মুসলিম উম্মাহ্র মধ্যে আবির্ভূত জাহান্নামী দলগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শিয়া। তারা তিনশত উপদলে বিভক্ত। তাদের বিশ্বাস সাহাবা-ই কেরামের মধ্যে চারজন ছাড়া অবশিষ্ট সকল সাহাবা মুরতাদ বা ইসলাম ত্যাগী। ঐ চারজন হলেন যথাক্রমে- হযরত মাওলা আলী মুশকিল কোশা র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহুল করীম, হযরত আবু যার গিফারী, হযরত সালমান ফারসী ও হযরত মিকদাদ ইবনে আসওয়াদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুম।
তাদের মূল পুঁজি ইশকে রাসূল নয়, তাদের মূলধন হচ্ছে আহলে বায়ত। এটিকে সামনে রেখেই তারা তাদের যাবতীয় গোমরাহী প্রচার করে আসছে। তাদের জঘন্য কুফরী আক্বীদা-বিশ্বাস সম্পর্কে অনেক আলেমও অবহিত নন। সেক্ষেত্রে সাধারণ মুসলমানদের কি অবস্থা সহজে অনুমেয়।
তাদের মৌলিক কুফরী আক্বীদা প্রধানত চারটি
এক. আক্বীদা-এ তাহরীফে ক্বোরআন: অর্থাৎ তাদের মতে মুসলমানদের নিকট বর্তমান ‘ক্বোরআন’ আসল নয়। তাদের মতে ক্বোরআন পাকের সূরা সংখ্যা- ১১৫টি। অতিরিক্ত সূরাটি হচ্ছে- সূরাতুল বেলায়ত। তাদের মতে আয়াতের সংখ্যা সতের হাজার।
দুই. আক্বীদা-ই ইমামত: অর্থাৎ শিয়াদের ইমাম বা ধর্মীয় নেতারা হলেন মা’সূম বা নিষ্পাপ। তাদের ইমামদের মর্যাদায় মুর্কারব ফেরেশতা ও মুরছাল নবীও পৌঁছতে পারে না।
তিন. নিকাহে মোতা বা চুক্তিভিত্তিক বিয়ে। এটি তাদের মতে অনেক ফযিলতের কাজ।
চার. তাক্বীয়া: অর্থাৎ যখন যেমন, তখন তেমন। প্রয়োজনে নিজের আসল আক্বীদা-বিশ্বাস গোপন করা।
উল্লেখ্য যে, এযাবৎ সরল প্রাণ মুসলমানদেরকে ইসলামের মূলধারা সুন্নী মতাদর্শ থেকে বিভ্রান্ত করার সকল অপকৌশল বাতিলপন্থীগণ অবলম্বন করে থাকে। তন্মধ্যে বড় হাতিয়ার হলো অর্থ ও নারী।
বাংলাদেশের বাস্তবতায় এ দু’টিই শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে নিঃসন্দেহে। নারীর মাধ্যমে সাফল্য পাওয়ার জন্য তাদের মতে বৈধ হাতিয়ার হলো নিকাহে মোতা বা সাময়িক ও চুক্তিভিত্তিক বিয়ে। মুসলিম তরুণদের বশ করার ক্ষেত্রে এইটি সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করার অশঙ্কাই অধিক। অর্থ তো আছেই। সুন্নী মুসলমানদের মাহফিল সমূহে নানা ধরনের খরচ মিটাতে আয়োজকদের হিমশিম খেতে হয়। আর নব্য শিয়াদের মাহফিলে শ্রোতাদেরকেও সন্তোষজনক সম্মানী দেয়া হয়। এ অর্থের যোগান কোত্থেকে হচ্ছে একটু চিন্তা করার আহ্বান করছি। আর বক্তাদের পকেটের স্বাস্থ্য কতো রিষ্টপুষ্ট হচ্ছে তাতো বলার অপেক্ষা রাখে না। ইতোমধ্যে অনেকে মূল্যবান দামী গাড়ীও উপহার পেয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে।
ইসলামের মূলধারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত এর অনুসারীগণ রবিউল আউয়াল শরীফকে কেন্দ্র করে জশনে জুলূসে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম পালন করে। নব্য শিয়ারা-এটিকে ‘ঈদে আযম’ নামে পালন করে সুন্নীদেরকে ধোকায় ফেলছে।
এবার আর একধাপ এগিয়ে ২৮ যিলহজ্ব ‘‘ঈদে গদীরে খুম’’ এর আয়োজন শুরু করেছে গত বৎসর থেকে। এ সম্পর্কে আয়োজকদের নিকট আমরা একটি বিষয় জানার অধিকার সংরক্ষণ করি। আর তা হলো ইতিপূর্বে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অনুসারীগণ এটি কোন কালে পালন করেছে কিনা। আশা করি তাঁরা আমাদেরকে হতাশ করবেন না, নির্ভরযোগ্য প্রমাণসহকারে পেশ করবেন।
হযরতে সাহাবা-ই কেরামের ফযিলত ও শ্রেষ্ঠত্বের বর্ণনা সম্বলিত হাদীসগুলো পাঠ করলে- যখন যাঁর সম্পর্কে পাঠ করা হয়, তখন মনে হয় ওনিই শ্রেষ্ঠ। কিন্তু এগুলো হচ্ছে ‘‘আংশিক শ্রেষ্ঠত্ব’’। সাময়িকভাবে শ্রেষ্ঠত্বের ক্রমধারা- নিম্নরূপ- নবীগণ আলায়হিস্ সালামের পর সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হলেন হযরত আবু বকর সিদ্দিক, তারপর হযরত ওমর ফারূক, তারপর হযরত ওসমানগণি, তারপর হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুম। এটিই হচ্ছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আক্বীদা।
উল্লেখ্য যে, হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু সম্পর্কে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের বাণী নিয়ে প্রত্যেক মুসলমান-এর চিন্তা-ভাবনা করা প্রয়োজন। যথা-
عن على قال قال رسول الله صلى الله عليه واله وسلم فيك مثل من عيسى ابغضته اليهود حتى بهتوا امه واحبته النصارى حتى انزلوه المنزلة التى ليس له، ثم قال يهلك فى رجلان محب مفرط يقرظنى بما ليس فى ومبغض يحمله شنئآنى على ان يبهتنى، رواه احمد-
হযরত আলী (র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু) রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম তাঁকে সম্বোধন করে ইরশাদ করেন- (হে আলী) তোমার মধ্যে হযরত ঈসা আলায়হিস্ সালামের দৃষ্টান্ত বিদ্যমান। তাঁকে ইয়াহুদীগণ বিদ্বেষ করেছে। অতঃপর তারা তাঁর মা (হযরত মরিয়ম আ.)কে অপবাদ দিয়েছে। আর নাসারাগণ তাঁকে মুহাব্বত করেছে। অবশেষে তাঁকে এমন স্তরে আসীন করেছে যে স্তর তাঁর নেই। (অর্থাৎ তাঁকে ইবনুল্লাহ্ আল্লাহর পুত্র বলেছে)। অতঃপর হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমাকে নিয়ে দুই ব্যক্তি ধ্বংস হবে। এক. সীমালঙ্ঘনকারী প্রেমিক। আমার এমন প্রশংসা করবে যা আমার মধ্যে উপস্থিত নেই। দুই. আমার প্রতি বিদ্বেষভাবাপন্ন ব্যক্তি। আমার প্রতি শত্রুতা তাকে আমার প্রতি অপবাদ দিতে উৎসাহিত করবে। [মুসনাদে আহমদ] মুসলিম উম্মাহ্র মধ্যে হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুকে নিয়ে শিয়াদের অতি বাড়াবাড়ি এর পূর্বাভাস বিদ্যমান অত্র হাদিসে। অতঃপর সুন্নী মুসলমানদের সতর্ক অবস্থান একান্ত কাম্য।
عن البراء بن عازب ، وزيد بن أرقم – ان رسول الله – صلى الله عليه وسلم – لما نزل بغدير خم أخذ بيد على فقال ألستم تعلمون أنى أولى بالمؤمنين من أنفسهم قالوا بلى، قال ألستم تعلمون أنى أولى بكل مؤمن من نفسه؟ قالوا بلى فقال اللهم من كنت مولاه فعلى مولاه، اللهم وال من والاه، وعاد من عاداه فلقيه عمر بعد ذلك فقال له هنيئا يا ابن أبى طالب ، أصبحت وأمسيت مولى كل مؤمن ومؤمنة . رواه أحمد –
হযরত বারা ইবনে আযে ও হযরত যায়দ ইবনে আরক্বাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, যখন রাসূল পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্ব থেকে ফেরার পথে ‘গদীরে খুম’ নামক স্থানে অবস্থান করলেন- তখন হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু-এর হাত ধরে বললেন- হে সাহাবাগণ! তোমরা কি জান না- আমি ঈমানদারদের প্রাণের চেয়ে নিকটে। তাঁরা বললেন-হাঁ। তাপরপর, তিনি ইরশাদ করলেন- তোমরা কি জান না- আমি প্রত্যেক ঈমানদারের প্রাণেরও নিকটতম। তাঁরা বললেন- হাঁ। (অর্থাৎ প্রত্যেক ঈমানদার এর জন্য তাঁরই পূর্ণ আনুগত্য করা উচিত) অতঃপর তিনি ইরশাদ করলেন- হে আল্লাহ্!আমি যার মাওলা আলীও তাঁর মাওলা। হে আল্লাহ্! তুমি মুহাব্বত কর- যে আলীকে মুহাব্বত করে। আর যে তাঁর প্রতি শত্রুতা পোষণ করে- তাকে তার কর্মের শাস্তি দাও। এরপর তাঁর সাথে হযরত ওমর এর সাক্ষাৎ হলে তিনি বলেন- মুবারকবাদ হে আবু তালেবের ছেলে আলী- আপনি সকাল-সন্ধ্যায় সর্ব প্রত্যেক ঈমানদার নর-নারীর মাওলা। [মুসনাদে আহমদ] আলোচ্য হাদীসটিকে শিয়ারা হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু-এর খেলাফত এর পক্ষে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে। অথচ এতে খেলাফতের কোন বিষয় উল্লেখ নেই। পরবর্তী সময়ে খোলাফায়ে রাশেদীনের প্রথম তিনজনের খলীফা নির্বাচন করলে কেউ এটিকে দলীল হিসেবে উপস্থাপন করেনি। এমনকি স্বয়ং মওলা আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুও করেননি। অতএব ভ্রান্ত শিয়াদের এ দাবী সম্পূর্ণ অমূলক। আরবী অভিধানে মওলা শব্দের যেসব অর্থ বর্ণিত সেখানে খলীফা অর্থ নেই। এটি হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর বিশেষ ফজিলতের দলীল। এরকম অনেক বর্ণনা খোলাফায়ে রাশেদীনের প্রথম তিনজনের ক্ষেত্রেও বর্ণিত। হাদীস শরীফে হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে উম্মতের প্রতি সর্বাধিক দয়াবান বলা হয়েছে। অতএব তিনি আহলে বায়তের প্রতিও সর্বাধিক দয়াবান। হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সম্পর্কে বর্ণিত- আল্লাহ্ তা‘আলা সত্যকে হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু-এর জিহ্বার উপর আমানত রেখেছেন। সুতরাং সিদ্দিকে আকবর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু-এর হাতে তিনিই প্রথম বায়আত করেছেন। এটি অমুলক কেমনে হবে? হযরত ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু রসূল করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের আহ্বানে দু’বার জান্নাত ক্রয় করেছেন বিশাল পরিমাণ সম্পদ সদকা করে। অপরাপর সাহাবা-ই কেরাম সম্পর্কেও অনেক বিশুদ্ধ বর্ণনা বিদ্যমান। হযরত আবু ওবায়দা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুকে হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ‘‘আমীনুল উম্মাত’’ উপাধিতে ভুষিত করেছেন। কেউ তো এটাকে খেলাফতের সর্বযোগ্য তিনি বলে দলীল পেশ করেননি। অথচ আমানতদারী এপদের জন্য উল্লেখ্যযোগ্য একটি বিষয়। এ জাতীয় কোন হাদীসকে কেন্দ্র করে কোন সময় কোন ঈদ পালিত হয়নি। শুধুমাত্র গদীরে খুম এর হাদীসকে কেন্দ্র করে ‘‘ঈদ’’ পালনের নেপথ্যে কোন রহস্য তা ভেবে দেখার সময় এসেছে।
লেখক: শায়খুল হাদীস, সোবহানিয়া আলিয়াকামিল মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম।