ঈদে মিলাদুন্নবী এক মহা নেয়ামত- মুহাম্মদ আলী ইমাম
ঈদে মিলাদুন্নবী এক মহা নেয়ামত-
মুহাম্মদ আলী ইমাম
===
বছর ঘুরে আবার আমাদের মাঝে এসেছে নেয়ামতের মাস, অফুরন্ত খুশী উদ্যাপনের মাস এবং আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তাআলার দরবারে বেহদ শুকরিয়া আদায় করার মাস- রবিউল আওয়াল। এই মাসের শুভাগমন হলেই দুনিয়ার ঈমানদার মুসলমানদের অন্তরে প্রবাহিত হতে থাকে এক মহব্বতের ফল্গুধারা। সবাই অনুভব করে এক অনাবিল প্রশান্তি। তৃঞ্চার্ত চাতক যেমন পানি দেখলেই তার অন্তরে এক আনন্দমিশ্রিত শিহরণ খেলে যায় এ যেন সে রকমই অনুভূতি। সারা বছরের অপেক্ষার অবসান হয় আনন্দের অশ্রুতে।
এই সেই রবিউল আউয়াল মাস, যেই মাসে তশরীফ এনেছেন আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তাআলার, প্রিয় হাবীব, আল্লাহর সমস্ত সৃষ্টি জগতের জন্য রহমত, বরকত ও মানব জাতির কল্যাণকামী এবং মুক্তিদাতা আখেরী নবী হুজুর সারোয়ারে কায়েনাত, আকায়ে নামদার রহমতুিল্লল আলামিন, শফিউল মুজনেবিন হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা আহমদ মোজতবা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। ১২ই রবিউল আউয়াল রোজ সোমবার ছোবহে ছাদেকের সময় পবিত্র মক্কা মোয়াজ্জামায় হযরত মা আমেনা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহার পবিত্র শেকমে পাক থেকে দুনিয়ার বুকে তশরীফ আনলেন হুজুর পুরনূর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম।
সাধারণত ‘ঈদ’ অর্থ আনন্দ। আরো একটু বিশ্লেষণ করলে আনন্দ উদযাপন করা। ‘মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’ আরবী শব্দ। আভিধানিক অর্থ হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর শুভাগমন। সুতরাং ‘ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’ অর্থ দাঁড়ায় নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর শুভাগমন উপলক্ষে আনন্দ বা খুশী উদযাপন করা। ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তাআলার পক্ষ থেকে এমন এক নেয়ামত যা গ্রহণ, পালন এবং যার শুকরিয়া আদায়ের মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে থাকে।
ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তাআলা হাদীসে কুদসীতে নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে উদ্দেশ করে এরশাদ করেন- “লাওলাকা লামা খালাকতুল আফলাক।” অর্থাৎ ‘‘(হে নবী), আমি যদি আপনাকে সৃষ্টি না করতাম তাহলে আমি আসমানসমূহ তথা কিছুই সৃষ্টি করতাম না।” এই হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তাবারাক ওয়া তাআলা পরিষ্কার করে স্বীয় রসুল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সৃষ্টির উদ্দেশ্য বর্ণনা করেছেন। এই বিশ্ব-জগৎ, আসমান-জমিন, বেহেশত-দোজখ, আরশ-কুরসী সব কিছু সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে আঠার হাজার মাখলুকাতের সামনে প্রকাশ করা। শুধু প্রকাশ করা নয় আল্লাহর রহমত স্বরূপ মানবজাতির কল্যাণে দুনিয়ার জমিনে প্রেরণ করা। যেমন, আল্লাহ তাআলা কোরআনে করিমে এরশাদ করেন, “ওয়ামা আরছালনাকা ইল্লা রাহমাতাল্লিল আলামিন”। অর্থাৎ ‘‘(হে রাসুল), আমি আপনাকে সমস্ত সৃষ্টির জন্য রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি।” এই জন্যে বলা হয়, সকল ঈদের সেরা ঈদ- ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম।
আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তাআলা মানব জাতির জন্য অফুরন্ত রহমত ও নি’মাতের ভাৃার খুলে দিয়েছেন। সুরা আর রাহমানে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তাআলা এমন অনেক নেয়ামতের কথা উল্লেখ করেছেন এবং সে সব নেয়ামতের কথা বান্দাগণ যাতে অস্বীকার না করে তার জন্য সতর্কও করে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা আরেক আয়াতে নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করার জন্য মানব জাতিকে নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, “ফায্কুরূনী আযকুরকুম, ওয়াশকুরূলী ওলা তাকফুরুন”। অর্থাৎ “যদি তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব এবং আমার শোকরগোজারী কর এবং না-শোকরী করোনা”। বুঝা গেল যে, আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামত ও রহমতের শোকরগুজার হওয়া আমাদের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং অবশ্য কর্তব্য। আরেক আয়াতে করিমায় আল্লাহ তাবারাকা তাআলা স্বীয় হাবীব সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে উদ্দেশ করে বলেন, “ক্বুুল ইয়া এবাদিয়াল্লাজিনা আছরাফু আলা আনফুছিহিম, লা তাকনাতু মির রাহমাতিল্লাহ্। ইন্নাল্লাহা ইয়াগফিরুয্ যুনুবা জামিয়া, ইন্নাহু হুয়াল গাফুরুর রাহীম”।
তরজমা: ‘‘হে হাবীব! আপনি বলুন, ‘হে আমার ওই বান্দাগণ, যারা নিজেদের উপর যুলম করেছে, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়োনা। নিশ্চয় আল্লাহ্ সমস্ত গুনাহ্ ক্ষমা করে দেন। নিশ্চয় তিনি মহা ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। [সূরা যুমার, আয়াত-৫০]
এ আয়াতে আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদেরকে গোনাহের কারণে তাঁর রহমত থেকে নিরাশ না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এবং বলেছেন তাদের সব গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন। যে রহমতের কথা আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন সে রহমত তো উল্লিখিত অপর এক আয়াতে করিমা মতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তাঁর গুনাহগার বান্দাদেরকে নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নেগাহে করম লাভ করা থেকে নিরাশ বা হতাশ না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। অপর এক আয়াতে আল্লাহ তাবারকা ওয়া তাআলা তাঁর প্রিয় হাবীবকে উদ্দেশ করে এরশাদ করেন- “ওয়া লাও আন্নাহুম ইজ জলামু আনফুছাহুম জাউকা, ফাছতাগফারুল্লাহা, ওয়াছতাগফারা লাহুমুর রাসুলু লাওয়াজাদুল্লাহা তাওয়াবার রাহিমা।” অর্থাৎ, “যদি গুনাহ করে আমার বান্দাগণ (হে রসুল) আপনার দরবারে যায় এবং আল্লাহর দরবারে নিজ গুনাহ মাফের জন্য আরজ করে এবং আপনি তার গুনাহ মাফের জন্য দোয়া (সুপারিশ) করেন, তাহলে ঐ গুনাহগার বান্দা আল্লাহ তাআলাকে তাওবা কবুলকারী দয়ালু হিসেবেই পাবে”। এই আয়াতে করিমার মাধ্যমে আল্লাহ তাবারকা তাআলা নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে মানব জাতির ম্ুিক্তর জন্য এক মহা নেয়ামত হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
উপরিউক্ত আয়াতে করিমাসমূহের আলোকে একথা ষ্পষ্ট যে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামই হচ্ছেন আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তাআলা প্রদত্ত নেয়ামতগুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত। কারণ হাদীসে কুদসী মতে রাসুলে করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে সৃষ্টি না করলে আল্লাহ কোন কিছুই সৃষ্টি করতেন না। বাকী সব নেয়ামত আমরা পেয়েছি রাসুলে করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর মাধ্যমে। এক হাদীসে পাকে রসুল করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, “আনা কাছেমুন ওয়াল্লাহু ইয়ুতি”। অর্থাৎ “আল্লাহ দান করেন আর আমি বন্টনকারী”। সুতরাং এ আলোচনার আলোকে একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, নেয়ামতের শোকরিয়া আদায় করা সকল মানব জাতির জন্য বিশেষ করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য অপরিহার্য- যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে হয়। শুকরিয়া আদায় করার একটি উল্লেখযোগ্য মাধ্যম হলো বেশী পরিমাণে নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দুরুদ ও সালাম পাঠ করা যা কোরআনে করিমের ঘোষণা মতে আল্লাহ তাঁর সমুদয় ফেরেশতাসহ প্রতিনিয়ত বিরতিহীনভাবে দরুদ পাঠ করে থাকেন এবং আমাদেরকে নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি দুরুদ ও সালাম পেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
নেয়ামতের শোকরিয়া আদায়ের আরেকটি পদ্ধতি হলো খুশী উদযাপন করা। কোরআনে করিমে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তাআলা এরশাদ করেন, “ক্বুল বেফাদলিল্লাহে ওয়া বেরাহমাতিহি ফাবেজালেকা ফাল ইয়াফরাহু” অর্থাৎ (হে রাসুল) আপনি বলুন, আল্লাহর দয়া ও মেহেরবানী পেয়ে তা নিয়ে যেন খুশী উদযাপন করে। তারা যা সঞ্চয় করছে তা থেকে এটিই শ্রেষ্ঠতর”। এই আয়াতে করিমার তফসির করতে গিয়ে বিশ্ববিখ্যাত তাফসির বিশারদগণ যেমন, আল্লামা মাহমুদ আলুসী, আল্লামা ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতি, ইমাম আবু হাইয়ান আনদালুসী রাহমাতুল্লাহে আলাইহিম বলেন, “তোমাদের প্রতি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রেরণ করে এবং কোরআন অবতীর্ণ করে আল্লাহ তোমাদের উপর যে দয়া ও করুণা করেছেন তাতে তোমরা খুশী উদযাপন কর। কেননা উভয়ের মধ্যে ফজল হলো জ্ঞান আর রহমত হলো রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম, যাঁর মাধ্যমে নিশ্চয়ই তোমরা চিরস্থায়ী নেয়ামত অর্জন করবে, যা এ নশ্বর পৃথিবী থেকে তোমাদের জন্য অধিকতর শ্রেয়”। সুতরাং এটা স্পষ্ট যে, হযরত রাসুলে করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বিশ্ববাসীর জন্য সবচেয়ে বড় অনুগ্রহ ও নেয়ামত। এ কারণে আল্লাহ তাআলা এই অনুগ্রহ তথা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে পাবার উপর খুশী উদযাপনের নির্দেশ দিয়েছেন। আর সেই কারণেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর শুভাগমন দিবস ১২ রবিউল আওয়াল হয়েছে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম। আর মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে কেন্দ্র করেই খুশী উদযাপন করাই হলো ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম, যা পালন করার নির্দেশ স্বয়ং আল্লাহ দিয়েছেন। ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর দিনে খুশী উদযাপন করার উপর পুরস্কার অর্জন করার এক ব্যতিক্রমীধর্মী উদাহরণ রাসুলে করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর চাচা আবু লাহাব, যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ভূমিষ্ঠ হবার সংবাদ শুনে এত খুশী হয়েছিল যে, সংবাদদাতা দাসীকে সঙ্গে সঙ্গে আজাদ করে দিয়েছিল। আবু লাহাবের মৃত্যুর প্রায় এক বছর পর হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু একদিন আবু লাহাবকে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞেস করলেন- আবু লাহাব, তুমি কেমন আছ? আবু লাহাব উত্তর দিল, খুবই খারাপ অবস্থায় আছি। তবে প্রতি সপ্তাহে একদিন সোমবার আমার শাস্তি লঘু হয়। ঐ দিন আমার দু’আঙ্গুলের ফাঁক থেকে সুপেয় পানি নিঃসৃত হয় যা পান করে আমি ঐ দিন শান্তি পাই। এটা সম্ভব হয়েছে আমার ভাতিজা মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ভূমিষ্ঠ হবার খবর শুনে আমি খুশী হয়েছিলাম এবং আমার দাসীকে আজাদ করে দিয়েছিলাম।” এই উদাহরণ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, একজন কাফের রাসুল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর দুনিয়ায় শুভাগমন উপলক্ষে খুশীতে দাসীকে মুক্ত করার কারণে যদি আল্লাহ তাআলা এরূপ প্রতিদান দেন তাহলে মুসলমানগণ, বিশেষ করে নবী প্রেমিক মুসলমানগণ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম দিবসে ঈদ বা খুশী উদযাপন করলে আল্লাহ তাআলার তরফ থেকে তার কিরূপ প্রতিদান হতে পারে? নবীপ্রেমিক মুসলমানগণ সাধারণভাবে বিভিন্নভাবে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর উদযাপন করে থাকেন। যেমন, দিবসটিকে স্মরণ করে আলোচনা অনুষ্ঠান করা, ইবাদত বন্দেগী করা, ওরস-মেজবান করা, ছালাত ছালাম প্রেরণ করা ইত্যাদি।
জশনে জুলুছে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম
মুর্শিদে বরহক আলহাজ্ব হাফেজ ক্বারী সৈয়দ মোহাম্মদ তৈয়ব শাহ রহমতুল্লাহ আলাইহি মুসলমানদেরকে নবীপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করার মানসে প্রবর্তন করেন জশনে জুলছে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম।
ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম উদযাপনের এই মহিমান্বিত অনুষ্ঠান ১৯৭৪ ইংরেজী সাল থেকে চট্টগ্রামে এবং পরবর্তীতে রাজধানী ঢাকায়ও অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। জশনে জুলুছে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর মাধ্যমে হুজুর করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর শুভাগমনে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তাআলার দরবারে শোকরিয়া আদায় করা এবং সেই সঙ্গে আল্লাহ ও রাসুল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সন্তুষ্টি অর্জন করার এক মহা ওসিলা নবীপ্রেমিক মুসলমানদেরকে উপহার দেয়া হয়েছে। জশনে জুলুছে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম উদযাপন প্রকৃতপক্ষে এক মহান ইবাদত হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। কারণ এই অনুষ্ঠানে রয়েছে হামদ, নাতে রাসুল (সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম), সালাত সালাম আদায় সহকারে জুলুস বা মিছিল, তকবির-বয়ান এবং মুনাজাত।
বর্তমান মুর্শিদে বরহক হযরত আলহাজ্ব সৈয়দ মোহাম্মদ তাহের শাহ্ মদ্দাজিল্লুহুল আলী, যিনি রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর ৪১তম আওলাদ। জশনে জুলুসে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন।
কোরানে করিমের একখানি আয়াত উল্লেখ করা বাঞ্ছনীয় মনে করি। এরশাদ হয়েছে “ওয়ামাঁই ইয়ুত্বি‘ইর রাসুলা ফাকাদ আত্বা-‘আল্লাহা,” অর্থাৎ, “যে রাসুলকে মান্য করেছে সে বস্তুত আল্লাহকে মান্য করেছে।” এই আয়াতে করিমার তফসীর করতে গিয়ে বিশ্বখ্যাত তাফসীর বিশারদগণ বলেছেন, মান্য করার অর্থ সন্তুষ্টি অর্জন করা। অর্থাৎ যে রাসুল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সন্তুষ্টি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে সে বস্তুত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করেছে। এটাই এই আয়াতে করিমার উদ্দেশ্য এবং আল্লাহ তাআলার নির্দেশ। এই আয়াতে করিমার আলোকে বলা যায় পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম উদযাপন অর্থাৎ জশনে জুলুছে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম উদযাপন প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তাআলার নির্দেশ পালন তথা শুকরিয়া জ্ঞাপন এবং রাসুলে করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সন্তুষ্টি অর্জন। যদি রাসুলে করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি তাহলে নিশ্চিতভাবে আমরা আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন এবং অফুরন্ত রহমত ও বরকত হাসিল করতে সক্ষম হবো।
পরিশেষে, মহাকবি আল্লামা ইকবালের একটা কসিদা পেশের মাধ্যমে শেষ করছি।
“নিগহে শওকো মস্তিমে
উহি আউয়াল উহি আখের
উহি কোরআন, উহি ফোরকান
উহি ইয়াসিন, উহি তোয়াহা”
অর্থাৎ “প্রেমের দৃষ্টিতে দেখলে
তিনিই (রাসুলল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) প্রথম, তিনিই শেষ
তিনিই কোরআন, তিনিই ফোরকান
তিনিই ইয়াসিন এবং তিনিই তোয়াহা”।
লেখক: সদস্য-আঞ্জুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট, চট্টগ্রাম।