শির্কের দ্বিতীয় প্রকার-২
= শির্কের দ্বিতীয় প্রকার-২ =
হযরত আবূ হোরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, হুযূর নবী করীম এরশাদ করেছেন-
مَثَلُ الَّذِیْ یَعْمَلُ لِلرِّیَآءِ وَالسُّمْعَۃِ کَمَثَلِ الَّذِی یَمْلَأُ کِیْسَہٗ حَصٰی ثُمَّ یَدْخُلْ السُّوْقَ لِیَشْتَرِیَ بِہٖ …. [الحدیث
অর্থাৎ ওই ব্যক্তির উপমা, যে মানুষকে দেখানো ও খ্যাতি অর্জনের জন্য সৎকর্ম করে, সে ওই ব্যক্তির ন্যায়, যে তার থলের মধ্যে কঙ্কর-পাথর ভর্তি করে নেয়, তারপর তা দ্বারা কিছু কেনার জন্য বাজারে প্রবেশ করে। অতঃপর যখন বিক্রেতার নিকট গিয়ে সেটার মুখ খোলে, তখন তো শুধু পাথরই থাকে। আর বিক্রেতা তা তার মুখের উপর ছুঁড়ে মারে এবং তার থলেতে কিছুই থাকে না. মানুষের এ সমালোচনা ব্যতীত ‘সেতো তার থলেতে কিছুই ভর্তি করে নি’ এবং তাকে এর বিনিময়ে কিছুই দেবে না। অনুরূপ, লোক দেখানো ও খ্যাতি অর্জনের জন্য যে আমল করে, তার জন্য তার আমলের প্রতিদান কিছুই থাকে না- মানুষের কিছু আলোচনা ব্যতীত। আখিরাতে তার জন্য কোন সাওয়াবই নেই।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেছেন-وَقَدِمْنَا اِلٰی مَا عَمِلُوْا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاہُ ہَبَآءً مَّنْثُوْرًا
তরজমাঃ এবং যা কিছু তারা কাজ করেছিলো আমি ইচ্ছা করে সেগুলোকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধূলি কণার বিক্ষিপ্ত অণু-পরমাণু করে দিয়েছি, যা ভেন্টিলেটরের মধ্য দিয়ে পতিত আলোকরশ্মিতে দৃষ্টিগোচর হয়। [সূরা ফোরক্বান, আয়াত-২৩, তরজমা- কান্যুল ঈমান, বাংলা সংস্করণ]
অর্থাৎ ওইসব আমল, যেগুলো মহামহিম আল্লাহ্র সন্তুষ্টির উদ্দেশ্য ব্যতীত সম্পন্ন করা হয়, সেগুলোর সাওয়াব বাতিল করে দিই।
হযরত আদী ইবনে হাতিম তাঈ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়াহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, হুযূর এরশাদ করেছেন-
یُؤْمَرُ بِفِءَامٍ اَیْ جَمَاعَاتٍ مِّنَ النَّاسِ یَوْمَ الْقِیَامَۃِ اِلَی الْجَنَّۃِ حَتّٰی اِذَا دَنَوْا مِنْہَا وَاسْتَنْشَقُوْا رَآءِحَتَہَا وَنَظَرُوْا اِلٰی قُصُوْرِہَا وَاِلٰی مَا اَعَدَّ اللّٰہُ لِاَ ہَلِہَا فِیْہَا نُوْدُوْا اَنِ اصْرِفُوْ ہُمْ عَنْہَا فَاِنََّہُمْ لاَ نَصِیْبَ لَہُمْ فِیْہَا فَیَرْجِعُوْنَ بِحَسْرَۃٍ وَّنَدَامَۃٍ مَا رَجَعَ الْاَوَّلُوْنَ وَالْاٰخِرُوْنَ بِمِثْلِہَا فَیَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا لَوْ اَدْخَلْتَنَا النَّارَ قَبْلَ اَنْ تُرِیَنَا مَا اٰرَیْتَنَا مِنْ ثَوَابِ مَا اَعْدَدْتَّ لِاَوْلِیَآءِکَ کَانَ اَہْوَنَ عَلَیْنَا فَیَقُوْلُ اللّٰہُ تَعَالٰی ذَلِکَ مَا اَرَدْتُّ بِکُمْ … [الحدیث]
অর্থাৎ ক্বিয়ামতের দিন কিছু লোককে জান্নাতে প্রেরণের নির্দেশ দেওয়া হবে। যখন তারা জান্নাতের নিকটবর্তী হয়ে জান্নাতের ঘ্রাণ পাবে এবং জান্নাতীদের প্রাসাদগুলো ও আল্লাহর নি’মাতগুলো অবলোকন করবে, তখন ফিরিশতাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হবে-ওদেরকে ফিরিয়ে নিয়ে যাও। জান্নাতের কোন কিছুই তাদের প্রাপ্য নেই। অতঃপর তারা নিরাশ হয়ে ফিরে যাবে। তারপর তারা বলবে, ‘‘হে আল্লাহ! তোমার প্রিয় বান্দাদের জন্য যে নি’মাতগুলো তৈরী করেছো, সেগুলো দেখানোর আগেই যদি আমাদেরকে দোযখে পাঠাতে, তবে তা আমাদের জন্য সহজতর হতো?’’ তখন আল্লাহ বলবেন, ‘‘তোমাদের সাথে আমি এরূপ আচরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। দুনিয়াতে তোমরা যখন একাকী থাকতে তখন কবীরা গুনাহে লিপ্ত হতে। আর যখন মানুষের সাথে মেলামেশা করতে, তখন মুত্তাক্বীদের মতো আমল করতে। এ আমল দিয়ে লোকদের কাছে তোমরা যে মনোভাব প্রকাশ করতে, আমার প্রতি কখনো ওই মনোভাব পোষণ করতে না। তোমরা লোকদের ভয় করতে, আমাকে ভয় করতে না। মানুষের জন্য তোমরা কোন কোন কাজ বর্জন করতে, আমার জন্য নয়, তোমরা মানুষকে সম্মান করতে, আমাকে নয়। তাই আজ আমি তোমাদেরকে আমার মহা প্রতিদান থেকে বঞ্চিত করে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করাবো।’’ [আল-হাদীস]
এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে আরয করলেন, ‘‘মুক্তির পথ কি?’’ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তাজ্ঞআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করলেন, ‘‘তোমরা আল্লাহকে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করো না, তবেই মুক্তি পাবে।’’ প্রশ্নকারী বললেন, ‘‘আল্লাহকে কিভাবে ধোঁকা দেওয়া হয়?’’ রসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করলেন, ‘‘তুমি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নির্দেশিত কোন কাজ আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে খুশী করার জন্য করলে তবেই আল্লাহর সাথে ধোঁকা করা হবে।’’
হুযূর করীম আরো এরশাদ করেন, তোমরা লোক দেখানো আমল (কর্ম) করা থেকে বিরত থাকো! কেননা, রিয়া হলো ছোটতর শির্ক। রিয়াকারীকে হাশরের দিনে সকলের সামনে চারটি নামে ডাকা হবে-
یَا مُرَاءِیْ یَاغَادِرُ یَا فَاجِرُ یَاخَاسِرُ ضَلَّ عَمَلُکَ وَ بَطَلَ اَجْرُکَ فَلاَ اَجْرَلَکَ عِنْدَنَا اِذْہَبَ فَخَُذْ اَجْرَکَ مِمَّنْ کُنْتَ تَعْمَلُ لَہٗ یَامُخَادِعُ
অর্থাৎ ১. হে রিয়াকার! ২. যে বিশ্বাসঘাতক! ৩. হে অবাধ্য,অপরাধী! ৪. হে ক্ষতিগ্রস্ত! তোমার আমল বাতিল হয়ে গেছে! অতএব, তোমার প্রতিদানও নষ্ট হয়ে গেছে। আমার নিকট তোমার কোন প্রতিদান নেই। হে প্রতারক! [ইবনে আবিদ্দুনিয়া]
আরো বর্ণিত আছে যে, এক বুযুর্গ ব্যক্তিকে বলা হলো, ‘‘ইখলাস কাকে বলে?’’ তিনি বললেন, ‘‘নেক আমলসমূহ নিজের পাপাচারগুলোর ন্যায় গোপন রাখাই হলো ইখলাস (নিষ্ঠা)।’’ পুনরায় কাউকে বলা হলো, ‘‘ইখ্লাস (নিষ্ঠা)’র উদ্দেশ্য কি?’’ তিনি বললেন, ‘‘কারো প্রশংসায় খুশী না হওয়া।’’ হযরত ফুদ্বায়ল ইবনে আয়ায রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেছেন, ‘‘মানুষের ভয়ে কোন নেক আমল বর্জন করা ‘রিয়া’। আর নিছক মানুষের সন্তুষ্টির জন্য কোন আমল করা শির্ক। আল্লাহর সাহায্যক্রমে, এ দু’টি বিষয় থেকে বেঁচে থাকার নামই ইখ্লাস বা নিষ্ঠা।’’
আল্লাহ পাক আমাদেরকে উভয় প্রকারের শির্ক থেকে হিফাযত করুন! আ-মী-ন!!
[কিতাবুল কাবা-ইরঃ আল্লামা যাহাবী, পৃষ্ঠাঃ ৮-১১]
এ পর্যন্ত শির্কের সংজ্ঞা। প্রকারভেদ এবং কি কি কারণে শির্ক হতে পারে এবং কোন্ কোন্ আক্বীদা শির্ক নয়-এসব প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
[গাউসিয়া তরবিয়াতী নেসাব, পৃ.২৮-৩১]