প্রশ্নোত্তর : অধ্যক্ষ মুফ্তী সৈয়দ মুহাম্মদ অছিয়র রহমান
মুহাম্মদ শাহ্ আলম, ইমাম, ঢেমিরছড়া পূর্বপাড়া জামে মসজিদ,
বেতাগী, রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: জামাতে পাগড়ী পরিধান করার হুকুম কি? কোন ইমাম যদি পাগড়ী ছাড়া জামাতে নামাযের ইমামতি করে তার ইমামতি শুদ্ধ হবে কিনা? দলিল সহকারে জানালে উপকৃত হব।
উত্তর: পুরুষদের জন্য মাথায় পাগড়ী বাঁধা সুন্নাত। বিশেষতঃ নামাযে পাগড়ী পরিধান করে যে নামায আদায় করা হয়, সেই নামাযের সাওয়াব অনেকগুণ বৃদ্ধি হয়। পাগড়ী বাঁধা ছিল প্রিয় নবীর স্বভাবগত সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এ প্রসঙ্গে উদ্বুদ্ধ করে এরশাদ করেছেন- عَليكم بالعمائم فانها سيماء الملائكة অর্থাৎ তোমরা পাগড়ী বাঁধবে, কেননা এটা ফেরেশতাদের প্রতীক। [শুআবুল ঈমান, ইমাম বায়হাক্বী (রহ.), হাদিস নং-৬২৬২] অপর হাদীসে পাগড়ীকে ইসলামের চিহ্ন বলা হয়েছে।
ফকীহগণের সর্বসম্মত মতানুযায়ী নামাযের সময় পাগড়ী পরিধান করা সুন্নাতে মুস্তাহাব্বা। পাগড়ী ছাড়া নামায পড়লে মাকরূহ বা অশুদ্ধ হবে না; তবে পাগড়ী পড়ে নামায আদায়ে সাওয়াব বেশী হবে। যেমন-عن جابر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ركعتان بعمامة خير من سبعين ركعة بلاعمامة অর্থাৎ, হযরত জাবের রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন পাগড়িসহ ২ রাকাত নামায পাগড়ি ছাড়া ৭০ রাকাত নামাযের চেয়ে উত্তম।
[জামেউস্ সগীর ২/১৭, হাদীস -৪৪৬৮, মুসনাদুল ফিরদাউস, কৃত. ইমাম দায়লামী রহ., ২/২৬৫ পৃ. হাদিস নং-৩২৩৩]
সুতরাং নামায জমাত সহকারে আদায় করা হোক অথবা একাকি পাগড়িসহ নামায আদায় করলে সওয়াব অনেক বেশী। আর যদি ইমামের মাথায় পাগড়ি না থাকে বরং মুক্তাদীর মাথায় পাগড়ী আছে, তাতে নামায বা জামাতের ক্ষতি হবে না। অবশ্য যে মুক্তাদীর পাগড়ী আছে সে সওয়াব বেশী পাবে। আর ইমামের মাথায় পাগড়ী থাকলে সকল মুক্তাদী বেশী সওয়াব পাবে।
অপর হাদীসে উল্লেখ রয়েছে-صلوة بعمامة تعدل خمسا وعشرين صلوة بلاعمامة جمعة بعمامة تعدلل سبعين جمعة بلا عمامة অর্থাৎ পাগড়ীসহ নামায পড়া সওয়াবের দিক দিয়ে পাগড়ীহীন ২৫ রাকাত নামাজের সমান। পাগড়ীসহ এক জুমা ছাড়া সত্তর জুমা নামাজের সমান।
[মুসনাদিল ফিরদাউস-২/০৬পৃ, ৩৮০নং হাদীস, কৃত. ইমাম দায়লামী (রহ.), মাকাসিদুল হাসানাহ্, ২৭১ পৃ. কৃত. হাফেজ ইমাম আব্দুর রহমান সাখাভী (রহ.)]
সুতরাং পাগড়ীসহ ইমামতি করাটা ইমামের জন্য শ্রেয় ও অনেক ফজিলত।
প্রশ্ন: জুমার খোৎবা পাঠ কালে লাঠি নেওয়া বাধ্যতামূলক কিনা? অনেক মসজিদে খতিব লাঠি নেয়, অনেক মসজিদে লাঠি নেয় না?
উত্তর: জুুম‘আ ও দুই ঈদের খুৎবার সময় হাতে লাঠি নেয়া রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নিয়মিত সুন্নাত। হযরত হাকাম ইবনে হুযন আল কুফী বলেন, ‘আমি মদিনা শরীফে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসলাম। অতঃপর বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমরা আপনার সাথে সাক্ষাতের জন্য এসেছি। আপনি আমাদের কল্যাণের জন্য দো‘আ করুন। আমরা সেখানে কয়েকদিন অবস্থান করলাম। অবশেষে আমরা একদিন তাঁর সাথে জুমআর নামাজে যোগ দিলাম। তিনি লাঠির উপর ভর দিয়ে খুৎবায় দাঁড়ালেন। অতঃপর আল্লাহর প্রশংসা করে বললেন, ‘হে মানবম-লী! আমি যা আদেশ করছি তোমরা তা পুরোপুরি আদায় করতে সক্ষম নও। কাজেই মধ্যম পথ অবলম্বন কর এবং মানুষকে সুসংবাদ দাও’।
[আবু দাউদ শরীফ, হাদিস নং-১০৯৬, সনদ হাসান, ইরওয়াউল গালীল ৩/৭৮পৃ, হা/৬১৬]
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম লাঠির উপর ভর দিয়ে খুৎবা প্রদান করতেন।’
[মুসনাদে আব্দুর রায্যাক হাদিস/৫২৪৬, ইরওয়াউল গালীল ৩/৭৮ পৃ. সনদ সহীহ্]
কোন কোন আলিম মসজিদে নববীতে মিম্বর তৈরীর পর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হাতে লাঠি নেননি বলে মত প্রকাশ করেছেন। (ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ ১ম খন্ড, ৪১১পৃ.), কিন্তু এ মতের কোন দলীল নেই বরং ফাতিমা বিনতে ক্বায়স রা. হতে বর্ণিত হাদিসে দেখা যায় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববীতে মিম্বরে বসাবস্থায়ও হাতে লাঠি ব্যবহার করেছেন। [মুসলিম, মিশকাত, হাদীস নং-৫৪৮২]
এটি ছিল নবম হিজরীর ঘটনা। সুতরাং এখান থেকে প্রমাণিত হয় যে, মিম্বরে বসা অবস্থায় তাঁর হাতে লাঠি ছিল। এ ছাড়া সাহাবীগণের মধ্যেও মিম্বরে দাঁড়িয়ে হাতে লাঠি নিয়ে খুৎবা দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন হযরত হিশাম বিন উরওয়া বলেন, ‘আমি হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন যুবায়ের রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুকে খুৎবা দিতে দেখেছি। এমতাবস্থায় তাঁর হাতে লাঠি ছিল’। [মুসান্নাফ আব্দুর রায্যাক, হা/৫৬৫৯]
উল্লেখ্য যে, ‘রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ থাকার কারণে হাতে লাঠি নিয়ে খুৎবা দিয়েছিলেন বলে সমাজে প্রচলিত কথাটির স্বপক্ষেও কোন দলীল নেই। সুতরাং জুমু‘আ এবং অন্যান্য যেকোন খুৎবা বা বক্তব্য প্রদানের সময় হাতে লাঠি রাখা সুন্নাত, যা পরবর্তী যুগেও অনুসৃত হয়েছে। যেমন হাদীস শরীফে উল্লেখ রয়েছে-عن ابن شهاب قال فكان اذا قام اخذ عصافتوكّا عليها وهو قائم على المنبر ثم كان ابو بكر الصديق وعمر بن الخطاب وعثمان بن عفان يفعلون مثل ذلك অর্থাৎ হযরত ইমাম ইবনু শিহাব যুহরী রহ. বলেন, রাসূল পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম যখন মিম্বরের উপর খুৎবাহর জন্য দাঁড়াতেন, তখন লাঠির উপর ভর দিতেন। অতঃপর হযরত আবূ বকর হযরত ওমর ও হযরত ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুও একইভাবে লাঠির উপর ভর দিয়ে খুতবা প্রদান করতেন। [মারাসীলু আবী দাঊদ, ১ম খন্ড, ১০১পৃ. হাদিস নং-৫৫]
অপর হাদীসে উল্লেখ রয়েছে-حدثنا هشام بن عمار حدثنا عبد الرحمن بن سعد بن عمار بن سعدـ حدثنى ابى عن ابيه عن جده ان رسول الله صلى الله عليه وسلم كان اذا خطب فى الحزب خطب على قوس واذا خطب فى الجمعة خطب على عصا অর্থাৎ হযরত সা’দ বিন আয়িয রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধক্ষেত্রে খুতবাহ্ দিলে ধনুকে ভর করে খুতবাহ দিতেন এবং জুমুআর খুতবাহ্ দিলে লাঠিতে ভর দিয়ে খুতবাহ্ দিতেন। [সুনানে ইবনে মাজাহ্, -১১০৭]
সুতরাং অনেক ফকীহ্গণ খুতবাহ্র সময় লাঠি ব্যবহার করা জায়েয এমনকি সুন্নাতে মুস্তাহাব্বা বলেছেন। আর পাক-ভারত উপমহাদেশের বিখ্যাত মুহাদ্দিস শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী রহ. তাঁর রচিত মাদারিজুন নুবূয়ত গ্রন্থে এ বিষয়ে উলামা-ই কেরামের ইখতিলাফ ও মতানৈক্য উল্লেখ করার পর জুমুআ ও ঈদের নামাযে খুতবা প্রদানের সময় লাঠি হাতে খুতবাহ্ দেয়া সুন্নাত ও উত্তম বলে মত প্রদান করেছেন। তবে এ ব্যাপারে বাধ্য বা নিষেধ করা উচিত না। কোন খতিব জুমা ও ঈদের নামাযের খোতবা প্রদানকালে লাঠি হাতে না নিলেও খুতবাহ্ আদায় হয়ে যাবে।
শাহ্ আহমদ রেযা ক্বাদেরী
নাজিরপাড়া, দক্ষিণ পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম
প্রশ্ন: লাহিক অজু করে আসতে আসতে ইমাম সাহেব নামাজ শেষ করে ফেলেছেন। এ অবস্থায় অবশিষ্ট নামাজ আদায় করার ক্ষেত্রে লাহিক আল্লাহু আকবার বলে নামাজে দাঁড়াবেন নাকি আল্লাহু আকবার না বলে সরাসরি দাঁড়িয়ে যাবেন। লাহিক অবশিষ্ট নামাজ কিভাবে আদায় করবেন? দালিলিক আলোচনা করার অনুরোধ রইলো।
উত্তর: লাহিক ওই মুক্তাদি বা মুসল্লিকে বলা হয়, যে ইমামের সাথে প্রথম রাকাত থেকেই নামায আরম্ভ করেছে কিন্তু ইকতিদা বা ইমামের সাথে নামায শুরুর পর উক্ত ইমামের পেছনে নামায সম্পন্ন করতে পারে নাই বরং কোন কারণে তার নামায মাঝখান হতে কয়েক রাকাত বাদ পড়েছে। অর্থাৎ ওই রাকাতগুলো কোন ওযরের কারণে বাদ পড়েছে। যেমন- ওযু ভেঙ্গে যাওয়া বা ঘুমিয়ে পড়ার কারণে) এ ধরণের মুক্তাদি জামাতে নামায পড়া অবস্থায় হঠাৎ ওযু ছুটে গেলে সাথে সাথে কথা- বার্তা না বলে চুপ-চাপ ওযু করার জন্য চলে যাবে এবং ওযু করে ফিরে এসে ইমামের নামায শেষ না হয়ে থাকলে প্রথমে একা একা ছুটে যাওয়া নামায/ রাকাতগুলো কিরাত ছাড়া পড়বে। এরপর ইমামের সাথে শরীক হবে। যদি এর বিপরীত করে অর্থাৎ প্রথমে ইমামের সঙ্গে শরীক হয়ে যায় এবং ইমাম সালাম ফেরানোর পর ছুটে যাওয়া নামায/রাকাআত পূর্ণ করে, তাহলেও হবে। আর যদি ইমামের নামায/জামাআত শেষ হয়ে যায়, তখন একা একা ছুটে যাওয়া নামায পূর্ণ করবে।
এই প্রসঙ্গে ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া বা আলমগীরীতে উল্লেখ রয়েছে-اذا عاد بعد الوضوء ينبغى له ان يشتغل اولا بقضاء ما سبقه الامام بغير قرائة অর্থাৎ লাহেক করে ফিরে এসে ছুটে যাওয়া নামায পড়ার সময় কেরাত পড়বে না। বরং কেরাত পড়ার পরিমাণ সময় চুপচাপ দাড়িয়ে থাকবে। তারপর রুকু-সাজদা আদায় করবে। তখন উক্ত মুক্তাদি নামায শেষে সাহু সাজদাও দিবে না। সুতরাং লাহেকের ছুটে যাওয়া নামায উপরোক্ত নিয়মে পড়ে নিবে। নতুন করে তাকবীর বা আল্লাহু আকবার বলতে হবে না।
[দুররে মুখতার, রাদ্দুল মুহতার, বাহারে শরীয়ত, খন্ড-৩য়, ১৩৫পৃ., ফতোয়ায়ে আলমগীরী, ১/৯২ ইত্যাদি]
মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ্
মুরাদপুর, সীতাকু-, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: ওহাবী-দেওবন্দীদেরকে কেন আমরা ভ্রান্ত বলে থাকি? তাদের বদ ও ভ্রান্ত এবং গোমরাহি আকিদাগুলো তাদের লিখিত বই-পুস্তকের নাম সহ জানতে চাই।
উত্তর: ওহাবী-দেওবন্দীদের কতিপয় জঘন্য আক্বীদা ও কটুক্তিসমূহ নি¤েœ প্রদত্ত হলো যা তাদের প্রকাশিত বিভিন্ন বই হতে সংগৃহীত হয়েছে। কোন মুসলমান নর-নারী এ সব ভ্রান্ত আক্বিদা ও কটুক্তি, বিশ্বাস ও সমর্থন করলে ঈমান ধ্বংস হয়ে যায়। যেমন-
১. ‘‘আল্লাহ্ মিথ্যা বলতে পারেন।’’ [ফাতাওয়া-ই রশীদিয়া, ১ম খন্ড, পৃ.-৯, কৃত মৌং রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী দেওবন্দী।]
সঠিক আক্বিদা- আল্লাহ্ তা‘আলা মিথ্যা বলা ও ওয়াদা খেলাফী করা হতে পুতঃপবিত্র, আল্লাহর শানে মিথ্যা বলতে পারা মন্তব্য করা চরম বেয়াদবী ও কুফরী।
২. ‘‘আল্লাহ্ আগে জানেন না বান্দা কি কাজ করবে। বান্দা যখন সম্পন্ন করে নেয় তখনই আল্লাহ্ তা জানতে পারেন।’’ [তাফসীর-ই বুলগাতুল হায়রান, পৃ. ১৫৭-৫৮, কৃত. মৌং হুসাইন আলী ওয়াঁভ চরান ওয়ালা দেওবন্দী]
সঠিক আক্বিদা- মহান আল্লাহ্ সবকিছু আদিকাল হতে জানেন, খবর রাখেন, আল্লাহর জ্ঞানও স্থায়ী। উপরোক্ত বক্তব্য আল্লাহ তা‘আলার শানে জঘন্যতম বেয়াদবী।
৩. ‘‘শয়তান ও মালাকুল মাওত-এর জ্ঞান হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর চেয়ে বেশী। [বারাহীনে ক্বাতি‘আহ্, পৃ.-৫১, কৃত. খলীল আহমদ আম্বেটভী দেওবন্দী]
সঠিক আক্বিদা- গোটা সৃষ্টিকুলের এমন কি নবী-ওলী ও ফেরেশতাদের জ্ঞান প্রিয় নবী রসূলে পাকের আল্লাহ্ প্রদত্ত জ্ঞানের তুলনায় সামান্যতম, উপরোক্ত মন্তব্য প্রিয় নবীর শানে জঘন্য ও মানহানিকর ও বেয়াদবী।
৪. ‘‘আল্লাহ্র নবীর নিকট নিজের পরিণতি এবং দেয়ালের পেছনের জ্ঞানও নেই। [বারাহীন-ই ক্বাতি‘আহ্, পৃ.৫১, কৃত. খলীল আহমদ আম্বেটভী দেওবন্দী]
সঠিক আকাদা- রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলায়হি ওয়াসাল্লামকে মহান সৃষ্টি জগতে যা হয়েছে যা হবে সবকিছুর জ্ঞান দান করেছেন, এটা প্রিয়নবীর প্রতি আল্লাহ্ তা‘আলার বিশেষ দয়া। মতে উপরোক্ত মন্তব্য কুফরি ও বেয়াদবী।
৫. ‘‘হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে তেমনি জ্ঞান দান করেছেন, যেমন জ্ঞান জানোয়ার, পাগল এবং শিশুদের নিকটও রয়েছে। [হিফযুল ঈমান, পৃ.৭, কৃত. মৌং আশরাফ আলী থানভী দেওবন্দী]
সঠিক আক্বিদা- রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ্ তা‘আলা নিজ দয়ায় সৃষ্টির শুরু হতে শেষ পর্যন্ত সব জ্ঞান দান করেছেন। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর জ্ঞানকে জানোয়ার, পাগল এবং শিশুদের সাথে তুলানা করা চরম বেয়াদবী ও কুফরী।
৬. নামাযে হুযুর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি শুধু খেয়াল যাওয়া গরু-গাধার খেয়ালে ডুবে যাওয়া অপেক্ষাও মন্দতর।’’ [সেরাতে মুস্তাক্বীম, পৃ.-৮৬, কৃত. মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী]
সঠিক আক্বিদা- নামায সহ সকল ইবাদত বন্দেগীতে প্রিয়নবীর স্মরণ ও অনুসরণ অপরিহার্য। রাসূলে পাকের অনুসরণ ও অনুকরণ ছাড়া কোন ইবাদত, ইবাদত হিসেবে গণ্য হয় না আর প্রিয়নবীর প্রতি খেয়াল ও স্মরণ আল্লাহর প্রতি খেয়াল ও স্মরণ হওয়ার নামান্তর। যেহেতু নবীর খেয়াল ও স্মরণ মূলত আল্লাহর খেয়াল ও স্মরণ, তাইতো হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর নামাযের মধ্যেই নবীজি নামাযে আসছেন জেনে পেছনে চলে এসেছেন। যা সহীহ্ বুখারী শরীফের নামায অধ্যায়ের হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। সুতরাং উপরোক্ত মন্তব্য প্রিয়নবীর প্রতি চরম বেয়াদবী, যা বেঈমানীর নামান্তর।
৭. রাহমাতুল্লিল আলামীন (সমস্ত বিশ্বের জন্য রহমত) রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর খাস উপাধি নয়। হুযুর আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ছাড়া অন্যান্য বুযুর্গকেও ‘রাহমাতুল্লিল আলামীন’ বলা যেতে পারে।’’ [ফাতাওয়া-ই রশীদিয়া, ২য় খন্ড, কৃত. মৌং রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী দেওবন্দী]
সঠিক আক্বিদা- রাহমাতুল্লিল আলামিন প্রিয়নবীর খাসায়েস তথা বিশেষ উপাধিসমূহের অন্তর্ভূক্ত। এ উপাধি আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদের নবী ছাড়া অন্য কোন নবী রাসূলকে প্রদান করেন নাই।
[খাসায়েসুল কুবরা, কৃত. ইমাম জালাল উদ্দীন সুয়ূতী রহ.]
৮. খাতামুন্নাবিয়্যীন অর্থ আখেরী বা শেষ নবী বুঝে নেওয়া সাধারণ লোকদের খেয়াল মাত্র। জ্ঞানী লোকদের মতে এর অর্থ বিশুদ্ধ নয়। হুযূর আকরামের যুগের পরও যদি কোন নবী পয়দা হয়, তবে হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম শেষ নবী হওয়ার ক্ষেত্রে কোন ক্ষতি হবে না।’’ [তাহযীরুন্নাস, পৃ.৩ ও ২৫, কৃত. দারুল উলূম দেওবন্দ মাদরাসার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মৌং কাসেম নানুতবী।
সঠিক আক্বিদা- খাতামুন্নবীয়্যীন অর্থ আখেরী ও সর্বশেষ নবী। এটার উপর সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, তবঈ তাবেঈন সবাই একমত। উপরোক্ত মন্তব্য জঘন্যতম কুফরি।
৯. হুযুর আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম দেওবন্দের আলেমদের সাথে সম্পর্কের সুবাদে উর্দু শিখতে পেরেছেন। [বারাহীনে ক্বাতি‘আহ্, পৃ. ২৬, কৃত. মৌং খলীল আহমদ আম্বেটভী দেওবন্দী]
সঠিক আক্বিদা- রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে সকল সৃষ্টির জ্ঞান, ভাষাগত জ্ঞান আল্লাহ্ তা‘আলা দান করেছেন, রাসূলে করীমের শিক্ষক একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা। সুতরাং উপরোক্ত মন্তব্য জঘন্যতম বেয়াদবী।
১০. নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামার প্রতি সম্মান শুধু বড় ভাইয়ের মতই করা চাই। [তাক্বভিয়াতুল ঈমান, পৃ.-৫৮, কৃত. মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী]
সঠিক আক্বিদা- নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে সকল নবী-রসূলের ইমাম, সর্বশ্রেষ্ঠ নবী, আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু ও হাবীব হিসেবে সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। উপরোক্ত মন্তব্য নবীজির প্রতি চরম মানহানি।
১১. আল্লাহ্ তাআলা ইচ্ছা করলে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সমকক্ষ কোটি কোটি পয়দা করতে পারেন। [তাক্বভিয়াতুল ঈমান, পৃ. ১৬, কৃত. মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী]
সঠিক আক্বিদা- আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে গোটা সৃষ্টিকুলে অতুলনীয়, বে-নজীর, বে-মেসাল হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। ফলে উপরোক্ত মন্তব্য চরম বেয়াদবী ও বেঈমানী।
১২. হুযুর আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুবরণ করে মাটিতে মিশে গেছেন। [তাক্ববিয়াতুল ঈমান, পৃ. ৫৯, কৃত. মৌং ইসমাঈল দেহলভী]
সঠিক আক্বিদা- আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামসহ সকল নবী-রসূল ওফাত শরীফের পর স্বীয় কবর শরীফে ও রাওজা মোবারকে সশরীরে জীবিত, তাঁদের পবিত্র দেহ মোবারককে ভক্ষণ করা জমিনের উপর হারাম। সুতরাং উপরোক্ত বক্তব্য চরম বেয়াদবী ও কোরআন-হাদীসকে অস্বীকার করার নামান্তর।
১৩. নবী-রসূল সবাই অকেজো। [তাক্বভিয়াতুল ঈমান, পৃ. ২৯, কৃত. মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী]
সঠিক আক্বিদা- নবী-রসূলগণ উম্মতের জন্য দিশারী, কা-ারী ও ঈমানদাতা ও রহমত, তাঁদের শানে অকেজো বলা চরম গোমরাহী ও বেয়াদবী।
১৪. নবী প্রতিটি মিথ্যা থেকে পবিত্র ও মা’সূম হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। [তাক্বভিয়াতুল আক্বাইদ, পৃ. ২৫, কৃত. মৌং কাসেম নানুতভী]
সঠিক আক্বিদা- নবী-রসূলগণ মিথ্যাসহ যাবতীয় গুনাহ হতে মা’সুম ও পবিত্র। উপরোক্ত কথা তাঁদের শানে চরম বেয়াদবী।
১৫. নবীর প্রশংসা শুধু মানুষের মতই কর; বরং তা অপেক্ষাও সংক্ষিপ্ত। [তাক্বভিয়াতুল ঈমান, পৃ. ৬১, কৃত. মৌং ইসমাঈল দেহলভী]
সঠিক আক্বিদা- নবীগণের প্রশংসা আল্লাহর প্রিয়নবী, প্রিয় বন্ধু, সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদায় তাঁরা আসীন হিসেবে স্থান দিতে হবে।
১৬. বড় অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আর ছোট অর্থাৎ অন্যসব বান্দা বেখবর ও অজ্ঞ। [তাক্বভিয়াতুল ঈমান, পৃ. ৩, কৃত. মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী]
সঠিক আক্বিদা- প্রিয়নবী সহ অন্যান্য নবী-রসূলগণের শানে বেখবর ও অজ্ঞ বলা কুফরি।
১৭. বড় মাখলূক অর্থাৎ নবী, আর ছোট মাখলুক অর্থাৎ অন্যসব বান্দা আল্লাহর শান বা মর্যাদার সামনে চামার অপেক্ষাও নিকৃষ্ট।’’ [তাক্বভিয়াতুল ঈমান, পৃ. ১৪, কৃত. মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী]
সঠিক আক্বিদা- আমাদের প্রিয়নবী সহ সকল নবীকে আল্লাহ্ তা‘আলা সকল সৃষ্টির মধ্যে শ্রেষ্ঠ মর্যাদাবান করেছেন। তাঁদের শানে চামার অপেক্ষাও নিকৃষ্ট বলা নিঃসন্দেহে কুফরি।
১৮. নবীকে ‘তাগূত’ (শয়তান) বলা জায়েয। [তাফসীর-ই বুলগাতুল হায়রান, পৃ. ৪৩, কৃত. মৌং হুসাইন আলী ওয়াঁভচরান ওয়ালা]
সঠিক আক্বিদা- এ ধরনের উক্তি যে করবে, সে ঈমান হতে খারিজ হয়ে যাবে, আল্লাহর নবীগণের শানে সামান্যতম কটুক্তি করলে ঈমান ধ্বংস হয়ে যাবে।
১৯. নবীর মর্যাদা উম্মতের মধ্যে গ্রামের চৌধুরী ও জমিদারের মত। [তাক্বভিয়াতুল ঈমান, পৃ. ৬১, কৃত. মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী]
সঠিক আক্বিদা- উপরোক্ত উক্তি নবীর শানে মানহানিকর, নবীগণকে সৃষ্টির সেরা হিসেবে সর্বোচ্চ মর্যাদা দেয়া উম্মতের উপর ফরয।
২০. যার নাম মুহাম্মদ কিংবা আলী তিনি কোন কিছুর ইখতিয়ার রাখেন না। নবী ও ওলী কিছুই করতে পারেন না। [তাক্বভিয়াতুল ঈমান, পৃ. ৪১, কৃত. মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী]
সঠিক আক্বিদা- এ ধরনের মন্তব্য নবী ওলীর শানে চরম বেয়াদবী অথচ নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ্ তা‘আলা উম্মতের জন্য হালাল- হারাম করার ইখতিয়ার দিয়েছেন। আর নবীর ওলীর মাধ্যমে আল্লাহ্ তা‘আলা অসংখ্য বান্দাকে সৎপথে হেদায়ত দান করেছেন।
২১. উম্মত বাহ্যিকভাবে আমলের মধ্যে নবী থেকেও বেড়ে যায়। [তাহযীরুন্নাস, পৃ. ৫, কৃত. মৌং কাসেম নানুতভী।
সঠিক আক্বিদা- এ ধরনের মন্তব্য হলো ইবলিশ শয়তানের, প্রকৃত ঈমানদারের নয় বরং সাধারণ উম্মততো দূরের কথা, কোন ওলী, গাউস, আবদাল, শহীদ ও কোন নবীর মযার্দায় পৌছা কখনো সম্ভবপর নয়।
২২. দেওবন্দী মোল্লা হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে পুলসেরাত হতে পতিত হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন। [তাফসীর-ই বুলগাতুল হায়রান, পৃ. ৮, মৌং হুসাইন আলী]
সঠিক আক্বিদা- আমাদের নবীসহ অন্যান্য নবী-রসূলগণ ক্বিয়ামতের ময়দানে আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করে আযাব-গযব হতে পাপি-তাপি উম্মতকে রক্ষা করবেন। উপরোক্ত বক্তব্য চরম বেয়াদবী।
২৩. লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ আশরাফ আলী রসূলুল্লাহ্ আর আল্লাহুম্মা সল্লি আলা সায়্যিদিনা ওয়া নবীয়্যিনা আশরাফ আলী’ বলার মধ্যে সান্ত¦না রয়েছে, কোন ক্ষতি নেই। [রিসালা-ই ইমদাদ, পৃ. ৩৫, সফর-১৩৩৬হিজরী সংখ্যা]
সঠিক আক্বিদা- উপরোক্ত বাক্য কুফরি কালাম।
২৪. মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম উদযাপন করা তেমনি, যেমন হিন্দুরা তাদের কানাইয়্যার জন্মদিন পালন করে। [বারাহীন-ই ক্বাতি‘আহ্, পৃ. ১৪৮, ফাতাওয়া-ই মীলাদশরীফ, পৃ.-৮]
সঠিক আক্বিদা- মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম দুরুদ সালাম, কোরআন খানি, যিকর আযকার, তাবাররুক বিতরণ ও দোয়া মোনাজাতের মাধ্যমে উদযাপন করা পূণ্যময়, নেক আমল, মুস্তাহাব ও সাওয়াবজনক। সুতরাং উপরোক্ত বক্তব্য চরম গোমরাহী ও দেয়াদবী।
২৫. রসূল চাইলে কিছুই হয় না। [তাক্বভিয়াতুল ঈমান, পৃ. ৫৬, কৃত. মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী]
সঠিক আক্বিদা- রাসূল চাইলে আল্লাহ্ প্রদত্ত ক্ষমতা বলে অনেক কিছু হয় ও হয়েছে। যেমন- প্রিয়নবীর ইশারায় চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হয়েছে, ডুবন্ত সূর্য পুনঃউদিত হয়েছে। সুতরাং উক্ত কথা চরম বেয়াদবী ও বেঈমানের লক্ষণ।
২৬. আল্লাহর সামনে সমস্ত নবী ও ওলী একটা নাপাক ফোটা অপেক্ষাও নগণ্য।’ [তাক্বভিয়াতুল ঈমান, পৃ. ৫৬, কৃত. মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী]
সঠিক আক্বিদা- আল্লাহর দরবারে নবী-ওলীর মর্যাদা হলো সকল সৃষ্টির উপরে সুতরাং উপরোক্ত বাক্য তাঁদের শানে বলা চরম বেয়াদবী।
২৭. নবীকে নিজের ভাই বলা দুরস্ত। [বারাহীন-ই ক্বাতি‘আহ্, পৃ. ৩, কৃত. মৌং খলীল আহমদ আম্বেটভী]
সঠিক আক্বিদা- নবীগণের শানে ভাই ও সাধারণ শব্দ ব্যবহার করা মানহানিকর ও কুফরি বাক্য বরং প্রিয়নবীকে সম্বোধন করতে হবে ইয়া নাবিয়াল্লাহ্, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ বলে, অতি সম্মানে সাথে। এটাই পবিত্র কুরআনের শিক্ষা।
২৮. নবী ও ওলীকে আল্লাহর সৃষ্টি ও বান্দা জেনে উকিল এবং সুপারিশকারী মনে করে তাঁদেরকে সাহায্যের জন্য আহ্বানকারী ও নযর-নিয়াযকারী মুসলমান আর কাফির আবূ জাহেল-শির্কের মধ্যে সমান।’ [তাক্বভিয়াতুল ঈমান, পৃ.-৭-২৭, কৃত. মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী]
সঠিক আক্বিদা- নবী-ওলী অবশ্যই গুনাহ্গার উম্মতের জন্য আল্লাহর নিকট উকিল ও সুপারিশকারী। সুতরাং তাঁদের থেকে সাহায্য চাওয়া তাবরানী শরীফের বর্ণিত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। এটাকে শিরক বলা হাদীস শরীফকে অস্বীকার করা যা অবশ্যই গোমরাহী।
২৯. দরুদ-ই তাজ অপছন্দনীয় এবং পাঠ করা নিষেধ। [ফাযাইলে দরুদ শরীফ, পৃ. ৯২, ফাযাইলে আমাল তথা তাবলীগী নেসাব থেকে]
সঠিক আক্বিদা- দরুদে তাজ প্রকৃত ঈমানদার ও বুযুর্গানে দ্বীনের নিকট অনেক পছন্দনীয় আমল এবং তা পাঠ করা সাওয়াব।
৩০. মিলাদ শরীফ, মি’রাজ শরীফ, ওরস শরীফ, খতম শরীফ, চেহলামের ফাতিহাখানি এবং ঈসালে সাওয়াব সবই নাজায়েয, ভুল প্রথা, বিদআত এবং কাফির ও হিন্দুদের প্রথা। [ফাতাওয়া-ই রশীদিয়া, ২য় খন্ড, পৃ.১৫০, ৩য় খন্ড, পৃ. ৯৩-৯৪, কৃত প্রাগুক্ত]
সঠিক আক্বিদা- মিলাদ শরীফ, মি’রাজ শরীফ, ওরস শরীফ, খতম শরীফ, চেহলামের ফাতিহাখানি এবং ঈসালে সাওয়াব সবই জায়েয, ঈসালে সাওয়াব উপলক্ষে মাহফিল আয়োজন উত্তম প্রথা ও সুন্নাতে হাসানাহ্। কুরআন-সুন্নাহ সম্মত নেক আমল ও মুস্তাহাব। এগুলোকে নাজায়েয, ভুল প্রথা, বিদআত ও কাফির-হিন্দুদের প্রথা বলা মুর্খতা ও কুরআন-হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞতার পরিচয়। এ সব ভ্রান্ত আক্বিদার খন্ডন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের বিভিন্ন প্রামাণ্য পুস্তকে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। [জাআল হক, কৃত. মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী, ফতোয়ায়ে রেজভিয়া, কৃত. ইমাম আহমদ রেযা রহ. ও আমার রচিত যুগজিজ্ঞাসা]
মুহাম্মদ তৈয়ব আলী
বরলিয়া, পটিয়া, চট্টগ্রাম
প্রশ্ন: অনেক সময় আমরা বিভিন্ন জায়গায় যাই হঠাৎ মসজিদে জামাতে নামায আদায় করতে হয়; কিন্তু দেখা যায় ঐ ইমাম আকিদার দিক দিয়ে সমস্যা আছে এখন এর পিছনে নামায পড়া নিয়ে জানালে খুশি হব।
উত্তর: বদ/বাতিল আক্বিদাপন্থী তথা কাদিয়ানী, আহলে হাদীস, খারেজী, রাফেজী, শিয়া, মওদুদী ও ওহাবীসহ সকল ভ্রান্ত মতবাদী বা ব্যক্তির পেছনে নামায পড়া ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে মাকরূহে তাহরীমা, তথা গুনাহ্। অজ্ঞতা বা অজান্তে বাতিল আক্বিদায় বিশ্বাসীর পেছনে ইক্বতিদা করে থাকলে, তাদের ব্যাপারে জানার পর ওই নামায পুনরায় আদায় করে দেয়া ওয়াজিব। কেননা তারা তাদের বই-পুস্তক, লিখনীতে ও বক্তব্যে প্রিয়নবীসহ সম্মানিত নবী-রসূল, সাহাবায়ে কেরাম ও আউলিয়া-ই কেরামের শানে চরম বেয়াদবীমূলক, কটুক্তি করেছে, যা দ্বারা একজন মুসলমান ঈমান হারা হয়ে কাফিরে পরিণত হয়। সুতরাং তাদের পেছনে ইক্বতিদাকৃত নামায শুদ্ধ হবে না। এ প্রসঙ্গে প্রিয়নবী এরশাদ করেছেন- ولا تصلوا معهم (رواه المسلم) অর্থাৎ তোমরা তাদের সাথে নামায পড়োনা। [সহীহ্ মুসলিম]
বিশ্ববিখ্যাত ফিক্বহ্গ্রন্থ ‘গুনিয়াহ্’ তে উল্লেখ আছে- يكره تقديم المبتدع لانه فلسق من حيث الاعتقاد وهو اشد من الفسق من حيث العمل والمراد بالمبتدع من يعتقد شيئا على خلاف ما يعتقده اهل السنة অর্থাৎ বিদআতী (যার আক্বীদাহ্ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত পরিপন্থি) তাকে (এমন ব্যক্তিকে) ইমাম বানানো মাকরূহে তাহরীমাহ তথা হারাম। কেননা আকীদাগত ফাসিক আমলগত ফাসিক্বের চেয়ে মারাত্মক অপরাধী। (গুনিয়া) সুতরাং তাদের পেছনে নামায পড়া থেকে বিরত থাকবে এবং প্রয়োজনে অন্য কোন সুযোগ না হলে একাকী পড়ে নিবে। আর যদি তাদের পিছনে নামায না পড়লে ফিতনার আশঙ্কা হয়, তখন বিশেষ প্রয়োজনে ফিতনা হতে বাচার জন্য পড়ে নিবে তবে তা পুনরায় আদায় করবে। [ফাতহুল ক্বদীর, গুনিয়া, ফতোয়ায়ে রেজভিয়া ও আমার রচিত যুগ জিজ্ঞাসা ইত্যাদি]
মুহাম্মদ সোলায়মান চৌধুরী জিসাত
ছাত্র, শাহচান্দ আউলিয়া কামিল মাদরাসা,
পটিয়া, চট্টগ্রাম
প্রশ্ন: বর্তমান মুসলিম সমাজের মধ্যে স্ত্রীর মোহরানা নামে পুরুষদের হতে লক্ষ লক্ষ ও কোটি কোটি টাকা আদায় করতে হয়, এটা কতটুকু শরিয়ত সম্মত, কুরআন-হাদীসের আলোকে আলোচনা করার নিবেদন রইল।
উত্তর: একজন মুসলমানের বিয়েতে আল্লাহ্ তা‘আলা কর্তৃক নির্দেশিত অপরিহার্য প্রদেয় স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রী যে অর্থ সম্পদ পেয়ে থাকে তাকেই দেনমোহর বলে। বিয়ের সময় স্ত্রীকে দেনমোহর প্রদান করা স্বামীর উপর ফরজ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন-
وَ اٰتُوا النِّسَآءَ صَدُقٰتِهِنَّ نِحْلَةًؕ-فَاِنْ طِبْنَ لَكُمْ عَنْ شَیْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا فَكُلُوْهُ هَنِیْٓــٴًـا مَّرِیْٓــٴًـا(৪(
“আর তোমাদের স্ত্রীদের তাদের দেনমোহর দিয়ে দাও খুশি মনে। অবশ্য স্ত্রী চাইলে দেনমোহরের কিছু অংশ (কিংবা সম্পূর্ণ অংশ) ছেড়ে দিতে পরে। তা তোমরা (স্বামীরা) খুশী মনে তৃপ্তিসহকারে আহার করতে পার।
[সুরা আন-নিসা, আয়াত নং-৪]
তবে এ ব্যপারে স্ত্রীর উপর কোন প্রকারের চাপ প্রযোগ করা যাবে না। সাধারণভাবে দেনমোহর কম/অল্প (স্বামীর সামর্থ অনুযায়ী) ধার্য করাই মুস্তাহাব।
রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন – সে নারী বরকতের মাঝে আছে যাকে প্রস্তাব দেয়া সহজ ও যার দেনমোহর অল্প”
[মুসনাদু আহমাদ, হাসান সনদে।]
এছাড়া কুরআনের অপর আয়াত দেনমোহরের অধিকার প্রসঙ্গে বলা হয়েছে-
یٰۤاَیُّهَا النَّبِیُّ اِنَّاۤ اَحْلَلْنَا لَكَ اَزْوَاجَكَ الّٰتِیْۤ اٰتَیْتَ اُجُوْرَهُنَّ
হে নবী! আমি আপনার জন্য বৈধ করেছি আপনার স্ত্রীদের, যাদের দেনমোহর আপনি প্রদান করেছেন।
[সুরা আল- আহযাব আয়াত-৫০]
দেনমোহরের বিষয়টি নিয়ে লোক দেখানো ‘অধিক দেনমোহর’ ধার্য করাতে কোন বরকত নেই। বরং তা অহংকারের পরিচায়ক। বরকতপূর্ণ বিবাহের বর্ণনা দিতে গিয়ে উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা বলেন প্রিয়নবী রাসূলুল্লাহ্ সালাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন- ان اعظم النكاح بركة ايسره مؤونة সবচেয়ে বরকতময় বিয়ে হচ্ছে যে বিয়েতে কষ্ট এবং চাপাচাপি নেই। যে বিয়েতি খরচ কম হয়। [মিশকাত শরিফ]
দেনমোহরের পরিমাণ কী হওয়া উচিত ইসলামী শারীআতে এ সম্পর্কে বিশেষভাবে কোন নির্দেশ দেয়া হয়নি, কোন সুস্পষ্ট পরিমাণ ঠিক করে দেয়া হয়নি। তবে এ কথা স্পষ্ট যে, প্রত্যেক স্বামীরই কর্তব্য হচ্ছে তার আর্থিক সামর্থ্য ও স্ত্রীর মর্যাদার প্রতি লক্ষ্য রেখে উভয় পক্ষের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোন পরিমাণ নির্দিষ্ট করে বেঁধে দেয়া। আর মেয়ে পক্ষেরও তাতে সহজেই রাজী হয়ে যাওয়া উচিত। দেনমোহর যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তা বুখারীর হাদীসই প্রমাণ বহন করে। যেমন- হযরত সাহল ইবনে সাদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন, “আমি অন্যান্য লোকের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে উপবিষ্ট ছিলাম”। তখন এক মহিলা দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আমি নিজেকে আপনার জন্য হেবা করলাম, আপনি আমাকে গ্রহণ করুন। কিন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুই বললেন না। মহিলাটি এরূপ তিনবার বলল, কিন্তু তিনবারই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছুপ থাকলেন। তখন এক সাহাবী দাঁড়িয়ে বললেন আপনি যদি গ্রহন না করেন তাহলে এই মহিলার সাথে আমার বিয়ে দিয়ে দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন- তোমার নিকট কি মহিলাকে দেনমোহর দেওয়ার মত কিছু আছে? তিনি বললেন, না। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন “তোমার বাড়ি থেকে খোঁজ করে একটি লোহার আংটি হলেও নিয়ে আসো। কিন্তু তিনি তাও আনতে পারেনি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- তোমার কি কোরআনের কিছু মুখস্ত আছে? তখন তিনি বললেন আমার এ এ সূরা মুখস্থ আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন- মহিলাকে এ সূরাগুলো শিখিয়ে দিও, সেটার কারণে তোমার বিয়েতে উক্ত মহিলাকে দেয়া হল। উপরোক্ত হাদীসটি দ্বারা পরিষ্কার বুঝা যায় যে মহিলাকে দেনমোহর দান করা অত্যাবশ্যক! দেনমোহর একজন স্ত্রীর বা নারীর হক যদি কোনো ব্যক্তি দেনমোহর অনাদায়ের ইচ্ছা নিয়ে বিয়ে করে তাহলে সে ব্যভিচায়ী হবে। সে বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যা মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- “যে ব্যক্তি কোনো মেয়েকে দেনমোহর দেওয়ার ওয়াদায় বিয়ে করেছে, কিন্ত দেনমোহর দেওয়ার ইচ্ছে নেই, সে ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট ব্যভিচারী হিসেবে দাঁড়াতে বাধ্য হবে।’’ [মুসনাদে আহমদ]
আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেছেন-
وَّ الْمُحْصَنٰتُ مِنَ النِّسَآءِ اِلَّا مَا مَلَكَتْ اَیْمَانُكُمْۚ-كِتٰبَ اللّٰهِ عَلَیْكُمْۚ-وَ اُحِلَّ لَكُمْ مَّا وَرَآءَ ذٰلِكُمْ اَنْ تَبْتَغُوْا بِاَمْوَالِكُمْ مُّحْصِنِیْنَ غَیْرَ مُسٰفِحِیْنَؕ-فَمَا اسْتَمْتَعْتُمْ بِهٖ مِنْهُنَّ فَاٰتُوْهُنَّ اُجُوْرَهُنَّ فَرِیْضَةًؕ-وَ لَا جُنَاحَ عَلَیْكُمْ فِیْمَا تَرٰضَیْتُمْ بِهٖ مِنْۢ بَعْدِ الْفَرِیْضَةِؕ-اِنَّ اللّٰهَ كَانَ عَلِیْمًا حَكِیْمًا(২৪(
অর্থাৎ এবং নারীদের মধ্যে সধবা তথা বিবাহিতা নারীকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তবে তোমাদের দাসীদেরকে বিবাহ্ ছাড়া ভোগ করতে পারবে। (তারা হালাল) এটা তোমাদের উপর আল্লাহর বিধান। এ ছাড়া বাকিরা তোমাদের জন্য হালাল, অর্থের বিনিময়ে তাদেরকে তলব করবে বিবাহ্ বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য, অবৈধ যৌনাচারে লিপ্ত হওয়ার জন্য নয়। সুতরাং তাদের মধ্যে তোমরা যাদেরকে বিয়ের মাধ্যমে ভোগ করেছ তাদেরকে তাদের নির্ধারিত মোহর দিয়ে দাও। আর নির্ধারণের পর যে ব্যাপারে তোমরা পরস্পর সম্মত হবে তাতে তোমাদের উপর কোন অপরাধ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ্ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।’’ [সূরা নিসা, আয়াত-২৪]
এই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়, দেনমোহর হতে হবে বিক্রয়যোগ্য বস্তু সম্পদ। ইসলামী শরীয়তে দেনমোহরের সর্বোচ্চ কোনো পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়নি। তবে হানাফি মাযহাবের মতে ন্যূনতম পরিমাণ হলো ১০ দিরহাম। অর্থাৎ ৩০.৬১৮ গ্রাম রূপা অথবা এর সমপরিমাণ মূল্য। এর চেয়ে কম পরিমাণ মোহর নির্ধারণ করা স্ত্রী রাজি হলেও তা শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ হবে না। এ প্রসঙ্গে হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে-لا مهر اقل من عشرة دراهم অর্থাৎ ১০ দিরহামের কম কোনো মোহর নেই। (বায়হাকি শরীফ, ৭/২৪০) কিন্তু এর বেশীতে দেনমোহর নির্ধারণ করা যাবে। তবে স্বামী যেহেতু দেনমোহর পরিশোধ করতে বাধ্য-তাই তার পরিশোধের সামর্থ্য বিবেচনা করে তা নির্ধারণ করা উচিৎ। এমন কোনো সিদ্ধান্ত তার ওপর চাপিয়ে দেয়া আদৌ উচিৎ হবে না, যাতে সে তা পরিশোধ করতে না পেরে গুনাহ্গার হয়। দেনমোহরের জন্য আমাদের সমাজে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত পরিমাণ হল মোহরে ফাতেমি। মোহরে ফাতেমি বলা হয় ঐ পরিমাণ মোহর নির্ধারণ করা, যা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর মেয়ে হযরত ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। হযরত ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহার মোহর ৫০০ দিরহাম নির্ধারণ করা হয়েছিল, যা ১৫৩০.৯ গ্রাম রূপার সমতুল্য। [জাওয়াহিরুল ফাতাওয়া, ৪/৩৫০]
হযরত ওমর ফারুকে আযম রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর খেলাফতকালে যখন মুসলমানদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসে, তখন সাহাবায়ে কেরাম তাদের সন্তানদের বিয়েতে মোহরে ফাতেমির চেয়ে অনেক গুণ বেশি দেনমোহর নির্ধারণ করতে শুরু করেন। হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু দেনমোহরের ক্রমবৃদ্ধির গতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিলেন। তিনি এত বেশি পরিমাণ দেনমোহরের পক্ষে ছিলেন না। কিন্তু সূরা নিসার ৪ নম্বর আয়াত এর আলোকে তা করেননি। সূরা নিসা ৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন এরশাদ করেছেন-واتوا النساء صدقاتهن نخلة অর্থাৎ তোমাদের স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশি মনে। [সূরা নিসা, আয়াত-৪]
এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় দেনমোহর অনেক বেশিও হতে পারে। তাই কোনো প্রকার বিচার-বিবেচনা ছাড়া ঢালাওভাবে সবার জন্য মোহরে ফাতেমি নির্ধারণ করলে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে, যা ইসলাম আদৌ পছন্দ করে না। আবার মোহরে ফাতেমির চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ দেনমোহর পরিশোধের সামর্থ্য যদি স্বামীর থাকে তবে সেক্ষেত্রে মোহরে ফাতেমিকে দেনমোহর নির্ধারণ করা দ্বারা স্ত্রীকে ঠকানো হয় ও নারীত্বের অবমাননা করা হয়। তাই মোহরে ফাতেমিকে নয় বরং স্বামীর সামর্থ্যকে বিচার করা উচিৎ। অন্যসব অধিকারের মতো স্বামীর কাছে দেনমোহর দাবি করা স্ত্রীর জন্য দোষের কিছু নয়। অনেকেই মনে করেন, দেনমোহরের টাকা স্ত্রীকে দিতে হয় শুধু বিবাহ্ বিচ্ছেদ ঘটলে। এটা অজ্ঞতা ও চরম ভুল ধারণা। বিয়ে বিচ্ছেদ না হলেও দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করা ফরজ। অতএব এর যাবতীয় দিক শরীয়ত অনুযায়ী ও পরিস্কারভাবে হওয়া উচিত এবং সে হিসেবেই তা পরিশোধের চিন্তা-ভাবনা করা উচিৎ। দেনমোহর স্ত্রীর হক যা অবশ্যই স্বামীকে প্রদান করতে হবে এবং খুশি মনে প্রদান করতে হবে। এটা স্ত্রীর প্রতি কোন দয়া বা দান নয় বরং স্ত্রীর পাওনা। আর স্ত্রী ইচ্ছা করলে মোহর মাফও করতে পারে এবং স্বামীর প্রতি কৃপা দৃষ্টি দিয়ে মোহর কমিয়ে দিতে পারে। তবে জোর করে নয়।
সুতরাং সবসময় সুন্নতের দোহায় দিয়ে ফকিরি হালত দেখানো ঠিক নয়। নারীদের যথাযথ মর্যাদা ও গুরুত্ব প্রতিষ্ঠা করাই ইসলামের শিক্ষা-এটি আমাদের বুঝতে হবে। বিয়ে পবিত্র বন্ধন। প্রজন্ম তথা আল্লাহর বান্দা ও প্রিয়নবীর উম্মত বৃদ্ধির/সৃষ্টির চিরায়ত প্রক্রিয়া, সৃষ্টি সুখের উল্লাস, নৈতিক সম্পর্কে যোগসূত্র, অনন্তকালে নিজের জীবনের ঠিকানা গড়ে নেয়া আর চরিত্র হিজাফতের উত্তম প্রতিষেধক হল বিবাহ্। তাই ন্যূনতম অর্থ ও স্বাস্থ্য থাকলে বিয়ে ছাড়া শান্তির অন্য কোনো পথ নেই। এ শান্তির সমাজ সৃষ্টির জন্য আমাদের উচিত দেনমোহরের বেলায় কড়াকড়ি আরোপ না করে বিয়ের সামগ্রিক পরিবেশকে সহজ ও প্রাণবন্ত করে তোলা। এটাই কোরআন-হাদিস ও ইসলামী শরিয়তের ফায়সালা। [তাফসিরে খাজায়েনুল ইরফান, কৃত. সদরুল আফাযিল আল্লামা সৈয়্যদ নঈমুদ্দিন মোরাদাবাদী রহ. ও তাফসিরে নুরুল ইরফান, কৃত. হাকিমুল উম্মত আল্লামা মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী রহ. সূরা নেসার তাফসির দ্র.]
প্রশ্ন: কোনো মুসলিম ভাই দূর পাল্লার গাড়ীতে উঠে তার যদি এক/দুই ওয়াক্ত নামায গাড়ি না থামার কারণে ছুটে যায়। তাহলে সে উক্ত নামায কিভাবে আদায় করবে? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
উত্তর: দৈনিক পাঁচ (৫) ওয়াক্ত নামাযের মধ্যে কাযা নামাযের সংখ্যা যদি পাঁচ বা তদপেক্ষা কম হয়, তবে কাযা নামাযসমূহ আদায়ের সময় তারতিব বা ধারাবাহিকতা রক্ষা করা ওয়াজিব। অর্থাৎ প্রথমে ফজর, তারপর জোহর, তারপর আসর, তারপর মাগরিব, তারপর এশা ও বিতর পড়বে। যেমন- কারো যোহর ও আসর দুই ওয়াক্ত নামায কাযা হয়েছে। তখন সে প্রথমে যোহর, তারপর আসর, এরপর মাগরিব পড়বে। সময় সংকীর্ণ না হলে পাঁচ ওয়াক্ত বা তার কমে কাজা হলে ওয়াক্তিয়া নামায আদায়ের পূর্বেই ক্বাযা আদায় করবে। শুধু ফরজ ও ওয়াজিব নামাযেরই কাযা কৃত নামায আদায় করবে। সুন্নাত ও নফলের কাযা নেই। আর যদি ফজরের নামায কাযা হয়ে যায় আর ওই দিন দ্বিপ্রহরের পূর্বে কাযা আদায় করা হয় তবে ফরযের সাথে সুন্নাতেরও কাযা আদায় করবে। ফজরের সুন্নাত ছাড়া আর অন্য কোন সুন্নাতের কাযা নেই। [রদ্দুল মুহতার]
অবশ্য ফজরের ফরয নামায দ্বিপ্রহরের পর কাজা করলে শুধুমাত্র ফরজের কাযা করবে। তখন সুন্নাত কাযা করতে হবে না।
দু’টির বেশি প্রশ্ন গৃহীত হবেনা একটি কাগজের পূর্ণপৃষ্ঠায় প্রশ্ন লিখে নিচে প্রশ্নকারীর নাম, ঠিকানা লিখতে হবে
প্রশ্নের উত্তর প্রকাশের জন্য উত্তরদাতার সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ বাঞ্ছনীয় নয়। প্রশ্ন পাঠানোর ঠিকানা:
প্রশ্নোত্তর বিভাগ, মাসিক তরজুমান, ৩২১, দিদার মার্কেট (৩য় তলা), দেওয়ান বাজার, চট্টগ্রাম-৪০০০।