Anjuman-E Rahmania Ahmadia Sunnia Trust

পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের অনন্য পুরস্কার

পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের অনন্য পুরস্কার

মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ্ আল-মাসুম

আল্লাহ তাআলা এবং তাঁর বান্দার মধ্যে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হলো নামায। যা ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের অন্যতম প্রধান রুকন। দিবা-রাত্রি পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা সুস্থ বিবেকবান প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিম নর-নারীর উপর ফরয। হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, (হে হাবিব!) আমি আপনার উম্মতের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছি এবং এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছি যে, যে ব্যক্তি সময়মত যত্নসহকারে তা আদায় করবে আমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবো। আর যে এর ব্যতিক্রম করবে তার ব্যাপারে আমার কোনো প্রতিশ্রুতি নেই। এ প্রসঙ্গে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি সুন্দর করে ওযু করবে এবং সময় মত তা (পাঁচ ওয়াক্ত নামায) আদায় করবে, পূর্ণরূপে রুকু (-সিজদা) খুশু খুযু সহকারে করবে, তিনি তাকে অবশ্যই ক্ষমা করবেন। পক্ষান্তরে যে এর বিপরীত করবে আল্লাহ চাইলে তাকে ক্ষমাও করতে পারেন নতুবা শাস্তিও দিতে পারেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামায সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ হলেও কুরআন-সুন্নাহতে প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাযের পৃথকভাবে গুরুত্ব ও ফজিলত বিবৃত রয়েছে। আলোচ্য নিবন্ধে এ প্রসঙ্গে আলোকপাত করার প্রয়াস পেলাম।

ফজরের নামাযের ফজিলত
ফজরের সময় সুবহে সাদিক তথা প্রভাতের আলো বিচ্ছুরিত হওয়া থেকে শুরু করে সূর্য উদিত হওয়ার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত। আর ফজরের নামায বাকি চার ওয়াক্তের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নে এ নামায পড়ার ৮ টি পুরস্কার তুলে ধরা হল-
১. আল্লাহর নিরাপত্তা: প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ফজরের নামায আদায় করল সে মহান আল্লাহর জিম্মায় (রক্ষণাবেক্ষণের) অন্তর্ভুক্ত হলো…।
২. উত্তম দিনযাপন: রাসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের কেউ ঘুমিয়ে পড়লে, শয়তান তার ঘাড়ের পেছনে তিনটি গিঁট দেয়। প্রতি গিঁটে সে এই কথা বলে, তোমার সামনে দীর্ঘ রাত অপেক্ষা করছে; অতএব তুমি শুয়ে থাকো। অতঃপর সে যদি জাগ্রত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে একটি গিঁট খুলে যায়। অজু করলে আরেকটি গিঁট খুলে যায়। অতঃপর নামায আদায় করলে আরেকটি গিঁট খুলে যায়। তখন তার সকাল হয় উৎফুল্ল চিত্তে ও প্রফুল্ল মনে। নতুবা সে সকালে কলুষিত ও আলস্য নিয়ে ওঠে।’
৩. পূর্ণরাত ইবাদতের সওয়াব: হুযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ফজরের নামায জামাতের সঙ্গে আদায় করল, সে যেন সারা রাত জেগে নামায আদায় করল।’
৪. মুনাফিকির তালিকা থেকে মুক্তি : নূরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘মুনাফিকদের জন্য ফজর ও ইশার নামাযের চেয়ে অধিক ভারী কোনো নামায নেই। এ দুই নামাযের ফজিলত যদি তারা জানত, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও মসজিদে উপস্থিত হতো।’
৫. জাহান্নাম থেকে মুক্তি: রাসূলে আকরম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘এমন কোন ব্যক্তি জাহান্নামে যাবে না, যে সূর্যোদয়ের ও সূর্যাস্তের আগের নামায (ফজর ও আসরের নামায) আদায় করে।’
৬. পূর্ণ নুরের সুসংবাদ: রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের অন্ধকারে মসজিদগুলোতে যাতায়াতকারীদের জন্য কিয়ামতের দিনের পরিপূর্ণ নুরের সুসংবাদ প্রদান করেছেন।
৭. ফেরেশতাদের সাক্ষাৎ: প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,‘ফেরেশতারা পালাবদল করে তোমাদের মাঝে আসেন; একদল দিনে আসে, আরেক দল আসে রাতে। আসর ও ফজরের নামাযে উভয় দল একত্রিত হন। অতঃপর তোমাদের মাঝে রাত যাপনকারী দলটি আসমানে চলে যান। তখন আল্লাহ তাআলা তাদের জিজ্ঞেস করেন, আমার বান্দাদের কোন অবস্থায় রেখে এলে? অথচ তিনি তাদের ব্যাপারে সর্বাধিক অবগত। জবাবে তাঁরা বলেন, আমরা তাদের নামাযে রেখে এসেছি। আর আমরা যখন তাদের কাছে গিয়েছিলাম, তখনো তারা নামাযরত ছিলেন।’
৮. আল্লাহর সাক্ষাৎ : হযরত জাবের বিন আবদুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেন, ‘একবার আমরা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার কাছে উপস্থিত ছিলাম। তিনি রাতে (পূর্ণিমার) চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন, ওই চাঁদকে তোমরা যেমন দেখছ, ঠিক তেমনি অচিরেই তোমাদের প্রতিপালককে তোমরা দেখতে পাবে। তাঁকে দেখতে তোমরা কোনো ভিড়ের সম্মুখীন হবে না। কাজেই সূর্যোদয়ের আগের ও সূর্যাস্তের আগের নামায আদায় করতে পারলে তোমরা তা-ই করবে।’ নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো ইরশাদ করেন, ফজরের দু’রাকাআ’ত সুন্নাত সমস্ত দুনিয়া ও উহার মধ্যবর্তী সকল নিয়ামত হতে উত্তম।
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ: ফজরের সময় নামায আদায় করলে সারারাত ঘুমের পর হালকা অনুশীলন হয়। এ সময় পাকস্থলী খালি থাকে তাই কঠিন অনুশীলন শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এ সময়ে নামায আদায় করলে নামাযী অবসাদগ্রস্থতা ও অচলতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। মস্তিস্কে রক্ত চলাচল বেড়ে পুনরায় চিন্তা করার জন্য প্রস্তুত হয়। এ সময়ে দেহ পরিষ্কার, দাঁত পরিষ্কার, অঙ্গ ধোয়া ও পেশাব- পায়খানা থেকে পবিত্রতা অর্জন করা হয়। এতে জীবাণুর আক্রমণ থেকে বাঁচা যায়। তেমনি নামাযীরা হেঁটে হেঁটে মসজিদে যাওয়ার ফলে হালকা ব্যায়াম হয়ে থাকে তা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, অন্ত্ররোগ ও আলসার থেকেও বাঁচা যায়।

যোহরের নামাযের ফজিলত
যোহরের নামায হলো পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে। মধ্য দুপুরে সূর্য যখন মধ্য আকাশ থেকে একটু পশ্চিম দিকে হেলে যায় তখন যোহরের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং যেকোনো জিনিসের মূল ছায়া ব্যতীত তার ছায়া দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত যোহরের ওয়াক্ত থাকে। এটি অনেক ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। এমনকি হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালামের ইমামতিতে রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম যে নামায আদায় করেছেন, তা হলো যোহরের নামায। অর্থাৎ মেরাজ থেকে ফিরে প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম যোহরের নামায আদায় করেছেন। ফরজ নামাযের আগে-পরের সুন্নত নামাযগুলো আদায় করাকে হাদিস শরিফে জান্নাতে যাওয়ার মাধ্যম বলা হয়েছে। রাসূলে আকরম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি যোহরের ফরজের আগের চার রাকাত ও পরের দুই রাকাত সুন্নত আদায় করে আল্লাহ তায়ালা তার ওপর জাহান্নামের আগুন হারাম করে দেবেন।’
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ: মানুষ জীবিকার জন্য সকাল থেকেই বিভিন্ন কাজ করে থাকেন। এতে ধুলা-বালি, বিষাক্ত ক্যামিকেল দেহে লেগে শরীরে জীবাণু আক্রমণ করে। এছাড়া সূর্য ঢলে পড়ার সময় গরমের কারণে বিষাক্ত গ্যাস বের হয়ে মানবদেহে প্রভাব ফেলে বিভিন্ন রোগও হতে পারে। তাই যোহরের সময় ওযু করলে অনেক জীবাণু দূর হয় এবং ক্লান্তি দূর হয়ে দেহ তরতাজা হয়। নামায আদায়ের ফলে এ গ্যাস শরীরে প্রভাব ফেলতে পারে না, ফলে দেহ বিভিন্ন রোগ থেকে বেঁচে যায়।

আসরের নামাযের ফজিলত
পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাযের তৃতীয় হচ্ছে আসর। সূর্য হেলে পড়লে এবং তেজস্ক্রিয়তা কমে গেলে (যোহরের ওয়াক্ত শেষ হলে) এই নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয়ে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকে। রহমাতুল্লিল আলামীন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যদি কোনো ব্যক্তির আসরের নামায ছুটে যায়, তা হলে যেন তার পরিবার-পরিজন ও মাল-সম্পদ সবকিছুই ধ্বংস হয়ে গেল। অন্যত্র ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আসরের নামায ছেড়ে দেয় তার আমল বিনষ্ট হয়ে যায়। তিনি আরো বলেন, তোমাদের কেউ যদি সূর্য অস্ত যাওয়ার আগে আসরের নামাযের এক সিজদা পায়, তা হলে সে যেন নামায পূর্ণ করে নেয়। আর যদি সূর্য উদিত হওয়ার আগে ফজরের নামাযের এক সিজদা পায়, তা হলে সে যেন নামায পূর্ণ করে নেয়। হযরত ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আসরের (ফরযের) পূর্বে চার রাকাআত সুন্নাত পড়ে আল্লাহ্ তার প্রতি দয়া করেন।

বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ: পৃথিবী বৃত্তীয় ও লম্ব দুই ধরনের গতিতে চলে। যখন সূর্য ঢলতে থাকে তখন পৃথিবীর ঘূর্ণন কমতে থাকে। এমনকি আসরের সময় একেবারেই কমে যায়। এ সময় রাতের অনুভূতি প্রবল হতে থাকে ও প্রকৃতির মধ্যে স্থবিরতা এবং অবসাদগ্রস্থতা প্রদর্শিত হতে থাকে। আসরের নামাযের সময় অবচেতন অনুভূতির শুরু হয়। এ সময় নামায আদায় করলে অতিরিক্ত অবসাদগ্রস্থতা, অবচেতন অনুভূতি, মানসিক চাপ ও অস্থিরতা কমে যায়। সুর্যের রশ্মি নামাযীকে প্রশান্তি দান করে।

মাগরিবের নামাযের ফজিলত
সূর্য পুরোপুরি ডুবে যাওয়ার পর পশ্চিম আকাশে দিগন্ত লালিমা অদৃশ্য হওয়া পর্যন্ত মাগরিবের নামায পড়ার সময়। ইরশাদ হচ্ছে ‘আর সকাল-সন্ধ্যায় (ফজর ও মাগরিবের সময়ে) আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো। (নামায পড়ো)।’ সূর্য ডুবে যাওয়ার পর বিলম্ব না করে এ নামায পড়ে নেওয়া উত্তম। হযরত সালামা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেন, সূর্য অস্তমিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা রাসুল করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার ইমামতিতে মাগরিবের নামায আদায় করতাম। এ প্রসঙ্গে নূরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আমার উম্মত তত দিন কল্যাণের পথে থাকবে, যত দিন তারা মাগরিবের নামায আদায়ে তারকা উজ্জ্বল হওয়া পর্যন্ত বিলম্ব করবে না।’ মাগরিবের নামাযের পর দুই রাকাত নামায পড়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি গুরুত্বের সঙ্গে মাগরিবের পরের দুই রাকাত সুন্নত নামায আদায় করেন, তাঁর জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করা হয়।’

বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ: সারাদিন মানুষ জীবিকার জন্য শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম করে কাটায়। মাগরিবের সময় ওযু করে নামায আদায়ের ফলে আত্মিক ও দৈহিক প্রশান্তি লাভ হয়। সারাদিনের ময়লা ওযুর মাধ্যমে পরিষ্কার হয়ে ত্বক হয় তরতাজা।

ইশার নামাযের ফজিলত
মাগরিবের ওয়াক্ত শেষ হলেই ইশার ওয়াক্ত শুরু হয়। মধ্যরাত পর্যন্ত এর সময় বাকি থাকে। কেউ এর মধ্যে পড়তে না পারলে সুবহে সাদিক পর্যন্ত পড়তে পারবে। রাতের এক প্রহর চলে যাওয়ার পরই ইশার নামায পড়া উত্তম। বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে ইশার নামাজ আদায় করল, সে যেন অর্ধেক রাত পর্যন্ত (নফল) নামাজ আদায় করল।
রাসূলে আরবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, যে ব্যক্তি দিনরাত ১২ রাকাআ’ত নামায পড়বে। তার জন্য বেহেশতে ঘর নির্মান করা হবে। চার রাকআ’ত যোহরের পূর্বে, দু’রাকআ’ত যোহরের পরে, দু’রাকাআ’ত মাগরিবের পরে, দু’রাকাআ’ত ই’শার পরে এবং দু’রাকাআ’ত ফজরের পূর্বে। বস্তুত সুন্নতে মোয়াক্কাদা ওয়াজিবের মতোই। অর্থাৎ ওয়াজিবের ব্যাপারে যেমন জবাবদিহি করতে হবে, তেমনি সুন্নতে মোয়াক্কাদার ক্ষেত্রেও জবাবদিহি করতে হবে। তবে ওয়াজিব ছেড়ে দেওয়ার জন্য সুনিশ্চিত শাস্তি পেতে হবে। তাই ফরজ নামাযের আগে-পরের সুন্নতে মোয়াক্কাদার অত্যধিক গুরুত্ব দেওয়া উচিত। ফরজ নামাজ শেষ করে সুন্নত নামায আদায় না করে কাতার থেকে উঠে আসা, একদিকে যেমন অন্য মুসল্লিদের ইবাদতে মগ্নতা ব্যাঘাত ঘটায়, নামাজের একাগ্রতা বিনষ্ট করে। অন্যদিকে নামায পড়তে আসা মুসলিম শিশুরাও এ ধারাটি অব্যাহত রাখতে শেখে।

বিতরের নামাযের ফজিলত
বিতর নামায ইশার পর থেকে ফজরের আগ পর্যন্ত সময়ে পড়তে হয়। এটি রাতের নামায। এ প্রসঙ্গে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তোমাদের একটি নামায দ্বারা সাহায্য করেছেন, যা তোমাদের জন্য লাল উটের চেয়েও উত্তম; আর তা হচ্ছে- ‘বিতর’। তিনি তা (এ নামায পড়ার সময়) নির্ধারণ করেছেন ইশা থেকে ফজর উদিত হওয়া পর্যন্ত।’

বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ: স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, রাতে বিছানায় যাওয়ার আগে হাল্কা ব্যায়াম করে নিলে তা স্বাস্থের জন্য ভাল। ইশার নামায ব্যায়ামের চেয়েও বেশি উপকারি এ নামায আদায়ে শান্তি পাওয়া যায়, খাদ্য হজম হয় এবং অস্থিরতা দূর করে।
সর্বোপরি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা সর্বদা গুনাহর আগুনে জ্বলছ। তোমরা যখন ফজরের নামায আদায় কর, তখন তা নিভে যায়। ফজর হতে যোহর পর্যন্ত আবার পাপের আগুনে জ্বলতে থাক। যখন যোহরের নামায শেষ কর তখন তা নিভে যায়। পুনরায় যোহর হতে আসর পর্যন্ত আগুন জ্বালিয়ে তার মধ্যে পোড়ার যাবতীয় ব্যবস্থা করতে থাক; কিন্তু আসরের নামায সমাপ্ত করার সঙ্গে সঙ্গে তা নিভে শীতল হয়ে যায়। আবার আসর হতে মাগরিব পর্যন্ত সময় তা এমনভাবে জ্বলে উঠে যে, যার শিখা তোমাদেরকে ছাই করে ফেলতে চায়। কিন্তু মাগরিবের নামায আদায় করা মাত্রই তা নির্বাপিত হয়ে যায়। তারপর ইশা পর্যন্ত তোমাদের পাপের আগুন আবার তীব্রভাবে জ্বলতে থাকে এবং যখন তোমরা ইশার নামায সম্পন্ন কর, তখন তা সম্পূর্ণরূপেই নিভে যায়। তখন তোমরা সম্পূর্ণ নিষ্পাপ হয়ে ঘুমিয়ে থাক। ঘুম ভাঙ্গা পর্যন্ত তোমাদের আমল নামায় কোন প্রকার গুনাহ লিখা হয়না। অন্যত্র ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামায ঠিক মত আদায় করবে, আল্লাহ তাকে পাঁচটি পুরস্কারে সম্মানিত করবেন। যথা-(১) তার অভাব দূর করবেন। (২) কবরের আযাব থেকে মুক্তি দেবেন। (৩) ডান হাতে আমল নামা দেবেন। (৪) বিজলীর ন্যায় পুলসিরাত পার করাবেন। (৫) বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
والذين هم على صلوتهم يحافظون- اولئك هم الورثون- الذين يرثون الفردوس هم فيها خلدون-
অর্থাৎ ‘‘আর যারা তাদের নামায সমূহের হিফাযত করে তারাই হবে অধিকারী। অধিকারী হবে জান্নাতুল ফেরদাউসের তাতে চিরকাল থাকবে। আর যারা নামাজের ব্যাপারে উদাসীন তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা শাস্তির ঘোষণা দিয়েছেন। ইরশাদ হচ্ছে, ‘দুর্ভোগ সেসব নামাযীর জন্য, যারা নিজেদের নামাযের ব্যাপারে গাফেল।’ আজ আমরা পার্থিব ভোগ-সামগ্রীতে এতটাই মত্ত যে, পরকালের অনন্ত জীবনের কথা ভুলেই গেছি যেন! ভুলে গেছি জান্নাতের অফুরান নিয়ামত ও জাহান্নামের কঠিন শাস্তির কথা। পরকালকে ভুলে যাওয়াই বর্তমানে বিরাজমান সকল অশান্তির মূল কারণ। যথাযথভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের মাধ্যমে আবার আমাদের ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে আসতে পারে অফুরান কল্যাণ। কেননা আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় নামায অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।’ আল্লাহ তাআলা আমাদের সঠিক সময়ে জামাতের সঙ্গে নামায আদায়ের তাওফিক দান করুন। আমিন বিহুরমাতি সৈয়্যদিল মুরসালিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

টিকা:
– সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪৩০
– সুনানে আবু দাউদ, হাদিস:৪২৫
– সহিহ মুসলিম,হাদিস: ৬১২
– সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৩৭৯
– সহিহ বুখারি, হাদিস : ১১৪২
– সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৩৭৭
– সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৫৭
– সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৩২২
– সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৭৮১
– সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৫৫
– সুরা কাহফ, আয়াত : ৩৯
– সহিহ মুসলিম, হাদিস:১৫৭৩/৭২৫
– আল বাহরুর রায়েক : ১/৪২৩
– সহিহ বুখারি : ৫৪৭
– জামে তিরমিযি,হাদিস : ৪২৯
– সহিহ মুসলিম,হাদিস: ৬১২
– সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৫২
– সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৫৩
– সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৫৬
– সুনানে আবু দাউদ,হাদিস:১২৭১; জামে তিরমিযি,হাদিস:৪৩০
– সূরা আলে ইমরান,আয়াত: ৪১
– সহিহ বুখারি
– সুনানে আবু দাউদ
– জামে তিরমিযি
– সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৩৭৭
– সুনানে বায়হাকী
– কাশফুল আসরার : ২/৩০২
– সুনানে আবু দাউদ; জামে তিরমিযি; ইবনে মাজাহ; মুসতাদরাকে হাকেম
– তারগীব ও তারহীব
– সূরা মুমিনুন,আয়াত:৯ -১১
– সূরা মাউন, আয়াত : ৪-৫
– সূরা আনকাবুত, আয়াত : ৪৫

লেখক: আরবি প্রভাষক, রাণীরহাট আল-আমিন হামেদিয়া ফাযিল মাদরাসা; রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম।

Share:

Leave Your Comment