হুযূর-ই আকরামের প্রতি সাহাবা-ই কেরাম ও দ্বীনের ইমামগণের ভালবাসার কিছু নমুনা
মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মান্নান>
সাহাবা-ই কেরামের ভালবাসা
সাহাবা-ই কেরাম রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুম আজমা‘ঈনের ভালবাসা আপন আক্বা ও মাওলা হযরত মুহাম্মদুর রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি এত সীমাহীন ছিলো যে, তাঁরা তাঁদের মাতা-পিতা, সন্তান-সন্তুতি, ভাইবোন এবং তাঁদের জান ও মাল আপন আক্বার কদমযুগলে ক্বোরবান করে দিয়েছিলেন। ইবনে ইসহাক্ব এক আনসারী মহিলা সম্পর্কে লিখেছেন- উহুদের যুদ্ধে রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে গিয়ে তার পিতা, ভাই ও স্বামী শহীদ হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি তাঁদের সংবাদ নিতে গিয়ে রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলেন। লোকেরা বললেন, তিনি আল্লাহরই প্রশংসাক্রমে ভাল আছেন, যেমনটি তুমি চাচ্ছো। মহিলাটি বললেন, ‘‘আমাকে দেখাও, যাতে আমি স্বচক্ষে দেখে নিই। যখন তিনি নিজের চোখে হুযূর-ই আক্রামকে দেখলেন, তখন বললেন, সব মুসীবৎ (শোক-দুঃখ) তাঁর সুসংবাদ পাওয়ার পর আমার নিকট তুচ্ছ ও সহজ-সহনীয় হয়ে গেছে। [সূত্র. আনওয়ারে মুহাম্মদিয়া:পৃ. ৪১১]
বর্ণিত আছে যে, উহুদের যুদ্ধের দিন মদীনা মুনাওয়ারায় এ (মিথ্যা) সংবাদ রটে গেলো যে, সরকার-ই দু’ আলম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম শহীদ হয়ে গেছেন। তখন মদীনা মুনাওয়ারার অনেক নারী কান্নাকাটি ও ফরিয়াদ করতে করতে বের হয়ে পড়েছিলেন। তাঁদের সবার আগে ভাগে ছিলেন এক আনসারী মহিলা। তিনি হুযূর-ই আক্রামের ভালবাসায় বিভোর হয়ে যুদ্ধের ময়দানে পৌঁছে যান। দেখলেন ময়দানে বহু লাশ পড়ে আছে। লোকেরা বললো, ‘‘এটা তোমার পিতার লাশ, এটা তোমার পুত্রের শবদেহ এবং তোমার স্বামীর প্রাণহীন দেহ।’’ কিন্তু তাঁদের কারো প্রতি ভ্রƒক্ষেপ না করে বলে যাচ্ছিলেন, ‘‘বলো, আমার আক্বা কোথায়?’’ লোকেরা বললেন, ‘‘আপনি সামনে এগিয়ে গেলেই তাঁকে নিরাপদে দেখতে পাবেন।’’ এতেও তাঁর ধৈর্য ধারণ করা সম্ভবপর হয়নি। তিনি এগিয়ে যাচ্ছিলেন। আর আপন মুনিব (আক্বা)কে দেখতে পেলেন। তাঁর কাপড় মুবারক হাতে ধরে আরয করলেন, ‘‘ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমার মাতা-পিতা আপনার উপর ক্বোরবান হোন! যখন আপনি নিরাপদে আছেন, তখন আমার মনে অন্য কারো প্রাণহানি হবার কিংবা শহীদ হবার কোন পরোয়া (দুঃখ) নেই।’’ [সূত্র. মাদারিজ: ১ম খন্ড: পৃ. ৩৫]
হযরত শায়খাঈনের ভালবাসা
হযরত আবূ বকর সিদ্দীক্ব-ই আকবর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু আপন স্ত্রী-সন্তান, মাল ও জান সবকিছু আপন আক্বা ও মাওলা হযরত মুহাম্মদুর রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর পাক কদম যুগলে ক্বোরবান করে দিয়েছিলেন। একদিন তিনি রসূলে আকরামের পাক দরবারে আরয করলেন- ‘‘ওই মহান সত্তার ক্বসম, যিনি আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন, অবশ্যই আবূ তালিবের ইসলাম গ্রহণ আমার চক্ষুযুগলকে, আমার পিতা আবূ ক্বোহাফাহর ইসলাম গ্রহণ অপেক্ষা অধিক শীতল করবে। এটা এ জন্য যে, আবূ তালিব ইসলাম গ্রহণ করলে আপনার পবিত্র চক্ষযুগল শীতল হবে (অর্থাৎ আপনি খুশী হবেন) আর আমার পিতা ইসলাম গ্রহণ করলে আমি খুশী হবো। আপনার খুশীর উপর আমার খুশীকে উৎসর্গ করছি।’’
এভাবে হযরত ওমর ফারূক্ব ইবনুল খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুকে বলেছেন, ‘‘আপনার ইসলাম গ্রহণ আমার নিকট আমার পিতা খাত্তাব ইসলাম গ্রহণ করার চেয়ে অধিক প্রিয় (পছন্দনীয়)। কেননা, তা রসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট অধিকতর পছন্দনীয়। [সূত্র. শেফা শরীফ: ২য় খন্ড, পৃ. ১৮, মাদারিজ: ১ম খন্ড, পৃ. ৩৫১]
হযরত আলী মুশকিল কোশার নবীপ্রেম
লোকেরা মাওলা আলী মুশকিল কোশা কাররামাল্লাহু তা‘আলা ওয়াজহাহুকে জিজ্ঞাসা করলেন, রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি আপনার ভালবাসা কেমন? তদুত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘‘খোদার ক্বসম! তিনি আমার নিকট আমার ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্তুতি, মাতা-পিতা এবং পিপাসার্ত অবস্থায় পানির চেয়েও বেশী প্রিয়।’’ [সূত্র. মাদারিজ: ১ম খ-:পৃ. ৩৪৮]
হযরত ইবনে ওমরের নবীপ্রেম
হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর পদ যুগল একবার অবশ হয়ে গিয়েছিলো। তখন তাঁকে বলা হলো, ‘‘আপনি তাঁকে স্মরণ করুন, যিনি আপনার নিকট সবলোক অপেক্ষা বেশী প্রিয়।’’ অতঃপর তিনি উচ্চস্বরে বললেন, ‘‘ইয়া মুহাম্মাদাহ্!’’ (হে হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম! আমাকে সাহায্য করুন!) এর পরক্ষণে তাঁর পা দু’টি সুস্থ হয়ে গিয়েছিলো। [সূত্র. শেফা শরীফ: ২য় খন্ড: পৃ. ১৮, মাদারিজ: ১ম খন্ড: পৃ. ৩৫১]
নোট: এ থেকে বুঝা গেলো যে, প্রথমত: হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমার নিকট আপন আক্বা ও মাওলা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি ভালবাসা তাঁর মাতা-পিতা, সন্তান-সন্তুতি ও জান-মাল থেকেও বেশী ছিলো। দ্বিতীয়ত: মুসীবতের সময় আপন আক্বা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে ডাকা সাহাবা-ই কেরামেরই আমল (কাজ)। তৃতীয়ত: আমাদের আক্বা, আল্লাহর মাহবূবকে মুসীবতের সময় ডাকলে তিনি তা শুনেন এবং সাহায্য করেন। সুতরাং হুযূর-ই আক্রামকে ডাকা যাদের নিকট শির্ক-বিদ‘আত, তারা কতবড় হতভাগা!
যায়দ ইবনে দাসানাহর নবীপ্রেম
হযরত যায়দ ইবনে দাসানাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু, যিনি মক্কার কাফিরদের হাতে বন্দী হয়ে গিয়েছিলেন। যখন তারা তাঁকে হত্যা করার জন্য মক্কার বাইরে নিয়ে গেলো, তখন আবূ সুফিয়ান তাঁকে সম্বোধন করে বলেছিলেন, ‘‘হে যায়দ, আমি তোমাকে খোদার ক্বসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, তুমি একথা পছন্দ করো যে, এখন যদি তোমার জায়গায় মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) হতেন, আর তাঁকে তোমার পরিবর্তে কতল করা হতো, আর তুমি কি নিরাপদে আপন ঘরে থাকতে,?’’ তদুত্তরে হযরত যায়দ কেমন প্রিয় কথাটাই বলেছেন! তিনি বলেছিলেন, ‘‘খোদার ক্বসম, আমি একথা পছন্দ করি যে, আমার আক্বা ও মাওলা নিরাপদে আপন ঘর মুবারকে সদয় অবস্থান করবেন। আমি তো তাঁর পবিত্র হাতে কাঁটা বিধেঁ যাবে আর আমি ঘরে আরামে বসে থাকাকেও বরদাশ্ত করিনা।’’ তখন আবূ সুফিয়ান বললেন, ‘‘আমি লোকদের মধ্যে এমন কাউকে দেখিনি, যে তারই মতো ভালবাসবে যেমনটি মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম)-এর সাহাবীগণ তাঁকে ভালবাসে।’’
এক মহিলা সাহাবীর নবীপ্রেমের নমুনা
হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা বলেন, এক মহিলা রসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র দরবারে হাযির হলেন এবং আল্লাহর ক্বসম করে বললেন, ‘‘আমি স্বামীর বিদ্বেষের কারণে বের হয়নি, না আমার মধ্যে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার আগ্রহ আছে। আমি বের হয়েছি শুধু আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের ভালবাসার কারণে।’’ [সূত্র. শিফা: ২য় খন্ড: পৃ. ১৯, মাদারিজ: ১ম খন্ড: পৃ. ৩৫]
হযরত আবূ হোরায়রার নবীপ্রেম
হযরত আবূ হোরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর আপন আক্বা ও মাওলা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি ভালোবাসা এত গভীর ছিলো যে, সারা জীবন তিনি ঘর তৈরী করেননি। সব সময় নবী-ই আক্রামের বিশ্বব্যাপী সৌন্দর্য দেখে ধন্য হতেই থাকতেন। হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীসসমূহ শুনতে থাকতেন এবং সেগুলো বর্ণনা করতে থাকতেন।
হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্দুল্লাহ্ ইবনে উবাইর নবীপ্রেমের নমুনা
এক সফরে মুনাফিক্বদের সরদার আব্দুল্লাহ্ ইবনে উবাই বলেছিলো, ‘‘আমরা যখন মদীনায় ফিরে যাবো, তখন অবশ্যই সম্মানিতরা ইতরদেরকে বের করে দেবে।’’ অর্থাৎ সে নিজে নিজেকে এবং তার সাথীদেরকে ‘সম্মানিত’ বললো এবং শাহানশাহে দু’ আলম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীদেরকে ‘হীন বা ইতর’ বললো। (নাঊযুবিল্লাহ্) তার পুত্র, যাঁর নামও আবদুল্লাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ছিলো, মুসলমান ছিলেন। যখন তিনি তাঁর পিতার এমন অভিশপ্ত বাক্যগুলোর কথা শুনলেন, তখন তিনি রসূলে আকরামের পবিত্র দরবারে হাযির হয়ে আরয করলেন, ‘‘আপনি যদি আমার পিতার এমন জঘন্য-অভিশপ্ত কথার কারণে তাকে হত্যা করতে চান, তবে আপনি আমাকে নির্দেশ দিন, যাতে আমি ওই বেয়াদবের মাথা কেটে এনে আপনার খিদমতে হাযির করে দেবো।’’ কিন্তু হুযূর-ই আকরাম তাঁকে এর অনুমতি দেননি। [ফাত্হুল বারীর হাশিয়া (পার্শ্ব টীকা, শরহে বোখারী শরীফ]
এ প্রসঙ্গে একথাও বর্ণিত আছে যে, হযরত আব্দুল্লাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু তলোয়ার নিয়ে মদীনা মুনাওয়ারার বাইরে দ-ায়মান হয়ে গিয়েছিলেন। আর পিতাকে বললেন, ‘‘নিজের মুখে বলো, ‘আমিই সর্বাপেক্ষা হীন ও ইতর লোক, আর হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ মানব জাতির মধ্যে সর্বাপেক্ষা বেশী সম্মানিত, অন্যথায় আমি তোমার শিরশ্চেদ করে ফেলবো।’’ পিতা বললো, ‘‘তুমি কি এটাই করবে?’’ বললেন, ‘‘হাঁ।’’ তখন সে ওই শব্দগুলো বললো। তারপর তিনি তাকে ছেড়ে দিলেন। [মাদারিজ: ১ম খন্ড, পৃ. ৩৫৫]
হযরত যায়দ ইবনে আব্দুল্লাহ্ আনসারীর নবীপ্রেম
হযরত যায়দ ইবনে আবদুল্লাহ্, সাহেবে আযান, আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর মধ্যেও রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি পূর্ণাঙ্গ ভালবাসা বিরাজিত ছিলো। একদিন তিনি নিজ বাগানে কাজ করছিলেন। আর তাঁর পুত্র এসে খবর দিলো যে, হাবীবে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর ওফাত শরীফ হয়ে গেছে। একথা শুনে তিনি এ দো‘আ করেছিলেন, ‘‘হে খোদা! আমাকে অন্ধ করে দাও, যাতে আমি আমার এ চক্ষুযুগল দ্বারা আপনার হাবীব হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর পর অন্য কাউকে না দেখি!’’ সুতরাং তাঁর দো‘আ কবূল হয়েছিলো এবং তিনি অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। [মাদারিজ: ১ম খন্ড, পৃ. ৩৫১, আনওয়ারে মুহাম্মাদিয়া, পৃ. ৪১৩]
হযরত খালিদ ইবনে মা’দানের ভালবাসা
হযরত খালিদ ইবনে মা’দান রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু মদীনা মুনাওয়ারার চাঁদ, দু’ জাহানের সরদার সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে এতো বেশী ভালবাসতেন যে, সব সময় তাঁর রসনা হুযূর-ই আকরামের স্মরণে সচল থাকতো। তাঁর কন্যা হযরত আবদাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহ্ তা‘আলা আনহা বলেন, ‘‘যখন আমার পিতা ঘরে শয়নের জন্য তাশরীফ আনতেন, তখন তিনি রসূলে করীম এবং তাঁর সাহাবীগণ-মুহাজির ও আনসারের প্রতি নিজের আগ্রহ ও ভালবাসা প্রকাশ করতেন। তিনি প্রত্যেককে তাঁর নাম নিয়ে স্মরণ করতেন। আর বলতেন- هُمْ اَصْلِىْ وَفَصْلِىْ وَاِلَيْهِمْ يَحِنُّ قَلْبِىْ (এসব হযরত আমার মূল ও শাখা। অর্থাৎ তাঁদের মধ্যে বড়রা আমার পিতার মতো এবং ছোটরা আমার সন্তানদের মতো। তাঁদের প্রতি আমার হৃদয় আসক্ত থাকে। আর তাঁদের সাক্ষাতের সময় দীর্ঘ হয়ে গেছে। তারপর তিনি এ দো‘আ করলেন- فَعَجِّلْ رَبِّ قَبْضِىْ اِلَيْكَ (হে আমার রব! আমার রূহ কব্জ করে নাও, যাতে আমি তাঁদের সাথে মিলিত হতে পারি।) আর তিনি কাঁদতেন এবং ততক্ষণ পর্যন্ত বারংবার একথা বলতেন যে পর্যন্ত না ঘুমিয়ে পড়তেন।’’
এক মহিলার অসাধারণ নবী প্রেম
এক মহিলা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা সিদ্দীক্বাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহার দরবারে হাযির হয়ে আরয করলেন, ‘‘আমার জন্য আমার আক্বার রওযা মুবারক খুলে দিন!’’ তখন সিদ্দীক্বাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা মহিলাটির আবেদন অনুসারে রওযা-ই আন্ওয়ারের দরজা খুলে দিলেন। অতঃপর ওই মহিলা আপন আক্বার রওযা মুবারক দেখে অঝোর নয়নে কান্না করলেন এবং কাঁদতে কাঁদতে নিজের প্রাণটুকু বিসর্জন দিয়ে দিলেন। [শেফা শরীফ: ২য় খ-: পৃ. ৩৮]
উপরে উল্লেখিত বর্ণনাগুলো দ্বারা বুঝা গেলো যে, আমাদের পূর্ববর্তী বুযুর্গগণ আপন আক্বা ও মাওলা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে অত্যন্ত ভালবাসতেন। দেখলেন তো! কেউ তাঁর বিচ্ছেদে অস্থির হয়েছেন, কেউ কেঁদেছেন, কেউ তো তাঁর বিচ্ছেদ-যন্ত্রণায় নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন; কিন্তু তাঁদের তুলনায় আমরা যে কত অপূর্ণ তা তো দেখাই যাচ্ছে। আমাদের চেয়ে তো ওই গর্ধবও উত্তম, যা আপন মালিক ও মাওলার ভালবাসায় নিজের প্রাণটুকু বিসর্জন দিয়েছে। ইবনে ‘আসাকির বর্ণনা করছেন, সাইয়্যেদ-ই দু’আলম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম খায়বার জয় করার পর একটি গাধার সাথে কথা বলেছিলেন, গাধাও তাঁর সাথে কথা বলেছিলো। তিনি সেটার নাম জিজ্ঞাসা করলেন। সেটা তার নাম বললো, ‘‘ইয়াযীদ ইবনে শিহাব।’’ আর আরয করলো, খোদা তা‘আলা আমার প্রপিতার ঔরশে ষাটটি গাধা পয়দা করেছেন। সেগুলোর মধ্যে প্রত্যেকের পিঠে ধারাবাহিকভাবে পয়গাম্বরগণই আরোহণ করতে থাকেন। এখন ওই বংশে আমি ব্যতীত এবং পয়গাম্বরগণের মধ্যে আপনি ব্যতীত কেউ অবশিষ্ট নেই। অতএব, আমি আশা করছি যে, আপনি আমার পিঠে আরোহন করবেন। আজ পর্যন্ত আমি এক ইহুদীর নিকট ছিলাম। যখন সে আমার পিঠে আরোহণ করতো, তখন আমি ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে মাটিতে ফেলে দিতাম। সে আমাকে মারতো ও ভুখা রাখতো।’’
হুযূর-ই আকরাম বললেন, ‘‘এখন থেকে তোমার নাম ইয়া’ফূর হবে।’’ এরপর থেকে সেটা হুযূর-ই আক্রামের খিদমতে থাকতো। যখন হুযূর কাউকে ডাকতে চাইতেন, তখন তিনি ওই গাধাকে পাঠিয়ে দিতেন। সেটা গিয়ে তাঁর দরজায় মাথা ঘষতো। যখন ঘরের মালিক বাইরে আসতেন, তখন ইঙ্গিতে বলতো, ‘‘আপনাকে সরকার-ই দু’ আলম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ডাকছেন।’’ সুতরাং ওই সাহাবী হুযূর-ই আক্রামের দরবারে হাযির হয়ে যেতেন। যেদিন মদীনা মুনাওয়ারার চাঁদ লোক চক্ষুর অন্তরালে চলে গেলো, সেদিন ওই গাধার, এ বিচ্ছেদ সহ্য হলোনা। সেটা কান্না করতে করতে এক কুপের মধ্যে ঝাঁপ দিয়ে নিজের প্রাণটুকু বিসর্জন দিলো। [মাদারিজ: ১ম খন্ড, পৃ. ২৩১, শেফা শরীফ: ১ম খন্ড, পৃ. ২০৭]
আল্লাহ্ আমাদেরকেও সাচ্ছা নবীপ্রেম দান করুন! আ-মী-ন
মহাপরিচালক-আনজুমান রিসার্চ সেন্টার, চট্টগ্রাম।