Anjuman-E Rahmania Ahmadia Sunnia Trust

কুফরী কালাম -২

কুফরী কালাম -২

কুফরী কালাম –

১৮.যে ব্যক্তি জেনে শুনে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নামে মিথ্যা রচনা করে সে কাফির, দোযখেই তার ঠিকানা।

ইমাম তাবরানী তাঁর ‘আল-আওসাত্ব’-এ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা থেকে বর্ণনা করেছেন, একদিন এক ব্যক্তি অবিকল হুযূর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর মতো পোষাক পরে মদীনা মুনারাওয়ায় এক আহলে বায়তের বাড়িওয়ালার নিকট গিয়ে বললো, ‘হুযূর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন মদীনা মুনাওয়ারার যে কোন বাড়ীওয়ালাকে তার জন্য একটা ঘর নির্মাণের কথা বলি।’’ লোকটির কথা শুনে তাঁরা রসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট লোক পাঠিয়ে বিষয়টি হুযূরকে জানালেন। তখন হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হযরত আবূ বকর ও হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমাকে এরশাদ করলেন, ‘‘তোমরা তার নিকট যাও। তাকে জীবিত পেলে হত্যা করবে এবং তার মরদেহ আগুনে জ্বালিয়ে ফেলবে। আর যদি তোমরা পৌঁছতে পৌঁছতে সে মারা যায়, আমার মতে, তোমরা তাকে মৃতই পাবে, তাহলেও ওই মরদেহ জ্বালিয়ে ফেলবে।’’ অতঃপর তাঁরা গেলেন এবং তাকে মৃত অবস্থায়ই খুঁজে পেলেন। কারণ, পূর্ববর্তী রাতে লোকটি প্রস্রাব করতে বের হলে তাকে সাপ দংশন করেছিলো ও সে মারা গিয়েছিলো। সুতরাং তাঁরা তার মরদেহ আগুনে জ্বালিয়ে ফেলেছিলেন। আর ফিরে এসে হুযূর সাল্লাল্লাহু তা’’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে তা জানালেন। তখন হুযূর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করলেন, ‘‘যে ব্যক্তি জেনে শুনে আমার নামে মিথ্যাচার করবে সে যেনো তার ঠিকানা দোযখেই করে নেয়।’’ [‘মাওদ্বূ-’আত-ই কবীর, পৃষ্ঠাঃ ২২-২৩]

 (কোন নবীর শানে কটুক্তি করা, সাধারণ উম্মতের সাথে তুলনা করা, আমাদের মতো অন্য দশ জনের মতো মনে করা, দোষে-গুণে মানুষ বলা, পিয়নের মতো ক্ষমতাহীন বলা, নিছক মাটির মানুষ বলা, নামাযে নবীর খেয়ালকে গরু ও গাধা ইত্যাদির খেয়ালের সাথে তুলনা করা, হুযূরের ইলমে গায়ব বা আল্লাহ প্রদত্ত অদৃশ্য জ্ঞানকে জানোয়ার, পাগল ও শিশুর জ্ঞানের সাথে তুলনা করা, ‘খাতামান্নবিয়্যীন’ -এর অর্থ সর্বশেষ নবী না বলে ‘আফযাল’ (শ্রেষ্ঠ নবী) বলা, হুযূরের পবিত্র মীলাদ বা জন্মোৎসবকে কানাইয়্যার জন্মোৎসব ও খ্রিস্টানদের ‘খ্রিস্টমাস’-এর সাথে তুলনা করা, হুযূর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে মৃত নবী বলা এবং নিজের  কিংবা অন্যের কল্যাণ সাধনে অক্ষম বলা, বড় ভাইয়ের মতো বলা, আল্লাহ মিথ্যা বলতে পারেন বলা, শয়তান ও মালাকুল মওতের জ্ঞানকে হুযূরের জ্ঞান অপেক্ষা বেশী বলা, নবীর নিকট দেয়ালের পেছনের জ্ঞান নেই বলা, হুযূর দেওবন্দে উর্দু শিখেছেন বলা, আল্লাহ তা’আলা হুযূরের মতো কোটি কোটি ‘মুহাম্মদ’ পয়দা করে নেবেন বলা, হুযূর ইন্‌তিকালের পর মাটিতে মিশে গেছেন বলা, নবী প্রতিটি মিথ্যা থেকে পবিত্র ও মা’সুম হওয়া জরুরী নয় বলা, নবীর প্রশংসাকে মানুষের মতো, বরং আরো সংক্ষিপ্ত করতে বলা, নবীকে আল্লাহর মর্যাদার সামনে চামার অপেক্ষা নিকৃষ্ট বলা, নবীকে ‘তাগূত’ (শয়তান) বলা জায়েজ বলে মন্তব্য করা, নবীর মর্যাদা উম্মতের মধ্যে গ্রামের চৌধূরী ও জমিদারের মত মনে করা, নবী ও ওলীকে ইখতিয়ারবিহীন বলা, আমলের ক্ষেত্রে উম্মত নবী অপেক্ষাও বেড়ে যায় বলা, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে পুলসেরাত থেকে রক্ষা করার দাবী করা, ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ্‌ আশ্রফ আলী রসূলুল্লাহ বলা’ ও সেটাকে সমর্থন করা, হুযূরকে দাজ্জালের বৈশিষ্ট্যের সাথে তুলনা করা, আল্লাহর সামনে সমস্ত নবী, ওলী একটা নাপাক ফোঁটা অপেক্ষাও নগণ্য বলা, দুরূদ-ই তাজের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করা, মীলাদ শরীফ, মি’রাজ শরীফ, ওরশ শরীফ, খতম শরীফ, ৪০তম ফাতিহা খানী ও ইসালে সাওয়াবকে না-জায়েয, বিদ’আত ও হিন্দুদের প্রথা বলে মন্তব্য করাও বে-ঈমানীর নামান্তর। যেহেতু এসব উক্তি আল্লাহ, রসূল ও নবী-ওলীর শানে জঘন্যতম মানহানিকর।)

১৯.যদি কেউ বলে, ‘‘যদি ফিরিশ্‌তা বা পয়গাম্বরও বলেন যে, তোমার কাছে রূপা নেই, তবুও আমি বিশ্বাস করবো না’’, তবে সে কাফির হয়ে যাবে। কারণ, সে নবীর প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করলো।

২০.যদি কেউ বলে, ‘‘হযরত আদম আলায়হিস্‌ সালাম গম না খেলে আমরা হতভাগা হতাম না’’, তবে সে কাফির হয়ে যাবে।

২১.শায়খাঈন অর্থাৎ হযরত আবূ বকর সিদ্দীক্ব ও হযরত ওমর ফারূক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা’’আলা আনহুমাকে কেউ গালি দিলে সে কাফির হয়ে যাবে।

২২.যদি কেউ বলে, ‘‘নখ কাটা সুন্নাত’’, তখন অপরজন বললো, ‘‘তা যদিও সুন্নাত তবুও আমি করবো না’’ তবে সে কাফির হয়ে যাবে।

২৩.কেউ কাউকে বললো, ‘‘নামায সম্পাদন করো’’, জবাবে সে বললো, ‘‘তুমি এতো নামায পড়ে কী পেয়েছো?’’ অথবা বললো, ‘‘আমি এতো নামায পড়েও কী পেলাম?’’ তবে সে  কাফির হয়ে যাবে।

২৪.যদি কেউ কাউকে বলে, ‘‘তুমি কাফির হয়ে গেছো, সে জবাবে বললো, ‘‘আমাকে  তোমার ধারণার ন্যায় কাফির ধরে নাও!’’ তবে সে কাফির হয়ে যাবে।

২৫. যদি কেউ বলে, ‘‘আমার কাছে আল্লাহর চেয়ে নারী বেশী প্রিয়, তবে সে কাফির হয়ে যাবে। বিবাহিত হলে তার স্ত্রী তালাক্ব হয়ে যাবে। এরপর সে পুনরায় ঈমান গ্রহণ ও তাওবা ইত্যাদি করে নিলে, তারপর তার স্ত্রীর সাথে পুনরায় আক্ব্‌দ করে বিবাহ নবায়ন করতে হবে। অবশ্য কোন মুসলমান কোন কারণে কাফির হয়ে গেলে তার বেলায়ও এ বিধান প্রযোজ্য।

২৬. যদি কেউ বলে, ‘‘খেলা-তামাশা আমাকে নামায-রোযা থেকে বিরত রেখেছে’’, তবে সে  কাফির হয়ে যাবে।

২৭. যদি কেউ বলে, ‘‘তুমি কিছু দিন নামায পড়ো তবে বিরক্তি ও কষ্টের প্রেক্ষিতে বে-নামাযী  হলে কী-স্বাদ তা অনুভব করতে পারবে,’’ তবে সে কাফির হয়ে যাবে।

২৮. যদি কেউ বলে, ‘‘ওলামা-ই দ্বীনের কাজও এটি, আর কাফিরদের কাজও একই।’’, তবে সে কাফির হয়ে যাবে। অবশ্য যদি কোন নির্দিষ্ট আলিমের কোন মন্দ কর্মের প্রতি উদ্দেশ করে, পাইকারীভাবে ওলামা-ই দ্বীনের প্রতি অবজ্ঞার উদ্দেশ্য ছাড়া এমন কথা বলে তবে সে  কাফির হবে না।

২৯.যদি কেউ কোন বিবাহিত মহিলাকে কুপরামর্শ দিতে গিয়ে বলে, ‘‘তুমি মুরতাদ্দ হয়ে যাও; তবে তুমি তোমার স্বামী থেকে পৃথক হয়ে যেতে পারবে’’, তবে এ পরামর্শদাতা কাফির হয়ে যাবে।

৩০.নিজের জন্য কিংবা অপরের জন্য কুফরীকে পছন্দ করাও কুফর।

৩১.কেউ মদপানের আসরে উচ্চাসনে বসে বক্তার ন্যায় হাস্যরস করলো, আর অন্যরা শ্রোতার ন্যায় বসে তার কথার সমর্থনে হেসে উঠলো, তবে এরা কাফির হয়ে যাবে। কারণ তারা সকলে জেনেশুনে গুনাহ্‌কে সমর্থন করলো ও হারাম কাজে উৎসাহ দিলো। যদি কেউ গলায় পৈতা ঝুলায় কিংবা কাফিরদের বিশেষ পোষাক পরে, তবে সে কাফির হয়ে যাবে। [কাযী বায়দ্বাভী, কৃত. তাফসীর-ই-বায়দ্বাভী]

অবশ্য, যদি কেউ কাফিরদের অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য নিজের ঈমান ঠিক রেখে বাহ্যিকভাবে এমনটি করে, তবে কাযী আবূ হাফসের মতে কাফির হবে না, কিন্তু যদি ব্যবসায় উন্নতি কিংবা অন্য কোন স্বার্থে এমনটি করে, তবে সে কাফির হয়ে যাবে। ইত্যাদি।

[গাউসিয়া তরবিয়াতী নেসাব, পৃ.৩৬-৩৮]