মাজমূ‘আহ্-এ সালাওয়াতির রসূল ও খাজা চৌহরভী রহমাতুল্লাহি আলায়হি
মাজমূ‘আহ্-এ সালাওয়াতির রসূল ও খাজা চৌহরভী রহমাতুল্লাহি আলায়হি
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ অছিয়র রহমান
মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন যুগে যুগে মানব জাতির হেদায়তের জন্য অসংখ্য নবী-রসূল, গাউস, আবদাল ও অগণিত আউলিয়া কেরাম দুনিয়াতে প্রেরণ করেন। যাদের নিরলস পরিশ্রম, ত্যাগ, কোরবানী, সাধনা এবং উত্তম আদর্শের মাধ্যমে হক, ন্যায়, আল্লাহর সুমহান বাণী ও আদর্শ পৃথিবীর এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্তে প্রচার ও প্রসার লাভ করেছে। যার কারণে তাদের সে প্রচেষ্টায় আজ অবধি পৃথিবীর বুকে উড্ডীন রয়েছে ঈমান-ইসলামের ঝান্ডা। তাদেরই একজন ছাহেবে এলমে লাদুন্নি, খাজায়ে খাজেগান মারেফাতে ইলাহীর অন্যতম ধারক ও বাহক সৈয়দুনা খাজা আব্দুর রহমান চৌহরভী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি। হুযুরে পুরনূর নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এবং পীরানে পীর দস্তগীর, গাউসুল আযম, সৈয়দুনা শায়খ সৈয়দ আব্দুল কাদের জিলানী রাহমাতুল্লাহি আলায়হির আধ্যাত্মিক নেয়ামতের একদিকে প্রকৃত উত্তরাধিকারী ছিলেন, অপরদিকে সুন্নাতে নববীর পরিপূর্ণ পাবন্দ এবং শরীয়ত, তরিকত ও মারেফাতের একনিষ্ঠ সাধক ছিলেন। যার ইলমে লাদুন্নির প্র¯্রবণ হলো আজ বিশ্বের অদ্বিতীয় অতুলনীয় ত্রিশ পারা দরুদ শরীফের গ্রন্থ ‘মাজমূ‘আহ্-এ সালাওয়াতে রসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম, যা নবী প্রেমের জ্বলন্ত নিদর্শন। তিনি কত উচুঁ মাপের আধ্যাত্মিক ওলী ছিলেন তা বর্ণনা দিয়ে শেষ করা যাবে না। শুধুমাত্র এতটুকু যথেষ্ট মনে করি যার আধ্যাত্মিক জগতের শিষ্য এবং খলিফায়ে আযম হলেন আওলাদে রসূল, গাউসে জামান, কুতুবুল আউলিয়া, হাফেজ ক্বারী আল্লামা সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রহমাতুল্লাহি আলায়হি। পাক-ভারত উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ দ্বীনী সুন্নি বিদ্যাপীঠ, এশিয়া বিখ্যাত দ্বীনি শিক্ষা নিকেতন বাংলার আজহার জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলীয়ার প্রতিষ্ঠাতা।
ইলমে লাদুন্নির মহান ধারক খাজা আবদুর রহমান চৌহরভী রহমাতুল্লাহি আলায়হি ১২৬২ হিজরীতে (১৮৪৩ ইংরেজী সালে) সীমান্ত প্রদেশের হাজারা জিলার হরিপুর শহরের নিকটবর্তী ‘চৌহর শরীফে’ জন্মগ্রহণ করেন। যা বর্তমানে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত। তাঁর পিতার নাম হযরত খাজা ফকির মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহি আলায়হি। যিনি হযরত খিজির আলায়হিস্ সালামের ‘দর্শন’ লাভে সৌভাগ্যবান হন। তাই তাঁকে খিজিরী উপাধিতে ভূষিত করা হয়। মাত্র আট বছর বয়সে তিনি সম্মানিত পিতাকে হারান। স্বল্পভাষী খাজা চৌহরভী রহমাতুল্লাহি আলায়হি শৈশবকাল থেকেই আধ্যাত্মিক কর্মকান্ডে লিপ্ত ছিলেন। রুবুবিয়াত ও রহমানিয়াতের রঙে তাঁর কার্যাদি ছিল সম্পূর্ণরূপে রঞ্জিত। আর জীবন দর্শন ছিল রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামার আদর্শ ও নীতির বাস্তব প্রতিচ্ছবি। তিনি ছিলেন একাধারে তাসাউফপন্থীদের সরতাজ, মাআরেফে লাদুন্নিয়ার প্র¯্রবণ, উলুমে ইলাহিয়ার ধারক। সাথে সাথে সন্দেহাতীতভাবে আপন যুগের ‘গাউসে জামান’ ছিলেন। জাহেরীভাবে খাজা আব্দুর রহমান চৌহরভী কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ না করলেও, তিনি ছিলেন ইলমে লাদুন্নির পরিপূর্ণ ধারক-বাহক। যার প্রমাণ তাঁর রচিত ত্রিশ পারা ‘দরুদ শরীফের’ গ্রন্থ মাজমুয়ায়ে সালাওয়াতির রাসূল (সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম)। এ মহান সাধক প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামার শানে ও প্রেমে বিভোর হয়ে রচনা করেন বিশ্বের অদ্বিতীয় গ্রন্থ, ত্রিশ পারা সম্বলিত ‘দরুদ শরীফ’ সম্বলিত কিতাব ‘মুহায়য়িরুল উকুল ফি বয়ানে আওসাফ-ই আকলিল উকুল ‘মাজমুয়ায়ে সালাওয়াতির রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম।’ প্রায় সুদীর্ঘ ১৩ বছর অর্থাৎ ১২ বছর ৮ মাস ২০ দিন সাধনার পর ৩০ পারা বিশিষ্ট প্রতি পারায় ৪৮ পৃষ্ঠা করে ১৪৪০ পৃষ্ঠার বিশাল এ দরূদ শরীফের কিতাবখানা সম্পন্ন করেন। আলহামদুলিল্লাহ্ অত্যন্ত আনন্দের বিষয় হচ্ছে যে এটি বর্তমানে উর্দু ও বাংলায় অনুবাদ হয়ে প্রকাশিত হচ্ছে। যেখানে ৬৬৬৬টি দরুদ শরীফ রয়েছে। এ বিশাল কিতাব রচনা প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমি লিখতে বসে কাগজের উপর শুধুমাত্র কলম বসিয়ে রাখতাম, আর কলম তার আপন গতিতে লিখতে শুরু করত।’
আর আমার তাওয়াজ্জুহ্ নিবন্ধ থাকতো সরকারে দোআলম নূরে মুজাস্সাম রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামার নূরানী চেহারা-এ আনোয়ারের প্রতি। এ কিতাবটিতে রয়েছে কুরআন-হাদীসের নিগূঢ় রহস্যভরা এবং জ্ঞানার্জনের রত্নভান্ডার সর্বোপরি প্রিয় রাসূলের নূরানী জিন্দেগী, গুণাবলী ও মু’জিযাতের অকুল সমুদ্র। যেখানে রয়েছে ইলমুল কালাম, বালাগাত-মানতিক ও ইলমুল বদি এর সংমিশ্রণে আরবী ভাষার প্রাঞ্জল শব্দ ভান্ডার ও দুর্লভ শব্দ গাঁথুনী, আর অসংখ্য হাদিস ও তাফসিরের বর্ণনা সম্বলিত দুষ্প্রাপ্য তথ্যভান্ডার। গবেষকের গবেষণায় দেখা যায় ‘অসাধারণ স্কলার পন্ডিত আলেম ব্যক্তিও যদি শত সহ¯্র বছর গবেষণা ও সাধনা করে তার পক্ষেও এমন একটি দুর্লভ কিতাব রচনা করা ও লেখা সহজে সম্ভব হবে না। আর এটাই আল্লাহ্ তা‘আলা প্রদত্ত ইলমে লাদুন্নি। ফলে অলৌকিকতা ও আধ্যাত্মিকতার মানদন্ডে অপ্রতিদ্বন্দ্বী এ গ্রন্থের আবেদন শাশ্বত ও চিরন্তন। যা তাঁর অমর কীর্তি ও অপার সৃষ্টি। এ মহান ওলীয়ে কামিলের হাতে যারা বায়আত গ্রহণ করেছেন তাদের অনেকেই আল্লাহর হাবীবের দীদারে ধন্য হয়ে প্রখ্যাত আউলিয়ায়ে কেরামের অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। হযরত খাজা চৌহরভী রাহমাতুল্লাহি আলায়হির অসংখ্য কারামত বিদ্যমান, তন্মধ্যে সীমান্ত প্রদেশের এক নবাব সাহেবের পেটের কঠিন পীড়ার আরোগ্য লাভ, অনেক মুরিদকে এক নজরে বেলায়তের উচুঁ স্থানে পৌঁছানো ইত্যাদি। কুতুবে আলম গাউসে দাওরাঁ খাজায়ে খাজেগান হযরত আব্দুর রহমান চৌহরভী রহমাতুল্লাহি আলায়হি ১৩৪৩ হিজরী, ১ জিলহজ্ব ও ১৯২৩ ইংরেজিতে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের ডাকে সাড়া দিয়ে ইহকালীন জীবন থেকে পর্দা করে মাওলা তা‘আলার সান্নিধ্যে চলে যান। তিনি ৮০ বছর দুনিয়াবী জিন্দেগী অতিবাহিত করেন। এ মহান সাধককে পাকিস্তানের চৌহর শরীফে দাফন করা হয়। সেখানেই তাঁর মাজার শরীফ রয়েছে। যা সর্বক্ষণ জায়েরীন ও প্রেমিকদের পদচারণায় মুখরিত থাকে। সকল আশেকান ও ভক্তবৃন্দ তাঁর সান্নিধ্যে গিয়ে ফয়ূজাত লাভে ধন্য হচ্ছেন অহরহ।
উপরোক্ত তথ্যসমূহ সংগ্রহ করা হয়েছে মাজমুয়ায়ে সালাওয়াতির রাসূলের মুকাদ্দামা (ভূমিকা) আরবী, উর্দু ও বাংলা হতে। উর্দু ভাষায় রচিত ভূমিকাটি আল্লামা ইছমতুল্লাহ্ সিরিকোটি রহমাতুল্লাহি আলায়হি ও কুতুবুল আউলিয়া হাফেজ ক্বারী আল্লামা সৈয়দ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রহমাতুল্লাহি আলায়হি নিজেই লিখেছেন। যা পরবর্তীতে আরবী, বাংলা ও ইংরেজি ভাষায়ও অনুবাদ করা হয়েছে। সেখানে আরো অনেক তথ্য ও আকর্ষণীয় বিবরণ উপস্থাপন করা হয়েছে। এ প্রবন্ধে আমি সংক্ষিপ্তাকারে কিছু সম্মানিত পাঠকদের খেদমতে নিবেদন করেছি বেশীর ভাগ পাঠক সংক্ষিপ্ত এবং সারগর্ভ আলোচনাকে পছন্দ করেন। আমি ও আনজুমান রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক আল্লামা আবদুল মান্নান সাহেব মাজমু‘আহ্-এ সালাওয়াতে রসূলের ১ম পারার বঙ্গানুবাদ করার সময় অনেক জায়গায় হতবাক ও আশ্চর্যান্বিত হয়ে পড়েছি। কলম স্তব্ধ হয়ে পড়েছে, সামনের দিকে আগায় না। এমন শব্দ/বাক্য আমাদের সামনে একের পর এক আসছে যা আমরা বড় বড় আরবী লুগাত (অভিধান) দেখেও সঠিক অর্থ খুঁজে বের করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। এমন মারেফাত ও আধ্যাত্মিকতাপূর্ণ শব্দ ও বাক্য আমাদের দৃষ্টিগোচর হচ্ছে যার আসল মর্মার্থ আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না অথচ তিনি (মাওলানা আবদুল মান্নান সাহেব) স্বীয় যুগের জামেয়ার স্কলার ছাত্রদের মধ্যে অনন্য প্রতিভার অধিকারী ছিলেন আর শিক্ষকতার জীবনে নেয়াহত যোগ্য ও পারদর্শী শিক্ষক হিসেবে বিশেষ যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছেন। আমি অধম গুনাহ্গার জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ার ছাত্রদেরকে কিতাবুল আশবাহ্ ওয়ান্নাযায়ের, শরহে মায়ানিয়ুল আসার, নুখবাতুল ফিক্র, মুকাদ্দামায়ে মুসলিম, মুখতাচারুল মায়ানী ও শরহে আকায়িদে নসফীসহ (যেগুলোকে বড় মাপের মুহাক্কিক আলিমরা কঠিন কিতাব হিসেবে গণ্য করে থাকেন) অন্যান্য কিতাবসমূহ পাঠদান করেছি (এটা আমার বাহাদুরী নয়, আল্লাহ্-রসূলের মেহেরবানী এবং মাশায়েখে হযরতের নেগাহে করম।) কিন্তু আমার নিকট উপরোক্ত কিতাবের চেয়েও খাজায়ে খাজেগান খাজা চৌহরভী রহমাতুল্লাহি আলায়হির রচিত মাজমুয়ায়ে সালাওয়াতে রসূলের অনেক শব্দ ও বাক্য বহুগুণ বেশী কঠিন ও সাহিত্যিকতা ও ভাষাগত দিক দিয়ে অনেক উচ্চাঙ্গের মনে হয়েছে। এটাই বাস্তব সত্য, বাস্তবে এ কিতাব মুহায়্যিরুল উকুল তথা মহা জ্ঞানীদের বিবেক ও আকলকে স্তব্ধ করে দেয়। মূলতঃ এ কিতাব উচ্চাঙ্গের ভাষা শৈলীতে রূপায়িত সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূলের জীবন চরিত ও দরুদ-সালামের উপর লিখিত ইলমে লাদুন্নীর এ মহা ভান্ডার। তাই বিগত আশির দশকে হুযুর কেবলা গাউসে জমান, আলে রসূল আলম বরদারে আহলে সুন্নাত আল্লামা হাফেজ ক্বারী সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রহমাতুল্লাহি আলায়হির খেদমতে এ বরকতমন্ডিত গ্রন্থের বঙ্গানুবাদ প্রসঙ্গে নিবেদন করা হলে হুযুর কেবলা এরশাদ করেছিলেন, ‘পেহলে উসকা উর্দু মে তরজমা হো জায়ে, ফের উর্দু সে বাংলা মে তরজমা করনা আসান হোগা।’ অর্থাৎ প্রথমে সেটার উর্দু ভাষায় অনুবাদ হয়ে যাক। তারপরে উর্দু হতে বাংলায় অনুবাদ করা সহজ হবে। এটা হুযুর কেবলার বেলায়তী দৃষ্টির উজ্জ্বল প্রমাণ। উর্দু অনুবাদ না হলে এ গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করা আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের পক্ষে মোটেই সম্ভবপর হত না। বর্তমানে এ মহা জ্ঞানসমুদ্র তথা মজমুয়ায়ে সালাওয়াতে রসূলের বিশুদ্ধ উচ্চারণসহ সরল বাংলায় অনুবাদ প্রকাশ করে নেহায়ত কঠিন এবং গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছে আনজুমান ট্রাস্ট’র প্রকাশনা বিভাগ। বস্তুতঃ এটা বাংলা শিক্ষিত লাখো লাখো জ্ঞান পিপাসুদের জ্ঞান জগতকে প্রশস্ত করেছে।
সুতরাং আরাকিনে আনজুমানের প্রতি অসংখ্য মোবারকবাদ এবং এ অনন্য গ্রন্থের উর্দু, বাংলা অনুবাদে যাঁরা শ্রম ও মেধা ব্যয় করেছেন তাদের প্রতি জানাই আন্তরিক মোবারকবাদ। ইলমে লাদুন্নির ধারক ও বাহক খাজা চৌহরভী রহমাতুল্লাহি আলায়হি শাহানশাহে সিরিকোট, গাউসে জমান আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রহমাতুল্লাহি আলায়হি, মওজুদা হুজুর কেবলা আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ্ (মু.জি.আ.) ও পীর আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবের শাহ্ (মু.জি.আ.)’র খেদমতে আকদাসে জানাই অসংখ্য শুকরিয়া। পরম করুণাময় রাব্বুল আলামীন ও মহা জ্ঞান সমুদ্র হতে আমাদেরকে এবং আমাদের নতুন প্রজন্মকে জ্ঞান আহরণ করে ইহ ও পরকালকে ধন্য করার তাওফিক দান করুন। আমিন