কুফর (كفر)-এর বিবরণ
= কুফর (كفر)-এর বিবরণ =
ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘কুফর’ হচ্ছে ‘ঈমান’-এর বিপরীত। সুতরাং ‘কুফর’ সম্পর্কে আলোচনা করার পূর্বে ‘ঈমান’ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা দরকার। ঈমান (ايمان ) শব্দের আভিধানিক অর্থ ‘সত্য বলে মেনে নেওয়া’। আরবী ‘ঈমান’ (ايمان) শব্দটি امن থেকে গৃহীত। এর অর্থ হচ্ছে ‘নিরাপত্তা’ ও ‘মানসিক প্রশান্তি।’ সত্যায়নের ক্ষেত্রেও কেউ কারো সত্যায়ন করলে সে যার সত্যায়ন করেছে তাকে ‘মিথ্যাবাদ দেওয়া’ ও ‘বিরোধিতা করা’ থেকে চিন্তামুক্ত করে দেয়. আরবী অলঙ্কার শাস্ত্র অনুসারে, ايمان (ঈমান) শব্দের সাথে (বা) অব্যয় পদ সংযোজিত হলে আন্তরিক বিশ্বাসের সাথে মৌখিক স্বীকারুক্তিও সংযোজিত হয়। কখনো কখনো ‘ঈমান’ শব্দের ব্যবহার ‘নির্ভর করা’ অর্থেও হয়ে থাকে। সুতরাং নির্ভরকারী ব্যক্তিও নিরাপদ ও মানসিক প্রশান্তি লাভ করে থাকে। এ অর্থের ভিত্তিতেই বলা হয়-مَا امنت ان اجِدَ صحابةً অর্থাৎ ‘আমি ভরসা করতে পারছি না যে, আমি সফরসঙ্গীদের পেয়ে যাবো। [তাফসীর-ই বায়দ্বাভীঃ ১ম পারা]
আর শরীয়তের পরিভাষায় ‘ঈমান’ ওই সব বস্তুর সত্যায়নের নাম, যেগুলো নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত হবার বিষয়টি সুষ্পষ্টভাবে জানা যায়। যেমন-‘তাওহীদ’(আল্লাহর একত্ববাদ), ‘নুবূয়ত’ ও ‘বি’সাত’ (পুনরুত্থান), হিসাব-নিকাশ এবং প্রতিদান। প্রায়সব মুহাদ্দিস, এমনকি মু’তাযিলা ও খারেজী সম্প্রদায় দু’টির মতেও শরীয়ত সম্মত পূর্ণাঙ্গ ঈমান হচ্ছে তিনটি জিনিষের সমন্বয়ের নামঃ ১. হৃদয়ের সাথে সত্য কথাগুলো নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করা। ২. মৌখিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া এবং ৩. অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা ওইগুলোর দাবী অনুসারে আমল [প্রাগূক্ত]
অবশ্য, অন্তরে বিশ্বাস হচ্ছে- মৌলিক ঈমান আর অবশিষ্ট দু’টি হচ্ছে- মু’মিন হিসেবে তাকে বিবেচনা করার পূর্বশর্ত ও মূল ঈমানের সৌন্দর্য বৃদ্ধিকারী।
সুতরাং যার শুধু আক্বীদা বা বিশ্বাস শুদ্ধ নয় সে মুনাফিক্ব, যার স্বীকারুক্তিতে ত্রুটি আছে সে কাফির-ই মুজাহির (প্রকাশ্য কাফির) আর যার শুধু আমল ঠিক নয়, মৌলিকভাবে বিশ্বাস আছে সে মু’মিন-ই ফাসিক্ব। সুতরাং যার আন্তরিক বিশ্বাস, মৌলিক বিশ্বাস, মৌখিক ঘোষণা এবং আমল বিশুদ্ধ ও যথাযথ সে মু’মিন-ই কামিল। এটা আহলে সুন্নাতের অভিমত। এখানে বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় যে, এ তৃতীয় ব্যক্তি (যার প্রথম দু’টি শর্ত বিশুদ্ধ থাকলেও আমল ভাল নয়) সে সর্বসম্মতিক্রমে ফাসিক্ব; কিন্তু এ ‘ফাসিক’ মু’মিন থাকবে কিনা সে সম্পর্কে আহলে সুন্নাতের আক্বীদা হচ্ছে সে মু’মিন থাকবে। খারেজীদের মতে সেও কাফির, আর মু’তাযিলারা বলে সে মু’মিনও থাকবে না, কাফিরও হবে না বরং ‘ফাসিক্ব হওয়া’ একটি পৃথক ও স্বতন্ত্র স্তর। উল্লেখ্য, এ শেষোক্ত দু’টি অভিমতই (খারেজী ও মু’তাযিলাদের) বাতিল। এখানে আহলে সুন্নাতের (প্রথমমোক্ত) অভিমতই বিশুদ্ধ। [প্রাগূক্তঃ ১ম পারা]
[গাউসিয়া তরবিয়াতী নেসাব, পৃ.৩১-৩২]