প্রশ্ন: আশুরার ফজিলত ও গুরুত্ব সম্পর্কে জানালে উপকৃত হবো।
উত্তর: আশুরার গুরুত্ব ফজিলত অপরিসীম। এ প্রসঙ্গে রঈসুল মুফাস্সিরীন বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা হতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আশুরার দিনে রোযা রাখবে আল্লাহ্ তা‘আলা তার আমলনামায় ১০ (দশ) হাজার ফেরেশতার নেক আমলের সমান সওয়াব দান করবেন। তাঁর আমলনামায় দশ (১০) হাজার শহীদের ও দশ (১০) বছর ইবাদতের সওয়াব দান করবেন। গুনিয়াতুত্ তালেবীন ও নুজহাতুল মাজালেসসহ এ ধরণের বহু কিতাবে অনেক বর্ণনা দেখা যায়।
এ প্রসঙ্গে হাদীসে পাকে আরো রয়েছে-
عن ابن عباس قال حين صام رسول الله صلى الله عليه وسلم عاشوراء وامر بصيامه قالوا يا رسول الله انه يوم تعظمه اليهود والنصارى فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم لئن بقيت الى قابل لاصوم من التاسع [رواه مسلم] অর্থাৎ প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আশুরার দিন রোযা রাখলেন এবং আশুরার রোযা রাখার জন্য নির্দেশ দিলেন। সম্মানিত সাহাবীগণ আরয করলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম! এদিনকে তো ইহুদী ও নাসারাগণ সম্মান করে। তখন তিনি বললেন, যদি আমি আগামী বছর পর্যন্ত (দুনিয়ায় জাহেরী হায়াতে) বেঁচে থাকি তবে নিশ্চয় আমি আশুরার দিনের সাথে ৯ই মুহররম তারিখেও রোযা রাখব।
[সহীহ্ মুসলিম শরীফ ও মিশকাত শরীফ, ১৭৮-১৭৯ নং পৃ.] অপর হাদীসে উল্লেখ রয়েছে-
عن جابر بن سمرة قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يا مرنا بصيام يوم عاشوراء ويحشناعليه ويتعاهدنا عنده فلما فرض رمضان لم يأمرنا ولم ينهنا ولم يتعاهدناعنده
অর্থাৎ বিশিষ্ট সাহাবীয়ে রসূল হযরত জাবির ইবনে সামুরা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আশুরার রোযা রাখতে নির্দেশ দিতেন এবং রাখার জন্য আমাদেরকে উৎসাহিত করতেন। এ ছাড়া ঐ তারিখ উপস্থিত হলে তিনি আমাদের খোঁজ রাখতেন; কিন্তু যখন রমযানের রোযা ফরয করা হল, তিনি আমাদেরকে আশুরার রোযা রাখার জন্য আর নির্দেশ দিতেন না এবং তা রাখার ব্যাপারে নিষেধও করতেন না এবং ঐদিন উপস্থিত হলে আমাদের খোঁজও রাখতেন না।
[সহীহ্ মুসলিম শরীফ ও মিশকাত শরীফ, ১৮০পৃ.] উল্লেখ্য যে, রমযানের রোযা ফরয হওয়ার পূর্বে আশুরার রোযা ওয়াজিব ছিল। রমযানের রোযা ফরয হওয়ার পর এটি নফল ও মুস্তাহাব রোযা হিসেবে বহাল রয়েছে। নফল হলেও এই রোযার ফযিলত অত্যধিক। যা উপরোক্ত হাদীস শরীফসমূহ থেকে প্রতীয়মান। তাছাড়া সহীহ্ মুসলিম শরীফের ২৬৪২ নং হাদিসে আছে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-
اَحْتَسِبُ عَلى الله ان يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِىْ قَبْلَهُ ـ
অর্থাৎ আমি আশা করি ঐদিন (আশুরার দিন) রোযা রাখলে আল্লাহ্ তা‘আলা বান্দার পূর্ববর্তী এক বছরের গুনাহ্ মাফ করে দিবেন।
উল্লেখ্য যে, আশুরার দিনে শুধু একদিন রোযা রাখলে যেহেতু ইহুদীদের সাথে সাদৃশ্য হয়ে যায়। তাই আগে বা পরে আর একটি রোযা বৃদ্ধি করলে আর সাদৃশ্য হবে না। তাই আশুরা দিবসের সাথে আগে/পরের দিন মিলিয়ে নফল রোযা রাখা অনেক অনেক সাওয়াব ও কল্যাণময়। হযরত নিজাম উদ্দীন আউলিয়া মাহবুবে এলাহী কুদ্দিসা সিররুহুল আজিজ হযরত বাবা ফরিদ উদ্দীন গঞ্জেশকরের বরাতে বর্ণনা করেছেন, আশুরার এ মহান দিবসে ইবাদত-বন্দেগী, কুরআন তেলাওয়াত, নফল নামায ও দরুদ শরীফ পাঠ ব্যতীত অযথা দুনিয়াবী আজে-বাজে কাজে লিপ্ত বা মশগুল হওয়া উচিত নয়। তাই আশুরার দিনে নফল ইবাদত, আগে বা পরের দিনের সাথে মিলিয়ে নফল রোযা রাখা, আর এ দিনসহ আশুরার গোটা মাসে দান-খায়রাত, সদকা, কারবালার শহীদদের জন্য কুরআনখানী, ফাতেহাখানীর ব্যবস্থা করা, মিলাদ-মাহফিল, যিকির-আযকার ও শুহাদায়ে কারবালা এবং আহলে বায়তের শানে ছহি বর্ণনাসমূহ বয়ান করা অতি ফজিলতপূর্ণ, পূণ্যময় এবং অসংখ্য সাওয়াব লাভের অন্যতম অসিলা। তবে এদিনে রং তামাশা, গোড়া বানিয়ে মিছিল করা, বিশুদ্ধ বর্ণনাসমূহ বাদ দিয়ে কাল্পনিক ও শাহাদাতে কারবালাকে কেন্দ্র করে মিথ্যা, বানোয়াট বর্ণনা করা জঘন্যতম গুনাহ্।
[সহীহ মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ, গুনিয়াতুত্ তালেবীন ও আমার রচিত যুগজিজ্ঞাসা ইত্যাদি]