ঈমানের সপ্ত স্তম্ভ
ঈমানের সপ্ত স্তম্ভ
১.الايمان بالله (আল্লাহতে ঈমান বা বিশ্বাস)
২. الايمان بالملائكة (ফিরিশ্তাতে বিশ্বাস)
৩. الايمان بالكتب (আসমানী কিতাবাদিতে বিশ্বাস)
৪. الايمان بالرسل (রসূলগণে বিশ্বাস)
৫.الايمان باليوم الاخر (শেষ দিবসে বিশ্বাস)
৬.الايمان بالقدر (অদৃষ্টে বিশ্বাস) এবং
৭. الايمان بالبعث بعد الموت (মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত ও উত্থিত হওয়ায় বিশ্বাস)
ঈমানের সপ্ত স্তম্ভের বিস্তারিত বর্ণনা নিম্নে প্রদত্ত হলো
ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইসলামের পঞ্চ বুনিয়াদের প্রথম ও প্রধান বুনিয়াদ হচ্ছে ‘ঈমান’। ‘ঈমান’ আরবী শব্দ। এর অর্থ অন্তরের বিশ্বাস, শান্তি ও নিরাপত্তা বিধান। [লিসানুল আরব]
শরীয়তের পরিভাষায় ঈমানের অর্থ বিজ্ঞ আলিমগণ বিভিন্নভাবে বর্ণনা করেছেন। মুহাক্ব্ক্বিক্ব আলিমগণ শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে যে সংজ্ঞা উল্লেখ করেছেন তা হলো-‘রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসালাম কর্তৃক আনীত সকল বিষয়, যা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত, বিস্তারিত হোক বা সংক্ষিপ্ত, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসালাম-এর প্রতি আস্থাশীল হয়ে মনে-প্রাণে সেগুলোর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করাকে ঈমান বলে। [ক্বাওয়াইদুল ফিক্বহ্, কৃত-মুফতি আমীমুল ইহসান]
অন্তরের দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে সাথে মুখে উচ্চারণ করাও ঈমানের অঙ্গ। মোটকথা, অন্তরের বিশ্বাস, মৌখিক স্বীকারোক্তি এবং ইসলামের বিধানানুসারে আমল করা-এ তিনের সমন্বয়ে ঈমান।
[শরহে আক্বীদা-ই তাহাভিয়াহ্]
ঈমানের সাতটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। পবিত্র ক্বোরআন মজিদে ঈমানের বিষয়গুলো একসাথে বর্ণিত হয়নি। বিভিন্ন স্থানে এর বর্ণনা রয়েছে। যেমন ক্বোরআন মজীদের এক আয়াতে এরশাদ হয়েছে-
اٰمَنَ الرَّسُوْلُ بِمَآ اُنْزِلَ اِلَیْہِ مِنْ رَّبِّہٖ وَالْمُؤْمِنُوْنَ کُلٌّ اٰمَنَ بِاللّٰہِ وَمَلاآءِکَتِہٖ وَکُتُبِہٖ وَرُسُوْلِہٖ
তরজমাঃ রসূল ঈমান এনেছেন সেটার উপর, যা তাঁর রবের নিকট থেকে তাঁর উপর অবতীর্ণ হয়েছে এবং মু’মিনগণও। সবাই ঈমান এনেছে আল্লাহর উপর, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর ফিরিশ্তাগণ এবং তাঁর রসূলগণের উপর। [২:২৮৫]
তাক্বদীর সম্পর্কে এরশাদ হয়েছে-مَآ اَصَابَ مِنْ مُّصِیْبَۃٍ فِی الْاَرْضِ وَ لَآ فِیْٓ اَنْفُسِکُمْ اِلاَّ فِیْ کِتَابٍ مِّنْ قَبْلُ اَنْ نَبْرَأَہَا
তরজমাঃ পৌঁছেনা কোন মুসীবত পৃথিবীতে এবং না তোমাদের নিজেদের প্রাণগুলোতে কিন্তু তা একটা কিতাবের মধ্যে রয়েছে এরই পূর্বে যে, সেটাকে আমি সৃষ্টি করি। [সূরা হাদীদ, আয়াত-২২, তরজমা- কান্যুল ঈমান]
ক্বিয়ামত ও পুনরুত্থান সম্পর্কে এরশাদ হয়েছে-وَاَنَّ السَّاعَۃَ اٰتِیَۃٌ لاَّ رَیْبَ فِیْہَا وَاَنَّ اللّٰہَ یَبْعَثُ مَنْ فِی الْقُبُوْرِ
তরজমাঃ এবং এ জন্য যে, ক্বিয়ামত আগমনকারী, এতে কোন সন্দেহ নেই এবং এ যে, আল্লাহ উঠাবেন তাদেরকে, যারা কবরে রয়েছে। [সূরা হজ্জ, আয়াত-৭,তরজমা- কান্যুল ঈমান]
হাদীস-ই জিব্রাঈলে হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে ঈমানের মৌলিক বিষয়গুলো এভাবে বর্ণিত হয়েছে-مَا الْاِیْمَانُ قَالَ اَنْ یُّؤْمِنَ بِاللّٰہِ وَمَلَآءِکَتِہٖ وَکُتُبِہٖ وَرُسُلِہٖ وَالْیَوْمِ الْاٰخِرِ وَتُؤْمِنُوْنَ بِالْقَدْرِ خَیْرِہٖ وَشَرِّہٖ
অর্থাৎ-ঈমান কি? বললেন, বিশ্বাস করা আল্লাহ, তাঁর ফিরিশতাগণ, তাঁর কিতাবগুলো, তাঁর রসূলগণ এবং শেষ দিবসে এবং তোমরা বিশ্বাস রাখবে তাক্বদীরের ভাল ও মন্দের উপর। [বোখারী শরীফ]
আমলের চেয়ে ঈমানের গুরুত্ব বেশী
তাক্বওয়া-পরহেযগারী সব কিছুই ঈমানের উপর নির্ভরশীল। পবিত্র ক্বোরআনের দর্শন মতে ঈমানদার ব্যক্তিই পরহেয্গার ও সৎকর্মশীল। পবিত্র ক্বোরআন মজীদে আরো এরশাদ হয়েছে-
وَالَّذِیَ جَآءَ بِالصِّدْقِ وَصَدَّقَ بِہٖ اُولٰٓءِکَ ہُمُ الْمُتَّقُوْنَ
তরজমাঃ এবং যিনি এ সত্য নিয়ে তাশরীফ এনেছেন এবং যারা তাকে সত্য বলে মেনে নিয়েছে, তারাই খোদাভীতি সম্পন্ন। [সূরা যুমার, আয়াত-৩৩, তরজমা- কান্যুল ঈমান]
ইসলামের দৃষ্টিতে ঈমানই হচ্ছে আমলের মূল ভিত্তি। যে কাজটি ঈমানের ভিত্তিতে সম্পাদিত হবে, তাই হচ্ছে তাঁর দৃষ্টিতে মূল্যবান এবং গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে মূলতঃ ঈমানের কোন অস্তিত্ব নেই, সেখানে সকল আমলই হচ্ছে নিষ্ফল ও অর্থহীন।
পবিত্র ক্বোরআন মজীদে আরো এরশাদ হয়েছে-اِنَّ الَّذِیْنَ قَالُوْا رَبُّنَا اللّٰہُ ثُمَّ اسْتَقَامُوْا تَتَنَزَّلُ عَلَیْہِمُ الْمَلاآءِکَۃُ
তরজমাঃ নিশ্চয় যারা বলেছে, জ্ঞআল্লাহ আমাদের রবঞ্চ, অতঃপর অটল রয়েছে, তাদের উপর ফিরিশ্তা অবতীর্ণ হয়। [সূরা হা-মী-ম, আয়াত-৩০] [গাউসিয়া তরবিয়াতী নেসাব, পৃ.৪২-৪৪]