যে আমলে গাছের পাতার মতো গুনাহ ঝরে যায়
উমায়রা সুলতানা সাফ্ফানা
বিপদাপদ মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিপদ কখনো বলে-কয়ে আসে না। বিপদের বিভিন্ন রকম ও ধরন রয়েছে। মানুষ কখনো রোগে-শোকে কাতর হয়, কখনো অর্থকষ্টে জর্জরিত হয়। বেদনা-ক্লিষ্টতায় হতবিহ্বল হয়। বিপদ যেমনই হোক, মুমিন ধৈর্যের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করে।
মুমিন বিপদে ধৈর্য ধারণ করে। আর আল্লাহ তাআলা বিনিময়ে দেন। গুনাহ-পাপ মাফ করেন। এমনকি শরীরে সামান্য কাঁটা বিদ্ধ হলেও বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা গুনাহ মাফ করেন। হযরত সায়েব ইবনে খাল্লাদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘মুমিন যে ধরনের বিপদেই আক্রান্ত হোক, এমনকি কাঁটা বিঁধলেও বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা একটি নেকি লেখেন অথবা একটি গুনাহ মাফ করে দেন।’
[মুসলিম, হাদিস : ২৫৭২; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৬৫৬০]
একবার নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম প্রচণ্ড জ্বরে কাঁপছিলেন। এমন সময় হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এলেন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘মুমিন যখন কোনো (বিপদ) কষ্টে আক্রান্ত হয় তখন আল্লাহ বিনিময়ে তার গুনাহগুলো (ঝরিয়ে দেন) মাফ করে দেন; যেমন (শীতকালে) গাছের পাতা ঝরে পড়ে।’ [মুসলিম, হাদিস : ৫৬৪৭]
মুমিন বান্দা বিপদে শুধু ধৈর্য ধারণই করে না, বরং আল্লাহ যে অবস্থায় রেখেছেন তার ওপর কৃতজ্ঞতা আদায় করে। ফলে আল্লাহ তার গুনাহগুলো এমনভাবে মাফ করে দেন, যেন সে সদ্য ভূমিষ্ঠ নিষ্পাপ শিশু, যার কোনো গুনাহই থাকে না। এমনকি অসুস্থ ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করলে, সুস্থ অবস্থায় সে যে নেক আমল করত, তার সওয়াব লাভ করে।
হযরত শাদ্দাদ ইবনে আওস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ও হযরত সুনাবিহী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু এক অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কেমন আছেন? তিনি উত্তরে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে বলেন, ‘আল্লাহর নিয়ামতের মধ্যে আছি।’ তা শুনে হযরত শাদ্দাদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তুমি গুনাহর কাফফারা ও পাপমোচনের সুসংবাদ গ্রহণ করো। কারণ, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘আমি যখন আমার কোনো মু’মিন বান্দাকে বিপদে আক্রান্ত করি, আর এ অবস্থায় সে আমার প্রশংসা করে, তখন সে (রোগের) বিছানা থেকে সেদিনের মতো পাপমুক্ত হয়ে ওঠে, যেদিন তার মা তাকে জন্ম দিয়েছিল।’ এবং আল্লাহ ফেরেশতাদের বলেন, ‘আমিই আমার বান্দাকে (আমল থেকে) বিরত রেখেছি এবং পরীক্ষায় ফেলেছি, সুতরাং সে সুস্থ অবস্থায় যে নেক আমল করত, এ অসুস্থ অবস্থায়ও সে নেক আমলের সওয়াব লিখতে থাকো। [মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৭১১৮]
মানুষের বিপদ কখনো হয় শারীরিক অসুস্থতার দ্বারা, কখনো সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে, আবার পরিবার-সন্তানের অসুবিধার মাধ্যমেও বিপদ আসে। কিন্তু সব ধরনের বিপদের বিনিময়ে তার গুনাহ মাফ করেন। তার গুনাহ মাফ হতে হতে একপর্যায়ে সে পুরোপুরি গুনাহমুক্ত হয়ে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। তাই যেকোনো রকমের বিপদেই মুমিনের হতাশ না হয়ে ধৈর্য ধারণ করা উচিত। হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মু’মিন পুরুষ ও মুমিন নারী বিপদাক্রান্ত হতে থাকে; সে কখনো শরীর, কখনো সম্পদ ও কখনো সন্তান-সন্ততির বিপদে আক্রান্ত হয়। (এসব বিপদে মুমিন ধৈর্য ধারণ করে, ফলে আল্লাহ তাআলা তার গুনাহ মাফ করতে থাকেন।) একপর্যায়ে সে গুনাহমুক্ত হয়ে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে।’ [মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৭৮৫৯]