জান্নাত-জাহান্নাম
জান্নাত
জান্নাত হচ্ছে একটি খুবই বড় ও খুবই উত্তম উদ্যান, যেটা আল্লাহ তা’আলা মুসলমানদের জন্য তৈরি করেছেন। এর দেয়াল হচ্ছে সোনা ও রূপার ইট এবং মুশ্কের সিমেন্ট দ্বারা তৈরি, মেঝে জাফরান ও আম্বরের তৈরি এবং পাথরসমূহ মুণিমুক্তার। এর মধ্যে জান্নাতীগণ থাকার জন্য খুবই সুন্দর হীরা ঐ মুক্তার বড় বড় মহল ও তাঁবু রয়েছে। জান্নাতের একশ’টি দরজা রয়েছে। প্রত্যেক দরজার প্রশস্ততা আসমান থেকে যমীনের দূরত্বের সমান। দরজার এক পাশ থেকে আর এক পাশে যেতে দ্রুতগামী ঘোড়ার সময় লাগে সত্তর বছর। জান্নাতে এর নি’মাতসমূহ তেমনি হবে, যা কেউ কল্পনাও করতে পারে না। নানা রকম ফলমূল, দুধ, মধু, পবিত্র শরাব, ভাল ভাল খাবার এবং উত্তম কাপড়, যেগুলো দুনিয়াতে পরার কারো সৌভাগ্য হয়নি, ইত্যাদি নি’মাত জান্নাতীদেরকে দেয়া হবে। খেদমত করার জন্য হাজার হাজার পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন গেলমান এবং সুহ্বতের জন্য পবিত্র হুর ও বিবিগণ, যেগুলো এতসুন্দর হবে যে, যদি এদের মধ্যে কেউ দুনিয়ার দিকে একবার উঁকি মেরে দেখে, তাহলে এর ঝলক ও সৌন্দর্যে সমস্ত মানুষ বেহুঁশ হয়ে যাবে। বেহেশ্তে কোন ঘুম আসবে না। কোন রোগ হবে না, কোন ভয় থাকবে না, কখনো মৃত্যু হবে না, কোন প্রকারের কষ্টভোগ করতে হবে না; বরং সব রকমের আরাম অর্জিত হবে, প্রত্যেক বাসনা পূর্ণ হবে এবং সবচেয়ে বড় নি’মাত হিসেবে তা’তে আল্লাহ তা’আলার দীদার নসীব হবে।
দোযখ
এটাও একটি গহ্বর, যার মধ্যে ঘোর অন্ধকার এবং খুবই উত্তপ্ত কালো আগুন বিরাজমান, যার মধ্যে আলোর কোন নাম নিশানা নেই। এটা বদকার ও কাফিরদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। কাফিরদেরকে সব সময় এতে বন্দী রাখা হবে। এর আগুন প্রতি মুহূর্তে বৃদ্ধি পেতে থাকবে। দোযখের আগুন এত উতপ্ত যে, সুঁই এর ছিদ্র বরাবরও যদি খুলে দেয়া হয়, তাহলে পৃথিবীর সমস্ত লোক এর গরমে মারা যাবে। যদি জাহান্নামের কোন দারোগা দুনিয়াতে আসে, তাহলে তাঁর ভয়াল আকৃতি দেখে সমস্ত লোকের প্রাণ বের হয়ে যাবে। জাহান্নামীদেরকে নানা প্রকারের আযাব দেয়া হবে। বড় বড় সাপ ঐ বিচ্ছু কামড়াবে, ভারী ভারী হাতুড়ী দিয়ে মাথায় আঘাত করা হবে। যখন ভীষণ ক্ষুধা, তৃঞ্চা অনুভব হবে, তখন তেলে ফুটন্ত তলানি ও পুঁজ পান করার জন্য এবং কাঁটা বিশিষ্ট ও বিষাক্ত যাক্কুম ফল খাবার জন্য দেয়া হবে। যখন ওই ফল খাবে, তখন তা গলায় আটকে যাবে। ওটাকে অপসারিত করার জন্য পানি তালাশ করলে সেই ফুটন্ত পানি দেয়া হবে। সেই পানি পান করার ফলে নাড়িভূঁড়ি টুকরা টুকরা হয়ে বের হয়ে আসবে। কাফিররা আযাবে অতিষ্ঠ হয়ে যখন মৃত্যু কামনা করবে এবং মৃত্যুও আসবে না, তখন সবাই পরস্পর পরামর্শ করে জাহান্নামের দারোগা হযরত মালেক আলাইহিস্ সালামকে আহবান করে বলবে- আপনার রবকে বলে আমাদের ব্যাপারটা মীমাংসা করে ফেলুন। হযরত মালেক আলাইহিস্ সালাম হাজার বছর পর্যন্ত কোন উত্তর গ্গদবেন না। হাজার বছর পর বলবেন, আমাকে কেন বলছো? তাঁকেই বল যার নাফরমানী করেছো। অতঃপর হাজার বছর পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলাকে তাঁর রহমতের বিভিন্ন নামে আহবান করবে। হাজার বছর পর্যন্ত কোন উত্তর দেবেন না। এরপর যা বলবেন, তা হচ্ছে- ‘দূর হও, জাহান্নামে পড়ে থাকো, আমার সাথে কোন কথা বলো না।’ ওই সময় কাফিররা সকল প্রকারের কল্যাণ থেকে নিরাশ হয়ে যাবে এবং গাধার আওয়াজের মত চিৎকার করে কাঁদবে। প্রথমে চোখের পানি বের হবে এরপর বের হবে রক্ত। কাঁদতে কাঁদতে দু’গণ্ডদেশে কূপের মত গর্ত হয়ে যাবে। কান্নার রক্ত ও পুঁজ এত অধিক হবে যে, যদি এর উপর নৌকা রাখা হয়, তাহলে চলতে পারবে। জাহান্নামীদের আকৃতি এমন বিশ্রী হবে যে, যদি কোন জাহান্নামীকে দুনিয়াতে সেই আকৃতিতে আনা হয়, তাহলে এর বীভৎস চেহারা ও দুর্গন্ধের কারণে দুনিয়ার সমস্ত মানুষ মারা যাবে। শেষ পর্যন্ত কাফিরদের জন্য এটাই করা হবে যে, প্রত্যেক কাফিরকে প্রত্যেকের মাপ বরাবর সিন্ধুকে বন্ধ করা হবে। অতঃপর আগুন প্রজ্বলিত করা হবে এবং আগুনের তালা লাগানো হবে। এরপর এ সিন্দুককে আর একটি আগুনের সিন্দুকে রাখা হবে এবং উভয়ের মাঝখানে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হবে আর ওটাতেও তালা লাগিয়ে আগুনে নিক্ষেপ করা হবে। তখন প্রত্যেক কাফির মনে করবে যে সে ব্যতীত আর কেউ জাহান্নামে নেই। এটা আযাবের উপর আযাব এবং এ আযাব সব সময়ের জন্য থাকবে. লেটা কখনও শেষ হবে না। যখন সমস্ত জান্নাতী জান্নাতে প্রবেশ করবেথ এবং জাহান্নামে কেবল ওইসব লোকেরাই রয়ে যাবে, যাদেরকে ওখানে সব সময় থাকতে হবে, তখন জান্নাত ও দোযখের মাঝখানে মৃত্যুকে ভেঁড়ার আকৃতিতে এনে দাঁড় করানো হবে। অতঃপর এক আহবানকারী জান্নাতবাসীদেরকে আহবান করবে। তাঁরা ভয় পেয়ে উঁকি মেরে দেখবেন যে, বের হয়ে যাবার হুকুম হলো কিনা। এরপর জাহান্নামীদেরকে আহবান করবে। ওরা আনন্দিত হয়ে উঁকি মেরে দেখবে যে, মুসীবত থেকে মুক্তি দেয়ার নির্দেশ হলো কিনা। পুনরায় সবাইকে জিজ্ঞাসা করা হবে, এটাকে চিনো? সবাই বলবে, হ্যাঁ এটা মৃত্যু। অতঃপর সেটাকে যবেহ করা হবে, আর বলবে, হে জান্নাতবাসীগণ, তোমরা চিরস্থায়ী হয়ে গেছো। এখন আর মৃত্যু নেই এবং হে দোযখবাসীগণ, তোমরা চিরস্থায়ী হয়ে গেছো। আর মৃত্যু নেই। এতে জান্নাতীদের আনন্দের সীমা থাকবে না আর জাহান্নামীরা সীমাহীন মর্মাহত হবে- نَسْئَلُ اللهُ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِىْ الدِّيْنِ وَالدُّنْيَا وَالْاخِرَةِ
অর্থাৎ- আল্লাহর কাছে দ্বীন দুনিয়া, ও আখিরাতে ক্ষমা ও পানাহ্ চাই।