Anjuman-E Rahmania Ahmadia Sunnia Trust

কর্মচারীর বেতন ভাতার অতিরিক্ত উপঢৌকন গ্রহণ

কর্মচারীর বেতন ভাতার অতিরিক্ত উপঢৌকন গ্রহণ

কর্মচারীরা বেতনভাতার অতিরিক্ত জনগণের নিকট হতে হাদিয়া

বা উপঢৌকন হিসাবে কোন কিছু গ্রহণ করতে পারবে কিনা

সরকারী কর্মচারীরা জনগণের কল্যাণে নির্ধারিত দায়িত্ব পালনের জন্য নিযুক্ত হয়ে থাকেথ। বিনিময়ে সরকার কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিয়ে থাকে। কর্মচারীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে, জনগণের কাজ সম্পাদন করে দেয়া। কিন্তু কাজের বিনিময়ে তারা জনগণের নিকট হতে কোন কিছু গ্রহণ করতে পারবে না। যদি গ্রহণ করা হয় তাহলে সেটা হবে ঘুষ। এ সম্পর্কে আল্লাহর প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-

عَنْ عَبْدِ اللّٰہِ بْنِ بُرَیْدَۃَ رَضِیَ اللّٰہ تَعَالٰی عَنْہُ عَنْ اَبِیْہِ عَنِ النَّبِیِّ صَلَّی اللّٰہُ عَلَیْہِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ اِسْتَعْمَلْنَاہُ عَلٰی عَمَلٍ فَرَزَ قْنَاہُ رِزْقًا فَمَا اَخَذَ بَعْدَ ذَالِکَ فَہُوَ غُلُوْلٌ

অর্থাৎ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে বুরায়দা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু তাঁর পিতার মাধ্যমে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, আমরা যাকে কোন (রাষ্ট্রীয়) কাজে নিযুক্ত করি এবং তাকে সে কাজের বিনমিয়ে পারিশ্রমিক প্রদান করি, সে যদি (জনগণের নিকট হতে) তার পারিশ্রমিকের অতিরিক্ত কিছু গ্রহণ করে তাহলে তা হবে ‘গুলূল’ অর্থাৎ খিয়ানত তথা অবৈধ।                                                              [সুনানে আবূ দাঊদ]

রাষ্ট্রের প্রতিটি কাজ সরকারী কর্মচারীদের নিকট পবিত্র আমানত। এ আমানতের খিয়ানত করা যাবে না। পবিত্র ক্বোরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেছেন-

یَٓاَیُّہَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لاَ تَخُوْ نُوْا اللّٰہَ وَ الرَّسُوْلَ وَ تَخُوْ نُوْا اَمٰنٰتِکُمْ وَاَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ وَ اعْلَمُوْٓا اَنَّمَا اَمْوَالُکُمْ وَ اَوْلَادُکُمْ قِتْنَۃٌ وَّ اَنَّ اللّٰہَ عِنْدَہُ اَجْرٌ عَظِیْمٌ

তরজমাঃ ‘হে মুমিনগণ! জেনে শুনে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে খিয়ানত (বিশ্বাস ভঙ্গ) করো না এবং তোমাদের পরস্পরের আমানত সম্পর্কেও খিয়ানত করো না। জেনে রেখো, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতিতো এক পরীক্ষা। আর আল্লাহরই নিকট মহা পুরস্কার রয়েছে।                  [সূরা আনফাল, আয়াত- ২৭-২৮]

عَنْ عَدِیِّ بْنِ عُمَیْرَۃَ رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰہِ صَلَّی اللّٰہُ عَلَیْہِ وَسَلَّمَ مَنْ اِسْتَعَْمَلْنَاہُ مِنْکُمْ عَلٰی عَمَلٍ فَکَتَمْنَا مِخْیَطًا فَمَا فَوْقَہٗ کَانَ یَأْتِیْ بِہٖ یَوْمَ الْقِیَامَۃِ

অর্থাৎ ‘‘হযরত আদী ইবনে ওমায়রাহ্‌ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, তোমাদের মধ্যে যাকে আমি (রাষ্ট্রীয় কার্যে) কর্মচারী নিযুক্ত করি, আর সে যদি আমাদের নিকট থেকে একটি সূঁচ অথবা তদপেক্ষা ছোট কিছুও গোপন করে তাহলে নিশ্চয়ই তা হবে আমানতের খিয়ানত, যা নিয়ে সে ক্বিয়ামতের দিন উপস্থিত হবে। [সহীহ মুসলিম শরীফ]

একবার খলীফা উমর ইবনে আবদুল আযীয রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু-এর নিকট কিছু হাদিয়া পেশ করা হলে তিনি তা ফিরিয়ে দেন। তখন তাকে বলা হলো, স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হাদিয়া গ্রহণ করতেন; কিন্তু আপনি করছেন না কেন? উত্তরে তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হাদিয়াই গ্রহণ করেছেন; কিন্ত আমাদের জন্য এটাতো রিশওয়াত (ঘুষ) ছাড়া আর কিছু নয়। তাঁর বিশাল মর্যাদার কারণে হাদিয়া দ্বারা তার নৈকট্যের আকাঙক্ষা করা হতো; কিন্তু আমাদেরকে এখন আমাদের শাসন ক্ষমতার জন্য কিছু দেয়া হয়।’’

عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ قَالَ بَعَثَنِیْ رَسُوْلُ اللّٰہِ صَلَّی اللّٰہُ عَلَیْہِ وَسَلَّمَ اِلٰی الْیَمَنِ فَلَمَّا سِرْتُ اَرْسَلَ فِیْ اَثَرِیْ فَرُدِدْتُ فَقَالَ اَتَدْرِیْ لِمَا بَعَثْتُ اِلَیْکَ لاَ تُغِیْبَنَّ شَیْءًا بِغَیْرِ اِذْنِیْ فَاِنَّہُ غُلُوْلٌ وَمَنْ یَّغْلُلْ یَأتِ بِمَا غَلَّ یَوْمَ الْقِیَامَۃِ لِہَذَا دَعَوْتُکَ وَامْضِ لِعَمَلِکَ

অর্থাৎ হযরত মুআ’য ইবনে জাবাল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আমাকে ইয়ামনে পাঠালেন। আমি রওয়ানা হলে তিনি আমার পেছনে এক ব্যক্তিকে পাঠিয়ে আমাকে ফিরিয়ে আনলেন। তিনি আমাকে বললেন, ‘‘তুমি কি বুঝতে পেরেছে আমি কেন (লোক পাঠিয়ে) তোমাকে ডেকে এনেছি?’’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার অনুমতি ব্যতীত তুমি (মানুষের নিকট হতে উপঢৌকন  হিসেবে) কোন মাল গ্রহণ করবে না। কেননা এভাবে গ্রহণ করা আত্মসাত বা খেয়ানত। যে ব্যক্তি আত্মসাত করবে সে হাশরের দিন আত্মসাতের মালসহ উপস্থিত হবে। আমি তোমাকে এ কথাগুলো বলে দেবার জন্যই ডেকেছি। এখন নিজের কাজে রওয়ানা হও।  [তিরমিযী]

একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হযরত আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহাকে ইহুদীদের নিকট প্রেরণ করেছিলেন। তাঁর দায়িত্ব ছিলো ইহুদীদের খেজুর বাগানের ‘খারাজ’ (কর) কত হয় তার পরিমাণ নির্ধারণ করা। তিনি যখন ইহুদীদের নিকট পৌঁছলেন তখন তাঁর সামনে ‘রিশওয়াত’ (ঘুষ) স্বরূপ কিছু মাল পেশ করা হলো। হযরত সাওবান রাদ্বিয়াল্লাহু তাজ্ঞআলা আনহু তা দেখে তাদেরকে বললেন, তোমরা যা পেশ করেছো তা তো ‘রিশওয়াত’ (ঘুষ)। আমরা তা কিছুতেই গ্রহণ করবো না।                                           [মুআত্তা ইমাম মালিক]

বিচারক ঘুষ গ্রহণ করলে তার কি হুকুম

বিচারক বিবাদমান পক্ষদ্বয়ের কারো নিকট হতে কোন হাদিয়া বা উপহার গ্রহণ করতে পারবে না। গ্রহণ করা হলে তা ঘুষ হিসেবে গণ্য হবে। ইসলামী রাষ্ট্রে বিচারক তার পর্যাপ্ত বেতন ভাতা এবং তার পরিবারের ভরণপোষণ সরকার থেকে প্রাপ্ত হথ। রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন- আমরা কাউকে সরকারী কাজে নিয়োগ করলে তার বাসস্থান না থাকলে তার ব্যবস্থা করে দেবো, তার খাদেম না থাকলে আমরা তা ব্যবস্থা করে দেবো, আর স্ত্রী না থাকলে আমরা তার বিবাহের ব্যবস্থা করে দেবো। যদি কোন বিচারক যদি ঘুষ গ্রহণ করে তাহলে ইসলামী আইনে সে তার স্বীয় পদ হতে সরাসরি বরখাস্ত না হলেও তাকে বরখাস্ত করা সরকারের কর্তব্য।

হানাফী মাযহাব মতে বিচারক ঘুষ গ্রহণ করলে বা অনুরূপ কোন দুষ্কর্মে লিপ্ত হলে সে সরাসরি বরখাস্ত হবে না; তবে সরকার অবশ্যই তাকে বরখাস্ত করবে এবং তার অপরাধের জন্য প্রয়োজন মনে করলে শাস্তির ব্যবস্থাও করবে। কিন্তু ইমাম শাফে’ঈ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি এর মতে বিচারক কোন দুষ্কর্মে লিপ্ত হলে সে সরাসরি বরখাস্ত হয়ে যাবে। হানাফী মাযহাবের কিছু সংখ্যক ফক্বীহর মতও তাই।