সফল জীবনের জন্য সময়ের যথাযথ ব্যবহার অপরিহার্য
মুহাম্মদ আনোয়ার শাহাদাত
কর্মবহুল মানবজীবনে ’সময়’ আল্লাহ প্রদত্ত এক অতুলনীয় নিয়ামত। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানবজীবন সময়ের আবর্তেই পরিচালিত হয়। সময়কে যে যেভাবে ব্যবহার করে বা কাজে লাগায় তার জীবন ততটুকু সফল বা ব্যর্থ হয়। সময়কে যদি যথোপযুক্ত ভাবে ব্যবহার করা যায় তাহলে ’সময়’ হয়ে ওঠে কার্যকর, অর্থবহুল এবং সাফল্যম-িত এবং জীবন ভরে ওঠে সফলতায় ভরপুর আর যদি সময়কে অবহেলা বা অযত্নে কাটিয়ে দেয়া হয় তাহলে পুরো জীবন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। মহান স্রষ্টা মানবজাতিকে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দিয়ে পাঠিয়েছেন কিন্তু এই শ্রেষ্ঠত্ব সময়ের যথাযথ ব্যবহারের উপর নির্ভর করে। কারণ মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে যা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পালন করার উপর নির্ভর করে মনুষ্য জীবনের শ্রেষ্ঠত্ব। আমরা যে যত বছর পৃথিবীর বুকে বেঁচে থাকি সে তার এই নির্দিষ্ট ’ইহকালিন সময়’কে কীভাবে, কোন কাজে, কোথায় ব্যবহার করেছে তার উপর নির্ভর করে জীবনের সফলতা ও ব্যর্থতা। আল্লাহ মানুষকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তাঁর ’খলিফা’ বা ’প্রতিনিধি’ করে। আর প্রতিনিধি মানেই দায়িত্বভার বহন করা এবং পালন করা। মানবজাতিকে আল্লাহ প্রতিনিধি বানিয়ে একমাত্র তাঁরই ইবাদতের দায়িত্ব দিয়েছেন। যেমন পবিত্র কুরআন শরীফে আল্লাহর ঘোষণা- ’আমি জ্বিন ও মানবজাতিকে আমার ইবাদত ব্যতীত অন্য কিছুর জন্য সৃষ্টি করিনি’ (সূরা জারিয়াত-৫৬)।
এই ’ইবাদত’ শব্দের ব্যাখ্যা, গুরুত্ব, বিস্তৃতি অনেক ব্যাপক। তবে সারকথা হিসেবে এটি বলা যায় এই ইবাদত-ই হলো মানুষের পবিপূর্ণ জীবন। আর এই জীবন নির্ভর করে সময়ের ব্যবহারের উপর। ’সময়’কে যে ইবাদতের মাধ্যমে কাটাতে পেরেছে সে ¯্রষ্টার বিধান মেনেছে এবং প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেছে আর অন্যথা হলে সে প্রতিনিধির দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। সময়ের মূল্য অপরিসীম তাই মহান রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনে বার-বার এই সময়ের শপথ করেছেন। যেমন- সূরা ফজর, সূরা আল-লাইল, সূরা আছর দ্রষ্টব্য। এছাড়াও বিভিন্ন সূরার বিভিন্ন জায়গায় সময়ের ব্যবহার এবং সময় সম্পর্কিত অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা এসেছে। কিন্তু আমরা সময়ের ব্যাপারে যথেষ্ট উদাসীন। সময়ের যথার্থ ব্যবহার করি না। সময়ের কাজ সময়ে করি না। অথচ সময় কিন্তু কারো জন্য অপেক্ষা করে না। মানুষের জীবনের দুঃখ-কষ্ট, ঘাত-প্রতিঘাত, আনন্দ-বেদনা, সফলতা-ব্যর্থতা একে অন্যকে প্রভাবিত করলেও সময় কিন্তু কোন কিছুর দ্বারা প্রভাবিত হয় না। নিরবচ্ছিন্ন ও নিরলস ভাবে ছুটে চলে আপন গতিতে। আপনি কে, কোথায় থাকেন, বয়স কত, আপনার প্রভাব-প্রতিপত্তি, গায়ের রং তা কোন বিষয় নয়, সবার জন্যেই একটি সাধারণ বিষয় রয়েছে আর সেটি হলো সবার জন্যই ২৪ ঘন্টায় একদিন হয়। কারো জন্য কম বেশি নেই। একজন মানবসন্তান সাধারণত জন্ম থেকে শৈশব, কৈশোর পেরিয়ে যৌবনের সিড়ি বেয়ে বাধ্যর্ক্যে উপনীত হয় এবং তার ইহকালীন সময়ের সমাপ্তি ঘটে। জীবন পরিক্রমার প্রতিটি ধাপ কিন্তু মানুষকে নতুন করে জীবনের পাঠ শিক্ষা দেয় এবং পৃথিবীর নতুন অধ্যায় উন্মুক্ত করে দেয় তার মানসপটে। এসব কিন্তু সময়ের ব্যবহারের উপরই নির্ভর করে। সময়ই হচ্ছে মানবজীবনের বড় শিক্ষক। তাই জীবনের প্রতিটি মুহুর্ত অত্যন্ত পরিকল্পিত ভাবে এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে আমাদের এগিয়ে চলা উচিত। আপনি সেকে-ের যত্ন নিন তাহলেই দেখবেন মিনিট, ঘন্টা, দিন, বছর আর যুগ সফলতায় কেটে যাবে। যদি সময়ের উত্তম ব্যবহার করেন সময় আপনাকে আরো উত্তম অবস্থানে পৌঁছে দিবে আর যদি সময়কে হেলা করেন সময় আপনাকে ব্যর্থতার আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করবে। আজকের পৃথিবীতে মানুষ এক অজানা গন্তব্যের পেছনে ধাবমান। কারো হাতে যেন এক মুহুর্তের ফুরসৎ নেই। ক্ষণস্থায়ী ও ভঙ্গুর এই জাগতিক জীবনের উন্নয়ন আর অগ্রগতির পেছনে মানুষ বিদ্যুৎ বেগে ছুটছে। বিভিন্ন পেশাগত কাজ ছাড়াও মানুষ এখন আসক্ত নানান ইলেকট্রনিক ডিভাইসে। যন্ত্রের সাথে পাল্লা দিয়ে তাই মানুষও যান্ত্রিক হয়ে পড়েছে। মোবাইল, কম্পিউটার, ট্যাব, আইপ্যাড, ল্যাপটপ সহ বিভিন্ন অত্যাধুনিক ডিভাইসে মানুষ অকল্পনীয় ভাবে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। ফেইসবুক, ইউটিউব, টুইটার, স্ন্যাপচ্যাট, লিংকডইন, পিন্টারেস্ট, ইনস্টাগ্রাম, গুগুলপ্লাস,টাম্বলার, ফ্লিকার, রেডডিট, হোয়াটসঅ্যাপ, টিকটক, কুয়োরা, পেরিস্কোপ এবং ডিগ সহ নানান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিশু-কিশোর আবাল বৃদ্ধ বনিতা দেদারছে সময় কাটাচ্ছে। ভাবছে না সময়ের মূল্য সম্পর্কে। খেল-তামাসার ছলে কাটানো সময়ের যে হিসেব দিতে হবে পুঙ্খানুপুঙ্খ তা ভুলে গিয়ে টাচ স্ক্রীনে স্ক্রলিং করেই কাটিয়ে দিচ্ছে ঘন্টার পর ঘন্টা। হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন- ’দুটি নিয়ামতের ব্যাপারে মানুষ প্রবঞ্চিত হয়ে আছে। একটি হচ্ছে সুস্থতা; অপরটি অবসর সময়।’ (বুখারি শরীফ)। আপনি কর্মময় জীবনে হোন আর অবসরে বসে থাকেন, আপনি চাইলেই সময়কে কল্যাণকর কাজে ব্যবহার করে ইহকালীন সফলতা ও পরকালীন মুক্তির পথ সুগম করতে পারেন। বিশেষ করে বর্তমান প্রজন্মের তরুণ বা যুবকরা এক বিশৃংঙ্খলাময় জীবনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। ছাত্রজীবন ও তার পরবর্তী কর্মসংস্থানে নিয়োজিত হওয়া পর্যন্ত জীবন, পেশাগত জীবন, পারিবারিক বা সাংসারিক জীবন সবক্ষেত্রেই সময়ের পরিকল্পিত ও সদ্ব্যবহার করলে হতাশামুক্ত জীবন গড়ে তোলার পথ সুগম হয় এবং প্রভূত কল্যাণ লাভ করা যায়। আমরা কীভাবে সময়কে সত্য ও সুন্দরের পথে, পরিকল্পিত ভাবে, আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামত হিসেবে ব্যবহার করতে পারি বা কাজে লাগাতে পারি তার সংক্ষিপ্ত একটি রূপরেখা তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
১. পরিকল্পনা গ্রহণ করা: আপনি জীবনের যে অধ্যায়ে বা স্তরে আছেন সেখান থেকেই আপনি পরিকল্পনা করুন সামনের সময়টুকু কীভাবে কাটাবেন, কী করলে জীবন আরো সুন্দর ও সাবলীল হয়, আপনি যদি বেকার হন তাহলে কী কারনে বেকার, কী করলে কর্মসংস্থান হবে, কোন যোগ্যতা আপনার আছে, কোন যোগ্যতা নেই অথচ থাকা দরকার, প্রতিযোগীতামূলক এই বিশ্বব্যবস্থায় টিক থাকতে হলে আপনাকে কী করা দরকার এসব বিষয় নিয়ে ভাবুন এবং সুন্দর একটি পরিকল্পনা তৈরি করুন, তাতে করে আপনার অবসর সময়টুকুর সদ্ব্যবহার হবে এবং স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনের পথে আপনার পথচলা সহজ হবে।
২. কুরআন শেখা এবং তেলাওয়াত করা: যখনই আপনি অবসর পাবেন তখনই কুরআন শিখুন। কোরান শিক্ষা করা ও অপরকে শিক্ষা দেয়া পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম কাজগুলোর একটি। প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য কুরআন শিক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং অবশ্য কর্তব্য। অনেকেই মা-বাবা, অভিভাবক বা পারিবারিক অবহেলার কারনে বাল্যকালে কুরআন না শিখে থাকলেও জীবনের যে পর্যায়েই সময় পাওয়া যায় তখনই কুরআন শিখে নেয়া অতীব জরুরি। আর যারা কুরআন জানেন তারা যেন সময় পেলেই কুরআন তেলাওয়াত করেন এবং অপরকে কুরআন শিক্ষা দেন। কুরআন শিক্ষা, কুরআন তেলাওয়াত এবং অপরকে শিক্ষা দেয়ার সময়টুকু পুরোপুরি সওয়াবের কাজ হিসেবে আপনার আমলনামায় লিপিবদ্ধ হবে এতে কোন সন্দেহ নেই।
৩. বই পড়া: যে কোন বিষয়ের উপর রুচিসম্মত বই পড়ুন। বই মানুষের জ্ঞানের পরিধিকে বৃদ্ধি করে। উন্মুক্ত করে রহস্য ঘেরা এই বিশ্ব ধরিত্রীর পরতে পরতে লুকিয়ে থাকা বিস্ময়। বই পড়লে জানতে পারা যায় মহান স্রষ্টার এই সীমাহীন সৃষ্টি সম্পর্কে, বৈচিত্রময় জগৎসমূহ সম্পর্কে। বই হলো জানালার মতো যা দিয়ে পুরো পৃথিবী দেখা যায়। আপনি বেকার হোন বা অন্য যে পেশায় থাকুন না কেন বই আপনাকে ঐ পেশায় পরিপক্কতার ক্ষেত্রে সহায়তা করবে, মনের মলিনতাকে দূর করে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। চলমান বিশ্ব সম্পর্কে আপনার জ্ঞানকে পরিপুষ্ঠ করবে।
৪. সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ: অবসর সময়ে নিজেকে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাজে নিয়োজিত করুন। সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের সহায়তা করুন নিজের সামর্থানুযায়ী। স্বেচ্ছাশ্রমে এলাকার উন্নয়নে কাজ করুন, নিজ এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে নিজের ভূমিকা রাখার চেষ্টা করুন। আপনি শিক্ষিত হলে যারা অর্থাভাবে পড়তে পারছে না তাদেরকে বিনামূল্যে বা সাশ্রয়মূল্যে পড়াতে পারেন তাতে করে আপনার জ্ঞানের যেমন চর্চা হবে তেমনি করে সমাজও উপকৃত হবে। মানবসেবা মুসলমানের একটি মৌলিক কাজ বা দায়িত্ব। তাই সময় পেলে দুস্থ ও পীড়িতদের সহায়তা করা, রক্ত দান করা, রোগীর সেবা করা, কেউ বিপড়ে পড়লে সাহায্যে এগিয়ে যাওয়া এসব কাজে নিজেকে নিয়োজিত করুন। দেখবেন মানসিক প্রশান্তি পাবেন এবং প্রভূত কল্যাণের ভাগী হবেন।
৫. সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা: বিজাতীয় ও অনৈসলামিক সংস্কৃতির আগ্রাসনে নৈতিকতা হারাচ্ছে আমাদের সমাজ ও তরুণ প্রজন্ম। আপনি দেশের একজন সুনাগরিক হিসেবে দায়িত্ব রয়েছে সুস্থ সংস্কৃতির অনুশীলন এবং বিকাশে কাজ করা। একজন মুসলিম হিসেবে ইসলামের নিস্কলুস ও কালজয়ী সংস্কৃতিকে নিজের জীবনে লালন করে সমাজে এর ব্যাপক প্রচলনের ক্ষেত্রে আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। তাই বিভিন্ন বিশেষ দিবস উপলক্ষে এলাকার সমমনা ব্যক্তিদের নিয়ে কুরআন তেলাওয়াত, হামদ, নাত, কবিতা, দেয়ালিকা প্রকাশ ও বিভিন্ন জ্ঞানমূলক প্রতিযোগীতার আয়োজন করে সমাজে সুস্থ সংস্কৃতি বিকাশে আপনার অবসর সময়টুকু ব্যয় করলে সমাজে ধীরে ধীরে সুস্থ সংস্কৃতির বলয় তৈরি হবে এবং অপসংস্কৃতি লোপ পাবে।
৬. পরিবার ও আত্মীয়দের সময় দেয়া: অবসর পেলে আপনার পরিবার ও নিকট আত্মীয়দের সময় দিন। পরিবারের কারো কোন কাজ থাকলে করে দিন। বয়স্ক মা-বাবা, দাদা-দাদী কেউ থাকলে তাদেরকে আন্তরিকতার সাথে জিজ্ঞেস করুন কিছু লাগবে কিনা, কোথাও যাবেন কিনা। যতটুকু সম্ভব তাদের পাশে বসুন, কথা বলুন, একটু সঙ্গ দিন। সামর্থ্য থাকলে ভালো কিছু কিনে দিন সেটি খাবার হোক বা পরিধেয় বস্ত্র হোক। ব্যস্ততার কারনে যে আত্মীয়দের খবর নিতে পারেন না, সময় পেলে তাদের খবরা-খবর নিন। সম্ভব হলে গিয়ে দেখা করে আসুন। পরিবার-পরিজনের সেবা ও আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা আমাদের ঈমানি দায়িত্ব।
৭. ভ্রমন করা: পরিবার-পরিজন বা বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ঘুরতে বেরিয়ে যান। ভ্রমনে মানুষের মনে প্রফুল্লতা আসে এবং জ্ঞানের বিকাশ ঘটে। আল্লাহর সৃষ্টির অপরূপ সৌন্দর্য দেখে অবনত মস্তকে শোকরিয়া আদায় করুন। পবিত্র কুরআনুল করীমেও ভ্রমনের ব্যাপারে যথেষ্ট উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। তাই সুযোগ হলে অবসর সময়ে আপনার সামর্থানুযায়ী দেশ-বিদেশে ঘুরে আসুন এবং দেখুন আল্লাহর সৃষ্টি কত বৈচিত্রপূর্ণ ও মনোহর।
৮. আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করা: মানুষ হিসেবে আপনি মহান আল্লাহর খলিফা বা প্রতিনিধি। তাই আল্লাহ প্রদত্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম প্রদর্শিত দায়িত্ব পালন করুন। ইসলামের সুমহান ছায়াতলে মানুষকে আহবান করুন, দাওয়াত দিন। সৎ কাজের আদেশ, অসৎ কাজে বাধা দেয়া আপনার দায়িত্ব। আপনার সাধ্যানুযায়ী সমাজের তরুণ বা যুব সমাজকে ইসলামের দিকে মোটিভেট করুন। ইসলামের সঠিক রূপরেখা আকাইদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতাদর্শ প্রচার প্রসারে ভূমিকা রাখুন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অহেতুক, অশ্লীল ও অনৈতিক লেখালেখি না করে ইসলামের কালজয়ী সুমহান শিক্ষার কথা তুলে ধরুন।
৯. লেখালেখি করা: অবসর সময়ে লেখালেখির চেষ্টা করুন। এটি একজন মানুষের অনেক বড় অর্জন। আরবীতে একটি প্রবাদ আছে- যে লিখে সে দুইবার পড়ে। এই নশ্বর পৃথিবীতে মানুষ যত অবদান রেখে যায় তম্মধ্যে লেখালেখির অবদান অত্যন্ত ফলপ্রসু এবং প্রভাব বিস্তারকারী। সদকায়ে জারিয়ার মধ্যে উপকারী জ্ঞানও একটি। তাই অবসর সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, প্রিন্ট মিডিয়া বা ইলেকট্রনিক মিডিয়া যেখানেই পারা যায় লেখার চেষ্টা করুন। আপনার লেখনী, কথা, সুপরামর্শ, বক্তব্য দ্বারা ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র উপকৃত হতে পারে। আপনার লেখনীর প্রভাব রয়ে যেতে পারে যুগ-যুগান্তর। আপনার একটি লেখনী বদলে দিতে পারে একটি পুরো সমাজকে, আলোর পথ দেখাতে অন্ধকারাচ্ছন্ন জনপদকে। আপনার বুদ্ধিদ্বীপ্ত শাণিত লেখনী অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে যার প্রভাব হতে পারে সুদূর প্রসারী।
১০. ভাষা শিখুন : অবসময় সময় কী করবেন, কীভাবে কাটাবেন এমন হা হুতাশ না করে ভাষা শিখতে চেষ্টা করুন। আমরা তো নিজের মাতৃভাষাও ভালো করে আয়ত্ব করি না যা অতবী লজ্জাস্কর। তাই অবসর সময়ে মাতৃভাষার পাশাপাশি ইংরেজি, আরবী, চাইনিজ বা অন্য যে কোন ভাষা শিখে নিজেকে যুগের উপযোগী যোদ্ধা হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন এবং নিজের যোগ্যতার ঝুলিকে ভরিয়ে দিতে পারেন।
আমাদের উচিত ফরয সালাতের পর অবসর পেলে নফল সালাত আদায় করা, জিকির করা, নিজের পাপের কথা স্মরণ করে মহান রবের ক্ষমা প্রার্থনা করা, অভাব-অপূর্ণতা লাগবের আর সুস্থ জীবনের জন্য কায়মনোবাক্যে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া, ঈমানের পথে চলে ঈমানি মৃত্যু যেন নসীব হয় সেই প্রার্থনা করা। এছাড়াও অবসময় সময়ে বাগান করা, বৃক্ষ রোপন করা, নিজ বাড়ির আশ-পাশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা, এলাকার মধ্যে বিভিন্ন অসামাজিক কাজকর্মের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা সহ, স্বল্প মেয়াদি বিভিন্ন ভোকেশনাল ট্রেনিং গ্রহন করে নিজেকে অধিকতর যোগ্য করে তুলতে পারি। সময়কে যদি নেক আমলে কাটাতে না পারি তাহলে শতায়ু পেলেও জীবন বৃথা। তাই আসুন প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের হাদিসের মর্মানুযায়ী সময়কে পরিকল্পিত ভাবে নেক আমলের মধ্যে অতিবাহিত করে সৌভাগ্যবান মানুষদের অর্ন্তভূক্ত হই এবং জীবনকে সফল করে তুলি।
লেখক: প্রাবন্ধিক, সৌদি আরব প্রবাসী।