যে আমল জীবনে প্রাচুর্য আনে
আবরার আবদুল্লাহ
হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, ‘তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে মহান আল্লাহ বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি যত দিন পর্যন্ত আমার কাছে দোয়া করতে থাকবে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে, আমি তত দিন তোমার গুনাহ মাফ করতে থাকব, তুমি যা-ই করে থাকো আমি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করব না। হে আদম সন্তান! তোমার গুনাহ যদি আকাশের উচ্চতা পর্যন্তও পৌঁছে যায়, অতঃপর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও তবুও আমি তোমাকে ক্ষমা করব, আমি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করব না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার কাছে আসো এবং আমার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক না করে থাকো, তাহলে আমিও সমপরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার কাছে আসব।’ [সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৪০]
তওবা হলো আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করা। আর ক্ষমা হচ্ছে গুনাহ গোপন রেখে গুনাহের ক্ষতি থেকে রক্ষা করা। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তওবার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও, নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাকারী ও অতিশয় দয়ালু।’ [সুরা নিসা, আয়াত : ১০৬]
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমার বান্দাদের জানিয়ে দিন, আমি ক্ষমাকারী ও দয়ালু।’ [সুরা হিজর, আয়াত : ৪৯]
মানুষের গুনাহ যত বড়ই হোক না কেন, যদি সে তওবা করে, আল্লাহ তা ক্ষমা করবেন। কোরআন ও হাদিসে তওবার বহুমুখী কল্যাণ ও উপকারিতার কথা এসেছে। যেমন:
মর্যাদা বৃদ্ধি
তওবা দ্বারা শুধু গুনাহ মাফ হয় না, বরং এর মাধ্যমে আল্লাহর দরবারে মানুষের মর্যাদাও বৃদ্ধি পায়। এ জন্য নবীগণ নিস্পাপ হওয়ার পরও আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। সাইয়্যিদিনা হযরত নূহ আলায়হিস্ সালাম আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করেন, ‘হে আমার প্রতিপালক, ক্ষমা করেন আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং যারা মুমিন হয়ে আমার ঘরে প্রবেশ করে। আর মুমিন পুরুষ ও মুমিনা নারীদের।’ [সুরা নূহ, আয়াত : ২৮]
আল্লাহ তা‘আলা হযরত মুসা আলায়হিস্ সালাম-এর কথা পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করে বলেন, ‘তিনি বলেন, হে আমার প্রতিপালক নিশ্চয়ই আমি আমার ওপর জুলুম করেছি। অতএব আমাকে ক্ষমা করেন। ফলে আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করলেন।’ [সুরা কাসাস, আয়াত : ১৬]
মহানবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহর কসম, নিশ্চয়ই আমি প্রতিদিন সত্তরবারের বেশি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই ও তওবা করি।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৩০৭]
জীবনে প্রাচুর্য লাভ
আল্লাহ ক্ষমা প্রার্থনাকারীর ইহকালীন ও পরকালীন জীবনে বরকত দান করেন। ক্ষমা প্রার্থনার ফলে মানুষের জীবন-জীবিকা, সন্তান ও সম্পত্তি বৃদ্ধি পায়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর আমি বললাম, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা চাও, নিশ্চয়ই তিনি অতিশয় ক্ষমাকারী; তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন; তিনি তোমাদের সমৃদ্ধ করবেন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে এবং তোমাদের জন্য স্থাপন করবেন জান্নাত ও তোমাদের জন্য প্রবাহিত করবেন নহরসমূহ।’ [সুরা নুহ, আয়াত : ১০-১২]
দেহ-মনের সজীবতা লাভ
ক্ষমা প্রার্থনাকারীকে আল্লাহ মানসিক গ্লানি থেকে মুক্ত করেন। ফলে তার দেহ ও মন সতেজ হয়। সে জীবনের সজীবতা খুঁজে পায়। আল্লাহর নবী হযরত হুদ আলায়হিস্ সালাম তাঁর সম্প্রদায়কে বলেন, ‘এবং হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তন করো। তিনি তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন এবং তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করবেন। তোমরা অপরাধী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিও না।’ [সুরা হুদ, আয়াত : ৫২]
বিপদ-আপদ দূর হয়
তওবার মাধ্যমে দুনিয়া ও আখিরাতে সমূহ বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘এবং আল্লাহ এমন নন যে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করবে অথচ তিনি তাদের শান্তি দেবেন।’
[সুরা আনফাল, আয়াত : ৩৩]
অন্তর আলোকিত করে
গুনাহের কারণে মানুষের অন্তর অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়। তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে সেই অন্ধকার দূর হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিন যখন একটি গুনাহ করে তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে। অতঃপর যদি সে তওবা করে, গুনাহ পরিহার করে ও ক্ষমা চায়, তবে তার অন্তর আলোকম-িত হয়। ’ [মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৭৯৫২]
লেখক: প্রাবন্ধিক।