নেককার ব্যক্তির পাশে কবরস্থ হলে কোন উপকার (ফায়দা) আছে কিনা?
মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ্-গাউসিয়া কমিটি, মুরাদনগর, সীতাকুন্ড, চট্টগ্রাম। প্রশ্ন: নেককার ব্যক্তির পাশে কবরস্থ হলে কোন উপকার (ফায়দা) আছে কিনা? দলীলসহ বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
উত্তর: নেক্কার কবরবাসী তথা আল্লাহর প্রিয় মাকবুল বান্দার কবরের পার্শে মৃতদেরকে কবরস্থ করা অতীব উপকারী। নেক্কার বান্দার পাশে সমাধিত হতে পারা বড় সৌভাগ্যের বিষয়। এটা দ্বারা পার্শ্বস্থ কবরবাসীর অনেক কল্যাণ সাধিত হয়। আযাবের উপযোগী হলে আযাব দূরীভূত হয়। গুনাহ্ থেকে মুক্ত হয়ে অপরিসীম কল্যাণের অধিকারী হওয়া যায়। আল্লাহর বন্ধুতে পরিণত হওয়ার সৌভাগ্য অর্জিত হয়। তাই প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম হাদীস শরীফে মৃতদেরকে নেককার বান্দার পাশে ও মাঝে সমাহিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন- সুলতানুল মুফাস্সিরীন আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমাতুল্লাহি আলায়হি স্বীয় রচিত ‘শরহুস্ সুদূর’ কিতাবে উল্লেখ করেছেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, ‘তোমরা নিজেদের মৃতদেরকে নেক্কারদের মাঝে দাফন কর। কেননা মৃত ব্যক্তির পার্শ্বস্থ বদকার প্রতিবেশির কারণে কষ্ট পায়, যেভাবে জীবিত ব্যক্তি দুষ্ট প্রতিবেশির কারণে কষ্ট পায়।’ অনুরূপভাবে হযরত মাওলা আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি এরশাদ করেছেন, আল্লাহর প্রিয় রসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন আমাদের মৃতদেরকে নেক্কারদের মাঝে দাফন করতে। কেননা মৃত ব্যক্তি দুষ্ট খারাপ প্রতিবেশির কারণে কষ্ট পেয়ে থাকে, যেভাবে জীবিত ব্যক্তিরা খারাপ প্রতিবেশীর কারণে কষ্ট পায়।’ উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ আছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-
جُنُوْبُهُ الْجَار السُّوْءِ قِيْلَ يَا رَسُوْلَ الله هَلْ يَنْفَعُ الْجَارُ فِى الْاٰخِرَةِ قَالَ هَلَ يَنْفَعُ فِى الدُّنْيَا قَالَ نَعَمْ قَالَ كَذَالِكَ يَنْفَعُ فِى الْاٰخِرَةِ
অর্থাৎ তোমরা তাকে (মৃতকে) কবরস্থানের দুষ্ট প্রতিবেশি থেকে দূরে রাখ (বরং নেককার প্রতিবেশির পাশে দাফন কর) বলা হল হে আল্লাহর রসূল নেক্কার প্রতিবেশি পরকালে (কবরে) কি অপরের কল্যাণ করতে পারেন? প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করলেন, নেক্কার প্রতিবেশি দুনিয়াতে অপরের উপকার করে কি? তদুত্তরে বলল হ্যাঁ, নবীজি এরশাদ করলেন, সেভাবে নেক্কার কবরবাসী পরকালে (কবরেও) পার্শ্ববর্তি কবরবাসীর উপকার করতে পারে।
অপর এক হাদীসে উল্লেখ রয়েছে-
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ نَافِعَ الْمُزْنِىْ قَالَ مَاتَ رَجُلٌ بِالْمَدِيْنَةِ فَدَفَنَ بِهَا فَرَأَه رَجُلٌ كَانهُ مِنْ اهْلِ النَّارِ فَاغتم لِذلِكَ ثُمَّ اُرِيَهُ بَعْدَ سَابِعَةٍ اَوْ ثَامِنَةٍ كَانهُ مِنْ اَهْلِ الْجَنَّةِ فَسَأَلَهُ قَالَ دُفَنَ مَعَنَا رَجَلٌ مِنَ الصَّالِحِيْنَ فَشَفَعَ فِىْ اَرْبَعِيْنَ مِنْ جِيْرَانِه فَكُنْتُ فِيْهِمْ ـ اَلْحَدِيْث
অর্থাৎ হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে নাফে আল মুযনী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মদীনা শরীফে একজন পুরুষ মারা গেল, তাকে সেখানে দাফন করা হল। একজন ব্যক্তি তাকে (স্বপ্নে) দেখল যে সে জাহান্নামী। অতঃপর উক্ত ব্যক্তি এতে দুঃখিত হল। ৭/৮দিন পর তাঁকে (স্বপ্নে) ওই মৃত ব্যক্তিকে দেখানো হলো, যেন সে বেহেশতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। অতঃপর ওই ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞেস করল, উত্তরে সে বলল, আমাদের সাথে একজন নেক্কার ব্যক্তি দাফন হয়েছে, তিনি তাঁর প্রতিবেশি কবরসমূহ থেকে ৪০ জনের জন্য (আল্লাহর দরবারে) সুপারিশ করেছেন; আমিও তাদের অন্যতম। সুতরাং নেক্কার ও বুযুর্গ কবরবাসীর ওসীলায় পার্শ্বস্থ কবরবাসীদের কবর আযাব মাফ হয়ে যায় এবং আল্লাহর রহমত, বরকত ও কল্যাণ সাধিত হয়। তা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। এটাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অভিমত ও ক্বোরআন-সুন্নাহর ফয়সালা।
[শরহুস্ সুদূর, আনবায়ূল আযকিয়া ফী হায়াতিল আম্বিয়া: কৃত. ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহ., আল-বাচায়ের, কৃত. আল্লামা হামদুল্লাহ্ দাজভী রহ. এবং আমার রচিত ‘যুগ জিজ্ঞাসা’ ইত্যাদি]