Anjuman-E Rahmania Ahmadia Sunnia Trust

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

মহিমান্বিত রমজান বিশ্ব মুসলিমের দ্বারে এসেছিল মুমিন মুসলমাদের জীবনে পরিশুদ্ধতা, আত্মার পবিত্রতা ও চারিত্রিক পূর্ণতা দানের লক্ষ্যে। পৃথিবীতে মানুষের সীমিত হায়াতে আল্লাহর এবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে অনন্তকালের পাথেয় সংগ্রহ করে নিতে হবে। ইসলাম শুধু আখিরাতের জীবনের কথা বলেনা, পার্থিব উন্নত জীবন-যাপনের কথাও বলে। মাহে রমজানের সিয়াম সাধনার মাধ্যমে প্রতিটি মুমিন বান্দা তাক্ওয়া অর্জন করে পার্থিব জীবন উন্নত করে। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে পাপ-পংকিলতা, কুচিন্তা, হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ, ক্রোধ, পরশ্রীকাতরতার মতো কুঅভ্যাসগুলো বিনাস করে উদারতা, ক্ষমা, মহত্ত্ব, মানব কল্যাণ, সহমর্মিতা, ধৈর্য, কষ্ট ও সহিষ্ণুতা সহ যাবতীয় মহৎ গুণাবলী অর্জন করার প্রশিক্ষণ লাভ করা রোজার লক্ষ্য। মূলত সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর নির্দেশিত পথে জীবন গঠন ও আল্লাহর নিষিদ্ধ কার্যাবলী ত্যাগ করার অনুশীলনের অভ্যাস রপ্ত করে। তাই পবিত্র রমজানের বিদায়ের প্রাক্কালে মুসলমানদের আত্মসমালোচনা করা দরকার, সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আমাদের প্রকৃত আত্মশুদ্ধি অর্জন হলো কিনা? যদি হয়ে থাকে তবেই আমরা সফল কাম।
পবিত্র মাহে রমজানের পর মুসলিম উম্মহার দ্বারে সমাগত পবিত্র ঈদ। শাওয়াল মাসের চাঁদ উদয়ের সাথে সাথে ছোটশিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সকলের মনে আনন্দের ঝিলিক দেখা দেয়। আমাদের জাতীয় কবির অমর সৃষ্টি গীতি প্রত্যেকের মুখেমুখে-

‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এল খুশির ঈদ,
তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানি তাগিদ।’

পবিত্র ঈদের প্রাক্কালে মুসলিম উম্মাহকে মাহে রমজানের অন্তর্নিহিত শিক্ষার আলোকে ঈমানী চেতনায় উজ্জীবিত হতে হবে। মুসলিম মানষে নবজাগরণের সূচনা করতে হবে। মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার মাধ্যমে অর্জিত প্রশিক্ষণ নিজ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অনুশীলন, বাস্তবায়ন ও চর্চার মাধ্যমে পরিশুদ্ধ সমাজ প্রতিষ্ঠায় একাত্ম হতে হবে। রমজান মাসে বিশ্ব মুসলিম কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে মসজিদে নামাজ আদায় করেছে একই নিয়মে একই সময়ে একই কাতারে। পবিত্র ঈদ উৎসবে শামিল হবে একই সময়ে। একে অপরের সাথে ছোট-বড়, ধনী-গরীব, দোস্ত-দুশমন, সবাই মিলেমিশে একাকার। সমস্ত ভেদা-ভেদ, মনোমলিন্য, হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে পরমাত্মীয়ের মতো কোলাকুলি করে থাকে। এতে সৃষ্টি হয় মহামিলনের এক অপূর্ব আনন্দঘন মুহূর্ত। সকলের মাঝে জন্ম নেয় মমতা, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি। এ মহা মিলনের প্রতীক সম্প্রীতি ও একতার বন্ধনকে যদি স্থায়ী রাখা যায় তবেই ঈদের সার্থকতা। এ আনন্দময় মুহূর্তে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে পাড়া-প্রতিবেশী, গরীব আত্মীয়-স্বজন, অধীনস্থ কর্মচারী সকলে এ আনন্দে শরিক হতে পেরেছে কি না! গরীব-দুঃখি, ফকির-মিসকিন সকলকে সমভাবে ঈদের আনন্দে শামিল করার নিমিত্তে সামর্থবানদের যাকাত-ফিতরা, দান-সদকা, উপহার প্রদান করলে তবেই হবে সার্থক ঈদ্ উদ্যাপন।
পবিত্র ঈদের প্রাক্কালে আমরা যদি মুসলিম বিশ্বের বর্তমান অবস্থার প্রতি দৃষ্টিপাত করি তাহলে হতাশার চিত্র ফুটে উঠবে। বিশ্ব মুসলিম ইহুদীবাদিদের চক্রান্তের শিকার। পবিত্র রমজান মাসেও মুসলমানদের কিবলা আল্ আকসায় নামায আদায়কালে ফিলিস্তিনি মুসলিমদের উপর হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলী বাহিনী। গত বছরও পবিত্র রমজান মাসে একই ধরনের হামলায় বহু মুসলিমের রক্ত ঝরেছে। ক্ষমতাশীল বিশ্ব মুসলিম নেতৃবৃন্দ যতদিন ঐক্যবদ্ধ না হবেন ততদিন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নিরীহ্ মুসলিমদের উপর হামলা চলবে। তাই এ পবিত্র ঈদের প্রাক্কালে বিশ্বমুসলিম ঐক্যবদ্ধ হয়ে শক্তিশালী মুসলিম উম্মাহ্ গড়ে উঠুক এ কামনা করি।
মাসিক তরজুমানের লেখক, পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা, শুভাকাঙ্খী সকলকে জানাই পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা- ঈদ মোবারক।

Share:

Leave Your Comment