কদমবুচি করা
ইকবাল হোসেন, মোহাম্মদপুর, চট্টগ্রাম
প্রশ্নঃ সাধারণত আমরা মা-বাবা, শিক্ষক ও পীর-মুর্শেদকে কদমবুচি করে থাকে। কিন্তু অনেকেই বর্তমানে কদমবুচির বিপক্ষে কথা বলে। তাদের যুক্তি হল আল্লাহ্ ব্যতীত কারো সমীপে মাথা নত করা যায় না, কদমবুচি করার সময় মাথা নিচু হয়ে যায়, তাই তা শির্কে পরিণত হয়। আমার প্রশ্ন হল- কদমবুচি করার সময় তো স্বাভাবিকভাবে মাথা নিচু হয়ে যায়, তাই বলে কি তা শির্ক হবে? এ ব্যাপারে কোরআন্ ও সুন্নাহর আলোকে বুঝিয়ে বললে ধন্য হব।
উত্তরঃ সম্মানিত পীর-মুর্শেদ, হক্কানী আলেম, মাতাপিতা ও উস্তাদ প্রমুখের হাতে-পায়ে চুমু খাওয়া জায়েয। সাহাবা-ই কেরামের পবিত্র আমল দ্বারা তা প্রমাণিত। প্রসিদ্ধ হাদীসগ্রন্থ ‘‘মিশকাত শরীফ’’-এর بَابُ الْمُصَافَحَۃٌ وَالْمُعَانَقَۃٌ অধ্যায়ের اَلْفَصْلُ الثَّانِیُّ তে বর্ণিত আছে যে,
وَعَنْ ذِرَاعٍ وَکَانَ مَنْ وَفْدِ عَبْدِ الْقَیْسِ قَالَ لَمَّا قَدِمْنَا الْمَدِیْنَۃَ فَجَعْلْنَا نَتَبَادَرُ مِنْ رَّوَاحِلِنَا فَنُقَبِّلَ یَدَ رَّسُوْلَ اللّٰہِ ﷺ وَرِجْلَہٗ
অর্থাৎ, ‘‘হযরত যিরাজ্ঞ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে, যিনি আবদুল কায়্সের প্রতিনিধিভুক্ত ছিলেন। তিনি বলেন, যখন আমরা মদীনা শরীফে আসলাম তখন আমরা নিজ নিজ বাহন থেকে তাড়াতাড়ি অবতরণ করতে লাগলাম। অতঃপর আমরা হুজূর আকরম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র হাতে ও পায়ে চুমু দিয়েছিলাম।’’ [মেশকাত শরীফ]
এখানে উল্লেখ্য, কাউকে আল্লাহ্ মনে করে ইবাদতের নিয়্যতে মাথা নত করা হলে তা শির্ক ও হারাম হবে। কিন্তু কোন সম্মানিত ব্যক্তিকে সম্মান করার জন্য তার পায়ে চুমু দেওয়ার কারণে মাথানত করাকে শির্ক বলা নিছক মূর্খতা ও বোকামী ছাড়া আর কিছু নয়। কারণ, পা চুম্বন করা মাথা নোয়ানো ছাড়া সম্ভবপর নয়। পায়ে চুম্বন করা হলে অবশ্যই মাথা নিচু করতে হয়। এখানে পায়ে চুম্বন করার সময় মুসলমান ওই ব্যক্তিকে কখনো উপাস্য বা আল্লাহ্ মনে করেন্ না। শুধুমাত্র সম্মানের জন্যই পায়ে চুম্বন করা হয়। এ প্রকার চুম্বন সাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা প্রমাণিত, বিধায় তা জায়েয। ‘মাথা নত’ হওয়ার কারণে শির্ক বলাটা মোটেই যুক্তিযুক্ত নয়। কারণ, এমন হাজারো কাজ-কর্ম আছে যা মাথা নত করা ব্যতীত সম্পাদন করা যায় না। যদি ‘মাথা নত’ করা শির্ক হয়, তবে মানুষের জীবনযাত্রা অচল হয়ে যাবে। মূলতঃ মানুষের অন্তরের নিয়্যতই এখানে বিবেচ্য। সম্মানিত ব্যক্তি ও বুযর্গানে দ্বীনের হাত-পা চুম্বন করার বৈধতার উপর ইমাম বদরুদ্দীন আইনী আল্ হানাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি সহীহ বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘উমদাতুল ক্বারী’তে এবং ইমাম ইবনে হাজার আস্ক্বালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি সহীহ বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘ফাত্হুল বারী’তে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
[সূত্র. যুগ-জিজ্ঞাসা, পৃ.৪২-৪৩]