্চাটি জীবিত থাকবে। এ কথা শোনার পর লোকটি বলল, আল্লাহর কসম! আমি আসলে কোনো স্বপ্ন দেখিনি। এর কিছুক্ষণ পর সংবাদ পেলো তার একটি সন্তান ভূমিষ্ট হয়েছে এবং তার স্ত্রী মারা গেছে।
সর্বোপরি স্বপ্নে ভালো কিংবা খারাপ যা-ই ইঙ্গিত বহন করুক না কেন, যদি এর ব্যাখ্যা ভালো হয়, তবে সে ব্যক্তি স্বপ্নে দেখা অনিষ্টতা থেকে বেঁচে যায়। সুতরাং স্বপ্নের ব্যাখ্যা বা ইঙ্গিত জানার জন্য ভালো, জ্ঞানী ও আল্লাহভিরু লোকদের কাছে যাওয়াই জরুরি। স্বপ্ন যে রকমই হোক আল্লাহর রাস্তায় কিছু সম্পদ সাদকা করা অতিব প্রয়াজন। কেননা,দান-সদকা বিপদাপদ দূর করে। মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের মন্দ স্বপ্ন দেখা থেকে হেফাজত করুন এবং মুসলিম উম্মাহকে স্বপ্নের কথা বলার ক্ষেত্রে আল্লাহওয়ালা, ধর্মভিরু জ্ঞানী লোকদের কাছে বর্ণনা করার তাওফিক দান করুন। আমীন বিজাহিন নবিয়্যিল আমিন সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম।
লেখক: আরবী প্রভাষক, তাজুশ শরী‘আহ মাদরাসা, ষোলশহর, চট্টগ্রাম।