Anjuman-E Rahmania Ahmadia Sunnia Trust

হজ্জে বায়তুল্লাহ্‌

হজ্জে বায়তুল্লাহ্‌

হজ্জে বায়তুল্লাহ্‌
হজ্জ ইসলামের অন্যতম বুনিয়াদী ইবাদত। আল্লাহ-প্রেমের পরম নিদর্শন এবং এক ব্যতিক্রমধর্মী ইবাদত এ হজ্জ্‌। ইসলামের সকল ইবাদত-নামায, রোযা, যাকাত, জিহাদ, সাদক্বাহ্‌-খয়রাত, যিক্‌র-আয্‌কার এবং তরীক্বতের সবক্ব পালন ইত্যাদি সর্বত্র আদায়যোগ্য। কিন্তু হজ্জ ব্যতিক্রম। এটা একমাত্র নির্দিষ্ট মওসুমে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের মেহমানরূপে মর্যাদাবান হয়ে খানায়ে কা’বা বায়তুল্লাহ শরীফে উপস্থিত হয়েই শুধু আদায় করা যায়।
কোন কোন ইবাদত দৈহিক; যেমন, নামায, রোযা, যিক্‌র-আয্‌কার; আর কোন কোন ইবাদত মালী বা আর্থিক; যেমন, যাকাত-ফিতরা, সাদক্বাহ-খায়রাত ইত্যাদি। কিন্তু হজ্জ এমন একটি ইবাদত, যা শারীরিক শ্রম এবং আর্থিক ক্বোরবানী উভয়ের সমন্বয়ে আদায় করতে হয়। অন্যান্য সকল ইবাদত-রিয়াযতে আনুগত্যের প্রাধান্যই পরিদৃষ্ট হয়, আর হজ্জে বায়তুল্লাহ্‌র বিধি-বিধান পালনকালে আল্লাহর প্রেমের প্রাধান্যই পরিলক্ষিত হয়। তাই হজ্জে মাক্ববূলের প্রতিদান হলো জান্নাত।
হজ্জ্‌ এমন একটি আমল, যার বদৌলতে আন্তর্জাতিক ইসলামী ভ্রাতৃত্ব, বন্ধুত্ব এবং সংহতিও সূচিত হয় বিশ্ব মুসলিমের মধ্যে। কেননা, প্রতি বছর নির্দিষ্ট তারিখে নির্দিষ্ট সময়ে লক্ষ-লক্ষ মুঞ্চমিন নর-নারী আরাফাত, মিনা-মুয্‌দালিফায় সমবেত হয়ে এক আল্লাহ্‌র মহত্ব, বড়ত্ব ও গুণগানে মত্ত হয়ে উঠে। ভাষা-বর্ণ-বাসভূমি ইত্যাদি কারণে বিক্ষিপ্ত মুসলিম মিল্লাত হজ্জের বরকতে ও বদৌলতে আরাফাতের ময়দানে একক মুসলিম জাতি-সত্তায় পরিণত হয়। এভাবেই বিশ্ব মুসলিম-ঐক্যের ভিত্‌ সুদৃঢ় ও সুসংহত হয়। হজ্জ্‌ এমন একটি গুরুত্ববহ রিয়াযত, যার বরকতে মানব হৃদয়ে বিনয়, নম্রতা ও কোমলতা আর চরিত্রে পবিত্রতা-পরিশুদ্ধি অর্জিত হয়, যা হজ্জে মাকবূলেরই নমুনা ও নিদর্শন। এহেন অপরিসীম পার্থিব ও পারলৌকক কল্যাণ-মঙ্গল ও উপকার নিহিত রয়েছে পবিত্র হজ্জে বায়তুল্লাহর মধ্যে। এজন্য ক্বোরআনে করীমের অনেক আয়াতে এবং হাদীসে নবভী শরীফের অনেক রেওয়ায়তে বারংবার তাগিদ দেয়া হয়েছে সামর্থ্যবান মুঞ্চমিন নর-নারীর প্রতি হজ্জ সম্পন্ন করার বিষয়ে।
হজ্বের সংজ্ঞা
পবিত্র ক্বোরআনে করীম এবং হাদীসে নবভী শরীফে ‘হজ্জ্‌’(حج) শব্দটি ‘হা’ তে যবর ও যের সহকারে, অর্থাৎ- حَج  এবং حِج  উভয়রূপে উল্লিখিত হয়েছে। কেউ কেউ বলেন, হজ্জ শব্দটি যবর যোগে ‘মাসদার’ (ক্রিয়ামূল) আর যের সহকারে ইসম বা বিশেষ্য। আবার কোন কোন মুহাক্ব্‌ক্বিক্‌ বলেন, যবর সহকারে হজ্জ শব্দটি ‘ইস্‌ম’ বা বিশেষ্য এবং যের সহকারে হজ্ব শব্দটি ‘মাসদার’ বা ক্রিয়ামূল। হজ্জ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো قصْدُ الشَّىْئٍ الْعَظِيْمِ الْفَخِيْم  অর্থাৎ- আযীমুশ্বান কোন বিষয় বা বস্তু অর্জনের সংকল্প করা, ইচ্ছা করা। আর ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় হজ্জের মাসসমূহে ইহরাম পরিধান করে ৯ জিলহজ্জ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা এবং বায়তুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করার সংকল্প করাকে হজ্জ বলা হয়।
হজ্জ কখন ফরয হয়েছে
হজ্জ্‌ কখন ফরয হয় এ বিষয়ে মুহাদ্দিসীন, মুফাস্‌সিরীন এবং ফক্বীহ্‌গণের মধ্যে  মতানৈক্য রয়েছে। মুহাক্বক্বিক্ব ওলামা-ই কেরামের মধ্যে কেউ কেউ বলেন- হজ্জ্‌ হিজরী তৃতীয় সালে ফরয হয়, যে বছর উহুদ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। [তাফসীরে ইবনে কাসীর]
আবার কোন কোন মুহাক্বক্বিক্ব বলেন, হজ্জ্‌ হিজরী ষষ্ঠ সালে ফরয হয়। তবে অধিকাংশ মুহাদ্দিসীন এবং ফক্বীহ্‌র মতে হজ্জ্‌ হিজরী নবম সনে ফরয হয়েছে। [আলমগীরী ও দুররে মুখ্‌তার]
দলে দলে লোকজনের ইসলাম গ্রহণ এবং বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি দলের আগমনের কারণে আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ব্যস্ত থাকায় ওই বছর হজ্জে যাননি; বরং সাইয়্যেদুনা আবূ বকর সিদ্দিক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে ‘আমীরুল হুজ্জাজ’ মনোনীত করে মক্কা শরীফে প্রেরণ করেন হজ্জ আদায়ের লক্ষ্যে। হুযূর-ই আকরাম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম পরবর্তী বছর ১০ম হিজরীতে হজ্জ্‌ সম্পন্ন করেন, যা ঐতিহাসিক ‘বিদায় হজ্জ্‌’ হিসেবে প্রসিদ্ধ।