সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য যিনি সকল সৃষ্টি জগতের প্রতিপালক। দরুদ ও সালাম তাঁর হাবীব হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা আহমদ মুজতবা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, পূতপবিত্র আহলে বাইত ও হেদায়াতের সিতারা সাহাবা কেরাম রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু এর ওপর।
মহানবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম এর আগমন সমস্ত মানব ইতিহাসের জন্য রহমতে এলাহির আগমনের একটি অভিব্যক্তি ছিল। মহাগ্রন্থ আল কোরআনও তার অস্তিত্ব এভাবে ব্যাখ্যা করেছে যে, رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ বিশ^বাসীর জন্য রহমত স্বরুপ। আর এ রহমত কখনোই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং যুগের ব্যপ্তির সাথে তা বেড়েই চলবে। কেননা, ইরশাদ হচ্ছে : وَآخَرِينَ مِنْهُمْ لَمَّا يَلْحَقُوا بِهِمْ এ রাসুল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম প্রেরিত হয়েছেন আরও লোকদের জন্যে যারা এখনো তাদের সাথে মিলিত হয়নি। আর ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম উদযাপন করা হলো সর্বোত্তম আমল এবং আল্লাহর নৈকট্যজ্ঞাপক মহান কাজ। কেননা, এটা হলো তাঁর আগমন উপলক্ষে খুশি ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। আর হুব্বে রাসুল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম ঈমানের অন্যতম আসল। কোরআনুল কারীমে আল্লাহ্ তা‘আলা তার হাবীব সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসা আমাদের ওপর আবশ্যক করেছেন। তিনি ইরশাদ করেন: النَّبِيُّ أَوْلَى بِالْمُؤْمِنِينَ مِنْ أَنْفُسِهِمْ নবীমু’মিনদের নিকট তাদের নিজেদের চেয়ে অধিক ঘনিষ্ঠ। ইমাম কাযী আল বায়যাবী (ওফাত: ৬৮৫ হিঃ) বলেন:
فيجب عليهم أن يكون أحب إليهم من أنفسهم وأمره أنفذ عليهم من أمرها وشفقتهم عليه أتم من شفقتهم عليها
অর্থ: সুতরাং তাদের উপর এ কথা ওয়াজিব বা অপরিহার্য যে, তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম) তাদের নিকট তাদের প্রাণের চেয়েও বেশী প্রিয় হবেন, তাঁর নির্দেশ সর্বাধিক কার্যকর হবে এবং তাঁর প্রতি আন্তরিকতা সেগুলোর প্রতি ¯েœহ-মমতা অপেক্ষা বেশী পরিপূর্ণ হবে।
আল্লাহ তায়ালা আরও ইরশাদ করেন: অর্থাৎ বলুন, তােমাদরে নকিট যদি তােমাদরে পতিা তােমাদরে সন্তান, তােমাদরে ভাই তােমাদরে পত্নী, তােমাদরে গােত্র তােমাদরে র্অজতি ধন-সম্পদ, তােমাদরে ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং তােমাদরে বাসস্থান-যাকে তােমরা পছন্দ কর- আল্লাহ, তাঁর রসূল ও তাঁর রাহে জহোদ করা থকেে অধকি প্রয়ি হয়, তবে অপক্ষো কর, আল্লাহর বধিান আসা র্পযন্ত। আর আল্লাহ ফাসকে সম্প্রদায়কে হদোয়তে করনে না। এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম কে ভালোবাসা সবার জন্য আবশ্যক করেছেন। আর যারা তাদের নিজেদেরকে এবং পিতা মাতা, সন্তান সন্ততিসহ অন্যান্যদেরকে তাঁর নবী অপেক্ষা বেশী ভালোবাসবে, তাদেরকে কঠোর শাস্তির হুমকি দিয়েছেন এবং তাদেরকে ফাসেক বলে অভিহিত করেছেন।
ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ হাদীস শরীফও এর সত্যায়ন করেছে যে, আল্লাহর নবীর ভালোবাসা ঈমানের জন্য আবশ্যক। এমনকি ব্যক্তির নিজের প্রাণ, তার মাতা পিতা, সন্তানাদি, স্ত্রী- পরিজনসহ অন্যান্য সবকিছুর চাইতে আল্লাহর রাসুল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম কে বেশী ভালোবাসা আবশ্যক। যেভাবে হযরত আনাস বিন মালেক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বর্ণনা করেন যে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন: তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমার প্রতি তার ভালোবাসা, তার মাতা-পতিা, সন্তান-সন্ততরি ভালোবাসার চযে়ে বশেি হব।ে আল্লামা ইবনে রজব হাম্বলী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি (ওফাত: ৭৯৫হিঃ) বলেন: ‘নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম এর ভালোবাসা হলো ঈমানের অংশ এবং আল্লাহর ভালোবাসার সংযোগ। আল্লাহ এর দ¦ারা রহমত বর্ষণ করেন এবং যারা আল্লাহ ও তার রাসুলের ভালোবাসার ওপর আত্মীয় স্বজন, ধন-সম্পদ, দেশসহ অন্যান্য জিনিসের ভালোবাসাকে প্রাধান্য দেবে আল্লাহ তাদেরকে কঠোর শাস্তি দেবেন।’ মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন: বলুন, তােমাদরে নকিট যদি তােমাদরে পতিা তােমাদরে সন্তান, তােমাদরে ভাই তােমাদরে পত্নী, তােমাদরে গােত্র তােমাদরে র্অজতি ধন-সম্পদ, তােমাদরে ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং তােমাদরে বাসস্থান-যাকে তােমরা পছন্দ কর- আল্লাহ, তাঁর রসূল ও তাঁর রাহে জহোদ করা থকেে অধকি প্রয়ি হয়, তবে অপক্ষো কর, আল্লাহর বধিান আসা র্পযন্ত। আর আল্লাহ ফাসকে সম্প্রদায়কে হদোয়তে করনে না। একবার হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু রাসুল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম কে বললেন: ‘হে আল্লাহর রাসুল, নশ্চিয়ই আপনি আমার কাছে আমার নজি সত্তা ছাড়া পৃথবিীর সব কছিুর চযে়ে বশেি প্রযি়।’ তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম বললনে, কোনো ব্যক্তরি কাছে যতক্ষণ আমি তার নজি সত্তা অপক্ষো বশেি প্রযি় না হব, ততক্ষণ র্পযন্ত সে মুমনি হতে পারবে না। অতঃপর ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললনে, ‘আল্লাহর কসম! এখন আপনি আমার কাছে নজি সত্তা অপক্ষো বশেি প্রযি়।’ তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বললনে, হে ওমর, এখন তুমি (মুমনি হল)ে। সুতরাং আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ভালোবাসাকে আবশ্যকীয়ভাবে ব্যক্তিসত্ত্বা, আত্মীয়-স্বজন, সন্তান – সন্ততি, পরিবার – পরিজন, ধন – সম্পদসহ আরো যাবতীয় জিনিস যেগুলো ভালোবাসার যোগ্য তার ওপর প্রাধান্য দিতে হবে।
অতএব, মিলাদুন্নবী উদযাপন করা তাঁর প্রতি ভালোবাসারই প্রকাশ। মিলাদুন্নবীর আনুষ্ঠানিকতা মূলত তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। আর তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা ধর্মীয়ভাবেই আবশ্যকীয় বিষয়। কেননা, এটাই মূল স্তম্ভ এবং উত্তম অবলম্বন। আল্লাহ তায়ালা তাঁর নবীর মর্যাদা জানতেন এবং সমগ্র বিশ^কে তা জানিয়েছেন; তাঁর নাম, আগমন, মর্যাদা এবং স্থানের মাধ্যমে। বিশ^জাহান সীমাহীন আনন্দে ও পরম আবেগে দুলছিল; নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম ছিলেন বিশে^র জন্য খুশি, নেয়ামত ও আল্লাহর হুজ্জত। কবি আহমদ শাওক্বী বলেন- “হেদায়াতের কান্ডারী নবীর জন্মে হল আলোকিত কায়েনাত: যুগ-যুগান্ত মুচকি হাসিয়া গাইল প্রশংসা গীত। জিব্রিল আর বড় যত আছে ফেরেশতাকুল আসে তাঁর পাশে: দ্বীন আর দুনিয়ার লাগি এল মহা শুভার্থী।”
পবিত্র কোরআন থেকে ঈদে মিলাদুন্নবীর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম-এর দলীল
১. মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন:
قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُوا
هُوَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُونَ
প্রিয় হাবীব! আপনি বলুন, আল্লাহর দয়া ও মহেরেবাণীত।ে সুতরাং এরই প্রতি তাদরে সন্তুষ্ট থাকা উচৎি। এটইি উত্তম ওই সমুদয় থকেে যা সঞ্চয় করছ। আর নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম হলেন রহমত। যেমন পবিত্র কুরআনে এসেছে:
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ.
আমি আপনাকে বশ্বিবাসীর জন্যে রহমত স্বরূপই প্ররেণ করছে।ি নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম এর জন্মদিন উদযাপন করা আনন্দ ও ভালোবাসারই প্রকাশমাত্র। সুতরাং মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম উদযাপন করা পবিত্র কোরআনে আদিষ্ট গন্ডীর ভিতরেই রয়েছে এবং এটা সর্বোত্তম। আর আনন্দ ও খুশি প্রকাশের তরে আনুষ্ঠানিকতা, এটা সবার কাছে খুব প্রচলিত রীতিই। যেমনিভাবে বিবাহ, ওলিমা, আকিকাসহ অন্যান্য কাজের আনুষ্ঠানিক বিধান।
২. আল্লাহ তায়ালা আরও ইরশাদ করেন:
وَأَمَّا بِنِعْمَةِ رَبِّكَ فَحَدِّثْ.
এবং আপনার পালনর্কতার নয়োমতরে কথা প্রকাশ করুন। আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতের মাঝে কোনটি আমাদের কাছে মহান? বা আল্লাহ মু’মিনদেরকে যেসব নিয়ামত দিয়েছেন তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ নিয়ামত কি? নিশ্চয়ই এ নেয়ামত হলো সায়্যেদুনা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম। ইমাম বুখারী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমার রেওয়ায়েতে হাদীস বর্ণনা করেন যে, আল্লাহর বাণী : الَّذِينَ بَدَّلُوا نِعْمَتَ اللَّهِ كُفْرًا যারা আল্লাহর নয়োমতকে কুফরে পরণিত করছে।ে তিনি বলেন : ‘আল্লাহর কসম তারা হলো কুরাইশের কাফেরগোষ্ঠী।’ হযরত আমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন : ‘তারা হলো কুরাইশ এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম হলেন আল্লাহর নেয়ামত। আর মিলাদুন্নবী উদযাপান করা এ মহানেয়ামতেরই অর্ন্তভূক্ত।সুতরাং এটা পবিত্র কোরআনে আদিষ্ট বিষয়েরই আওতাধীন এবং তা সর্বোত্তম।’
৩. আল্লাহ তায়ালা আরও ইরশাদ করেন:
وَكُلًّا نَقُصُّ عَلَيْكَ مِنْ أَنْبَاءِ الرُّسُلِ مَا نُثَبِّتُ بِهِ فُؤَادَكَ وَجَاءَكَ فِي هَذِهِ الْحَقُّ وَمَوْعِظَةٌ وَذِكْرَى لِلْمُؤْمِنِينَ.
আর আমি রসূলগণরে সব বৃত্তান্তই তােমাকে বলছ,ি যদ্দ্বারা আপনার অন্তরকে মজবুত করছ।িআর এভাবে আপনার নকিট মহাসত্য এবং ঈমানদারদরে জন্য নসীহত ও স্মরণীয় বষিয়বস্তুএসছে।ে এখানে এটা স্পষ্ট হলো যে, পূর্ববর্তী নবীগণের কাহিনী আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম কে শুনানোর মাধ্যমে তাঁর অন্তর মোবারককে স্থিতিশীল করা হয়েছে। আর জ্ঞানী মাত্রই এটা বুঝতে পারে যে, আল্লাহর রাসুলের অন্তরের মজবুতির চেয়ে তার জীবন-চরিত আলোচনা করে আমাদের অন্তরের স্থিতীশীলতা বহুগুণে জরুরী। সুতরাং এ দৃষ্টিকোন থেকে আল্লাহর রাসুলের মীলাদ ও সীরাত নিয়ে আলোচনা করার মাধ্যমে মিলাদুন্নবী উদযাপন করা ও পবিত্র কোরআনে আদিষ্ট বিষয়েরই আওতাধীন।
৪. আল্লাহ তায়ালা আরও ইরশাদ করেন :وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ আল্লাহর সে নয়োমতরে কথা স্মরণ কর, যা তােমাদরে উপর রয়ছে।ে নিঃসন্দেহে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম হলেন সবচে বড় নেয়ামত। আর মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম উদযাপনের মাধ্যমে সে মহান নেয়ামতই স্মরণ করা হয়।
৫. আল্লাহ তায়ালা আরও ইরশাদ করেন :
قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا أَنْزِلْ عَلَيْنَا مَائِدَةً مِنَ السَّمَاءِ تَكُونُ لَنَا عِيدًا لِأَوَّلِنَا وَآخِرِنَا وَآيَةً مِنْكَ وَارْزُقْنَا وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ.
ıঈসা ইবনে মরয়িম আলায়হিস্ সালাম বললনেঃ হে আল্লাহ আমাদরে পালনর্কতা আমাদরে প্রতি আকাশ থকেখোদ্যর্ভতি খাঞ্চা অবতরণ করুন। তা আমাদরে জন্যে র্অথাৎ, আমাদরে প্রথম ও পরর্বতীসবার জন্যে আনন্দােৎসব হবে এবং আপনার পক্ষ থকেে একটি নর্দিশন হব।ে আপনি আমাদরে রুজিদনি। আপনইি শ্রষ্টে রুজিদাতা। এ আয়াত দ্বারা এটা সাব্যস্ত হলো যে, নির্দিষ্ট নিয়ামত অবতীর্ণ হওয়ার কারণে সেইদিনকে ঈদ হিসেবে গ্রহণ করা হয়। আর আল্লাহর নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম হলেন এ বিশে^র সবচে বড় নেয়ামত, তাই তাঁর জন্মদিনকে ঈদ হিসেবে গ্রহণ করা এবং উদযাপন করা উত্তম।
৬. আল্লাহ তায়ালা আরও ইরশাদ করেন :
وَمَنْ يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللهِ فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوبِ.
কউে আল্লাহর নিদর্শনাবলীর প্রতি সম্মান প্রর্দশন করলে তা তাে তার হৃদয়রেআল্লাহভীতি প্রসূত। আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম হলেন আল্লাহর নিদর্শনাবলীর মহানিদর্শন। তাঁর সম্মান করা আয়াতেরই চাহিদা। আর মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম উদযাপন তাঁর সম্মানার্থেই হয়। বিখ্যাত মুফাস্সির শায়েখ ইসমাঈল হাক্কী আল হানফী (ওফাত: ১১২৭ হিঃ ) বলেন :” “ومن تعظيمه عمل المولد إذا لم يكن فيه منكر…’আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম এর জন্মদিন উদযাপন তাঁর প্রতি সম্মানেরই অংশ, যদি তাতে কোন মন্দ বিষয় না থাকে। ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন: يستحب لنا اظهار الشكر لمولده عليه السلام.’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম এর জন্ম উপলক্ষে শুকরিয়া আদায় করা আমাদের ওপর মুস্তাহাব’। ইমাম তকীউদ্দিন সুবুকী (ওফাত: ৭৫৬ হিঃ) এর সময়ে তার কাছে অনেক আলেমগণের যাতায়াত ছিল। একদা একজন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম এর শানে আবৃত্তি করল:
“মুস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম এর শানে লেখা সামান্য পাতা + স্বর্ণাক্ষরে লিখা কিতাব থেকে উত্তম বহুগুণে।
তাঁর না’ত শ্রবণে সম্মানিতরা যায় দাঁড়িয়ে + সারি সারি অথবা নত জানু হয় তারা বাহনে।”
উক্ত কবিতা শুনামাত্রই ইমাম সুবুকীসহ তার মজলিসের সবাই দাড়িয়ে গেলেন এবং উক্ত মজলিসে স্বর্গীয় শান্তি লাভ করলেন; ইমাম সুবকী রাহমাতুল্লাহি আলায়হির এ আমলটি অনুগমনের জন্য যথেষ্ট। আল্লামা ইবনে হাজার হাইছামী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন:
إن البدعة الحسنة متفق على ندبها وعمل المولد واجتماع الناس له كذلك أى بدعة حسنة.
‘নিশ্চয়ই সকলের ঐকমত্য অনুযায়ী বিদআতে হাসানা হলো মানদুব। আর মিলাদুন্নবী উদযাপন এবং এর জন্য লোকজনের উপস্থিতি হলো বিদআতে হাসানা।’ইমাম সাখাবী (ওফাত: ৯০২হি.) বলেন: ‘কুরুনে ছালাছাতে প্রচলিত পদ্ধতিতে কেউই মিলাদুন্নবী উদযাপন করেনি। এটার উদ্ভব হয়েছে তার পরে। এরপর থেকে মুসলমানগণ সারা বিশ্ব ব্যাপি সমস্ত ছোট-বড় শহরে মিলাদুন্নবী উদযাপন করে আসছে এবং এ রাত্রিতে তারা বিভিন্ন সদকা দেয় ও আল্লাহর নবীর শানে তারা না’ত পরিবেশন করে। এর দ্বারা তারা মহান বরকত হাসিল করে থাকে।’ আল্লামা ইবনুল জাওযী (ওফাত: ৫৯৭ হিঃ) বলেন : ‘ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা হলো সেই বছরের জন্য নিরাপত্তা এবং মহান রবের কাছে কাম্য জিনিস চাওয়ার সুযোগ’। সর্বপ্রথম রাজকীয়ভাবে বাদশাহদের মাঝে ইরবলের বাদশাহ মিলাদুন্নবী (দঃ) উদযাপন করেন এবং মিলাদুন্নবী সম্পর্কে বাদশাহর খেদমতে ইবনে দাহিয়াহ (ওফাত: ৬৩৩হিঃ) কিতাব রচনা করেন যার নাম ছিল : التنوير بمولد البشير النذيرএবং এর জন্য তাকে একহাজার দিনার উপঢৌকন দেওয়া হয়।’ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (ওফাত ৮৫২ হিঃ) সুন্নাহ থেকেমিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম পালনের মূল উৎস খুঁজে বের করেন এবং অনুরুপভাবে ইমাম সুযুতী (ওফাত সন:৯১১হিঃ)ও।
এ ছাড়া আরোও আয়াত রয়েছে যেগুলো মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম উদযাপনের বিধানকে সাব্যস্ত করে।
হাদীস শরীফ থেকে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লামের দলীল
১. হযরত আবু কাতাদাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম কে সোমবার দিনে রোযা রাখার কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন: فيه ولدت، وفيه أنزل علي এই দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছিলাম এবং এই দিনেই আমার ওপর অহী অবতীর্ণ হয়। দেখা যাচ্ছে যে, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম নিজেই তাঁর জন্মদিনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছেন। তাঁর ওপর আল্লাহ প্রদত্ত সবচেয়ে বড় নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন এবং নিজের অস্তিত্বের জন্য তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছেন। আর এ সম্মান প্রকাশিত হয়েছে রোযার দ্বারা। এ হাদীসে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম উদযাপনকে কেবল রোযা রাখার মধ্যে সীমাবদ্ধ করা হয়নি, বরং যাবতীয় ইবাদতের মাধ্যমেও তা উদযাপন করা যাবে। এই দিকে ঈঙ্গিত করে হাফেজ ইবনে রজব হাম্বলী (ওফাত:৭৯৫ হিঃ) তাঁর কিতাব لطائف المعارف এ বলেন : إشارة إلى استحباب صيام الأيام التي تتجدد فيها نعم الله على عباده ……مقابلة النعم في أوقات تجددها بالشكر.
‘যেসকল দিনে আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে বিশেষ নিয়ামত দান করেন সেইসব দিনে রোযা রাখার প্রতি এখানে ঈঙ্গিত করা হয়েছে। আর এ উম্মতের প্রতি মহান আল্লাহর নিয়ামতসমূহের মাঝে সবচেয়ে বড় নিয়ামত হলো মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম কে তাদের জন্য প্রেরণ করা। মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন: لَقَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولاً مِنْ أَنْفُسِهِمْ. আল্লাহ্ ঈমানদাদের উপর অনুগ্রহ করেছেন যে, তাদের মাঝে তাদের নিজেদের মধ্য থেকে নবী পাঠিয়েছেন। আর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম কে প্রেরণ করা অন্যসব নেয়ামতরাজি থেকে মহান। যেমন ঃ আসমান, জমিন, চন্দ্র, সূর্য, বাতাস, রাত-দিন, বৃষ্টিপাত, শস্য উৎপাদন ও অন্যান্য সব নিয়ামতরাজি। কেননা, এ সব নিয়ামত সাধরাণভাবে বণী আদমের জন্য সৃজিত হয়েছিল। যারা আল্লাহ, তাঁর রাসুলগণকে এবং পরকালকে অস্বীকার করেছিল। তারা আল্লাহর নিয়ামতকে কুফরীর দ্বারা পরিবর্তন করেছিল। অতঃপর মহান শ্রেষ্ঠ নেয়ামত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম কে প্রেরণ করার মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ সাধন করা হয়। তাঁর কারণেই আল্লাহর দ্বীন পুরপূর্ণতা লাভ করে যার দরুণ বান্দার আনন্দে পুলকিত হয়েছে। তাকে গ্রহণ করার মাধ্যমেই ইহকাল ও পরকালের শান্তি ও মুক্তি রয়েছে। সুতরাং যেদিন মহান আল্লাহ মু’মিনদেরকে এ মহা নিয়ামত দান করেছেন সেদিন রোযা রাখা খুব ভালো ও উত্তম। আর এটা হলো নেয়ামত লাভের কারণে আল্ল্হার শুকরিয়া জ্ঞাপন করা।’
সর্বোপরি আমরা বলবো যে, সর্বপ্রথম যিনি মিলাদুন্নবী উদযাপন করেন তিনি হলেন নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং নিজেই। অতঃপর ক্রমানুসারে সাহাবা, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন এবং কিয়ামত পর্যন্ত তা জারী থাকবে ইনশাআল্লাহ।
২. হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: أن النبى صلى الله عليه وسلم عقَّ عن نفسه بعد النبوة নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম নবুয়্যতের পর নিজের পক্ষ থেকে আকীকা করেছেন। ইসলামি শরীয়ার প্রসিদ্ধ সুত্র হলো: أن العقيقة لا تعاد مرة ثانية. “আকীকা দ্বিতীয়বার করা হয় না।” অর্থাৎ আকীকা একবারই করা হয়। এ হাদীসের উদ্দেশ্য হচ্ছে, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনার্থে তাঁর জন্মদিনে পশু জবাই ও মানুষদেরকে মেহমানদারী করেছেন। কেননা, ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতী র. উক্ত হাদীস আনায়নের পর উল্লেখ করেন যে,
أنه قد ورد أن جده عبد المطلب عق عنه في سابع ولادته…ذلك من وجوه القربات وإظهار المسرات
নিশ্চয়ই নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম এর দাদা আব্দুল মুত্তালিব তাঁর জন্মের ৭ম দিনে আকীকা সম্পন্ন করেছিলেন। আর আকীকা দুইবার হয় না। সুতরাং এ থেকে বুঝা গেল যে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম কে বিশ^বাসীর জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ এবং তাঁর উম্মতের জন্য রাসুল হিসেবে প্রেরণ করায় আল্লাহর শুকর জ্ঞাপনের নিমিত্তে তিনি নিজের জন্য এসব করেছেন। যেভাবে তিনি নিজের ওপর দরুদ পড়তেন। আর তাই আমাদের সবার উচিৎ আল্লাহর সন্তুষ্টি ও খুশি প্রকাশের জন্য মিলাদুন্নবী উদযাপনে সকলে একত্রিত হওয়া এবং তাবারুক খাওয়ানো এবং জাতীয় অন্যান্য নেক আমল ও আনন্দদায়ক কাজে লিপ্ত হওয়া।
সুতরাং আমরা হাদীস শরীফ থেকে অবগত হলাম যে যিনি সর্বপ্রথম রোযা ও লোকদেরকে খাওয়ানোর মধ্য দিয়ে মিলাদুন্নবী উদযাপন করেছেন তিনি হলেন স্বয়ং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম।
বিভ্রান্তির জবাব
বলা হয়ে থাকে যে, সর্বপ্রথম ফাতেমী খেলাফতের লোকজনই মিলাদুন্নবী উদযাপন করেন। আর তারা হলো শিয়া, রাফেযী মতাবলম্বী আব্দুল্লাহ ইবনে সাবার নাতি পূতী। এ কথার তথ্য সূত্র হিসাবে আল্লামা ইবনে কাছীরকে ব্যবহার করা হয়। তিনি البداية والنهايةনামক ইতিহাসের কিতাবের ১ম খন্ডের ১৭২ পৃষ্ঠাতে বলেন : أن الدولة الفاطمية …… ومنها الاحتفال بمولد النبي صلى الله عليه وسلم.
‘ফাতেমী খিলাফত (যা ছিল আব্দুল্লাহ মাইমুন আল কাদাহ ইহুদীর সাথে সম্পর্কযুক্ত, তারা মিসরে ৩৫৭ হিঃ ৫৬৭ হিঃ পর্যন্ত রাজত্ব করেছিল) এর সময়ে বিভিন্ন দিনে বিবিধ উৎসবের আয়োজন করা হত। আর মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম ও তাদের আয়োজনের একটি ছিল।’
জবাব: সাইয়্যেদ মুহাম্মদ ইবনে আলাবি আল মক্কী (ওফাত: ১৪২৫ হিঃ) এ অপবাদের জবাব দিয়েছেন তদীয় কিতাব حول الإحتفال بذكرى المولد النبوى الشريفএ। তিনি বলেন : ‘তোমরা যে উদ্ধৃতি দাও আমি বলব : আল্লাহর কসম তোমরা মিথ্যাবাদী। … বরং এটা হলো চোখকে ধোঁকা দেওয়া এবং নিজ মতাদর্শের অন্ধত্ব মাত্র। তারপরেও তাদেরকে কিভাবে বিশ^াস করবো? হে আমার মুসলিম ভাইগণ! মুসলিম মনিষীদের উদ্ধৃতি গ্রহনেণ ক্ষেত্রে এটা হলো তাদের চরিত্র। ইবনে কাসীর রাহমাতুল্লাহি আলায়হি এর মূল মতামত হলো :
الملك المظفر أبو سعيد الكوكبري ( ت৬৩০هـ) أحد الأجواد …شجاعا فاتكا عاقلا، عالما، عادلا، رحمه الله
মালকে মুজাফ্ফর আবু সাঈদবনি জয়নুদ্দনি (আরবলরে বাদশাহ, ওফাত: ৬৩০হিঃ)। তনিি প্রতি বছর রবউিল আউয়াল মাসে স্বীয় শহরে জৌলুসর্পূণভাবে বরিাট মলিাদ মাহফলিরে আয়োজন করতনে।তথায় বহু সুফী, আলমে ও গণ্যমান্যব্যাক্তরিা উপস্থতি থাকতনে।তনিি একজন বনেজীর বীর, আলমে, বচিারক ছলিনে।
ইবনে কাসীর রাহমাতুল্লাহি আলায়হি তাকে কত বিশেষণে বিশেষায়িত করেছেন! কিন্তু, বিরোধী মতবাদের লোকদের মত তাকে মুনাফিক, পাপী, ফাসেক ইত্যাদি দোষে দোষী সাব্যস্ত করেননি।অধিকন্তু এ বাদশাহর ব্যাপারে ইমাম জাহাবী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি এর سير أعلام النبلاء কিতাবে বলেছেন:كان متواضعا ،خيرا، سنيا يحب الفقهاء والمحدثين.তিনি ছিলেন বিনয়ী, সৎ, মর্যাদাবান। তিনি সুন্নী ছিলেন এবং ফকিহগণ ও মুহাদ্দিসগণকে ভালোবাসতেন ও পছন্দ করতেন। প্রখ্যাত আলেম ইবনে জাওযী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি এর নাতি ইমাম ইউসুফ ইবনে আব্দুল্লাহ (ওফাত:৬৫৪হিঃ) বলেন: وكان يحضر عنده في المولد أعيان العلماء والصوفية. মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম উদযাপন কালে তার নিকট আলেম ও সুফীদের নেতৃস্থানীয়গণ উপস্থিত হতেন।’
৩. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আগমন করার পর দেখলেন যে ইহুদীরা আশুরার দিনে রোযা রাখছে। তখন তিনি তাদেরকে বললেন: তোমরা এ দিনে রোযা কেন রাখো? তার বলল: এ দিন হলো মহান দিন। এ দিনে আল্লাহ মুসা আলায়হিস্ সালাম ও তাঁর সঙ্গীদেরকে মুক্তি দিয়েছিলেন তাই কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তিনি এ দিনে রোযা রাখতেন এবং আমরাও রাখি। অতঃপর আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম বললেন: আমরা মুসা আলায়হিস্ সালাম এর ক্ষেত্রে তোমাদের চেয়ে বেশী হক্দার। তারপর আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম এদিনে রোযা রাখতেন, আর বাকী সবাইকে রোযা রাখার নির্দেশ দিলেন।
এ হাদীস দ্বারা হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি মিলাদুন্নবী উদযাপনের স্বপক্ষে দলীল গ্রহন করেছেন। তিনি বলেন:
…… فنقلوه إلى يوم من السنة .وقد ظهر لي تخريجها علي أصل ثابت وهو ما ثبت في الصحيحين
‘মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম দবিস উদযাপনরেবৈধতা প্রতিয়মানকারী নির্ভরযোগ্য দলীল আমার সামনে এসেছে, তা হলো বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত সহীহ হাদীস। এই ঘটনা পরস্ফিুট করে যে আল্লাহতা’লার রহমত অবতরণরে কংিবা বালা-মসীবত দূর হওয়ার কোনো বশিষে দনিরে প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, সইে উদ্দশ্যেে র্বাষকিী হসিবেে তা উদযাপনরে সময় নামায, রোযা, দান-সদকাহ বা কুরআন তলোওয়াতরে মতো বভিন্নি এবাদত-বন্দগেী পালন করা শরীয়তে জায়যে। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম-এর মীলাদরে (ধরণীতে শুভাগমন দবিসরে) চযে়ে আল্লাহর বড় রহমত কী-ই বা হতে পার?ে এরই আলোকে প্রত্যকেরে উচতি হযরত মূসা আলায়হিস্ সালাম ও ১০ মহররমরে ঘটনার (দাললিকি ভত্তিরি) সাথে সঙ্গতি রখেে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম দবিস উদযাপন করা; তবে যাঁরা এটি ববিচেনায় ননে না, তাঁরা (রবউিল আউয়াল) মাসরে যে কোনো দনি তা উদযাপনে আপত্তি করনে না; অপর দকিে কউে কউে সারা বছররে যে কোনো সময় (দনি/ক্ষণ) তা উদযাপনকে বধৈ জনেছেনে।’
ইবনে হাজার আসকালানী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি এর বাণী থেকে এটা প্রমাণিত হলো যে, যে কোন রকমের ইবাদতের দ্বারাই মিলাদুন্নবী উদযাপন করা বৈধ।
৪. হযরত উরওয়া রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন : ‘সুওয়াইবা ছিল আবু লাহাবের দাসী এবং সে তাকে আযাদ করেছিল। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম কে দুধপান করায়। আবু লাহাব যখন মারা গেল, তার একজন আত্মীয় তাকে স্বপ্নে দেখল যে, সে কষ্টের মাঝে নিপতিত আছে। তাকে জিজ্ঞাসা করল : তোমার সাথে কিরুপ ব্যবহার করা হয়েছে। আবু লাহাব বলল: যখন তোমাদের থেকে দুরে রয়েছি, তখন থেকেই কষ্টে আছি। কিন্তু, ভাতিজার (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম) আগমনের খুশিতে সুওয়াইবাকে আযাদ করার কারণে সোমবার আমাকে জান্নাতের শরাব পান করানো হচ্ছে।’
ইমাম নাসিরুদ্দিন দামেস্কী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি (ওফাত:৮৪২হি.) এ হাদীস দ্বারা মিলাদুন্নবীরসাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম পক্ষে দলীল গ্রহণ করেছেন। তদ্বীয় কিতাব مورد الصادي في مولد الهاديতে তিনি উল্লেখ করেন: ‘এটা সত্য যে, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম এর জন্মের খবরে খুশি হয়ে দাসী সুওয়াইবাকে মুক্তি দেওয়ার কারণে আবু লাহাবের প্রতি সোমবারে কবরের আযাব লঘু করা হয়।’ অতঃপর তিনি আবৃত্তি করেন:
إذا كان هذا كافرا جاء ذمُّه * بتبت يداه فى الجحيمِ مخلَّدا
أتي أنه في يومِ الاثنينِ دائمًا * يُخفَفُ عنه للسرورِ بأحمدا
فما الظّنُّ بالعبدِ الذي طولَ عمرِه * بأحمدَ مسروراً ومات مُوَحِّدا
“এমন জঘন্য কাফির যার দোষ র্বণনায় এসছেে য,ে তার হাত ধ্বংস হয়ছে,ে তার স্থায়ী নবিাস চরি জাহান্নাম। আহমদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার আবর্ভিাবে খুশী হয়ে র্সবদা সোমবার আসলে তার থকেে আজাব হালকা করা হয়, তবে করিূপ ধারণা হতে পারে সে ব্যক্তরি ব্যাপার,ে যার জীবন আহমদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার বষিয়ে আনন্দতি ছলি এবং তাওহীদবাদী হয়ে ইন্তকোল করছে।ে”উপরোক্ত হাদীস দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, যারা মিলাদুন্নবীসাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম উদযাপন করবেন আল্লাহ তাদেরকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করবেন।
ইমাম শামসুদ্দিন ইবনে জাযারী (ওফাত:৮৩৩হিঃ) এ হাদীস দ্বারা মিলাদ পালনের দলীল গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন:
قد رؤى أبو لهب بعد موته فى النوم فقيل له ما حالك….. بولادة النبي صلى الله عليه وسلّم وبإرضاعها له.
‘বর্ণিত আছে যে, আবু লাহাবরে আযাদকৃত দাসী সুয়াইবাহ তাকে (হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দুধ পান করযি়ছেনে। যাকে আবু লাহাব তখনই আযাদ করছেলিো তখন তনিি তাকে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বলোদত শরীফরে শুভ সংবাদ শুনযি়ছেলিনে। উল্লখ্যে য,ে একদা আবু লাহাবকে তার মৃত্যুর পর স্বপ্নে দখো গযি়ছেলিো। (হযরত আব্বাস রাদ্বযি়াল্লাহু আনহু তাকে স্বপ্নে দখেছেলিনে) তখন তাকে বলা হলো “তোমার কি অবস্থা?” সে বলল, দোজখইে আছ।ি তবে প্রতি সোমবার রাতে আমার শাস্তি কছিুটা শথিলি করা হয়; আর আমি আমার এ আঙ্গুল দুটরি মধ্যখানে চুষে পানি পানরে সুযোগ পাই। আর তখন সে তার আঙ্গুলরে মাথা দযি়ে ইশারা করলো। আর বলল, আমার শাস্তরি শথিলিতা এ জন্য য,ে সুয়াইবা যখন আমাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বলোদতরে সুসংবাদ দযি়ছেলিো, তখন তাকে আমি আযাদ করে দযি়ছেলিাম এবং সে হুযুরকে দুগ্ধপান করযি়ছে।েযখন ঐ আবু লাহাব কাফরি, যার তরিস্কারে কোরআনরে সূরা নাযলি হয়ছে।ে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এ আনন্দ প্রকাশরে কারণে জাহান্নামে পুরস্কৃত হয়ছে।ে এখন উম্মতে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঐ একত্ববাদী মুসলমানরে কি অবস্থা? যে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বলোদতে খুশি হয় এবং হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ভালবাসায় তার সাধ্যানুযায়ী খরচ কর।ে তনিি জবাবে বলনে- আমার জীবনরে শপথ! নশ্চিয়ই পরম করুণাময় আল্লাহ তাকে আপন করুণায় নযি়ামতর্পূণ জান্নাতে প্রবশে করাবনে।’ আর যারাই ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপনে ইবাদতসহ যাবতীয় ভালোকাজ করবে, তাদের প্রত্যেককে প্রতিদান দেওয়া হবে।
৫. হযরত আবু লুবাবা ইবনে আবদুল মুনযির রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: নিশ্চয়ই জুমুআর দিন হলো সকল দিনের সর্দার। এতে পাঁচটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আল্লাহ আদম আলায়হিস্ সালামকে এই দিনে সৃজন করেছেন।
আল্লাহর নবীদের কারো জন্মের বদৌলতে ঐ সময় মর্যাদাবান হওয়া; এ দিকেই উক্ত হাদীস দালালত করে। অতএব, যেদিনে সর্বোত্তম নবী ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল জন্মগ্রহণ করেছেন, সেদিনের মর্যাদা কিরুপ হবে? আর এ সম্মান শুধু একদিন দেখানোর মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং নেয়ামতের শুকরিয়া আদায়ের নিমিত্তে বারংবার বা যখনই এইদিন আসবে তখনই সম্মান প্রদর্শন করা যাবে। যেভাবে হাদীসে জুমুআা বারের কথা বলা হয়েছে।
৬. হযরত শাদ্দাদ ইবনে আউস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমরা বললাম: হে আল্লাহর রাসুল! আপনার মেরাজ কেমন ছিল? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে মিরাজের বিবরণ বলেনঃ
فقال: انزل فنزلت فقال: صل فصليت، ثم ركبنا قال: أتدري أين صليت؟ قلت ্রالله أعلمগ্ধ . قال: صليت ببيت لحم، حيث ولد عيسى – عليه السلام – المسيح ابن مريم
অতপর হযরত জিব্রাঈল আলায়হিস্ সালাম আমাকে বাহন থেকে অবতরণের কথা বললেন, আপনি নামাজ পড়–ন, আমি নামাজ পড়লাম, তারপর আমরা বাহনে উঠলাম, হযরত জিব্রাঈল আলায়হিস্ সালাম আমাকে বলরেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্ আপনি কোথায় নামাজ পড়েছেন? আমি উত্তরে বললাম, আল্লাহ্ তা‘আলা ভাল জানেন। জিব্রাইল আলায়হিস্ সালাম বললেন, হযরত ঈসা আলায়হিস্ যেখানে জন্মগ্রহণ করেছেন, সেখানেই আপনি নামায পড়েছেন। উপরোক্ত হাদীস থেকে জানা গেল যে, আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের কারণে স্থানের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। যেমনিভাবে হযরত জিব্রাইলের অনুরোধে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম ঈসা আলায়হিস্ সালাম এর জন্মস্থান বেথেলহামে দুই রাকাআত নামায আদায় করেছিলেন। সুতরাং যে জমীনে আল্লাহর হাবীব জন্মগ্রহণ করেছেন তার কিরুপ সম্মান হবে এবং তার মিলাদ উদযাপনে করনীয় কি হবে?
৭. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: একদা আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবাদের কিছু সংখ্যক লোক একস্থানে বসেছিল এবং নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম এর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। অতঃপর আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম বের হলেন এবং তাদের নিকটবর্তী হয়ে শুনলেন তারা আলোচনা করছে। তিনি তাদের আলোচনা শুনতে লাগলেন। তাদের কেউ বলছিলেন : কতই আশ্চর্য্যে বিষয় যে, আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির মাঝ থেকেই তাঁর বন্ধু গ্রহণ করেছে, ইব্রাহিম আলায়হিস্ সালাম হলেন খলিলুল্লাহ। অন্যজন বললেন: আরো আশ্চর্য্যের হলো আর আল্লাহ মূসার আলায়হিস্ সালাম সাথে কথােপকথন করছেনে সরাসরি । আরেকজন বললেন : আর ঈসা আলায়হিস্ সালাম হলেন আল্লাহর বাণী ও রুহুল্লাহ। অন্যজন বললেন : আদম আলায়হিস্ সালাম হলেন আল্লাহর মনোনীত ব্যক্তি। অতঃপর আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম তাদের মাঝে তাশরীফ আনলেন এবং বললেন: আমি তোমাদের কথা ও আশ্চর্য হওয়া শুনেছি। নিশ্চয়ই ইব্রাহিম আলায়হিস্ সালাম আল্লাহর বন্ধু এবং তিনি তাই। মুসা আলায়হিস্ সালাম আল্লাহর গোপন কথা দেশপ্রেম এবং তিনি তাই। আর হযরত ঈসা আলায়হিস্ সালাম তাঁর রুহ ও বাণী এবং তিনি তাই। আদম আলায়হিস্ সালাম মহান আল্লাহর মনোনিত ব্যক্তি এবং তিনিও তাই। একমাত্র আমিই হলাম হাবীবুল্লাহ (আল্লাহর অন্তরঙ্গ বন্ধু) এবং তাতে আমার কোন অহংকার, গর্ব নেই। আমিই কিয়ামতের দিনে আল্লাহর প্রশংসার ঝান্ডা বহনকারী এবং এতে আমার কোন অহংকার নেই। আর আমিই কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম শাফায়াতকারী এবং আমার শাফায়াতই প্রথম কবুল করা হবে, তাতে আমার কোন অহংকার নেই। আমিই সর্বপ্রথম জান্নাতের দরজায় কড়া নাড়বো এবং তাতে আমার কোন অহংকার নেই। অতঃপর জান্নাতের দ্বার খুলে দেওয়া হবে আমি ও গরীব মু’মিনগণ সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবো, তাতে আমার কোন গর্ব নেই। আমি সৃষ্টির সূচনা থেকে শেষ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশী সম্মানীত, এতে আমার কোন গর্ব নেই।
সাহাবাগণ সেখানে নবীদের জীবন বৃত্তান্ত আলোচনা করছিলেন এবং আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম তাদের সামনে স্বীয় জীবন নিয়ে আলোচনা করলেন। কেননা, তিনি হলেন তাদের সবার মাঝে শ্রেষ্ঠ, সর্বোত্তম এবং সবার গুণের সমষ্টি। আর মিলাদুন্নবীর মাহফিলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম এর জীবন বৈ অন্য কিছু আলোচনা করা হয় না।
এ হাদীসের সপক্ষে আরেকটি রেওয়ায়াতে আছে যে, হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেছেন : একদা আল্লাহর রাসুল বের হয়ে সাহাবাদের এক মজলিসে পৌছেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: তোমরা এখানে বসে কি করছ? তারা বললেন : ‘আমরা আল্লাহর স্মরণে ও তিনি আমাদের হিদায়াত দান করেছেন এবং আপনাকে প্রেরণ করে আমাদের ওপর যে ইহসান করেছেন, তার শুকর আদায়ের নিমিত্তে বসেছি।’ তিনি বললেন: সত্যই কি তোমরা এজন্যই বসেছ? তারা বললেন: ‘আল্লাহর শপথ! আমরা এজন্যই বসেছি।’ তিনি বলেন: আমি তোমাদেরকে মিথ্যাবাদী মনে করে তোমাদের কাছ থেকে শপথ নেইনি! বরং এ জন্য যে, জিব্রাইল আমাকে এসে সংবাদ দিল যে, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের ব্যাপারে ফেরেশতাদের সামনে গৌরব করছেন।
সুতরা! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম এর জীবন বৃত্তান্ত ও তার জন্ম নিয়ে আলোচনা করার অনুষ্ঠান শরয়ীভাবেই প্রশংসিত। আর সাহাবাগণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম এর ওফাতের পরেও মজলিজ বানিয়ে তাঁর জীবন বৃত্তান্ত আলোচনা করতেন। কা’ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসই এর প্রমাণকরে।
একদা হযরত কা’ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু এর কাছে গেলেন এবং দেখলেন যে, তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম এর জীবন নিয়ে আলোচনা করছেন। তখন তিনি বললেন: ‘প্রতিদিন সত্তর হাজার ফেরেশতা আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম এর রওজা মোবারকে আসেন এবং রওজাতে তাদের পাখা বুলায়। তারা সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁর ওপর সালাত পড়তে থাকে। অতঃপর সন্ধায় সত্তর হাজার ফেরেশতার অপরদল আসে এবং এভাবে তা কিয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে।’
আর এ হাদীসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম এর ওফাতের পরেও তার স্মরণে সাহাবাদের মজলিসের কথা জানা যায়। মিলাদুন্নবীরসাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম মাহফিলে ও তাঁর জীবন বৃত্তান্ত, হাদীস, জন্ম নিয়ে আলোচনা করা হয়।
৮. হযরত আম্মার ইবনে আবু আম্মার রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু তেলাওয়াত করলেন: اليوم أكملت لكم دينكم وأتممت عليكم نعمتي ورضيت لكم الإسلام دينا.ıআজ আমি তােমাদরে জন্যে তােমাদরে দ্বীনকে র্পূনাঙ্গ করে দলিাম, তােমাদরে প্রতি আমার অবদান সর্ম্পূণ করে দলিাম এবং ইসলামকে তােমাদরে জন্যে দ্বীন হসিবেে পছন্দ করলাম। তখন তাঁর নিকট একজন ইহুদী ছিল, সে বলল; যদি এ আয়াত আমাদের ওপর নাযিল হতো তবে আমরা এ দিনকে ঈদ হিসেবে গ্রহণ করতাম। তখন তিনি বললেন : এ আয়াত দুই ঈদেই নাযিল হয়েছে, জুমুআর দিনে এবং আরাফার দিনে।
এই হাদীসের সমর্থনে সহীহ বোখারীতে হাদীস এসেছে। হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: এক ইহুদী তাকে বলল: হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনাদের কোরআনে একটি আয়াত আছে, যা আপনারা পাঠ করে থাকেন। তা যদি আমাদের ইহুদী জাতির ওপর নাযিল হতো, তবে অবশ্যই আমরা সেদিনকে ঈদ হিসেবে পালন করতাম। তিনি বললেন কোন আয়াত? সে বলল: اليوم أكملت لكم دينكم وأتممت عليكم نعمتي ورضيت لكم الإسلام دينا.ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বললেন: এটি যে দিনে এবং যে স্থানে নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম এর ওপর নাযিল হয়েছিল তা আমারা জানি, তিনি সেদিন আরাফায় দাড়িয়েছিলেন এবং তা ছিল জুমুআর দিন।
[বুখারী, الصحيح., ، كتاب الإيمانباب زيادة الإيمان ونقصانه،, ج১، ص ১৮، رقم৪৫] উপরোক্ত হাদীসদ্বয়ে হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব ও আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু এর ঐকমত্য যে, নিয়ামত লাভের দিনকে ঈদ হিসাবে গ্রহণ করা যাবে। আর আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম হলেন আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় নেয়ামত, তাঁর জন্য মাহফিল করা এবং মিলাদের আনুষ্ঠানিকতাও ঈদের পর্যায়ে ভুষিত।
বিভ্রান্তির নিরসন
প্রশ্ন করা হয়ে থাকে যে, ১২ রবিউল আউয়াল তথা এ মাস হলো আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম এর আগমনের মাস এবং ওফাতের মাসও। তো মিলাদুন্নবী তথা খুশি প্রকাশের সাথে সাথে শোক কেন প্রকাশ করা হয় না?
জবাব ঃ এই প্রশ্নের জবাব অনেক আলিমে দ্বীন দিয়েছেন। তম্মধ্যে ইমাম হাফেজ সুয়ুতী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি الحاوى للفتاوىকিতাবে বলেন:
أن ولادته صلى الله عليه وسلم أعظم النعم علينا ووفاته أعظم المصائب لنا، والشريعة حثت على إظهار شكر النعم والصبر والسكون والكتم عند المصائب … يوم عاشوراء مأتما لأجل قتل الحسين لم يأمر الله ولا رسوله باتخاذ أيام مصائب الأنبياء وموتهم مأتما فكيف ممن هو دونهم.
‘নিশ্চয়ই নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম এর জন্ম বা মিলাদ শরীফ আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় নেয়ামত এবং তাঁর ওফাত শরীফ আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় মুসিবত। আর ইসলামী শরীয়ত নেয়ামত লাভের জন্য শুকরিয়া আদায়ের প্রতি বেশী গুরুত্ব দিয়েছে এবং বিপদে ধৈর্যধারণ, স্থির থাকা ও তা গোপন রাখরা প্রতি উৎসাহ দিয়েছে। শরীয়ত নবজাত শিশুর জন্য খুশি ও শুকরের নিমিত্তে আকীকা করার নির্দেশ দিয়েছে, কিন্তু; মৃতের জন্য পশু যবেহ করার নির্দেশ দেয়নি। বরং মৃতের জন্য বিলাপ ও দুঃখ প্রকাশ করতে নিষেধ করেছে। সুতরাং ইসলামী শরীয়তের বিধান এ মর্মে দালালত করে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম এর মিলাদ উপলক্ষে এ মাসে আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করা উত্তম, ওফাতের জন্য দুঃখ প্রকাশ নয়।’ ইমাম ইবনে রজব হাম্বলী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি তদ্বীয় কিতাবاللطائف এ রাফেযী সম্প্রদায়কে তিরস্কার করে বলেন : তারা ১০ মুর্হরমকে ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু এর শাহাদাত উপলক্ষে মাতমের দিন হিসেবে গ্রহণ করেছে, অথচ আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লাম আম্বিয়া কেরামদের বিপদের দিন ও ওফাতের দিনগুলোতে মাতমের আদেশ দেননি! তাদের চেয়ে সম্মানে যারা আরো পরে অবস্থান করছে তারা তো দূরের কথা। [আস সুযুতীর., الحاوي للفتاوي ১মখন্ড/ পৃঃ ২২৬।]