আহলে হাদীস নামধারী ভ্রান্ত ও লা-মাযহাবীদের খন্ডন (পর্ব-9)
রফ‘ই ইয়াদাঈন নিষিদ্ধ (তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া অন্যান্য অতিরিক্ত তাকবিরগুলো বলার সময় হাত উঠাবে না)
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
এ মাসআলায় বিরুদ্ধবাদীদের আপত্তিগুলো ও সেগুলোর খন্ডন
গায়র মুক্বাল্লিদ লা-মাযহাবী ওহাবীদের দিক থেকে এ পর্যন্ত ‘রফ‘ই ইয়াদাঈন’ (তাকবীর-ই তাহরীমাহ্ ব্যতীত অন্যান্য তাকবীর বলার সময় হাত উঠানো) নিষিদ্ধ হবার বিরুদ্ধে যে সব আপত্তি আমাদের নিকট পৌঁছেছে, আমরা অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে সেগুলো বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করে সেগুলোর জবাব বা খন্ডন সহকারে উল্লেখ করার প্রয়াস পাচ্ছি। মহান রব আল্লাহ্ তা‘আলা কবূল করুন! আ-মী-ন।
আপত্তি-১
রফ‘ঈ ইয়াদায়ন না করার পক্ষে যত রেওয়ায়ত পেশ করা হয়েছে, ওই সবই দ্ব‘ঈফ বা দুর্বল। দুর্বল হাদীস আমলযোগ্য নয়। (ওই পুরানা সবক!)
খণ্ডন
জ্বী-হাঁ। ওইগুলো শুধু এজন্য দুর্বল যে, ওইগুলো আপনাদের বিপক্ষে। আর যদি আপনাদের পক্ষে হতো, তবে যদিও বানোয়াট বা মনগড়াও হতো, তবে আপনাদের মাথা ও চোখের উপর স্থান পেতো। জনাব! আল্লাহর দোহাই! আপনাদের ‘দ্ব‘ঈফ দ্ব‘ঈফ’ (দুর্বল, দুর্বল) বলতে থাকা লোকজনকে হাদীস অস্বীকারকারী করে ছেড়েছে। আল্লাহর ওয়াস্তে এ বদ-অভ্যাস ত্যাগ করুন! আমরা আপনাদের এ ‘দ্ব‘ঈফ’-এর অনেক খণ্ডন পূর্ববর্তী অধ্যায়গুলোতে করেছি।
আপত্তি-২.
ইমাম আবূ দাঊদ-এর হযরত বারা ইবনে ‘আ-যিব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদীস শরীফ সম্পর্কে খোদ্ ইমাম আবূ দাঊদ বলেছেন- هذا الْحَدِيْثُ لَيْسَ بِصَحِيْحٍ অর্থাৎ ‘এ হাদীস সহীহ্ নয়।’ বুঝা গেলো যে, এ হাদীস দ্ব‘ঈফ (দুর্বল)। এতদ্সত্ত্বেও আপনারা (হানাফীগণ) সেটাকে কেন দলীল হিসেবে উপস্থাপন করছেন?
খণ্ডন
এর কয়েকটা জবাব দেওয়া যায়ঃ
এক. কোন হাদীস ‘সহীহ্’ না হলে একথা অনিবার্য হয় না যে, সেটা ‘দ্ব‘ঈফ’ (দুর্বল) হবে; ‘সহীহ্’ ও ‘দ্ব‘ঈফ’-এর মধ্যভাগে حسن بنفسه (হাসান বিনাফসিহী) ও حسن بغيره (হাসান বিগায়রিহী), যথাক্রমে, ‘স্বয়ং হাসান’ ও ‘পরোক্ষভাবে হাসান’-দু’টি পর্যায়ও রয়েছে। ইমাম আবূ দাঊদ উক্ত হাদীস ‘সহীহ’ হবার পর্যায়টা অস্বীকার করেছেন মাত্র। তিনি সেটা দ্ব‘ঈফ (দুর্বল) বলে দাবী করেননি।
দুই. ইমাম আবূ দাঊদের ‘এ হাদীস সহীহ্ নয়’ বলা (হাদীসের পরিভাষায়) جرح مبهم (বা অস্পষ্ট সমালোচনা) বৈ-কিছু নয়। কারণ, তিনি তা সহীহ্ না হবার কারণ বলেননি। অর্থাৎ কোন্ রাভী (বর্ণনাকারী) দুর্বল এবং তিনি কেন দুর্বল তাও বলেননি। এমন সমালোচনা (جرح مبهم) গ্রহণযোগ্য নয়। তদুপরি, আমরা ইমাম আবূ দাঊদের ‘মুক্বাল্লিদ’ নই; তাই তাঁর যে কোন সমালোচনা চোখ বুঝে মেনে নেওয়া আমাদের জন্য জরুরী নয়।
আপত্তি-৩.
ইমাম আবূ দাঊদ আপনাদের উপস্থাপিত হাদীস নম্বর ২৫ সম্পর্কে বলেন, ‘‘এ হাদীসের সনদে ইয়াযীদ ইবনে আবূ যিয়াদ রয়েছেন, যাঁর মধ্যে শেষ বয়সে ভুলে যাবার রোগ হয়েছিলো। তিনি তাঁর বার্দ্ধক্যে বলেছেন, ثُمَّ لاَ يَعُوْدُ (অতঃপর এ হাত উঠানোর কাজ পুনরায় করতেন না)। অন্যথায় মূল হাদীসে এ বাক্যটির উল্লেখ নেই। এ নিন, جرح مفصل (বিস্তারিত সমালোচনা) হাযির! এখনতো এ হাদীস নিশ্চিতভাবে দুর্বল হলো; যা আমল করার যোগ্য থাকেনি।
খণ্ডন
এরও কয়েকটা জবাব দেওয়া যায়ঃ
প্রথমত, ইয়াযীদ ইবনে আবূ যিয়াদ আবূ দাঊদের ওই বর্ণনার সূত্রের মধ্যে রয়েছেন; কিন্তু ইমাম-ই আ’যম হযরত আবূ হানীফা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর সনদে নেই। সুতরাং এ সনদ ইমাম আবূ দাঊদ দুর্বল হিসেবে পেয়েছেন, কিন্তু ইমাম আবূ হানীফা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ‘সহীহ’ হিসেবে পেয়েছেন। ইমাম আবূ দাঊদের কোন বর্ণনাকারীর ‘দুর্বলতা’ ইমাম আবূ হানীফা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর জন্য ক্ষতিকর হবে কেন? অর্থাৎ হবে না।
দ্বিতীয়ত, রফ‘ই ইয়াদাঈন না করার হাদীস অনেক সূত্রে বর্ণিত, সব ক’টিতে ইয়াযীদ ইবনে যিয়াদ নেই। যদিও এ সনদ দুর্বল হয়, তবে অন্য সনদগুলো কেন দুর্বল হবে?
তৃতীয়ত, ইমাম তিরমিযী ‘রফ‘ই ইয়াদাঈন’ না করার হাদীসকে ‘হাসান’ (উত্তম) বলেছেন এবং অনেক সাহাবীর এর উপর আমল রয়েছে মর্মে বর্ণনা করেছেন। হে লা-মাযহাবীরা, আপনাদের দৃষ্টি ইমাম আবূ দাঊদের এ হাদীসকে দুর্বল বলার প্রতি নিবদ্ধ হয়েছে, কিন্তু ইমাম তিরমিযীর ‘হাসান’ (উত্তম) বলার উপর পড়েলানা, সাহাবীগণের আমলের প্রতিও গেলোনা। এটা কেন?
চতুর্থত, যদি এ হাদীসের সমস্ত সনদও দুর্বল হয়, তবুও সব দুর্বল সনদ মিলে সবল হয়ে গেছে, যেমনটি ইতোপূর্বেও ভূমিকায় বলা হয়েছে।
পঞ্চমত, আম ওলামা, আউলিয়া ও প্রায় সব (জমহুর) মিল্লাত-ই ইসলামিয়াহ্র আমল রফ‘ই ইয়াদাঈন না করার পক্ষে ছিলো এবং রয়েছে। (অর্থাৎ, তাঁরা রফ‘ই ইয়াদাঈন করেননি ও করছেন না।) এটা দ্বারাও এ হাদীস শরীফ সবল হয়ে গেছে; মুষ্ঠি পরিমাণ ওহাবী ব্যতীত সবাই এ আমল করে আসছেন।
আশ্চর্যের বিষয় যে, হে লা-মাযহাবীরা! আপনাদের দেড়জন লোকের দল কি সত্যের উপর আছে, আর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর আম উম্মত কি গোমরাহীর উপর?
মনে রাখবেন এক পরিসংখ্যান অনুসারে, দুনিয়ার শতকরা পচান্নব্বই ভাগ মুসলমান হানাফী মাযহাবের অনুসারী; আর পাঁচ ভাগ অন্যান্য মাযহাবের অনুসারী। এ পরিসংখ্যানের সত্যতা হেরমাঈন শরীফাঈনে গেলে বুঝা যায়। সেখানে প্রত্যেক দেশের মুসলমান একত্রিত হন। বেচারা ওহাবী সম্প্রদায় তো কোন গণনায়ই আসেনা। এরা হয়তো হাজারে একজন হবে।
হুযূর-ই আক্রাম এরশাদ করছেন-
مَا رَاهُ الْمُسلِمُوْنَ حَسَنًا فَهُوَ عِنْدَ اللهِ حَسَنٌ অর্থাৎ যাকে আম মু’মিনগণ ভালো বলে, তা আল্লাহর দরবারেও ভালো।
হুযূর-ই আক্রাম আরো এরশাদ ফরমাচ্ছেন- اِتَّبِعُوْا السَّوَادَ الْاَعْظَمَ فَاِنَّه مَنْ شَذَّ شُذَّ فِى النَّارِ
অর্থাৎ আমার উম্মতের বড় দলের অনুসরণ করো। যে ব্যক্তি বড় দল থেকে পৃথক হবে সে পৃথক হয়ে দোযখে যাবে।
স্মর্তব্য যে, শাফে‘ঈ, মালেকী, হাম্বলী ও হানাফী- সবাই একদলভুক্ত। সবার আক্বীদা এক, সবাই ‘মুক্বাল্লিদ’ (মাযহাবের অনুসারী)। পক্ষান্তরে, ‘গায়র মুক্বাল্লিদ’ (লা-মাযহাবী) হচ্ছে মুষ্ঠি পরিমাণ। তারা মুসলমানদের জমা‘আত বা দল থেকে আক্বীদায়ও পৃথক, আমলেও আলাদা। সুতরাং হানাফীদের কোন হাদীস দুর্বল হতেই পারেনা। উম্মতের আমল দ্বারা তা সবল। এ কিতাবের ভূমিকায় দেখুন।
আপত্তি-৪.
আপনাদের পেশকৃত হাদীস নম্বর-১, যা ইমাম তিরমিযী প্রমুখ হযরত ইবনে মাস‘ঊদ থেকে বর্ণনা করেছেন, ‘মুজমাল’ (সংক্ষিপ্ত)। কেননা, তাতে নামাযের সব নিয়ম বর্ণনা করা হয়নি; শুধু একথা বলা হয়েছে যে, ইবনে মাস‘ঊদ শুধু একবার হাত তুলেছেন। তারপর কি করেছেন তা উল্লেখ করা হয়নি। আর ‘মুজমাল’ (সংক্ষিপ্ত) হাদীস আমলযোগ্য হয়না। (প্রশ্নকর্তা হলো ডেরা গাযীখানের এক কট্টর ওহাবী- লা-মাযহাবী।)
খণ্ডন
এ হাদীস শরীফ ‘মুজমাল’ নয়, ‘মুত্বলাক্ব’ও নয়, ‘আম’ও নয়, অর্থগত ও শব্দগত মুশতারাকও নয়; বরং হাদীসখানা ‘মুখতাসার’ বা দীর্ঘ হাদীস থেকে একাংশ উদ্ধৃত মাত্র। ‘মুখতাসার’ (সংক্ষেপিত) হাদীসের উপর আমল করতে কে নিষেধ করেছে? আর ‘মুজমাল’ হাদীসও বর্ণনাকারীর বিস্তারিতভাবে বর্ণনার পর আমলযোগ্য হয়ে যায়; বরং তদনুযায়ী আমল করা ওয়াজিব বা অপরিহার্য হয়ে যায়; কারণ, ‘মুজমাল’ বর্ণনাকারীর সবিস্তারে বর্ণনার পর ‘মুহকাম’ (স্পষ্ট ও আমলযোগ্য) হয়ে যায়।
আমাদের ঘোষণা
সারা দুনিয়ার ওহাবী, গায়র-মুক্বাল্লিদদের প্রতি ঘোষণা রইলো যে, আপনারা মুত্বলাক্ব, আম, মুজমাল ও মুশতারাক-ই মা’নাভী ও মুশ্তারাক-ই লফযীর মধ্যে পার্থক্যটা বলুন দেখি! আর সেগুলোর প্রত্যেকটির পূর্ণাঙ্গ সংজ্ঞা দিন; কিন্তু ক্বোরআন-হাদীসের আলোকে; উসূলে ফিক্বহ্ ও মানত্বিক্বে হাত লাগাবেন না।
হে ওহাবীরা! আপনারা তো হাদীসের ভুল অনুবাদই করে যাচ্ছেন। আপনাদের এসব ইল্মগত বিষয়াদির সাথে কিসের সম্পর্ক? হয়তো কোন হানাফী আলিমের নিকট ‘মুজমাল’ শব্দটা শুনেছেন। অতঃপর বানোয়াট দাপট দেখানোর জন্য এখানে এ আপত্তিটা জুড়ে দিয়েছেন। আর তাতে এ শ্রুত শব্দটা ব্যবহার করেছেন। আল্লাহ্ তা‘আলা ইল্মের সমুদ্রতো মুক্বাল্লিদদের বুকেই প্রবাহিত করেছেন।
আপত্তি-৫.
আবূ দাঊদ, তিরমিযী, দারেমী ও ইবনে মাজাহ্ হযরত আবূ হুমায়দ সা-‘ইদী থেকে এক দীর্ঘ হাদীস উদ্ধৃত করেছেন, যাতে রফ‘ই ইয়াদাঈন সম্পর্কে ইবারত এভাবে রয়েছে-
ثُمَّ يُكَبِّرُ وَيَرْفَعُ يَدَيْهِ حَتّى يُحَاذِىَ بِهِمَا مَنْكِبَيْهِ ثُمَّ يَرْكَعُ وَيَضَعُ رَاحَتَيْهِ عَلى رُكْبَتيْهِ ثُمَّ يَرْفَعُ رَأْسَه فَيَقُوْلُ سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَه ثُمَّ يَرْفَعُ يَدَيْهِ حَتّى يُحَاذِىَ بِهِمَا مَنْكِبَيْهِ الخـ
অর্থ: অতঃপর তিনি তাকবীর বলতেন এবং নিজের হাত এতটুকু উঠাতেন যে, দু’ কাঁধের বরাবর হয়ে যেতো। আর আপন দু’হাতের তালু আপন হাঁটুযুগলের উপর রাখতেন। তারপর আপন শির উঠাতেন। তারপর বলতেন, ‘সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ্’। তারপর আবার হাত দু’টি উঠাতেন, এ পর্যন্ত যে, দু’ কাঁধের বরাবর হয়ে যেতো।
আবূ হুমায়দ সা-‘ইদী সাহাবীদের জমা‘আতে এ হাদীস পেশ করেছেন, যাতে রুকূ’র সময় দু’ হাত উঠানোর উল্লেখ রয়েছে। আর সবাই সেটার সত্যায়ন করেছেন। বুঝা গেলো যে, রফ‘ই ইয়াদাঈন হুযূর-ই আক্রামেরই আমল এবং এর সাথে সংযুক্ত হয়েছে সাহাবা-ই কেরামের সত্যায়ন ও আমল। সুতরাং আমাদেরও উচিৎ তদনুযায়ী আমল করা।
নোট: এ হাদীস এ ক্ষেত্রে ওহাবী-গায়র মুক্বাল্লিদদের চূড়ান্ত দলীল, যা নিয়ে তারা অত্যন্ত গর্ব করে থাকে।
খণ্ডন
এরও কতিপয় জবাব রয়েছে। ওইগুলো অতি গভীর মনযোগ সহকারে দেখুন-
প্রথমত, আপত্তিকারীদের উক্ত হাদীস সনদের দিক দিয়ে আমলযোগ্য নয়। কারণ, ওই হাদীসের সনদ আবূ দাঊদ ইত্যাদিতে এভাবে রয়েছে-
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ قَالَ حَدَّثَنَا يَحْى وَهذَا حَدِيْثُ اَحْمَدَ قَالَ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْحَمِيْدِ يَعْنِىْ اِبْنَ جَعْفَرٍ اَخْبَرَنِىْ مُحَمَّدُ بْنُ عَمْرِو بْنِ عَطَاءٍ قَالَ سَمِعْتُ اَبَا حُمَيْدِ نِ السَّاعِدِىَّ فِىْ عَشْرَةِ الخ
অর্থ: আমাদেরকে মুসাদ্দাদ হাদীস বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, আমাদেরকে ইয়াহিয়া হাদীস শুনিয়েছেন। আহমদ বলেছেন, আমাদেরকে আবদুল হামীদ ইবনে জা’ফর বলেছেন, তিনি বলেন, আমাকে মুহাম্মদ ইবনে আমর ইবনে আত্বা খবর দিয়েছেন, তিনি বলেন, আমি আবূ হুমায়দ সা-‘ইদী থেকে দশজন সাহাবীর জমা‘আতে শুনেছি।
তাঁদের মধ্যে আবদুল হামীদ ইবনে জা’ফর কঠোরভাবে সমালোচিত ও দুর্বল ব্যক্তি। দেখুন ত্বাহাভী শরীফ। দ্বিতীয় ব্যক্তি মুহাম্মদ ইবনে আমর ইবনে আত্বা আবূ হোমায়দ সা-‘ইদীর সাথে সাক্ষাতই করেননি। আর বলে দিয়েছেন, আমি তাঁর নিকট শুনেছি। সুতরাং এটা ভুল। নিশ্চয় মধ্যভাগে কোন বর্ণনাকারী ছুটে গেছেন, যিনি ‘মাজহুল’ (একেবারে অপরিচিত)ও হতে পারেন। (ত্বাহাভী) এ দু’ ত্রুটির কারণে এ হাদীস আমলযোগ্য নয়। কিন্তু যেহেতু, হে লা-মাযহাবীরা, এটা আপনাদের অনুকূলে, সেহেতু তা আপনাদের নিকট গ্রহণযোগ্য হয়ে গেছে! একটু লজ্জাবোধ করুন!
দ্বিতীয়ত, হে আহলে হাদীস লা-মাযহাবীরা, এ হাদীস আপনাদেরও বিপক্ষে। কেননা, এ হাদীসে একথাও আছে-
ثُمَّ اِذَا قَامَ مِنَ الرَّكْعَتَيْنِ كَبَّرَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ حَتّى يُحَاذِىَ بِهِمَا مَنْكِبَيْهِ كَمَا كَبَّرَ عِنْدَ اِفْتِتَاحِ الصَّلوةِ
অর্থ: অতঃপর যখন দু’ রাক্আ‘ত পড়ে উঠতেন, তখন তাকবীর বলতেন এবং আপন হাত উঠাতেন এ পর্যন্ত যে, ওই দু’টি দু’ স্কন্ধের বরাবর হয়ে যেতো, যেমনিভাবে নামায শুরু করার সময় করেছিলেন।
এখন বলুন, আপনারা দু’রাক্‘আত পড়ে উঠার সময় রফ‘ই ইয়াদায়ন করেন না কেন?
তৃতীয়ত, যখন আবূ হুমায়দ সা-‘ইদী এ হাদীস সাহাবীদের জমা‘আতে পেশ করেছেন, তখন ওই সব বুযুর্গ তা-ই বলেছেন, যা আবূ দাঊদ শরীফে রয়েছে-
قَالُوْا فَلَمَّا فَوَاللهِ مَا كُنْتَ بِاَكْثَرَ نَالَه تَبْعَةً وَاَقْدَمَنَا لَه صُحْبَةً قَالَ بَلى
অর্থ: তাঁরা বলেন, ‘‘তুমি আমাদের থেকে বেশী হুযূরের নামায সম্পর্কে কীভাবে জেনে গেছো? তুমি না আমাদের থেকে বেশি হুযূরের সাথে রয়েছো, না আমাদের পূর্বে তুমি সাহাবী হয়েছো।’’ তখন আবূ হুমায়দ বলেন, ‘‘নিশ্চয় এমনই।’’
এ থেকে বুঝা গেলো যে, আবূ হুমায়দ না সাহাবীদের মধ্যে ফক্বীহ্ ও আলিম, না হুযূরের সঙ্গ তাঁর বেশী পাওয়া সম্ভব হয়েছে। আর হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাস‘ঊদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হলেন আলিম ও ফক্বীহ্ সাহাবী, যিনি হুযূর-ই আক্রামের সাথে ছায়ার মতো থাকতেন। তিনি রফ‘ই ইয়াদাঈনের বিরুদ্ধে রেওয়াত করেছেন। সুতরাং নিশ্চিতভাবেই আবূ হুমায়দের বর্ণনার মোকাবেলায় হযরত ইবনে মাস‘ঊদের বর্ণনা বেশী গ্রহণযোগ্য; দু’ হাদীসের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে মীমাংসা এমনিভাবেই দেওয়া হয়। সুতরাং হে লা-মাযহাবীরা, আপনাদের উপস্থাপিত এ হাদীস একেবারে আমলযোগ্য নয়।
চতুর্থত, আবূ হুমায়দ সা-‘ইদী একথা বলেন নি যে, হুযূর এ পার্থিব হায়াত শরীফের শেষ পর্যন্ত ‘রফ‘ই ইয়াদাঈন করেছেন। তিনি তো শুধু এতটুকু বলেছেন যে, ‘হুযূর এমন করতেন।’ কিন্তু কতদিন যাবৎ করেছেন তার বর্ণনা নেই। এ সম্পর্কে তিনি কিছুই এরশাদ করেননি। আমি প্রথম পরিচ্ছেদে এ মর্মে হাদীস পেশ করেছি যে, রফ‘ঈ ইয়াদায়নের হাদীসগুলো মান্সূখ (রহিত)। সুতরাং এটা ওই মানসূখ হাদীসেরই বর্ণনা বা অবতারণা মাত্র। কেননা, এক যুগে হুযূর-ই আক্রাম এমনটি করতেন। (পরবর্তীতে তা করেননি)। তাই এখন তা আমলযোগ্য নয়।
পঞ্চমত, এ হাদীস ‘ক্বিয়াস-ই শর‘ঈ’ (শরীয়তসম্মত ক্বিয়াস’ বা অনুমান)-এরও পরিপন্থী, আর সাইয়্যেদুনা ইবনে মাস্‘ঊদের রেওয়ায়ত ক্বিয়াসের অনুরূপ। সুতরাং ওই হাদীস অনুসারে আমল করা ওয়াজিব বা অপরিহার্য। আর হে লা-মাযহাবীরা, আপনাদের উপস্থাপিত এ হাদীস বর্জন করা ওয়াজিব। কেননা, যখন হাদীসগুলোর মধ্যে পরস্পর বিরোধ হয়, তখন ‘ক্বিয়াস-ই শর‘ঈ’র মাধ্যমে একটাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। এর অনেক উদাহরণ মওজূদ রয়েছে। দেখুন, এক হাদীসে আছে- اَلْوَضُوْءُ مِمَّا مَسَّتْهُ النَّارُ অর্থাৎ ‘‘আগুনে সিদ্ধ বা রান্নাকৃত জিনিষ আহার করলে ওযূ করা ওয়াজিব হয়ে যায়।’’ আর অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে- ‘‘হুযূর-ই আন্ওয়ার সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম খানা খেয়ে ওযূ না করেই নামায সম্পন্ন করেছেন।’’ এখানে দু’ হাদীসের মধ্যে পরস্পর বিরোধ দেখা দিয়েছে। তখন প্রথমোক্ত হাদীসকে বর্জন করা হয়েছে। কারণ তা ক্বিয়াসের বিরোধী; দিবরাত্রি গরম পানি দ্বারা ওযূ করা হয় (ইত্যাদি)। দ্বিতীয় হাদীস অনুসারে আমল করা ওয়াজিব হয়ে গেছে। কারণ, তা ক্বিয়াসের অনুরূপ। এখানেও তেমনি।
ষষ্ঠত, আম সাহাবা-ই কেরামের আমল আপনাদের পেশকৃত হাদীসের পরিপন্থী হয়েছে; যেমনটি আমি প্রথম পরিচ্ছেদে উল্লেখ করেছি। বুঝা গেলো যে, সাহাবা-ই কেরামের দৃষ্টিতে ‘রফ‘ই ইয়াদাঈনের হাদীস মানসূখ (রহিত) ।
সপ্তমত, আবূ হুমায়দ সা-‘ইদীর এ হাদীসের সনদে আবদুল হামীদ ইবনে জা’ফর এবং মুহাম্মদ ইবনে আমর ইবনে আত্বা এমনই অনির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী (রাভী) যে, আল্লাহরই পানাহ্! সুতরাং ইমাম মারেদী ‘জাওহার-ই নাক্বী’ নামক কিতাবে লিখেছেন, ‘‘আবদুল হামীদ মুন্কারুল হাদীস।’’ (আবদুল হামীদের বর্ণিত হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়।) এ ইমাম মারেদী হলেন তিনি, যাঁর সম্পর্কে ইয়াহিয়া ইবনে সা‘ঈদ বলেছেন- هُوَ اِمَامُ النَّاسِ فِىْ هذَا الْبَابِ অর্থাৎ তিনি হাদীস শাস্ত্রের ইমাম। আর মুহাম্মদ ইবনে আমর এমন মিথ্যুক যে, তার সাক্ষাৎ আবূ হুমায়দ সা-‘ইদীর সাথে হয়নি, কিন্তু তিনি বলেছেন, سَمِعْتُ (আমি তার নিকট শুনেছি)। এমন মিথ্যুক লোকের বর্ণনা (রেওয়ায়ত) হয়তো বানোয়াট, নতুবা তিনি কমপক্ষে প্রথম শ্রেণীর ‘মুদাল্লিস’। তাছাড়া এ হাদীসের সনদে রয়েছে কঠোর ‘ইদ্বত্বিরাব’। সনদও ‘মুদ্বতারাব’ পর্যায়ের এবং মতনও। সুতরাং ‘আত্তাফ ইবনে খালিদ যখন এটা বর্ণনা করলেন, তখন মুহাম্মদ ইবনে আমর এবং আবূ হুমায়দ সা-‘ইদীর মধ্যভাগে একজন অজানা অবস্থার বর্ণনাকারী বর্ণনা করেছেন। সুতরাং এ হাদীস ‘মাজহুল’ (অপরিচিত)-ও। মোটকথা, এ হাদীসের মধ্যে একটি নয়, বরং অনেক ত্রুটি রয়েছে। এটা ‘মুনকারও’, ‘মুদ্বত্বারাব’ও। মুদাল্লাস কিংবা মওদ্বূ’ও। সর্বোপরি ‘মাজহুল’ (অপরিচিত)ও।
দেখুন, আবূ দাঊদ শরীফের হাশিয়া (পার্শ্বটীকা)’য়-এ স্থানে আছে- ‘‘এমন বর্ণনা নামেমাত্র উল্লেখ করার উপযোগীও নয়; তা থেকে দলীল গ্রহণ তো দূরের কথা।
অষ্টমত, ইমাম বোখারীও আবূ হুমায়দ সা-‘ইদীর বর্ণনা নিয়েছেন বটে, কিন্তু তাতে না এমন রাভী রয়েছেন, না সেখানে রফ‘ই ইয়াদায়নের উল্লেখ আছে। দেখুন- ‘মিশকাত শরীফ: বাবু সিফাতিস্ সালাত’। যদি তাঁর বর্ণনায় রফ‘ই ইয়াদায়নের উল্লেখ বিশুদ্ধ হতো, তাহলে ইমাম বোখারী অবশ্যই তা বাদ দিতেন না। মোটকথা, তোমাদের উপস্থাপিত এ হাদীস কোন দৃষ্টিকোণ থেকেই দৃষ্টিপাত করার উপযোগী নয়।
হানাফী ভাইয়েরা!
‘রফ‘ই ইয়াদায়ন’ গায়র মুক্বাল্লিদ ওহাবীদের উঁচু স্তরের মাসআলা। আর এ আবূ হুমায়দ সা-‘ইদীর এ হাদীস তাদের অতি গর্বের দলীল, যাকে ওহাবীদের শিশুরা পর্যন্ত মুখস্থ করে নেয়, আর আম হানাফীগণ তাদের দৃঢ়তাগুলো দেখে মনে করেন, তাদের দলীল হয়তো অত্যন্ত শক্তিশালী। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ্, তাদের এ দলীলের নাটাইসহ উড়ে গেছে। এখন থেকে ওহাবী, লা-মাযহাবীরা এ হাদীস পেশ করার সাহস করবে না।
স্মর্তব্য যে, ওহাবীদের কোন সনদ (সূত্র) সমালোচিত (অগ্রহণযোগ্য) হয়ে যাওয়া ওহাবাদীদের জন্য ক্বিয়ামত তুল্যই। কেননা তাদের মাযহাবের বুনিয়াদ শুধু ওই সনদ বা সূত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত। যদি একটি সনদ (সূত্র) ভুল বলে প্রমাণিত হয়, তখন মনে করবেন- তাদের মাযহাবের চোখ অন্ধ হয়ে গেছে। কারণ ওই বেচারাদের এ সনদগুলো ব্যতীত অন্য কোন উপায় থাকেনা। এসব পীরবিহীন, মুরশিদবিহীন ও আলোবিহীন লোকের বেলায় তো নি¤œলিখিত আয়াতই প্রযোজ্য। মহান রব এরশাদ ফরমাচ্ছেন-
وَمَنْ يُضْلِلْ فَلَنْ تَجِدَ لَه وَلِيًا مُّرْشِدًا
অর্থাৎ ‘‘যাকে আল্লাহ্ তা‘আলা পথভ্রষ্ট করেন, সে না কোন ওলী পায়, না পীর-মুরশিদ।’’ আল্লাহ্ তা‘আলা আরো এরশাদ করেন- وَمَنْ يَلْعَنْهُ فَلَنْ تَجِدَ لَه نَصِيْرًا (অর্থাৎ যার উপর আল্লাহ্ তা‘আলা লা’নত করেন, তার কোন মদদগার নেই)।
কিন্তু হানাফীদের উপস্থাপিত হাদীসের কোন সনদ সমালোচিত হলেও তাঁদের উপর সেটার কোন প্রভাব পড়ে না। কারণ, আমাদের ফিক্বহী মাসআলাগুলোর ভিত্তি সনদগুলোর উপর প্রতিষ্ঠিত নয়; বরং হযরত ইমামুল আইম্মাহ্ (ইমামদের ইমাম), কাশিফুল গুম্মাহ্ (মেঘ দূরীভূতকারী) ও সিরাজে উম্মাহ্ (উম্মতের চেরাগ) ইমাম-ই আ’যম আবূ হানীফা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর পবিত্র বাণীর উপরই। ওই ইমাম-ই আ’যম, যিনি উম্মতের প্রদীপ, ইমাম বোখারীসহ আম মুহাদ্দিসগণের ওস্তাদদেরও ওস্তাদ, যাঁর দামনের নিচে হাজারো ওলী ও বিজ্ঞ আলিম রয়েছেন। যাঁর মাযহাব ওইসব জায়গায় মওজুদ রয়েছে, যেখানে রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর দ্বীন মওজুদ রয়েছে। তাঁর বাণী বা অভিমত আমাদের মাসআলাগুলোর দলীল। ইমাম আ’যমের দলীলগুলো ক্বোরআনের আয়াতসমূহ ও সহীহ্ হাদীসসমূহেরই অনুরূপ; যেগুলোর ব্যাপারে না কোন সন্দেহ আছে, না কোন অস্পষ্টতা। কেননা, ইমাম-ই আ’যম হলেন হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর অতি নিকটবর্তী যুগেরই।
উদাহরণ, দেখুন, হযরত আবূ বকর সিদ্দীক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর ‘মীরাস’ বন্টন করেননি; অথচ ক্বোরআন-ই করীমে মীরাস বন্টনের নির্দেশ রয়েছে। তখন তাঁর দরবারে এ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলো, তখন তিনি বলেছিলেন, আমি হুযূর-ই আক্রাম থেকে শুনেছি, ‘নবীগণের মীরাস বন্টন করা হয় না।’ যেহেতু সিদ্দীক্ব-ই আকবর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু নিজে সরাসরি এ হাদীস শুনেছিলেন, সেহেতু তিনি নির্দ্বিধায় সেটা অনুযায়ী আমল করেছেন। যদি এ হাদীস শরীফ থেকে আমরা দলীল গ্রহণ করতাম, তবে আমরা হাজারো মুসীবতের সম্মুখীন হতাম। যেমন- সনদগুলোর উপর হাজারো সমালোচনা হতো। কিন্তু সিদ্দীক্ব-ই আকবারের চক্ষুযুগল নীরব ক্বোরআনে মীরাস বন্টনের হুকুম দেখেছেন, কিন্তু তাঁর কানগুলো সবাক ক্বোরআন (নবী করীম) সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে এরশাদ করতে শুনেছেন যে, নবীগণ আলায়হিমুস্ সালাম ওই হুকুমের আওতাভুক্ত নন। হযরত সিদ্দীক্ব-ই আকবারের হাদীস শরীফ সমালোচনা থেকে পবিত্র। তেমনি ইমাম-ই আ’যম আবূ হানীফা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর বর্ণনাগুলোও সমালোচনা থেকে পবিত্র। কারণ তাঁর যুগ হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর যমানা বা যুগের সাথে মিলিত। সুতরাং ওহাবীদের জন্য এ সনদগুলো মহাবিপদই। আমরা মুক্বাল্লিদদের উপর ওইসব সমালোচনার কোন প্রভাবই পড়েনা। দেখুন, আমি প্রথম পরিচ্ছেদে, ইমাম-ই আ’যম রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর যেই সনদ পেশ করেছি, তা সুবহা-নাল্লাহ্, কতই পবিত্র সনদ! কোন ওহাবীর কি এ সাহস আছে এ সনদের বিরুদ্ধে সমালোচনা করার? মোটেই নেই।
আপত্তি-৬
ইমাম বোখারী ও ইমাম মুসলিম হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমার সূত্রে বর্ণনা করেছেন-
اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ حَذْوَ مَنْكِبَيْهِ اِذَا اِفْتَتَحَ الصَّلواةَ وَاِذَا كَبَّرَ لِلرُّكُوْعِ اِذَا رَفَعَ رَأْسَه مِنَ الرَّكُوْعِ رَفَعَهُمَا كَذلِكَ وَقَالَ سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَه رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ وَكَانَ لَايَفْعَلُ ذالِكَ فِى السُّجُوْدِ ـ
অর্থা: নিশ্চয় রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হাত শরীফ দু’ কাঁধ শরীফ পর্যন্ত উঠাতেন যখন নামায শুরু করতেন এবং যখন রুকূ’র জন্য তাকবীর বলতেন। আর যখন রুকূ’ থেকে শির মুবারক উঠাতেন, তখনও তেমনি দু’হাত উঠাতেন এবং বলতেন, ‘সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ্, রাব্বানা লাকাল হাম্দ।’ আর সাজদায় রফ‘ই ইয়াদায়ন করতেন না।
এ হাদীস শরীফ বোখারী ও মুসলিমের। এর সনদও অতিমাত্রায় সহীহ্ (বিশুদ্ধ)। এটা দ্বারা রুকূ’র সময় ও রুকূ’র পর রফ‘ই ইয়াদাঈন (দু’হাত উঠানো) প্রমাণিত হয়।
খন্ডন (জবাব)
এর কয়েকটা জবাব দেওয়া যায়ঃ
এক. এ হাদীস শরীফে এ কথার উল্লেখ তো আছে যে, হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম রুকূ’তে যাবার সময় রফ‘ই ইয়াদায়ন করতেন, কিন্তু একথার উল্লেখ নেই যে, শেষ সময় পর্যন্ত হুযূর-ই আক্রামের এ আমল শরীফ বহাল ছিলো কিনা। আমরাও বলি যে, বাস্তবিকপক্ষে ইসলামে রফ‘ই ইয়াদায়ন প্রাথমিক পর্যায়ে ছিলো; কিন্তু পরবর্তীতে এটা মানসূখ (রহিত) হয়ে গেছে। বিরুদ্ধবাদীদের উত্থাপিত এ হাদীস শরীফে ওই মানসূখ (রহিত) কর্ম শরীফের উল্লেখ রয়েছে। আর এটা মানসূখ হবার কথা আমি ‘প্রথম পরিচ্ছেদ’-এ বর্ণনা করেছি।
দুই. সাহাবা-ই কেরাম রফ‘ই ইয়াদায়ন করা ছেড়ে দিয়েছিলেন। এর কারণও শুধু এটাই যে, তাঁদের দৃষ্টিতে রফ‘ই ইয়াদায়ন মান্সূখ। সুতরাং ‘দারে ক্বুত্বনী’র ১১১ পৃষ্ঠায় সাইয়্যেদুনা আবদুল্লাহ্ ইবনে মাস্‘ঊদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে-
قَالَ صَلَّيْتُ مَعَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَعَ اَبِىْ بَكْرٍ وَمَعَ عُمَرَ فَلَمْ يَرْفَعُوْا اَيْدِيَهُمْ اِلاَّ عِنْدَ التَّكْبِىْرَةِ الْاُوْلى فِىْ اِفْتِتَاحِ الصَّلواةِ ـ
অর্থ: তিনি (হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাস্‘ঊদ) বলেন, আমি হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম, হযরত আবূ বকর সিদ্দীক্ব ও হযরত ওমর ফারূক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমার সাথে নামায পড়েছি। তাঁরা নামাযের শুরুতে ‘তাকবীর-ই ঊলা’ (তাকবীর-ই তাহ্রীমাহ্) ব্যতীত অন্য কোন সময়ে হাত তুলেন নি।
যদি ‘রফ‘ই ইয়াদাঈন’-এর সুন্নাতটি বহাল থাকতো, তাহলে এ বুযুর্গগণ আমলটি কেন ছেড়ে দিয়েছেন? (বস্তুত আমলটি মান্সূখ বলেই তো তাঁরা পরবর্তীতে তা করেন নি।)
তিন. এ হাদীসের বর্ণনাকারী হলেন সাইয়্যেদুনা হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমর। আর খোদ্ তাঁর আমল এর বিপরীত। কারণ, তিনি রফ‘ই ইয়াঈায়ন করতেন না। যেমন আমি প্রথম পরিচ্ছেদে উল্লেখ করেছি। বস্তুত যখন বর্ণনাকারীর আমল (কর্ম) তার বর্ণনার বিপরীত হয়, তখন একথা বুঝা যাবে যে, এ হাদীস খোদ্ বর্ণনাকারীর মতেও মান্সূখ। তাছাড়া, আমি প্রথম পরিচ্ছেদে একথাও দেখিয়েছি যে, হযরত আলী মুরতাদ্বা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুও রফ‘ই ইয়াদাঈন করতেন না। এ সাহাবীদের আমল এ হাদীসের ‘মান্সূখ’ বা রহিত হওয়া প্রমাণ করেছে।
চার. ‘রিসালাহ-ই আফতাব-ই মুহাম্মদী’তে আছে- এ হাদীস হযরত ইবনে ওমর থেকে কয়েকটা সনদ বা সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। আর সেটা অত্যন্ত দুর্বলও। কেননা, এক বর্ণনায় ‘ইয়ূনুস’ আছেন; যিনি অত্যন্ত দুর্বল বর্ণনাকারী। যেমন ‘তাহযীব’ কিতাবে আছে। এর দ্বিতীয় সনদে আবূ ক্বিলাবাহ্ রয়েছে; লোকটি খারেজী মতবাদের ছিলো। দেখুন ‘তাহযীব’। আর তৃতীয় সনদে রয়েছে ‘আবদুল্লাহ’্, সে ছিলো কট্টর রাফেযী (শিয়া)। চতুর্থ সনদে রয়েছে শো‘আয়ব ইবনে ইসহাক্ব। সেও মুর্জিয়া মতবাদের লোক ছিলো। মোটকথা, রফ‘ই ইয়াদায়নের পক্ষের হাদীসগুলোর বর্ণনাকারীদের মধ্যে রাফেযীও রয়েছে। কেননা, এটা রাফেযীদের আমল। তারা রফ‘ই ইয়াদায়ন করে থাকে।
আপত্তি-৭
বোখারী শরীফে হযরত নাফি’ থেকে বর্ণিত-
اَنَّ اِبْنَ عُمَرَ كَانَ اِذَا دَخَلَ فِى الصَّلواةِ كَبَّرَ رَفَعَ يَدَيْهِ وَاِذَا قَالَ سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَه رَفَعَ يَدَيْهِ وَاِذَا قَامَ مِنَ الرَّكْعَتَيْنِ رَفَعَ يَدَيْهِ وَرَفَعَ ذلِكَ اِبْنُ عُمَرَ اِلَى النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থ: হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমর যখন নামাযে প্রবেশ করতেন, তখন তাকবীর বলতেন এবং উভয় হাত উঠাতেন। আর যখন ‘সামি‘আল্লাহু-লিমান হামিদাহু’ বলতেন, তখনও উভয় হাত উঠাতেন। আবার যখন দু’রাক্‘আত থেকে দাঁড়াতেন, তখনও উভয় হাত উঠাতেন। সর্বোপরি, তিনি এ কর্ম শরীফকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর দিকে সম্পৃক্ত করতেন। (মারফূ’ বলে সাব্যস্ত করতেন)। দেখুন, হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমর রুকূ’তে যাবার সময় রফ‘ই ইয়াদাঈন করতেন, কাজেই রফ‘ই ইয়াদাঈন সাহাবীগণের সুন্নাতও।
খন্ডন.
এর দু’টি জবাব দেওয়া যায়ঃ
এক. এ হাদীস আপনাদের (বিরুদ্ধবাদীগণ)ও বিপরীত। কারণ এ’তে দু’ রাক্‘আত থেকে উঠার সময়ও রফ‘ই ইয়াদাঈনের প্রমাণ মিলে। বিরুদ্ধবাদীরা শুধু রুকূ’র সময় রফ‘ই ইয়াদাঈন করে থাকে, দু’রাক্‘আত থেকে ওঠার সময় করে না।
দুই. আমি প্রথম পরিচ্ছেদে হাদীস বর্ণনা করেছি- হযরত মুজাহিদ বর্ণনা করেন- আমি হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমরের পেছনে নামায পড়েছি। তিনি শুধু তাকবীর-ই তাহ্রীমার সময় হাত উঠাতেন। সুতরাং এখন হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমরের দু’ধরনের কর্ম বর্ণিত হয়েছে- রুকূ’র সময় হাত উঠানো এবং না উঠানো। সুতরাং এ উভয় হাদীসের মধ্যে এভাবে সামঞ্জস্য বিধান করা যায় যে, মান্সূখ হবার খবর পাবার পূর্বে তিনি হাত উঠাতেন, মানসূখ হবার খবর পাওয়ার পর থেকে তিনি হাত উঠাতেন না। কেননা, এ হাদীসে সময়ের উল্লেখ নেই- কখন ও কোন্ সময় পর্যন্ত তিনি হাত উঠাতেন। সুতরাং উভয় হাদীসের মধ্যে সামঞ্জস্য হয়ে গেছে। সুতরাং ত্বাহাভী শরীফে আছে-
فَقَدْ يَجُوْزُ اَنْ يَّكُوْنَ اِبْنُ عُمَرَ فَعَلَ مَا رَاهُ طَاؤسٌ قَبْلَ اَنْ تَقُوْمَ الْحُجَّةُ عِنْدَه بِنُسْخِه وَتَرَكَه وَفَعَلَ مَا ذَكَرَه عَنْهُ مُجَاهِدٌ ثُمَّ قَامَتِ الْحُجَّةِ عِنْدَه بِنُسْخِه
অর্থ: এটাও হতে পারে যে, সাইয়্যেদুনা ইবনে ওমর রফ‘ই ইয়াদাঈন, যা ত্বাঊস দেখেছেন, মান্সূখ হবার প্রমাণ পাওয়ার পূর্বে করেছেন। অতঃপর যখন সাইয়্যেদুনা আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমরের নিকট রফ‘ই ইয়াদাঈন মান্সূখ হওয়া নিশ্চিত হয়ে গেলো, তখন তিনি তা ছেড়ে দিয়েছেন। আর তা-ই করেছেন, যা হযরত মুজাহিদ দেখেছেন। (তিনি রফ‘ঈ ইয়াদায়ন করতেন না।)
মোটকথা, আমাদের মতে, উভয় হাদীস শরীফ বিশুদ্ধ; তাও এ মর্মে যে, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আমল কিন্তু ওহাবী-লামাযহাবীদেরকে একটা হাদীস ছেড়ে দিতে হয়। বস্তুত কোন হাদীসকে ছেড়ে দেওয়া (অস্তিত্বকে মেনে না নেওয়া)’র চেয়ে উভয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করা উত্তম।
—০—
আপত্তি-৮
মুসলিম শরীফে হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর থেকে বর্ণনা রয়েছে- সেটার কিছু সংখ্যক শব্দ নি¤œরূপ-
فَلَمَّا قَالَ سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَه رَفَعَ يَدَيْهِ فَلَمَّا سَجَدَ سَجَدَ بَيْنَ كَفَّيْهِ
অর্থ: যখন হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ‘সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ্’ বলেছেন, তখন উভয় হাত শরীফ উঠিয়েছেন আর যখন সাজদাহ্ করেছেন, তখন উভয় হাতের মধ্যখানে সাজদাহ্ করেছেন।
এথেকেও ‘রফ‘ই ইয়াদাঈন’ প্রমাণিত হয়।
খন্ডন
হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর এ বর্ণনা (হাদীস) হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাস‘ঊদের রেওয়ায়ত (হাদীস)-এর মোকাবেলায় গ্রহণযোগ্য নয়। হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর শুধু একবার হাত উঠানোর কথা বর্ণনা করেছেন। কারণ, ইবনে হুজর গ্রামের অধিবাসী ছিলেন। তিনি এক/আধবার হুযূর-ই আক্রামের পেছনে নামায পড়েছেন। কোন বিধান মানসূখ হবার খবর অতি কষ্টে পেতেন; কিন্তু হযরত ইবনে মাস‘ঊদ সবসময় হুযূর-ই আক্রামের সাথে থাকতেন। বড় আলিম ও ফক্বীহ্ সাহাবী ছিলেন। তাছাড়া, হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর হয়তো হুযূর-ই আক্রামের পেছনে সর্বশেষ কাতারে দন্ডায়মান হয়েছিলেন। হযরত ইবনে মাস্‘ঊদ তো প্রথম কাতারে বিশেষ করে হুযূর-ই আক্রামের পেছনে দন্ডায়মান হন এমন সাহাবী। কেননা, হুযূর-ই আক্রামের পেছনে আলিম-ফক্বীহ্ সাহাবীগণ দন্ডায়মান হতেন। খোদ্ সরকার-ই দু’আলম নির্দেশ দিয়েছিলেন- لِيَلِيَنِىْ مِنْكُمْ اُوْلُوا الْاَحْلاَمِ وَالنُّهى অর্থাৎ তোমাদের থেকে আমার নিকটে তারাই যেন থাকে, যারা ইল্ম ও বিবেক সম্পন্ন।
সুতরাং ‘মুসনাদ-ই ইমাম আ’যম-এ উল্লেখ করা হয়েছে যে, কেউ সাইয়্যেদুনা ইব্রাহীম নাখ‘ঈকে হযরত ওয়াইল ইবনে হুজরের ওই বর্ণনা (হাদীস) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন, যাতে তিনি ‘রফ‘ই ইয়াদাঈন’-এর উল্লেখ করেছেন। তখন হযরত ইব্রাহীম নাখ‘ঈ অতি উত্তম জবাব দিয়েছেন। তা নি¤œরূপ-
فَقَالَ اَعْرَابِىٌّ لاَ يَعْرِفُ شَرَائِعَ الْاِسْلامِ وَلَمْ يُصَلِّ مَعَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِلاَّ صَلواةً وَّاحِدَةً وَقَدْ حَدَّثَنِىْ مَنْ لاَ اُحْصِىْ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ اَنَّه كَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ فِىْ بَدْءِ الصَّلواةِ فَقَطْ وَحَكَاهُ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَبْدُ اللهِ عَالِمٌ بِشَرَآئِعِ الْاِسْلاَمِ وَحُدُوْدِه مُتَفقِّدٌ اَحْوَالَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُلاَزِمٌ لَه فِىْ اِقَامَتِه وَاَسْفَارِه وَقَدْ صَلَّى مَعَ النَّبِىّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا لاَ يُحْصى ـ
অর্থ: তিনি বলেন, ওয়াইল ইবনে হুজর গ্রামের অধিবাসী ছিলেন। তিনি ইসলামের বিধানাবলী সম্পর্কে পূর্ণ অবগত ছিলেন না। হুযূর-ই আক্রামের সাথে কয়েকবার মাত্র নামায পড়তে পেরেছেন। আর আমার নিকট অগণিত লোক হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাস‘ঊদ থেকে বর্ণনা করছিলেন। হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাস‘ঊদ ইসলামের বিধানাবলী সম্পর্কে ওয়াক্বিফহাল; হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর অবস্থাদির নিশ্চিত খবর তিনি রাখতেন। তিনি সফরে ও নিজ অবস্থানস্থলে হুযূর-ই আক্রামের সাথে থাকতেন। তিনি হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে অগণিত নামায পড়েছেন।
সার কথা হলো- আলিম, ফক্বীহ্ ও হুযূর-ই আক্রামের সাথে সর্বদা অবস্থানকারী সাহাবীর বর্ণনাকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে। সুতরাং হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাস‘ঊদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর বর্ণনাই আমল করার উপযোগী। তাঁর এ বর্ণনার মোকাবেলায় হযরত ওয়া-ইল ইবনে হুজরের বর্ণনা (হাদীস) আমলের উপযোগী নয়। তিনি রফ‘ই ইয়াদায়ন মান্সূখ হবার পূর্বেকার কাজ দেখেছেন। সুতরাং সেটাই তিনি বর্ণনা করেছেন।
আপত্তি -৯
যদি তাকবীর-ই তাহ্রীমাহ্ ব্যতীত রফ‘ই ইয়াদাঈন না করাই সমীচীন হয়, তাহলে আপনারা ঈদের নামায ও বিতরের নামাযে রুকূ’র সময় রফ‘ই ইয়াদাঈন করেন কেন? ওই দু’নামায কি নামায নয়?
খন্ডন
এ প্রশ্ন থেকে বিরুদ্ধবাদী আপত্তিকারীদের অসহায়ত্ব প্রকাশ পাচ্ছে। হাদীসসমূহের ক্ষেত্রে তো তারা লা-জাওয়াব হয়ে গেছে, এখন ভিত্তিহীন বাহানা গড়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আরে জনাব! এখানে কথা হচ্ছে- ওই রফ‘ই ইয়াদাঈন সম্পর্কে, যাকে আপনারা নামাযের সুন্নাত কিংবা রুকূ’র সুন্নাত মনে করেন। দু’ ঈদ ও বিত্রের রফ‘ই ইয়াদাঈন তো রুকূ’র সুন্নাত নয়; বরং ঈদের নামায ও দো‘আ ক্বুনূতের সুন্নাতই। এ কারণেই ঈদের নামাযের একেক রাক্‘আতে তিনবার করে রফ‘ই ইয়াদায়ন (হাত উত্তোলন) করতে হয়। আর বিতরের নামাযে রুকূ’র পূর্বে নয়, বরং দো‘আ ক্বুনূতের পূর্বে করা হয়। যেমন ঈদের নামাযে খোৎবা, জামা‘আত ইত্যাদি আর বিতরের নামাযে দো‘আ ক্বুনূত, তিন রাক্‘আত ইত্যাদি বিশেষ নিয়ম রয়েছে, অনুরূপ ছয় তাকবীর এবং ছয়বার রফ‘ই ইয়াদাঈন ঈদের নামাযেরই বৈশিষ্ট্য। যদি পাঁচ ওয়াক্বতের নামাযকে ঈদের নামায কিংবা বিত্রের নামাযের উপর অনুমান করে থাকেন, তবে হে ওহাবী লা-মাযহাবীরা, প্রত্যেক রুকূ’তে তিনবার করে রফ‘ই ইয়াদায়ন করে নিন এবং প্রত্যেক নামাযে দো‘আ ক্বুনূত পড়তে থাকুন।
আপত্তি -১০
হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, যখন ‘সূরা কাওসার শরীফ’ নাযিল হলো, তখন হুযূর-ই আক্রাম হযরত জিব্রাইলকে বললেন, ‘‘হে জিব্রাঈল, ‘নাহ্র’ কী জিনিস, যা করতে আমাকে নামাযের সাথে নির্দেশ দিয়েছেন?’’ তখন হযরত জিব্রাঈল বললেন, ‘‘এ নাহর মানে ক্বোরবানী নয়; বরং
اِذَا تَحَرَّمْتَ لِلصَّلواةِ اَنْ تَرْفَعَ يَدْيْكَ اِذَا كَبَّرْتَ وَاِذَا رَكَعْتَ وَاِذَا رَفَعْتَ رَأْسَكَ مِنَ الرُّكُوْعِ فَاِنَّهَا صَلواتُنَا وَصَلواةُ الْمَلَئِكَةِ الَّذِيْنَ فِى السَّمَواتِ السَّبْعِ ـ
অর্থাৎ যখন আপনি নামাযের জন্য তাকবীর-ই তাহ্রীমাহ্ বলবেন, তখন আপন দু’ হাত উঠাবেন আর যখন রুকূ’ করবেন এবং শির মুবারক উঠাবেন। কেননা, এটাই আমাদের নামায এবং ওইসব ফেরেশতার নামায, যাঁরা সাত আসমানে রয়েছেন।
এ থেকে বুঝা গেলো যে, ক্বোরআন করীম যেভাবে নামায পড়ার হুকুম দিয়েছে, তেমনিভাবে রফ‘ই ইয়াদাঈনেরও হুকুম দিয়েছে। সুতরাং রফ‘ই ইয়াদাঈন তেমনি জরুরী যেমন নামায জরুরী। কারণ, মহান রব এরশাদ করেছেন- فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ (অর্থাৎ তাদের মতে, অতঃপর আপনার রবের জন্য নামাযও পড়–ন, রফ‘ই ইয়াদাঈনও করুন!) একথাও বুঝা গেলো যে, ফিরিশ্তাগণও রফ‘ই ইয়াদাঈন করেন। সুতরাং যেসব লোক রফ‘ই ইয়াদাঈন করে না, তারা হুযূর-ই আক্রামেরও বিরোধী, সাহাবা-ই কেরামেরও, ফিরিশতাদেরও। ফরশ ও আরশের উপর রফ‘ই ইয়াদাঈন হয়। আপনারা এক ইমাম আবূ হানীফার অনুসরণে ওইসব পবিত্রাত্মার বিরোধিতা করবেন না!
জরুরী নোট:
ডেরাগাযী খানের গায়র মুক্বাল্লিদ ওহাবীদের পক্ষ থেকে রফ‘ই ইয়াদাঈন সম্পর্কে একটি একটি প্রচারপত্র বিনামূল্যে বিলি করা হয়েছে। আমার নিকটও একটি প্রেরণ করা হয়েছে। এ’তে এ আপত্তিটা অতি জোরে শোরে উল্লেখ করা হয়েছে। এটা তাদের এমন এক আপত্তি, যা পুরানা ওহাবীরা চিন্তাও করেননি।
খন্ডন
ওহে লা-মাযহাবী ওহাবীরা! আপনারা অথবা আপনাদের কোন গুরু ঠাকুর মিথ্যা হাদীস তো রচনা করে নিয়েছেন; কিন্তু রচনাও করতে জানেন নি। মিথ্যা বলার জন্যও একটা ধরন আছে। আপনাদের রচিত এ হাদীসই আপনাদের ভ্রান্ত মতবাদের নৌযানকে ডুবিয়ে ছেড়েছে। যেহেতু আপনারা সেটার সনদ বর্ণনা করেননি, সেহেতু সনদের উপর আলোচনা করা যাচ্ছে না, একথাও বলা যাচ্ছে না যে, সেটার রচয়িতা কে? অবশ্য হাদীসটার (!) মতনের উপর কয়েক প্রকারে আলোচনা করা যেতে পারে। যেমন-
প্রথমত, আপনারা وَانْحَرْ -এর অনুবাদ করেছেন রুকূ’র পূর্বে ও রুকূ’র পরে হাত উঠানো। এটা কোন অভিধান গ্রন্থ থেকে প্রমাণিত? نحر (নাহ্র)-এর অর্থ ‘হাত উঠানো, রুকূ’র পূর্বে ও পরে’ কোত্থেকে নিয়েছেন? এতগুলো অর্থের পুট্লী একটি মাত্র শব্দ ‘নাহর’ (نحر)-এর মধ্যে কে ভর্তি করে দিলো?
হযরত জিব্রাঈল আলায়হিস্ সালাম কি আরবী ভাষার অভিধান সম্পর্কেও জানতেন না? যিনি نحر (নাহ্র) শব্দের এ অর্থ বলে গেলেন? তারপর হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এবং পবিত্র আহলে বায়তও জিজ্ঞাসা করলেন না- হে জিব্রাঈল, ‘নাহ্র’ শব্দের এ বিরল অর্থ (!) কোত্থেকে নেওয়া হয়েছে? কিভাবে নেওয়া হয়েছে? অভিধানগ্রন্থের বরাত পেশ করুন! যদি ক্বোরআন ও হাদীসের অর্থ এভাবে করা আরম্ভ হয়ে যায়, তবে তো এ দ্বীনকে মহান রবই হিফাযত করবেন! যদি বলা হয়- ‘সালাত’ মানে ‘রুটি খাওয়া, যাকাত মানে পানি পান করা, হজ্জ মানে কাপড় পরা, ‘রোযা’ মানে খাটের উপর শয়ন করা, জিহাদ মানে দোকানদারী করা ইত্যাদি, তা হলে তো দ্বীনের পাঁচটি স্তম্ভই খতম হয়ে যাবে! একটু লজ্জাবোধ করুন! আপনাদের ভ্রান্ত মতবাদকে টিকিয়ে রাখার জন্য ‘হাদীস’ কেন রচনা করতে আরম্ভ করেছেন?
দ্বিতীয়ত, এখানে ‘নাহ্র’ -এর عطف ‘সালাত-এর উপর করা হয়েছে। معطوف ও معطوف عليه পরস্পর ভিন্নই হয়। সুতরাং এটা অনিবার্য যে, ‘নাহ্র’-এর অর্থ দু’হাত উঠানো না হওয়া। কারণ এটা তো নামাযের অংশ, নামাযের বাইরের কোন কাজ নয়।
তৃতীয়ত, যখন তোমাদের মতে, وَانْحَر -এর অর্থ رفع يدين (রফ‘ই ইয়াদাঈন) হলো, আর এ নির্দেশ ক্বোরআনে করীমে নামাযের হুকুমের সাথে করা হলো, তখন তো উচিত হবে- নামায যেমন অকাট্য ফরয, যার অস্বীকারকারী দ্বীন থেকে খারিজ হয়ে যায়, তেমনি ‘দু’হাত উঠানো’ও অকাট্য ফরয হওয়া; যার সব অস্বীকারকারী কাফির হবে, আর আপনারা কেন এটাকে (রফ‘ই ইয়াদাঈন) ফরয বলছেন না? শুধু সুন্নাত-ই বা কেন বলছেন? আর যখন হানাফীদের এসব প্রশ্নের জবাব দিতে পারছেন না, তখন ‘রফ‘ই ইয়াদায়ন’ ছাড়ছোনা কেন? তাও একথা বলে যে, ‘রফ‘ই ইয়াদায়ন করাও সুন্নাত, না করাও সুন্নাত। তোমাদের যা ইচ্ছা হয়- আমল করো।’
এখন বলুন, এটা ফরয বলে এটা অস্বীকার করে ‘কাাফির’ কে হলো?
চতুর্থত, কোন মুহাদ্দিস ‘রফ‘ই ইয়াদাঈন’কে ‘অকাট্য ফরয’ বলেননি। ইমাম তিরমিযী ‘রফ‘ই ইয়াদাঈন’ না করার হাদীসকে ‘হাসান’ (উত্তম) বলেছেন, আর বলেছেন, এ হাদীসের উপর অনেক আলিম, সাহাবী, তাবে‘ঈর আমল ছিলো ও রয়েছে। সুতরাং এখন আপনারা ইমাম তিরমিযী ও সমস্ত মুহাদ্দিসকে কী বলবেন? তাঁরা তো রফ‘ই ইয়াদায়নকে ফরয বলেন নি। তাঁরা এখন আপনাদের মতে ইসলামের গন্ডিতে আছেন কিনা? এখন তাঁদের কিতাব থেকে হাদীস গ্রহণ করা জায়েয কিনা?
পঞ্চমত, আমি প্রথম পরিচ্ছেদে দলীলাদি দ্বারা প্রমাণ করেছি যে, হযরত আবূ বকর সিদ্দীক্ব, হযরত ওমর ফারূক্ব, হযরত আলী মুরতাদ্বা, হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস, হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে যোবায়র রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুম আজমা‘ঈন-এর মতো শীর্ষস্থানীয় সাহাবীগণ ‘রফ‘ই ইয়াদাঈন’ করতেন না বরং হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাস‘ঊদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু তা করতে কঠোরভাবে নিষেধ করতেন। হে লা-মাযহাবীরা, আপনাদের কথানুসারে এমন একটি ক্বোরআনী ফরয, যা নামাযের মতো ফরয, ওই সাহাবা-ই কেরামের নিকট থেকে গোপন ছিলো, আর চৌদ্দশ’ বছরাধিককাল পরে তা ডেরা গাযী খানের এক মৌলভী জানতে পারলো এটা হতভম্ব করার মতো বিষয় নয় কি?
ষষ্ঠত, আপনারা হাদীস রচনা করে তা মাওলা-ই কায়েনাত হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর দিকে সম্পৃক্ত করেছেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো, খোদ্ হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু খোদ্ এটা বর্ণনা করছেন আর আমল করেন সেটার বিপরীত। অর্থাৎ তিনি রফ‘ঈ ইয়াদায়ন করতেন না। তা কেন?
সপ্তমত, আপনাদের কথা মতো, খোদ্ হুযূর-ই আক্রাম وَانْحَرْ -এর অর্থ হযরত জিব্রাঈলকে জিজ্ঞাসা করলেন, আর নিজেই তদনুযায়ী আমল করেন নি বলে প্রমাণ মিলে। যেমন আমি প্রথম পরিচ্ছেদে আরয করেছি। সুতরাং ‘রফ‘ই ইয়াদাঈন’-এর বিষয়টিও নামাযের ‘ফরয হওয়া’র মতো প্রচার করা উচিত ছিলো, ‘রফ‘ই ইয়াদাঈন’ না করলে, তাদের বিরুদ্ধে তেমনি জিহাদ করা ফরয হতো, যেমন হযরত সিদ্দীক্ব-ই আকবর যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে করেছিলেন। মোল্লাজি! হাদীসটি রচনা করার পূর্বে উচুঁ-নিচু তথা পরিণতি সম্পর্কে ভেবে দেখা দরকার ছিলো!
মুসলিম ভাইয়েরা!
গভীরভাবে লক্ষ্য করুন, এ-ই হলো এসব লোকের হাদীসের অনুসরণ! তারা আমাদের থেকে প্রত্যেক মাসআলায় বোখারী মুসলিমের হাদীস দাবী করে, আর নিজের জন্য এমন ভিত্তিহীন হাদীস গড়ার ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে না। হয়তো ‘আহলে হাদীস’ মানে বানোয়াট হাদীস রচনাকারী।
আপত্তি-১১
হযরত ইমাম আবূ হানীফা (রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি) বলেন, اِذَا ثَبَتَ حَدِىْثٌ فَهَوَ مَذْهَبِىْ (যখন কোন হাদীস প্রমাণিত হয়, তখন সেটাই আমার মাযহাব)।
যেহেতু ‘রফ‘ই ইয়াদাঈন’ এবং ইমামের পেছনে ক্বিরআত পড়া সম্পর্কে প্রমাণিত হলো যে, ইমাম আবূ হানীফার অভিমত হাদীসের বিরোধী, সেহেতু আমরা তাঁর অভিমতকে বর্জন করেছি এবং রসূলের হাদীসের উপর আমল করেছি। নিজে অনুসন্ধান করে হাদীসের উপর আমল করাই তো হানাফী মাযহাব। (আম ওহাবী-লা মাযহাবী)
খন্ডন
জ্বী-হাঁ, আর বিশেষ করে যখন হাদীসের গবেষক (মুহাক্বক্বিক্ব) আপনাদের মতো ‘মুহাক্বাক্বক্ব’ (হুক্কাপায়ী) হয়, যারা উত্তমরূপে শৌচকর্ম সম্পন্ন করতে জানে না, যারা ‘বোখারী’কে ‘বুক্খারী’ ‘মুসলিম’কে মুসাল্লুম’ এবং ‘হাদীস’কে ‘হাদ্দীস’ বলে, তখনতো কথাই নেই!
জনাব! হযরত ইমাম-ই আ’যম আপনাদের মতো ‘বুযের গু’ দেরকে এমন খোলাখুলি অনুমতি দেয়নি। বরং ইমাম-ই আ’যমের উক্ত বাণীর সঠিক অনুবাদ (মর্মার্থ) হচ্ছে- اِذَا ثَبَتَ حَدِيْثٌ فَهُوَ مَذْهَبَىْ। অর্থ: ‘‘যখন হাদীস প্রমাণিত হয়ে গেলো, তখন সেটা আমার মাহযাব হলো।’’
‘‘হে মুসলমানরা, আমি প্রতিটি মাসআলার জন্য হাদীস-ই রসূল তালাশ করেছি এবং সেটার প্রতিটি দিক গভীরভাবে যাচাই-বাছাই ও চিন্তা-গবেষণা করেছি। সনদ ও মতনের উপর চুলচেরা বিচার-বিশ্লেষণ করেছি। যখন সব ক’টি দিক দিয়ে সেটা হাদীস বলে প্রমাণ পেয়েছি তখনই সেটাকে আমার মাযহাব সাব্যস্ত করেছি।’’
সুতরাং এ মাযহাব অতিমাত্রায় মজবুত ও গবেষণালব্ধ। সুতরাং আপনারা হাদীসের সমুদ্রে নিজেরা লাফিয়ে পড়বেন না। ঈমান থাকলে সেটা হারিয়ে যাবে; বরং আমাদের বের করা মুক্তাগুলো ব্যবহার করুন! সমুদ্র থেকে মুক্তা বের করা প্রত্যেকের কাজ নয়। শুধু ডুবুরীরাই এ কাজ করতে পারে। ডিস্পিনসারী থেকে ওষুধ যদি রোগী নিজে বের করে সেবন করে, তবে তো তার মৃত্যু অনিবার্য। অভিজ্ঞ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুসারে ওষুধ সেবন করুন! ক্বোরআন-হাদীস হচ্ছে রূহানী ঔষধের দাওয়াখানা। ইমাম-ই আ’যম হলেন ত্ববীবে আ’যম (মহা চিকিৎসক)। যদি ক্বোরআন ও হাদীস ওষুধ হয়, সত্যিকার অর্থে মুজতাহিদ ইমাম যদি ব্যবস্থাপত্র দিয়ে থাকেন, তবেই দেখো উপকার পাওয়া যায় কিনা!
ইমামে আ’যমের উক্ত বাণীর অর্থ এ নয় যে, ‘আমি শরীয়তের সব কানূন ও মাসআলা চিন্তা ভাবনা না করে নিছক মনগড়াভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি। ওহে বোধশক্তিহীন মুর্খরা! তোমরা শুধু হাদীসের ভুল অনুবাদ করতে জেনেছো, ধর্মের মধ্যে ফিৎনা ছড়াতে জেনেছো! যেখানে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার অনুসন্ধান ও চিন্তা-ভাবনা ছাড়া রোগীর জন্য যেনতেনভাবে ব্যবস্থাপত্র দেন না, সেখানে ইমামে আ’যম আলায়হির রাহ্মাহ্র মতো হাকীমে মিল্লাত, সিরাজে উম্মাত চোখ বন্ধ করে ক্বোরআন হাদীস না দেখে রূহানী ব্যবস্থাপত্র ক্বিয়ামত পর্যন্ত মুসলমানের জন্য কিভাবে লিখে দিলেন? এমনটির কখনো কল্পনাও করা যেতে পারে না। আল্লাহ্ পাক বুঝ শক্তি দান করুন। আ-মী-ন।