তাওবার প্রকৃত স্বরূপ
আব্দুল্লাহ আল মামুন (সৌরভ)
হে ঈমানদারগণ, আল্লাহর নিকট তাওবা করো বিশুদ্ধ তাওবা। (সূরা তাহরীম-০৮)
তাওবা শব্দের শাব্দিক, আভিধানিক একাধিক অর্থ রয়েছেঃ ফিরে আসা, প্রত্যাবর্তন করা ইত্যাদি। তাওবার মূলভিত্তি হলো, পাপ থেকে আল্লাহ তাআলার দিকে এমনভাবে ফিরে আসা যেন স্তন থেকে নির্গত দুধ পুনরায় স্তনে ফিরে যাওয়া সম্ভবপর নয়। পাপের সাগর থেকে তাওবার তরিতে উঠে পুনরায় পাপের সাগরে নিমজ্জিত হবার নাম তাওবা নয়। তাহলে তাওবার প্রকৃত স্বরূপ কী? উপর্যুক্ত আয়াতে যে ‘তাওবাতুন নাসুহা’ তথা বিশুদ্ধ তাওবার কথা বলা হয়েছে তার যথাযথ ব্যাখ্যা কী? হাজার বছর ধরে অগণিত ইমাম ও ফকিহ বিশুদ্ধ তাওবা সংজ্ঞায়িত করেছেন তিনটি শর্তের ভিত্তিতে। প্রত্যেকেই এ মর্মে একমত পোষণ করেছেন যে, নিম্নের তিনটি শর্ত ব্যতীত বান্দা তাওবা করলে তা আল্লাহ তাআলার দরবারে কবুল হবেনা। শর্ত তিনটি হলোঃ
১. পূর্বের গুনাহের জন্যে অনুশোচনা,
২. গুনাহ থেকে বিরত থাকা,
৩. ভবিষ্যতে গুনাহ না করার দৃঢ় সংকল্প করা।
[আল আদাবুশ শরীয়াহ, ১ম খন্ড, ১১৬ পৃষ্ঠা।
আর-রিসালাতুল কুশায়রিয়্যাহ, ১৬১ পৃষ্ঠা।]
এটিই প্রকৃত তাওবার শুদ্ধতম প্রক্রিয়া। কারণ, যে ব্যক্তির মনে পূর্বে কৃত গুনাহ্র জন্যে অনুশোচনা জাগবে না সে কখনোই তাওবার ছিটেফোঁটা নিজের মধ্যে ধারণ করতে পারবে না। ইমাম ইবনে মাজাহ রহমাতুল্লাহি আলায়হি তার হাদিসগ্রন্থে দুইটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করেন, যেখানে নবি করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম অনুশোচনাকে তাওবার আলামত এবং অনুশোচনাই তাওবা হিসেবে ইরশাদ করেন। যার অর্থ দাঁড়ায় তাওবার প্রথম রুকন অনুশোচনা। প্রথম রুকন আদায় করা ব্যতীত যেভাবে হজ্জ আদায় হয়না, একইভাবে তাওবা বিশুদ্ধ হয়না।
পাঠক সমীপে বিশুদ্ধ তাওবার একটি বাস্তব উদাহরণ পেশ করছি। আউলাদে রাসুল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হযরত সৈয়দ আহমদ শাহ সিরিকোটি রহমাতুল্লাহি আলায়হি এর মাধ্যমে বাংলার জমিনে কাদেরিয়া তরিকার মশাল প্রজ্জ্বলিত হয়। সিলসিলার ধারাবাহিকতায় বর্তমান হুযুর হযরত সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ (মা.জি.আ.) কর্তৃক যখন জনসাধারণকে বায়াত করানো হয় তখন তাওবা করানো হয় এভাবে, “ইয়া আল্লাহ, আমি তাওবা করছি সমস্ত গুণাহ থেকে। ছোট-বড় যত গুনাহ আমি করেছি সবকিছু থেকে তাওবা করছি। এখন থেকে সেসব কাজ করবো যেসব কাজে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সন্তুষ্ট হন। সেসব কাজ করবো না যেসব কাজে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম অসন্তুষ্ট হন।” হুযুর কেবলার পবিত্র জবানে উচ্চারিত তাওবার এই প্রক্রিয়াটাই ‘তাওবাতুন নাসুহা’। শুরুতেই ছোট-বড় সমস্ত গুনাহের স্বীকারোক্তির মাধ্যমে তাওবার প্রথম রুকন অনুশোচনা বাস্তবায়িত হয়। অতঃপর আল্লাহ ও তাঁর হাবিব সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর হুকুমের বিপরীতে কাজ না করার প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে বিশুদ্ধ তাওবার বাকি দুটো শর্ত-গুনাহ থেকে বিরত থাকা এবং ভবিষ্যতে গুনাহ না করার দৃড়সংকল্প বাস্তবায়িত হয়।
তাওবা সম্পর্কে অসংখ্য ইমাম, ফকিহগণ লিখেছেন। তবে তা প্রায় একই ধাঁচের। কিন্তু ইমাম গাজ্জালী রহমাতুল্লাহি আলায়হি তাওবার পরিচয় ভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থাপন করেছেন। তাঁরই লিখিত সুবিখ্যাত এহইয়াউ উলুমিদ্দীন গ্রন্থে “তাওবার স্বরূপ, পরিচয় ও সীমা” শিরোনামে বিশালাকারে যা লিখেছেন তা সংক্ষেপে ভাবের মান অক্ষুন্ন রেখে পাঠক সমীপে তুলে ধরছি। ইমাম গাজ্জালীর মতে পরিচয় জ্ঞান, অবস্থা এবং সংকল্প এই তিনটি বিষয়ের সমন্বয়ে তাওবা গঠিত। পরিচয় জ্ঞান হলো, প্রকৃত তাওবা কাকে বলে এবং পাপের অনিষ্ট কত ভয়ংকর তা অনুধাবন করতে পারা। বারংবার পাপ করার ফলে আল্লাহ তাআলার প্রেম এবং বান্দার মধ্যে তা পর্দার মতো হয়ে থাকে। বান্দা যখন প্রকৃত তাওবা সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করে, তখন তার কৃত পাপের দরুন সৃষ্ট পর্দা উন্মোচিত হয়ে যায়। বান্দা তখন বুঝতে পারে, এতদিন যাবৎ যা করেছে সবকিছু তাকে তার রবের দিক থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। ফলে তার মনে এক অবস্থার সৃষ্টি হয়। মহান রবের প্রেম থেকে বঞ্চিত হওয়ার অনুতাপ তার মনে প্রবল হতে থাকে। ফলে বান্দা কৃত পাপকার্যের ঘোর অন্ধকার থেকে তাওবার আলোর দিকে ফিরে আসার দৃঢ়সংকল্প করে। অতীতে যেসব পাপ সে করেছে, তা শেষ নিঃশ্বাস অব্দি পুনরায় না করার সংকল্প করে। ইমাম গাজ্জালী বলেন, “এই তিনটি বিষয় সুনিয়ন্ত্রিতভাবে অর্জন করলে এবং তা কারো মধ্যে সন্নিবেশিত হলে তাকে তাওবা বলে। আল্লাহ তাআলার নিকটবর্তী হওয়ার জন্য আল্লাহ থেকে দূরবর্তী করার পথগুলো থেকে বিমুখ হওয়া ওয়াজিব এবং এই প্রত্যাবর্তনই পরিচয় জ্ঞান, অনুতাপ এবং দৃঢ় সংকল্প দ্বারা পূর্ণ হয়। কেননা, যে পর্যন্ত সে না জানতে পারে পাপ প্রিয়জন থেকে দূরে সরিয়ে রাখার একটি কারণ; সে কখনও অনুতপ্ত হবেনা এবং দূরবর্তী পথে তার চলার ফলে তার দুঃখ হবেনা। যতদিন সে কৃতকর্মের কারণে দুঃখিত না হয়, ততদিন সে পাপ থেকে তাওবাহ করবে না।” [এহইয়াউ উলুমিদ্দীন (তাজ কো.), ৩য় খন্ড, পরিত্রাণ পর্ব, ১ম অধ্যায়।]
মহান সুফি হযরত রুওয়াইম রা. এর তাওবা সম্পর্কে একটি বাণীই যথেষ্ট বলে মনে হয়। তিনি বলেন, “তাওবা হলো তাওবা থেকেই তাওবা করা।” [আর-রিসালাতুল কুশায়রিয়্যাহ, ১৬৫ পৃষ্ঠা।]
অর্থাৎ, এমনভাবে তাওবা করা যেন জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা অব্দি পুনরায় তাওবা করতে না হয়।
তাওবা এবং তাওবাকারীর প্রকারভেদ
হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা করো যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো। [সূরা নূর- ৩১]
তাওবা ২ প্রকার
১. তাওবাতুল ইনাবাহ: আল্লাহ তাআলার শাস্তির ভয়ে যে তাওবা করা হয় সেটা ইনাবাহ।
২. তাওবাতুল ইসতিজাবাহ: আল্লাহ তাআলার দান ও অনুগ্রহের প্রতি লজ্জিত হয়ে যে তাওবা করা হয় সেটা ইসতিজাবাহ। [কাশফুল মাহজুব, ২৪৪ পৃষ্ঠা।]
হযরত আবু আলী দাক্কাক রহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন, তাওবা ৩ প্রকার। প্রথমটি তাওবা, মাঝেরটি ইনাবাহ এবং শেষে আওবাহ। যারা (সাধারণ মুমিন বান্দা) শাস্তির ভয়ে তাওবা করে তারা প্রথম প্রকারের অন্তর্ভুক্ত। যারা (আউলিয়া কেরামগণ) সাওয়াবের আশায় তাওবা করে তারা ইনাবাহ-এর অধিকারী। আর যারা (নবি-রাসুলগণ) কেবল তাওবার আদেশ রক্ষার জন্যে তাওবা করে, সাওয়াব বা ভয়ের কারণে নয় তারা আওবাহ-এর অধিকারী। [আর-রিসালাতুল কুশায়রিয়্যাহ, ১৬৪ পৃষ্ঠা।]
গাউছুল আজম, শায়খ সুলতান সায়্যিদ আব্দুল কাদের জিলানী রহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন, “যে ব্যক্তি বাহ্যিকভাবে পাপ থেকে তাওবা করে তার উপমা হলো শস্যক্ষেত্রের ঘাস-আগাছার উপরের অংশ, যা ছাটাই করা হয় কিন্তু মূলোৎপাটন করা হয়না। ফলে সে ঘাস-আগাছা আবার পূর্বের তুলনায় অধিক শাখা-প্রশাখা নিয়ে গজিয়ে উঠে। আর যে ব্যক্তি পাপকর্ম হতে পরিপূর্ণ অভ্যন্তরীণ তাওবা করে তার উপমা হলো শস্যক্ষেত্র থেকে ঘাস-আগাছার শিকড়সহ উপড়ে ফেলার ন্যায়, যা ব্যতিক্রম ব্যতীত পরবর্তীতে আর গজাবে না।”
[সিররুল আসরার (ই.ফা.), ৫৮-৫৯ পৃষ্ঠা।]
ইমাম গাজ্জালী রহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন, তাওবাকারীগণ ৪ শ্রেণিতে বিভক্ত
১. বান্দা তাওবা করে জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত স্বীয় তাওবার উপর অটল থাকে। মানুষের স্বভাবজাত চাহিদার ভিত্তিতে সাধারণ ছোটখাটো বিচ্যুতি ব্যতীত অন্য কোনো গুনাহ সংঘটিত হয়না। যাকে তাওবাতুন নাসুহা বলা হয়।
২. তাওবাকারী প্রধান ও মৌলিক ইবাদতসমূহ যথাযথ আদায় করে এবং বড় ধরনের অশ্লীলতা হতে দূরে থাকে। কিন্তু তার অবস্থা এই যে, সে সকল গুনাহ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে না, যা তার পরিবেশ ও সামাজিক অবস্থানের কারণে ইচ্ছায় অনিচ্ছায় তাকে পেয়ে বসে। সে নিজের প্রবৃত্তিকে তিরস্কার ও ভর্ৎসনা করতে থাকে এবং অনুতপ্ত হয়।
৩. তাওবাকারী তাওবার পরে বেশ দীর্ঘদিন গুনাহ থেকে বিরত থাকে। কিন্তু পরবর্তীতে কোনো এক পাপকর্মে সে লিপ্ত হয়।
৪. বান্দা তাওবা করার পর বারংবার বিভিন্ন পাপে নিমজ্জিত হয়। এক পর্যায়ে তার মনে তাওবা করার ইচ্ছে আর জাগ্রত হয়না। কোনো প্রকার আক্ষেপ, অনুশোচনা সৃষ্টি হয়না। বান্দা প্রবৃত্তির কু-চাহিদার গোলামে পরিণত হয়। [এহইয়াউ উলুমিদ্দীন (তাজ কো.), ৪র্থ খন্ড, ৯ পৃষ্ঠা।]
তাওবা করার পর পূর্বের কৃত পাপের কথা কী ভুলে যাবে? ব্যক্তিগত অনুধাবন
সুফিয়ায়ে কেরামদের মধ্যে এবিষয়ে দু’টি অভিমত পাওয়া যায়। কেউ বলেছেন তাওবার পর পূর্বের কৃত পাপ ভুলে যাবে। আবার কেউ বলেছেন পূর্বের কৃত পাপ কখনো ভুলবে না। হযরত জুনায়েদ এবং সিররী আস-সক্বতী রা. এর একটি প্রসিদ্ধ ঘটনা আছে। জুনায়েদ রহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন, আমি একদিন সিররীর কাছে এসে তাঁকে বিচলিত দেখতে পেলাম। বললাম, ‘আপনার কী হয়েছে?’ তিনি বললেন, আমার কাছে এক যুবক এসেছিল। সে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘তওবা কী?’ আমি বললাম, ‘তোমার পাপ তুমি কখনো ভুলবে না।’ কিন্তু সে আমার বিরোধিতা করে বলল, “না। তওবার অর্থ হলো আপনি আপনার পাপ ভুলে যাবেন।” আমি (জুনায়েদ) বললাম, ‘আমার কাছে যুবকটির কথাই যথার্থ।’ তিনি বললেন, “কেন?” আমি বললাম, আমি যদি নোংরা-আবর্জনার মধ্যে থাকি এবং তিনি আমাকে এরপর পরিষ্কারের দিকে স্থানান্তরিত করেন, তবে পরিষ্কার অবস্থায় নোংরার কথা স্মরণ করাও নোংরামি। একথা শুনে তিনি চুপ হয়ে গেলেন। [কিতাবুল মুনতাখাব ফি উসুলির রুতাব ফি ইলমিত তাসাউফ (আত্মশুদ্ধির মূলনীতি), ২১ পৃষ্ঠা।]
পাপ ভুলে যাওয়া এবং মনে রাখা মতামত দুটোই সঠিক। কেননা, যে ব্যক্তি তাওবার পর পূর্বে কৃত পাপ ভুলে যাবে সে আল্লাহ তাআলার ক্ষমার প্রেমে এমনভাবে ডুবে থাকে যে, পূর্বের পাপ স্মরণ করার সুযোগ পায়না। অনেকে এ অবস্থাকে তাসাউফের উচ্চ স্তরের সাথে তুলনা করেছেন। উক্ত ঘটনায় হযরত জুনায়েদ বাগদাদী রা. এর উত্তর থেকেই তা বোধগম্য। আর যে ব্যক্তি তাওবার পরেও পূর্বে কৃত পাপ ভুলে যায় না সে সবসময় কৃত গুনাহের স্মরণে কাঁদতে থাকে, ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে। ফলে তার মনে তাক্বওয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। পূর্বের গুনাহের জন্যে সবসময় অনুশোচনায় ভুগে বিধায় পুনরায় পাপ করার সুযোগ পায়না।
তাওবা কী শুধু খোদায়ী হুকুম না মানার ক্ষেত্রে?
ইমাম ফকিহ আবুল লাইস সামারকান্দী রহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন, পাপ দুই প্রকারঃ
১. এমন পাপ যেসবের সম্পর্ক বান্দা ও তার রবের সাথে। অর্থাৎ, বান্দা যখন তাঁর রবের আদেশ-নিষেধ অমান্য করে; তখন বান্দা যদি প্রকৃত তাওবা করে উক্ত পাপ আর না করার সংকল্প করে তবে সে ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়।
২. দ্বিতীয় প্রকার পাপ এক বান্দার সাথে অপর বান্দার। আল্লাহ তাআলার কাছে এসব পাপের জন্য তাওবা করে ফায়দা নেই। যতক্ষণ অব্দি উক্ত ব্যক্তি তার (পাপীর) উপর সন্তুষ্ট না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবে না। [তাম্বীহুল গাফেলীন, ১৬৭ পৃষ্ঠা।]
উপর্যুক্ত দ্বিতীয় প্রকার পাপ সম্বন্ধে “আত্মশুদ্ধির মূলনীতি” নামক গ্রন্থে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে, তা হলো আল্লাহ তাআলার অন্য সৃষ্টির প্রতি জুলুম করা, মানুষের গিবত করা এবং এই জাতীয় গুনাহের তাওবারও কিছু অতিরিক্ত শর্ত আছে। এক্ষেত্রে তাওবাকারীর উচিত ক্ষতিপূরণ দেওয়া অথবা অর্থ পরিশোধ করা কিংবা ব্যক্তির কাছে ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে হলেও যতটা সম্ভব দায়মুক্ত হওয়ার অনবরত চেষ্টা চালানো। যদি কেউ এ সব করতে অক্ষম হয়, তবে পাপের ক্ষমা লাভের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবে। যখন বান্দার আন্তরিকতা দেখে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন, তখন ওই বান্দাকে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দেন এবং আল্লাহ তাআলা নিজ দয়া ও দানশীলতার ফলে পাওনাদারদের সাথে তার সমাধান করে দেন।
[কিতাবুল মুনতাখাব ফি উসুলির রুতাব ফি ইলমিত তাসাউফ (আত্মশুদ্ধির মূলনীতি), ১৪ পৃষ্ঠা।]
তিনি আরও বলেন, দেহের প্রতিটি অঙ্গ তওবার অংশীদার। এভাবে অন্তরের রয়েছে পাপ এড়ানোর এবং অনুশোচনা করার আকাঙ্ক্ষা; চোখের রয়েছে দৃষ্টি নত করার, হাতের রয়েছে আঁকড়ে ধরা থেকে বিরত থাকার, পায়ের রয়েছে অবৈধ স্থানে যাওয়া থেকে বিরত থাকার, কানের রয়েছে অপ্রয়োজনীয় গিবত শোনা থেকে মুক্ত থাকার আকাঙ্ক্ষা এবং এভাবে আরও অনেক কিছু। [প্রাগুক্ত, ২৩ পৃষ্ঠা]
ফকিহ আবুল লাইস সামারকান্দী রহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর লিখিত “তাম্বীহুল গাফেলীন” কিতাবের ১৮১ পৃষ্ঠায় একটি হাদিস শরীফ বর্ণনা করেন। আম্মাজান হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা হতে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আমলনামা তিন প্রকার
১. যা আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দেবেন;
২. যা আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করবেন না;
৩. যার থেকে আল্লাহ তাআলা কিছুই ছাড়বেন না।
যা আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দেবেন, সেটা হচ্ছে মানুষের নিজের উপর কৃত জুলুমের আমলনামা। যেটা আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করবেন না, সেটা হবে শিরকের আমলনামা। পক্ষান্তরে যে আমলনামা থেকে আল্লাহ তাআলা কোনো ছাড় দিবেন না, সেটা হচ্ছে বান্দাদের পরস্পর জুলুমের আমলনামা। এক্ষেত্রে তাওবা কানো কাজে আসবে না। বান্দা নিজে তা ক্ষমা না করলে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করবেন না। ইমাম গাজ্জালী রহমাতুল্লাহি আলায়হি “এহইয়াউ উলুমিদ্দীন” গ্রন্থের তাওবা অধ্যায়ে একইভাবে বর্ণনা করেছেন।
আল্লাহ তাআলা তাওবা কতটুকু ভালোবাসেন?
আল্লাহ তাআলা বান্দার কোনো কর্ম কতটুকু ভালোবাসেন বা কতটুকু অপছন্দ করেন তা বান্দার পক্ষে অনুধাবন করা অসম্ভব। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘‘মহান আল্লাহ তাওবাকারী এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।’’ [সূরা বাকারা- ২২২]
রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “তোমাদের কেউ তার হারানো মালের সন্ধান পেলে যতটা আনন্দিত হয়, তোমাদের কারো তাওবায় (ক্ষমা প্রার্থনায়) আল্লাহ তার চেয়েও অধিক আনন্দিত হন।” [জামে তিরমিজি, হাদিস নং ২৪৯৯]
হাদিসে কুদসিতে এসেছে– হযরত আনাস বিন মালেক রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, হে আদম সন্তান! যখনই তুমি আমাকে ডাকবে এবং আমাকে পাওয়ার আশা করবে, আমি তোমার মধ্যে যে সব দোষ ত্রুটি আছে, সেগুলো নির্বিঘেœ ক্ষমা করে দেব। হে আদম সন্তান! যদি তোমার গুনাহের স্তুপ আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে, তারপরও তুমি আমার নিকট ক্ষমা চাইলে, আমি নির্বিঘ্নে তোমাকে ক্ষমা করে দেব। হে আদম সন্তান! যদি তুমি জমিন ভর্তি গুনাহ করে থাক, তারপর তুমি আমার নিকট ক্ষমা চাইতে আসলে যে অবস্থায় তুমি আমার সাথে কাউকে শরিক করোনি, আমি জমিন ভর্তি গুনাহের ক্ষমা নিয়ে তোমার নিকটবর্তী হব।
[আল-তিরমিজি ৩৫৪০, আল-তাবারানী ৪/৩১৫, মুসনাদে আহমদ ৫/১৮৮]
এমন হাদিস শরীফ শুনেও যদি বান্দার মনে আলোড়ন সৃষ্টি না হয়, তাওবা করার ইচ্ছা জাগ্রত না হয়, বুঝতে হবে তার হৃদয় স্বয়ং এক শয়তানে পরিণত হয়ে গিয়েছে। তাওবা আল্লাহ তাআলার এতোই প্রিয় যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “ওই সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ। তোমরা যদি গোনাহ না করতে তবে আল্লাহ তোমাদেরকে ধ্বংস করে দিতেন। অতঃপর এমন এক জাতি সৃষ্টি করতেন যারা গোনাহ করতো অতঃপর তারা আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করত এবং আল্লাহ তাআলা তাদের ক্ষমা করতেন।” [সহীহ মুসলিম, কিতাবুত-তাওবাহ, হাদিস নং ২৭৪৯]
উক্ত হাদিস শরীফে একটা বিষয় লক্ষ্যণীয়। এখানে মূলত বান্দাকে গুনাহ করতে অনুপ্রাণিত করা হয়নি, বরং আল্লাহর দরবারে সবসময় ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্যে বলা হয়েছে। কারণ, আল্লাহ আল-গাফুর। বান্দাদের ক্ষমা প্রার্থনায় আল্লাহ তাআলার সিফাত প্রকাশিত হয় ক্ষমা করে দেওয়ার মাধ্যমে। সুতরাং, এখানে ক্ষমার মাহাত্ম্য বুঝানো হয়েছে।
তাওবা পরবর্তী করণীয়
১. রবের দরবারে কৃত তাওবা কবুল হওয়ার পূর্ণ আস্থা রাখা এবং শুকরিয়া আদায় করা। আল্লাহ তাআলা সূরা আত-তালাকের ৩ নং আয়াতে ইরশাদ করেন, “আর যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তিনিই তার জন্যে যথেষ্ট।” প্রত্যেক উত্তম কাজে আল্লাহর উপর ভরসা করা মুমিনদের অভ্যাস। এক্ষেত্রে তাওবা তো অতি উত্তম কাজের মধ্যে অন্যতম। আল্লাহ তাআলা আরও ইরশাদ করেন, “যে গুনাহ করে কিংবা নিজের অনিষ্ট করে, অতঃপর রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল ও করুণাময় হিসেবে পায়।” [সূরা নিস- ১১০]
ইমাম গাজ্জালী রহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন, “যে ব্যক্তি ধারণা করে প্রকৃত তাওবা করলেও তা কবুল হবেনা, সে ঐ ব্যক্তির মতো যে মনে করে সূর্য উদিত হলেও অন্ধকার দূর হবে না। কিংবা সাবান দিয়ে বস্ত্র ধৌত করলেও ময়লা দূর হবেনা।”[এহইয়াউ উলুমিদ্দীন (তাজ কো.), ৩য় খন্ড, পরিত্রাণ পুস্তক, ২০৮ পৃষ্ঠা।]
তাওবার মতো মহান নেয়ামত কোনো গুনাহগার বান্দার ভাগ্যে জুটলে তার উচিত হবে এ জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা। এতে বান্দার কৃত তাওবায় বরকত বৃদ্ধি পাবে এবং বারংবার তাওবার কথা স্মরণ থাকবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, “যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের (নেয়ামত) বাড়িয়ে দেবো।” (সুরা ইবরাহিম-৭)
২. অনবরত তাওবা করতে থাকা এবং পূর্বের কৃত পাপ কারো কাছে প্রকাশ না করা। সর্বদা তাওবা করতে থাকলে পুনরায় পাপ করার খেয়াল জাগ্রত হয়না। নফসের দাসত্বের শিকল থেকে নিজেকে পুরোপুরি ছাড়িয়ে নেওয়ার আগ পর্যন্ত ছোটখাটো পাপ সংঘটিত হয়েই যায়। বারংবার তাওবার ফলে একটা সময় নফসের বিরুদ্ধে বিজয়ী হওয়া সম্ভব। আর যদি পাপ সংঘটিত না হয় অনবরত তাওবার ফলে আত্মিক মর্যাদা উন্নত হয় এবং আল্লাহ তাআলার দরবারে দরাজাত বুলন্দ হয়। হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “আল্লাহর কসম! আমি প্রতিদিন ৭০ বারের অধিক আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা ও তাওবা করি।” [সহিহ বুখারী ৬৩০৭, তিরমিজি ৩২৫৯]
উক্ত হাদিস শরীফ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা হলো, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম যে তাওবার কথা উল্লেখ করেছেন সেটা মূলত কৃত পাপের জন্যে নয় বরং আল্লাহ তাআলার দরবারে মর্যাদা বৃদ্ধির নিমিত্তে। কারণ, নবিগণ নিষ্পাপ। তিনি এ কথা বলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো, উম্মতকে তাওবার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা। আজকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নতুন ট্রেন্ড শুরু হয়েছে। অনেকে নিজেদের প্রত্যাবর্তনের গল্প শুনায়। ফলে আগে কী কী পাপ করেছে তা জনসম্মুখে বলতে থাকে। তাছাড়া বন্ধুদের আড্ডায় নিজেদের কৃত পাপ সম্বন্ধে আলোচনা করা যেন নিত্যদিনের ঘটনা। সাবধান! নিম্নোক্ত হাদিস শরীফ থেকে শিক্ষা নিন। রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “প্রকাশকারীর গোনাহ ছাড়া আল্লাহ তাআলা আমার উম্মতের সবাইকে মাফ করবেন। প্রকাশ করার এক ধরন হচ্ছে, মানুষ রাতের বেলায় কোনো গোনাহ করে বসল, আল্লাহ সেটাকে গোপন করেছেন; কিন্তু সে নিজে সেটাকে প্রকাশ করার জন্য বলল, হে অমুক! আমি রাতের বেলা এই এই গোনাহ করেছিলাম। অথচ আল্লাহ সেটা রাতে গোপন করেছেন আর সে আল্লাহর গোপন করা বস্তুকে প্রকাশ করে দিয়েছে।” [সহিহ বুখারী ৬০৬৯, সহিস মুসলিম ২৯৯০]
৩. কোনো গুনাহকেই ছোট মনে করা যাবে না। প্রবাদ আছে, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালুকণা, বিন্দু বিন্দু জল গড়ে তুলে মহাদেশ, সাগর অতল। একইভাবে ছোট গুনাহ ক্রমান্বয়ে জমা হতে থাকলে তা বিশাল তথা কবীরা গুনাহের পাহাড়ে পরিণত হয়। তাছাড়া বান্দার চোখে কোনো গুনাহ ছোট মনে হলে, বান্দা গুনাহটি বারংবার করতে থাকে। এজন্যেই বলা হয়, “ক্ষমা প্রার্থনা করলে তা আর কবীরা থাকে না। ক্রমাগত সগীরা পাপ করলে তা আর সগীরা থাকে না।” [শুয়াবুল ঈমান, ৬৮৮২]
৪. পাপের বিপরীতে বেশি বেশি নেক আমল করতে থাকা। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, “কিন্তু যারা তওবা করে, ঈমান আনে ও নেক আমল করে, এদের সকল পাপরাশি আল্লাহ তাআলা নেকিতে রূপান্তর করে দেন। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু।” (সূরা ফুরকান-৭০) তাওবার পর বান্দার উচিত ছোট হোক কিংবা বড়, সবসময় নেক আমল করতে থাকা। এতে পাপকর্মের খেয়াল জাগ্রত হয়না এবং আল্লাহ তাআলা পূর্বের পাপরাশি সরাসরি নেকিতে রূপান্তর করে দেবেন। সূরা হূদ– ১১৪ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই সৎকর্ম অসৎকর্মকে বিদূরিত করে।” আল্লাহর হাবিব হযরত মুআয ইবনে জাবাল রা. কে ইয়ামেন প্রেরণকালে নসিহত করেন, “হে মুআয, যেখানেই থাকো আল্লাহকে ভয় করো, একটা গোনাহর কাজ করে ফেললে সঙ্গে সঙ্গে একটা নেক কাজ করে ফেলো। তাহলে তা ওই কৃত গোনাহকে মুছে দেবে। মানুষের সাথে সদাচার কর।”
[তিরমিজি ১৯৮৭, মুসনাদে আহমদ ২১৩৯২]
কুরআন-হাদিসের উপর্যুক্ত বর্ণনানুযায়ী কাদেরিয়া ত্বরিকায় বায়াত করানোর পর হুযুর কেবলা কর্তৃক সকাল-সন্ধ্যা আমলের সবক প্রদান করা হয়। পুরুষদের জন্যে ফজর নামাজের পর ১০০ বার দরূদ শরীফ, ২০০ বার করে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু জিকির এবং মাগরিবের নামাজের পর ৬ রাকাআত আউওয়াবিন নামাজ ও ১০০ বার দরূদ শরীফ পাঠ এবং বাদ এশা পুনরায় ২০০ বার করে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু জিকিরের সবক প্রদান করা হয়। মহিলাদের ক্ষেত্রে ফজরের নামাজের পর দরূদ শরীফ ১০০ বার এবং প্রত্যেকবার বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম সহকারে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ ১০০ বার। বাদে মাগরিব ৬ রাকাআত সালাতে আউওয়াবিন এবং দরূদ শরীফ ১০০ বার। এশার নামাজের পর পুনরায় প্রত্যেকবার বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম সহকারে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ১০০ বার পাঠ করার সবক প্রদান করা হয়। [শাজরা শরীফ ২৩-২৬ পৃষ্ঠা।]
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, জীবন খুবই সংক্ষিপ্ত। হুট করে একদিন চলে যেতে হবে। বিশাল এই পৃথিবী থেকে একা একটা মানুষ চলে গেলে পৃথিবীর খুব একটা ক্ষতি হবেনা। পৃথিবী ঠিকই ঘুরবে, সূর্য উঠে আবার অস্ত যাবে, বাগানে ফুল ফুটবে, পাখি ঠিকই বিভিন্ন সুরে গান করবে। থাকব না শুধু আমরা। মৃত্যুর পর কিছুদিন স্মরণ করা হবে; এতটুকুই। তাই পৃথিবীর তোয়াক্কা না করে নিজের পরকালীন জীবন নিয়ে ভাবুন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রত্যেককে তাঁর হাবিব সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর উছিলায় জীবনে অন্তত একবার তাওবাতুন নাসুহা করার তৌফিক দিক, আমিন।
লেখক: প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার, এইপ্রো ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কনসালটেন্সি সার্ভিস, মুহাম্মদপুর, চট্টগ্রাম।