মাহে রমযানে ঐতিহাসিক স্মরণীয় দিবস সমূহ
তরজুমান ডেস্ক
১. হযরত ফাতিমাতুয্ যাহরা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহার ওফাত দিবস: ৩ রমযানুল মোবারক, ১১ হিজরি
সায়্যিদাতুন্ নিসা-ইল ‘আলামীন, নূর-ই দীদাহ্-ই রাহমাতুল্লিল আলামীন, হযরত সায়্যিদাহ্ ফাতিমাতুয্যারা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র সর্বাধিক প্রিয় ও আদরের ‘শাহেবযাদী’ (তনয়া) ছিলেন। তাঁর শুভজন্ম ৩৯ নবভী বছরে হয়েছিল।
২. হযরত খাদীজাতুল কোবরা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা’র ওফাত: ১০ রমযানুল মোবারক ১০ নবভী সন
হযরত খাদীজাতুল কোবরা (রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা) বিনতে খুওয়ায়লিদ ওই পবিত্র ও সৌভাগ্যবতী রমণী ছিলেন, যিনি শুধুমাত্র প্রথমেই নুবূয়তের সত্যায়ন করেছেন তা নয়, বরং ইসলামের শুভ সূচনায় দ্বীনের দাওয়াত ও তাবলীগের মুশকিল ও কঠিন পর্যায়েগুলোতে হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে সুপরামর্শ দাতা, সাহায্য-সহযোগিতাকারী হিসেবে ভূমিকা পালন করেছেন।
তিনি আরবের একজন সম্পদশালী রমণী ছিলেন। কিন্তু নুবূয়তের চাদরের সাথে সংযুক্ত হওয়ার পর তিনি তাঁর সমস্ত সম্পদ স্বীয় প্রাণাধিক প্রিয় স্বামী হাবীব-ই খোদা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর কদমে উৎসর্গ করেছেন।
নবী-ই করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র পরম অন্তরঙ্গ সাথী, সহানুভূতিশীল রমণী ও ইসলামের প্রতি ভীষণ অনুগ্রহকারীনী ১০ নবভী সনের ১০/১১ রমযানুল মোবারক স্বীয় রবের দরবারে হাজির হয়েছেন।
৩.হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহা’র ওফাত: ১৭ রমযানুল মুবারক ৫৮ হিজরী
উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিক্বা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহা আলিমাহ (জ্ঞানী) ফাদ্বিলাহ (মর্যাদাবতী) ও ফক্বিহা ই উম্মত (উম্মতের মধ্যে বিজ্ঞ মুফতী) ছিলেন। পবিত্র রমণীগনের মধ্যে তিনিই কুমারী ছিলেন। বড় বড় উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন সাহাবাই কিরাম ফিকহী মাসাইল এর বিষয়ে দিকনির্দেশনা নেয়ার জন্য তাঁর প্রতি ই প্রত্যাবর্তন করতেন। উম্মতের এ মহান ফক্বীহ ও মুহাদ্দিস ২২১০ টি হাদীস শরীফ বর্ণনা করেছেন। তিনি ১৭ রমজানুল মোবারক ৫৮ হিজরিতে ওফাত পান। জান্নাতুল বক্বিতে তাঁর কবর শরীফ রয়েছে।
৪. ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ: ১৭ রমযানুল মোবারক, ২য় হিজরি
বদর যুদ্ধ ১৭ রমযানুল মোবারক ২য় হিজরিতে মুসলমানগণ ও মক্কার কাফেরদের মধ্যে সংঘটিত হয়। ইসলামী যোদ্ধাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাজেদারে-ই মদীনা হুযূর নবী-ই আকরাম সাল্লাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম, অপরদিকে কাফের যোদ্ধাদের নেতৃত্ব ছিল আবূ জাহল-এর নিকট। এ যুদ্ধকে ‘গাযওয়া-ই বদরুল কোবরা’ ও ‘ইয়াওমুল ফুরক্বান’ নামেও অভিহিত করা হয়।
আল্লাহ্ রাব্বুল ইজ্জত শয়তানী শক্তিগুলোকে নস্যাৎ করে দিলেন। আর ইসলামের অনুসারীদেরকে মহাগৌরবের বিজয় ও সাফল্য দান করলেন। ইসলামী যোদ্ধা ৩১৩ জন ছিলেন, হাতিয়ার, খাদ্যরসদ, বাহন অত্যন্ত কম ছিল; অথচ বিপরীত পক্ষের কাফেররা মাথা থেকে পা পর্যন্ত হাতিয়ার দ্বারা সুপ্রস্তুত ছিল; তাদের বাহনও ছিল বেশি, অগণিত উট ও খাদ্যরসদে ভর্তি ছিল। এতদ্সত্ত্বেও মক্কার কাফেররা এত ছোট ইসলামী যোদ্ধা বাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করতে পারেনি এবং পরিশেষে তাদের পরাজয় বরণ করে পালিয়ে যেতে হয়েছিল।
মক্কার কাফেরদের সত্তরের অধিক লোক এ যুদ্ধে জাহান্নামে নিপতিত হয়েছে আর প্রায় সত্তর জন লোক কয়েদী হয়েছিল। অপরদিকে ১৪ জন সাহাবা-ই কিরাম রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুম শাহাদাতের শরাব পান করেছেন।
৫. ঐতিহাসিক মক্কা বিজয়: ২০ রমযানুল মোবারক ৮ম হিজরী
নুবূয়তের ঘোষণার পর থেকে ৮ম হিজরী পর্যন্ত ২১ বছরের নবভী যুগ নিরাপত্তা, শান্তি, ভ্রাতৃত্ব ও মহব্বতের প্রতি আহ্বানকারীগণ এবং দ্বীন-ই রহমতের জন্য ভীষণ ধৈর্য পরীক্ষা ও কঠিন যুগ ছিল। মুমিনগণ অত্যন্ত দুঃখভরাক্রান্ত হৃদয়ে মক্কা ত্যাগ করেছেন এবং হেরম-ই কা’বা থেকে বিচ্ছেদ বেদনা সহ্য করেছেন। মদীনাতুল মুনাওয়ারাহ্ হিজরত করার পরও তাঁদের অন্তরে স্বীয় জন্মভূমি ও বায়ত-ই ‘আতীক্ব (ক্বা’ব)’র প্রতি গভীর ভালবাসা বিদ্যমান ছিল। তাঁরা নিজেদের প্রিয় জন্মভূমির মহব্বতে অস্থির ছিলেন। কিন্তু এ অবস্থাদির পরিবর্তন হতে চলেছে, তাওহীদের মশাল সমুন্নতকারীগণ, যাদেরকে মদীনা হিজরত করতে বাধ্য করা হয়েছিল, তাঁরা স্বীয় ললাটসমূহে সাজদার নূরী ঝলক সহকারে দশ হাজার জনের বিরাট বহর নিয়ে স্বীয় পথপ্রদর্শক ও মুমিব দু’জগতের আক্বা সাল্লাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র নেতৃত্বে মক্কার মধ্যে এমন অতুলনীয় শান ও মর্যাদা নিয়ে প্রবেশ করেছেন যে, পুরো পরিবেশ জুড়ে আল্লাহ্ তা‘আলার বড়ত্বের বাণী ‘তাকবীর’ ও ‘তালবিয়া’ দ্বারা প্রকম্পিত হচ্ছে। এটি ছিল ওই মহাগৌরবের ও ঐতিহাসিক বিজয়, যেটাকে ক্বোরআন মজীদে ‘তাফহুম্ মুবীন’ (স্পষ্ট বিজয়) আখ্যা দেয়া হয়েছে। এ পবিত্র সময়টি মাহে রমযানুল মোবারকের অংশ হয়েছে।
৬. শাহাদাত-ই হযরত আলী মুরতাদ্বা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু: ২১ রমযানুল মোবারক ৪০ হিজরী
হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু’র উপর রমযানুল মোবারকে সিরিয়া থেকে আগত আবদুর রহমান ইবনে মুলযিম নামের এক ব্যক্তি কুফার মসজিদে নামাযরত অবস্থায় বিষ মিশ্রিত তলোয়ার দ্বারা আক্রমণ করেছিল, ফলে বিষের প্রভাব পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। পরিশেষে ২১ রমযানুল মোবারক ফজরের সময় তিনি শাহাদাত বরণ করেছেন। আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদেরকে আহলে বায়তে আত্বহার-এর মহব্বত, সম্মান, আদব ও অনুসরণ করার তাওফীক দান করুন- আমীন।