Anjuman-E Rahmania Ahmadia Sunnia Trust

মাগরিবের নামাযের ফযীলত ও মাসায়েল

মাগরিবের নামাযের ফযীলত ও মাসায়েল

অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ বদিউল আলম রিজভি

عَنْ عَائِشَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ اَفْضَلَ الصَّلاَةِ عِنْدَ اللهِ صَلاَةِ الْمَغْرِبِ ـ وَمَنْ صَلَّى بَعَدَهَا رَكَعَتَيْنِ بَنِىَ اللهُ لَه بَيْتًا فِى الْجَنَّةِ ـ يَغْدُوْا فِيْهِ وَيَرُوْحُ ـ [رواه الطبرانى]
عَنْ سَلَمَةَ بْنِ الْاَكْوَعِ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلَّى الْمَغْرِبَ سَاعَةً تَغْرِبُ الشَّمْسُ اِذَا غَابَ حَاجِبِهَا [ رواه مسلم]

অনুবাদ: উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, নিশ্চয় আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম সালাত হলো মাগরিবের সালাত। যে ব্যক্তি ফরজ পরবর্তী দু’ রাকা‘আত (সুন্নাত) আদায় করবে আল্লাহ্ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে একটি গৃহ নির্মাণ করবেন, এতে সে সকাল সন্ধ্যা অবস্থান করবে। [তাবরানী শরীফ, হাদীস-৬৪৪৯]
হযরত সালামাহ্ ইবনে আকওয়াহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লালাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম মাগরীবের নামায ঐ সময় আদায় করতেন, যখন সূর্য অস্তমিত হত। যখন সূর্য তার পর্দাবৃত হত। [মুসলিম শরীফ, হাদীস নং-৬৩৬]

প্রাসঙ্গিক আলোচনা
বর্ণিত হাদীসদ্বয়ের প্রথম হাদীসে মাগরীব নামাযের গুরুত্ব আলোকপাত হয়েছে। দ্বিতীয় হাদীসে মাগরীব নামাযের ওয়াক্ত প্রসঙ্গে নির্দেশনা বর্ণিত হয়েছে।

মাগরিবের সময়কাল
মাগরীবের নামায সুনির্দিষ্ট সময়ে আদায় করা ও বিলম্ব না করার নির্দেশনা প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে- عَنْ اَبِىْ اَيُّوْبَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ تَزَالُ اُمَّتِىْ بِخَيْرٍ اَوْ قَالَ عَلَى الْفِطْرَةِ مَالَمْ يُؤْخَّرُوْا الْمَغْرِبَ اِلى اَنْ تَشْتَبِكَ الْنُّجُوْمُ ـ [رواه احمد]
হযরত আবু আইয়ুব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, আমার উম্মত ততদিন কল্যাণের মধ্যে থাকবে অথবা ফিতরাত তথা ইসলামের উপর থাকবে, যতদিন তারা মাগরিবের সালাত আদায়ে তারকা উজ্জ্বল হওয়া পর্যন্ত বিলম্ব করবে না। [মুসনাদে আহমদ, হাদীস-২৩৫৩৪]
হাদীস বিশারদের বর্ণনা মতে ফিতরাত শব্দ দ্বারা নবীদের সুন্নতকে বুঝানো হয়েছে। হাদীস শরীফে আরো এরশাদ হয়েছে- قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقْتُ صَلوةِ الْمَغْرِبِ مَالَمْ يَغْرُبُ الشَّفَقُ ـ [رواه مسلم]
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, মাগরিবের নামাযের সময় হচ্ছে যতক্ষণ না ‘শফক’ বা আভা ডুবে যায়। [মুসলিম শরীফ-৬১২]
সূর্য ডুবে যাওয়ার পরই মাগরিবের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয়, আর শেষ সময় সম্পর্কে ইমাম আযম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলায়হির মতে ‘শাফাক’ বা পশ্চিমাকাশের লালিমা দূরীভূত না হওয়া পর্যন্ত মাগরিবের সময় অবশিষ্ট থাকে।

শাফাক-এর ব্যাখ্যা
ইমাম আযম আবু হানিফা রাহমাতুল্লাহি তা‘আ আলায়হি বলেন, পশ্চিমাকাশের লালিমার পর যে সাদা আভা দেখা যায় তাকে ‘শাফাক’ বলে। ওই সময়কে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম মাগরিবের শেষ সময় স্থির করেছেন। [মিরআতুল মানাজীহ, খন্ড-১, পৃ. ৪৪০, কৃত. হাকিমুল উম্মত মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী রহ.]
মাগরিবের ফরজের পর দু’রাকা‘আত সুন্নতে মুআক্কাদাহ্ পড়ার ফযীলত
হাদীস শরীফে ফরজ পরবর্তী দু’রাকা‘আত সুন্নাতে মুআক্কাদাহর ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে-
عَنْ مَكّحُوْلُ يَبْلُغُ بِهِ اَنَّ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ صَلَّى رَكَعَتَيْنِ بَعْدَ الْمَغْرِبْ قَبْلَ اَنْ يَتَكَلَّمَ كَتَبْتَا فِىْ عِلِّيِيْنَ اَوْ رفعتا [مشكواة]
প্রখ্যাত তাবিয়ী হযরত মাকহুল রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি মাগরিবের ফরজ আদায়ের পর কথাবার্তা বলার পূর্বে দু’ রাকা‘আত সালাত আদায় করবে তার নামায ইল্লিয়্যিনে লিপিবদ্ধ হবে। অথবা ইল্লিয়্যিনে পৌছানো হবে।
মাগরিবের ফরজের পর সুন্নতে মুআক্কাদাহ্ বিলম্ব না করার নির্দেশনা বর্ণিত হয়েছে।
عَنْ اَبِىْ الْعالِيَهَ عَنْ حُذَيْفَة رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عليه وسلم قَالَ عَجَّلُوْا الرّكعتين بعد المغرب فَاِنَّهُمَا تَرفعان مَعَ الْمَكْتُوْبَة
প্রখ্যাত তাবিয়ী হযরত আবুল আলিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি হযরত হুজায়ফা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, তোমরা মাগরিবের পর দু’ রাকা‘আত নামায তাড়াতাড়ি পড়ো, তা ফরজের সাথে পেশ করা হবে। [মিশকাত শরীফ, হাদীস-১১৮৫]

মাগরিবের রাকা‘আত সংখ্যা
ফরজ তিন রাকাআত, সুন্নাতে মুআক্কাদাহ্ দু’ রাকাআত, নফল দু’ রাকাআত।

মাগরিবের সুন্নতের পর ছয় রাকা‘আত আওয়াবীন সালাতের ফযীলত
হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে মাগরিবের পর ছয় রাকা‘আত নামায পড়তে দেখেছি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-
مَنْ صَلَّى بَعْدَ الْمَغْرِبَ سِتُّ رَكْعَاتٍ غُفِرْتُ لَه ذُنُوْبُه وَاِنْ كَانَتْ مِثلَ زبد البحر [رواه الطبرانى]
যে ব্যক্তি মাগরিবের পর ছয় রাকা‘আত নামায আদায় করবে, তার গুনাহ্ মাফ করে দেয়া হবে যদিও ওটা সমুদ্রের ফেনা রাশির সমান হয়। [তাবরানী]
মাসআলা: মাগরিবের নামায সূর্যাস্তের পর বিলম্ব না করে পড়া মুস্তাহাব। [আলমগীরি, ১ম খন্ড]
মাসআলা: মাগিরবের নামাযে দু’ রাকাআত নামায পড়ার মত সময় থেকে অধিক দেরী করা মাকরূহে তানযীহ্ এবং সফর, অসুস্থতা ইত্যাদির অজুহাত ব্যতীত তারকা সুস্পষ্ট হওয়া পর্যন্ত দেরী করা মাকরূহে তাহরীমি। [বাহারে শরীয়ত, খন্ড-৩, পৃ. ১৩১, ফতোয়ায়ে রিজভীয়্যাহ্, খন্ড-৫ম, পৃ. ১৫৩, কৃত. আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা রহ.]
মাসআলা: হজ্বের সময় মুযদালিফার ময়দানে মাগরিব এবং এশার নামায এশার সময় পড়ে নিবে। [বাহারে শরীয়ত, খন্ড-৩, পৃ. ১৩১]
মাসআলা: মাগরিবের সময় কমপক্ষে ১ ঘন্টা ১৮ মিনিটি পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। বেশীর মধ্যে ১ ঘন্টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। [বাহারে শরীয়ত, খন্ড-২, পৃ. ২২৬]
মাসআলা: সূর্য অস্ত যাওয়ার পর থেকে মাগিরবের ফরজ পর্যন্ত সর্বপ্রকার নফল নামায নিষিদ্ধ। [বাহারে শরীয়ত, খন্ড-৩, পৃ. ১৩১]
যে জমীনের উপর নামায পড়া হয় সে জমীন অন্য জমীনের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দাবী করে।
হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, এমন কোন সকাল সন্ধ্যা নেই জমীনের এক অংশ অন্য অংশকে ডাক দিয়ে বলে আজকে তোমার উপর কি কোন নেককার বান্দা অতিক্রম করেছে? যে তোমার উপর নামায পড়েছে বা জিকর করেছে, যদি জমীন হ্যা বলে তখন এ কারণে এক জমীন অন্য জমীনের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দাবী করে। [তাবরানী শরীফ, বাহারে শরীয়ত, খন্ড-৩, পৃ. ১২৬]

পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায়কারীর জন্য পাঁচটি নিয়ামত
مَنْ حَافِظَ عَلى الصَّلوة اَكْرَمَهُ اللهُ بِخَمْسٍ خِصَالٍ يُرْفَعُ عَنْهُ ضِيْقُ الْمَوْتِ وَعذَابُ الْقَبَر ويعطيه بيمنه ويمر على الصراط كا البرق ويدخل الجنة بغير حساب [ المنبهات]
যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামায যথাযথ হিফাজত করে আল্লাহ্ তাঁকে পাঁচটি নিয়ামত দান করেন, তাঁর মৃত্যু যন্ত্রণা উঠিয়ে নেয়া হবে। কবরের আযাব তুলে নেয়া হবে। তাঁর আমলনামা তাঁর ডান হাতে দেয়া হবে। বিদ্যুৎগতিতে পুলসিরাত অতিক্রম করবে। বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [আল মুনাব্বিহাত, কৃত. আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী রহ.]
হে আল্লাহ্ আমাদেরকে পাঁচওয়াক্ত নামাযের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্ট করুন। সকল প্রকার অপকর্ম থেকে রক্ষা করুন। আমিন।

লেখক: অধ্যক্ষ- মাদ্রাসা-এ তৈয়্যবিয়া ইসলামিয়া ফাযিল (ডিগ্রি), বন্দর, চট্টগ্রাম।

Share:

Leave Your Comment