অনুবাদ: হযরত কা‘ব ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ক্বিয়ামত দিবসে সকল মানুষ পুনরুত্থিত হবে। আমি আমার উম্মতকে নিয়ে এক টিলার উপর অবস্থান করব। আমাকে আমার রব সবুজ পোশাক পরিধান করাবেন। অতঃপর আমাকে অনুমতি দেয়া হবে। আল্লাহর মর্জি মোতাবেক আমি আরয করব এবং সেটিই ‘মক্বামে মাহমূদ’।
মক্বামে মাহমূদ হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র অন্যতম বৈশিষ্ট্য, যা ক্বিয়ামত দিবসে প্রকাশিত হবে। আল্লাহ্ পাক রব্বুল আলামীন এই আসনে আমাদের প্রিয় নবীজী ব্যতীত অন্য কাউকে সমাসীন করবেন না। যেমন পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে-
হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, হুজূর নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- ক্বিয়ামত দিবসে মানুষ সমুদ্রের হিল্লোলের মত এদিক-সেদিক ছুটাছুটি করবে। এক পর্যায়ে তারা হযরত আদম আলায়হিস সালাম-এর কাছে গিয়ে বলবে আপনি আমাদের জন্য আপনার রবের দরবারে শাফা‘আত করুন। তিনি বলবেন, আমি এ কাজের জন্য নই। তোমরা বরং ইব্রাহীম আলায়হিস সালাম-এর কাছে যাও, যেহেতু তিনি খলীলুল্লাহ বা আল্লাহর ঘনিষ্ট বন্ধু। অতঃপর তারা হযরত ইব্রাহীম
আলায়হিস সালাম-এর কাছে যাবে। তখন ইব্রাহীম আলায়হিস সালাম বলবেন, আমি এ কাজের জন্য নই। বরং তোমরা মূসা আলায়হিস সালাম-এর নিকটে যাও। কেননা তিনি কালীমুল্লাহ। অতঃপর লোকেরা হযরত মূসা আলায়হিস সালাম-এর কাছে গিয়ে শাফা‘আতের আবেদন করলে তিনিও বলবেন এ কাজের জন্য আমি নই। তোমরা হযরত ঈসা আলায়হিস সালাম -এর কাছে যাও। কেননা তিনি রূহুল্লাহ্ এবং কালিমাতুল্লাহ। তাঁর কথামত লোকেরা হযরত ঈসা আলায়হিস সালাম-এর কাছে গিয়ে আবেদন করবে। হযরত ঈসা আলায়হিস্ সালামও জবাবে বলবেন আমি এ কাজের জন্য নই। সুতরাং তোমরা মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে যাও। অতঃপর লোকেরা আমার কাছে আসবে, আর তখনই আমি বলে উঠব- হ্যাঁ, আমিই সেই শাফা‘আতের জন্য প্রস্তুত রয়েছি। শাফা‘আত করা আমারই কাজ। অতঃপর আমি আমার রবের কাছে শাফা‘আতের অনুমতি প্রার্থনা করব আর তখনই আমার জন্য শাফা‘আতের অনুমতি মিলে যাবে।….এক পর্যায়ে আমি আল্লাহর প্রশংসা করতে করতে সাজদায় অবনত হয়ে পড়ব। তখন আল্লাহ্ পাক আমাকে ডাক দিয়ে বলবেন- হে আমার হাবীব! আপনি মাথা উত্তোলন করুন, আপনি বলুন! আপনার কথা শুনা হবে, আপনি আবেদন করুন, আপনার আবেদন মনজুর করা হবে, আপনি শাফা‘আত করুন আপনার শাফা‘আত ক্ববূল করা হবে।
হযরত আউফ ইবনে মালেক রদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন- আল্লাহ্ পাক আমার কাছে একটা পয়গাম পাঠিয়ে সুসংবাদ স্বরূপ দু’টি প্রস্তাব দিলেন এক আল্লাহ্ আমার অর্ধেক উম্মতকে বেহেশতে প্রবেশ করাবেন অথবা আমাকে শাফা‘আতের ক্ষমতা দান করবেন। আমি শাফা‘আতের মালিকানা গ্রহণ করলাম। কেননা আমি তা দ্বারা র্শিককারী ব্যতীত সকল মুসলমানের শাফা‘আত করব। [-তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ, ইবনে হিব্বান, মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল, মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, তাবরানী ইত্যাদি]
অপর বর্ণনায় রয়েছে, হুযুর নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন- প্রত্যেক নবীর জন্য একেকটা মাক্ববূল দো‘আ রয়েছে, যা তারা করে ফেলেছেন, কিন্তু আমি চাই আমার দো‘আ ক্বিয়ামত দিবসে আমার উম্মতের শাফা‘আতের জন্য রেখে দেই। -[বুখারী শরীফ : কিতাবুদ দা’ওয়াত]
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে আবেদন করলাম। নবী করীম যেন আমার জন্য ক্বিয়ামত দিবসে শাফা‘আত করেন। উত্তরে নবী করীম এরশাদ করলেন- হ্যাঁ, অবশ্যই আমি শাফা‘আত করব। আমি আরয করলাম- এয়া রসূলাল্লাহ্! আমি সেদিন আপনাকে কোথায় তালাশ করব? নবী করীম বললেন, তুমি প্রথমে আমাকে তালাশ করবে- পুলসেরাতের গোড়ায়। আমি বললাম- সেখানে না পেলে? তিনি বললেন- তাহলে মীযানের কাছে। আমি বললাম- এয়া রসূলাল্লাহ্! সেখানেও যদি আপনাকে না পাই তাহলে কোথায় তালাশ করব? হুযূর এরশাদ করলেন- তাহলে অবশ্যই তুমি আমাকে হাউযে কাউসারের সামনে পেয়ে যাবে। কেননা, আমি সেদিন এই তিনটি জায়গা ব্যতীত অন্য কোথাও যাব না। [সূত্র: তিরমিযী শরীফ : কিতাবু সেফাতিল ক্বিয়ামাহ্, মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল : হাদীস নম্বর-১২৮৪৮ ফতহুল বারী : ৮ম খণ্ড : পৃষ্ঠা-৪৬৬, তারিখে কবীর : ৮ম খণ্ড : পৃষ্ঠা-৪৫৩]
মুহাদ্দিসীনে কেরাম বলেছেন- শাফা‘আতে কুবরার ক্ষমতা প্রদানের নামই হল ‘মক্বামে মাহমূদ’। যেমন পবিত্র হাদীসের বিভিন্ন বর্ণনায়ও অনুরূপ বক্তব্য পাওয়া যায়। হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত- রসূলে মাক্ববূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম عَسٰی اَنْ یَّبْعَثَکَ رَبُّکَ مَقَامًا مَّحْمُوْدًا ব্যাখ্যায় এরশাদ করেন শাফা‘আতে ’ওয্মা (বৃহত্তম সুপরিশ)-এর নামই হল ‘মাক্বামে মাহমূদ’।
ইমাম ইবনে জাওযী রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর হাদীস বর্ণনা করেন- “আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে আরশের উপর বসাবেন।” ইমাম ইবনে জাওযী আরো লিখেন- ‘মক্বামে মাহমূদ’ অর্থ কী? তার উত্তরে বলা যাবে- “ক্বিয়ামত দিবসে রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ্ আরশের উপর বসাবেন এবং সমগ্র সৃষ্টিজগতের উপর তাঁর উন্নত মর্যাদার চর্চা করা হবে।”
হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু আয়াতের তাফসীরে লিখেছেন- “আল্লাহর দরবারে হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর এমন একটা অবস্থান রয়েছে, যে স্থানে অন্য কোন নবী-রসূল পৌঁছতে পারেনা এবং কোন ফেরেশতাও না। সেই আসনে বসিয়ে মহান আল্লাহ্ আমাদের প্রিয়নবীকে অন্যান্য পূর্বাপর সকল সৃষ্টির উপর তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করবেন। এককথায় মক্বামে মাহমূদ একমাত্র আমাদের প্রিয় রসূলের জন্যই খাস।”
হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত হাদীসে নবী করীম এরশাদ করেন- “আল্লাহ্ রব্বুল ইযযাত আমাকে এমন একটা মক্বামে (উঁচুতম মর্যাদাপূর্ণ স্তরে) আসীন করবেন, যেখানে তিনি আমার পূর্বে কাউকে আসীন করেন নি এবং আমার পরেও কাউকে আসীন করবেন না।” -[সহীহ ইবনে হিব্বান : আল্ ওয়াফা]
মক্বামে মাহমূদের তাফসীরে হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু আরো বলেন, “আল্লাহ্ পাক তাঁর প্রিয় হাবীবকে এমন এক মহান আসনে সমাসীন করবেন, যার নাম ‘মক্বামে শাফা‘আত’, এমতাবস্থায় সেদিন পূর্বাপর সকলেই তাঁর প্রশংসা করতে থাকবে।