Anjuman-E Rahmania Ahmadia Sunnia Trust

অসহায় গরীব মুসলমান ব্যক্তির জীবত অবস্থায়ে আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী কেউ খোঁজ নেই নি, ইন্তেকালের পর টাকা উত্তোলন করে ফাতেহা করা ইসলাম সমর্থন করে কিনা?

অসহায় গরীব মুসলমান ব্যক্তির জীবত অবস্থায়ে আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী কেউ খোঁজ নেই নি, ইন্তেকালের পর টাকা উত্তোলন করে ফাতেহা করা ইসলাম সমর্থন করে কিনা?

মুহাম্মদ আবুল কালাম
উত্তর চরলক্ষ্যা কর্ণফুলী
চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: একজন গরীব মুসলমান ব্যক্তি দীর্ঘদিন শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকা অবস্থায় প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজন কেউ তার চিকিৎসা সেবা প্রদান করেনি। ওই ব্যক্তি ইন্তেকাল করলে সকলে মিলে কাফন-দাফনের পর চারদিনের সময় টাকা উত্তোলন করে ফাতেহা করলেন। এটা ইসলাম সমর্থন করে কিনা বুঝিয়ে বললে উপকৃত হব।
উত্তর: কোন মুসলমানের ইন্তেকালের পর তাঁর জন্য ঈসালে সাওয়াবের আয়োজন করা তথা কুরআনখানি, ফাতেহাখানি, গরীব-অসহায় মিসকিনদের জন্য খানা-পিনা ইত্যাদির আয়োজন করা এবং আয়োজনে টাকা দিয়ে সহযোগিতা করা বা শরীক হওয়া নিঃসন্দেহে সওয়াবজনক ও কল্যাণকর। তবে উল্লেখিত প্রশ্নের বর্ণনায় যেটা রয়েছে সেটা হলো জীবিত ও রুগ্নাবস্থায় উক্ত ব্যক্তিকে উপেক্ষা ও অবহেলা করা এবং সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সেবা শশ্রুষা না করা ইত্যাদি মূলত মুসলিম আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশির হক আদায় না করার দরুন গুনাহ্গার হবে যা হাদীস শরীফের বিভিন্ন বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত।
عن ابى موسى رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اطعموا الجائع وعودوا المريض وفكوا العانى [رواه البخارى ـ مشكوة صفحه ১৩৩]
অর্থাৎ হযরত আবু মুসা আশয়ারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, প্রিয়নবী রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ক্ষুধার্তাকে আহার দাও, রোগীর খোঁজ-খবর নাও এবং বন্দীদেরকে (শত্রুর হাত থেকে) মুক্ত কর।[সহীহ্ বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ, পৃ. ১৩৩]
রোগীর সেবা ও দেখা-শুনার ফযিলত সম্পর্কে রসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-
عن ثوبان رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان المسلم اذا عاد اخاه المسلم لم ينل فى خرفة الجنة حتى يرجع [رواه مسلم ـ مشكوة صفحه ـ ১৩৩]
অর্থাৎ হযরত সাওবান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, নিশ্চয় কোন মুসলমান যখন তার অপর মুসলমান ভাইয়ের রোগাক্রান্ত অবস্থায় দেখা-শুনা করতে যায়, তখন সেখান থেকে ফিরে আসা পর্যন্ত সে যেন বেহেশতের ফল গ্রহণে লিপ্ত থাকে।
[সহীহ্ মুসলিম, মেশকাত শরীফ, পৃ. ১৩৩] অপর হাদীসে উল্লেখ রয়েছে-
عن جابر رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من عاد مريضًا لم يزل يخوض الرحمة يجلس فاذا جلس اغتمس فيها [رواه مالك ـ احمدـ مكشوة صفحه ـ ১৩৮]
অর্থাৎ প্রখ্যাত সাহাবী হযরত জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি রোগীকে দেখতে যায় (যখন সাক্ষাতের জন্য ঘর থেকে বের হয় তখন থেকে) রহমতে প্রবেশ করতে থাকে। যখন সে রোগীর কাছে গিয়ে বসে তখন (রোগীর সাথে সাক্ষাতকালীন সময়) সে রহমতের মধ্যে ডুবে যায়। [ইমাম মালেক ও আহমদ, মিশকাত শরীফ, পৃ. ১৩৮, আল আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং-৫২২]
মিশকাত শরীফে উল্লেখ রয়েছে, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন- এক মুসলমানের ওপর, অপর মুসলমানের ৬টি হক রয়েছে- সাহাবায়ে কেরাম আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল, সেগুলো কি কি? তখন প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করলেন,
اذا لقيته فسلم عليه واذا دعاك فاحببه واذا استنصحك فانصح له واذا عطس فحمد الله فشمته واذا مرض فعده واذا مات فاتبعه [رواه مشكوة ـ صفحه ১৩৩]
অর্থাৎ ১. যখন তুমি কোন মুসলমানের সাথে সাক্ষাত করবে তাকে সালাম দিবে, ২. কোন মুসলমান ডাকলে বা দাওয়াত দিলে তুমি তার ডাকে সাড়া দিবে, ৩. কেউ তোমার কাছে মঙ্গল কামনা করলে তার জন্য তুমি কল্যাণ কামনা করবে, ৪. হাঁচি দিয়ে ‘আলহামদুলিল্লাহ্’ বললে তুমি (তার) উত্তরে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলবে, ৫. যখন কেউ অসুস্থ হবে তাকে দেখতে যাবে এবং ৬. মৃত্যুবরণ করলে তাঁর জানাযায় শরীক হবে।
[সহীহ মুসলিম শরীফ, হাদিস নং-২১৬২ ও মিশকাত শরীফ-১৩৩]
অপর হাদীসে ৫টি হকের কথা বলা হয়েছে, দ্বিতীয়টি হলো عيادة المريض অর্থাৎ রোগীর খোজ-খবর নেয়া। [সহীহ্ মুসলিম হাদিস নং-৫০৩০] উল্লেখ্য যে, হাদীস শরীফে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইআদাত শব্দটি উল্লেখ করেছেন যার অর্থ বারবার ফিরে আসা। কেননা রোগ কখনো দীর্ঘ হয় এবং কখনো ধারাবাহিক সেবার প্রয়োজন হয়, তাই রোগীকে একবার দেখে আসা খোজ-খবর নেয়া যথেষ্ট নয় বরং عيادة (ইআদত) শব্দটি ধারাবাহিক সেবা করার প্রতি নির্দেশ করে। রোগীর সেবা না করা প্রসঙ্গে জবাবদিহির বিষয়ে সহীহ্ মুসলিম শরীফে উল্লেখ রয়েছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তাআলা বলবেন হে আদম সন্তান, হে আদম সন্তান, আমি অসুস্থ ছিলাম, তুমি আমার সেবা করোনি! সে (বান্দা) বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমি আপনার সেবা কিভাবে করব? আপনি তো জগৎসমূহের প্রতিপালক! আল্লাহ্ তাআলা বলবেন, তুমি কি জানতে না আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল? তুমি তার সেবা করোনি, তার খোজ-খবর রাখোনি। তুমি কি জানতে না তুমি যদি তার সেবা করতে, তবে তুমি তার কাছে আমাকে পেতে। [সহীহ্ মুসলিম, হাদিস-২৫৬৯]
অর্থাৎ বান্দা বা প্রতিবেশির সেবাতে শ্রষ্টার সন্তুষ্টি নিহিত। সেবা পাওয়া অসুস্থ রোগীর হক বা অধিকার। সুতরাং সামর্থ্য ও সুযোগ থাকা সত্ত্বেও রোগীর প্রতি বা অসুস্থ আত্মীয়-প্রতিবেশির প্রতি অবহেলা করলে কিয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি করতে হবে। রোগীকে সেবা করা, সান্ত¦না দেয়া সুন্নাত ও ইবাদত। প্রতিবেশি বা আত্মীয়-স্বজন রোগাক্রান্ত হলে খোজ-খবর নেয়ার ও সেবার মাধ্যমে সেবাকারীর ঈমানের জ্যোতি ও মুসলিম সমাজে মায়া মহব্বত ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায় এবং বিপর্যয়-অবক্ষয় রোধ করা যায়।

Share:

Leave Your Comment